#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_১৩
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
নাজমা মোবাইলে বসে দাদী নাতির খুনশুটিময় একটা ভিডিও দেখছিলো। আচমকা তার উষ্ণ নিশ্বাস বের হয়ে আসে। দুই দুইটা ছেলে তার। অথচ একটা ছেলেও বিয়ে করে নাই। মেয়েটা এখনো ছোটো। কবে সে নাতিপুতির মুখ দেখবে। কবে দাদি হবে। মনের কোণে তার কষ্টটা নাড়া দিয়ে উঠল। এতো বড় বাড়ি তার খালি হয়ে আছে। কোথায় বাচ্চা-কাচ্চা গিজ গিজ করবে তা’ না। পুরো বাড়ি জনশূন্য পড়ে আছে। কি হবে এত টাকা-পয়সা দিয়ে যদি খাওয়ার আর থাকার মানুষই না থাকে।
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কল দিলো কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে। যদি কল রিসিভ করে তো আজ তাকে অনেক ইমোশনাল ব্ল্যাক*মেইল করবে। প্রথম কল কে*টে যায় তার। এবার সত্যিই নাজমার মন আরো খারা* হয়ে গেলো। মোবাইল রেখে দিতেই উদ্বত হতেই অপর পাশ থেকে কল আসলো। নাজমা দ্রুত রিসিভ করলো।
কেমন আছো আব্বাজান?
গৌরব হেসে উঠল। মায়ের গলা পেয়ে তার মনও ভালো হয়ে গেছে। এতক্ষণ সেও মন খারা* করে বসেছিলো। আজকাল মায়ের কাছে ছুটে আসতে মন চায় তার। কিন্তু কোন মুখ নিয়ে আসবে সে। সেই পাঁচবছর আগে সে পাড়ি জমিয়েছিলো তার মনের ক্ষো*ভ আর ছেদ নিয়ে অজানার উদ্দেশ্য। আর ফিরে যায়নি সে। তার মায়ের মনটা ভীষণ নরম। তাই তো অল্পতেই অস্থির হয়ে পড়ে। মায়ের কতশত আবদার তার কাছে। আজো নিশ্চয়ই তার মা কোনো আবদার তার কাছে করবে। সেও কোমল গলায় বললো,
আমি ভালো আছি তোমার দোয়ায়। তুমি ভালো আছো আম্মা? তোমার শরীর-মন দুইটাই ভালো তো?
নাজমা হু হু কেঁদে উঠল। কান্নায় তার কথাগুলো বার বার জড়িয়ে যাচ্ছে। দুই চোখের জল সে ছেড়ে দিয়েছে। আজকে তার কান্নারা আর বাঁধা মানছে না। কান্নামিশ্রিত স্বরে বলল,
আব্বাজান আমি ম*রে গেলে তখন দেশে আসবা আমার লা*শ দেখতে।
গৌরব আৎকে উঠে। তার মা এভাবে কেনো কথা বলছে। তারও বক্ষস্থলে সূক্ষ্ম চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হলো। মা’কে শান্ত করতেই বলে উঠল,
কি হয়েছে আম্মা? এভাবে কাঁদছো কেন? আমাকে বলো কি হয়েছে তোমার?
‘আব্বাজান তুমি দেশে ফিরে আসো। আমার আর কিছু লাগবে না। আমি তোমাকে মন ভরে দেখতে চাই। তোমার বউ-বাচ্চা দেখে মরতে চাই। আব্বাজান এইটুকু ইচ্ছে পূরণ করবে না।’
‘আম্মা তাইলে সৌরভকে বিয়ে করায় দাও।’
দেখো আগে বড়ো ভাইয়ের বিয়ে হবে তারপর ছোটো ভাইয়ের। তোমার বিয়ের পর আমি সৌরভরেও বিয়ে করামু। তুমি দেশে আসো না বাপজান। মায়ের তো আর কিছু ভালো লাগে না। প্রতিরাতেই মনে হয় আমি বোধহয় আর বাঁচবো না। এই রাত বুঝি আমার শেষরাত। কিন্তু সকালে ঘুম ভে*ঙে দেখি এখনো বেঁচে আছি। বাপজান আমি ম*রে গেলে কারে দেখাইবা বউ-বাচ্চা। তুমি ফিরে আসো না বাপ। এই টাকা-পয়সা দিয়ে কি করবো বলো? আমার ছেলেটা দেশে নাই আজকে পাঁচটা বছর। আমি কেমনে বেঁচে আছি সেটা তো আমি জানি।
গৌরবের মনটা হু হু করে কেঁদে উঠলো মায়ের কথা শুনে। তারও এখানে থাকতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু সে যে একটা নয় অনেকগুলো ভুল করেছে। কি করে তার মা’কে বলবে সে এই ভুলের কথা। তার মা’ কি আধো মেনে নিবে। তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে সে। কিন্তু মায়ের সামনা সামনি হওয়া দরকার তার। তবে এবার দেশে সে যাবেই।
‘আম্মা চিন্তা করো না আমি দেশে আসবো। কিন্তু কয়েকদিন সময় লাগবে। অন্তত সে কয়েকদিন অপেক্ষা করো।’
নাজমার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখা দিলো। অবশেষে সে পেরেছে তার ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে। আহ্লাদী স্বরে বলল,
কবে আসবে বাপ?
আম্মা প্রোসেসিং এ সময় লাগবে। ধরো একমাসের মধ্যেও আসতে পারি আবার পনেরো দিনের মধ্যেও আসতে পারি। তবে আসব ইনশাআল্লাহ।
নাজমা খুশির চোটে কেঁদে দিলেন। কল কাটলেন কিন্তু খুশি চেপে রাখতে পারলেন না। মাসুদের কাছে গেলেন। রগড় গলায় বললেন,
যে কাজ তুমি পারনি, সেটা আমি করেছি। আমার গৌরব ফিরবে। এবার ফিরলে আর ফিরে যেতে দেবো না। আমার ছেলেকে আমার কাছেই রাখবো। জানো আমি গৌরবের জন্য মেয়েও ঠিক করে রেখেছি।
মাসুদ মাথা তুলে তাকালেন। এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে বাড়ির হিসাব কষছিলেন। বউয়ের কথায় মাথা চুলকে বললেন,
তা মেয়েটা কে?
আনোয়ার ভাইয়ের মেয়ে প্রিয়া।
___________________
টিউশন শেষ করে সৌরভ বসে আছে সোফায়। মারিয়া যেতে দেয়নি তাকে। মারিয়া কিচেন থেকে নাস্তা নিয়ে আসলো তার জন্য। সৌরভ মাত্রই চা মুখে দিয়েছে।
মারিয়া নিজ থেকেই বলল প্রিয়ার জন্য শায়লার বিয়ের প্রস্তাবের কথা। বিয়ের প্রস্তাবটা বেশ ভালোই। ছেলে একজন ডেন্টিষ্ট। ফেনীতেই ছেলেদের বাড়ি আছে। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে সে। দুই বোন আছে বিবাহিত। প্রিয়া বিয়ের পরও পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবে। ছেলে পড়াশোনা করাবে। তবে সমস্যা একটাই ছেলের মা অসুস্থ তাকে দেখাশোনা করতে হবে সার্বক্ষণিক। নড়াচড়া করতে পারেন না হহুল চেয়ারেই থাকেন সবসময়। এটাই শুধু সমস্যা নয়তো বাকিসব ঠিক আছে বলে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে মারিয়া।
সৌরভ কিছু বললো না চুপচাপ শুনে গেলো। কিন্তু দৈবাৎ বলল আন্টি আমার মনে হয় প্রিয়াকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া উচিৎ। পড়াশোনা তো আজকাল করে না দেখি। দেড় মাস পরেই তো আটারো হয়ে যাবে বিয়ে দিয়ে দেন। আর কত এই মেয়েকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবেন বলেন তো। কাজকর্ম কিছু না পারলে শিখিয়ে দিয়েন।
পর্দার আড়ালে থাকা প্রিয়া সবকিছুই শুনলো। রাগে চোয়াল শক্ত করল সে। তার মা’কে কুমন্ত্রণা দেয় কত বড় ব*জ্জাত সে।
পড়তে বসেও চিন্তায় তার মাথা হ্যাং হয়ে আছে। সত্যিই কি তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। এর উত্তর কিভাবে জানবে সে? একমাত্র তার বাবাই তার শেষ ভরসা। মা’কে তার ন্যুনতমও বিশ্বাস নাই।
__________
ঘড়ির কাটায় রাত ৯টা।
আচমকা টুংটাং করে সৌরভের মোবাইলের মেসেজ টোন বেজে উঠলো। প্রথমেই সে পাত্তা দিলো না। কিন্তু মেসেজ প্রেরিত ব্যক্তির নাম স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করলো গৌরব নামে তখন তড়িঘড়ি মোবাইল হাতে নিলো সে। মেসেজ পড়ে তার চক্ষু চড়কগাছ। এটা সত্যি সে যা দেখছে।
“কেমন আছিস ভাই? তোর বিছানার ডানপাশে এখনো আমার জন্য জায়গা খালি আছে। আমাকে থাকতে দিবি? যদি ফিরে আসি, তোর সবকিছুতে ভাগ বসাবো এবার সহ্য হবে তো আমাকে।”
