#শিমুল_ফুল
#১৮
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
এমপির ভাগনীর সাথে বিয়ের কথাবার্তায় মজিব আর শওকত হাওলাদার খুশী হলেও পেশকারা বেগম ভিষন অসন্তুষ্ট।তার যে খুব ইচ্ছা ছিল আসমার মেয়ে সুইটিকে বিয়ে করানোর।নাতনীটা কাছে থাকতো।তাছাড়া সুইটি শিমুলকে খুব পছন্দ করে।এই কথাটা তার স্বামী মজিব হাওলাদার জানে তিনি মনে করানোর ছলে আবার বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু উনি না শুনেই ধমকে দিয়েছে।পেশকারা বেগমও দমে যাওয়ার পাত্রী না,ফোন করেন আসমার কাছে।তিনি সব বিস্তারিত মেয়েকে বলেন।আসমাও মনে মনে শিমুলকে মেয়ে জামাই হিসেবে চেয়েছিলো কিন্তু এখন এসব শুনে রেগে যায়।মা মেয়ে সিন্ধান্ত নেয় যে কালকে সকালের গাড়িতে আসছে।শিমুলের বিয়ে সুইটির সাথেই হবে,বাড়ির মেয়ে থাকতে অন্য বাড়ির মেয়ে এসে রাজত্ব করে খাবে তা তো হয় না!পেশকারা ফোন রেখে ভাবে একবার যদি কোনরকম বিয়ে করানো যায় তাহলে আর কোন চিন্তা নেই।আসমা আরো আগেই তার আব্বার কাছে এই ব্যাপারে কথা বলেছিলো তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন এই ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন অথচ এখন বড়লোক পেয়ে বিয়ে ঠিক করে ফেলছেন!আসমা এতো সহজে ছাড়ার পাত্রী না।
পুষ্প রাতে শান্তিতেই ঘুমায়।দেখা করতে যাওয়ার ব্যাপারটা কেউ বুঝতে পারেনি।শিমুলের সানিধ্যে গিয়ে সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে।এতো এতো টেনশনের মাঝেও
মনে শান্তি লাগছে।ইশ এভাবেই যদি সারাজীবন থাকা যেতো!আল্লাহর কাছে এই ফরিয়াদ সারাজীবন যেন একসাথে থাকার তৌফিক দেয়।আজকে যে ভ’য় পেয়েছিলো তা শিমুলের কথা শুনে দূর হয়ে গেছে।আসার আগে শিমুল পুষ্পর ডান হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়েছে পুষ্প হাতটা সামনে এনে ঠিক একি জায়গায় নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়।চোখ বন্ধ করে হাসে।পুষ্পর মনে হচ্ছে সে তার হাতে নয় বরং শিমুলের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়েছে।পুষ্প কি একটু বেশী দুষ্টু হয়ে যাচ্ছে না?দুষ্ট হওয়ার পিছনে আছে শিমুল।প্রথমে দোলা দিয়ে এখন বলে কিনা এসব ভালো না।পাজি পুরুষ!যন্ত্রণাদায়ক পুরুষ।
সকালে রোকসানা বুঝতে পারে রাতে দরজা তালা দেয়নি ।আড়চোখে পুষ্পকে দেখে পুষ্প তার দিকেই তাকিয়ে আছে।রোকসানা মেয়ে হাবভাব বুঝার চেষ্টা করে।শিমুলের বিয়ের কথা শুনার পর থেকে পুষ্প মন খারাপ করে রেখেছে কাছে গিয়ে বসে বলেন,
“দেখলি তো আমার কথাই হলো।”
পুষ্প বুঝতে পারে তার আম্মা কিসের কথা বলছে।কিছু না বলে চুপ করে থাকে।রোকসানা আবার বলে,
“তোকে এর থেকে ভালো বিয়ে দিবো।চিন্তা করিস না।”
পুষ্প মনে মনে বলে,’শিমুলকেই বিয়ে করবো আম্মা।তুমি চিন্তা করোনা।’
রোকসানা পুষ্পর চুপ থাকা দেখে ভাবে হয়তো মন খারাপ বলে কথা বলছেনা।
“আমি মুন্নীকে বলেছি কয়েকদিনের জন্য এসে থাকতে।শিমুল বিয়ে করছে,আমরাও তোর বিয়ে শীঘ্রই দেবো।সাফিন এখনো রাজি।”
পুষ্প শান্ত চোখে তার আম্মাকে দেখে।তার আম্মা জানলই না মেয়ে রাতের আধারে সব ভু’ল,স’ন্দেহ দূর করে ফেলেছে।শিমুল বলেছে বেঁচে থাকলে সে পুষ্পর।
রাতে শিমুলের ঘুম হয় না।কিভাবে কি করবে এই টেনশনে সারারাত চোখ খুলেই কাটিয়ে দেয়।তার আব্বা সামনে আরো বেশী কঠিন হবে এটা শিমুল জানে।বিয়ে করানোর জন্য যেকোনো হস্তক্ষেপ নিতে পারে।শিমুল ভাবে যদি এমপির ভাগনীর সাথে দেখা করে কোন ফয়সালা করা যায়।কিন্তু ওই মেয়ে তো আগেই পছন্দের কথা জানিয়ে দিয়েছে।শিমুল চোখ বন্ধ করে রাখে।দুপুরে আবার সবার সাথেই খেতে যায়,মূল উদ্যেশ্য কে কি বলে শুনা,তার আব্বার মতিগতি লক্ষ করা।
দুপুরে সবাই যখন খাবার খেতে বসেছে আসমা আর সুইটি আসে।সুইটি এসেই মজিব হাওলাদারকে জড়িয়ে ধরে।আসমা বলে,
“আব্বা আমাকে কি আপনারা আপন মনে করেন না?আপনার সাথে কি কথা ছিলো মনে নেই?শিমুলের বিয়ে সুইটির সাথে হবে।তাহলে কিভাবে আবার শিমুলের বিয়ে ঠিক করেন?”
শিমুল অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।মানে কি?সুইটির সাথে বিয়ে মানে?শিমুল মুখের খাবার গিলতে ভুলে যায়।
মজিব হাওলাদার বলেন,
“ঠিক আছে।কিন্তু যে বিয়ে এসেছে সেটা আমাদের সবার জন্যই ভালো।সবাই সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবি।”
আসমা বলে,
“এটা ঠিক না আব্বা।আর আমার কোনো সুযোগ সুবিধা লাগবে না।এই বিয়ের কথা আর এগিয়ে নিবেন না।আপনার মেয়ে হিসেবে এটা আমি চাই।আশা করি ফিরিয়ে দিবেন না।”
শওকত এতোক্ষণ সব শুনছিলো।তার আব্বার দিকে তাকালে মজিব হাওলাদার মাথা নেড়ে তাকে আসস্থ করে।মজিব হাওলাদার মেয়েকে বলে,
“আচ্ছা জার্নি করে এসেছিস রেস্ট নে পরে কথা বলবো।”
আসমা মাথা নেড়ে বলে,
“আব্বা এসেছিই তো এই নিয়ে কথা বলতে পরে কেন এখনি কথা হবে।”
তারপর শিমুলের দিকে তাকিয়ে বলে,
“শিমুল তুমি কি আমার সুইটিকে বিয়ে করবেনা?আমি জানি আমার মেয়ের মতো মেয়ে লাখে একজন মিলে তুমি রাজি হবেই হবে।তাইনা শিমুল?”
শিমুল কিছু বলেনা।ভাতের প্লেটে পানি ঢেলে তার মায়ের দিকে তাকায়।তারপর উঠে নিজের রুমে চলে যায়।আসমা পুষ্পর কথা জানে তারপরেও সবার সামনে শিমুলকে এটা বলে বিব্রত করাই ছিলো মূল উদ্যেশ্য।তখনের মতো আসমা আর সুইটি ফ্রেস হতে যায়।ফুলি দাঁত বের করে হেসে সবার সামনেই বলে,
“ভাইজানের দেহি লটারি লাইগা গেছে।একটার পর একটা আইয়ে।”
পেশকারা ধমক দিয়ে বললেন,
“আমার সুইটিই শিমুলের জন্য ঠিক।দেখিস না একসাথে দাড়ালে জোড়া শালিকের মতো লাগে।”
সবাই বুঝিতে পারে সুইটির আর শিমুলের বিয়ে দিতে পেশকারা ইচ্ছুক।মজিব হাওলাদার বউকে চোখ পাকিয়ে বলে
“বেশী কথা বলা আমি পছন্দ করিনা।”
পেশকারা দ্বিগুণ রেগে বলে,
“কতোদিন আগে থেকে আমার মেয়েকে বলে রেখেছেন।এখন না করা যাবে না।”
“তখন তো আর এমপির কাছ থেকে প্রস্তাব পাই নাই।”
পেশকারা মুখ ভেংচিয়ে বলে,
“লোভী মানুষ।”
সবার সামনে লোভী বলায় মজিব হাওলাদারের গায়ে লাগে।দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলে,
“বেয়াদব মহিলা।চুপ।”
রাবেয়া স্তব্ধ হয়ে তাদের তামাশা দেখে।তার ছেলেকে নিয়ে সবাই জুয়ার আসর জমিয়ে ফেলেছে।তিনি মা হয়ে কিছুই করতে পারছেনা।শিমুলের কষ্টে তার বুকটাও ভার হয়ে আসে।
বিকালে শিমুল রেডী হয় বের হবে বলে।ঘরটা আজকাল অশান্তির বাজার মনে হয় তার আসমা ফুফু আসার পর থেকে হইচই লেগেই আছে।দুপুরে শিমুল ঘরে বসেই সবার কথোপকথন শুনেছে।মানে কি?সে কি খেলনা,যে আগে নিবে সেই পাবে?দাঁত কিড়মিড়িয়ে বের হতে যাবে এমন সময় সুইটি কোথা থেকে এসে পিছন থেকে জাপটে ধরে।সাথে সাথেই শিমুলের মুখ রাগে রক্তিম হয়ে যায়।ড্রয়িংরুমে তার মা,ফুফু,বুবু আর ফুলি বসে কথা বলছে।হঠাৎ করে সুইটি এমন কাজ করায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।শিমুল ঝটকা দিয়ে সুইটির দুই হাত সরিয়ে নেয়।এমনিতেই তার মেজাজ খারাপ এখন সুইটির এমন বেহায়াপনায় বিরক্ত হয়ে বলে,
“কি সমস্যা এমনে ঘষাঘষি করিস কেন?”
সুইটি ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো,
“সবাইকে বলে দাও তুমি আমাকেই বিয়ে করতে চাও।”
শিমুলের শরীরের রক্ত টগবগিয়ে উঠে।ইচ্ছে করছে সুইটির চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে।নেহাৎ এটা মেয়েদের কাজ তাই নিজেকে সামলালেও হুট করে বলে দিলো,
“দেশে কি বেডার অভাব পড়ছে বা*ল।সবাই মিল্লা আমার পিছনে পড়ছিস কেন?সর।ফালতু মাইয়া।”
শিমুলের মুখে এমন কথা শুনে সবাই অবাক।সুইটির দুই ঠোঁট ফাক হয়ে গেছে।শিমুলের এমন ব্যবহারের সম্মুখীন এই প্রথম হলো।সবার মধ্যে থেকে ফুলি খিলখিল করে হেসে উঠে।
“ভাইজানে চেইত্তা গেছে।আপা আপনে আরেকটা বেডা খুঁজেন এই বেডা রাজি না।যান যান।”
রাবেয়া আঁচলে মুখ লুকিয়ে হাসে।ছেলে যে সুইটিকে পছন্দ করেনা এ আর নতুন কি!ফুলির কথা শুনে পেশকারা বেগম ফুলিকে চোখ রাঙ্গিয়ে দেয়।ফুলি হাত দিয়ে মুখ চেপে হাসতে হাসতে চলে যায়।
এরপরের দিন সন্ধ্যাবেলা শিমুল আরেকদফা রাগারাগি করে।তার পুষ্পকে চাই আর কোন কথা শুনতে রাজি না।রাগারাগি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।শওকত হাওলাদার বুঝতে পারে ছেলেকে এটা সেটা বলে লাভ নেই।শিমুলের ঘাড়টা ত্যাড়া।যা করার মিজানের সাথেই করতে হবে,তাই মন্টুকে দিয়ে মিজান শেখের কাছে খবর দিয়ে পাঠায়।মিজান শেখ তখন বাড়িতে।কিছুক্ষণ আগে মুন্নী এসেছে।বাজার থেকে মিজান শেখ মেয়েকে নিয়ে এসেছে।তখনি মন্টু এসে হাজির।মন্টুকে দেখে সবাই বুঝতে পারে চেয়ারম্যানের চেলা চেয়ারম্যানের কাজেই এসেছে।
“স্লামলেকুম মিজান চাচা।”
মিজান মন্টুকে দেখে বলে,
“কি জন্য এসেছো?”
মন্টু পান খাওয়া লাল দাতঁ বের করে হাসে যেন খুবই সুসংবাদ নিয়ে এসেছে।
“চেয়ারম্যান চাচায় যাইতে কইছে।”
রোকসানা সহ ঘরের সবাই পুষ্পর দিকে তাকায়।কেন যেতে বলেছে এটা স্পষ্ট।মিজান শেখ বললো,
“এখন কাজ আছে আমি পরে যাবো।”
মন্টু বলে,
“চাচা কইছে লগে কইরা নিয়া যাইতে।জরুরি কথা।”
মিজান শেখ মেয়ের দিকে তাকায় যার অর্থ তোর জন্য আজকে কেউ ধরে বেধে নিতে আসে।মিজান শেখ মন্টুর সাথে চেয়ারম্যান বাড়িতে আসে।চেয়ারম্যান মিজান শেখকে দেখে বলে,
“কি ব্যাপার মিজান ব্যাবসা কেমন চলে?”
মিজান আড়ষ্ট হয়ে চেয়ারে বসে আছে।মাথা নেড়ে বললো,
“জ্বি ভাই।ভালোই চলে।”
শওকত এক পায়ের উপর আরেকপা তুলে বলে,
“যে রাস্তায় নামছো সামনে ভালো চলবে বলে মনে হয় না।হোটেলের জায়গায় কুত্তা ঘুমাইবো।”
মিজান চমকে তাকালে শওকত চেয়ারম্যান বলে,
“মেয়েরে সামলাতে পারো না?”
মিজান চেয়ারম্যানের কথার ধরন দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে।
চেয়ারম্যান শক্ত চোখে তাকিয়ে বলে,
“কেমন মেয়ে জন্ম দিয়েছো যে কথা শুনেনা?”
মিজান বলেন,
“আপনি কথা ঠিক মতো বলেন।শুধু আমার মেয়ে না আপনার ছেলেও সমান অপরাধী।
শওকত হাওলাদার মাথা নেড়ে বললো,
” আমার ছেলের পুলাপানের মন কখন কই যায় ঠিক আছে?সুযোগ পেয়ে তুমি যে তোমার মেয়েকে আমার ছেলের পিছনে লাগিয়ে দিবা কে জানতো?”
শওকত চেয়ারম্যানের ঠান্ডা মাথায় করা অপমানে মিজান শেখের চোখ লাল হয়ে যায়।রেগে বলে,
“আজেবাজে কথা বলবেন না।”
শওকত হাওলাদার মিজান শেখের কথার পাত্তা না দিয়ে বলেন,
“বড়লোক ছেলে-পেলে দেখলে আজকালকার মা বাবারা এমনই করে।নিজেরাই ছেলে-মেয়েকে এক ঘরে দিয়ে রাখে।”
মিজান শেখ আর সহ্য করতে পারে না।উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমার মেয়ে এতো নোংরা না আপনার মন মানষিকতাই নোংরা।আর আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু লোভী না যে টাকার পেছনে মেয়েকে লাগাতে হবে।”
শওকত হাওলাদার গা জ্বলানো হাসি দিয়ে বলে,
“যদি তুমি তোমার মেয়েকে এক সাপ্তাহর মাঝে বিয়ে দিতে পারো তাহলে বুঝবো এইসবে তোমাদের হাত নেই।আর যদি বিয়ে না দাও তাহলে বুঝবো আমার টাকা দেখে মেয়েকে ঝুলাতে চাইছো।”
শওকত হাওলাদারের কথা শুনে মিজান শেখ প্রচন্ড রেগে যায়।মাথা নেড়ে বললো,
“আমার মেয়েকে আমি বিয়ে দিবো আপনার ছেলে সামলাই রাখবেন।আর যদি আমার বাড়ির সামনে যায় হাত পা আস্ত থাকবে না।”
শওকত হাওলাদার বললো,
“টাকা লাগলে বলবা কিন্তু আমার ছেলের থেকে দূরে।”
মিজানের শরীর থরথর করে কাঁপে।
“আপনি আমাকে টাকার গরম দেখান?”
“তোমার ছেলে নাই আমার ছেলেকে হাত করে বাকি জীবন সুখে কাটানোর ধান্ধা যে করেছো তা তো বুঝিই।”
মিজান শেখ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেন।মেয়ের জন্য এতো নোংরা কথা শুনতে হলো!মেয়েকে জন্ম দেয়া কি তার অপরাধ ছিলো?চেয়ারম্যানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার মেয়েকে আমি এক সপ্তাহের মাঝে বিয়ে দিবো আপনার ছেলেকে আঁটকে রাখবেন।”
এটা বলে আর দাঁড়ায় না।দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে যায়।চেয়ারম্যানের বিশ্রী কথাগুলো শোনার পর থেকে মাথাটা ঘুরছে প্রেশার বেড়ে গেছে বোধহয়।
মন্টুর সুবাধে গ্রামের অনেকেই শিমুল পুষ্পর ঘটনাটা জানে।মিজান শেখ মোড়ের দোকানের সামনে দিয়ে আসার সময় এক লোককে বলতে শুনলো
“ওই দেখ বিয়ার আগেই বেয়াইয়ের বাড়িতে আসা যাওয়া।মিজান মাইয়ারে দিয়া একেবারে ছক্কা মারলো।”
আরেকজন বলে,
“গুরু জনেরা কইছে মাছ ধরলে ধরন জাগুর,লাঙ্গ ধরলে ধরন ঠাহুর।মিজানের মাইয়া কথাটার মান রাখছে।”
মিজান শেখের লাল বর্ণ ধারন করা চোখ দিয়ে টুপ করে দুইফোটা অশ্রু পড়ে।লাইটের আলোতে সামনে একটা বাশের কঞ্চি দেখতে পায় নিচু হয়ে সেটা হাতে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে।
রোকসান পুষ্প আর মুন্নী মধ্যরুমে রুমে বসে আছে।সবাই টেনশনে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে।মিজান শেখ কাউকে কিছু না বলে ঘরে ঢুকে পুষ্পর হাত ধরে টেনে পুষ্পর রুমে যায়।কাউকে ঢুকতে না দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।রোকসানা হাতের কঞ্চি আর দরজা বন্ধ দেখে পরিস্থিতি কল্পনা করে ডুকড়ে কেঁদে উঠে।
পুষ্প কিছু বুঝার আগে মিজান শেখ বাশের কঞ্চি দিয়ে আঘাত করে।একটা দুটা আঘাত না নিজের শরীরের সব শক্তি দিয়ে মা*রে।কাটা বাশের কঞ্চির আঘাতে পুষ্পর নরম শরীর কেঁটে রক্তাক্ত হয়ে যায়।গলা ফাটিয়ে পাগলের মতো তার আম্মাকে ডাকে।
“আম্মা,আম্মা গো।আম্মা ম’রে যাইতেছি আম্মা।আম্মা।”
পাশের রুম থেকে রোকসানা পাগলের মতো দরজা ধাক্কায় আর বলে,
“দরজা খুলেন।”
মিজান মা*রতে মা’রতে বলে,
“এমন মেয়ের দরকার নাই ম*ইরা যাক।ম*রলে আফসোস নাই।কু’ত্তার বাচ্চা তুই ম*র।এখনি ম*র।”
পুষ্প ফ্লোরে পড়ে গেছে।ব্যাথায় ঠোঁট নীল হয়ে গেছে,এতো ব্যাথার মাঝেও শিমুলের মুখটা ভেসে উঠছে।তার সারা শরীর কাঁপছে।কাঁপা কাঁপা হাতে তার আব্বার পা জরিয়ে ধরে।
“আব্বা আর মা*ইরো না আব্বা। আব্বা আর মাই*রো না।”
শিমুল ছুটে এসে ঘরে ঢুকে।তিয়াস পেছন পেছন আসে।শিমুল একটু আগে বাড়িতে গিয়ে ফুলির কাছে সব বিস্তারিত শুনে এক মূহুর্ত দেরী করেনি।ছুটে চলে এসেছে।কি হয় পরিস্থিতি বুঝার জন্য আসলেও
বাহির থেকেই পুষ্পর আর্তনাদ শুনতে পেয়ে নিজেকে আর আটকাতে পারেনি ঘরেই চলে এসেছে।তার হাত কাঁপছে,চোখ নিমিষেই ছলছল হয়ে পানির অস্তিত্ব জানান দিয়ে গেছে।
দরজায় হাত রেখে বললো,
“চাচা আর মা*রবেন না চাচা।”
শিমুলের কন্ঠ শুনে মিজানের হাত থেমে যায়।গলা উঁচিয়ে বলে,
“রোকসানা এই ছেলেকে যেতে বলো।যদি না যায় আমি পুষ্পকে জানে মে*রে ফেলবো।”
পুষ্প শিমুলের গলার স্বর শুনে ফুঁপিয়ে কাঁদে।শিমুল বলে,
“আপনি আমাকে মা*রেন তাও পুষ্পকে মাই*রেন না চাচা।”
মিজান দরজা খুলে শিমুলের সামনে দাঁড়ায়।
“শিমুল তুমি এখন আমার ঘর থেকে বের হয়ে যাবে।তা না হলে আমি পুষ্পকে মে*রে পু*তে ফেলবো।”
শিমুল মিজান শেখের হাতে ধরে।তার বুকটা অস্বাভাবিকভাবে লাফাচ্ছে।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
“আমার কথা শুনেন।”
মিজান শেখের ভালো লাগেনা।বাবা ডেকে নিয়ে অপমান করবে আবার ছেলে হাতে ধরে অনুরোধ করবে তামাশা পেয়েছে নাকি?হুংকার দিয়ে বলে,
“চলে যাও।”
শিমুলের চোখে পানির রেশ সবাই দেখতে পায়।মিজানের হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
“আমার কথাটা একবার শুনেন।”
মিজান বলে,
“এক সাপ্তাহর মাঝে আমি পুষ্পকে বিয়ে দিবো।তুমি বাড়ির আশেপাশে আসবা না।এখন যাও।”
শিমুল বলে,
“আপনি বললে আমি পুষ্পকে এখনি বিয়ে করতে চাই।”
মিজান চোখ বড়ো করে তাকিয়ে বললো,
“তোমার কাছে বিয়ে দেয়ার চেয়ে মে*রে ফেলা ভালো।আমি তো আমার মেয়েকে দিয়া টাকাওয়ালা ছেলে হাত করে নিছি।মেয়েকে দিয়ে তোমাকে হাত করে সারাজীবন সুখে কাটানোর ধান্ধা করেছি।কিছু না করেই এতো অপবাদ?”
শিমুল মিজানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“চাচা দয়া করে….”
