#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ৫
” একেতো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন তার উপর এভাবে হা করে কি দেখছেন হা? ” প্রচন্ড ক্ষোভে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বলল কুহু।
আদ্র কি বলবে বুঝতে পারেনা।
” এই!আমি যেখানেই যাই তুমি কোত্থেকে চলে আসো? ”
” প্লুটো থেকে আসি বুঝেছেন? ”
” স্টপ দিস!এখানে কি করছো তুমি? ”
” কেন দেখতে পাচ্ছেন না কি করছি?আপনি এখানে কি করছেন শুনি? ”
তাদের কথার মাঝেই ইকরা গেটের বাহিরে বেরিয়ে এলো।সে এতক্ষণ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল।কুহুকে আসতে দেখে যেই না হাত নাড়িয়ে ডাকতে যাবে,অমনি কুহু আর আদ্রর ধাক্কা।যা দেখে সে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর তাদের দুজনের ঝগড়া দেখে দ্রুত নেমে আসে।এসেই কুহুর মুখ চেপে ধরে।তারপর আদ্রকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
” ইয়ে ভাইয়া!আসলে ও একটু এমনই।কিছু মনে করবেন না। ”
আদ্র বলল,
” হুম দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারছেড়া। ”
কুহু ইকরার হাত সরিয়ে গর্জিয়ে বলল,
” এই কি বললেন আপনি?আবার বলুন তো? ”
” কেন বয়রা নাকি তুমি? ”
” ইউ রাবিশ! ”
ইকরা আবার কুহুর মুখ চেঁপে ধরে,
” চুপ চুপ!ভ,ভাইয়া আপনি যান।ওকে আমি দেখছি। ”
” হুম..দেখে রাখিস।কোন সময় উড়ে এন্ড্রোমিডায় চলে যায়। ”
বলেই হেসে চলে গেল।কুহু এক ঝটকায় ইকরার হাত সরিয়ে বলল,
” কি হ্যাঁ কি?এভাবে চেপে ধরে ছিলি কেন? ”
” তুই আদ্র ভাইয়াকে এভাবে উল্টাপাল্টা বকছিস তো ধরব না? ”
” কেন কি হয়েছে?উনি কোন গ্রহের রাজা যে উনাকে বকলে পৃথিবী উল্টে যাবে? ”
” আরে…পাগল হলি নাকি?চল চল এখান থেকে। ”
বলেই কুহুর হাত ধরে টানতে টানতে সিড়ি বেয়ে ইকরার ঘরে নিয়ে গেল।তারপর ইকরার মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলে নাস্তা করে রুমে আসল দুজন।
” এবার বল।ওই কি নাম যেন?হ্যাঁ হ্যাঁ ভাদ্র!উনি তোকে তুই করে বলছিল কেন?আর উনাকে বকলে কি এমন হবে?হুহ্! ”
” আরে আরে কাম ডাউন সিস!এট ফার্স্ট ইট’স আদ্র নট ভাদ্র।এন্ড সেকন্ড উনি আমার ভাইয়ের বন্ধু। ”
” হোয়াট!তোর ভাই এমন তেঁতোটাকে বন্ধু বানালো।কি বাজে কি বাজে! ”
” চুপ!বেশি কথা বলিস না।উনি খুব ভালো মানুষ জানিস? ”
” এহ্!করলার জুস।যত্তসব! ”
” আর উনার নামে দয়া করে এখানে কিছু বলিস না।তার হোস্টেল এখানেই। ”
” হোস্টেল! ” ভ্রু কুঁচকে বলল কুহু।
” কেন? ”
” ব্যাটা হোস্টেলে থাকে?হুহ্!এমন ভাব নেয় যেন বড়লোক বাপের ছেলে। ”
” বড়লোক বাপেরই তো। ”
” মানে? ”
” এতদিন ইউ এস ছিল।এসেছে কিছুদিন হলো। ”
” ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করতো আমার মাথায় কিছু আসছেনা। ”
ইকরা বিছানায় বসে বলল,
” উনি ছোট থেকে ইউ এস ছিলেন।প্রায় ২০ বছর ধরে।এক আত্মীয়র কাছে।এর মধ্যে প্রায় অনেক বার এসেছে।কিন্তু তার বাড়িতে যায় নি। ”
” কেন? ”
” এটা সেই জানে।এবার পার্মানেন্টলি চলে এসেছে। মাস্টার্স এই বছর শেষ হবে তার। ”
” ওহ্!ভালো ভালো।ব্যাটা এত তেঁতো কেন? ”
” কি বলিস এগুলা? ”
” যাক বাদ দে। ”
_____________
” এই ভাদ্র ব্যাটার রহস্য বুঝতে পারছিনা। ” কুহু পায়চারি করতে করতে বলল।
সামনেই বিছানায় তাসনি আর রুবিনা বসে আছে।তাসনি বইয়ে ডুবে আছে আর রুবিনা মোবাইলে।কুহুর কথা শুনে মাথা তুলে তাকাল।তাসনি ভ্রু কুঁচকে বলল,
” কোন ভাদ্রের কথা বলছো? ”
” আরে তোর ওই এক্টর ভাই। ”
তাসনি লাফিয়ে উঠে,
” এক্টর ভাই?তার নাম ভাদ্র? ”
এত কিছুর মাঝে রুবিনা ভ্রু কুঁচকে বলে,
” ভাদ্র,এক্টর ভাই এসব কি? ”
তাসনি আর কুহু রুবিনার দিকে তাকায়।কুহু চুপ করে থাকলেও তাসনি সব গরগর করে বলে দিল।
” ওয়াও!ইশ..একশন টা দেখা উচিত ছিল।ভিডিও আনতে পারলি না? ” রুবিনা বলল।
” ধুর আমি জানতাম নাকি?এক্সিডেন্টলি ঘটে গেছে। ” তাসনি বলল।
” ধ্যাত চুপ করো তো। ”
আর কিছু বলার আগেই রুবিনার ডাক পড়ল।রুবিনা দিল দৌড়।তা দেখেই কুহু আর তাসনি হেসে কুটিকুটি।তাসনি আবার বলল,
” আপু বলো না।তার নাম ভাদ্র? ”
” ধুর!আদ্র!আমি ভাদ্র বলছি আরকি। ”
” ওয়াও!যেমন ফেস,তেমন নাম তেমন একশন। ”
” এনাফ!আর ওর সাফাই গাইলে তোর গলা টিপব আমি। ”
” কেন কেন?এমন করো কেন?ওই ভাইয়াটা কি তোমার জামাইকে মেরে ফেলেছে নাকি? ”
” তাসনি! ”
চিল্লিয়ে বলে কুহু।তাসনি পরিস্থিতি ঠিক না দেখে হাসতে হাসতে দিল দৌড়।
____________
নিয়ম করে আজও ভার্সিটি যেতে হচ্ছে কুহুকে।ভার্সিটিতে পৌছাতেই চোখে পড়ল এক দলকে।আর তাতেই আটকে যায় তার আঁখিযুগল।২ জন মেয়ে আর ৩ জন ছেলে।যার মাঝে আদ্রও আছে।হেসে হেসে কথা বলছে তারা একে অপরের সাথে।কুহুর চোখ আদ্রতেই আটকে যায়।কালো টিশার্ট,কালো জিন্স।ফর্সা গায়ে রঙ টা বেশ ভালো মানিয়েছে।সাইড করে খাড়া করে রাখা হালকা কালো-বাদামী চুল।গোলাপের পাপড়ির ন্যায় অধরদ্বয়।হালকা নীল তার আঁখি দুটির মণি।আনমনে কিছুক্ষণ সেদিকেই তাকিয়ে থাকে কুহু।হঠাৎ একটা বিচিত্র দৃশ্য দেখতে যা দেখে তার মস্তিষ্ক উলটপালট বিচরণ করতে থাকে।যা সে মেনে নিতে পারছেনা।
কারণ ইশান একটু আগেই আদ্রদের কাছে এসে বসেছে।কুহু বুঝতে পারছেনা আদ্রর সাথে ইশানের কি সম্পর্ক।আর সে’দিন বিয়েতেই বা কি করছিল সে?কুহু পরক্ষণে ভাবল বন্ধুও তো হতে পারে।তাই সময় নষ্ট না করে ক্লাসে চলে গেল।
” কিরে কুহু!আজ কথা বলছিস না যে?চুপচাপ কেন?ওইদিন কি বলেছিলাম মনে নেই? ” পাশ থেকে ইকরা বলল।
” নারে!এইজন্য না। ” কুহু বলল।
” তাহলে? ”
” আসলে….আজ ইশানকে দেখলাম তোর ওই ভাদ্র ভাইয়ার সাথে বসে আছে।তাদের মাঝে রিলেশন কি সেটাই বুঝছিনা। ”
” ওহ্ এই ব্যাপার?জিজ্ঞেস করে নিবি। ”
” এহ্ আমি কেন করব? ”
” বারে!তুই জানবি তো তুইই তো জিজ্ঞাস করবি তাই না? ”
” আমি পারব না। ” সামনের দিকে ফিরে বলে কুহু।
” আচ্ছা ঠিক আছে এসব পরে বলিস। ”
ক্লাস শেষে ইকরা একটু ঘুরে এসে বলল,
” তোর ওই ইশান আদ্র ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। ”
” হোয়াট! ” লাফিয়ে উঠে কুহু।
” হুম!এটা শুনে আমিও ভালোই চমকে গেছি।এর সাথেই আদ্র ভাইয়ার ভালো রিলেশন? ”
” যাক বাদ দে। ”
____________
ইকরার থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটির গেট দিয়ে বেরুতেই কেউ তার হাত টেনে ধরল।কুহু প্রথমে বিব্রত হলেও অজ্ঞাত ব্যক্তিটাকে দেখে ভীষণ রেগে যায়।এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নেয়।
” হোয়াট ইজ দিস ইশান? ”
” কেন?আমি হাত ধরলে কি সমস্যা?অন্য কারো কোলে উঠলে তো তোমার কিছু হয় না? ”
কুহু আরো রেগে যায়।
” কার কোলে উঠেছি আমি?আর আমার পার্সোনাল বিষয় নিয়ে কথা বলার আপনি কে? ”
” তোমাকে যে কেউ টাচ করতে পারে তাহলে আমি কেন পারব না? ”
” কেন পারবেন আপনি?আপনার কি বউ নেই?যান তাকে গিয়ে টাচ করুন আমার কাছে কি?এভাবে আমার অনুমতি ছাড়া আমার হাত ধরছেন সাহসের প্রশংসা করতে হয় তো!শুনুন!ফার্দার যদি এমন অসভ্যতা করেছেন তো আমার চেয়ে ব্যাড কেউ হবে না মি. অয়ন রশিদ ইশান!আই উড লাইক টু রিমাইন্ড ইউ দ্যাট আই এম নিলাদ্রি রহমান কুহু।নট অনলি কুহু।আমি আগের কুহু নই যে আপনার যেটা করবেন সেটাই মেনে নেব।ইট’স আহান রহমান’স ডটার।নট ইউর গার্লফ্রেন্ড অর সার্ভেন্ট!সো স্টে এওয়ে ফ্রম মি। ”
বলেই মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল কুহু।ইশান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করল।
চলবে,,,,