#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ৪
” তুমি? ” আদ্রের কন্ঠে বিস্ময় বিদ্যমান।
” হ্যাঁ আমি। ” কুহুর জবাব।
” তুমি এখানে কি করছো? ” আদ্র প্রশ্ন করে।
” নাঁচতে এসেছি।নাঁচ চিনেন? ”
” ইউ ডাফার!সোজা ভাবে কথা বলতে পারো না নাকি? ”
” নাহ্ পারিনা!ভার্সিটিতে মানুষ কি করতে আসে? ”
” ভার্সিটিতে তো সবাই পড়তেই আসে।কিন্তু তোমার মতো কিছু মেয়ে তো…বেড়াতেও আসে। ”
” ইউ জার্ক রাবিশ!আমাকে দেখে কি এমন মনে হয়? ”
” আমার তো তাই মনে হয়। ”
কুহু রেগে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে থাকে।আদ্র হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
_______________
” কি হয়েছে?এমন করছো কেন আপু? ” তাসনি আপেল খেতে খেতে প্রশ্ন করল।
কুহু এদিক থেকে সেদিক পায়চারী করছিল।তাসনির প্রশ্ন শুনে তার দিকে তাকাল।তারপর রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
” তোর ওই এক্টর ভাই আছে না….”
কুহুর বাকি কথা শুনার আগেই তাসনি লাফিয়ে বলে উঠল,
” হ্যাঁ হ্যাঁ ওই ভাইয়া?কি হয়েছে? ”
” বারে!কি দরদ! ”
” আরে আপু বলো না! ”
” ওই কটবেল টা আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে। ”
” কিহ্!ওয়াও!তাহলে তো সেই হবে। ”
” তোর বিয়ে হবে!আমি আছি আমার জ্বালায়।আর তুই ওই তাল গাছ টাকে নিয়ে আছিস? ”
” আরে ভাইয়াটাকে আমার ভালো লাগে।কি একশন দেখেছো? ”
” আরে রাখ তোর একশন।ব্যাটা আমাদের ভার্সিটিতে আছে মানে আমার শান্তি নেই। ”
” আহারে!আমি তো বলি তার বাসা এখানে কোথাও হোক। ”
” ইউ….! ”
বলেই এগিয়ে আসতে নিলে তাসনি দল দৌড়।
______________
রাস্তার ধারে মিনমিনে পায়ে হাটছে কুহু।গন্তব্য ইকরার বাসা।খুব করে বলেছে যেতে।তাই আর না গিয়ে পারল না।
পথিমধ্যে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির দেখা।যা সে কিছুতেই মানতে পারছেনা।
ইশান!!!
কুহু তার পানে চেয়ে রইল একরাশ বিস্ময় নিয়ে।কারণ এই পথে তাকে সে আশা করেনি।অন্তত এখন তো না।ইশানও তার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।যা কুহুর মোটেও হজম হলো না।কুহু ইশানের আশেপাশে তাকাল।রুইয়া নেই।কুহু কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই ইশান পথ আটকে দাঁড়াল।
” কেমন আছো কুহু? ”
কুহু চোখ রাঙিয়ে বলল,
” কেন?জেনে কি করবেন?ভালো থাকার সুখ টা তো কেড়েই নিয়েছেন।এখন কি ঢং করতে এসব জিজ্ঞাস করছেন?দেখি সরুন।আমার কাছে আপনার মতো অত সময় নেই। ”
ইশান যারপর নাই অবাক।
” এমন করছো কেন কুহু? ”
” কেমন করছি?আর কেমনই বা দেখতে চান? ”
” এভাবে কথা বলছো কেন আমার সাথে? ”
” তো কিভাবে কথা বলব আপনার সাথে? ”
” এভাবে রেগে রেগে কথা বলছো কেন?আর আমাকে আপনি বলেই বা ডাকছো কেন? ”
” তো কি করে ডাকব?আমি অপরিচিতদের সাথে তুমি বা তুই করে কথা বলি না।আর অপরিচিত দের সাথে ভালোভাবে কথা বলার অভ্যাস আমার নেই।সো সরুন। ”
” কি বার বার অপরিচিত অপরিচিত করছো?আমি কি তোমার অপরিচিত? ”
” তো কি পরিচিত? ”
” অবশ্যই পরিচিত! ”
” আচ্ছা?কে আপনি?কি হন আমার? ”
ইশান কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।কি বলবে সে?আসলেই তো সে কুহুর কেউ না এখন।একটু থেমে সে বলল,
” ২ বছর ধরেই তো আমরা একে অপরকে চিনি। ”
” আগে চিনতাম।এখন চিনি না। ”
বলেই কুহু তার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগল।ইশান পেছন থেকে বলল,
” নতুন কাউকে পেয়ে গেছো তাই না?তাই আমাকে ইগনোর করছো? সে নিষেধ করেছে কোন ছেলের সাথে দেখা করতে কথা বলতে তাই না? ”
কুহু রাগে,ঘৃণায় দাঁতে দাঁত চেপে সেটা দমন করল।তারপর সামনে না ফিরেই বলল,
” হ্যাঁ! সে নিষেধ করেছে। শুনেছেন আপনি? সে নিষেধ করেছে। ”
ইশান আবারো বলল,
” জানিতো! তোমাদের মত মেয়েরা তো তাই করবে। একটা যেতে না যেতেই আরেকটাকে জুড়িয়ে নেবে। ”
কুহু সামনে ফিরল এবার।এগিয়ে এল ইশানের পানে।তার চোখে চোখ রেখে বলল,
” আচ্ছা? তো মি. ইশান! আপনার টা কি আপনার চোখে পড়ে না? আপনি কি করেছেন আমার সাথে তা কি আপনার ব্রেইন থেকে আউট হয়ে গেছে? আপনি অন্য মেয়ের মায়ায় পড়ে আমাকে দেওয়া সব আশা ভেঙে চুরচুর করে দিয়েছেন। তো আপনি কি? আপনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দিব্যি আপনার স্মার্ট মর্ডান বউকে নিয়ে ভালো আছেন। তাহলে আমি কেন পিছিয়ে থাকবো? ছাড় তো আপনি দিয়েছেন। আমি নিজ থেকে ছেড়ে দেয় নি আপনাকে। সো আমার ব্যাপারে যদি আরেকটা বাজে কথা শুনি না আপনার মুখে? আমি কেস করব।আর রহমান বংশের কেস এত সহজে দমানো যায় না মি. ইশান। সুতরাং আমার থেকে দূরে থাকবেন। আর আমাকে দেখা না দেওয়ার চেষ্টা করবেন। স্টে এওয়ে ফ্রম মি। ”
বলেই কুহু সামনে হাটা ধরল।ইশান এখনো চেয়ে আছে তার পানে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে।কুহু এতটা শক্ত হয়ে গেছে তার ব্যাপারে?কে সে?যার জন্য তাকে ইগনোর করছে?জানতে হবে ইশানকে।
___________
” উফ!আল্লাহ্ জানে আমার সাথে হচ্ছেটা কি?এই তিনদিনে এই পর্যন্ত তিন তিন টা ধাক্কা খেয়েছি।আল্লাহ্ গো!কি করে যে এই প্যারা থেকে রক্ষা পাই? ”
ইশানের থেকে বিদায় নিয়ে ইকরার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল কুহু। যেই বাসায় ঢুকতে যাবে ওমনি এক ধাক্কা।এই সেই ধাক্কা না।একেবারে নিচে পড়ে যায় কুহু।তারপর বিড়বিড় করে কথাগুলো বলল।সামনে থাকা অজ্ঞাত ব্যাক্তিটা হাবার মতো তার দিকে তাকিয়ে আছে।ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কুহু যেই না কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেই অজ্ঞাত ব্যাক্তিটার মুখ দেখে সে হতভম্ব হয়ে গেল।মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছেনা।অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,
” আপনি? ”
চলবে,,,,,