মিজান শিমুলের কথা শেষ না হবার আগেই আবার পুষ্পর রুমে ঢুকতে গেলে শিমুল দ্রুত বলে,
“আমি চলে যাচ্ছি,চলে যাচ্ছি।আর মা*রবেন না।”
শিমুল চলে যাচ্ছে শুনে পুষ্প আর্তনাদ করে বলে,
“শিমুল,আমি এখানে থাকবো না আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও।শিমুল।”
শিমুল হাত দিয়ে মুখ চেপে রাস্তায় এসে দাঁড়ায়।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।বুকটা এতো জ্বলছে।ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই এই কথা অমান্য করে শিমুল কাঁদছে।হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কাঁদছে।তখনো পুষ্প কাঁদছে আর বলছে,
“আমাকে নিয়ে যাও শিমুল।শিমুল।”
শিমুল বাইক রেখেই বাড়ির দিকে ছুটে।মনে মনে বলে,’চেয়ারম্যান তুই কি আগুন লাগাইছিস আমি আরো বেশী লাগাবো।তর কলিজা পুড়িয়ে দিবো।”
চলবে….
#শিমুল_ফুল
#১৯
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শিমুলের মুখের আদল লাল বর্ণ ধারন করেছে চোখ দেখাচ্ছে ভেজা।ঘরে ঢুকে ড্রয়িংরুমের সামনে রাখা বায়ান্ন ইঞ্চি টিভি ধরাম করে ফ্লোরে আছড়ে ফেলে দেয়।বিকট শব্দে টিভিটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।সবাই রাতের খাবার খাচ্ছিলো হঠাৎ শব্দে চমকে তাকায়।মিজান শেখের সাথে হওয়া ঘটনাটা সবাই জানে।শওকত হাওলাদার বিচলিত হলেন না,শান্ত চোখে ছেলেকে পরখ করে।
শিমুলের রাগ তখন পারদ সীমার বাহিরে যার তাপ সবাই পাচ্ছে।শিমুল ড্রয়িংরুমে যা যা ভাঙ্গার মতো ছিলো সব ভেঙে ফেলে।ছোট ছোট কাচের টুকরো ছিটকে হাতে বিধে রক্ত আসে শিমুলের সেদিকে খেয়াল নেই।রাবেয়া ছেলেকে ধরতে আসলে শিমুল ধরতে দেয় না।দ্রুত পায়ে খাবার টেবিলের সামনে দাঁড়ায়।শওকত হাওলাদারকে বলে,
“আপনাকে আমি সম্মান করে পছন্দের কথা জানিয়ে ছিলাম আর আপনি কি করলেন আমার পছন্দকে অসম্মান করলেন?পুষ্পর আব্বাকে অপমান করলেন?”
শওকত হাওলাদার নির্বিকার হয়ে খাবার খাচ্ছে,এমন ভাব যেন কিছুই হয়নি।শিমুল আবার বলে,
“আপনি মিজান চাচাকে অপমান করলেন কেন?”
শওকত হাওলাদার শিমুলের দিকে তাকায়।
“লোভী লোকদের অপমান করাই মানায়।”
শিমুল চেঁচিয়ে বলে,
“আপনি লোভী।”
শওকত হাওলাদার শাসিয়ে বলে,
“শিমুল কি বলো মাথা ঠিক আছে?মিজান এটার যোগ্য তার মেয়েকে তোমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে।বলো দেয়নি?”
“না দেয়নি।বরং আমি নিজেই পুষ্পকে চাই।আর আমি চাই বলেই পুষ্পকে বিয়ে করবো।খুব শীঘ্রই।”
শওকত হাওলাদার মুচকি হাসে।শিমুলের সাথে পুষ্পর বিয়ে?তিনি তো মিজানের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।আর এটাও ভালো করে জানেন মিজান যেভাবেই হোক এক সাপ্তাহর মাঝে পুষ্পর বিয়ে দেবে।শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সেটা কখনো সম্ভব না।”
“সম্ভব না হলে কিভাবে সম্ভব করতে হয় জানা আছে।”
শওকত হাওলাদার বললো,
“আচ্ছা।দেখা যাক।”
শিমুল রাগে খালি চেয়ারে লাথি দিয় চেয়ার উল্টো হয়ে ছিটকে পড়ে।তারপর আবার হনহন করে বেরিয়ে যায়।শিমুল সেদিন রাতেই তিয়াসকে সাথে নিয়ে ইউসুফ আব্দুল্লাহ সাহেবের বাড়িতে যায়।এতো রাতে শিমুলকে দেখে তিনি অবাক হলেও তা মুখে প্রকাশ করেনা।হাসিমুখে বলে,
“কি ব্যাপার শিমুল?”
তার আব্বার উদ্যেশ্য তার অজানা নয়।উনার সাথে চলতে চলতে গুটির নড়চড় বুঝে ফেলেছেন।এমপির সাথে সম্পর্ক করে যে নিজের ক্ষমতা বাড়াতে চাইছেন এটা স্পষ্ট।শিমুল আলতো করে হাসে।চেহারার টেনশন লুকিয়ে বলে,
“আংকেল,একটা রিকোয়েস্ট ছিলো।”
শিমুলের কাছে ভাগনী বিয়ে দিবেন বলে ঠিক করেছেন আর এর আগে শিমুলের কি রিকোয়েস্ট থাকতে পারে তিনি বুঝতে পারেন না।
“বলো।”
শিমুল বললো,
“আসলে আংকেল আমার একটা মেয়ের সাথে রিলেশন আছে।আপনি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াতে আব্বা রাজি হয়ে গেছে।আমার মতামতের কোনো প্রয়োজন মনে করেনি।আসলে আপনার সাথে সম্পর্ক থাকলে উনার ক্ষমতা বাড়বে এই আশা করছেন।”
ইউসুফ সাহেব শিমুলের দিকে তাকিয়ে থাকে।শওকত সাহেবকে তিনি এমনভাবে আশা করেননি।ক্ষমতার লোভ সবারই থাকে তাই বলে ছেলের ইচ্ছা,পছন্দকে গুরুত্ব না দিয়ে ক্ষমতার লোভে বিয়ে ঠিক করে দিবেন?ভাগ্যিস শিমুল বলেছে তা না হলে আজকাল কার ছেলেমেয়ের ইচ্ছার বিরোদ্ধে বিয়ে দিলে পরবর্তীতে সেটা বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতে দেরী হয় না।ইউসুফ সাহেব শিক্ষিত মানুষ শিমুলকে পছন্দ হয়েছে বিধাই বিয়ের আলাপ করেছিলো এখন যেহেতু শিমুল নিজেই বলছে তার পছন্দের মানুষ আছে তাহলে প্রশ্নই উঠে না বিয়ের কথা এগুনোর।উনি মুচকি হেসে বললো,
“তুমি কি এইজন্য’ই এসেছো শিমুল।”
শিমুল উনার মুচকি হাসি দেখে বিব্রত হয়।কিন্তু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
“আজকালকার জেনারেশনে ছেলেমেয়ের ইচ্ছার প্রাধান্য দেয়া জরুরী।তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।”
শিমুল উনার দিকে কৃতজ্ঞতার চোখে তাকায়।তারপর বলে,
“আংকেল আরেকটা কথা।”
“বলো।”
“আপনি একটু কষ্ট করে আব্বাকে ফোন দিয়ে এটা বলবেন যে,
আপনার মতো লোভী মানুষ আমি আগে কখনো দেখিনি।যেই আশায় বিয়ে দিতে চাইছিলেন তা পুরন হবে না।আর আপনার মতো ছোটলোলের সাথে সম্পর্ক করতে পারবো না।ছেলের ইচ্ছার প্রাধান্য দিন।”
শিমুলের কথা শুনে ইউসুফ সাহেব হাসে।
” এভাবে বললে তোমার বাবা কষ্ট পাবে না?”
“পাওয়া দরকার।উনি মানুষকে দাম দিতে যানে না।”
শিমুল রাত দুইটার দিকে বাড়িতে যায়।সবাই ঘুমিয়ে গেছে।শিমুলের বুকটা চিনচিন করে ব্যাথা করে।বারবার পুষ্পর কান্নারত গলায় তাকে ডাকগুলো,হাহাকারগুলো মনে পড়ছে।তার জন্য কতো কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা?শিমুল বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে।খুব অশান্তি লাগছে,অজানা জ্বলনে সারা শরীর জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে।শিমুলের মনে হলো পুষ্পর কাছে গেলে শান্তি লাগতো কিন্তু আজকে এতো কিছুর পর আর যাওয়ার সাহস হয় না।যদি আবার মা*রে।
শিমুল চলে যাবার পরে মিজান শেখ চেয়ারম্যানের বলা সবগুলো কথা রোকসানা আর মুন্নীর কাছে বলে।বলতে বলতে এক পর্যায়ে কেঁদে দেয়।
“এই জন্য মেয়ে জন্ম দিয়েছিলাম?বাবা হয়ে এতো নোংরা কথা শুনার ছিলো আমার?”
পুষ্প সব শুনে।কিন্তু নির্বিকার হয়ে শুয়ে থাকে।ইতোমধ্যেই সারা শরীর ফুলে উঠেছে।রাতে মুন্নী আসে পুষ্পর সাথে ঘুমাতে।পুষ্প চুপচাপ শুয়ে থাকে তার ঘুম আসেনা,শরীরের ব্যাথা মনের ব্যাথা সব মিলিয়ে নিঝুম রাতের নিস্তব্ধতায় হু হু করে কেঁদে দেয়।প্রেমে এতো যন্ত্রনা কেন?আর এতো যন্ত্রনা হওয়ার থাকলে বিধাতা প্রেম কেন সৃষ্টি করেছেন?কিছুক্ষণ পরেই পুষ্পর গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে।মুন্নীর গাঢ় নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে বুঝতে পারে তার বোন ঘুমিয়ে গেছে।এতো মাইরের পরেও পুষ্প উঠে বসে,খুবই আস্তে-ধীরে বিছানা থেকে নামে,মুন্নীর বালিশের কাছে থেকে মোবাইলটা তুলে নেয়।রাতে আপাকে একবার লক খুলতে দেখেছিলো।পুষ্প চেষ্টা করে দেখে খুলেছে।তারপর তার আপার দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে শরীর নাড়িয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়।তার মনে হচ্ছে শিমুলের সাথে কথা না বললে সে মরে যাবে।প্রেমের একি নেশা!এতো মা*র খাওয়ার পরেও ছাড়ে না,যেন আরো চেপে ধরে নিউরনে নিউরনে ছড়িয়ে দেয় যন্ত্রনাদায়ক বিষ।পুষ্প শিমুলের নাম্বার টাইপ করে ডায়াল করে।শিমুল তখন পুষ্পর ছবিগুলো দেখছিলো।এতো রাতে অচেনা নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকে রিসিভ করে।
গম্ভীর গলায় বলে,
“হ্যালো।”
শিমুলের গলার স্বর শুনে পুষ্প ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়।শিমুল কান্নার শব্দ শুনেই বুঝতে পারে এটা তার প্রানপাখিটা।
“জান,”
বাথরুমে আস্তে কথা বললেও বেশি শব্দ হয় তাই পুষ্প ফিসফিস করে বললো,
“আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাওনা।আমি আর এখানে থাকবো না।”
পুষ্পর কান্না শুনে শিমুলের শরীরটা কেঁপে উঠে।গভীর চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি।গলাটা জড়িয়ে আসে,
“তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে পুষ্প?”
পুষ্প শিমুলের কথা শুনে বলে,
“খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি তোমার কাছে যাবো আমার এখানে শান্তি লাগেনা।”
শিমুল বললো,
“নিয়ে আসবো আমার কাছে।আর একটু জান।”
তারপর থেমে বললো,
“এটা কার মোবাইল?”
“আপুর।”
“আবার যদি দেখে তাহলে তো মা*রবে।যাও মোবাইল রেখে দাও।”
পুষ্প অভিমান করে বললো,
“দেখুক দেখে মে*রে ফেলুক তাতে তোমার কি?তুমি তো আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাবে না।”
শিমুল পুষ্পর অভিমান বুঝতে পারে।তারও মনে হচ্ছে এভাবে কিছুই হবে না।দুই পরিবারের মানুষই ক্ষেপা যেকোনো সময় যেকোনো দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।দুজন দুজনকে হারালে সারাজীবন কেঁদেও লাভ হবেনা।জোড়ে শ্বাস ফেলে বললো,
“পালিয়ে যাই চলো।আসতে পারবা?”
পুষ্প থেমে যায়।পালিয়ে যাবে?সবাইকে ছেড়ে?শিমুলের কাছে?যদি পালিয়ে গেলে শিমুলকে আপন করে সারাজীবনের জন্য পাওয়া যায় তাহলে পালিয়েই যাবে।
“পারবো।”
শিমুল বললো,
“কালকে রাতে আমি আসবো।তুমি শুধু বের হয়ে আসার ব্যাবস্থা করবা।”
“আচ্ছা।”
“ভালোবাসি আমার ফুলটাকে।”
পুষ্প বলে,
“আমিও”
পুষ্প ফোন রেখে রুমে আসে।আগের জায়গায় মোবাইল রেখে চুপচাপ শুয়ে পড়ে।মুন্নী চোখ খুলে তাকায়।মোবাইল নেয়ার সময়ই মুন্নী টের পেয়েছে তার কিছু বলতে ইচ্ছে করেনি।এতো মার খাওয়ার পরেও কথা বলতে মোবাইল চুরি করে নিচ্ছে।মুন্নীর ইচ্ছা করেনা আর কথা বাড়াতে।একটু কথাই তো বলেছে।থাক বলুক।আর তো বলতে পারবে না।পুষ্পর জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে এটা পুষ্প জানেই না।
আর মুন্নীও জানলো না পুষ্প আর শিমুল কি পরিকল্পনা করেছে।জানলে হয়তো মোবাইলে কথার সুযোগ দিতো না।কখনোই না।
সকালে এমপির ফোন পেয়ে শওকত হাওলাদারের মুখে হাসি ফুটে উঠে উনার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো।ভাবে হয়ত দাওয়াত দিবে।কিন্তু ফোন রিসিভ করে কিছুক্ষণ পরেই উনার মুখ পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।ফোন রেখে হুংকার দিয়ে ডাকে’
“শিমুল”
চলবে…