#শিমুল_ফুল
#২৪
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
পলাশ কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি ক্লাস নিচ্ছে।ঠান্ডা মেজাজের পলাশের ব্যক্তিত্ব কলেজের সবার নজর কাড়ে।পলাশ যখন ক্লাসে পড়ায় তখন সে বইয়ের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারে মেয়েরা তাকে দেখছে যেই সেই দেখা না মন-হারিয়ে দেখা যাকে বলে।ছাত্রীদের এই চাহনী তাকে বারবার মনে করিয়ে দেয় এক কাজলচোখের অধিকারীনির এই চাওয়াতেই হারিয়েছিলো।প্রেমে মজে গিয়েছিলো নিজের সবটা নিয়ে।মেয়েটাও কি কম ভালোবাসতো?নিধি তাকে এতো এতো ভালোবাসতো যে পলাশ এখনো চোখ বন্ধ করে নিধির ভালোবাসার তীব্রতা টের পায়।এই তীব্রতা টের পেয়েই তো এতোগুলো বছর কাটিয়েছে।সামনেও কাটাবে।কিন্তু আফসোস এই তীব্রভাবে ভালোবাসার মানুষটিকেই ধরে রাখতে পারেনি,হারিয়ে ফেলেছে এই জীবনে আর পাওয়া হবে না।পরিবার থেকে বিয়ের জন্য বলা হয়,পলাশের বিয়ে করার ইচ্ছে নেই।যখন ভাবে বিয়ের পর বউকে কাছে টানতে হবে বউ গুটিসুটি মেরে বুকে মুখ লুকাবে তখনি পলাশের বুকটা কেঁপে ওঠে,নিজেকে অপরাধী মনে হয়।কথার বেরখেলাপ করার ভার মাথায় পড়ে,সে যে নিধিকে কথা দিয়েছিলো পলাশের বুকে লেপ্টে থাকা নারীটা নিধি হবে।কিন্তু পলাশ পারলই না।বুকে তো নিধি এলো না এলো এক বুক হাহাকার।পলাশ প্রতিনিয়ত ঘুমরে মরে,ব্যাথায় কাতরায় যখন ভাবে নিধি অন্য বুকে,অন্য কাউকে ভালোবাসে।এসব ভাবলেই বুকটা পুড়ে যায়,এতো বড়ো ছেলেরও ঠোঁট কেঁপে চোখ জ্বালাপোড়া করে জল পড়ে,দুনিয়ার সব বিতৃষ্ণা লাগে,তার আব্বাকে অসহ্য লাগে,তিনি একটু সদয় হলেই পলাশের জীবনের ধারা অন্যরকম ছন্দেতালে যেতো।অথচ তিনি শান্ত পলাশের বাবার প্রতি সম্মানকে ব্যবহার করেছে।পলাশ তার আব্বাকে বুঝাতেই পারলো না নিধি তার সব।আহ আফসোস!ছোট নিধিটা এতো বুঝতো,পলাশের চোখে তাকিয়ে পলাশের মন পড়ে নিতে পারতো।পলাশ বইয়ের দিকে তাকিয়ে বইয়ে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করে।তখনি প্রিন্সিপাল রুমে আসে।পলাশ প্রিন্সিপালের উপস্থিতিতে উনার দিকে তাকায়।তারপর কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।নিধি তার নিধি!তার কাজলচোখের নিধি!পলাশের বুকে ব্যাথা হয়,এটা কিসের ব্যাথা?
শিমুল গত পাঁচ দিন রুম থেকে বের হয় নি।শরীর এতো দূর্বল লেগেছে যে শোয়া থেকে উঠতে ভীষন খারাপ লেগেছে।আজকে ভালো লাগছে।সকালে সবার সাথে নাস্তা করেছে।এই পাঁচ দিন পুষ্পর সাথে ফোনে কথা হয়েছে।বেশী কথা বলতে পারেনি আঘাতটা মাথায় তাই মাথায় সেকি ব্যাথা!বালিশ থেকে মাথাটা তুললে ব্যাথায় টনটন করে মনে হয় ঘাড় থেকে মাথা ছিড়ে পড়ে যাচ্ছে।শিমুল সব ব্যাথা হাসি-মুখে সয়ে নিচ্ছে।পুষ্পকে নিজের করে নিতে পেরেছে এই সুখের কথার কাছে এসব ব্যাথা তো কিছুই না।সারাদিন শুয়ে বসে থেকে সন্ধ্যায় পুষ্পকে ফোন দেয়।
পুষ্প তখন পড়তে বসেছে।শিমুলকে বিয়ে করার পর থেকে রোকসানা মুন্নী আর মিজান শেখ পুষ্পর সাথে ঠিকঠাক কথা বলেনা।পুষ্প ভালো মেয়ে হতে মায়ের মন খুশী করতে উনার কাজ আগে আগে করে দেয়,বাবার কি লাগবে এগিয়ে দেয়,মুন্নীর সাথে সেধে সেধে কথা বলতে যায় কিন্তু কেউই পুষ্পর সাথে ভালো করে কথা বলেনা।পুষ্প চুপচাপ পড়ছে এমন সময়ই রোকসানার ফোনটা টিংটাং করে বেজে উঠে।পুষ্প উঠে ধরতে যাওয়ার আগেই রোকসানা রিসিভ করে।
“হ্যালো কে?”
শিমুল রোকসানার কন্ঠ শুনে মনে মনে ভাবে শাশুড়ি খুব জ্বালিয়েছেন এবার আমি জ্বালাই।
“আম্মা আমি!আপনার নতুন জামাই শিমুল হাওলাদার।”
রোকসানার মুখটা অন্ধকার হয়ে যায়।শিমুলের নাম শুনেই আড়চোখে পুষ্পকে দেখে।
রোকসানা চুপ থাকা দেখে শিমুল বললো,
“আম্মা আমার বউ কই?”
রোকসানা পুষ্পর বিছানায় মোবাইলটা ছুড়ে মেরে চলে যায়।রোকসানার মুখের আদল দেখেই বুঝে যায় এটা শিমুল।পুষ্প মুচকি হেসে মোবাইলটা ধরে।
“হ্যালো।”
পুষ্পর গলা শুনে শিমুল সটান শুয়ে পড়ে।মোলায়েম গলায় বললো,
“আমার বউ কি করে?”
শিমুলের মুখে বউ ডাক শুনলে পুষ্পর খুব ভালো লাগে,শান্তিতে বুকটা ভরে যায়।
“কিছুনা।”
“বউকে শাড়ি পড়া দেখতে ইচ্ছে করে।বউ কি ইচ্ছে পূরন করবে?”
পুষ্প আনন্দে ঝুমঝুম করে বললো,
“করবে।”
“তাহলে আজকে শাড়ি পরবে।এগারোটায় আসবো।”
পুষ্প মন খারাপ করে বললো,
“কিন্তু আমার তো শাড়ি নেই।আম্মার আছে।আমি আমার কাছে চাইতে পারবো না লজ্জা করে।”
“তোমার নেই?”
“না।”
“আচ্ছা।”
পুষ্পর মন খারাপ হয়।শিমুল এই প্রথম তাকে শাড়ি পড়তে বলেছে কিন্তু পুষ্প ব্যর্থ।
“হুম।”
“মোবাইলটা কাছে রেখো,আবার ফোন দেবো।”
“আচ্ছা।”
শিমুল ম্যানিব্যাগটা পকেটে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।বাইক দিয়ে হোমনা মার্কেটে আসতে বেশী সময় লাগেনা।নিজের পছন্দমতো লাল শাড়ি চুড়ি কিনে নেয়।পুষ্পদের বাড়ির সামনে এসে পুষ্পকে ফোন দিয়ে বেরিয়ে আসতে বলে।পুষ্প এসে শিমুলকে দেখে।
“ম্যাডাম কাছে আসেন।”
শিমুলের হাতের ব্যাগ দেখেই পুষ্প বুঝে যায়।
“আপনি এতো রাতে মার্কেটে গিয়েছিলেন?”
“হ্যাঁ।আজকে বউ দেখবো তাই।”
পুষ্প লজ্জা পায়।মাথা নিচু করে ব্যাগটা নিয়ে ঘরে চলে যায়।
রাতে সবাই ঘুমানোর পরে পুষ্প শাড়ি চুড়ি পরে রেডি হয়।ঘড়িতে টাইম দেখে সাড়ে এগারোটা বাজে।পুষ্প আস্তে করে দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখে শিমুল দাঁড়িয়ে আছে।পুষ্প দরজা আটকে বেরিয়ে আসে।অবাক হয়ে।বলে,
“কখন এসেছেন?ডাকলেন না?”
শিমুল পুষ্পর দিকে তাকিয়ে আছে।ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাকা হয়ে গেছে।পরক্ষণেই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়,হাত দিয়ে চুল আঁচড়ে বললো,
“ডাকলে তো ঠিকঠাক সাজতে না।তাড়াতাড়ি করে চলে আসতে।”
পুষ্পর কেন জানি শিমুলের দিকে তাকাতে লজ্জা লাগছে।একটু তাকিয়ে বললো,
“ঘরে আসবেন?”
শিমুল পুষ্পর দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
“না।আমাদের হিজল গাছই ভালো।”
পুষ্প মুচকি হেসে শিমুলের হাত ধরে।দুজনে চুপচাপ হাটে।চঞ্চল শিমুলের এই নিশ্চুপতা দেখে পুষ্প কয়েকবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।কিন্তু শিমুল চুপচাপ হাটছে।মাঝে মাঝে তাকে দেখছে।ছয় দিনের চাঁদ আলো ছড়াচ্ছে।আকাশে চাঁদের সাথে হাজারো তারা আলো দিচ্ছে।চারদিকে সব স্পষ্ট দেখা যায়।
হিজল গাছের কাছে গিয়ে শিমুল দাঁড়ায়।নিজের হাতের মুঠোয় পুষ্পর দু’গাল ধরে চুপ করে দেখে।শিমুলের তপ্ত শ্বাসে পুষ্পর মনটা কেঁপে ওঠে।হাত-পা অবশ হয়ে যায়।সে একবার চোখে তুলে শিমুলের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।এই সর্বনাশা চোখে তাকানো যাবে না।এই চোখে যে হাজারো কথা,আকুতি,মিনতি উপচে পড়ছে।এই নেশা জড়ানো চোখের চাহনি পুষ্প নিতে পারেনা।শিমুলের ছোঁয়া পেয়ে শরীর অজানা শিহরণে কেঁপে উঠছে।
শিমুল বললো,
“আমার বউকে অনেক সুন্দর লাগছে।লাল শাড়ি পড়াতে লাল শিমুল ফুলের মতোই লাগছে।একদম টকটকে লাল ফুল।”
পুষ্প লজ্জা পায়।মাথাটা নিচু করতে চায়।শিমুল নিচু করতে দেয় না।তার দিকে করেই বললো,
“কি হলো?”
পুষ্প মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে বললো,
“কিছুনা।”
শিমুল পুষ্পর লজ্জামাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।গাল ছেড়ে কোমড়ে হাত দিয়ে নিজের কাছে আনে।
“সত্যিই সুন্দর লাগছে।”
পুষ্প বললো,
“শিমুলের তো তাই।”
শিমুল চুপচাপ দেখে।পুষ্পকে এমন রুপে আর আগে দেখা হয়নি।তার ফুলকে খুব আবেদনময়ী মনে হচ্ছে।শিমুল হঠাৎ খেয়াল করলো তার খুব পাগল পাগল লাগছে।সামনের রমনীর সাথে একটু বেশী অভদ্র হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।আবার কিনা ফুলটা তার বউ,নিজের এতো বেশামাল পাগলা ইচ্ছা যেন আজ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।এন্ডোনালির শিরশিরানি শিমুলের পাগলা রূপ প্রকাশ করতে ছুটছে বন্য গতিতে।শিমুল বললো,
“খুব শীঘ্রই ঘরে তুলে নিবো।”
“আচ্ছা।”
“এতো বাধা বিপত্তির পরে আমি আমার এই লাল টুকটুকে ফুলটা পেয়েছি।নিজেকে খুব সুখী লাগে।”
পুষ্প কিছু বলেনা প্রতিউত্তরে শিমুলের বুকে মাথা রেখে নিজেকে মিশিয়ে দেয়।শিমুলের বুকে মিশে,তার ঘনঘন শ্বাস,দ্রুত বুকের উঠানামা খেয়াল করে।মাথা তুলে বললো,
“কি হয়েছে?”
“কই?”
পুষ্প শিমুলের বুকে হাত রেখে বললো,
“এই যে এমন হচ্ছে কেন?”
শিমুল কিছু বলেনা।চুপচাপ পুষ্পকে পর্যবেক্ষণ করে।মাতাল বাতাসের ছোঁয়া কি পুষ্পর গায়ে লাগছে না?শিমুলের অসহায় লাগে।
পুষ্প শিমুলের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে শিমুলের বুকের ঝড় তুফানের তীব্রতা টের পায়।সাহস করে শিমুলের গালে চুমু খেয়ে নেয়।শিমুলের বন্য বাতাস যেনো রাস্তা পেলো।মাথাটা নিচু করে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি দিয়ে নরম গাল ঘষে দেয়।পুষ্প তার স্বরে গুঙ্গিয়ে উঠে শিমুলের গেঞ্জি আঁকড়ে ধরে।শিমুল ফিসফিস করে বললো,
“কি জান?”
“না”
“কি না?”
“কিছুনা।”
শিমুল আধো আধো খোলা চোখে পুষ্পকে দেখে হাত দিয়ে পুষ্পর নরম ঠোঁট একটু ছুঁয়ে মাথাটা নিচু করে কোমল ঠোঁটের ভাজে তার সিগারেটে পোড়া ঠোঁট নিয়েই হারায়।আজকে মাতাল হয়ে দুজনে দুজনের মাঝে হারাতে চায়।একে অপরকে আঁকড়ে আরো গভীরে নিতে চায়।শিমুল পুষ্পর গলায় ঠোঁট ছুঁয়ে জোড়ে শ্বাস নেয়।তারপর হঠাৎ পুষ্পকে ছেড়ে গাছের মোটা শিকড়ে গিয়ে বসে পড়ে।মাথা নিচু করে থাকে।পুষ্প এমন কাজে হতভম্ব।সে এগিয়ে গিয়ে শিমুলের সামনে দাঁড়ায়।চুলে হাত ভুলিয়ে বললো,
“আমার বরের কি হলো?”
শিমুল মাথা তুলে তাকায়।পুষ্প দেখে শিমুলের ঠোঁট হালকা কাঁপছে,চোখের ভাষায় মাতালতার ছোঁয়া লেপ্টানো।এই ছেলেটা এমন কেন?যখন তখন মায়ার বাক্স খুলে পুষ্পকে আটকে দেয়,ভুল করতে ফুসলে দেয়।পুষ্প চোখে চোখ রাখে।গালে এক হাত রেখে বললো,
“কি?”
শিমুলের গলা ধরে আসে।ফিসফিস করে বললো,
“আজকে একটু বেশি আদর করলে কি তুমি রাগ করবে?”
পুষ্পর বুকটা তো কখন থেকেই কাঁপছিলো এখন শিমুলের কথা শুনে তলপেটে হাজারো প্রজাতির উড়ে যায়।তারও যে ইচ্ছা করে শিমুলের খুব কাছে গিয়ে ভালোবাসতে।শিমুলের নেশায় মাখা চোখের দিকে তাকিয়ে পুষ্প শিমুলের মাথায় হাত রাখে।শিমুল পুষ্পর চোখে তাকিয়ে থাকে তার শ্বাস চলছে দ্রুত গতিতে।পুষ্পকে দু’হাতে কাছে টেনে পুষ্পর পেটে নাক গুজে নেয়।পুষ্প কেঁপে ওঠে,একটু পেছাতে চাইলেও পেছাতে পারে না।শিমুলের হাতের বাধন ততক্ষণে শক্ত হয়েছে।পুষ্প ফিসফিস করে বললো,
“না।”
শিমুলের চোখে মুখে তৃষ্ণা।
“প্লিজ।”
পুষ্প কিছু বলার আগেই উত্তপ্ত ঠোঁটের ছোঁয়া গিয়ে লাগে তার কোমল উদরে।পুষ্প চোখ বন্ধ করে নেয়।শিমুল পরপর অনেকবার ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দিয়েছে।নাক ঘষে শিমুল ফিসফিস করে বললো,
“ভীষন খারাপ হতে ইচ্ছে করে।”
পুষ্প চুপচাপ কথা শুনে।শিমুলই আবার বলে,
“সাথে তোমাকেও পাগল বানাতে ইচ্ছে করে।”
পুষ্প চুপ করে থাকে।শিমুলও আর কিছু বলেনা।চুপচাপ বসে থাকে।তারপর হঠাৎ করেই পুষ্পকে ছেড়ে বলে,
“তুমি একটু দূরে গিয়ে দাড়াও।”
পুষ্প অবাক হয়ে বললো,
“কেন?”
শিমুল পুষ্পর দিকে তাকায় না।
“এমনি।যা বলেছি করো না।”
পুষ্প চুপচাপ একটু দূরে দাঁড়ায়।মিনিট দুয়েক পড়ে শিমুল কাছে আসে।পুষ্প কিছু বুঝে উঠার আগেই পুষ্পকে কোলে নিয়ে নেয়।মাঠের মাঝে হাটে আর তার দুষ্টু দুষ্টু কথা শুনে পুষ্প খিলখিল করে হাসে।
“সুন্দরী বাড়ি নিয়ে নেই।তারপর না হয় তোমার পার্মানেন্ট শিক্ষক হবো।”
“আমার শিক্ষক লাগবে না।”
“আমি তো বেতন নিবো না ফ্রী ফ্রী পড়াবো।”
“আমি পড়বো না।”
“আমি তো পড়াবো।”
শিমুল শব্দ করে হাসে।পুষ্প শিমুলের গাল ছুঁয়ে দেয়।এই পুরুষটা তার ভাবলেই বুকটা সুখে চিনচিন করে।
শিমুল চাঁদের আলোয় অবাক হয়ে দেখে পুষ্প দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর রমনী!নাকি সে ভালোবাসে বলেই এটা মনে হয়?কে যানে?শুনেছে যার সাথে যার ভাব বিনিময় তাকেই দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর মনে হয়।
দুজনে রাত দুইটার দিকে বাড়ি যায়।বিছানায় শুয়ে পুষ্প লজ্জায় মুখ ঢাকে লোকটা আস্ত পাগল।
সকালে শিমুল চোখ খুলে দেখে সুইটি তার বিছানায় শুয়ে আছে।গায়ে ওরনা নেই।সুইটির হাত তার গালে রাখা।শিমুল একলাফে দাঁড়িয়ে যায়।সুইটি এখানে কেন?শিমুলের মাথা আউলে যায়।উচ্চস্বরে ধমক দিতে নিয়ে শুনতে পায় বাহিরে চারপাশের এলাকার মেম্বাররা উপস্থিত হয়ে আছে।আস্তে করে বললো,
“তুই এখানে কেনো?”
সুইটি বাকা হেসে বললো,
“আদর নিতে এসেছি।”
শিমুল হা করে তাকিয়ে থাকে।সুইটি উঠে বসে।চুল এলোমেলো গায়ের ওরনা একপাশে রেখে এলোমেলো হয়ে বেরিয়ে গেলো।
মেম্বাররা তখন চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করছিলো।শিমুলের রুম থেকে সাত সকালে এমন বেশে,মুখে এমন লাজুক হাসি মাখা এই মেয়ের বেরোনো দেখে সবাই অবাক।একজন বললো,
“চেয়ারম্যান সাব আপনার ছেলের না বিয়ে হলো।তাহলে এসব কি?ছিহ”
চলবে….
#শিমুল_ফুল
#২৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
সুইটি রুমে গিয়ে হাত পা ছুড়ে নাচে ।পেশকারা আর আসমা বলে,
“কাজ হয়েছে?”
