#শিমুল_ফুল
#১০
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
সেদিন রাতে পুষ্পর গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে।এটা কিসের জ্বর প্রেমের জ্বর নাকি?যদি তাই না হয় তাহলে যেদিন রাতে প্রেমের প্রস্তাব পেলো,শিমুলের উষ্ণ ছোঁয়া পেলো সেদিন রাতেই কেন এমন গা কাঁপানো জ্বর আসতে হবে?এতো পরিমানে জ্বর যে শোয়া থেকে উঠা মুশকিল।কলেজ যাওয়া বন্ধ।সেদিন রাতের দৃশ্য বারবার চোখে ভেসে উঠছে।প্রচন্ড জ্বরেও শিমুলের হাতের স্পর্শ,দুষ্টু দুষ্টু কথা মনে পড়ে পুষ্প লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে।পুষ্পর মনে হচ্ছে শিমুলকে একটু দেখতে পারলেই জ্বর সেরে যাবে।শিমুলের গায়ের মিষ্টি ঘ্রান পেলেই সব অসুখ পালাবে।আচ্ছা শিমুলের বুকে মাথা রাখলে কেমন লাগবে?কোকড়া চুলে হাত দিলে কি গা শিরশির করবে না?পুষ্প শিমুলকে ক্লিন সেভে কখনো দেখেনি সবসময় গালে খোচাখোচা দাড়ি থাকেই,হঠাৎ করেই শিমুলের গালের ছোট দাড়িতে হাত দিতে ইচ্ছে করছে।পুষ্প হাসে জ্বর হয়ে কি সব উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় আসছে।তবে দেখা করতে পারলে ভালো হতো,একটু মিষ্টি শাসন আদুরে বকা-টকা খাওয়া যেতো।কিন্তু কিভাবে দেখা হবে? পুষ্পর মা যে সারাক্ষণ কাছে থাকে।দুইদিন হয়ে গেছে পুষ্প কলেজে যাচ্ছে না।শিলা কয়েকবার এসে দেখে গেছে।কাজের চাপে শিমুল পুষ্পর সাথে দেখা করতে পারেনি।জ্বর হয়েছে শুনেই মনটা আনচান করে উঠেছে কিন্তু উপায় নেই হাতে প্রচুর কাজ,তার উপরেই তার আব্বা গুরুদায়িত্ব দিয়ে রেখেছে।
সন্ধ্যায় শিলা ফুচকা নিয়ে এলো।রোকসানাকে বললো,
“চাচী পুষ্পর জন্য ফুচকা এনেছি।জ্বর মুখে জ্বাল খেলে ভালো লাগবে।”
রোকসানা এতো কিছু মনে করলো না।দুই বান্ধুবি মিলে ফুসকা খাচ্ছে।শিলা ফিসফিস করে বললো,
“আপনার হিরো কিনে দিয়েছে।”
পুষ্প চমকে বললো,
“কি? ”
“হ্যাঁ।তোর সাথে কথা বলবে।এই জন্যই তো আমাকে এখানে পাঠালো।”
পুষ্প মনে মনে খুশী হলো।সেদিন শিমুলের দেওয়া মোবাইলটা আনা উচিত ছিলো,কথা তো বলতে পারতো।পুষ্প মুখে কিছু বললো না।
শিলা তার মোবাইলটা পুষ্পর হাতে দিয়ে বললো,
“ধর কথা বল আমি চাচীকে ফুসকা দিয়ে আসি।”
শিলা চলে গেলে পুষ্প শিমুলকে ফোন দেয়।সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হয়।ওপাশের মানুষটা যেন ফোনের অপেক্ষায়ই বসে ছিলো।
পুষ্প ঘন শ্বাস ফেলে চুপ করে থাকে।শিমুল মুচকি হাসে।একটু আহ্লাদ করে বললো,
“মহারানীর জ্বর হয়েছে?”
পুষ্প কান পেতে শিমুলের আহ্লাদী গলার কথা শুনে।কে বলবে এমন গম্ভীর রাগী ছেলে পুষ্পর সাথে এভাবে কথা বলে?এভাবে আশকারা দিয়ে মাথায় তুলতে চায়।পুষ্প ছোট করে বললো” হুম।”
শিমুল শব্দ করে হেসে বললো,
“তাহলে বুঝা যাচ্ছে শিমুল ফুলের প্রেমের উত্তাপ সহ্য হয়নি একেবারে জ্বর টর বাধিয়ে ফেলেছে।”
পুষ্প খেয়াল করে দেখে মোবাইলে কথা বললে লজ্জা কম লাগে,সামনাসামনি কথা বললেই বরং লজ্জা বেশী লাগে।সে ছোট করে জবাব দিলো,
“হুম”
“ফুসকা মজা ছিলো? ”
“হুম।”
“হুম ছাড়া কি আপনার ডিকশনারিতে আর কোন শব্দ নেই?”
“আছে। ”
“আর কি আছে শুনি।”
“অনেক কথা।”
শিমুল ক্লাবের বারান্দায় দাঁড়িয়ে পায়ের জুতো দিয়ে সিমেন্টের মেজ ঘষে বললো,
“আমি কি শুনতে পারি।”
“হুম।”
“আচ্ছা।তাহলে মহারানী বলুন ”
শিমুলের আশকারা পেয়ে পুষ্প আহ্লাদী গলায় ফিসফিস করে বললো”
“দেখবো।”
“কি দেখবি?”
“আপনাকে।”
“এখন? ”
“হ্যাঁ।”
“ক্লাবে আছি।নির্বাচন নিয়ে মিটিং হবে।”
“তো?”
“পরে দেখা করে নিবো।”
পুষ্প ত্যাড়া গলায় বললো,
“আমি এখনি দেখবো।”
শিমুল চুপ করে থাকে।তারপর বললো,
“এখন দেখা করা কোনভাবেই সম্ভব না।সবাই এসে গেছে।কিছুক্ষণের মাঝেই মিটিং শুরু হবে।”
পুষ্পর জ্বরটা আসলেই বেশি।সে শিমুলকে দেখতে চাইলো আর শিমুল আসবে না?প্রেম শুরু হবার পরে পুষ্প এই প্রথম কোন আবদার করেছে।শিমুল না করাতে অল্প বুঝদার পুষ্প রাগ করে।রাগ করা গলায় বললো,”আচ্ছা।”
শিমুল রাগের উত্তাপ টের পায়।বালিকা কে সাময়িক ঠান্ডা করতে বললো,
“আচ্ছা আমি হাতের কাজ শেষ করে আসবো।”
পুষ্প চুপ করে থাকে তখনি শিমুলের আব্বা শওকত শিকদার তাকে ডাকে।শিমুল আস্তে করে বলে,
“আমি আসবো।আমার ব্যাপারটা বুঝতে হবে,এই যে আব্বা ডাকছে।রাখি।”
পুষ্প ব্যস্ত মানুষটার ব্যস্ততা বুঝলো।মন খারাপ করলেও শিমুলের ভালো ভালো কথাগুলো মনে করে মনটা ভালো হয়ে যায়।তার কিছুক্ষণ পরে শিলাও চলে যায়।
মিজান শেখ হোটেল থেকে ফিরে এসে অসুস্থ মেয়েকে দেখতে আসে।রোকসানা হাতে করে খাবার নিয়ে আসে উদেশ্য মেয়েকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবে।মিজান শেখ এসে পুষ্পর বিছানায় বসে।বাবাকে দেখে পুষ্প উঠে বসে।তার জীবনের প্রথম পুরুষ তার বাবা।বাবাই তার সব আহ্লাদ পুরুন করে।গা কাঁপানো জ্বরে পুষ্প তার আব্বাকে কাছে পেয়ে হাসে।
মিজান শেখ পুষ্পর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আম্মাজান শরীর বেশি খারাপ লাগে?”
পুষ্প বাবার কোলে শুয়ে পড়ে।মুচকি হেসে বলে,
“না আব্বা।”
মিজান মেয়ের চুলে হাত দিয়ে বললো,
“কিছু খাবি আম্মা?”
“না।”
রোকসানা পাশ থেকে বলে,
“খাবিনা কেন?সারাদিন খায় নাই।তোমার মেয়েকে উঠাও।”
মিজান মেয়ের গালে হাত দিয়ে বললো,
“আম্মা জ্বর হলে খেয়ে দেয়ে শরীরে শক্তি রাখতে হয়,শরীর দুর্বল পেলে জ্বর আরো ঘাটি মেরে বসে।”
“আমার খেতে ইচ্ছা করেনা আব্বা।সব তিতা লাগে।”
মিজান শেখ বলেন,
“আল্লাহ আমার মেয়ের জ্বরটা আমাকে দিয়ে আমার আম্মাকে সুস্থ করে দাও।”
পুষ্প তার আব্বার দিকে তাকিয়ে থাকে।
“কি বলো আব্বা?”
“তোর তো ভাই নাই পুষ্প।অসুস্থ হয়ে থাকলে তো চলবেনা লেখাপড়া করে শিক্ষিত হয়ে ভালো চাকরি করতে হবে।বুড়ো বয়সে আমাদের দেখেশুনে রাখতে হবে না?মনে কর আমি মরে গেলাম তুই যদি কিছু না করিস তাহলে তোর আম্মাকে দেখবে কে?ওই বাড়ির আব্দুলের মায়ের মতো বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে খেতে হবে।”
পুষ্পর চোখে পানি টলটল করে।তার যে ভাই নাই এটা সে ভুলে গিয়েছিলো।আব্বা আম্মা তাকে অনেক পড়তে বলেছে।কতো ভালো ভালো বিয়ের সমন্ধ আসে।মিজান শেখ না করে দেয় উনার এক কথা মেয়ে পড়বে,যতোটুকু পড়তে চায় পড়বে।চোখের কোণ বেয়ে পানি পরে।
“আব্বা তুমি মরার কথা বলবেনা তো।আমি আছি না এতো চিন্তা কিসের?একদিন আমি বড় অফিসার হবো।দেখো।”
মিজান শেখ আর রোকসানা হাসে।প্রাণখোলা হাসি।পুষ্প সেদিকে তাকিয়ে থাকে।রোকসানা নিজ হাতে মেয়েকে খাইয়ে দেয়।দুজনে এটা সেটা বলে হাসে।পুষ্প দুজনের হাসি দেখে মন খারাপ হয় পুষ্প তাদের কতো বড় ঠকানো ঠকাচ্ছে।রাত বিরাতে শিমুলের সাথে দেখা করছে।বাবা মায়ের অজান্তেই মন দিয়ে বসে আছে।আচ্ছা এসব জানলে কি আব্বা আম্মা কষ্ট পাবে না?পুষ্প আর ভাবতে পারে না।চোখ ভরে পানি আসে।দুজনে চলে গেলে পুষ্প গভীর রাত পর্যন্ত ভাবে,ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে সে আর শিমুলের সাথে দেখা করবে না।শিমুলকে বলে দেবে পুষ্প আর প্রেম করতে চায় না।সে আব্বা আম্মার স্বপ্ন পুরূন করবে।
পাগলা প্রেমিক ঠিক এগারোটায় আসলো।পুষ্পর জ্বর।একটু চোখের দেখাও হচ্ছে না।সারাদিন কাজের ফাকে ফট করেই পুষ্পর হাসি হাসি মুখটা মনে পড়ে বুকটা বড্ড পুড়াচ্ছে।পুষ্পদের বাড়ির সামনে কয়েকটা চক্কর দিয়ে বুদ্ধি বের করলো কিভাবে পুষ্পকে বুঝানো যায় সে এসেছে।যদি পুষ্পর মা সাথে থাকে?কিন্তু আজকে দেখা করতেই হবে,যেকোনো মূল্যে।শিমুল হালকা করে পুষ্পর জানালায় টোকা দেয়।পুষ্প জেগে ছিলো,কিভাবে শিমুলকে বুঝাবে এটাই ভাবছিলো আর কাঁদছিলো।শিমুলকে ছেড়ে দিয়ে থাকতে পারবে তো?খুব কষ্ট হবে।
এই যে সম্পর্ক শেষ করে দিবে এটা ভেবেই বুকের বা পাশে চিনচিন করে ব্যাথা করছে।দম আটকে আসছে।জানালায় টোকা শুনে শান্ত মন মুহূর্তেই অশান্ত হয়ে যায়।দেখা করার জন্য ছটফট করে উঠে।সাড়া দেবেনা দেবেনা করেও উঠে বসে।শিমুলকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে।আর বাবা মাকে ঠকাতে ইচ্ছে করছে না।পুষ্প গা কাঁপানো জ্বর নিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দেয়।চুপচাপ জানালা খুলে দেয়।শিমুল হেসে কাছে আসে।জানালার গ্রীল ধরে নরম গলায় বললো,
“আমার ফুলটা কি একটু বাহিরে আসবে?”
পুষ্পর কান্না গলায় আটকে আসে।কোনরকম বললো,
“শিমুল ভাই।একটা কথা বলবো?”
“সব কাজ শেষ করে এসেছি হাতে অনেক সময়।বাহিরে আয়।”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“না ”
“না কেন?”
“আমি আর আপনার সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই না।”
পুষ্পর এমন কথা শুনে শিমুল স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।কি বলে এই মেয়ে?আর কাঁদছেই বা কেনো?শিমুল বললো,
“যা বলার সামনে এসে বল।”
পুষ্প মাথা নাড়ে।সে বাহিরে যাবে না।শিমুল এবার বললো,
“সারাদিন দাঁড়িয়ে ছিলাম।এখানে সেখানে ছোটাছুটি করেছি,এখন দাঁড়িয়ে থাকতে ভিষন কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ বাহিরে আয়।মাত্র দুই মিনিট।”
পুষ্প আর কিছু বলে না।শিমুলের কষ্ট হচ্ছে সে চুপচাপ বাহিরে আসে।জ্বরের তোড়ে মাথাটা ভনভন ঘুরছে।শিমুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে শিমুল এক কদম এগিয়ে কাছে দাঁড়ায়।ডান হাত দিয়ে কপালে হাত রেখে বলে,
“অনেক জ্বর তো ওষুধ খাস নি?”
“খেয়েছি।”
শিমুল আরেকটু কাছে আসতে চাইলে পুষ্প পিছিয়ে বললো,
“বলেছিনা সব শেষ।”
শিমুল ভাবলো দেখা করতে আসেনি বলে এসব বলছে তাই বললো,
“দেখা করতে দেরি করেছি বলে এসব বলছিস?”
“না।”
“তাহলে কি?”
“আপনি আর আমাকে কখনো ডাকবেন না।আজকে থেকে আর কখনো দেখা করবো না।”
শিমুলের বুকটা খামচে উঠে।সারাদিনের পেরেশানি আর এখন পুষ্পর এমন উল্টাপাল্টা কথা মোটেই ভালো লাগছে না।পুষ্পর শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কেন কারনটা বল।”
“পারবো না।বাড়ি যান।”
এটা বলে পুষ্প চলে যেতে নিলে শিমুল হাত ধরে কাছে টানে।
পুষ্পের চোখে তখন পানির জোয়ার।
শিমুল রাগী গলায় বললো,
“খেলনা পাইছিস?আমাকে বলে যেতে হবে কি কারনে ব্রেকাপ করবি।”
পুষ্প বললো তার আব্বা আম্মার কথা,তাদের ঠকানোর কথা।
শিমুল চুপ করে শুনে গেলো।পুষ্পর কথা শেষ হলে বললো,
“তুই পড়বি,চাকরি করবি,তোর আব্বা আম্মাকে দেখে রাখবি।তাতে আমার কোন সমস্যা নেই।আর এসবের জন্য আমাকে ভুলে যেতে হবে? ”
পুষ্প তো ভুলতে চায় না।জড়ানো গলায় বললো,
“আব্বা আম্মা শুনলে কষ্ট পাবে।”
শিমুল পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“আমি সবাইকে ম্যানেজ করে নিবো।তুই শুধু ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবি না।”
শিমুল অনেক বুঝায় কোনমতেই পুষ্পকে পিছু হটতে দিবে না।
নরম মনের পুষ্প যে শিমুলের পাগল।শিমুলের গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভয় করছে।”
শিমুল পুষ্পর গালে হাত রেখে বললো,
“ভয় কিসের?আমি আছিনা।সবাইকে রাজি করিয়ে বউ করে নিবো আমার ফুলকে।”
পুষ্প শান্ত হয়।শিমুল তাকে ছাড়ছেনা এটা খুবই স্পষ্ট।শিমুল পুষ্পর গালে কপালে হাত রেখে বললো,
“আর কাঁদেনা।এবার একটু হেসে দে।মন খারাপ করে রাখলে ভালো লাগেনা।”
পুষ্প হাসে।শিমুল কাছে টেনে বললো,
“এই বোকা মেয়েটাকে এতো ভালোবাসি।”
পুষ্প মাথা নাড়ে।শিমুল পুষ্পর চুল গুছিয়ে দিতে দিতে বললো,
“আর কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবিনা।”
“আচ্ছা।”
শিমুল বুকে হাত রেখে বললো,
“এখানে ব্যাথা করছিলো।তুই আমার শান্তির কারন পুষ্প,তোকে ছাড়া থাকা অসম্ভব।”
পুষ্প চোখ মেলে শিমুলের দিকে তাকিয়ে থাকে।শিমুল পুষ্পকে প্রশ্ন করে,
“আচ্ছা তুই আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবি? ”
পুষ্প উত্তরের দেয়ার বদলে শিমুলের টিশার্ট খামচে ধরে।শিমুল সুপ্ত উত্তর বুঝে নেয় মুচকি হেসে দু’হাত দিয়ে পুষ্পকে জড়িয়ে নেয়।মাথাটা নিচু করে পুষ্পর কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পরে ফিসফিস করে বললো,
“এই মেয়ে তোর জ্বর কমিয়ে দেই?”
পুষ্প বললো,
“কিভাবে?”
শিমুল পুষ্পর কপালে তার পুরু ঠোঁটে একটা চুমু খেলো।তারপর আবার ঠোঁট লাগিয়ে রেখে বললো, “এভাবে।”
পুষ্প চোখ বন্ধ করে পরশটা অনুভব করলো।খানিক লজ্জাও পেলো সরে যেতে চাইলে শিমুল বললো,
“পুষ্প আমরা দুজন দুজনকে বুঝবো।দুজনের সুবিধা অসুবিধা খেয়াল রাখবো।সমস্যা হলে আলোচনা করে সমাধান করে নিবো।তাই বলে ছেড়ে চলে যাওয়া কোন সমাধান না।তোকে খুব ভালোবাসি আর এটাও জানি তুইও আমাকে ভালোবাসিস।আর কখনো ছেড়ে যাওয়ার সিধান্ত নিবি না।মনে থাকবে?”
“থাকবে।”
দুজন দুজনে’র চোখের গভীরে তাকিয়ে হাসে।শিমুলের সুপ্ত কথা গিয়ে পুষ্পর অন্তরে কড়া নাড়ে।পুষ্প লাজুক হেসে শিমুলের হাতে চিমটি কাটে।
চলবে……
#শিমুল_ফুল
#১১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
সাফিনের বাবা নিজে ফোন করে পুষ্পকে উনার মেয়ে করতে চেয়েছে।মিজান শেখ আর রোকসানা খুব খুশী।পুষ্পকে ভালো পরিবারে বিয়ে দিতে পারলে তাদের দুশ্চিন্তা কিছুটা কমবে।এতোদিন অনেক বিয়ে এসেছে তাদের ইচ্ছা পুষ্পকে লেখাপড়া করাবে কিন্তু এখন সাফিনের পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসাতে মুন্নীর কাছে ফোন দিয়ে জেনেছে মুন্নী বলছে হ্যাঁ বলতে কারন ছেলে ভালো,অবস্থাসম্পন্ন,মুন্নীর কাছে থাকবে।তাই ভাবনার কোন দরকার নেই।মিজান শেখ রোকসানাকে বললেন,
“আমার মেয়ে পড়তে চায়।এখনি বিয়ে দেয়া ঠিক হবে?”
রোকসান বললেন,
“সবসময় ভালো প্রস্তাব আসে না।উনারা যেহেতু আসতে চাচ্ছে আসুক।”
মিজান শেখ বললেন,
“পুষ্পকে জিজ্ঞাস করে দেখো।”
রোকসানা বললো,
“তোমার মেয়েকে কি জিজ্ঞাসা করবো?ভালো ছেলে পেয়েছি বিয়ে দিবো।ব্যাস।”
রোকসানা এতো বেশী জোড় দিলেন কারন ইদানীং পুষ্পর পরিবর্তন উনার চোখে লাগছে।মুখে সবসময় মুচকি হাসির রেশ লেগে থাকে। সেজেগুজে কলেজে যায়।কিছুক্ষণ পরে পরে আয়নায় নিজের মুখ দেখে গুনগুন করে গান গায়।আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে পুষ্প বেশ চঞ্চল হয়ে গেছে।রোকসানাও এই বয়স পার করে এসেছে,পুষ্পর হাবভাব দেখে তিনি সন্দেহ করছেন পুষ্প প্রেমে পড়েছে বা করছে।কিন্তু হাতেনাতে ধরার আগে তিনি চুপ আছেন।সুতরাং ভালো বিয়ে যেহেতু এসেছে কোন দূর্ঘটনা ঘটানোর আগেই বিয়ে দিয়ে ফেলতে চান।
পুষ্প রাতে পড়তে বসেছে তখনি রোকসানা বিয়ের কথা উঠায়,
“পুষ্প সাফিনকে তোর কেমন লাগে?”
