শালিক রনি

1
881
শিশুরা মাঝেমাঝে হুটহাট কারণে অকারণে কান্না করে কেন জানেন? কারণ ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে। পিতা ঘুম থেকে উঠে টয়লেট করে এসে শিশুর পাছায় একটা চিমটি দিয়ে শিশুর অন্তরের বিছানায় আবার লেপ্টা মেরে ঘুমিয়ে যায়। আর শিশু চিমটি খেয়ে ভ্যাএএএ করে কান্না করে দেয়৷ মা এসে যখন কোলে নিয়ে আহ্লাদ করে বলে, ‘আহারে আমার বাবুটার আবার খুদা লাগছে। আমার সোনা মানিক খাবে আবার। কাঁদে না সোনা। এখনই খাওয়াচ্ছি।’
শিশু তখন আরো জোরে কান্না শুরু করে দেয়। মা ভাবে আহ্লাদ করছে বলে কান্না করছে। কিন্তু মিস্টার অথবা মিস শিশু কান্না করে করে বলে, ‘আম্মায়ায়া আমি তো দ দ খাওয়ার জন্য কান্না করি নাই। আমার দুত্তু বাপ আমাকে পাছায় চিমটি দিছে। আমি ব্যথা পাইছি। ভ্যাএএএ। উ আ আ আ আ। ভ্যাএএএ ভ্যাএএএ।’ মা যখন মুখে ফিডার দেয়। শিশু তো খেতে চায় না। ওই বেচারার তো পেট ভরা। মা ভাবে বাচ্চা মনে হয় অনেক রাগী। সাথে সাথে ফিডার বানিয়ে দেয়নি বলে জিদে কান্না করছে। অথচ শিশু তো গলা ফাটাই চিৎকার করে বলছে, ‘আম্মায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া আমার খিদা লাগে নাই। আমার পেট ভরা। আমার পাছায় চুমু দি দাও৷ ব্যথা লাগে। ভ্যাএএএ ভ্যাএএএ উয়ায়ায়া উয়ায়ায়া ভ্যাএএএ।’
মায়ের মন অনেক নরম। বাচ্চার এমন কান্নায় মন গলে আরো পানি হয়ে যায়। ঠেসেঠুসে খাওয়ায় বাচ্চাকে। এরপর যা হবার তাই হয়। বমি করে পেটে যা ছিল তাও ফেলে দেয়। মা তো আরো গলে যায়। বমি পরিষ্কার করে বাচ্চাকে রেখে আবার চলে যায় ফিডার বানাতে। আর বাচ্চাকে বলে, ‘এই যে আসছি সোনা। আম্মু তাত্তারি তোমার জন্য ফিডার বানিয়ে আনছি।’ শিশু তখন কান্না থামিয়ে বলে, ‘কাম সারছে। আবার ফিডার। কান্না করে কি মসিবতে না পরলাম। আম্মুর আদরের ঠেলায় তো আমার লাইফ ফাতা ফাতা হয়ে গেলো। একদিকে দুত্তু বাপ চিমটি দেয়। অন্যদিকে মা এসে ফিডার ঠেসেঠেসে খাওয়ায়। আজ আমি কথা বলতে পারি না বলে আমারে নিয়া ওরা যা ইচ্ছা করতেছে। একদিন বড় হয়ে যখন কথা বলা শিখবো সবকিছুর শোধ নিবো। আও আও উউম উমম আও।’ কিন্তু বড় হতে হতে এসব কিছুই আর মনে থাকে না। বেচারা মিস্টার অথবা মিস শিশু। মায়ের আদরের নির্যাতনে অস্থির। ঐদিকে শিশুর পিতা তো শিশুর অন্তরে ঘুমিয়ে উথাল পাথাল হয়ে আছে। কুম্ভকর্ণ পিতা একটা। কোনো কামের না। খালি ঘুমায়। আর ঘুম থেকে উঠে টয়লেট সেরে এসে শিশুর পাছায় কয়েকটা চিমটি দিয়ে কান্না করিয়ে চুপচাপ আবার কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মাকে আবার ফিডার আনতে দেখে আবার কান্না শুরু হয়। মা ভাবে ইসস কত আহ্লাদী তার বাচ্চাটা। তাকে দেখেই আদর পাওয়ার জন্য কি কান্নাই না আবার শুরু করেছে। শিশু কান্না করতে করতে বলে, ‘আম্মা গো তুমি কেন আমার কথা বুঝো না। আমার খিদা নাই। আমি কান্দি আমার দুক্ষে। তুমি আমার দুক্ষ বুঝো না ক্যান। দুত্তু বাপরে মাইর দাও। আমারে যেন আর চিমটি না দেয়। ভ্যাএএএ ভ্যাএএএ উয়ায়া উয়া…।’ শিশু কান্না করা অবস্থায় মা মুখে ফিডার ঢুকিয়ে দেয়। আর কোনো কান্নার আওয়াজ আসে না। বমি করার পরে যে ওর পেট খালি হয়ে গেছে সেটাও বাচ্চাটা বুঝতে পারে না। কান্না থামিয়ে ফিডার খায় আর মাকে দেখে। মা কত স্নেহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। সে মনে মনে ভাবে, মা অনেক ভালো। ওকে এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করে না। ওর খুদা লাগলে ও নিজেও বুঝে না। মা সব বুঝে। ফিডার খেতে খেতেই বাচ্চাটা মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে।
হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে যদি আবার কেঁদে উঠে তাহলে বুঝবেন, হয় বাচ্চাটার খুদা লেগেছে। নাহয় শি করে দিয়েছে। আর নাহয় দুত্তু পিতা ঘুম থেকে উঠে শিশুর পাছায় চিমটি দিয়ে গেছে। যদি দেখেন ঘুমের মধ্যে বাচ্চা হাসছে তাহলে বুঝবেন, দুত্তু বাপ পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। ঘুমিয়ে আছে দুত্তু পিতা সব শিশুদের অন্তরে | ২৫১২১৯

1 মন্তব্য

  1. ফিডার খেতে খেতে বাচ্চাটা মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে। এই কথাটা মনে করিয়ে দেয় আমার ছোটবেলার কথা। ছোটবেলায় মা অন্যের বাড়িতে কাজ করত। কাজ থেকে ফিরে বাসার জন্য রান্না করত। আর আমাকে লাগত প্রচণ্ড ক্ষিধা। ক্ষুধার যন্ত্রণায় দরজার পাশে দীর্ঘক্ষণ ধরে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তাম। পরে মা এসে রান্না সেরে গভীর রাতে আমাকে খাওয়ার জন্য ডাকত। মা তুমি পরম মমতাময়ী। তোমার তুলনা তুমিই নিজে।

    যাইহোক, সর্বোপরি অনেক ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে