শত্রু শত্রু খেলা স্পেশাল পর্ব

0
660

স্পেশাল পর্ব
#শত্রু_শত্রু_খেলা
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)

আরাভ মাসুদের সাথে ছাদে বাগানের মধ্যে খেলছিলো। তার সাথে আরাভের সমবয়সী নিচতলার ফ্ল্যাটের ইরাতও খেলছিলো। সৌরভ রোজ বিকেলের মত নিয়ম করে ছাদে এসেছিলো বাগান দেখার জন্য। আচমকা তার চোখ গেলো ইরাতের দিকে। বাচ্চা মেয়েটার যথেষ্ট আদুরে মুখখানি দেখলে যে কেউ হামলে পড়বে আদর করতে। কিন্তু এখন তার আদর করতে ইচ্ছে করছে না উল্টো রাগ হচ্ছে আরাভের সাথে সে কেনো খেলবে? দৈবাৎ তার কি হলো কে জানে সে ছোঁ মেরে আরাভকে কোলে নিয়ে নিলো। তারপর বাগানের বেঞ্চিতে গিয়ে বসলো। আরাভের নাক ধরে বললো,

জামাই বাবাজী তুমি আমার মেয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারছো না। ইরাতের সাথে আর খেলবে না। মেয়েটা একদম পঁচা বুচ্ছো।

আরাভও চাচ্চুর সাথে মাথা দুলিয়ে হেসে উঠল,

প,,ত,,,তা।

সৌরভ মুখে আদর দিয়ে বলল এই তো আমার জামাই বাবাজী সব বুঝে যায়। কত মিষ্টি একটা জামাই আমার। আরাভ খিলখিল করে হেসে উঠে। তারপর আবার বললো,

জা,,,ম,,,মা।

সৌরভ আবারও নাক ধরে টানে। আরাভ খিলখিল করে হাসে। গৌরব ছাদে এসে দেখে আরাভ সৌরভের কোলে। তার সাথে মজা মাস্তি করে যাচ্ছে। তার বাবা ইরাতের সাথে বসে আছে ছাদের এককোণে। সে এগিয়ে গিয়ে আরাভকে সৌরভের কোল থেকে নিতে চাইলো। কিন্তু সৌরভ তাকে দিলো না। উল্টো গৌরবকে শাসালো ডিষ্টার্ব করিস না’তো আমাদের দু’জনকে। আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করছি। তাই’না আরাভ বাবাজী।

গৌরব হা হয়ে বলল, মিটিং? কিসের মিটিং করলি শুনি।

সৌরভ ভাইকে পাত্তা না দিয়ে বললো এগুলো সবাইকে বলা যায় না। গোপন আলাপ। গৌরব ভাইয়ের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল। তারপর সৌরভের দিকে তাকিয়ে বলল তুই আজকাল আমার ছেলের পিছনে কেনো লাগলি বল তো? তোর মতলব তো সুবিধার না। সৌরভ আরাভকে কোলে করে নিয়ে উঠে পড়লো। তারপর ছাদ থেকে নামতে নামতে বলল।

সিক্রেট, বলা যাবে না।

গৌরবও সৌরভের পিছু পিছু নিচে নামতে লাগলো। আরাভ বাবা চাচা দু’জনের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল। আরাভ আবারও নাক টানলো। গৌরব ভাইয়ের কান্ড দেখে বললো তুই তো আমার ছেলের নাকটাই লম্বা করে ফেলবি।

সৌরভ ভাইয়ের দিকে বিরক্তিকর ছাউনি দিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

জামাই শ্বশুরের মাঝে আসছে মাতব্বরি করতে।

আরাভ চাচার বিড়বিড় করা কথা শুনে বলল,

মা,,ব্বা,, মা,,ব্বা।

গৌরব হা’ হয়ে ছেলে আর ভাইয়ের কান্ড দেখছে। সৌরভ সেই থেকে হেসে কুটি কুটি।

সৌরভ আরাভকে কোলে নিয়ে প্রিয়ার কাছে আসে। প্রিয়া তখন বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে। সৌরভের বড্ড অনুশোচনা হয় বউয়ের কষ্ট দেখলে। বউটা তার ঠিক করে খাইতেও পারে না। চার মাসের সামান্য উঁচু পেট নিয়ে চলে আজকাল। আট মাস পর এইচএসসি পরীক্ষা তার। পড়াশোনা করতেও কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। আফসোসের নিশ্বাস ভেসে আসে তার বক্ষস্থল থেকে। সে অবশ্যই এত তড়িৎ বাচ্চা চাইনি। কিন্তু বিধিবাম কি আর ঠেকানো যায়। সে আরাভকে নিয়ে প্রিয়ার পাশে বসে। প্রিয়া সৌরভকে দেখে শোয়া থেকে উঠতে চাইলো। কিন্তু সৌরভ নিষেধ করে না উঠতে। সে প্রিয়ার পাশে আরাভকে নিয়ে শুয়ে পড়ে। তার এক হাত আরাভকে বুকে জড়িয়ে অন্য হাত প্রিয়ার উদরের উপর দিয়ে রেখেছে। আচমকা সে আরাভকে রেখে উঠে বসে। তারপর নিজের অধর ছোঁয়ায় প্রিয়ার উদরে। তারপর সেখানে কান পেতে তার অনাগত বাচ্চার শব্দ শোনার চেষ্টা করে। প্রিয়া সৌরভের কান্ড দেখে হেসে উঠে। আরাভ তার চাচ্চুর কান্ড না বুঝলেও সেও আসে প্রিয়ার উদরে নিজের ঠোঁট ছোঁয়াতে। কিন্তু সৌরভ তাকে টেনে ধরে। তারপর তার কানে ফিসফিস করে বলে,

এমা, ছিঃ! ছিঃ! শাশুড়ীর পেটে কেউ চুমো খাই। কি নির্লজ্জ জামাই’রে আমার। এটা শুধু তোমার শ্বশুরের অধিকার তোমার নয় জামাই বাবাজী। তুমি শুধু আমার মেয়েকে চুমো খাবে। আর কাউকে না।

আরাভ কিছু না বুঝলেও চাচ্চুর কথায় খিলখিল করে হাসে। প্রিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছে। কি হলো এটা। তারপর সৌরভের কথা বুঝতে পেরে লজ্জায় কপাল কুঁচকে বলল,

আপনি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন কিন্তু।

সৌরভ প্রিয়াকে কাছে টেনে ফিসফিস করে বলল,

অসভ্য বলেই তো বাপ হচ্ছি সাথে আরাভ জামাই বাবাজীর শ্বশুর।

প্রিয়া আর কিছু না বলেই উঠে গেলো। এ লোক একদম লাগাম ছাড়া আজকাল কথা বলে। একদম নির্লজ্জ হয়ে গেছে।

মসজিদে মাগরিবের আজান দিয়েছে তখন। গৌরব নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে দোয়া পড়ছে। আলিশবা জামাইয়ের দোয়া শুনে বিস্মিত হয়ে গেলো। সে গৌরবকে জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার আজকে এত মনোযোগ দিয়ে কি দোয়া পড়ছো?

গৌরবের উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বর। সে ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললো,

আমি চাই সৌরভের দুই’টা জমজ বাচ্চা হোক। একটা ছেলে আরেক’টা মেয়ে। তারপর আমিও তার ছেলেকে নিয়ে ঘুরবো। দেখাবো কেমন মজা। আলিশবার ব্যগ্রকন্ঠ,

দুইটা জমজ বাচ্চা কেনো। তাও একটা ছেলে, আর মেয়ে।

গৌরব বউয়ের কথা শুনে মিট মিট করে হাসলো। সে রগড় গলায় বলল,

বুঝনি ব্যাপার টা। একটা মেয়ে হলে তো সে জিতে যাবে আর আমি হেরে বসে থাকব। আমার ছেলেটাও তার মেয়েটাও তার। তাহলে আমি কি পেলাম। এজন্য দুইটা বাচ্চা হলে তো ওর ছেলেটাকে আমি নিয়ে নিবো। আমারো কয়দিন পর মেয়ে হবে। তারপর আমিও তার ছেলেকে আমার মেয়ে জামাই বানাবো। হিসাব বরাবর।

আলিশবা কপালে হাত দিয়ে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো। মুখে কিছুক্ষণ হা-হুতাশ করলো। এই দুই ভাইয়ের চক্করে তাদের জীবন ত্যানা ত্যানা হয়ে গেলো। এদের খেয়ে দেয়ে আর কোন কাজ নাই। খালি কে কার বাচ্চাকে জামাই বানাবে এই ছাড়া। সে তার জামাইকে শাসালো,

এই তোমার মেয়ে পাইছো কোথায়? মেয়ে হবে যে তার গ্যারান্টি কি?

গৌরব ভ্রু উঁচিয়ে বউকে বললো চিন্তা করো না তো মেয়েই আসবে কিছুদিন পর।

আলিশবা আর কোনো বাক্য বিনিময় করলো না। এদের সাথে কথা বলাই বৃথা। সে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

সন্ধ্যায় নাস্তা করতে বসে গৌরব সৌরভের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসলো। সৌরভ ব্যাপারটা বুঝলো না। তার ভাই আচমকা তাকে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসছে কেনো? সে ইশারায় ভ্রু উঁচিয়ে ভাইকে জিজ্ঞেস করলো ব্যাপারটা কি এভাবে দন্ত্য পাটি দেখাচ্ছিস কেনো? গৌরব ভাইয়ের কানে ফিসফিস করে বললো,

বেয়াইসাবের লগে একটু মশকরা করি আর কি। বুঝেন নাই ব্যাপারটা।

সৌরভ ভাইয়ের মজা বুঝতে পেরে বলল আচ্ছা, তাইলে এই ব্যাপার। কিন্তু বেয়াইসাব আপনি এত খুশি কেনো? খুশি তো আমার হওয়ার কথা। মেয়ে জামাইকে নিজের হাতে মানুষ করতে পারব।

গৌরব ভাইয়ের কথা শুনে গা দুলিয়ে হেসে উঠল। তারপর ফিসফিস করে বললো,

ছেলেও আমার ছেলের বউও আমার। দুইজনই আমার কাছে থাকবে। আপনি শূন্য বেয়াইসাব। বুঝেন নাই ব্যাপারটা।

সৌরভ ভাইয়ের কথা শুনে কুঠিল হাসলো। আবার কিছু বলতে যাবে। তার আগে নাজমা চেঁচিয়ে উঠল,

এ্যাই তোরা খাবার টেবিলে বসে ফিসফিস করে কিজন্য কথা বলিস? ভরা মজলিসে ফিসফিস করে কথা বলা বেআইনি জানস না। হয় জোরে বলবি নয়তো চুপচাপ থাকবি।

আচমকা সৌরভ মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,

আম্মা ভাইয়ের সাথে আমার গোপন চুক্তি চলতেছে। তাই কাউকে বলা যাবে না। সময় হলে তোমাদের সবাইকে জানাবো নে।

প্রিয়া আলিশবা দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ দু’জনই একসাথে খিলখিল করে হেসে উঠল।

নাজমা, মাসুদ আর শোভা হতবাক হয়ে বসে আছে। এদের আবার কি হলো।

সৌরভের কোলে আরাভ সেও মা’ চাচীর সাথে তাল মিলালো। আরাভের হাসি দেখে সে বলল

আপনি হাসেন কেনো? কি বুঝে হাসলেন শুনি?

আরাভ খিলখিলিয়ে হেসে আধো আধো বুলিতে আওড়ালো,

জা,,ম,,মা।

সৌরভ মুখে আদর দিয়ে বলল বাহ! জামাই বাবাজী দেখছি সব বুঝে।

___________সমাপ্তি _____________

গল্প শেষ হওয়ায় আপনাদের মন ভীষণ খারাপ তা আমি বুঝতে পারছি। আপনারা এই গল্পটাকে এত ভালোবাসা দিয়েছেন আপনাদের মত আমিও ভুলতে পারছিনা। আজকের এই স্পেশাল পর্ব শুধুমাত্র পাঠকের বিনোদনের জন্য। সত্যিই বলতে আমি নিজেও প্রিয়া, সৌরভ, গৌরবদের মিস করছিলাম। তাই আপনাদের ভালোবাসায় আপনাদের ইচ্ছে পূরণ করে ফেললাম। আর আপনাদের কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য।

অনেকেই সিজন টু চেয়েছেন। ইনশাআল্লাহ হয়তো আসতে পারে। কিন্তু কখন আসবে এখনো জানি না। তবে আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেনো সুস্থ থাকতে পারি ততদিন। আল্লাহ হাফেজ। আবারও আরো একবার ধন্যবাদ সবাইকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে