#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ২
বিলাশবহুল একটা বাড়িতে প্রবেশ করে তাসনি আর কুহু।চারদিকে অচেনা অজানা বহু মানুষের সমাবেশ।বাড়িটাতে রঙ বেরঙের আলোর বাহার।ঘাড় ঘুরিয়ে চারদিক দেখছে তাসনি আর কুহু।তাসনি অবাক হয়ে বলল,
” উরিব্বাস!বাড়িটাতো খুব বড়!”
” হুম..!একবার এসেছিলাম।আরেকবার বধু হয়ে আসার স্বপ্ন দেখেছিলাম।তার আগেই সব শেষ।”
” থাক!এসব ভেবে মন খারাপ করার কোন মানে হয় না আপু।”
” হুম…”
দুজন বাড়ির ভেতর ঢুকল।সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষ।সবাই পড়ে আছে অশালীন কাপড়-চোপড়।তাসনি তাদের দেখে ফিসফিস করে বলল,
” আপু!এদের কি লজ্জা জিনিস টা লোপ পেয়েছে নাকি?এসব পড়ে কি করে কনফরটেবল ফিল করে?”
” ওরা পারে রে!”
দুজন একটা টেবিলে বসে পড়ল।ইশানের মা রাবেয়া আক্তার হঠাৎ কুহুকে দেখতে পেলেন।তিনি তার কাছে আসলেন,
” আরে তুমি কুহু না?ইশানের বান্ধবী?”
কুহু প্রথমে চমকে যায়।তারপর হেসে বলে,
” হ্যাঁ আন্টি!চিনেছেন তাহলে?”
” তোমার মতো মিষ্টি মেয়েকে কি ভুলা যায়?পারলে তো তোমাকেই ইশানের বউ করে নিয়ে আসতাম।”
কুহু বিব্রত হয়।রাবেয়া আক্তার হেসে বলেন,
” এই দেখো!হাহা!খাওয়া দাওয়া হয়েছে?”
” আহ্..হ্যাঁ!”
” আরে বসে পড়ো।”
তাসনি এক পর্যায়ে ফিসফিস করে বলল,
” ইনি তোমাকে ইশান ভাইয়ার বান্ধবী বলছে কেন?ইনি তোমাদের বিষয়ে জানেন না?”
” নাহ্ রে!ইশানই আমাকে তার বান্ধবী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।”
” আচ্ছা খাটাস তো।এ নিশ্চয়ই আগে থেকে প্ল্যান করে রেখেছিল।তোমাকে শুধু ইউজ করে গেছে।”
” হুম..!” দীর্ঘশ্বাস ফেলে কুহু।
দুজন সবার সাথে খাওয়া দাওয়া করল।ইশানের দেখা নেই।সে হয়তো ব্যস্ত তার হবু বউয়ের সাথে কথা বলায়।কুহু আর তাসনি একটা কোণে চেয়ারে বসে রইল।হঠাৎ একটা কাজের মেয়ে অসাবধানতার কারণে তার গায়ে জুস ফেলে দেয়।এতে কুহুর রাগ উঠে যায় কিন্তু মেয়েটার আকুতি মিনতি দেখে আর কিছু বলল না।
” আপুমনি প্লিজ মাফ করে দিন।আমি দেখতে পাই নি গো।সত্যি প্লিজ আমায় মাফ করে দিন।”
কুহু হেসে বলে,
” আচ্ছা আচ্ছা!নেক্সট টাইম দেখেশুনে হাটবে।”
তারপর কুহু তাসনিকে বলে ওয়াশরুমে চলে যায়।ভীড়ের কারণে অনেক্ষণ পর ফেরত এল সে।কালো জামা হওয়ায় তেমন দাগটা বুঝা যাচ্ছেনা।তাসনি দূর থেকে ইশারা করল।কুহু এগিয়ে যায়।কিন্তু তার কাছে যাওয়ার আগেই হঠাৎ ঠাস করে ধাক্কা খায় সে।পড়ে যায় কুহু।তাসনি ” আপু!!” বলে হালকা চিৎকার দিয়ে হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নেয়।কুহু চোখ মুখ খিচে থাকে।তাসনি একটু পর চোখের থেকে হাত সরিয়ে হাত দুটো মুখে নিয়ে আসে।তারপর হাবা হয়ে তাল দিতে শুরু করে।কুহু চোখ বন্ধ রেখে লক্ষ করল কেউ দূর থেকে তালি দিচ্ছে আর তার আশেপাশের লোকজন কথা বলছেনা।আর সে এটাও লক্ষ করল যে সে পড়েনি।মিনমিনিয়ে চোখ খুলল কুহু।তার সাথে ঘটা দৃশ্যটা দেখে সে নিজেই বাকরুদ্ধ।এক অচেনা যুবক তার কোমড় ধরে আছে।সে পড়ে যেতেই নিচ্ছিল তখন যুবকটা তার কোমড় আকড়ে ধরে।যুবকটা এক দৃষ্টিতে কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে।কুহুর হুশ আসতেই সে দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।তারপর সামনে থাকা অজ্ঞাত যুবকটার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
” কি সমস্যা কি হ্যাঁ?চোখ কি গার্লফ্রেন্ডের ব্যাগে ঢুকিয়ে এসেছেন নাকি?নাকি অন্ধদের দান করে দিয়েছেন?”
যুবকটা এতক্ষণ কিছু না বললেও এবার সে রেগে গেল,
” ইউ স্টুপিড গার্ল!তুমি কি?চোখ কি নালায় ফেলে এসেছো?নাকি বয়ফ্রেন্ডের কাছে জমা দিয়ে এসেছো কারো দিকে না দেখার জন্য?কোনটা?”
বয়ফ্রেন্ডের নাম আসতেই তার মুখে আঁধার নেমে এল।ইশান তো এখন তার নেই।তাহলে সে কেন এমন হচ্ছে?যথাসম্ভব নিজেকে সামলে বলল,
” এগজাক্টলি ধাক্কাটা কে দিয়েছে? আমি নাকি আপনি?আর ধাক্কা দিলেনই তো ধরলেন কেন যত্তসব!”
বলেই তাসনির দিকে চলে গেল।যুবকটা তার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল।পরণে গ্রে কালারের পাঞ্জাবি।গলায় কালো মাফলার।পাশ থেকে আরেকটা ছেলে বলে উঠল,
” কাম ডাউন ব্রো!এ বম্বে মরিচ।এর সাথে জড়াতে যাস না।”
” এ বম্বে মরিচ হলে আমি কাঁচা মরিচ।”
বলেই অন্য দিকে চলে যায়।তার পিছু পিছু তার বন্ধুরাও ছুট লাগায়।
কুহু গিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে তাসনির পাশে বসল।তাসনি হাসতে হাসতে বসল,
” ওয়াও!আই লাইক দিস সিন আপু!হাহা!ইশ…কি সুন্দর ভাইয়াটা তোমায় ধরে নিল।”
কুহুর এমনিতে মেজাজ খারাপ তার উপর তাসনির এমন বকবকানি শুনে মেজাজ আরো বিগড়ে গেল।ধমক দিয়ে বলল,
” চুপ কর!বজ্জাতের বংশধর একটা!এর বদলে হিরো আলম ধরলে আরো খুশি হতাম।”
” কিহ্!ইয়াক ওয়াক!এত সুন্দর একটা হান্ডু ভাইয়ার সাথে তুমি ওই তেঁতো করলাটাকে তুলনা করলে।এহ্!”
কুহু কিছু বলল না।তাসনির সাথে কথায় পারা যায় না।
একটু পরেই পেছন থেকে ভেসে আসে সেই চিরচেনা কণ্ঠস্বর,
” এসেছো?ভালো কথা।আমি যেতে না যেতেই আরেকটার সাথে জড়িয়ে গেছো?বাহ্ বাহ্!মেয়েদের সত্যিই তুলনা হয় না।”
কুহু আর তাসনি ফিরে তাকায় তার দিকে।কুহুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।সে ভাবতেই পারছেনা যে ইশান তাকে এসব বলবে।
” কি বলছেন আপনি এসব?”
” কেন কি বলছি জানোনা?ওর সাথে এত ডলাডলি কিসের?”
কুহু আবারো চমকায়।কার কথা বলছে সে?
” কার কথা বলছেন আপনি মিস্টার ইশান?”
” কেন একটু আগে যে ছেলেটার কোলে উঠে বসে ছিলে তার কথা বলছি।হাহ্!আমি যেতে না যেতেই আরেকটাকে জুটিয়ে নিয়েছো।তোমরা মেয়েরা পারো বটে।”
কুহু ঘৃণায় জরজরিত হয়ে যায়।এদিকে তাসনির পিত্ত্বি জ্বলে উঠে।সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে কুহু যাকে মনে প্রাণে ভালোবাসতো সেই ইশান এমন নিচ মনের ছেলে।যে কিনা মেয়েদের নিয়ে এত বাজে ধারণা পুষে রেখেছে।কুহু কিছু বলার আগেই তাসনি বলে উঠল,
” ওয়েট ওয়েট ভাইয়া!আপনি আপুর কে হন বলুন তো?যে আপুর লাইফে ইন্টাফেয়ার করছেন?আপু যা খুশি তাই করবে।দরকার পড়লে ১৪ টা প্রেম করবে ২৮ টা বিয়ে করবে।আপনার কি?আপনি তো আপুকে ধোকা দিয়ে ২ বছরের ভালোবাসাকে পায়ে পিষে বিয়ে করে নিচ্ছেন আরেকজনকে।সেটা কি?আপু তো এই বিষয়ে আপনাকে কিছু বলেনি?তাহলে আপনি কে আপুকে এসব বলার?আর হ্যাঁ ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল।আপু ডলাডলি করতে যায় নি।আপু পড়ে যাচ্ছিল তাই ভাইয়াটা তাকে ধরে নিয়েছে।আগে নিজের চরিত্র মন মানসিকতা ঠিক করুন তারপর অন্যের টা নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে আসবেন।”
চশমা পড়া পিচ্চি ভোলা মেয়েটার কথা শুনে থমকে যায় ইশান।মেয়েটার বয়সই বা কত হবে ১৩-১৪ বছর।দেখে যতটা বোকা মনে হচ্ছে অথচ সে নয়।ইশান তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
” তুমি কে?যে ওর হয়ে কথা বলছো?”
তাসনি আবার বলল,
” বলি কি শ্রবণ শক্তি লোপ পেয়েছে নাকি আপনার?আপু বলছিলাম শুনতে পান নি?বিয়ের আগেই বয়রা হয়ে যাচ্ছেন হায় হায়!”
কুহু আর ইশান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তাসনির দিকে।কুহু অবাক হচ্ছে তাসনির এই প্রতিবাদি রুপটা দেখে।আর এদিকে ইশান ভাবতেই পারছেনা এই টুকুন একটা পিচ্চি বোকা দেখতে মেয়ে তাকে এত কথা শুনিয়ে দেবে।পরিস্থিতি ঠিক না দেখে ইশান কথা ঘুরাল,
” আব..আমার উড বি ওয়াইফের সাথে তো পরিচয় করানো হয়নি।রুইয়া!কাম অন সুইটহার্ট!”
তাসনি বিড়বিড় করে ভেঙচিয়ে বলে,
” এহ্!সুইটহার্ট!ঢং দেখে নিশ্বাস পড়ে না বাপু!”
একটা মিনি ড্রেস পড়া মেয়ে এগিয়ে এল হাতে ড্রিংকস নিয়ে।এমন উশৃংখল মেয়ে দেখে কুহুর ইশানের মা রাবেয়া আক্তারের জন্য খুব খারাপ লাগল।এমন মেয়ে তাকে কখনো পাত্তাই দিবে না।ইশান মেয়েটাকে এক হাতে জড়িয়ে কুহুকে দেখিয়ে বলল,
” সুইটি এ হলো আমার একটা ফ্রেন্ড!কুহু নাম।আর কুহু!এ হলো আমার উড বি ওয়াইফ রুইয়া জামান।”
তাসনি বিরক্তিতে চোখ ফিরিয়ে নিল।এমনিতে এমন অশ্লীল কাপড়চোপড় পছন্দ করে না সে।তার উপর এর অশ্লীল কথাবার্তা!কুহুর বুকটা ফেটে যাচ্ছে।কিন্তু সে কিছু না বলে তাদের দিকে চেয়ে রইল।একটু পর বলল,
” হ্যালো ভাবী!কেমন আছেন?”
” আ’ম ফাইন সিস্টার!ইউ?”
” ইয়াহ্ ফাইন!আপনাকে আর ভাইয়াকে খুব মানিয়েছে।পারফেক্ট কাপল।এমন মেয়ের সাথে এমন লোকেরই মানানোর কথা।”
কুহুর কথা শুনে ইশানের চোখ চক্ষুকোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
” থ্যাংকস সিস্টার!আশা করি তুমিও খুব ভালো হাসব্যান্ড পাবে।”
” হুম..!অন্তত এমন কেউ না যে মিথ্যে আশা দিয়ে ছেড়ে দেয়।” ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে কুহু।
ইশান কুহুর দিকে চেয়ে রইল।তারপর বলল,
” ওকে সুইটি চলো আমরা ওদিকটায় যাই।”
” রোমান্টিক মোমেন্টটা যেন চোখ এ ধরা দেয় মিস্টার ইশান..ভাইয়া!” কুহু বলল।
ইশানের মাথায় রাগ চড়ে বসল।কুহু তাকে কথার মাধ্যমে ইনসাল্ট করছে তা বেশ ভালোই বুঝতে পারল।তারা ভেতরে চলে গেলে তাসনি আর কুহু অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।কুহু হাসতে হাসতে বলল,
” কেমন বাঁশ দিলাম রে?”
” ওহ্ মাই গশ!হাহা!আর পারছিনা।একদম ফাটাফাটি।তার মুখটা দেখার মতো ছিল।এভাবে কথার মাধ্যমেই ফাঁসাবা খাটাসের দাদাটাকে।”
” বাপরে তুই যেভাবে তার পাম্প উড়িয়ে দিয়েছিস!হাহা!কি বলব তখন আমার হাসি চেঁপে রাখতে পারছিলাম না রে!”
হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বর,
” এত হাসাহাসি হচ্ছে কেন এখানে?এটা কি জোকারের সার্কাস নাকি?নাকি জোকসের মার্কেট যে এত হাসাহাসি হচ্ছে?”
কুহু আর তাসনি হাসি থামিয়ে পেছনে তাকাল।সামনে থাকা যুবকটাকে দেখে কুহু বিরক্তিতে চোখ ফিরিয়ে নিল।তাসনি তো বেজায় খুশি!এই সেই যুবক।তাসনির তার একশন টা খুব ভালো লেগেছে।এক্টরদের চেয়েও ভালো রিয়েল সিন ছিল সেটা।কুহু এবার বলল,
” আমি হাসবো!ইচ্ছা হলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হাসবো।আপনার কি তাতে?”
” কিন্তু এমন মরা হাসি কেউ আমার সামনে হাসলে তা আমার পছন্দ না।”
” ডু ইউ মিন ইট?আপনার পছন্দ অপছন্দে আমার কিছু এসে যায় না।”
তাসনি মাঝে বলে উঠল,
” ভাইয়া ভাইয়া আপনি কি করেন?”
” মানে?”
” আপনার পেশা কি?”
” কেন?জেনে কি করবে তুমি?”
” আসলে জানতে চাচ্ছিলাম যে আপনি কোন এক্টর কি না!”
” কেন কেন?”
” তখন যেভাবে আপুকে ধরলেন।আপনার তো এক্টর হওয়া উচিত।মুভি করলে আপনার খ্যাতি কম থাকবে না ভাইয়া।সত্যি!”
যুবক তা শুনে হালকা হাসল।
” আচ্ছা!ঠিক আছে।তাহলে ডিরেক্টর তুমি হবা।”
” ইশ…কি যে বলেন না!”
কুহুর এসব শুনে গা জ্বলে যাচ্ছে।তাসনিকে ইশারায় চুপ করতে বলল।তারপর বলল,
” আপনার যদি ভালোই না লাগে তাহলে যান নিজের গার্লফ্রেন্ড এর কাছে যান।এখানে কি?এটা আপনার দাদার জায়গা নাকি শশুড়ের জায়গা?”
অজ্ঞাত যুবকটি ভ্রু কুঁচকায়।ত্যাড়া টাইপের মেয়ে কুহু সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারল।সে কুহুর দিকে এগিয়ে এল।যা দেখে কুহু বেশ ভড়কে গেল।কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রাখল।তারপর যুবক তার খুব কাছে এসে তার মুখ কুহুর মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে বলল,
” আমার প্রেয়সীর হাসার জায়গা!”
শিউরে উঠে কুহু।তাসনি তালি দিতে দিতে বলে,
” ওয়াও ওয়াও!হোয়াট এ সিন ভাইয়া!আপনার সত্যিই এক্টর হওয়া উচিত।”
যুবক হেসে সরে আসে।তারপর হাসতে হাসতে চলে যায় চোখ টিপ মেরে।কুহুর যেন জান বাঁচল।এতক্ষণ ভয়টাকে খিচিয়ে রেখেছিল।তারপর যুবকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভেঙচিয়ে বলল,
” এহ্!আমার সামনে কারো হাসা আমি পছন্দ করিনা।ব্যাটা এখন নিজে হাসছে।শালা বিটসএন্ট!তুই জীবনেও বউ পাবি না রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট এর মেয়ের জামাই কোথাকার!”
তাসনি আবারো হেসে দিল।কুহু আবারো বিরক্ত হয়।
______________
নাচের আসর শুরু হলো।ইশান আর রুইয়া কুহুর পাশেই ছিল।সে কুহুকে দেখিয়ে দেখিয়ে রুইয়ার সাথে ক্লোজ বিহেভ করতে শুরু করেছে।কুহু এসব দেখেও না দেখার ভান করে ড্যান্স দেখছিল।তখন তাদের ড্যান্স শুরু হয়।রুইয়া আর ইশানের।তাসনি লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নেয়।কি বাজে ড্যান্স!কুহুও মোবাইলে চোখ দেয়।ইশান মুলত কুহুর রিয়েকশন দেখার জন্যই এমন করছে।কিন্তু কুহুর কোন হেলদুল নেই।এতে ইশান বেশ অবাক হলো।তারপর কুহু একটু আড়ালে গেল তার ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলার জন্য।তাসনি তখনো সেখানে বসে ছিল।ইশান কুহুর কাছেই যাচ্ছিল তখনই তাসনি ইশানকে চুপিসারে বলে,
” কি ভাইয়া?আবাল মার্কা ড্যান্স দিয়ে আপুকে কষ্টে ফেলতে চাইছেন।হাহ্!আপু এত বলদ না যে আপনাদের থার্ড ক্লাস ড্যান্স দেখে চোখের পানি ফেলবে।”
ইশান কিছু না বলে কুহুর কাছে যায়।কুহু তখনও কথা বলছিল তার বান্ধবীর সাথে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে।ইশান এসেই বলল,
” বাহ্ বাহ্!আমি যেতে না যেতেই প্রেমালাপ জুড়ে দিয়েছো।ওয়াও!ব্রাভো!আসলেই কি তুমি আমাকে ভালোবেসেছিলে?”
কুহু ইশানের গলা পেয়ে ইকরাকে গোপনে পড়ে করছি বলে কল কেটে দিল।তারপর কান থেকে ইয়ারফোন নামিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কিছু বলেছেন আপনি?”
ইশান রেগে যায়।
” এতটা প্রেমে মত্ত ছিলে যে আমার কথাই শুনতে পাও নি?বাহ্!”
” স্টপ দিস বুলশিট মিস্টার ইশান!না জেনে না শুনে মন্তব্য করবেন না।”
” জেনেশুনেই করছি।আচ্ছা তুমি কি আসলেই আমাকে ভালোবেসেছিলে?”
” হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
” যদি সত্যি ভালোবেসে থাকতে তাহলে আমি যেতে না যেতেই আরেকটা জুড়িয় ফেলতে পারতে না।”
কুহু এবার তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,
” আচ্ছা?আপনার টা কি আসল ছিল?তাহলে কি করে পারলেন আমাকে ফেলে আরেকজনকে বিয়ে করতে?আপনিই তো বলেছিলেন এখনকার প্রেম গুলো বিয়ে পর্যন্ত যায় না।ভালো লাগা না লাগার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।তাহলে নিজের বলা কথাটা কেন ভুলে যাচ্ছেন?এখন আমি আপনার কেউ নই।আমি আপনার জন্য পরনারী।সো এসব লথা বলার কোন অধিকার আপনার নেই।আমার লাইফ!আমি যা খুশি করব।আমি আপনার কোন কাজে বাঁধা হয়ে আসিনি।সো আপনি আমার কোন কাজে বাঁধা হয়ে আসবেন না।নয়তো পুলিশ কেস করবো।আপনি উচ্চবিত্ত বংশের লোক হলে আমি ডাবল উচ্চবিত্ত বংশের মেয়ে।সো বি কেয়ারফুল!”
ইশান এসব শুনে বেশ অপমান বোধ করল।দাঁত কটমট করতে করতে যেতে নিলেই কুহু পেছন থেকে আবার বলল,
” কুহু জ্বলার মতো মেয়ে না মিস্টার অয়ন রশিদ ইশান!কি ভেবেছেন আপনার ওসব থার্ড ক্লাস ব্যাকডেটেড নাচ দেখে আমি আমার চোখের মূল্যবান অশ্রু ঝরাবো?আমার চোখের অশ্রুকণারা এত সস্থা নয়।তারা এত সহজে বাঁধ ভাঙে না।কি ভেবেছিলেন এসব দেখে আমি আপনার পায়ে পড়ব এই দু পয়সার ভালোবাসা ভিক্ষে চাইতে?হুহ্!কক্ষনো না।আমি নীলাদ্রি রহমান কুহু।আমি এত সস্থা নই!”
ইশান এসব শুনে কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।কুহু সেখানেই হেসে ফেলে।কিন্তু তার চোখে পানি।চোখে পানি মুখে হাসি!মন টা বুঝা বড় দায়!
চলবে,,,,