#শিমুল_ফুল
#৪৪
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শিমুলের কথায় পুষ্প হতবাক।কথা বলার শক্তি যেনো ফুরিয়ে গেছে।ঠোঁট নেড়ে কোনোরকমে বললো,
“সত্যি?”
শিমুল মাথা ঝাকায়।একটা চাকরি যে তাদের দুজনের কাছে কি এটা শুধুমাত্র তারাই জানে।শিমুলের কথা যেনো পুষ্পর বিশ্বাস হয় না।সে মাথা নেড়ে বলে,
“আসলেই?এসব নিয়ে একদম মজা করবেনা বলে দিলাম।”
অনেকদিন পরে শিমুলের মুখে খুশীর ঝলকানি পুষ্পর নজর এড়ায় না।এতেই শিমুলের কথার সত্যতা যাচাই করে নেয়।সে শিমুলের খুশীতে উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দেয়।হাত দিয়ে শিমুলের গলা আঁকড়ে ধরে। শিমুল থেমে বলে,
“আরে এখন কাঁদো কেনো?তোমার কাঁদার দিন শেষ পুষ্পরাণী।তোমার বর ভার্সিটির লেকচারার হয়ে গেছে।শনিবার থেকেই জয়েনিং ”
তার কথা শুনে পুষ্প বাচ্চাদের মতো ভে ভে করে কেঁদে দেয়।শিমুল পুষ্পকে সহ ফ্লোরে বিছানো তোষকে বসে।কান্নারত বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে।শিমুলের মিটিমিটি হাসা দেখে পুষ্প কান্না থামায়।শিমুল বলে,
“আরো কাঁদো।দেখতে ভালোই তো লাগছে।”
পুষ্প শিমুলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।চোখ দিয়ে ঠিক পানি পড়ছে।চোখের পানির দিকে তাকিয়ে শিমুল থম মেরে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পরে গম্ভীর গলায় বলে,
“তোমার চোখ থেকে অনেক পানি ঝরেছে।আজকেই যেনো শেষ কান্না হয়।আর কখনো কাঁদবে না।মনে থাকবে?এখন হাসো তো।”
পুষ্প কান্নারত মুখেই হাসে।চোখে জল মুখে হাসি।মথা নেড়ে বললো,
“আমার খালি কান্না আসতেছে।”
এটা বলে আবার কেঁ/দে দেয়।শিমুল কিছু বলেনা।সে জানে পুষ্প খুশীতে কাঁ/দছে।থাক কাঁ/দুক।মাঝে মাঝে কাঁ/দার প্রয়োজন হয়।
রাতে শিমুল পুষ্পকে নিয়ে বাহিরে খেতে যায়।দুজনে খাওয়ার পরে কতোক্ষন হাটে।তারপর দুজনে ব্রীজের উপর গিয়ে দাঁড়ায়।রাতের খোলা বাতাস এলোমেলো ছুটে দুজনকে ছুঁয়ে দেয়।পুষ্প মুগ্ধ চোখে রাতের ঢাকা দেখে।আজকে রাতের ঢাকা দেখতে ভালো লাগছে।শিমুল পুষ্পর হাত ধরে টেনে দুজনের মাঝের কিঞ্চিৎ দুরুত্ব ঘুচিয়ে দেয়।তাদের বিয়ের বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু শিমুল পুষ্পর কোনো শখ আহ্লাদ পুরণ করতে পারেনি।আসলে পুষ্প কোনো শখ করেইনি।সে সবসময় শিমুলের পকেটের খবর জেনে কিছু চায় কিন্তু শিমুলের ইচ্ছা করে বউকে এটা সেটা কিনে দিতে।বিয়ের পরে এখনো দুজনে কোথাও ঘুরতে যায়নি।শিমুলের খুব ইচ্ছা করে দূরে পাহাড় ঝর্ণা ঘুরে আসতে কিন্তু টাকার কারণেই যাওয়া হয় না।একদিন টাকা হবে কিন্তু এই শখের বয়সটা আর থাকবে না।তখন মানিব্যাগ ভর্তি টাকা থাকবে কিন্তু কিছু খেতে,ঘুরতে বা কিনতে ইচ্ছা করবেনা।শিমুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুষ্পর কাধে চোয়াল ঠেকিয়ে বলে,
“খুব ভালোবাসি পুষ্পরানী।”
পুষ্প দূরে টিমটিম করে জ্বলা লাল বাতিটার দিকে তাকিয়ে হাসে।এই পুরুষটা তার জীবনের সবথেকে বড়ো পাওয়া।যতো রকমে একটা মেয়েকে সুখী করানো যায় সবটাই শিমুল করে।নিজের সর্বস্ব উজার করে সে তার পুষ্পরানীকে ভালোবাসে।সুখে সুখে সর্বসুখী বানাতে চায়।শিমুলের এমন সহজ স্বীকারোক্তি শুনে পুষ্পর মনে ভালোলাগার পরিমান বাড়ে।হাত দিয়ে শিমুলের উষ্কখুষ্ক চুলে আঙুল ভুলিয়ে বলে,
“ভালোবাসি শিমুলরাজা।”
রাতে বাসায় ফেরার পরে শিমুল পুষ্পর সানিধ্য ছাড়ে না।আজকে তার রাজ্যত্ব চলবে।কোনো না টা চলবে না আজকে দুজনের খুশীর দিন।আর পাশে যদি থাকে পুষ্পর মতো প্রিয় রমনী তাহলে কোনো কথা শুনতে বা মানতে চায় কে?শিমুলের বেশামাল কথায়,আদুরে আবেশে পুষ্প খিলখিল করে হেসে উঠে।শিমুল মুগ্ধ নয়নে এই পবিত্র হাসি দেখে।এমন কঠিন পরিস্থিতিতে মেয়েটা যেভাবে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছে এটাই শিমুলের শক্তি,এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।পুষ্প শিমুলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি দেখো?”
“তোমাকে।”
পুষ্প লাজুক হাসে।ছেলেটা এতো সহজে সব স্বীকার করে নেয়!হতে পারে তাদের টাকা কম কিন্তু ভালোবাসায় একদম ভরপুর।পুষ্প মনে মনে ভাবে আচ্ছা শিমুলের টাকা হলেও কি এভাবে ভালোবাসবে সহয স্বীকারোক্তি করবে?কাঙাল হয়ে ভালোবাসা চাইবে?নাকি পুষ্পর থেকে দুরুত্ব বাড়িয়ে দিবে।পুষ্প মনের খচখচানি চেপে রাখতে পারে না।শিমুলের বুকে নাক ঘষে আদুরে গলায় বললো,
“যখন তোমার অনেক টাকা হবে তখনো কি আমাকে এভাবে ভালোবাসবে?”
শিমুল ভ্রুকুচকে বললো,
“টাকার সাথে ভালোবাসার কি সম্পর্ক?”
“না!টাকা হলে যদি কম ভালোবাসো!”
শিমুল বললো,
“দূর পাগলি।তুমি আমার রানী।রাজার কাছে রানীর গুরুত্ব সবসময়ই বেশী।আমার খারাপ সময়ে যে পাশে থেকেছে আল্লাহ চাইলে ভালো সময় আসলে তাকে ভুলে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
শিমুলের উত্তর শুনে পুষ্প খুশী হয়।আহ্লাদী গলায় বললো,
“কখনো কষ্ট দিবে না।আমি একদম সইতে পারবোনা।ম/রেটরেও যেতে পারি।”
শিমুল হাসে।পুষ্পকে কষ্ট দেয়ার প্রশ্নই আসে না।তাকে সুখে রাখতেই তো এতো ল/ড়াই।
পুষ্পর ফর্মফিলাপের জন্য টাকার দরকার।শিমুলের হাতে সামান্য টাকা আছে।শিমুলের হাতের মোবাইলটা বিক্রি করে দেয়।পলাশ যদিও শিমুলকে টাকাটা দিতে চেয়েছিলো কিন্তু শিমুল নেয়নি।এই দুর্গম পথে কারো সাহায্য ছাড়াই জয়ী হতে চায়।পুষ্প একবার বলেছিলো,
“পরিক্ষা না দেই!এই অবস্থায় এতোগুলো টাকা কোথায় পাবো?”
শিমুল কঠিন চোখে তাকিয়ে বলেছে,
“পরিক্ষা না দেই মানে?কার জন্য এতো কষ্ট করছি?মাথায় ঢুকিয়ে নাও তোমাকে অনেক পড়তে হবে পুষ্প।”
পুষ্প মাথা নিচু করে ফেলে।তাকে নিয়ে শিমুলের অনেক স্বপ্ন।মোবাইল বিক্রির অর্ধেক টাকা গ্রামে পাঠিয়ে বাকি টাকা দিয়ে শিমুল দুইটা পেন্ট আর দুইটা শার্ট কিনে।ভার্সিটিতে তো আর যেমন তেমন করে গেলে হবেনা।সে শিক্ষক মানুষ শালীনতা বজায় রেখে সুশীল পোষাকে যেতে হবে।চুল দাড়ি কেটে নিজেকে চলনসই করে।অবশেষে কাঙ্ক্ষিত দিন আসে।শিমুল ভার্সিটিতে যায়।সব শিক্ষকরা তাকে স্বাগতম জানায়।সব স্টুডেন্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।কিছুদিনের মাঝেই ছাত্রছাত্রীর প্রিয় স্যারের জায়গা দখল করে নেয়।শিমুল বেশ বুঝতে পারে মেয়েরা যে তাকে মুগ্ধ চোখে দেখে।তার নাম যেমন সে দেখতেও তেমন।এক দেখায় সবার নজর কাড়তে সক্ষম।শিমুল ভুল করেও কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না।সে জানে এটা ভার্সিটি কলেজ না।ভার্সিটির মেয়েরা স্যারকে কিছু বলতে দ্বিধা করবেনা।এই চাকরিটা তার সোনার হরিণের মতো এটা হারানোর মতো কোনো কাজ করা যাবেনা।এভাবেই কেটে যায় এক মাস।ইদানিং তিহা নামের একটা মেয়ে সারাক্ষণ ফলো করছে।ব্যাপারটা শিমুলের ভালো লাগে না।সে বেশ বিরক্ত।
শিমুল ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে রিকশার জন্য দাঁড়ায়।তখনি থার্ড ইয়ারের ক্লাস টপার তিহা এসে পাশে দাঁড়ায়।শিমুল একপলক তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে থাকে।তিহা গলা খাঁকারি দিয়ে শিমুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়।শিমুল ভদ্রতাবসত তাকায়।তিহা বলে,
“স্যার।”
তিহার না বলা কথা তার মুখের লাজুক হাসিতেই বুঝা যাচ্ছে।শিমুল বিরক্তিভাবে তিহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কিছু বলবেন?”
বড়োলোক বাবার একমাত্র মেয়ে।শিমুলকে নিজের কথা জানাতে দ্বিধা করেনা।
“স্যার!আপনাকে আমার ভালো লাগে।”
শিমুল আন্দাজই ঠিক হয়।সে মুচকি হেসে বললো,
“তারপর?”
“আপনি চাইলে আব্বুকে বলে আমরা বিয়ে করে ফেলবো যদি আপনার প্রেমে আপত্তি থাকে।”
“গুড আইডিয়া।তারপর?”
শিমুলের কথায় তিহা অপ্রস্তুত হয়।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।মিনমিন করে বলে,
“প্রথম দিন থেকে আপনাকে ভালো লাগে।আপনাকে না পেলে ম/রে যাবো।”
শিমুল মনে মনে হাসে।এই সিনেমাটিক ডায়লগ এই যুগেও ব্যবহার হয় নাকি!
“ম/রবেন কেনো আমি কি অক্সিজেন?”
শিমুলের কথায় তিহা খুশী হয়।লাজুক হেসে বললো।
“হ্যাঁ।”
শিমুল প্যান্টের পকেট থেকে ম্যানিব্যাগটা বের করে পুষ্প আর তার জড়িয়ে ধরে রাখা ছবিটা দেখিয়ে বলে,
“আমার অক্সিজেন।আশা করি আর কখনো এসব বলতে আমার সামনে আসবেন না।আমি শিক্ষক সম্মান দিতে শিখুন।”
তিহা অবাক চোখে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়েটা কে জিজ্ঞাসু চোখে শিমুলের দিকে তাকালে শিমুল বলে,
“এটা আমার স্ত্রী।আমার পুষ্পরাণী।”
রিকশা আসলে তিহার অবাক হওয়া দৃষ্টি উপেক্ষা করে শিমুল বাসার উদ্দেশ্য যায়।তার পকেটে প্রথম মাসের বেতনটা।খুশীতে তার কেমন জানি লাগছে।বারবার পুষ্পর হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠে।ভাবছে গিয়ে টাকাটা পুষ্পর হাতে দেবে।
পুষ্প তখন বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলো।আজকাল শরীরটার অবস্থা ঠিক বোধগম্য হয় না সবসময় খারাপ লাগে।শরীর গুলিয়ে আসে শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।শিমুলকে ফোন দিতে ইচ্ছে করলেও উপায় নেই তার যে মোবাইল নেই,শিমুল একটা বারোশো টাকার সেট ব্যবহার করে।শিমুলের কথা ভাবতে ভাবতেই শিমুল আসে।পুষ্প ঠান্ডা পানি এনে দেয়।শিমুল পুষ্পর হাতে একটা খাম দিয়ে বলে,
“এটা তোমার।”
পুষ্প খামের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি?”
শিমুল পানি খায়।গায়ের শার্ট খুলতে খুলতে বলে,
“খুলো।খুলে দেখো।”
পুষ্প খামটা খুলে দেখে অনেকগুলো একহাজার টাকার নোট।তার চোখের মনি বড়ো হয়ে যায়।বিষ্ফোরিত নয়নে শিমুলের দিকে তাকায়।শিমুল পুষ্পর চাহনি দেখে হাসছে।পুষ্প দ্রুত বললো,
“বেতন পেয়েছো?”
“হ্যাঁ।”
“আল্লাহ কতোগুলো টাকা!”
শিমুল হাসে।পুষ্প টাকাগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে যায় দুজনে এই টাকার জন্য কতো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।এতোগুলো টাকা হাতে নিয়ে পুষ্প ঝরঝর করে কেঁ/দে দেয়।শিমুল অবাক হয়ে বললো,
“এই!এই মেয়ে আবার কাঁ/দো কেনো?আল্লাহ!কি য/ন্ত্রণা।”
পুষ্প কথা বলে না।শিমুলের দিকে তাকিয়ে কাঁ/দে।শিমুল কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।শাসানো গলায় বলে,
“আর কাঁ/দতে মানা করেছিলাম না।”
পুষ্প টাকাগুলো বুকে জড়িয়ে বলে,
“আজকেই শেষ।আর কখনো কাঁ/দবো না।”
শিমুলের চোখের কোনও পানিতে ভরে আসে।গলা বুজে কান্না আসতে চায় কিন্তু কাঁদে না তার যে শক্ত থাকতে হবে পুরুষ বলে কথা!নারীদের মতো সহজেই নিজেকে ভেঙে দেয়ার অধিকার যে বিধাতা দেয়নি।পুষ্পর মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
“আচ্ছা।আজকেই লাস্ট।”
শিমুলের আশকারা পেয়ে পুষ্প হাউমাউ করে কাঁদে।এই টাকার জন্য শিমুল কতো অপমানিত হয়েছে।দুজনে খাবারের কতো কষ্ট পেয়েছে।শিমুলের মাথায় দুষ্টুমি আসে।আস্তে করে বললো,
“আজকে আমাকে আমার এক ছাত্রী বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।”
সাথে সাথে পুষ্পর কান্না থেমে যায়।তড়িৎ গতিতে মাথা তুলে শিমুলের দিকে তাকায়।পুষ্পর থমকানো চেহারা দেখে শিমুলের খুব ভালো লাগে।আরেকটু রা/গাতে বলে,
“ছাত্রীদেরই’বা কি দোষ বলো?এমন তরতাজা স্যার যদি ঘুরে ঘুরে ক্লাস নেয় তাহলে কি প্রেমে না পড়ে পারে।ইশ কি ফিলিংস।আহা।”
পুষ্প রা/গলো না বরং পদ্মবরণ আঁখিতে পানির বাধ ভাঙলো।অবস্থা বেগতিক দেখে শিমুল কানে ধরে দাঁড়িয়ে সরি বললো।পরে উপায় না পেয়ে আধাখোলা শার্ট গায়েই কানে ধরে উঠবস করলো।পুষ্প ফোলাফোলা চোখে শিমুলের দিকে তাকিয়ে,ভাঙা গলায় ফ্যাসফ্যাস করে বললো,
“আমি পরিক্ষা দিয়ে তোমার ভার্সিটিতেই ভর্তি হবো।তারপর সব্বাইকে বলে দিবো শিমুল আমার।আমার জামাই,আমার কলিজা।”
শিমুলের বুকটা সুখে সুখে পূর্ণ হয়ে উঠে।পুষ্পর লাল হওয়া নাকের ডগায় আলতো টোকা দিয়ে বললো,
“এতো হিং/সে?”
পুষ্প শিমুলের হাত সরিয়ে বললো,
“এতো মা/র খেয়ে বিয়ে করেছি এসব শোনার জন্য?যে আসবে হাত পা ভে/ঙে গলায় ঝুলিয়ে দেবো।আমি শিমুলের বউ।”
চলবে……
#শিমুল_ফুল
#৪৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শিমুল বাসাটা পাল্টে ভার্সিটির পাশে দুই রুমের একটা ফ্লাট নেয়।কিছু আসবাবপত্র কিনে।পুষ্প ফুটপাত থেকে এটা সেটা কিনে বাসাটা নিজের মতো সাজায়।পুষ্প এই রুম থেকে ওইরুমে প্রজাপতির মতো উঁড়ে উঁড়ে যায় আবার আসে।শিমুল পুষ্পর উচ্ছলতা দেখে হাসে।একদিন দুজনে মিলে রান্না করছিলো।পুষ্প গায়ের ওরনা কোমড়ে গুজে ভাতের মাড় ফেলছে।এই সামান্য ব্যাপারটা শিমুলের এতো ভালো লাগলো যে সে মুগ্ধ হয়ে তার বউকে দেখছে।এই ক’মাসে পুষ্প যেনো বেশ ঘরনী হয়ে গেছে।বিয়ের পরে যেনো পুষ্প আরো সুন্দর হয়ে গেছে একদম চোখে লাগার মতো।নাকি শিমুলের কাছেই এমন লাগে!তবে আজকে পুষ্পর মুখটা কেমন যেনো লাগছে।সে পুষ্পকে ডাকে,
“পুষ্প..”
পুষ্প ভাতের মার ফেলছিলো শিমুলের কথা শুনে তার দিকে তাকায়।শিমুল তরকারি নাড়া বন্ধ করে বলে,
“মুখটা শুকনো লাগছে কেনো?কোনো সমস্যা?”
পুষ্প শিমুলের দিকে ফিরে।হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে নাকের ঘাম মুছে।
“কিছুদিন ধরে এতো দুর্বল লাগছে!সারাক্ষণ মাথা ঘুরে।”
শিমুলের মাথায় যে চিন্তাটা প্রথম আসে সেটা হলো পুষ্প গর্ভবতী না তো!পুষ্পও মনে মনে এটাই ভাবে।দুজনে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।শিমুল বলে,
“প্রেগন্যান্ট নাকি?”
“আমি কিভাবে জানবো?”
“তো কে জানবে?”
পুষ্প মুচকি হেসে বললো,
“যে জানার কথা।”
শিমুল প্রতিবাদী গলায় বললো,
“এটা অসম্ভব।”
পুষ্প তরকারির লবন ঠিক কিনা দেখে।মুখের হাসির দৈর্ঘ বাড়িয়ে দেয়।
“আমার মনে হয় কেউ চলে এসেছে।অনভিজ্ঞ লোক।”
শিমুল অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে।সে অনভিজ্ঞ লোক?এটাও শোনার ছিলো!আর এমনটা হবার কোনো চান্স নেই।সে পুষ্পর ব্যাপারে খুবই স/তর্ক।তার হয়তো বাবা ডাক শোনার বয়স হয়েছে কিন্তু পুষ্প?সে তো এখনো ছোট হ্যাঁ বাচ্চা হলে পালন করে বড়ো তো করতেই পারবে তবে এতে করে যদি তার স্বপ্ন পুরণ না হয়?শরীর খারাপ করে?তাহলে?এই সব ভেবেই তো শিমুল স/তর্ক।অন্যসব দম্পতির মতো তাদের পথটা সরল পথে চলেনি,তাদের পথটা দু/র্গম।জীবনে উজ্জ্বল আলোর কাছে যাওয়া যেনো তাদের জন্য একটা চ্যা/লেঞ্জ।শিমুল খানিক ভেবে বললো,
“চান্স নেই।”
“এতো কনফিডেন্সে?”
“জ্বী ম্যাডাম।”
“মান্থলি ডেট তিন দিন অভার কিন্তু!”
শিমুল থমকে যায়।তারপরেই বলে,
“মাঝে মাঝে এমন হতে পারে।নো চাপ বেবি।”
পুষ্প মানে না।নাছোড়বান্দার মতো বললো,
“কিন্তু আমার যে শরীর খারাপ লাগছে,প্রেগ্ন্যাসির সব লক্ষন আছে।”
“ম্যাডাম আপনার কেনো খারাপ লাগছে বিকেলে ডাক্তার দেখিয়ে আনবো।”
পুষ্প কি ভেবে মন খারাপ করে বললো,
“আচ্ছা ধরো আমার পেটে সোনামণি চলে এসেছে।বিকেলে গিয়ে পরিক্ষা করলাম যদি পজিটিভ আসে তাহলে কি করবে?”
শিমুল পুষ্পর মন খারাপের আঁচ পায়।পাত্তা না দিয়ে বলে,
“এসব কিছু হবেনা।কাজ করো।”
পুষ্প কাজ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।কাঁদোকাঁদো গলায় বললো,
“এভোরেশন করে ফেলবো?”
পুষ্প কথা শুনে শিমুল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
“এমন কিছু না পুষ্প।খালি খালি টেনশন করোনা তো।”
“যদি হয় তাহলে করবে?”
শিমুল পুষ্পর দিকে এগিয়ে আসে।
“কি মনে হয়?”
পুষ্প কথা বলেনা।তার চোখ ইতোমধ্যেই পানিতে টলমল করছে।
“আমরা এতো সতর্ক থাকার পরেও যদি আল্লাহ কাউকে পাঠাতে চায় তাহলে আমরা আটকানোর কে?এবোরেশন করা গুনাহ।আর এতে মায়েরও ক্ষতি হয়।সবচেয়ে ক্ষতি হয় যে মেয়েটার প্রথম সন্তানের বেলায় এটা করে।মেয়েদের শরীর খুব নাজুক।বাচ্চা নষ্ট করতে এই পথ অবলম্বন করলে দেখা যায় পরবর্তীতে আর বাচ্চাই হয় না।তাহলে দরকার কি?”
পুষ্প শিমুলের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে।শিমুল আবার বলে,
“পুষ্প তুমি এসব কেনো ভাবছো?কিছু হবেনা।”
বিকেলে দুজনে ডাক্তার দেখিয়ে আসে।ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে শিমুল হেসে খুন।বারবার পুষ্পকে রাগাচ্ছে।পুষ্পর কথা অনুযায়ী প্রেগ্ন্যাসি টেস্ট করা হয়েছে রিপোর্ট নেগেটিভ,রক্ত পরিক্ষা করা হয়েছে।ডাক্তারের ভাষ্যমতে পুষ্পর রক্তশূন্যতা তাই পিরিয়ড হয়নি।রক্তশূন্যতার কারনেই শরীর দূর্বল,মাথা ঘুরানো,বমি ভাব,শরীরে ক্লান্তিবোধ এসব হচ্ছে।ওষুধ লিখে দিয়েছে নিয়িমিত খেতে বলা হয়েছে।পুষ্পর মন খারাপ।তার মনটা সারাদিনে মা হওয়ার স্বপ্ন দেখে ফেলেছিলো।ছোট ফ্লাটে বাচ্চার কান্নার শব্দ কান পেতে শুনেছিলো,বাচ্চাটা কার মতো হবে সেটাও একটু ভেবে নিয়েছিলো কিন্তু এখন সব স্বপ্নই তো শেষ।বুকটা কেমন জ্বলছে।আচ্ছা সে কি মা হতে চাইছে?শিমুলের এতো দুষ্টামির কথায়ও যখন পুষ্প রাগ করেনা তখন শিমুল পুষ্পর মন খারাপের ভাগিদার হয়।
“কি হলো?”
“কিছুনা।”
শিমুল বুঝে গেলো প্রিয়তমার মন খারাপের কারণ।
“তুমি কি মা হতে চাইছো পুষ্প?”
পুষ্প সম্মতির চোখে শিমুলের দিকে তাকায়।শিমুল পুষ্পকে নিয়ে একটা ক্যাফেতে গিয়ে বসে।
“তোমার না অনেক স্বপ্ন?অফিসার হবে না?”
“হুম।”
“তাহলে?এতো অল্প বয়সে পুচকি চলে আসলে কিভাবে হবে?প্রচুর পড়তে হবে তো।তোমার আরেকটু বয়স হোক তখন না হয় আমরা বাচ্চার প্লেন করবো।”
“বাচ্চা হলে কি পড়া যায় না?কতোজনেই তো বাচ্চা হলেও পড়ে।”
“পড়ে কিন্তু তুমি পারবেনা।”
“পারবো।”
শিমুল মাথা নাড়িয়ে বুঝানোর ভঙিতে বলে,
“আমার বাচ্চা নিবো কিন্তু তুমি আগে নিজে প্রতিষ্ঠিত হও।তুমি কি ভুলে গেছো তোমার পড়ালেখা নিয়ে আমাকে কতো কথা শুনতে হয়েছে?পড়ালেখার দোহাই দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।ভুলে গেছো সব?”
“ভুলিনি।”
“কখনো ভুলাও যাবে না।যারা তোমার পড়া নিয়ে কটুক্তি করেছে তাদের দেখিয়ে দিতে হবে পুষ্প খাঁটিসোনা।এখন যদি বাচ্চা নিয়ে সংসারে ব্যস্ত হয়ে সব ভুলে বসো তাহলে কিভাবে হবে?আমি চাই আর কয়েকবছর পরে বাবু নিতে।আর আমার বউকে অফিসার বানাতে চাই।কি! আমার স্বপ্ন পুরণ করবেনা?”
পুরোনো আঘাতগুলো শিমুল আবার মনে করিয়ে দিয়েছে।পুষ্প শিমুলের কাধে মাথা রেখে বললো,
“করবো।”
“শিমুল পুষ্পর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
“মন খারাপ করেনা সোনা।আল্লাহ চাইলে আমাদের মিষ্টি একটা কুট্টুসপাখি আসবে অবশ্যই আরো বছর পাঁচেক পড়ে।”
পুষ্পর মন ভালো করতে শিমুল আর সে ঘুরে বেড়ায়।কতোক্ষন রিকশা করে ঘুরে তারপর টিএসসিতে যায়।সেখানে যে কতো মানুষ!অনেকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে অনেক কপোত-কপোতী বসে সময় কাটাচ্ছে।অনেকে একা বসে আছে।শিমুল কিছুক্ষণ পুষ্পর হাত ধরে হাটে তারপর দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।পুষ্প খেয়াল করে দেখে অনেক মেয়েই শিমুলকে দেখছে।দেখছে বললে ভুল হবে প্রায় চোখ দিয়ে গিলে নিচ্ছে।সে শিমুলের দিকে তাকায়।ভার্সিটির প্রফেসর হিসেবে নিজেকে বেশ শালীন আর মার্জিত রাখে।কালো শার্ট আর সাদা পেন্টে ফর্সা গায়ের শিমুলকে ফুটন্ত ফুলের মতো দেখাচ্ছে।মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল পরিপাটি করে গোছানো।মুখের মিষ্টি হাসি আর কথা বলার ভঙ্গিমা সবার নজর কাড়তে সক্ষম।উফ ছেলেটা এতো সুন্দর কেন?পুষ্প ইদানীং ক্ষনে ক্ষনে শিমুলের প্রেমে পড়ে।ভেবেছিলো তার জীবনে একবারই প্রেমে পড়া হলো কিন্তু ভুল তার জীবনে সে হাজারবার প্রেমে পড়েছে।একটা পুরুষের প্রেমে যতোরকম ভাবে পড়া যায় সে পড়ে।আজকে শিমুলকে একটু বেশীই সুন্দর লাগছে কিন্তু মেয়েরা এভাবে তাকায় কেনো?জানেনা শিমুল বিবাহিত!মেয়েদের বিয়ে হলে শাড়ি,চুড়ি,নাকফুল পড়ে নিজের গায়ে বিবাহিতার ছাপ দেয় কিন্তু ছেলেরা?ছেলেদের বেলায় কেনো কোনো ছাপ নেই?কেনো বোঝার উপায় নেই বিবাহিত নাকি অবিবাহিত।প্রাণের পুরুষের দিকে মেয়েদের এমন চাহনি পুষ্পর ভালো লাগেনা।শিমুল বোধহয় মেয়েদের এমন চাহনি দেখেই মুচকি হাসে।
তার হাসি দেখে পুষ্পর রাগ আকাশ ছোঁয়।পুষ্প অভিমানী চোখে শিমুলের দিকে তাকিয়ে আছে।শিমুল তার ফুলানো গাল দুটো টিপে বললো,
“কি হয়েছে পাখিটার?গাল ফুলেছে কেনো?”
পুষ্প আবারো আশেপাশের মেয়েদের দিকে তাকায়।
“সব মেয়ে তোমাকে দেখে কোনো?”
শিমুল তার চুলে হাত ভুলিয়ে মুচকি হাসে।প্রেয়সীর বুকের জ্বলন বেশ টের পায়।পুষ্পকে রাগাতে এতো ভালো লাগে তাই বললো,
“দেখার জিনিস তো দেখবেই।”
পুষ্প সাথে সাথেই শিমুলের গা ঘেষে দাঁড়ায়।নাক ফুলিয়ে অধিকারের সাথে বললো,
“তুমি আমার জিনিস।শুধু আমার।”
শিমুল হাসে।মেয়েটা তাকে এতো ভালোবাসে!
“হ্যাঁ তোমার কিন্তু ওরা তো আর জানে না।”
“জানিয়ে দাও।”
“কি দরকার?আমাকে এভাবে প্রেমপ্রেম চোখে দেখছে ভালোই তো লাগছে।”
“খুব শখ!একেই বলে পুরুষ মানুষ!প্রেম করলে জান প্রাণ বিয়ের পরে সরে দাঁড়ান।”
শিমুল মুচকি হেসে একহাতে পুষ্পকে তার দিকে চাপিয়ে নেয়।
“সরে দাঁড়াতে হবে না রে বউ।সারাজীবন কাছে রাখার জন্যই তো এতো সং/গ্রাম।”
শিমুলের কথায় পুষ্পর অভিমান কমে।শিমুলের শার্টের বোতামে হাত ভুলিয়ে বলে,
“তোমাকে কেউ দেখলে আমার ভালো লাগে না।কেমন য/ন্ত্রণা লাগে।”
তারপর বুকে হাত দিয়ে বললো,
“এখানে ব্যা/থা করে জান।”
পুষ্প আদুরী গলায় কথাগুলো শুনে শিমুলের মুখে হাসি ফুটে উঠে।আস্তে করে বললো,
“তাই?”
“হ্যাঁ।কোনো মেয়ে যখন দেখে তখন আমার এতো খারাপ লাগে।”
শিমুল মুগ্ধ চোখে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে থাকে।পুষ্প আলতো গলায় বলে,
“তোমায় প্রেম চোখে দেখার অধিকার শুধু আমারই থাক।
অন্য কেউ প্রেমচোখে দেখার আগে আমার ম/রণ হোক।”
শিমুল সাথে সাথেই জোড়ে চিৎকার করে বললো,
“সবাই শুনেন আমি বিবাহিত।এই মিষ্টি মেয়েটা আমার বউ।”
পুষ্প মুখে হাত চেপে দাঁড়িয়ে থাকে।সে এতোটা কল্পনা করেনি।আশেপাশের সবাই হতভম্ব হয়ে তাদেরকে দেখছে।অনেকে ভাবছে ছেলেটা পা/গল নাকি?বিবাহিত ভালো কথা এভাবে জোড়ে জোড়ে বলতে হবে?শিমুল পুষ্পর মুখ থেকে হাত সরায়।টোপ করে চোখ মেরে বললো,
“সবাইকে জানিয়ে দিলাম পুষ্পরানী।আপনার কি আর কোনো ইচ্ছা আছে?থাকলে এই প্রজাকে বলে ধন্য করুন।”
শিমুলের কাজটা হয়তো সামান্য কিন্তু এই সামান্য কাজটা পুষ্পকে যে কি খুশী দিয়েছে এটা প্রকাশ করার মতো না।অনেকের কাছে হয়তো পাগলামি মনে হতে পারে কিন্তু শিমুল জানে মাঝে মাঝে প্রিয়তমার মনে খুশীর ফোয়ারা বয়িয়ে দিতে এমন পাগলামির দরকার আছে।পুষ্প হেসে বললো,
“পাগল নাকি?”
“পাগলই তো।আজকে বুঝলে?”
পুষ্প হাসে।ছেলেটা এতো সহজ স্বীকারোক্তি করে যে পুষ্প এই ছেলের কথাগুলোর প্রেমেই পড়ে যায়।পুষ্প দূরে একজোড়া শালিক পাখির দিকে তাকিয়ে বললো,
“পড়ে গেছি।”
“কোথায়?”
“তোমার প্রেমে।”
শিমুল আহ্লাদী গলায় বললো,
“তুমি প্রেমে পড়ো উঠো।কিন্তু আমি যে সেই পিচ্ছির প্রেমে পড়লাম আর উঠতেই পারি না।ক্ষনে ক্ষনে ডুবে ম/রি।”
“ইশ।এমন একটা কাজ করেছো।সবাই কিভাবে দেখছে।”
“দেখুক।লজ্জা পাচ্ছো?”
এতো এতো লোকের মাঝেই পুষ্প পায়ের পাতায় ভর দিয়ে উঁচু হয়ে শিমুলের গালে তার নরম ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দেয়।ফিসফিস করে বললো,
“বাসায় যাবো।সবাই দেখছে।আমার খুব লজ্জা লাগছে।”
“চুমু টুমু দিয়ে এখন লজ্জা?”
পুষ্পর পরিক্ষার আর মাত্র দুইদিন বাকি।পুষ্প তার আব্বার বাড়িতে থেকে পরিক্ষা দেবে।বাবা মা যতোই যা বলুক ছেলে মেয়ে কি রাগ অভিমান করে থাকতে পারে?পুষ্পও পারেনি হয়তো মনের গহীনে দাগটা দগদগে হয়ে আছে কিন্তু উপরে শান্ত।পুষ্পকে শিমুল দিয়ে আসবে। একমাস তেরো দিন লাগবে পরিক্ষা শেষ হতে।এতোদিন শিমুলকে ছেড়ে থাকতে হবে বিধায় পুষ্পর মন প্রচন্ড খারাপ।বারে বারে চোখের কোনে পানি জমছে।ওরনা দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চোখের বর্ণ লাল আকার ধারন করেছে।শিমুল সুক্ষ্মভাবে সব পর্যবেক্ষণ করছে।পুষ্পর নিঃশব্দে কান্না দেখে বলতে পারেনা আমারো কষ্ট হচ্ছে পুষ্প।হঠাৎ পুষ্প শিমুলের গলা আঁকড়ে ধরে বললো,
“তুমি আমার সাথেই থাকবে তা না হলে আমার পরিক্ষা ভালো হবে না।”
শিমুল আস্তেধীরে পুষ্পকে নিজের বাহুডোরে আটকে বললো,
“আমার ভার্সিটি আছে না?তা না হলে থাকতাম।তুমি মন দিয়ে পরিক্ষা দিয়ো।আমি প্রতি শুক্রবারে যাবো।”
পুষ্প কান্না গলায় বললো,
“আমি না থাকলে তুমি আবার তিহা টিহার সাথে প্রেম ট্রেম করবে না তো?”
শিমুল হতভম্ব হয়ে বললো,
“এতো সন্দেহ?”
“উহু।এটা সন্দেহ না ভ/য়।তোমাকে হারিয়ে ফেলি কিনা তার ভ/য় পাই।বিশ্বাস করো তোমাকে হারালে আমি ম/রে যাবো।আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাবে।”
শিমুল স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।এতো ভালোবাসা হারানো যায়?যায় কিনা জানা নেই কিন্তু শিমুল হারাতে দিবে না।রাত আট’টা নাগাদ শিমুল আর পুষ্প তাদের বাড়িতে আসে।এবার পুষ্পদের বাবা মায়ের ব্যবহার পুরো বদলে গেছে।সেবার মুন্নীর শশুড় বাড়িতে শিমুলের প্রতি যে অবজ্ঞা অবহেলা ছিলো তার কোনো রেশ নেই এবার সবটা জুড়ে আদর,আপ্যায়ন।প্রফেসর জামাই বলে কথা!পুষ্প অবাক হয়ে দেখে,
জীবনে টাকাই কি সব?টাকা না থাকলে মানুষ দাম দেয় না আর টাকা থাকলে মাথায় করে রাখে।অথচ মানুষ কিন্তু একজনই ভিন্নতা শুধু টাকায়।তাহলে কি টাকাই সব?
চলবে…..