শপিং

0
849
«আজকে শপিং করতে যেতে হবে তোমার কি সময় হবে? ম্যাম কথাটা বলেই কি যেনো লিখতে বসলো। আমি মেরুদন্ড সোজা করে তাকিয়ে দেখলাম বিশাল একটা শপিং-এর লিষ্ট! ৩৩ পর্যন্ত এসেছে, না জানি আরো কত আছে। প্রথমেই দেখলাম লিষ্টে আছে একটা সবুজ শাড়ি এবং লাল পাঞ্জাবি। লাল পাঞ্জাবি নিশ্চই আমার জন্য, মনে মনে এক পশলা আনন্দ করে নিলাম। সবুজের বুকে লাল সেতো উড়বেই চিরকাল। না গান টা এভাবে বলা ঠিক হবে না, সবুজের টাকায় পাঞ্জাবি, পড়বি আর আনন্দ করবি!! কঠিন একটা রাগী রাগী ভাব নিয়ে বললাম:- ” ম্যাম আমি আর আপনার সাথে বাইরে বের হবো না। ম্যাম বিস্ময়ভাব নিয়ে বললেন, কেনো? আমি কান্না কান্না ভাব নিয়ে বললাম, ম্যাম বাইরে বের হলে সবাই আমাদেরকে কাপল ভাবে, সবাই মনে করে আপনি আমার প্রেমিকা! এতে আমার বিন্দুমাত্র খারাপ লাগে না, কিন্তু আপনার মান-সম্মান বলে তো কিছু একটা আছে তাই না?
ম্যাম মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, আরে গাধা আজ সবুজ শাড়ি কিনবো এবং তোমার জন্য লাল পাঞ্জাবি কিনবো, এটা বিজয়ের মাস। আসলে তুমি ভাবছো আমি মনে মনে হয়তো এটা নিয়ে আনকমফোর্টেবল ফিল করছি, কিন্তু এরকম টা কখনো ভাববে না। আমি মনে মনে হাসছি… ম্যাম বাইরে বের হবার জন্যই বাহানা করে, একদিন ফুটপাতে থাকা এক ভিক্ষুক ভিক্ষা করছে। আমি এবং ম্যাম যাচ্ছি ঢাকা মেডিকেলে। ভিক্ষুক আমাদেরকে দেখে বললো, ও ভাই দুইটা টাকা দিয়ে যান সারাদিন কিছু খাই নাই। আমি বললাম, চাচা খুচরা টাকা নাই। উনি বললেন, টাকা দিলে দোয়া করে দিতাম, আপনাগো সুন্দর একটা বাচ্চা হইবো। ম্যাম লজ্জায় মাথা নিচু করে ভ্যানিটিব্যাগ থেকে ১০০ টাকা বের করে দিলেন। .
২. সেদিন ছিলো শুক্রবার ।ভাবলাম হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের ফাইল দেখি কিছুটা হলেও কাজে আসবে। যেভাবে লেখাপড়া করছি তাতে কৃমির রোগী আসলেও হয়তো চিকিৎসা দিতে পারবো না। কৃমির কথা মনে করতেই বিশাল বিশাল ভয়ংকর চিত্র সামনে ভাসে। ছোটবেলায় একবার কৃমি হয়েছিলো। বাথরুমে বসে আছি তারপর প্রাকৃতিক কাজ শুরু হলো, নিচের দিকে তাকিয়ে দেখেই আমি শিহরত হলাম! একি! সাপের মত নড়াচড়া করে কেনো? ভাবলাম একটা ধরি, আম্মুর কাছে নিয়ে যাই! ভাবলাম যদি কামড় দেয়? ডিসিসান নিয়েই ফেললাম ধরবো একটাকে, যেই না ধরতে গিয়েছি আম্মা এসে বলছে, হায় কপাল আমার বাবুটার পেটে কৃমি হয়েছে, তাইতো বলি নাদুস-নুদুস বাচ্চাটা আমার শুকিয়ে যাচ্ছে কেনো!! ওগো শুনছো, ও বাবুর আব্বু, আমাদের বাবুটার পেটে কৃমি হয়েছে জলদি ঔষুধ নিয়ে আসো। আব্বু, আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললেন;” তোমার ছেলের শরীরের দিকে কে নাকি বদ-নজর দিয়েছে তাই সে শুকিয়ে গিয়েছে, এই সূত্র বলে আমার পকেটের টাকা দিয়ে কাড়ি কাড়ি আপেল-কমলা-আঙুর- কিনে এনে খাওয়াইছো, অথচ ২০ টাকা দিয়ে একটা Syp- Ermox( কৃমির সিরাপ) নিয়ে আসলে এতোগুলা টাকা খরচ হইতো না। ছোটখাটো এক পশলা ঝগরা হয়ে গেলো আব্বু আম্মুর মাঝে, কিন্তু আমার মন খারাপ হয়েছে কৃমি ব্যাটাকে ধরতে না পেরে। . ৩. রোগীর নাম আনিস। বয়স দেড় বছর। সঙ্গে এসেছে তার বড় বোন। আহ কি মিষ্টি একটা মেয়ে। এই মেয়েকে দেখে নিশ্চই কোন কৃমি এ্যাটাক করবে না। মেয়েটাকে কি জিজ্ঞাসা করা যায়! আপনার কি কখনো কৃমি হয়েছে? ভাবনা ভাবতে দেরি হলো না, কথাটা মুখ দিয়ে বলেই ফেললাম, ” আচ্ছা আপনার কখনো কৃমি হয়েছিলো? মেয়েটা বড় বড় করে তাকিয়ে বললো, যার কৃমি হয়েছে তার চিকিৎসা দিন। আমি একটা টেস্ট দিলাম, STOOL R/ M/E কিন্তু মেডিসিন নেইম লিখতে গিয়ে ঘটলো এক বিপত্তি। কি মেডিসিন লিখবো তা মনে আসছে না, আবার মেডিসিনের নাম মনে আসলেও ডোজ টা লিখতে পারছি না। কি মহা সমস্যা। রোগীর বড় বোনকে বললাম আচ্ছা নায়ক শাকিব খান এবং শাবরুখ খান এর মধ্যে মিল কোথায়? এই সুযোগে একটা এপস বের করে মেডিসিনের ডোজ জানার ব্যার্থ চেষ্টা করছি! কিন্তু এমন একটা মেডিসিন দেখেছি যেটা দেড় বছর বয়সী বাচ্চাকে দেয়া যাবে না। আমার ভাব দেখে মেয়েটা এপ্রোনের কলার ধরে বললো, “সালা হারামজাদা, ভন্ড ডাক্তার! তোকে আমিই চিকিৎসা দিচ্ছি। সব ঠিক থাকে কিন্তু এই কৃমির বেলায় সব এলোমেলো হয়ে যাই আমি। সেই শুক্রবারে ডিউটি করতে গিয়ে ম্যামের সাথে গোপন-বাহির-আলো- অন্ধকার সব ধরনের কথা হলো। সেদিন থেকেই ম্যামের সাথে শপিং – ডীনার- কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সঙ্গী আমি। ম্যাম এর বয়স কত হবে তা জানার জন্য অনেক ট্রাই করেছি, একদিন ভ্যানিটিব্যাগ চুরি করে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে যেই না দেখতে যাবো ওমনি ম্যাম এসে হাজির।জন্মসাল টা দেখতে পারি নাই। তবে অনুমান করে নিয়েছি ১৯৮৮ সাল তো হবেই। এ হিসেবে ম্যাম আমার চেয়ে ৮ বছরের বড়। . ৪. ম্যাম মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, একটা খেলা খেলবো, তুমি খেলবে? আমি চেয়ার উল্টায়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলাম। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম কি রকম খেলা ম্যাম? ম্যাম বললেন-” আমি আর তুমি বের বাইরে বের হবার পর প্রথমে রিস্কাওয়ালার কাছে তারপর বাদামওয়ালার কাছে এবং সবশেষে রেষ্টুরেন্টের ওয়েটারের কাছে জিজ্ঞাসা করবো আমাদের দুজনকে কি মনে হয়? যদি একজন বলে আমাদের দেখতে কাপল-দম্পতির মত লাগে তাহলে আমরা প্রতিদিন বাইরে বের হবো। তুমি কি রাজি? আমি হাত উঠিয়ে বললাম, জ্বী ম্যাম রাজি। পাশাপাশি দুজন রিস্কায় বসে আছি। ম্যাম টিপ পড়েছেন। চুল এলোমেলো, বাতাসে লম্বা চুল একটা মুখের মধ্যে চলে গিয়েছে! বুঝতেছি না কি করিবো এই চুলটা, চিবিয়ে খেয়ে ফেললে কেমন হয়? না খাওয়া যাবে না ডায়রিয়া হবে। ম্যাম রিস্কাওয়ালার কাঁধে হাত দিয়ে বললেন —-> . –‘মামা আমাদের দেখে কি মনে হয়? বলুন তো? . –‘আফা আপনারা অনেক ধনী। . –‘আরে সেটা না, আমাদের দুজনকে দেখে কি মনে হচ্ছে? . –‘ দেখে তো মনে হচ্ছে আফা ছেলেটা আপনার ছোট ভাই। আপনি তার বড় বোন। . –‘ম্যাম রাগে কটমট করছে। মনে হচ্ছে এখনি রিস্কাওয়ালাকে মারধর করবে। কিন্তু না ম্যাম সচেতন, কিছুদিন আগেই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের এক মহিলা নেতা রিস্কাওয়ালাকে মারধর করে বিপদে পড়েছিলো। তাই ম্যাম চেপে গেলেন। পার্কে গিয়ে বসে আছি। ম্যাম বললেন আমাকে একা থাকতে দাও, মন খারাপ। আমি বাদাম ক্রয় করে অন্য জায়গায় বসে খাচ্ছি, বাদামওয়ালা আমার কাছে বিল চাইলো, আমি ম্যামকে দেখিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম ম্যাম সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। আমি বাদামওয়ালাকে কলার ধরে বললাম, ছিনকাই -কারী হয়েছিস তাই না? বাদামওয়ালা বললো, ভাই আমি উনার কাছে এসে বললাম আপনার ছেলে বাদাম খেয়েছে বিল দ্যান আন্টি! এই কথা বলার পরেই উনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। মোটামুটি বুঝলাম, কাপল-দম্পতির পরিবর্তে মা-ছেলের সম্পর্ক ম্যাম হয়তো নিতে পারেনি তাই সেন্সলেস। তড়িঘড়ি করে ম্যামকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। যেহেতু ম্যাম একজন ডাক্তার তাই সবাই ম্যামকে আলাদা রকমের কেয়ার নিচ্ছে। দুইটা নার্স সার্বক্ষণিক পাশে থাকছে। আমি ভেতরে ঢুকলাম, দুইটা অচেনা নার্স আমার কাছে এসে বললেন, স্যার আপনার স্ত্রীর অবস্তা খুবিই খারাপ, এখন কাছে আসা যাবে না। ম্যামের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি নড়াচড়া করছেন, বেড থেকে উঠে বললেন… দেখেছো একজন তো কাপল-দম্পতি মনে করেছে! তাহলে কাল আবার শপিং-এ যাবো কিন্তু!! . আতিক হাসান// শপিং

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে