শার্লিনের কিচেন
সন্ধ্যে পেরিয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ।
জঙ্গলের ভেতরে যখন ঢুকেছি, তখনই বিকেল প্রায় শেষ হয়ে আসছিল।
এখন অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলেছি।
জমাট বাধা অন্ধকারে একটা জায়গায় একটু কম মনে হলো, বড় বড় গাছের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা।
এগিয়ে যেতে দেখলাম, একটা ওয়ার্কশপ মতো, এই জঙ্গলে কে কাজ করায়, তার মানে কি এখানে মাঝে মাঝেই গাড়ি ঢোকে?
আমি জিপটা থামিয়ে কয়েকবার হর্ণ বাজালাম, একটা কমবয়েসী ছেলে কাছে এলো, জিজ্ঞেস করলাম
শহরের পথটা কোন দিকে?
ছেলেটি উল্টো দিকের পথ দেখিয়ে বললো, এখান থেকে কিছুদূর গিয়ে শার্লিনের কেবিন পেয়ে যাবেন।
রাতটা ওখানে কাটিয়ে সকালে শহরে ফেরাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
এই রাতে আমি পথ দেখালাম, আর আপনি আবার হারিয়ে যেতে পারেন।
ছেলেটির কথা যুক্তিসংগত মনে হলো।
ওকে ধন্যবাদ দিয়ে আমি ওর দেখানো পথে এগুতেই একটা ছোট্ট টাউন পেয়ে গেলাম।
বেশ কিছু ঘর, ছোট ছোট দোকানে নানা ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে, একটা প্রাণচাঞ্চল্যতা চারপাশে।
আমাদের দেশে এটা সাধারণত খুব সকালে কাঁচাবাজারে দেখা যায়।
একটা মিষ্টির দোকানে দাঁড়ালাম, এতো লোভনীয় লাগছিলো মিষ্টি গুলো।
আমি দেখিয়ে দিতেই আমাকে কাগজের ঠোঙায় করে চারটে মিষ্টি দিল, বাহ কি দারূণ স্বাদ।
পাউন্ডে দাম মেটাতে গিয়ে দেখি, তেমন দামীও নয়।
লোকটি আন্তরিক ভাবে বললো, এখানে সব কিছু সস্তা, শহরের তুলনায়।
খুব ভালো লাগছিলো বাজারের মতো জায়গাটায় ঘুরতে।
একটা জায়গায় এসে দেখলাম অল্প আলোছায়ায় লেখা “শার্লিনের কেবিন, এখানে আপনি নিমন্ত্রিত ”
তারপর দরজায় উকি দিয়ে দেখলাম, ভেতরটা সুন্দর সাজানো।
আমাকে একজন বয়স্ক মহিলা এসে ভেতরে নিয়ে গেলেন।
সেখানে শার্লিন তার অফিসরুমে অপেক্ষা করছিল।
আমাকে দেখে অভ্যর্থনা জানালো।
আমাকে বললো, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এশীয়, তাই তো!
আমি হাসলাম, বললাম, আমি দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ থেকে এসেছি, তোমার দেশে ঘুরতে।
শার্লিন বললো, এ কেবিন পরিচালনা করতে গিয়ে আমি এখন লোক দেখেই বুঝতে পারি কে কোন এলাকার।
পুরো শহরটা হলুদ আলো জ্বলছে।
কোথাও আলো পর্যাপ্ত নয় কিন্তু দারুণ মায়াবী।
শার্লিনের এই ঘরটাও চারকোণায় কমলা হলুদ আলো দিয়ে সাজানো।
আমাকে একটা রুম দেখানো হলো, মনে হলো কোন অচেনা রাজ্যে এসে পরেছি।
ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড়ুতেই রাতের খাবারের ডাক পেলাম।
এতক্ষণ ভেবেছিলাম আমি একা, কিন্তু হল রুমে এসে দেখি হলরুম বোঝাই মানুষ, নানা রকম সুস্বাদু খাবার তাদের সামনে।
আমাকে শার্লিন ওয়েলকাম বলে, একটা টেবিলে নিয়ে গেল, সেখানে মাংসের তৈরি বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার দেখতে পেলাম।
আমার একটা সমস্যা আছে, আমি দেশের বাইরে মিট আইটেম খাইনা। কারণটা একান্ত ব্যক্তিগত!
আমি যখন জানালাম, যে আমি মিট খাবো না, তখন শার্লিন ভারী অবাক হয়ে গেল। একটু জোরাজুরিও করলো, বললো, শার্লিনের কিচেনের মিট আইটেম স্পেশাল, দূর দূর থেকে মানুষ এখানে স্পেশাল রেসিপি টেস্ট করতে আসে।
চারপাশের মানুষের খাওয়া দেখে আমারও তেমন মনে হলো।
তবুও আমি শুধু একটা জুস, ফ্রুট সালাদ আর সুফলে নিলাম।
কিছুক্ষণ পরে দেখলাম, ওদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য।
সবাই তখন মদ্যপানে ব্যস্ত।
আমি বের হয়ে এলাম হল ঘর থেকে। শার্লিনের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে পরলাম ফিসফিস কথা শুনে।
শুনলাম, কেউ বলছে, লোকটি মাংস খায়নি, মানে ঘুম ভালো হবে না।
তাহলে কিভাবে কি করা হবে?
কেউ একজন বলছে, যেভাবেই হোক, ব্যবস্থা করতে হবে, কালকের জন্য মাংস প্রয়োজন, শার্লিনের ফ্রিজার ফাঁকা হয়ে আসছে।
চলো ম্যাডামের সাথে কথা বলি।
একটা শীতল স্রোত শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে গেল।
আমি রুমে ঢুকে ব্যাকপেক আর জিপের চাবি নিলাম।
সবাই এখনো হল ঘরের দিকে ব্যস্ত, এই ফাঁকে আমাকে বের হতে হবে।
এক ছুটে বেড়িয়ে সোজা জিপে।
চারপাশের আলো নিভে গেছে।
আমি শুধু যে পথ দিয়ে এসেছিলাম, সেদিকে চলতে লাগলাম।
ঠিক কতক্ষণ এভাবে চলেছি মনে নেই, একসময় মনে হলো ঘুম আসছে।
আমার আর কিছু মনে নেই।
সকালে ঘুম ভাঙলো কয়েকজন কাঠুরের ডাকে।
বললো, তুমি এখানে কিভাবে এলে?
ওদের জিজ্ঞেস করলাম, শার্লিন কিচেনটা কোন দিকে?
ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বললো, তুমি মনে হয় নতুন, শার্লিনের কিচেন এই জঙ্গলে কোন একটা জায়গায় ছিল একসময়, মানুষখেকো অপরাধে অনেক আগেই ওদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল, ওদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল, জরিমানা ও মৃত্যদন্ডের আদেশ হয়েছিল, তাও প্রায় ত্রিশ বছর আগে।
তুমি বাছা এসব খুঁজছো কেন………..?
আমি ওদের কথার উত্তর খুঁজে পেলাম না….
বিদায় নিয়ে শহরের দিকে পা বাড়ালাম শুধু।
শার্লিনের কিচেন
লেখিকা : শানজানা আলম
( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/shanjana.alam