সুইটি চুল বাধতে বাধতে বলে,
“হবে না আবার!সবাই হা করে তাকিয়েছিলো।”
পেশকারা বিগলিত হয়ে হাসে।মজিব হাওলাদার ভোরেই বলেছিলো গ্রামের গণ্যমান্য লোক আর মেম্বাররা আসবে।দুই জামাই বউ মিলে এই বুদ্ধি করে যে উনাদের সামনে এমন কাজ করবে যে উনারা খারাপ বলবে আর কোন একটা উপায় বের করে শিমুলের সাথে সুইটিকে বেধে দেবে।পেশকারা সুইটির মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে,
“তুই চিন্তা করবি না।শিমুলের রুমে তোকে পার্মানেন্ট থাকার ব্যবস্থা আমি করবো।”
সুইটি মাথা নেড়ে বললো,
“আচ্ছা।”
তারপর তিনজন বাহিরের দিকে কানপাতে কে কি বললো এটা শুনার জন্য।
শওকত চেয়ারম্যান তার আব্বার দিকে তাকায়।মজিব হাওলাদারের মুখে চোরা হাসি কিন্তু অবাক হওয়ার বান ধরে আছে।গ্রামের এক প্রবীণ মাতব্বর বলেন,
“চেয়ারম্যান সাহেব আপনি গ্রামের গণ্যমান্য মানুষ হয়ে যদি এমন দৃশ্য আপনার ঘরেই থাকে তাহলে কিভাবে হয়?”
শওকত এমন পরিস্থিতি আশা করেনি।তিনি আমতা-আমতা করে।
আরেকজন বলে,
“আপনি থাকতে এসব অনৈতিক কাজ কিভাবে হয়?”
রাবেয়া চা নিয়ে আসে।আলতো করে হেসে বললো,
“ভাইসাব তেমন কিছুনা।আসলে ও আমার ননদের মেয়ে আমিই শিমুলকে ডাকতে পাঠিয়েছি।আপনারা এসেছেন শিমুলের আসা উচিত তাই ডাকলাম।আপনারা কি বলেন এসব?সুইটি তো শিমুলের বোন।আর আমার শিমুলের তো মিজান ভাইয়ের মেয়ের সাথে সাপ্তাহ খানেক আগে বিয়ে হয়েছে।জানেন হয়তো আপনারা।”
শওকত আর মজিব হাওলাদার হা করে রাবেয়ার কথা গিলে।মহিলার কতো বড়ো সাহস পুরুষের মজলিসে এসে গলা বাড়ায়।উপস্থিত সবাই রাবেয়ার কথা বুঝে।তখনি শিমুল বেরিয়ে আসে।সবার সাথে হালকা পাতলা কথা বলে।সবাই প্রয়োজনীয় কথা বলে চলে যায়।শওকত হাওলাদার ফুসে রাবেয়ার কাছে যায়।
“বাহিরের মানুষের সামনে কথা বলার সাহস কই থেকে আসে?”
রাবেয়া শওকত হাওলাদারের দিকে তাকায়।সবসময় ভয় পেয়েছে কিন্তু যখন ছেলের চরিত্র নিয়ে কথা হয় তার বাবার সামনে যেখানে কিনা বাবাই চুপ।তখন রাবেয়া চুপ থাকতে পারেনা।
“আমার ছেলের চরিত্র নিয়ে কথা হচ্ছে আর আমি চুপ থাকবো?”
“তুমি বেশী বেড়ে গেছো।”
“ছেলের ভালোর জন্য না হয় এতোটুকু বাড়লাম।”
শওকত হাওলাদার আর কিছু বলার আগে শিমুল কাছে আসে।গম্ভীর গলায় বললো,
“আব্বা।পুষ্পকে আজকের মধ্যে বাড়ি আনবো।ব্যবস্থা করেন।”
শিমুলের কথা শুনে শওকত হাওলাদার চোখ পাকিয়ে তাকায়।
“এখন সম্ভব না।”
“আপনার ভাগনী যে এসব অসভ্যতামি করছে দেখেন না?আমার বউ এনে দেন।”
পলাশ রুম থেকে বেরিয়ে নাস্তা খেতে যাচ্ছিলো ভাইয়ের কথা শুনে বললো,
“আব্বা,যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের মানুষ অন্য জায়গায় রেখে কি লাভ?মিজান চাচারে বলে দেন আজকে সন্ধ্যায় অমরা যাবো।”
পলাশের কথা শুনে শওকত হাওলাদার পলাশের দিকে তাকায়।
“এখন এসব সম্ভব না।”
শিমুল ত্যাড়া গলায় বললো,
“কেন?আজকের মধ্যে পুষ্পকে ঘরে আনবো আর এটাই ফাইনাল।ভাইয়া বুঝাও।”
পেশকারা এসে বলে,
“শিমুল ঠিকই তো বলেছে।তুই রাজি হয়ে যা।”
তারপর শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভাই তুই টেনশন করিসনা আজকেই বউ আনা হবে।”
মজিব হাওলাদারও মত দেয়।সবাই যখন মত দিচ্ছে তখন শওকত হাওলাদার আর কিছু বলার রাস্তা পেলেন না।ছেলের পাগলামি ইতোমধ্যে দেখেছে,ওই এক পয়সার মেয়ের জন্য তো আর ছেলের ক্ষতি কামনা করা যায় না।শিমুল তার যত্নে গড়া সৈনিক পুষ্পর জন্য তো শিমুলকে হাতছাড়া করা যাবে না।পুষ্পকে না হয় এই বাসায় এনে শায়েস্তা করবে।শিমুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
“যা তোর আম্মাকে নিয়ে শপিং করে আন।নতুন বউ তো আর এমনি এমনি আনা যাবে না।”
সবাই শওকতের কথা শুনে অবাক হয়।শিমুল হঠাৎ করে তার আব্বাকে জড়িয়ে ধরে,
“ধন্যবাদ আব্বা।”
শওকত মনে মনে পুষ্পকে নিয়ে ছক কষে।এমনভাবে খেলতে হবে যেন সাপও মরে লাঠিও না ভাঙ্গে।তখনি ফোন করে মিজান শেখকে জানিয়ে দিলেন আজকে বউ নিতে আসবে।
সুইটি ডাইনিংয়ে বসে আছে শিমুল গিয়ে বললো,
“তোকে এক বদনা ধন্যবাদ।তুই সকালে এই কাজটা না করলে আমার বউ আনা আরো দেরী হতো।তুই সহজ করে দিলি।আয় আজকে আমার বিয়ে উপলক্ষে তোরে একজোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল কিনে দেই,বাথরুমে ব্যবহার করিস।আয় আয়।”
শিমুল এটা বলে তার আম্মাকে নিয়ে শপিংয়ে যায়।সুইটি নাক ফুলিয়ে তার নানুর দিকে তাকায়।পেশকারা চোখের ইশারায় সুইটিকে আশ্বস্ত করে।
পলাশ আজকে একটু তাড়াতাড়িই কলেজে যাচ্ছে।সারারাত ঘুম হয়নি চোখ ভিষণ জ্বলছে।আজকে কলেজে তাড়াতাড়ি যাওয়ার কারন হচ্ছে নিধি।কালকে নিধিকেই প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে দেখেছিলো,নিধি বাংলা শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছে।নিধির আসার ব্যাপারটায় পলাশ বেশ অবাক হয়েছে,সাথে প্রিয় কাজলচোখ দেখতে পেয়ে খুশীও হয়েছে।পলাশ এগিয়ে এসে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু নিধি সবার সাথে কথা বলে বাসায় চলে গেছে।নিধিকে আবার দেখতে পেয়েই পলাশের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে।বুকের আগুনে তুশ পড়ে জ্বলেছে দাউদাউ করে।পলাশ সারারাত ঘুমাতে পারেনি।কলেজে গিয়ে দেখে নিধি অফিস-রুমে বসে আছে।নিধির সামনে যেতে পলাশের লজ্জা লাগছে।তারপরেও পলাশ সামনে এগিয়ে যায়।নিধির কাছে বসে বললো,
“কেমন আছো নিধি?”
নিধি কোন কথা না বলে উঠে চলে যায়।পলাশ সেদিকে তাকিয়ে তার চোখ ছলছল করে উঠে।সে কখনো কাউকে নিজের ব্যাথাটা বুঝাতে পারলো না।বুকের চাপা কষ্ট কেউ দেখলো না।
শিমুল পুষ্পর জন্য লাল টুকটুকে একটা শাড়ি কিনে।তার ফুলকে আজকে লাল রঙে দেখবে যদিও কালকে দেখেছে কিন্তু আজকে তো নিজের কাছে নিয়ে আসবে।শিমুলের বুকটা খুশীতে কেমন কেঁপে কেঁপে উঠে।তার আম্মা আর তিয়াসকে নিয়ে শপিং শেষ করে।
মিজান শেখের কাছে চেয়ারম্যান যখন মেয়ে নেয়ার কথা বলে তখন উনার বুকটা কেঁপে ওঠে।ঘরের অবস্থা এখন এমন যে রোকসানা ,মুন্নী,পুষ্প সবাই কাঁদছে।মিজান মেয়ের কাছে এসে বসে।মেয়েটা লেখাপড়ায় খুব ভালো,পুষ্পরও ইচ্ছা ছিলো অনেক পড়বে মিজান শেখও মানা করেনি মেয়ের ইচ্ছামতো পড়াবে বলে কতো বিয়ের সমন্ধ নাকোচ করেছে তার ইয়োত্তা নেই।কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো?যেই বাবা মেয়ের মাঝে নিজের মাকে খুঁজে পেতো সেই মেয়েকেই মে//রেছে।এখন পুষ্পকে চেয়ারম্যান বাড়িতে নিয়ে যাবে বলাতে মিজান শেখের কলিজা কাঁমড়ে উঠে,মেয়েটাকে যে খুব ভালোবাসে।পুষ্পর দিকে তাকিয়ে পুষ্পর মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়,কিন্তু কিছু বলতে পারে না,কান্নায় গলা আটকে আসে।বাবার স্পর্শ পেয়ে পুষ্প ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়।এটা ঠিক তার মন শিমুলের কাছে যেতে চায়,সবসময় শিমুলের সানিধ্যে থাকতে চায় কিন্তু এখন যখন বাবা মাকে ছেড়ে যাবার কথা এসেছে পুষ্পর বুকটা পুড়ছে।মিজান শেখ উঠে চলে যায়।বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে আর অভিমান রেখে কি হবে?মেয়ে তো শশুড় বাড়ি পাঠাতেই হবে।উনারা সন্ধ্যায় আসবে।মিজান শেখ আয়োজনে লেগে পড়ে।
সন্ধ্যার দিকে শিমুল গাড়ি নিয়ে আসে।আসার আগে অবশ্যই বাসর সাজিয়ে এসেছে।তিয়াসের এই নিয়ে কি হাসাহাসি।
“সালা কেউ কি নিজের বাসর নিজে সাজায়?”
শিমুল তখন সাজাতে ব্যস্ত।হেসে হেসে বললো,
“বিয়ে একবার,বাসরও একবার।নিজের মতো না সাজালে দেখে তৃপ্তি আসবে না।”
“সবাই কি ভাবছে বল তো?”
“সবাই কি ভাববে এটা ভাবতে গেলে তো হবে না।আমার ফুলকে আমি ফুলের রাজ্যে এনে বসাবো।”
সাজানো শেষ হলে তিয়াশ শিমুলের হাসিখুশী মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।ভালোবাসার পূর্নতা আসলেই সুন্দর।
রাত নয়টার দিকে পুষ্পকে নিয়ে আসা হয়।রোকসানা কেঁদে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে আহা মেয়েটাকে কতো মে/রেছে কতো মন্দ কথা বলেছে এখন তো চলে যাচ্ছে।পুষ্পরও অবস্থা খারাপ।গাড়িতে শিমুল পুষ্পর মাথাটা টেনে তার কাধে নেয়।শিমুল হাসে ফিসফিস করে বলে,
“আমার কাছে যাওয়ার জন্য যে তুমি এতো কান্না করবে আমি জানতামই না।”
পুষ্প কিছু বলেনা।বাবা মাকে ছেড়ে এসেছে মন খারাপ লাগছে।পুষ্পর চুপ থাকা দেখে শিমুল বললো,
“আচ্ছা কেঁদো না।তুমি কাঁদলে ভালো লাগে না।”
পুষ্প চারদিকে তাকায়।সবসময় বাহির থেকেই চেয়ারম্যান বাড়ি দেখেছে কখনো ভেতরে আসেনি,আজকেই প্রথম ভেতরে আসলো,পুষ্পর মনে হলো সে যতটা ভেবেছে শিমুলরা তার থেকেও বেশী ধনী।কেন জানি চারিদিকে এতো দামী জিনিসপত্র দেখে পুষ্পর হাফসাফ লাগে।সেদিনতো ভেবেছিলো মরেই যাবে সব শেষ কিন্তু আজকে সে এই বাড়ির বউ।বাহিরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে।পুষ্পর মনে পড়ে তার মা বলতো বিয়ের দিন রাতে বৃষ্টি হলে নাকি বউ ভাগ্যবতী হয়।পুষ্পও কি ভাগ্যবতী?সে তার ছোট এই জীবনে শিমুলকে পেয়েছে এর চেয়ে বড়ো ভাগ্য আর কি হতে পারে! পুষ্প একা ড্রয়িংরুমে বসে আছে আশেপাশে কেউ নেই,কেউ নেই বললে ভুল হবে একটা পনেরো বছরের মেয়ে ঘুরঘুর করছে,পুষ্প আগে রাস্তায় এই মেয়েকে একবার দেখেছিলো কিন্তু পরিচয় জানে না।পুষ্পর মনটা শুধু শিমুলকে খুঁজে একবার এসে মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলে গেছে একটা মিটিং আছে,যেতে হবে।জরুরী নয়তো আজকে শিমুলকে কেউ নড়াতে পারতো না।এই মানুষটাকে দেখলেই শান্তি লাগে।
রাবেয়া এগিয়ে আসে।পুষ্পর কাছে বসে পুষ্পর হাত ধরে।মেয়েটাকে তার ভিষন পছন্দ হয়েছে।প্রথম বউ বলেই কিনা পুষ্পকে খুব আপন লাগছে।
“পুষ্প আমি শিমুলের মা।”
পুষ্প রাবেয়াকে চিনে।তারপরেও পরিচয় দেওয়াতে সালাম করে।রাবেয়া আলতো হেসে গলার হার খুলে পুষ্পকে পড়িয়ে দেয়।
“তুমিও আমাকে মা বলে ডাকবে পুষ্প।আমার মেয়ে নেই তো মেয়ের মুখে মা ডাক শুনার খুব ইচ্ছে।তুমি কথায় কথায় আমাকে মা বলবে।ঠিক আছে?”
উনার কথার ধরনে পুষ্পর চোখ ভিজে উঠে।আসলেই উনার থেকে স্নেহের ঘ্রান পাওয়া যাচ্ছে।উনার চাহনিতে কেমন আপন আপন ছোঁয়া।কথায় ছেয়ে আছে সরলতা।
“ঠিক আছে মা।”
“শিমুল আর তোমার কি অবস্থায় বিয়ে হয়েছে তা তো জানোই।পরিবারের বাকি সবার মেনে নিতে একটু সময় লাগবে।তাদের কোন কথায় তুমি কষ্ট পেও না।কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবে।”
“জ্বী আচ্ছা।”
ফুলি তখন আসে।রাবেয়া পরিচয় করিয়ে দেয়।
“পুষ্প এ হলো ফুলি।আমার আরেক মেয়ে।আমাকে সব কাজে খুব সাহায্য করে।তোমাকেও সাহায্য করবে।”
ফুলি গদগদ হয়ে বললো,
“ভাবী আপনের কতা কতো হুনছি।ভাইজানে ঠিক কইছে আপনে হেছাই পরীর মতো।”
পুষ্প হাসে।এই মেয়েটা সেই কখন থেকে ঘুরঘুর করছে এতোক্ষণে কথা বললো।
রাত বারোটায় পুষ্পকে শিমুলের রুমে পাঠানো হয়।পুষ্প রুমে ঢুকার পরে শিমুল দরজা বন্ধ করে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।পুষ্প অবাক হয়ে পুরো রুম দেখছে।ফুল দিয়ে এতো সুন্দর করে সাজানো যে মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায় না।সে শিমুলের দিকে ফিরে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে,তারপর ফিক করেই দুজনে হেসে ফেলে।শিমুল এগিয়ে আসে।পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“আমার ফুলকে ফুলের রাজ্যে না আনলে তো ভিষণ বাজে লাগতো।”
পুষ্প হাসে।তার এতো সুখ সুখ লাগছে।সুখে বুকটা চিনচিন করে উঠছে।
“পছন্দ হয়েছে?”
পুষ্প মাথা দুলিয়ে বললো,
“হয়েছে।”
“এই রুমটা তোমার।এই রুমে এখন থেকে তোমার রাজত্ব চলবে।”
তারপর পুষ্পর দিকে কিছুটা ঝুঁকে নিজের বুকে হাত রেখে বললো,
“এই মানুষটাও তোমার,মানুষটার উপরেও তোমার রাজত্ব বহাল থাকবে।”
পুষ্প শিমুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।শিমুলের দিকে তাকালেই পুষ্পর বুকটা সুখে ব্যাথা করে।এই যে এখন পুষ্পর দম বন্ধ হয়ে আসছে।শিমুলের ঠোঁট টিপে হাসিটাও খুব শান্তি দিচ্ছে।আজকে সে পুরোপুরি শিমুলের।বদ্ধ রুমে একা শিমুলের কাছে এসে পুষ্পর সারা শরীর শিরশির করে কেঁপে ওঠে।
শিমুলের কেমন অনুভূতি হচ্ছে এটা বুঝানো সম্ভব না।সে ফুলকে জয় করে তার ঘরে নিয়ে এসেছে।পুষ্পর হাতের কাঁপন টের পেয়ে শিমুল হাসে।আচ্ছা তার ফুলবউ তাহলে বরকে ভয় পাচ্ছে?শিমুল আরেকটু ভয় দেখাতে পুষ্পকে খাটে বসিয়ে বললো,
“আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।একটু অপেক্ষা করো।”
তারপর বাথরুমে ঢুকার আগে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে,
“আজকে তো তুমি শেষ ফুলরানী।”
শিমুলের কথা শুনে পুষ্পর হাত পা অসাড় হয়ে আসে।এতোদিন যদিও শিমুল কাছাকাছি এসেছে কিন্তু পুষ্পর এই বিশ্বাস ছিলো যে শিমুল কিছু করবেনা।কিন্তু আজকে পুষ্প শিমুলকে মোটেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।দুষ্টু দুষ্টু চোখের চাহনি আর এখন এই কথাটা শোনার পরে তো আরো ভয় লাগছে।
শিমুল ফ্রেস হয়ে ট্রাউজার পরে বের হয়।তাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় গিয়ে দাঁড়ায়।
পুষ্প শিমুলের আদুল গা দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে।ফর্সা বুকে কালো পশম যেনো সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে দিয়েছে।পুষ্পর ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে।শিমুলের মুচকি হাসি সমেত দুষ্টু দুষ্টু চাহনি দেখে আবার মনের ভয় মাথা নেড়ে উঠে।
শিমুল গায়ে বডিস্প্রে করে আয়না দিয়েই পুষ্পকে দেখে।পুষ্পর লজ্জামাখা ভীতু চাহনী দেখে বললো,
“সুন্দরী কি আমাকে ভয় পাচ্ছে?”
পুষ্প কিছু বলেনা।এই এতো এতো চেনা শিমুলকে এতো ভয় লাগছে কেন?পুষ্পর লজ্জাও যেন আজকে প্রতিযোগিতা দিয়ে বাড়ছে।শিমুল আলমারি খুলে হেংগার থেকে গেঞ্জি নেয়।গায়ে দিয়ে বিছানায় বসে।পুষ্প মাথাটা নিচু করে ফেলে।তার যে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
শিমুল তাকিয়ে থাকে।পুষ্পর লজ্জামাখা চাহনি দেখতে ভালো লাগছে।বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হাতের নাগালে প্রিয় রমনী শিমুলের নিষিদ্ধ ইচ্ছারা তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে বারবার ফুসলিয়ে দেয়,শিমুলের সারা শরীরে কেমন কাঁপন ধরে।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে পুষ্পর হাত ধরে মুখোমুখি বসে।মোলায়েম গলায় বললো,
“বৃষ্টির রাত,একা ঘর,সাথে শিমুল ফুল,আজকে হয়ে যাক কিছু ভুল।”
পুষ্প তো এই ভুলের ভয়ই পাচ্ছিলো।পুষ্পর পেট কেমন ব্যাথা করে উঠে।আজকে কি তার মরন হবে?
চলবে……