#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১২
#Tanisha Sultana
আদি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। নিধি আদির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। নিধি হাত দুটো মুঠো করে আছে।
“আপনার কি মাথা ব্যাথা করছে?
নিধি আদির দিকে একটু ঝুঁকে বলে।
” ঠিক আছি
চুল টেনে বলে আদি।
ইভা আসে
“নিধি আমার উনি এসেছে বুঝলে। তুমি আদির সাথে থাকো। আমি ওর সাথে একটু আড্ডা দেই। কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ডেকো।
নিধি মাথা নেরে সম্মতি দেয়।
নিধির বোরিং লাগছে। এরকম একটা পার্টিতে এসে চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েরা কি সুন্দর বফ হাজবেন্ডের সাথে ডান্স করছে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে।
নিধি আদির পাশে বসে। আদির চুলে হাত দেয়। আদি নিধির দিকে এক পলক তাকায়
” কি?
ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“কিছু না
নিধি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে।
” ইডিয়েট তুমি? ইভা বললো আর এটকম একটা শাড়ি পড়ে নিলে। চারপাশে তাকিয়ে দেখো সবাই কিরকম তাকিয়ে আছে। কেউ বাজে কমেন্ট করলে বুঝো? কেমন?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি। নিধি শাড়ির আচলটা টেনে নেয়।
“জুস খাবেন? ভালো লাগবে। এনে দেই।
” নো নিড
কপাল ঘসতে ঘসতে বলে আদি।
“বাট আমার তো আপনাকে প্রয়োজন।
বিরবির করে বলে নিধি।
” কিছু বললে? আদি জিজ্ঞেস করে।
“নাহহহ তো। মেকি হেসে বলে নিধি।
জুঁই আর জুঁইয়ের কিছু ফ্রেন্ডরা হাসাহাসি করছে। আদি নিধির দিকে এগিয়ে আসে।
“দেশে কি মেয়ের অভাব পড়ছিলো না কি মিস্টার আদি? একটা মেয়ের বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে নিলেন।
একটামেয়ে বলে।
” না কি জুঁইয়ের শোকে এমনটা করলেন?
বলেই আবার হাসা শুরু করে। জুঁইও হাসছে।
“তবে তোর বউটা কিন্তু জোশ। কি ফিগার। জাস্ট ফাটাফাটি।
একটা ছেলে বলে।
আদি ছেলেটার দিকে তাকায়। কিন্তু কিছু বলে না।
জুঁই আদির মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়।
আদিও দাঁড়ায়।
” তো মিস্টার আদি তুমি না বলতে আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাতেই শুরু তোমাতেই শেষ। মারাক্তক ভালোবাসেন। সারাজীবন ওয়েট আমার জন্য। প্রমিজও করেছো। এখন কোথায় গেলো তোমার সেই প্রমিজ। সেই ভালোবাসা নামক নেকামি। যখনই বাচ্চা একটা মেয়ে পেয়ে গেলে বিয়ে করে নিলে। লজ্জা থাকা উচিৎ। রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে জুঁই। নিধি চোয়াল শক্ত করে।
“মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছো।
নিধি এবার আর চুপ থাকতে পারলো না।
” আপু আপনার বাবা কি ১২ বছরের বিয়ে করেছিলো? বা আপনার ভাই বা রিলেটিভ কেউ কি ১২-১৩-১৪ বছরে বিয়ে করেছে?
আমার বাবা আমার থেকে সাতাইশ বছরের বড়। আমার শশুড় মশাইও সেম। আপনাদের বাবা মেবি আপনাদের থেকে ১২ বছরের বড়।
নিধির কথায় জুঁই চোয়াল শক্ত করে।
“সাট আপ
ধমক দিয়ে বলে।
” ইউ সাট আপ।
পিচ্চি হতে পারি কিন্তু আপনাদের মতো মাথা মোটা না। বুঝে শুনে কথা বলতে পারি। বিয়েটা কখনো সমানে সমানে হয় না। ছেলেরা মেয়েদের থেকে বড় হয়। আপনার মা মেবি আপনার বাবার থেকে বড় তাই আপনি এটা জানেন না।
জুঁই রাগে গিজগিজ করে তাকায়।
“আদি তোমার বউয়ের সাহস হয় কি করে আমার সাথে এভাবে কথা বলার? আদির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে জুঁই।
” নিধি হচ্ছে টা কি? আদি উঠে দাঁড়িয়ে নিধির হাত ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“তোমার বউকে বলে দিও আমার সাথে কেউ মাথা উঁচু করে কথা বলে না। তুমিও না। জুঁই বলে।
”
নিধি আহত দৃষ্টিতে তাকায় আদির দিকে।
“আপনি দেখতে পাচ্ছেন না কি হচ্ছে? ওরা কিভাবে বলছে। ইনসাল্ট করছে আমাকে। শুনছেন না?
নিধির কথা শেষ হওয়ার আগেই আদি ধমকে বলে ওঠে
” মুখে মুখে তর্ক করলে এক চর দেবে।
পুরো রুমটা কেঁপে ওঠে।নিধি ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।
ইভা দৌড়ে আসে।
“আদি ওকে বকছিস কেনো?
আদি কিছু বলে না।জুঁই তৃপ্তির হাসি হাসে। ইভা নিধিকে শান্তনা দিতে যায়।
” আমার সান্ত্বনার দরজার থেকে সাপোর্টের দরকার।
“আপনি আমাকে বকলেন? আই হেট ইউ। আর কখনো কথা বলবো না আপনার সাথে। একটু ভালোবাসি বলে পিছু পিছু ঘুরি বলে সব সময় বকা দেন। কখনো কথা বলবো না।
বলেই নিধি দৌড়ে বেরিয়ে যায়। ইভা নিধির পেছন পেছন যায়।
জুঁই আদির সামনে এসে দাঁড়ায়।
“ভালোই। প্রেম করলে সুন্দরী শিহ্মিত স্মার্ট মেয়ের সাথে। আর বিয়ে করলে অশিক্ষিত পিচ্চিকে। বাহহ তাও আবার নেকামিতে সেরা। তাচ্ছিল্য করে বলে জুঁই।
” তোমাকে এখনও খুব ভালোবাসি তাই তোমার অপছন্দের সব কিছু আমি সরিয়ে দেই। কিন্তু যেদিন তুমি আমার মন থেকে বেরিয়ে যাবে সেদিনই শুরু হবে তোমার দুঃখের দিন।
তোমাকে বারবার বলছি কাউকে এতোটাও আঘাত দিও না যাতে সে মন থেকে তোমাকে অভিশাপ দেয়।
আঙুল তুলে বলে আদি।
আদিও বেরিয়ে আসে।
নিধি ফাঁকা রাস্তায় দৌড়াচ্ছে। জুতো খুলে ফেলে দিছে। শব্দ করে কান্না করছে। রাত দশটা বেজে গেছে। রাস্তা ঘাটে গাড়ি নেই বললেই চলে। দোকানপাট গুলো খোলা আছে এখনো।
কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তাও জানে না নিধি। শুধু এটুকু জানে ও এখানে থাকবে না। ওকে অপমান করা হয়েছে। নিধি ছোট হলেও মান অপমান বোধটা ওর খুব বেশি। ওকে সামান্য কিছু বললেও ওর কষ্ট হয়। কারো কথা সয্য হয় না নিধির। ও যাকে ভালোবাসে তার থেকে অবহেলা মেনে নিতে পারে না। তবুও আদির অবহেলা মেনে নিয়েছিলো। কিন্তু সবার সামনে বকা দেওয়াটা মেনে নিতে পারছে না।
ইভা কিছুটা দৌড়ে আসছিলো নিধির পেছনে দাঁড়িয়ে গেছে। আদি গাড়িতে গিয়ে বসে। ইভা আদির দিকে আসে।
“আদি কি করলি তুই এটা?
নিধি তো ভুল কিছু বলে নি।
আদি গাড়ির ছিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে।
” আমাকে একটু একা ছেড়ে দে।
“নিধি কোথায় গেছে জানি না। ইভা বলে ওঠে।
আদি ধপ করে চোখ খুলে।
” মানে?
“দৌড়াতে দৌড়া এই রাস্তা দিয়ে চলে গেছে।
” ইডিয়েট
আদি চোখ মুখ কুঁচকে বলে। গাড়ি স্ট্রাট দিয়ে চলে যায়।
নিধি দৌড়াতে দৌড়াতে আদির বাবার গাড়ির সামনে গিয়ে পড়ে। হাতে বেশ ব্যাথা পায়। আদির বাবা তারাহুরো করে বেরিয়ে আসে।
“নিধিমা তুমি এখানে?
বিচলিত হয়ে নিধির পাশে বসে বলে। নিঅি হাত ধরে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।
” হাতে ব্যাথা পেয়েছিস? দেখা আমাকে
আদির বাবা নিধিকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আদি পুরো রাস্তা খুঁজে নিধিকে পায় না। ফাঁকা জায়গায় গাড়ি থামিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
“কোথায় গেলো ও? কিছু হয় নি তো ওর? মনে মনে ভাবে আদি।
আদির ফোনটা বেজে ওঠে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে। জিসান নামটা স্কিনে ভেসে ওঠে। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে নেয়।
” বল
“নিধি হাসপাতালে
” কি হয়েছে?
“জানি না। চলে আয়।
আদি আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
হাতের ব্যাথাটা বেশ গাড় ছিলো। ভাঙে নি। কিন্তু মোচকে গেছে। নিধি এখনো কেঁদেই যাচ্ছে। চোখ মুখ ফুলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। নিধির পাশে আদির বাবা মা আর জিসান বসে আছে। এক ঘন্টা যাবৎ কান্নার কারণ জানতে চাইছে কিন্তু নিধি বলছেই না।
” আআমি বাবার কাছে যাবো।
হেঁচকি তুলে বলে নিধি।
“ঠিক আছে যাবি। কিন্তু বলবি তো কি হয়েছে?
আদির বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে। নিধি বলে না।
একটু পরেই আদি চলে আসে।
” তোমরা যাও আমি ওকে নিয়ে আসছি।
আদি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
আদিকে দেখে নিধি মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
“পারবা তো?
বাবা জিজ্ঞেস করে।
” হুমম
ওরা চলে যায়। আদি নিধির পাশে গিয়ে বসে।
“ইডিয়েট স্টুপিট ওভাবে দৌড়ে আসছিলা কেনো? চোখে দেখো না তুমি? প্রতিবন্ধী না কি তুমি?
ধমক দিয়ে বলে আদি।
নিধি নিজে নিজে নামতে যায়। শাড়িতে বেঁধে আবার পরে যেতে নেয়। আদি ধরে ফেলে।
” এই মেয়ে কি তুমি হ্যাঁ
মারাক্তক বিরক্ত হয়ে বলে আদি। নিধি আদির হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। ব্যাথা পাওয়া হাতটা উঁচু করতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে নিধি। তবুও হাঁটতে থাকে।
“এটা কে হ্যাঁ
আদিও নিধির পেছনে পেছনে যায়। নিধি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ায়। রাত এগারোটা বেজে গেছে। রাস্তা ঘাট শূন্য। আদি গাড়িতে বসে গাড়িটা নিধির সামনে নিয়ে আসে।
দরজা খুলে দেয়।
” বসো
নিধি না বসে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে।
“আমাকে পাগল করে দেবো।
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নামে। নিধির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
” ভালো ভাবে কথা বলছি কানে যাচ্ছে না?
