#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৪
#Tanisha Sultana
“আমার শাড়িটা ছেড়ে দেওয়া হোক। আমি একাই পারবো।
নিধি জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে মিনমিনিয়ে বলে।
আদি নিধির পেটের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। নিধির কথা ওর কান ওবদি যায় না।
নিধি দুপা পিছিয়ে যায়। আদির হাতে ছিলো নিধির কুচি গুলো। নিধি সরে যাওয়াতে সব কুচি খুলে যায়। নিধি আদি দুজনই হকচকিয়ে যায়।
আদি উঠে দাঁড়ায়।
” স্টুপিট কোনো কান্ডবঙ্গান নেই তোমার? ইডিয়েট
নিধি চুপচাপ চোয়াল শক্ত করে। এই লোকটার সাথে কথা বলতেও কেমন লাগে নিধির। মানুষ এতোটা জঘন্য কি করে হয়।
আদি এগিয়ে এসে নিধির ব্লাউজের ফিতায় হাত দেয়।
“বললাম তো আমি পারবো
বেশ জোরে বলে নিধি।
” তো এতোখন করো নি কেনো? আদি পাল্টা প্রশ্ন করে।
“এই গোমড়া মুখোর সাথে কথা বলাই বেকার।
বিরবির করে বলে নিধি।
আর তখনই ইভা আসে
“নিধি গুড মর্ন
বলতে বলতে থেমে যায় ইভা। সাথে সাথে চোখ ঢেকে ফেলে।
” আমি কিছু দেখি নি। সত্যি। ইভা বলে
নিধি ছিটকে দুরে সরে যায়। আদি কিছুটা বিরক্ত হয়।
” তুই এখন
আদি জিজ্ঞেস করে
“সরি সরি ভেরি সরি
তোদের রোমান্টিক মোমেন্ট চলে আসলাম।
ইভা চোখ ঢেকে রেখেই বলে। নিধি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। এক হাত দিয়ে শাড়ি ঠিক করার চেষ্টা করছে।
” কি করতে এসেছিস বল? আদি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলে।
ইভা আদির দিকে তাকায়।
“নিধিকে দেখতে আসছিলাম
আদি কিছু বলে না।
” ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। তোদের কাজ শেষ হলে আসবো। ঠোঁট চিপে হেসে বলে ইভা। বেরিয়ে যেতে নেয়।
“আআআপু
নিধি কিছুটা জোরেই বলে। ইভা দাঁড়িয়ে যায়।
” কিছু বলবে?
ইভা হাসি মুখে বলে।
“একটু হেল্প করবা?
” হুমম বলো
“আমি চাইছি তুমি আর আমি ছাড় এখানে আর কেউ থাকলে সে এখান থেকে চলে যাক।
নিধি কর্কশ গলায় বলে। ইভা ভ্রু কুচকে তাকায় নিধির দিকে।
” ইডিয়েট
দাঁত কটমট করে নিধির দিকে তাকিয়ে আদি রুম থেকে চলে যায়।
“আপু আমাকে একটু চেঞ্জ করিয়ে দেবে? অনুরোধের সুরে বলে নিধি
” বরকে এভাবে বললে কেনো? কোমরে হাত দিয়ে বলে ইভা।
“যে যেমন তার সাথে তেমনই বিহেব করতে হয়।
ইভা ফিক করে হেসে ফেলে।
” ঠিক বলেছো।
ইভানিধিকে চেঞ্জ করিয়ে দেয়। নিধির সাথে কিছুখন কথা বলে চলে যায়।
প্রচন্ড খিধেয় পেট ধরে বসে আছে নিধি। কেউ এদিকে আসছেও না। এখানে যে একটা মানুষ আছে তা হয়ত সবাই ভুলেই গেছে।
শশুড় মশাই আর জিসান বলেছিলো সকালে আমাকে বাড়ি দিয়ে আসবে এখন ওদেরও খোঁজ নেই। নিধির এবার কান্না পাচ্ছে। এই বিয়েটা না হলেই ভালো হতো।
সুপের বাটিটা হাতে নিয়ে আদি রুমে ঢুকে। নিধির পাশেউ বাটিটা নামায়।
“ইচ্ছে হলে খেয়ে নিও
বলেই আদি চলে যায়। নিধি বাটিটা ফেলে দেয়।
” ও কি কুকুর বেড়াল না কি? ইচ্ছে হলে খেয়ে নিও বলা হচ্ছে।
চোখ দুলো লালা হয়ে আছে নিধির। চোখে পানি টলমল করছে।
কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে আবারও আদি রুমে আসে।
ফ্লোরে বাটিটা পরে থাকতে দেখে রেগে যায়।
“এটা কি করলে তুমি?
রাগে গজগজ করতে করতে বলে আদি।
নিধি উওর না দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। এখন থেকে চলে যাবে এখন। এই লোকটার কাছে থাকতে নিধির বাঁধে। মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করে না।
আদি নিধির হাত ধরে।
” ভেবেছিলাম খাওয়ার পরে তোমাকে তোমার বাড়িতে দিয়ে আসবো। কিন্তু এখন আর এটা হচ্ছে না। তোমার আর বাড়ি ফেরা হচ্ছে না।
নিধিকে আদি মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বলে।
নিধি চুপচাপ শুনে। আদির সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই তাই কিছু বলে না। নাহলে নিধিও কথা শোনাতে পারে।
“শুনতে পাওনি কি বললাম?
নিধির দুই কাঁধে হাত রেখে বলে আদি।
নিধি দুই পা পিছিয়ে যায়।
” এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? কথা বলো?
নিধি আদিকে পেছনে ফিরে দাঁড়ায়। ধপ করে রাগ বেরো যায় আদির।
“কথা বলতে বলছি তোমায়।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি। নিধি আগের মতোই থাকে।
আদি রাগে গিজগিজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। খাবার টেবিলে সবাই আদি আর নিধির জন্য অপেক্ষা করছিলো। আদি কারো সাথে কথা না বলে প্লেটে ভাত বেরে আবার হনহনিয়ে চলে যায়।
নিধি ওভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আদি প্লেটটা বিছানায় নামিয়ে নিধিকে টেনে বসায়।
” খাও
নিধির মুখের সামনে ভাত ধরে বলে।
নিধি মুখটা ঘুরিয়ে নেয়।
“খেতে বলছি
আবারও মুখের কাছে ভাত নিয়ে বলে আদি। নিধি এবারও নেয় না।
” খেতে তো তোমাকে হবেই
আদি নিধির মুখ চেপে ধরে ভাত মুখে দিয়ে দেয়। নিধি উপায় না পেয়ে গিলে ফেলে।
এভাবে সব গুলো ভাত খায়িয়ে দেয় আদি।
“আমার সামনে একদম এটিটিউট দেখাবা না।
বলে আদি প্লেট নিয়ে চলে যায়।
নিধি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ব্যাগ গুছায়। স্কুলে যেতে হবে।
আদি না খেয়েই অফিসে চলে যায়। নিধিকে খাওয়াতে গিয়ে নিজে খাওয়ার সময় পায় নি। অফিসের কাজের ভীষণ চাপ।
শাশুড়ী কাঠকাঠ গলায় বলে দেয় নিধি যেনো স্কুলে না যায়। গ্রাম থেকে আদির দাদিমা আর কাকাতো ভাই বোনেরা আসবে। নিধি আদির মায়ের সাথে রান্নায় হেল্প করতে গেছিলো কিন্তু উনি হাত লাগাতে দেয় নি।
জিসান স্কুলে গেছে। পুরো বাড়িটায় ফাঁকা ফাঁকা। নিধি ছাঁদে যায়। হাতের ব্যাথাটা বেশ খানিকটা কমেছে।
এই প্রথমবার নিধি আদিদের বাড়ির ছাদে এসেছে। বেশ কড়া রোদ এখনো। দুপুর গড়িয়ে সবে। ছাঁদের বা পাশে একটা আমগাছ দেখতে পায় নিধি। গাছটা একদম মাটি থেকে ছাঁদে উঠেছে। এক তালা বাড়ি এটা। অনেক অনেক আম আছে গাছে। কাচা আম। দেখেই নিধির জিভে পানি চলে আসে।
লঙ্কা গুড়োর সাথে লবন মিশিয়ে কাঁচা আম উফফফ। ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে নিধির।
এক দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে। শাশুড়ীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কাগজে মুরিয়ে লবন আর লঙ্কা গুড়ো নিয়ে আবার ছাঁদে যায়। সাথে একটা বই আর মোবাইলও নিয়ে যায়।
আম গাছটায় কয়েকটা আম বাঁধা। বাঁধা আম গুলো অনেক বড়বড়। নিধি আম গুলোর পিক তুলে। তারপর কিভাবে ছিড়ছে তারও পিক তুলে। ছাঁদের একপাশে বসে। আম খেতে থাকে। আর পিক গুলো ফেসবুকে পোস্ট দেয়।
চারটা আম খায় নিধি। দাঁত টকে গেছে। এবার আরাম করে গান শুনবে আর পড়বে।
আদি অফিসের কাজ শেষ করে একটু রিলাক্স করছে। কিছুদিন ফেসবুকে যাওয়া হয় না। ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকতেই দেখতে পায় নিধির আম খাওয়ার দৃশ্য। কয়েকদিন হলো নিধির রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করেছে।
আম গাছের বড়বড় আম গুলো আদিই বেধে রেখেছিলো আরও বড় হবে তাই।
সেই আদির প্রিয় আম গাছ থেকে আম ছিড়েছে। আদির প্রচন্ড রাগ হয়।
“খাওয়াচ্ছি তোমার আমি আম
বলেই আদি অফিস থেকে বেরিয়ে যায়।
চলবে
#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৫
#Tanisha Sultana
নিধি সবেমাত্র রুমে এসেছে। বই ফোন বিছানায় রেখে আয়নায় দাঁত দেখছে। ঠোঁটের এক কোনে আমের রস লেগে গেছে। সেখানটায় বেশ জ্বলছে নিধির। একটু ক্রিম নিয়ে লাগায় সেখানে। তারপর সেই না বিছানায় বসতে যাবে তখনই হুরমুর করে আদি রুমে ঢুকে।
“তুমি আমার আম কেনো খেয়েছো? রাগে গিজগিজ করে বলে আদি।
নিধি ভ্রু কুচকে তাকায়।
” চুপ করে আছো কেনো? চোর। আমার আম চুরি করে খেয়ে নিয়েছো।
বাঘের মতো গর্জন করে বলে আদি।
“আমি কারো আম খাই নি। আমি চোর না।
আমি আমার শশুড় বাড়ির গাছ থেকে আম খেয়েছি। ত্যারাভাবে বলে নিধি।
” যে আম গুলো খেয়েছো সেগুলো আমার।
“কোথাও লেখা দেখি নি। লিখা দেখলেও খেতাম।
মুখটা ঘুরিয়ে বলে নিধি।
আদি নিধির হাত ধরে বলে।
” খুব সাহস তোমার। কেনো খেলে আম?
“বেশ করেছি খেয়েছি। আরও খাবে। ইসসসস কাঁচা মিঠা আম। কি যে মজা। এখনো মুখে লেগে আছে। দেখেন?
নিধি হা করে দেখায়।
আদি নিধির কোমর জড়িয়ে ধরে। মুখটা নিধির মুখের দিকে এগিয়ে দেয়।
” আপনি মেবি দাঁত ব্রাশ করেন না? গল্প উপন্যাস সিনেমায় দেখি হিরোরা হিরোইনদের কাছে আসলে কেমন ফিদা হয়ে যায়। লজ্জা পায়। নার্ভাস হয়ে যায়। আর আমি সিগারেটের গন্ধে মূর্ছা যাই।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে নিধি।
আদি দাঁত কটমট করে নিধিকে ছেড়ে দেয়।
“ইডিয়েট
আদি বলে।
” আগে ভাবতাম আমিই একমাত্র মানুষ যে ইংরেজি পারে না। এবার দেখি আপনিও ইংরেজিতে কাঁচা। খালি ইডিয়েট স্টুপিট আর ননসেন্স ছাড়া কিছুই পারেন না।
নিধি বলে।
“আর একটা কথা বললে না
আদি রেগে নিধির দিকে তেরে এসে বলে
” আপনার সাথে কথা বলতে আমারও ইচ্ছে করে না। নিজেকে ছোট ছোট মনে হয়। আপনিই আসেন আগ বারিয়ে কথা বলতে।
ভেংচি কেটে বলে নিধি।
আদি মাথায় হাত দিয়ে খাটে বসে।
“আম খেয়েছি বলে দুঃখে আবার সুইসাইড করিয়েন না। আপনি চাইলে আমি বমি করে আম বের করে দিতে পারি। এখনও হজম হয় নি। আর আমি ভালো করে চিবিয়েও খায় নি।
আদির পাশে বসে বলে নিধি। আদি আগুন চোখে নিধির দিকে তাকায়। নিধি ঢোক গিলে এক দৌড় দেয়। দরজা ওবদি গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।আদির দিকে তাকিয়ে দুই হাত কানে দিয়ে ভেংচি কাটে আদিকে। তারপর দাঁত কেলিয়ে চলে যায়।
” ডিজগাস্টিং
আদি বিরবির করে বলে।
নিধি দৌড়াতে দৌড়াতে শাশুড়ীর সাথে ধাক্কা খায়। শাশুড়ী দাঁত কটমট করে তাকায় নিধির দিকে। নিধি একটা ঢোক গিলে কাচুমাচু হয়ে বলে
“সরি আন্টি। আমি খেয়াল করি নি।
” বাঁদরের মতো লাফাচ্ছিলে কেনো?
“আপনার ছেলে বাঘের মতো তাকিয়ে ছিলো তাই।
নিধির উওরে শাশুড়ী নরেনরে দাঁড়ায়।
” শাড়ি পড়ো। আমার শাশুড়ী এইসব জামা পছন্দ করে না।
“ঠিক আছে।
শাশুড়ী রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। নিধি জিসানের রুমে যায়। জিসান গেমস খেলছিলো।
” দোস্ত
জিসান গেমস এ মগ্ম থেকেই বলে।
“বল
” আমার রুম থেকে আমার একটা ড্রেস এনে দিবি?
“তোর কি হাত নেই?
” আছে বাট আমার রুমে বাঘ আছে।
নিধি চমকে তাকায় নিধির দিকে।
“বাঘ?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
” তোর ভাই। আমাকে সামনে পেলে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। প্লিজ এনে দে।
“পাঁচ মিনিট পরে এনে দেবো।
আবার গেমস খেলায় মন দিয়ে বলে।
” নাহহহ এখনি
নিধির জোরাজুরিতে জিসান চলে যায়।
সন্ধার দিকে দাদিমা আর আদির দুইজন কাজিন চলে আসে। সৌরভ আর নিলা।
নিধি লাল রংয়ের একটা থ্রী পিছ পরেছে। দাদিমার পাশে বসে আছে। দাদিমা এটা ওটা অনেক প্রশ্ন করে। নিধি ভদ্র মেয়ের মতো সব গুলো প্রশ্নের উপর দেয়।
আদি বাড়িতে এসে মিনিট পাঁচেক পরেই বেরিয়ে যায়।
নিধি ইন্টারফিউ শেষ করে রুমে যেতে নেয় তখনই শশুড় মশাইয়ের সামনে পরে।
“নিধিমা
নিধি অভিমান করেছে শশুড়ের ওপর। কাল কেনো ওকে বাড়ি দিয়ে আসলো না? আদি অপমান করলো তাও কিছু বললো না। নিধি কথা বলে না।
” আমার ওপর রাগ করেছিস?
“আপনি আমার কে যে আপনার ওপর রাগ করবো? অভিমান নিয়ে বলে নিধি।
শশুড় মশাই একটু হাসে।
” তুই কেনো এখানে আদির ওপর ডিপেন্ড করে চলবি? একদম আদির সাহায্য নিবি না। তাই আমি ঠিক করেছি তুই আমাদের অফিসে জয়েন করবি।
“আপনি বোধহয় ভুলে গেছেন আমি ক্লাস টেন এ পরি।
” তুই তো অফিসে কাজ করতে যাবি না। শুধু দেখবি কে কে কাজ করছে এগুলো।
আদি কি করছে না করছে এগুলোর ইনফরমেশন আমাকে দিবি।
“নিধি মাথা নারিয়ে চলে যায়। এটা ওর জন্য সুবর্ন সুযোগ। এতে করে ও বাবা মাকে সাহায্য করতে পারবে।
নিধি রুমে এসে বই নিয়ে বসে। পড়ায় মন বসছে না। একটু ফেসবুকে ঢুকে। আমের পিকে পাঁচশ লাইক পরেছে।
” এরকম লাইক হলে আমি প্রতিদিন আমের পিক আপলোড দেবো। নিধি মনে মনে বলে।
একটু ফেসবুক থেকে ঘুরেফিরে এসে বেলকনিতে গিয়ে পড়তে বসে।
পড়তে পড়তে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।
রাত এগারোটার দিকে আদি রুমে আসে। চারপাশে একবার ভালো করে তাকায়। কোথাও নিধি নেই।
“ইডিয়েটটা কোথায় গেলো?
মনে মনে বলে আদি ওয়াশরুমে যায়। চেন্জ করে ল্যাপটপ নিয়ে বেলকনিতে যায়। বেলকনিতে পা রাখতেই চোখ পরে নিধির দিকে।
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে। কোলের ওপর বই বের করা। চাঁদের আলো এসে পড়েছি নিধির মুখে। মুখ মায়াবী লাগছে নিধিকে। একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় আদি। খুব আপন মনে হচ্ছে নিধিকে। খুব করে ইচ্ছে করছে নিধির ঘুমন্ত মুখেটাকে কাঁধে রাখার।
কিন্তু যে কাঁধে জুঁই মাথা রেখেছিলো সেই কাঁধে কি করে নিধির মাথাটা রাখবে?
একটু একটু করে নিধির দিকে এগিয়ে যায় আদি। হাঁটু মুরে নিধির পাশে বসে। নিধির মুখের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলো অতি যত্ন সহকারে কানের পিঠে গুঁজে দেয়।
” মুখটা এতো মায়াবী কেনো? এই মুখটার দিকে তাকালে আমি আমার লহ্মের কথা ভুলে যাই। কিন্তু এটা তো হতে পারে না।
আদি নিধির মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে।
কিন্তু মন তা বুঝতে চাইছে না। খুব করে ইচ্ছে হচ্ছে নিধির কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতে। আদি নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে পারে না। নিধির কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। তারপর কিছুখন নিধির কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।
ধরফরিয়ে নিধির থেকে সরে আসে আদি।
মুখের সামনে মাছি তারানোর মতো হাত নারিয়ে আদি চোখ ফিরিয়ে নেয়। এদিক সেদিক চোখ ফেরায়।
তারপর নিধিকে কোলে তুলে নেয়। বিছানায় শুয়িয়ে দেয় নিধিকে।
কোমর ওবদি কোম্বল দিয়ে আদি বেলকনিতে চলে যায়।
ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙে নিধির। খুব আলসী লাগছিলো উঠতে তবুও উঠে বসে। ওজু করে নামাজ আদায় করে নেয়।
বেলকনিতে যেতেই দেখে আদি বেলকনিতে ঘুমিয়ে আছে। আজও কোলের ওপর ল্যাপটপ।
“আমার জন্য উনি কষ্ট করে বেলকনিতে থাকে। আমি আজ থেকে অন্য রুমে থাকবো। আমার জন্য উনি কষ্ট করুক এটা আমি চায় না।
বিরবির করে বলে নিধি।
রুমে গিয়ে পড়তে বসে।
ঘড়ি টিং করতেই আদি ধরফরিয়ে ওঠে। ঘাড় ব্যাথা করছে। হাই তুলে রুমে আসে।
“বললেই হতো আমার সাথে রুম শেয়ার করতে অসুবিধা হচ্ছে। আমি অন্য রুমে গিয়ে থাকতাম। এভাবে বেলকনিতে ঘুমানোর কোনো দরকারই হতো না।
নিধি বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে।
আদি এক পলক নিধির দিকে তাকায়।
” বেশি বুঝো কেন?
“বেশি বুঝি নি তো। দেখলাম বেলকনিতে ঘুমিয়ে আছেন তাই বললাম।
” বেশি কথা না বলে পড়ায় মন দাও। আর আমাকে উদ্ধার করো।
বলেই আদি ওয়াশরুমে চলে যায়।
নিধি রুম থেকে চলে যায়।
শাশুড়ি একা একা রান্না করছিলো।
“আন্টি আমি হেল্প করবো?
” থাক। তুমি কিছু ছুঁলেই তোমার হাত পুরে যায় হাত মোচকে যায়। তোমার শশুড় মশাই আবার আমাকে বকা দেবে।
শাশুড়ী রুটি বেলতে বেলতে বলে।
নিধি কড়াইতে হাত দিয়ে বলে
“আপনি শিখিয়ে দেবেন। প্লিজ
শাশুড়ী আর নাকরতে পারে না।
রান্না শেষ করে নিধি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে খাবার টেবিলে আসে। আদি তখন খাচ্ছিলো। নিধি তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করে আসি বলে চলে যায়। কারো কথা শোনার জন্য দাঁড়ায় না।
আদি আড় চোখে নিধির যাওয়ার দিকে তাকায়।
শশুড় মশাই টাকা দিয়েছিলো। রিকশা করে নিধি বাবার বাড়িতে যায়। কতোদিন বাবা মাকে দেখা হয় না।
চলবে