কোন ছেলেকে ভালো লাগে কিনা এটা তার মা জিজ্ঞেস করছে।এই কথার অর্থ কি সেটা পুষ্পকে বুঝিয়ে বলতে হয় না।মায়ের দিকে তাকালে তার মা বলে,
“সাফিনের পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।”
পুষ্প গরম তেলে পানি পড়লে যেমন তেতে উঠে তেমন করেই বললো,
“আম্মা আমি এখন বিয়ে করবোনা।”
রোকসানা শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
“কেন?”
পুষ্প এই প্রশ্নের মুখে এসে থমথম খেয়ে যায়।কোনমতে বললো,
“আমি পড়ালেখা করতে চাই।”
রোকসানা জোড় দিয়ে বললেন,
“সাফিনের পুরো পরিবার শিক্ষিত তারা নিশ্চয়ই তাদের ছেলের বউকে অশিক্ষিত করে রাখবে না?উনারা বলেছে যতোটুকু ইচ্ছা পড়বি সমস্যা নেই।”
শিমুলকে হারানোর ভ,য়ে পুষ্পর বুক খামচে উঠে।মূহুর্তেই চোখের পাতা ভর্তি হয়ে পানি আসে।চোখ মুছে নাক টেনে তার মাকে বলে,
“আম্মা আমি এখনি বিয়ে করতে চাই না।”
পুষ্পর চোখের পানি দেখে রোকসানা ভাবুক চোখে তাকিয়ে থাকে,এটা কিসের কান্না উনি যা ভাবছেন তাই না তো?উনি সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করেন,
“বিয়ে না করার কারণ শুধু লেখাপড়াই নাকি আরো অন্যকোনো কারন আছে?”
পুষ্প সর্তক চোখে মায়ের দিকে তাকায় তারপর ঠোঁট উলটে কেঁদে বলে,
“আমি তোমাকে আর আব্বাকে ছেড়ে যেতে চাই না।আম্মা দয়া করে এখন ওই বিয়ে টিয়ে বন্ধ করো।”
সাফিনকে রোকসানার খুব বেশিই পছন্দ।তাই তিনি জোড় দিয়ে বললেন,
“সাফিনকেই বিয়ে করতে হবে।এমন ছেলে হাতে গুনেও পাওয়া যাবে না।”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“না।”
রোকসানা বললেন,
“তোর কিসে ভালো কিসে মন্দ সেটা আমরাই ভালো বুঝি।তাই যা বলবো তাই হবে।”
পুষ্প কিছু বলার আগে রোকসানা বলেন,
“মা বাবার কথার বাইরে গিয়ে বেয়াদবের পরিচয় দিতে হবে না।”
পুষ্প বলে,
“কিন্তু আম্মা…”
পুষ্পের কথা শেষ হবার আগেই রোকসানা বলেন,
“কালকে সন্ধ্যায় সাফিনের আব্বা আম্মা দেখতে আসবে।উনারা হজ্বে যাবে তাই একটু তাড়াতাড়িই সব করতে চান।কালকে কলেজ যাওয়ার দরকার নেই।”
এটা বলে তিনি চলে যান।পুষ্পর নরম মন ভয়ে চিৎকার করে উঠে।গলা দিয়ে শব্দ করে কান্না আসতে চায়,হাত দিয়ে মুখে চেপে শক্ত হয়ে বসে থাকে।শিমুলকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে কিভাবে?পুষ্প বাচবে না,একদম মরে যাবে।ওই রাগী শিমুলকেই তার চাই।শিমুলকে ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব।চুপ করে বসে থাকে।বাবা মা যখন ভাত খেতে ডাকে তখন পুষ্প একফাকে তার আম্মার মোবাইল নিয়ে শিমুলের নাম্বারে ফোন দেয়।শিমুল কেটে দিয়ে কল ব্যাক করে।খুব ব্যস্ত গলায় বলে,
“হ্যালো পুষ্প ”
শিমুলের গম্ভীর গলায় পুষ্প নামটা শুনে তার চোখে পানি চলে আসে।কান্না চেপে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো,
“শিমুল ভাই আপনি কি খুব ব্যস্ত?”
নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচদিন বাকি।চারদিকে সর্তক নজর রাখতে হচ্ছে।শিমুলের শ্বাস ফেলার জো নেই।কাজের চাপে মায়াবতীর সাথেও দেখার সুরত মিলছে না।শিমুলের ছোট্ট মায়াবতীটাও খুব বুঝদার সুবিধা অসুবিধা খেয়াল করছে।কলেজে যাওয়ার সময় শিমুল ক্লাবের সামনে দাঁড়ায় পুষ্প যাওয়ার পথে একনজর তাকিয়ে চোখে চোখে ভাব আদান প্রদান করে মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে নেয়।সময়ের সল্পতায় কারনে দেখা করা সম্ভব হচ্ছে না।হঠাৎ করেই প্রিয় ফুলের গলায় কান্নাভেজা স্বর শুনে বুকের কোথাও চাপা ব্যাথা অনুভব হয়,গভীর চোখের তারায় খেলে যায় একরাশ দুশ্চিন্তা।চুপচাপ অথচ গাঢ় নিঃশ্বাস শুনে শিমুলের হাতের কাজ থেমে যায় ব্যস্ত পায়ে সবার থেকে দূরে গিয়ে বলে,
“কি হয়েছে পুষ্প?”
পুষ্প কথা বলতে পারেনা।এই ছেলের গলার স্বর শুনলেই কেমন পাগল পাগল অনুভূতি হয়।একে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে কিভাবে করবে সে?শিমুল ভাবে হয়তো দেখা করতে পারছেনা বলে কান্না করছে।মুচকি হেসে নরম গলায় বললো,
“দেখা করতে পারছিনা বলে কাঁদতেছিস?আচ্ছা আর মাত্র পাঁচ দিন তারপরে সারাটাক্ষন আমার ফুলের।ঠিক আছে?”
পুষ্প ফুপিয়ে উঠে শিমুল এতো সুন্দর করে কেন কথা বলে?কান্নার শব্দ যেন না হয় তাই মুখে হাত চেপে ধরে।কান্নার চাপা শব্দ শুনে শিমুলের হাসি হাসি চোখ মুখ নিমিষেই শক্ত হয়ে যায়।গলার স্বর হয় রুক্ষ।
“কি হয়েছে?”
“শিমুল ভাই..”
“কি হয়েছে?”
“আজকে কি দেখা করা যাবে?”
শিমুল চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।তারও তো ইচ্ছা করে দেখা করতে কিন্তু কাজ যে।সময় মিলাতে পারে না।বর্তমানে নির্বাচন আশেপাশে রাস্তাঘাটে মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরাঘুরি করে এই মুহূর্তে দেখা করাও রিস্ক।পুষ্পকে বুঝানোর জন্য বললো,
“কয়েক দিন পরে দেখা করি?হাতে প্রচুর কাজ প্লিজ।”
পুষ্পর এমন ধরনের উত্তর মোটেই পছন্দ হয় না।সাফিন তাকে পছন্দ করেছে তার কথা মতোই উনার বাবা মা আসবে,আর খুব জলদি বিয়েও হয়ে যেতে পারে।এদিকে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর শিমুল কিনা কাজ নিয়েই পড়ে আছে?মোবাইলে বেশীক্ষন কথাও বলা যাবে না যেকোনো সময় তার আম্মা চলে আসতে পারে।পুষ্পর রাগ হয়।কান্নাভেজা গলার রাগের হলকা ছুটিয়ে বললো,
“আমাকে আরেকজন নিয়ে যাচ্ছে,আর আপনি কাজ কাজ করে মরে যাচ্ছেন।যান কাজই করেন।”
আরেকজন নিয়ে যাচ্ছে!শিমুলের ধারালো মস্তিষ্কে টুক করে গিয়ে ছরার মতো বিধে।নিয়ে যাচ্ছে মানে?কার এতো সা,হস?একদম মে রে পু তে দিবে না?মূহুর্তেই শিমুলের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।
“কে নিয়ে যাবে?”
রোকসানা আবার গলা ছেড়ে ডাকে।
পুষ্প তাড়াতাড়ি করে বললো,
“আম্মা ডাকছে,দেখা করেন প্লিজ।”
শিমুল চোখ বন্ধ করে বললো,
“একটা বাজে আসবো।বেরোতে পারবি?”
পুষ্প জলদি বললো,
“পারবো।রাখি”
এটা বলে নাম্বার ডিলিট করে ভাত খেতে যায়।শিমুল আসবে শিমুল আসলে সব সমস্যা সমাধান হবে।
সাড়ে বারোটার দিকে শিমুল ফ্রী হয়।এতোক্ষণ কাজ করেছে ঠিক কিন্তু পুষ্পর বলা কথাটা মাথায় ঘুরেছে।অন্য কেউ নিয়ে যাবে মানে কি?শিমুল যে বছরের পর বছর অপেক্ষা করে গেলো অন্য কারো নিয়ে যাওয়ার জন্য।শিমুল ভেবেছে নির্বাচন শেষ হলেই তার আব্বার কাছে পুষ্পর কথা বলবে।যাওয়ার রাস্তায় মিন্টু মিয়ার সাথে দেখা।মিন্টু মিয়া তার দাদার ডান হাত।গ্রামের আনাচে কানাচের সব খবর তার দাদার কানে দেয়।শিমুলকে বাড়ির উল্টা পথে দেখে মিন্টু সন্দেহের চোখে তাকায়।
“শিমুল ভাইজান এই দিকে কই যাও?”
মিন্টুকে দেখে শিমুল সতর্ক হয়ে যায়।আঙুল দিয়ে সিগারেটে টোকা দিয়ে পোড়া অংশ ফেলে বলে,
“তিয়াশের কাছে যাই।একটু জরুরি দরকার।”
মিন্টু আর কিছু বলেনা।সে তার মতো চলে যায় কিন্তু কপালের ভাজ মিলায় না ভাবে দাদার কাছে খবরটা বলা উচিৎ কিনা!
শিমুল হিজল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে লম্বা শ্বাস নেয়।একটা বাজতে আরো মিনিট পাঁচেক বাকি।শিমুল আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসে,যেদিন পুষ্পর সাথে তার দেখা হয় সেদিনই আকাশে উজ্জল চাঁদ থাকে।আজকেও ঠিক তেমনি চারদিকে আলোয় জ্বলমল করছে।তখনি আরেকটা চাঁদ ঝলমল করে গুটিগুটি পায়ে আসে।শিমুল উঠে দাঁড়ায়।কিছু বলার জন্য মুখ খুলার আগেই পুষ্প দু’হাত দিয়ে আঁকড়ে শিমুলের প্রসস্ত বুকে মিশে যায়।শিমুল অবাক হয়ে দেখে এতো লজ্জাবতী’র আজকে কি হলো যে স’ইচ্ছায় বাঘের ডেরায় ঢুকে গেলো।সে বুঝতে পারে পুষ্প তাকে আরো শক্ত করে ধরেছে যেন বুকে একদম মিশে যাবে।ক্ষনে ক্ষনে শরীর কেঁপে উঠছে।কাঁদছে?শিমুলও আলতো করে তার তুলোর মতো নরম ফুলটাকে জড়িয়ে বলে,
“কি হলো আমার ফুলের?”
পুষ্প কিছু বলেনা।শিমুলই আবার বলে,
“না বললে বুঝবো কি করে?”
পুষ্প মাথা তুলে তাকায়।শিমুল তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।শিমুলের এমন পাগলকরা হাসি দেখে পুষ্প ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে বললো,
“আপনি কি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন?”
শিমুল পুষ্পর ভেজা চোখ মুছে বললো,
“ছেড়ে থাকবো কেন?তুমি কই যাবে?”
শিমুলের মুখে এই প্রথম তুমি শব্দটা শুনা হলো।আর তুমি করে বলাটা শুনতে পুষ্পর খুব ভালো লাগলো।শিমুলের চোখে চোখ স্থির রেখে বললো,
“বিয়ে হয়ে যাবে।”
শিমুল পুষ্পর পিঠে হাত রেখে মাথা ঝুকিয়ে বললো,
“তা তো হবেই।বিয়ে না করলে বেশী বেশী আদর করবো কিভাবে?”
“মজা করছি না।সবকিছুতে মজা করবেন না।”
শিমুল পুষ্পর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আচ্ছা বলো,শুনি।”
“কিছুদিন আগে আপুদের সাথে সাফিন ভাইয়া এসেছিলো,আপনি তো জানেনি।উনি আমাকে পছন্দ করেছে।আগামীকাল আমাদের বাড়িতে উনার বাবা মা আসবে।উনারা নাকি হজ্বে যাবে তাই তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজটা সম্পন্ন করে ফেলবে।”
পুষ্পর বলা প্রতিটা কথা শুনে শিমুলের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়।তুমি থেকে আবার তুই তে চলে যায়।
“তো করে ফেল বিয়ে।”
শিমুলের এমন কথা শুনে পুষ্পর ভয় হয়।তাহলে কি অন্যসব বাজে ছেলেদের কাতারেই শিমুল?এই প্রেম প্রেম খেলা তাহলে কি অভিনয়?চেয়ারম্যানের ছেলে পুষ্পকে ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দেবে?পুষ্প শিমুলের হাতের বাধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে চায়।ছাড়ার বদলে হাতের বাধন আরো শক্ত হয়।শিমুল বললো,
“কি হলো?এভাবেই তো ভালো।”
পুষ্প মুখ অন্ধকার করে বললো,
“না ছাড়লে বিয়ে করবো কিভাবে?ছাড়েন।”
শিমুল ছাড়ে।কয়েকদিন পরে নির্বাচন।এই অবস্থায় বাড়িতে বিয়ের কথা বলা ঠিক হবেনা।সবকিছুর একটা আলাদা সময় আছে।কিন্তু এই সময় খুজতে গিয়ে যদি তার ফুল হারিয়ে যায়?তার গলার স্বর গম্ভীর করে বলে,
“আমি কি তোর আব্বার সাথে কথা বলবো?”
পুষ্প আৎকে উঠে বললো,
“না না।”
“কেন?”
“আব্বা শুনলে কষ্ট পাবে।”
“তাহলে কি করার আমাকে ভুলে বিয়ে করে নে।”
শিমুলের এমন নির্লিপ্ত গলার কথা শুনে পুষ্প কেঁদে দেয়।
“মরে যাবো।”
শিমুল চোখ পাকিয়ে পুষ্পর দিকে তাকায়।পুষ্প ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
“আপনাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।”
“কেন পারবিনা?আমি যেমন ভালোবেসে আদর করবো ওই ছেলেও করবে তফাৎ কি?”
পুষ্প শিমুলের হাতে ধরে বললো,
“ওই ছেলে তো শিমুল হবেনা।”
শিমুল পুষ্পর গালে হাত দিয়ে বললো,
“তাতে কি?”
“আমার শিমুলকেই লাগবে।”
“আমিতো খুব খারাপ।তোর আব্বা রাজি হবেনা।”
“এই খারাপ ছেলেটাকেই আমার চাই,যেকোনো ভাবে।”
পুষ্পর বাচ্চা বাচ্চা উত্তরে শিমুল হাসে,
“আমার ফুলকে নিয়ে যাওয়া এতো সহজ?শিমুলের থেকে তারই ফুল কে ড়ে নিবে?অসম্ভব।”
“আব্বা,আম্মা,আপু সবাই রাজি।”
“তাতে কি আমার ফুল তো রাজি না।এটাই প্লাস পয়েন্ট।”
পুষ্প শিমুলের বুকের কাছের গেঞ্জি খামচে ধরে বললো,
“ভয় লাগছে।কালকে যদি বিয়ে টিয়ে করিয়ে দেয়?”
শিমুল পুষ্পর কোমড়ে হাত রেখে টেনে নিজের কাছে আনে।
“আমি আছি তো।আপনাকে এতো টেনসন করতে হবে না।”
“কিন্তু..”
পুষ্পর কথা থামিয়ে বললো,
“কোন কিন্তু টিন্তু নেই।আমি সামলে নিবো।ভরসা নেই?”
শিমুলের উপর পুষ্পর শতোভাগ আস্তা আছে।মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
“এখন একটু হাসো।”
পুষ্প হাসে তারপর মুখে বললো,
“তাহলে এখন যাই? ”
শিমুল গভীর চোখে পুষ্পকে দেখে।আস্তে আস্তে পুষ্পকে ঠেলে হিজল গাছের সাথে নিয়ে দাঁড় করায়।পুষ্প আবছা অন্ধকারে শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“যাই?”
শিমুল পুষ্পর হাতের আঙুলের ভাজে নিজের আঙুল নেড়েচেড়ে বললো,
“উহু।”
পুষ্প বললো,
“কি?”
“দেখে মন ভরেনি।আরেকটু প্লিজ।”
পুষ্প আধো-আলো আধো-অন্ধকারে শিমুলের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“একটা কথা বলি?”
শিমুল পুষ্প হাতের আঙুলে আলতো করে ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খায়।মুখে ছোট করে বলে,
“হুম।”
পুষ্প বললো,
“আপনার গালে একটু ছুঁয়ে দেই?”
পুষ্পর এমন আহ্লাদী আবদারে শিমুল মুচকি হাসে।
“আমি সবটাই তোমার।যা ইচ্ছা করতে পারো আমি মাইন্ড করবো না?”
শিমুলের দুষ্টু কথায় পুষ্প নিজেও হেসে দেয়।
“আপাতত গাল ছুঁতে দিলেই হবে।”.
শিমুল মাথাটা নিচু করে দেয়।পুষ্প তার কোমল হাত দিয়ে শিমুলের গালে হাত রাখে।কাঙ্খিত রমনীর ছোঁয়া পেয়ে শিমুলের ভেতরটায় আগুনের হলকা ছুটে যায়।শক্ত হয়ে বারকয়েক চোখের পলক ঝাপটায়।এতো বছরের অপেক্ষার ফল এতো মিষ্টি হবে জানা ছিলো না।পুষ্প খুব আদুরে ভাবে গালে তার নরম হাত ঘষে যাচ্ছে।শিমুল পুষ্পকে গাছের সাথে দাড় করিয়ে বললো,
“হয়েছে?”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“না।”
শিমুলের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে।চোখ ছোট করে তাকিয়ে বললো,
“আর না।আবার পরে।”
পুষ্প শিমুলের নিঃশ্বাসের গতিবিধ লক্ষ করে হাত নামিয়ে নেয়।মাথাটা নিচু করে বললো,
“এখন যাই?”
শিমুল কেমন শান্ত গলায় অশান্ত জোড় দিয়ে বললো,
“না।”
পুষ্প শিমুলের দিকে তাকালে শিমুল পুষ্পের খুব কাছে এগিয়ে আসে।পুষ্পকে পেছন থেকে জড়িয়ে নেয়।পুষ্পর পিঠ গিয়ে ঠেকে শিমুলের প্রসস্ত বুকে।পুষ্প গা কাঁপানো ঝিনঝিন আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলে।শিমুল পুষ্পকে হাত দিয়ে পেচিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।মাথা নিচু করে পুষ্পর ঘাড়ে ঠোঁটসহ নাক ঘষে দেয়।পুষ্প ছটফট করে ঘুঙ্গিয়ে উঠে।শিমুল টুপটাপ কয়েকটা চুমু খেয়ে ফেলে।পুষ্প শিমুলের দিকে তাকায় না চোখ বন্ধ করেই বললো,
“এতো ভালোবাসতে হবে কেন শিমুল ভাই?”
শিমুল ততক্ষণে পুষ্পকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়েছে।ফিসফিস করে বললো,
“জানিনা তো।”
পুষ্প চুপ করে থেকে বললো,
“এবার যাই?”
শিমুল চোখে চোখ রেখে বললো,
“পুষ্প তোকে আরেকটু ছুঁয়ে দেই?”
পুষ্প কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে।শিমুল ফিসফিস করে বললো,
“প্লিজ।”
শিমুল একটু এগিয়ে গেলে,পুষ্প বুঝতে পারে শিমুল কি করতে চাইছে।দুদিকে মাথা নেড়ে অস্পষ্ট স্বরে বললো,
“না।”
শিমুল ঘোর লাগানো গলায় বললো,
“কি না?”
পুষ্প দ্রুত গতিতে মাথা নাড়ে।ওই যে পাগলা প্রেমিক!তাকে কি না বলে আটকানো যায়?যায় না তো।পুষ্পও পারলো না।শিমুল বেশামাল শ্বাস প্রশ্বাস ফেলে পুষ্পর নরম ঠোঁটে নিজের ঠোঁট একবার ছুঁয়ে দেয়।তারপর আরেকবার ছুঁয়ে বললো,
“তোকে একটু বেশী করে ছুঁয়ে দিলাম।”
পুষ্প তখন চোখ বন্ধ করে শিমুলের গেঞ্জি আঁকড়ে ধরে রেখেছে,যেন ছেড়ে দিলেই অতল সাগরে ডুবে যাবে।
পুষ্প তার রুমে এসে চুপিচুপি দরজা বন্ধ করে।অন্ধকারে হাতরে যখন বিছানায় যাবে তার আগেই লাইট তার নিজস্ব আলোয় জ্বলে উঠে।পুষ্প দেখে রোকসানা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে।পুষ্প খেয়াল করে ভ য়ে তার গলা শুকিয়ে গেছে।অস্ফুটে স্বরে বললো,
“আম্মা…”
চলবে….