#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৬
#অধির_রায়
“আপনি একটা প্লে বয়৷ আপনি এতগুলো প্রেম করছেন! তৃনা, মিনা, রিনা, চিনা৷ ঘরে বউ থাকতে বাইরে মেয়ের সাথে প্রেম।” কিছুটা ক্ষেপে বলে উঠে নিয়তি৷
— নির্বণ নিয়তির কাঁধে হাত রেখে নিয়তির নাকে নাক ঘেঁষে, ” কেন তোমার হিংসা হচ্ছে?”
— নিয়তি এক কদম পিছিয়ে, ” আপনি কি করলেন আজ?” আমার চোখের সামনে অন্য মেয়েদের জন্য শপিং করলেন৷
— চকিত চোখে তাকিয়ে, ” আমি কি করলাম! আমার মতো নিষ্পাপ শিশু এই ত্রি ভবনে পাবে না৷”
— নিয়তি অট্টহাসি দিয়ে, ” আমার হাসতেও কষ্ট হয়। আপনি নিষ্পাপ শিশু৷ আপনি শিশু তাহলে ফিটার খান৷ বাবু খাইছো৷”
— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি এসব কি ধরনের কথা? তোমাকে আমার বাবু মনে হয়? ”
— “আপনাকে আমার বাবু মনে হবে কেন? আপনি চাইলে তো প্রতিবছর জোড়ায় জোড়ায় বাচ্চা জন্ম দিতেন৷ আর আপনি কিনা ঘরে বউ থাকলে বাইরে মেয়েদের জন্য শপিং করলেন৷ তাও আবার কোনগুলো। মর্ডান ওয়েস্টার্ন পোশাক।” কিছুটা আফসোস নিয়ে বলে উঠে।
নিয়তি কথা শুনে নির্বণ বুঝতে পারে নিয়তি খুব রেগে আছে৷ নিয়তিকে আরও রাগানোর জন্য বলে উঠে, ” ঘরের বউ কি কোনদিন প্রেমিকা হতে পারে৷ ”
নিয়তির দিকে ঠোঁট জোড়া এগিয়ে দিয়ে, ” প্রেমিকা মিষ্টি হিসেবে আমার ঠোঁট জোড়া বেছে নেয়৷ কিন্তু ঘরের বউ তা করে না। ”
নির্বণেট কথা শুনে নিয়তির পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়৷ নিয়তি আর সহ্য করতে পারছে না৷ নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে৷ নির্বণের ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷ নিয়তি রাগে নির্বণের ঠোঁটে খুব জোরে একটা কাপড় বসায়৷
নির্বণ নিয়তিকে দূরে ঠেলে দিয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি এই বিয়ে বাধ্য হয়ে করেছি৷ আমাকে এই বিয়ের বন্ধনে জড়াবে না৷”
আর পোশাক গুলো আমি বাহিরের কোন মেয়ের জন্য কিনে নিয়ে আসনি৷ সবগুলো পোশাক তোমার৷
নির্বণ আর কিছু না বলে বেলকনিতে চলে যায়৷ নিয়তি নির্বণকে আবারও ভুল ভাবে৷ নিয়তি ভেবে নিয়েছিল নির্বণ অন্য কারো জন্য এসব করেছি৷ কিন্তু আমার সাথে এমন ব্যবহার কেন করল?
নিয়তি নিজের কাছে নিজেকেই দোষী মনে করছে৷ নির্বণের চোখে জল টলমল করছে৷ নির্বণের চোখে শুধু ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠছে৷ কেন নির্বণ ছোঁয়াকে ভুলতে পারছে না?
নির্বণ ট্রি টেবিলে একটা ঘুশি মেরে, ” আমার চোখের সামনে কেন ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠে৷ ছোঁয়া আজও আমি তোমায় ভালোবাসি৷ তোমাকে কোনদিন আমি ঘৃণা করতে পারব না৷ কথা দিয়েছিলাম তোমার জায়গা কাউকে দিব না৷ আমি আমার কথা রেখেছি৷ আমি নিয়তিকেও ফিরিয়ে দিয়েছে৷ অথচও যার সাথে এখন আমি সাত জন্মের বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছি৷ ”
নিয়তি নির্বণের সব কথা শুনে নেয়৷ নিয়তি বুঝতে পারে তাকে অনেক কষ্ট করতে নির্বণকে পাওয়ার জন্য। আজও তার মনে ছোঁয়া রয়েছে।
________
নির্বণ রাতে কখন ঘুমিয়েছে জানা নেই৷ নির্বণ বেলকনিতেই ঘুমিয়ে আছে৷ নিয়তি বাসার সকল কাজ সেরে নির্বণের জন্য খাবার নিয়ে আসে৷ নির্বণ স্নান করে ওয়াসরুমে থেকে বের হচ্ছে।
নিয়তি হাঁ করে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণের পরনে শুধু তাওয়াল। ফর্সা গায়ে বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটা মুক্ত দানার মতো দেখাচ্ছে৷ বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী নির্বণ৷ যেকোনো মেয়ে নির্বণের এমন রুপ দেখে প্রেমে পড়তে বাধ্য।
নির্বণ হাত দিয়ে চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে নিয়তির কাছে আসে৷ নিয়তি গাল টেনে বলে উঠে, ” ওই দিকে কাকে দেখছো? আমি এখানে।”
নির্বণের কথায় নিয়তি লজ্জা পায়৷ নিয়তি নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে নির্বণের দেহ ঢেকে দেয়৷ নির্বণ চকিত হয়ে নিয়তির দিকে তাকয়৷
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনাকে আমি বলেছিলাম আপনি খালি গায়ে আমার সামনে আসবেন না৷”
— কেন? আমায় খালি গায়ে দেখলে তোমায় আদর করতে মন চাই৷ আমি ছেলে মানুষ৷ আমিতো এখন থেকে খালি গায়েই বেশি থাকবো৷
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” না। আপনি খালি গায়ে থাকবেন না৷ যদি কোনদিন খালি গায়ে দেখছি তাহলে.. ”
— তাহলে কি নিয়তি? আমার গায়ের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে নাও৷
— না সারাবো না৷ আপনি আগে একটা ট্রি শাট পড়েন। তার পর আমি শাড়ি সরিয়ে নিব৷
— আমায় খালি দেখলে তোমার লজ্জা লাগে। তখন তোমার মুখ রংধনুর সাত রং হয়ে যায়৷ তখন তোমায় অনেক মিষ্টি লাগে। কিন্তু তোমার পিছনের কালো তিলটা গ্লাসে দেখা যাচ্ছে৷
— আপনি একটা অসভ্য লোক। আপনার একটু লজ্জা নেই৷
নিয়তি শাড়ি সরিয়ে নিতে নিলেই নিয়তির শাড়িতে আঁচল নির্বন পা দিয়ে ধরে রাখে। যা নির্বণ বা নিয়তি কেউ জানে না৷ শাড়ি টান দিতেই নিয়তি পড়ে যেতে নেয়৷ কিন্তু নির্বণ হিরোর মতো নিয়তিকে বাঁচিয়ে নেয়৷
নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত রেখে নিয়তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তির নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত রাখতেই নিয়তির দেহে ১২০০ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ উঠানামা করছে৷
নিয়তি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে লজ্জা লজ্জা ভাব করে বলে উঠে, ” ধন্যবাদ। আপনি পোশাক পড়ে নেন৷ আমি বাহিরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি৷”
নিয়তি চলে যেতেই নির্বণ গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” হ্যাঁ ভগবান, মেয়েদের মন কি দিয়ে তৈরি করছো? ঝগড়া করবে আবার লজ্জায় পাবে। ”
__________
— স্যার একটা কথা বলবো? প্লিজ রাগ করবেন না!
— নিয়তি তুমি এর আগেও ভুল করেছো৷ এখনও ভুল করে যাচ্ছে৷ আমাদের এখন বিয়ে হয়ে গেছে৷ আমাকে স্যার বলা বন্ধ কর। আমাকে নির্বণ বলে সম্মোধন করবে৷ যদি নির্বণ বলে ডাকতে না পারো তাহলে তোমার কথা শুনছি না৷ আমার নাম ধরে বল, ” নির্বণ আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।”
— নিয়তি আমতা আমতা করে, ” নি..নি..নি…”
— কি নি..নি করে যাচ্ছো? আমার নাম নি. নয় আমার নাম নির্বণ৷
— নিয়তি চোখ বন্ধ করে, ” নির্বণ আপনার সাথে কিছু কথা ছিল?”
— হুম বল, কি কথা? আমি শুনছি। আর হ্যাঁ রাগ করব না৷
— “আপনি আপনার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন তাই না৷ ” কোমল স্বরে ভয়ে ভয়ে বলে উঠে।
— নির্বণ ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” হুম আমাকে কাছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। তিনি এখন আর নেই৷ জানো নিয়তি রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটা আমার বাবা৷ ”
— আপনি জানেন আপনার জন্য আপনার বাবা কষ্ট পাচ্ছে । আপনি অনেক ভুল করছেন৷ আপনি কেন খাবার টেবিলে যান মা৷
— নিয়তি আমি কেন খাবার টেবিলে যায় না সেটা না জানলে ভালো?
— আমি সব জানি৷ আর এইজন্য তো আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি৷ আপনি জানেন কি?, ” বাবা সে দূর আকাশে তাকিয়ে আমাদের সবাইকে দেখছেন৷ প্লিজ আপনি বাবাকে আট কষ্ট দিবেন না৷ বাবা চাইনা আপনি আলাদা ভাবে খান৷ ”
— নির্বণ কিছু একটা ভেবে বলে উঠে, ” আমার এখন কিছু ভালো লাগে না৷ আমাকে এসব নিয়ে প্লিজ বিরক্ত করবে না৷”
— আপনি তাহলে রাজি এক সাথে খাওয়ার জন্য৷ আপনার পায়ে পড়ি আপনি প্লিজ আর বাবাকে কষ্ট দিবেন না৷ আপনার এমন ব্যবহারে বাবা কষ্ট পায়৷
— নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ভাঙা গলায় বলে উঠে , “আমি জানি তুমি ভুল বল না৷ তোমার সাথে নিশ্চয় বাবার কথা হয়৷ আমাকে একটু কথা বলিয়ে দাও না৷ আমি সকলের সাথে খাবো৷ আমি আর বাবাকে কষ্ট দিব৷”
চলবে….