#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর_২
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৫
সুখ অতি আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। অকল্পনীয় কোন সুখ যখন হুট করে এসে ধরা দেয় তখন মানুষ অনুভুতিশুন্য হয়ে যায়। ইভানের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই হয়েছে। কাল রাতের ঈশার কথাটা এখন অব্দি তার বিশ্বাস হচ্ছে না। রিপোর্টটা হাতে নিয়েও মনে হয়েছে এটা স্বপ্ন। চোখ খুললেই শেষ হয়ে যাবে। কারন এমন স্বপ্ন অনেকবার দেখেছে সে। ঘুম ভেঙ্গে হতাশায় কত রাত নির্ঘুম পার করেছে। সেসব কথা কেউ জানে না। এমনকি ঈশাও না। ভেতর থেকে প্রশান্তির একটা শ্বাস ছাড়তেই চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়লো এক ফোঁটা পানি। দ্রুতই সেটা মুছে ফেললো ইভান। পেছন ফিরে একবার ঈশার দিকে তাকাল। গুটিসুটি মেরে কম্বলে নিজেকে আবৃত করে ঘুমাচ্ছে। আধ খোলা চূলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে বালিশে। জানালার কাচ ভেদ করে আলোটা মুখে পড়ায় বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পড়েছে। ইভান একটু সামনে এসে দাঁড়ালো। আড়াল করে ধরল। ভালো করে নিজের চোখ মুছে নিলো। কোনভাবে এই চোখের পানি যদি ঈশা দেখত তাহলে কাল রাতের মতো ঠিক আবারো হেসে অস্থির হয়ে পড়ত। ঈশার কথা শুনেই ইভান রাতে কেদে ফেলেছিল। অনেক সময় ধরে কেঁদেছে। জীবনে অনেক ঝড় ঝাপটা গেছে কিন্তু সে কখনো কাদেনি। দাঁতে দাঁত চেপে সমস্ত কষ্ট সহ্য করেছে কিন্তু কখনো হার মানেনি। কাল রাতের অনুভূতিটা এতটাই সূক্ষ্ম ছিল যে সোজা গিয়ে বুকের ভেতরে আঘাত করেছিলো। অসহ্যকর একটা সুখময় ব্যাথা। ইভান সন্তানের আশা ছেড়েই দিয়েছিলো। তার কাছে ঈশাই সব। এতদিন পর আবার ঈশাকে পেয়ে সে নিজেকে সুখী ভাবতে শুরু করেছিলো। নিজের সব কষ্ট ভুলে গিয়ে জীবনটাকে উপভোগ করতে শুরু করেছিলো। কিন্তু ঠিক সেই সময় সৃষ্টিকর্তা তাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উপহারটা দিলো। চোখ বন্ধ করে ফেললো সে। ঠিক সেই সময় হালকা কুয়াশার আবরন ভেদ করে এক ফালি মিষ্টি রোদ ঝুপ করে পৃথিবীর বুকে পা রাখল। সোনালী রোদ্দুরের মিষ্টতায় সতেজ হয়ে উঠলো মূর্ছা যাওয়া প্রকৃতি। জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি স্থির করলো সে।
–আবার কাদছ নাকি?
গভীর ভাবনায় ডুবে থাকা ইভান আচমকা শব্দ শুনে ঘুরে তাকাল। ঈশাকে এভাবে মুখে হাত দিয়ে হাসতে দেখে বেশ অপ্রস্তুত হল। লজ্জাও পেলো কিছুটা। আচমকা এমন খুশীর খবর শুনে কাল রাতে নাহয় কেদেছিল মন ভরে। সেটা নিয়ে তাই বলে এখন হাসবে? এটা কেমন আচরন। সরু চোখে তাকিয়ে বলল
–হাসছ কেন?
ঈশা কোনরকমে হাসি থামিয়ে বলল
–এমনি।
ইভান বিরক্ত হল। সেখান থেকে চলে গেলো ওয়াশ রুমের দিকে। ঈশা তখনই বলে উঠলো
–তুমি ঘুমাওনি সারারাত?
ইভান থেমে গেলো। পেছনে না তাকিয়েই বলল
–নাহ!
ঈশা আর কোন কথা বলল না। ইভান ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। ঈশা বিছানায় গোল হয়ে বসে কিছু একটা ভাবছে। ইভান হাতমুখ মুছে কাছে এসে বসল। বলল
–কি ভাবছ?
ঈশা একটু চিন্তিত ভঙ্গীতে বলল
–আচ্ছা সবাইকে কথাটা কিভাবে বলবে? আমার তো ভাবতেই কেমন অসস্তি হচ্ছে।
ইভান ভ্রু কুচকে তাকাল। কথাটা মাথায় ঢুকতেই ঠোঁট চেপে হেসে বলল
–আমি কি জানি?
ঈশা যেন আকাশ থেকে পড়লো। বলল
–তুমি কি জানো মানে? আমি ভাবছি সবাইকে কিভাবে জানাবো আর তুমি বলছ তুমি জানো না? অদ্ভুত মানুষ।
ইভান হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল
–আমি তো আর প্রেগন্যান্ট না তাই আমার জানার কথাও না। তুমি কিভাবে সবাইকে জানাবে সেটা তোমার ব্যাপার। আমি এসব নিয়ে কি বলবো বল।
ঈশা ভীষণ রেগে গেলো। এক হাতে ইভানের মুখ ঘুরিয়ে বলল
–আমি প্রেগন্যান্ট কিন্তু বাচ্চার বাবা তুমি। তাই তোমাকেও এসবের দায়ভার নিতে হবে। এভাবে গা ছাড়া ভাব নিয়ে কথা বলবে না একদম।
ইভান একটু ভেবে বলল
–সবাইকে তো আলাদা করে বলা সম্ভব না। এক কাজ করি। একটা সমাবেশের আয়োজন করি। ওখানেই এনাউন্স করে দেয়া যাবে। তাহলেই আর এসব নিয়ে টেনশন করতে হবে না।
ঈশা রেগে গেলো। এরকম সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে ইভানের হেয়ালি কথা মোটেই ভালো লাগলো না তার। পাশ থেকে বালিশ তুলে ইভান কে মারল। ইভান হেসে ফেললো শব্দ করে। ঈশা আরও বেশী রেগে গেলো। মুখ লাল হয়ে গেলো তার। ইভান শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ঈশাকে। ঈশা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দমে গেলো। ইভান আবারো হেসে বলল
–তুমি এতো বোকা কেন? তোমার কি মনে হয় ইলহাম ভাইয়া এখনো কাউকে বলেনি? এসব ছোট বিষয় নিয়ে এতো ভাবার কিছুই নেই। আর আমি তো বলেছি আমি জতদিন বেঁচে আছি সব ভাবনা আমার। তোমাকে কোন কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। তুমি শুধু ভালো থাকো।
ঈশা ইভানের বুকে মাথা রেখে বলল
–জানি। আর জানি বলেই তো নিশ্চিন্তে থাকি।
————-
কিছুটা বেলা হতেই সারা বাড়িতে হইচই শুরু হয়ে গেলো। সবাই চলে এসেছে। খুশীর আমেজ চলছে বাড়ি জুড়ে। কি এক জরুরী কাজে ইভান বাইরে গেছে। ঈশাকে বলে গেছে খুব একটা সময় লাগবে না। তাড়াতাড়ি চলে আসবে। আর সে যাওয়ার পরেই বাড়ি ভর্তি হয়ে গেছে। সবার আসার কথা সে জানে না। এমনিতেই ইভানের জন্মদিনের জন্য সারপ্রাইজ দিতে সবার আসার কথা ছিল। তার উপর কাল রাতেই ইলহাম ইলুকে ফোনেই সব জানিয়ে দিয়েছিলো। ইলু কথাটা কোনভাবেই নিজের মধ্যে রাখতে পারেনি। সাথে সাথেই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। সবাই খুব খুশী। তাদের কথার তোড়ে ঈশা ভীষণ অপ্রস্তুত হচ্ছে। লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছে। ঈশার মা রান্না ঘরে। তিনি আজ সবাইকে রান্না করে খাওয়াবেন। ইভানের মা ঈশার পাশে বসে আছেন। তাকেও আজ বেশ হাসিখুশি লাগছে। এতো কিছুর মাঝে সায়ান অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলো
–ইভান কখন আসবে? আজও অফিসে যেতে হল? এটা কেমন কথা?
ঈশা নিচের দিকে তাকিয়ে মিনমিনে কণ্ঠে বলল
–একটু জরুরী কাজ আছে তাই যেতে হল। তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
ইলু সায়ান কে বলল
–তুমি একটা ফোন করত ভাইয়াকে। তাড়াতাড়ি আসতে বল। তাহলেই কাজ একটু তাড়াতাড়ি শেষ করবে।
সায়ান ফোন বের করে ইভানের নাম্বারে ডায়াল করলো। কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর ইভান ফোনটা ধরল। আশে পাশে অনেক শব্দ। ইভান বলল
–এতদিন পর মনে পড়লো আমার কথা। কি খবর তোর?
সায়ান কঠিন সরে বলল
–আমার খবর তোকে এখন নিতে হবে না। আমি তোর বাসায় বসে আছি খবর নিতে। কোথায় তুই?
ইভান একটু ভ্রু কুচকাল। বলল
–আমার বাসায় তুই?
সায়ান হাসল। দুষ্টুমির সরে বলল
–শুধু আমি না বন্ধু সবাই আছে। শুধু তোর অপেক্ষা। তাড়াতাড়ি আয়।
ইভান মৃদু হাসল। বলল
–আমি একটু ব্যস্ত। একটা জরুরী কাজ আছে। শেষ করেই আসছি। খুব বেশী দেরি হবে না।
কথা শেষ করে ইভান ফোন পকেটে রেখে এগিয়ে গেলো। ইলহামের চেম্বারের সামনে দাড়িয়ে ভাবল ঢুকবে কিনা। হাতের ঘড়িটা দেখে নিলো। এই সময়েই তো ইলহাম তাকে আসতে বলেছিল চেম্বারে দেখা করতে। তাই আর সময় না নিয়েই দরজা খুলে ঢুকে পড়লো। ইলহাম নিজের কাজে খুব ব্যস্ত। খেয়াল করেনি। ইভান বলল
–ভাইয়া আসবো?
ইলহাম চোখ তুলে তাকাল। উতফুল্য কণ্ঠে বলল
–আরে ইভান আয়। বস।
ইভান চেয়ারে বসে পড়তেই ইলহাম বলল
–শুভ জন্মদিন।
ইভান হাসল। বলল
–ধন্যবাদ। আজকে সবাই বাসায়। তুমি যাবে আমার সাথে? অনেকদিন সবাই একসাথে সময় কাটানো হয়না।
ইলহাম একটু ভাবল। কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে বলল
–তাহলে আজ দুপুরের লাঞ্চটা সবার সাথেই করি। ব্যস্ততার কারনে পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারিনা। আজ মিস করবো না। কাজ বাদ।
দুজনেই হেসে ফেললো। হাসি থামিয়ে বেশ গম্ভীর হয়ে গেলো ইলহাম। বলল
–তোর সাথে খুব জরুরী কিছু কথা ছিল।
ইভান ভ্রু কুচকে ফেললো। ভেতরে একটা অজানা ভয় চেপে বসল। ঈশাকে নিয়ে আবার নতুন কোন ঝামেলা নয়তো? এই খুশীর খবর টা শোনার পর থেকেই ঈশার মাঝে একটা অন্যরকম পরিবর্তন লখ্য করেছে সে। এতো খুশী এর আগে কখনো দেখেনি। আবার নতুন করে কোন ঝামেলা হলে ইভান কিভাবে ঈশাকে সামলাবে? ইভান বিচলিত হয়ে বলল
–ঈশাকে নিয়ে নতুন কোন কমপ্লিকেশন নয়তো ভাইয়া? সব ঠিক আছে তো? ঈশা কি সুস্থ আছে? আমাকে একদম সত্যিটা বল ভাইয়া।
চলবে……
(রিচেক করা হয়নি ভুলভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর_২
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৬
সকালের কুয়াশা কেটে গিয়ে রোদ উঠেছে বেশ ঝাঁঝালো। বদ্ধ ঘরে তেমন গরম অনুভুত না হলেও বাইরে বেশ গরম আবহাওয়া। আরও বেলা গড়ালে হয়তো গরমটা আরও বেশী অনুভুত হবে। এই রোদ্রজ্জল ঝলমলে দিনেও ঘরটার মাঝে লাইট জ্বলছে। জানালা দরজা সব বন্ধ। ভেতর থেকে বিশেষ এক শুভ্র রঙের পর্দা দিয়ে আবৃত। যাতে বাইরে থেকে ভেতরে দেখা না যায়। ঘরটার আবহাওয়া ঠাণ্ডাই বলা চলে। ইলহাম খেয়াল করলো এই মোটামুটি ঠাণ্ডা আবহাওয়াতেও ইভান ঘামছে। বেশ অস্থির ভাবে শ্বাস পড়ছে তার। তাকে এমন বিচলিত হতে দেখে বলল
–না না। ঈশা আপাতত ঠিক আছে। এতো চিন্তার কিছু নেই। তবে…।
ইভান একটু সস্তি পেলেও ইলহামের কথার ধরন শুনেই বুঝে গেলো কিছু একটা সমস্যা আছেই। একটা শ্বাস ছেড়ে বলল
–আমি বুঝতে পারছি ভাইয়া কোন সমস্যা আছে। তুমি আমাকে সবটা খুলে বল। কোন সমস্যা নেই।
ইলহাম মাথা নাড়ল। চিন্তিত কণ্ঠে বলল
–ঈশার কেসটা খুব রেয়ার। আমি তোকে আগেই বলেছিলাম যে ট্রিটমেন্ট হওয়ার পর যে ঈশা পুরোপুরি সুস্থ হবে সেটার চান্স কিন্তু অনেক কম। মোটামুটি টুয়েন্টি পারসেন্ট ছিল। ঈশা সেই ক্যাল্কুলেশনের মধ্যে পড়ে যায়। আর কন্সিভ করে। কিন্তু মেইন প্রবলেম হবে এখন। ঈশার ট্রিটমেন্ট করার সময়ই আমি তোকে বলেছিলাম ওর হাই লেভেলের এনিমিয়া আছে। ঈশাকে প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে ব্লাড দিতে হবে। তুই ডোনার রেডি রাখবি। আর তাছাড়াও ওর ইউট্রাস কন্সিভ করার জন্য রেডি হলেও সিস্ট কিন্তু পুরোপুরি ভাবে নির্মূল হয়নি। এর মাঝে প্রেগনেন্সি টা কিন্তু খুব রিস্কি। ওর ছোট ছোট বিষয়গুলো খুব ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে। খাবারের বিষয়টা বিশেষ করে গুরুত্ব দিতে হবে। টেনশন ফ্রি রাখতে হবে। কোনভাবে টেনশন করলে বা স্ট্রেচ নিলে কিন্তু অনেক ঝামেলা হবে। ঈশাকে সব সময় রিলাক্স রাখতে হবে। সেটা যে কোন ভাবেই হোক।
বলেই থামল। ইভান একটু চিন্তিত হয়ে বলল
–কমপ্লিকেশন কি খুব বেশী?
ইলহাম স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–এখনো নয়। তবে হতেই পারে। ঈশাকে খুব ভালো করে নিজের খেয়াল রাখতে হবে। এই সময় অন্তত কোন রকম খাম খেয়ালি লাইফ রিস্ক হতে পারে। সহজভাবে বললে একটু অসচেতনতার কারনে মিস্ক্যারেজ হতে পারে। আর এরকম হলে ঈশার লাইফও রিস্কে পড়ে যাবে। খুব খারাপ কিছুও হতে পারে।
ইলহাম থেমে শ্বাস টেনে আবার বলল
–ঈশার বিষয়টা কোনভাবেই নরমাল প্রেগনেন্সি না। তাই আলাদাভাবে কেয়ার করতে হবে। খুব ছোট ছোট বিষয়ে অনেক কিছু মেনে চলতে হবে। সেটা না করলে খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে। এটা হতো না যদি প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগে ঈশা ডক্টরের কন্সাল্টেশনে থাকতো। কিন্তু এখন তো আর কোন উপায় নেই। তাই ঈশাকে সবটা বুঝিয়ে বলতে হবে যাতে সে নিজের খেয়াল টা অন্তত ভালভাবে রাখতে পারে।
–ঈশাকে এসব কিছুই বলা যাবে না ভাইয়া।
ইভানের কথা শুনে ইলহাম স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। বলল
–ঈশাকে না বললে ওকে সুস্থ রাখা সম্ভব না। ঈশা জানবে তবেই তো নিজের খেয়াল রাখবে। না জানলে সে নরমাল প্রেগনেন্সি ভেবেই বিষয়টাকে গুরুত্ব দেবে না। তখন কি হবে বুঝতে পারছিস?
ইভান ভ্রু কুচকে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে গভীর ভাবে ভাবছে। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে বলল
–ঈশার খেয়াল আমার থেকে ভালো কেউ রাখতে পারবে না। ঈশা নিজেও না। আমিই ঈশার খেয়াল রাখবো। কিন্তু ওকে কিছুই জানাবো না। ঈশা যা জানবে পুরোটাই পজিটিভ। আমি ট্রিটমেন্টের ব্যাপারটাতেই ওকে কোন নেগেটিভ কিছু আন্দাজ করতে দেইনি। আর এখন তো কোনভাবেই দিব না।
ইলহাম ইভানের কথা শুনে বেশ বিরক্ত হল। বলল
–২৪ ঘণ্টা এভাবে তোর পক্ষে খেয়াল রাখা সম্ভব না। তোর অফিস আছে। দিনের বেলা সারাদিন তুই অফিসে থাকবি। সেই সময়টা তো অন্তত ঈশার উপরেই ছেড়ে দিতে হবে। তাছাড়া ঈশাকে সব কিছু জানালে সমস্যা কি সেটাই আমার মাথায় আসছে না।
ইভান বেশ শান্ত ভাবে বলল
–আমি ঈশাকে খুব ভালভাবে চিনি ভাইয়া। ওকে আমি কাল থেকে যতটা খুশী দেখেছি। ঠিক এভাবেই সব সময় দেখতে চেয়েছি। কিন্তু এতদিন ধরে আমি হাজার চেষ্টা করেও পারিনি ওকে খুশী রাখতে। এখন যদি এসব কথা ঈশা জানে। সে এসব নিয়ে টেনশন করবে। কোনভাবেই ভালো থাকতে পারবে না। আমি শুধু ওকে ভালো থাকতে দেখতে চাই। আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই। আর থাকলো ঈশার খেয়াল রাখার কথা সেটা আমার থেকে ভালো কেউ রাখতে পারবে না।
–কিন্তু ইভান…।
ইলহাম কে কথা শেষ করতে দিলো না ইভান। মৃদু হেসে বলল
–আমি সব ব্যবস্থা করে নিবো ভাইয়া। তুমি ভেবনা। আমি আছি তো। তুমি শুধু খেয়াল রেখো ঈশা যেন কোনভাবেই এসব না জানে। এমনকি ওর এনিমিয়ার কথাটাও নয়।
ইলহাম ইভানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ভাবল। তারপর বলল
–যদি ব্লাড দিতে হয় তখন কি করবি?
ইভান মৃদু হেসে বলল
–সেই সব কিছু আমার উপরে ছেড়ে দাও। যখন যেরকম প্রয়োজন হবে আমি সেরকম ভাবেই সব কিছু গুছিয়ে নেবো। ঈশাকে ওর কমপ্লিকেশনের ব্যাপারে কিছুই জানতে দেবো না। তোমার কাছে আরেকটা অনুরধ। এই বিষয় টা তোমার আর আমার মধ্যেই থাকবে। অন্যকেউ কোনভাবে জেনে গেলে ঈশার কান পর্যন্ত চলে যাবে। আমি এটা কোনভাবেই চাই না ভাইয়া।
ইলহাম মাথা নাড়ল। ইভানের কথায় পূর্ণ সম্মতি দিলো সে। সে জানে না ইভান এই মুহূর্তে ঠিক কি ভাবছে। কিন্তু এটা জানে সে যে কোন ভাবেই ঈশাকে ভালো রাখবে। এটা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই। ইভান নিশ্চিন্ত কণ্ঠে বলল
–চলো। সবাই বাসায় বসে আছে।
ইলহাম বলল
–তুই যা আমি ঠিক সময় মতো চলে আসবো। আমার একটু কাজ আছে।
ইভান উঠে দাঁড়ালো। ইলহামের হাত টেনে ধরে বলল
–একদম না। তুমি আমার সাথেই যাবে। আর এখনই যাবে।
–প্লিজ ইভান। আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা কর।
ইলহামের কথা শুনল না ইভান। তাকে জোর করে টেনে নিয়ে বের হতে হতে বলল
–কাজ পরে করবে। আমি তোমাকে কোনদিন এভাবে জোর করিনি। কিন্তু আজ কোন কাজ করবে না। চলো আমার সাথে।
ইলহাম আর কথা বলতে পারল না। ইভানের সাথে বের হয়ে চলে গেলো।
————-
কুয়াশা ঘেরা সকাল। বাইরে বেশ ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। রুমের ভেতরে তেমন একটা ঠাণ্ডা না। ঈশা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ইভান এখনো ঘুমেই। কাল দিনভর আড্ডা দেয়ার কারনে রাতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে ঈশা। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। ইভান ঠিক কখন ঘুমিয়েছে সে জানে না। তাই আর ডাকল না। একটু ঘুমাক। অফিসের জন্য একটু পরে তো উঠতেই হবে। ঈশা ফ্রেশ হয়ে বাইরে গেলো। নাজমা রান্না ঘরে নাস্তা বানাচ্ছে। ইফতিও উঠে গেছে। সে সকাল সকাল টিভি তে খবর শুনছে বেশ মনোযোগ দিয়ে। ঈশা এসে সোফায় বসে বলল
–তুই কখন উঠেছিস?
ইফতি অলস ভঙ্গীতে বলল
–আর বল না। একটা ফোন এসেছিলো। সেই যে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো আর কোনভাবেই আসলো না। তাই আর কি করবো। উঠে টিভি দেখছি।
ঈশা হেসে ফেললো। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলল
–আহা রে। কত কষ্ট তোর ইফতি। আমার খুব খারাপ লাগছে।
ইফতি ভ্রু কুচকে তাকাল। সরু চোখে তাকিয়ে বলল
–ভাবী আপু তুমি কি কোনভাবে আমার সাথে মজা করছ?
ঈশা আবার হেসে ফেললো। বলল
–অসম্ভব! আমি কি সেটা করতে পারি?
ইফতি বুঝতে পারল ঈশা মজা নিচ্ছে। তাই অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বলল
–দেখো ভাবী আপু এটা কিন্তু মোটেই ঠিক হচ্ছে না।
ঈশা হাসতে হাসতে বলল
–চা খেয়েছিস?
ইফতি মাথা নাড়ল। সে খায়নি। ঈশা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
–একটু দাঁড়া। আমি তোর ভাইয়াকে ডেকে আনি। অফিস আছে তো। এখনই উঠবে। তারপর একসাথে খাবো।
ইফতি মাথা নাড়ল। ঈশা ঘরে চলে গেলো। ইভান তখনও ঘুমাচ্ছে। আলতো করে মাথায় হাত রাখল। চুলের ভাজে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দিতেই ইভান চোখ খুলে ফেললো। কিছুক্ষন ঈশাকে দেখে নিয়ে বলল
–এতো তাড়াতাড়ি উঠেছ কেন?
ঈশা হাসল। তার হাসির আওয়াজে ইভানের মন ভরে গেলো। সেও মৃদু হাসল। ঈশা হাসি থামিয়ে বলল
–ঘুম ভেঙ্গে গেলে উঠবো না?
ইভান উঠে বসল। ঈশার কপালে পড়ে থাকা চূলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল
–ঘুম ভেঙ্গে গেলেই উঠতে হবে? শুয়ে থাকতে। বাইরে তো ঠাণ্ডা। এতো সকালে উঠলে ঠাণ্ডা লাগবে না?
ঈশা আবারো হাসল। বলল
–৮ টা বাজে। এখন অতটাও সকাল নেই। আর এই দেখো আমি শাল গায়ে দিয়েই বের হয়েছি। ঠাণ্ডা তেমন নেই।
ইভান মুচকি হাসল। ঈশা বলল
–এখন না উঠলে দেরি হয়ে যাবে। অফিসে যেতে হবে তো। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসো। ইফতি অপেক্ষা করছে। একসাথে খাবো।
কথা শেষ করেই ঈশা উঠে দাঁড়ালো। দরজার দিকে পা বাড়াতেই ইভান ডাকল
–ঈশা।
ঈশা থেমে গেলো। পেছনে ঘুরে বলল
–কিছু বলবে?
ইভান একটু ভাবল। একটা শ্বাস ছেড়ে বিছানা থেকে নেমে বলল
–পরে বলবো। তুমি যাও। আমি আসছি।
ঈশা বের হয়ে চলে গেলো। ইভান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইফতি আর ঈশা খাবার খাচ্ছে। ইভান ঈশার পাশের চেয়ার টেনে বসল। ইফতি মুখে খাবার পুরে দিয়ে বলল
–ভাইয়া তুমি কখন অফিস যাবে? আমিও তোমার সাথে বাইরে যাবো।
ইভান খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে বলল
–আমি অফিসে যাবো না।
ঈশা ভ্রু কুচকে বলল
–কেন? যাবে না কেন? শরীর খারাপ নাকি তোমার?
ইভান ঈশার দিকে তাকাল। বলল
–আমি রিজাইন দিয়েছি। চাকরি টা আর করবো না।
চলবে……
(রিচেক করা হয়নি। ভুল থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।)