কোমরে হাত দিয়ে বলে। নিধি পাত্তা না দিয়ে যেতে নেয়। আদির এবার বিরক্তির চরম শিখরে পৌঁছে যায়। আচমকা নিধিকে কোলে তুলে নেয়। নিধি চমকায় তবুও কিছু বলে না। নিধি গাড়িতে বসিয়ে নিজেও উঠে বসে। নিধি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
আদি হঠাৎ নিধির কাছে চলে যায়। গাড়ির সিটের দুই পাশে হাত রেখে নিধির মুখের দিকে মুখটা এগিয়ে নেয়। নিধি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। আদি এক পলক তাকায় সেদিকে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। যার পুরো বাতাসটা নিধির চোখে মুখে আচড়ে পড়ে। মোচকানো হাতটা দিয়ে শাড়ি মুঠো করে ধরতে গেলে আবারও ব্যাথা পায়। “আহহহহ” করে ওঠে।
আদি সেদিকে তাকায়
“ইডিয়েট
পিচ্চি
চলবে
#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৩
#Tanisha Sultana
চোখে মুখে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে আদি বসে আছে নিধির মুখোমুখি। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লালা হয়ে গেছে। চোখের পাপড়ি গুলো ভিজে গেছে। চোখ ফুলে গেছে। কাজল লেপ্টে গেছে চোখের চারপাশে। গোছালো চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। লিপস্টিক মুছে গেছে।
“মা সকালে দিয়ে আসবো তোকে।
হাই তুলে বলে আদির বাবা।
আদির মা চরম বিরক্তি হয়ে বসে আছে। জিসান নিধির পাশে বসে ঝিমচ্ছে।
নিধি সেই তখন থেকে জেদ ধরে আছে ও বাড়ি যাবে। কিছুতেই থাকবে না এখানে।
রাত একটা বেজে গেছে। এতো রাতে কি করে নিয়ে যাবে ওকে?
আদি চুপচাপ নিধির সামনাসামনি বসে আছে। এতোখন কিছুই বলে নি। বাবা এখানে আছেন। উনি কি বলে দেখার জন্য।
” আমি এখনই যাবো। থাকবোই না এখানে।
নিধি বাম হাতটা দিয়ে চোখ মুছে হেঁচকি তুলে বলে।
“ফাইন
যাও দরজা তো খোলাই আছে।
কপালে হাত ঘসতে ঘসতে বলে আদি।
নিধির রাগ বেরে যায়। সত্যিই তো দরজা খোলা আছে। ও তো একাই যেতে পারে। এখানে কেউ ওর আপন নয়। কেউ ভালোবাসে না ওকে। কেউ ভাবে না ওর জন্য।
কিসের আশায় বসে আছে? কেউ দিয়ে আসবে ওকে? এই আশায়?
নিধি ব্যাথা পাওয়া হাতটা ধরে আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়।
” নিধি এতো রাতে যেতে পারবে না। সকালেই তোমাকে দিয়ে আসবো আমি। প্রমিজ
শশুড় মশাই বলে।
নিধি ওনার কথার তোয়াক্কা না করে দরজার দিকে হাঁটা শুরু করে।
আদি কিছুটা চমকে যায়। নিধি সত্যি সত্যি চলে যাবে এটা ও ভাবতেও পারে নি। এই মেয়ে এতো জেদি কেনো?
আদির বাবা এগোচ্ছে না। কারণ ওনার বিশ্বাস আদি আটকে দেবে নিধিকে।
“এই মেয়ে শশুড়ের কথা শুনতে পাচ্ছো না?
কর্কশ গলায় বলে আদির মা। নিধি পেছন ফিরে তাকায় না।
জিসান এক লাফে উঠে বসে। এক দৌড়ে নিধির কাছে যায়। নিধির হাত ধরে
” চল আমি আর তুই এই বাড়ির উঠোনে বসে গল্প করি। তারপর সকাল বেলা তোকে দিয়ে আসবো। আমিও চায় না তুই এখানে থাক।
আদির দিকে তাকিয়ে বলে জিসান। নিধি জিসানের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে যায়। জিসান শক্ত করে ধরে।
“আমি তো তোর বেষ্টু। আমার কথা শুনবি না?
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে জিসান।
” জিসান তুই ঘুমতে যা। আর ড্রামা কুইন আমরা ঘুমবো এখন। সিনক্রিয়েট না করে রুমে যাও।
আদি উঠে দাঁড়িয়ে বলে।
জিসান আর নিধি আদির কথায় পাত্তা দেয় না।
আদি ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিধির হাতটা জিসানের হাত থেকে ছাড়িয়ে দেয়। আদি হাতটা শক্ত করে ধরে।
“মানুষ যে এতো ড্রামা কি করে করে? ওহহ গড
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে। নিধি হাত টেনে নিয়ে যেতে নেয়। নিধি হাঁটে না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কথা বলবেই না আদির সাথে। তাই কিছু বলছে না। নাহলে অনেক কিছু বলতো।
আদি নিধির দিকে তাকায়। বাবা মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে চট করে কোলে তুলে নেয় নিধি। বাবা মা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তারাতাড়ি করে চলে যায়। জিসান ছিটি বাজাতে বাজাতে চলে যায়।
নিধি এখন আর চুপ থাকে না। বা হাত দিয়েই আদির বুকে কয়েকটা কিল দেয়৷ আদি কিছুই বলে না। রুমে নিয়ে যায় নিধিকে।
এখন শব্দ করে কাঁদছে নিধি। কেনো বকলো আদি ওকে?
আদি নিধিকে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। উঠে আসতে গিয়েও উঠে না। নিধির দুইপাশ দিয়ে বিছানায় হাত রেখে নিধির দিকে একটু ঝুকে। আপনাআপনি নিধির কান্না বন্ধ হয়ে চোখ বড়বড় হয়ে যায়।
” আমার ওমনটা করা ঠিক হয় নি। মাথা ঠিক ছিলো না।
ফিসফিস করে বলে আদি। আদির এইরকম ফিসফিসিয়ে বলা কথাটা নিধির শ্বাস বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট।
আদি নিধির চোখে লেপ্টে থাকা কাজল হাত দিয়ে মুখে দেয়।
“ছোট ছোট বিষয়গুলোতে কখনোই চোখের পানি ফেলতে নেই। চোখের পানির মূল্য অনেক।
বলে কপালে লেপ্টে থাকা চুল সরিয়ে দিয়ে উঠে যায় আদি। কাবাড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। নিধি এখনো স্তব্ধ হয়ে আছে। চোখের পলকই পড়ছে না।
সকাল বেলা হাতের ব্যাথা আর প্রচন্ড জ্বরে নিধি কাতরাচ্ছে। ঠকঠক করে কাঁপছে। মোটা মোটা দুটো কম্বলও ওর শীত কমাতে পারছে না।
আদি বেলকনিতে মাদুর পেতে ঘুমিয়েছিলো। ইচ্ছে করে না। অফিসের কিছু কাজ ছিলো সেগুলো করতে করতে কখন চোখ লেগে গেছিলো বুঝতেই পারে নি।
সূর্যের আলো চোখ মুখ আচড়ে পড়তেই আদি জেগে যায়। ল্যাপটপ নিয়ে মাদুর গুটিয়ে রুমে এসে দেখে নিধি কাঁপছে।
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ও জানতো এমনটাই হবে। আলমারি থেকে আরেকটা কোম্বল এনে ওটাও নিধির গায়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে যায় আদি। ফ্রেশ হয়ে এসে কিচেনে যায়। মা রান্না করছে।
” আমাকে ছুপ বানিয়ে দাও
আদি এক পাশে দাঁড়িয়ে বলে।
মা আদির দিকে তাকায়।
“তুই তো ছুপ খাস না বাবু।
” ওই মেয়েটার জ্বর হয়েছে। ওর জন্য।
বলেই আদি চলে আসে।
মা সুপ বানাতে থাকে।
আদি রুমে এসে নিধিকে ডাকে। নিধির জ্বর কমে গেছে। ঘেমে নেয়ে একাকার। নিধির জ্বর এমনই এই আসে এই যায়। লাথি দিয়ে কোম্বল ফেলে দেয়। ঘুমের রেস এখনো কাটে নি। যে শাড়ি পড়ে পার্টিতে গেছিলো সেই শাড়িটাই এখনো পরে আছে। রাতে চেঞ্জ করে নি। ওভাবেই ঘুমিয়েছিলো।
“এই উঠো
আদি নিধির বা হাতটা ধরে ঝাঁকিয়ে বলে। নিধি নরেচরে ওঠে। ডান হাতে একটু ব্যাথা পায়। চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়।
আদির বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। নিধির এইরকম চাহনি আদিকে ঘায়েল করে দিচ্ছে। কেমন যেনো মেয়েটাকে ভালো লাগতে শুরু করেছে। আদি এদিক সেদিক চোখ ফেরায়।
” ফ্রেশ হয়ে ঔষুধ খেয়ে নিলে ভালো হয়।
বলেই আদি রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নিধি উঠে বসে। রাতের থেকেও হাতটা এখন আরও বেশি ব্যাথা হয়েছে।
কোনোরকমে এক হাত দিয়ে ফ্রেশ হয় নিধি। শাড়ি পাল্টাতে পারছে না। তাই ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কারো হেল্প দরকার। কিন্তু কার কাছে হেল্প চাইবে এটাই ভাবছে।
আদি রুমে পায়চারি করছে। নিধি বের হলে ও গোছল করবে। অফিস আছে। কিন্তু নিধিই তো বের হচ্ছে না।
“আর কতোখন?
দরজায় টোকা দিয়ে বলে আদি।
নিধি শাড়িটা কোনরকমে পেচিয়ে বেরিয়ে আসে। আজ আর চেঞ্জ করা হবে না।
নিধিকে এভাবে বের হতে দেখে আদি ভ্রু কুচকে তাকায়।
” তা এই শাড়িটা আর কতোদিন পরে থাকবে বলে ঠিক করেছো?
আদি বলে।
নিধি উওর না দিয়ে খাটে গিয়ে বসে। একেতে জ্বরের জন্য মুখ তেঁতো লাগছে। তারপর পেটে প্রচন্ড খিধে। তারওপর এই শাড়িটা। সব মিলিয়ে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।
“কথা কানে যাচ্ছে না? সিরিয়াসলি
তোমাকে একটা ধমক দেওয়াতে এতো ড্রামা দেখতে হবে জানলে ধমকই দিতাম না। ইডিয়েট একটা।
নিধি চোয়াল শক্ত করে দাঁত কটমট করে তাকায় আদির দিকে।
” আমাকে চোখ রাঙাচ্ছো? আদি এগিয়ে এসে বলে।
হেল্প করবে আমি?
নিধি মুখ ফিরিয়ে নেয়।
“হেল্প করবো না কি? কিছুটা চেচিয়ে বলে আদি।
নিধি চোখ মুখ কুঁচকে। আদিকে জাস্ট অসয্য লাগছে।
” ওঠো
নিধির দিকে হাত বারিয়ে বলে আদি।
নিধি তাকায়ও না ওই দিকে।
“বড্ড বার বেরেছো তুমি? ঠাটিয়ে একটা চর দিলে ঠিক হয়ে যাবা।
নিধি দাঁত কটমট করে উঠে দাঁড়ায়। রুম থেকে বেরিয়ে যেতো নেয়।
” এই মেয়ে কোথাও যাবে না। বড়দের কথা শুনতে হয়। জানো না তুমি?
নিধি দাঁড়িয়ে যায়। আদি কাবাড থেকে নিধির জন্য নীল রংয়ের একটা থ্রী পিছ বের করে আনে।
“এসো চেঞ্জ করিয়ে দিচ্ছি
আদি থ্রী পিছের ভাজ খুলতে খুলতে বলে। নিধি কপালে দুটো ভাজ ফেলে তাকায় আদির দিকে। আদি কি করে ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দেবে আদি?
” কথা কানে যাচ্ছে না? এদিকে এসো
তারা দিয়ে বলে আদি।
“আর হ্যাঁ দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসো
আদির কথায় নিধি চমকে ওঠে। এক হাত দিয়ে শাড়ি মুঠো করে ধরে।
” আমার কাছে না অফুরন্ত সময় নেই। ভীষণ বিজি মানুষ আমি। তোমার পেছনে সময় নষ্ট করার ইচ্ছে বা সময় কোনোটাই নেই আমার। সো কুইক
নিধির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে আদি।
“এবার কি হবে? উনি কি করে? ছি ছি ছি এবার কি করবো আমি?
নিধি ঢোক গিলে মনে মনে বলে।
আদি নিধির শাড়িতে হাত দেয়। কাঁধের কাছের পিনটা খুলে দেয়। পেটে ঢেকে রাখা পিনটাও খুলে দেয়। নিধি চোখ বন্ধ করে ফেলে।
আদি নিধির উন্মুক্ত পেটের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে।
চলবে।