দৌড় দিয়ে মায়ের ঘরে যায়। নাজমার কোলে গিয়ে আঁচড়ে পড়ে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে সৌরভ। মা’ ভাই ফিরে আসবে এবার। তোমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো এবার।
নাজমার চোখে খুশির ঝিলিক। হেসে উঠল সে। প্রমোদ গলায় বলল আমি জানি।
সৌরভ অবাক হলো মা’ তুমি জানতে সব।
মা’ ছেলের কথোপকথনে শোভা আসে দৌড়ে। মা’ ভাইয়া আমাকে মেসেজ দিয়েছে। ভাইয়া আসবে এবার।
নাজমা আর সৌরভ মিটমিট করে হাসছে। শোভা অবাক হলো সে এত বড় খবর নিয়ে এসেছে এরা তাকে পাত্তাই দিলো না। সৌরভ তার কাছে এলো। মোবাইলের দিকে ইশারা করে বললো,
দেখা তো তোকে কি বলেছে?
শোভা হাত উঁচু করে ধরলো। সৌরভ জোরে জোরে এক নিশ্বাসে পড়লো।
“কিরে শুভু তুই নাকি অনেক শুকিয়ে গেছিস ভাইয়ের শোকে। ভাইয়াকে খুব মিস করিস বুঝি। এবার ফিরে আসলে কিন্তু আর যাবো না। একেবারে তোর নাতিপুতি দেখেই দম নিবো।”
সৌরভ মেসেজ পরেই হো হো করেই হেসে উঠল।
শোভা আর দাঁড়ালো না। আজ ছোটো বলে তাকে কেউ পাত্তা দেয় না। দুই ভাই একরকম।
____________________
সৌরভ চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। এই মেয়ের সাহস দিন দিন বেড়েই চলেছে। একে কঠিন একটা শিক্ষা দিতেই হবেই। অনেক ভেবে চিন্তে তার মাথায় একটা আইডিয়া আসলো। তবে কাজটা অনেক রিস্কি। করবে কি করবে না কতক্ষণ ভাবলো সে।
অনেক ভেবে চিন্তে সৌরভ শোভাকে ডাকলো। তারপর বোনকে বুঝিয়ে দিলো কি করতে হবে। শোভা প্রথমে অবাক হলো। এত রাতে কেনো দরকার তার। সৌরভ বিনিময়ে মিষ্টি করে হাসলো। বোনকে অন্যভাবে বুঝালো সে।
শোভা কল দিলো কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে। সৌরভের শিখানো বুলিই আওড়ালো সে।
বসন্তকাল হলেও রাতে মৃদু শীতলতা বাইরে থাকে। প্রিয়া চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নিলো। সে আধো ভেবে পায় না শোভা তাকে রাত ১১টায় ছাদে কেনো ডেকেছে। ভয়ে ভয়ে সে হাটছে আর শুকনো ঢোক গিলছে।
সাত তলার ছাদ এত রাতে জনশূন্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার কেনো এত ভয় লাগছে সে নিজেও জানে না। তারপরও দুরুদুরু বুকে ছাদের দরজা টেনে ভিতরে প্রবেশ করলো সে। কিন্তু সেখানে একজন নারী অবয়বের জায়গায় পুরুষ অবয়ব দেখে তার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো। কম্পিত গলায় বলল,
আপনি এখানে কেনো? শোভা আপু কোথায়?
সৌরভ এগিয়ে আসলো তার কাছে। তারপর ধীরে ধীরে তার,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,
#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পার্ট_১৪ (সারপ্রাইজ পর্ব)
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
প্রিয়া এখনো কাঁপছে সৌরভ তার সামনে দাঁড়ানো। মুখ দিয়ে তার কোনো শব্দ উচ্চারিত হলো না। ভয়ের ছোটে চোখের জল ছেড়ে দিলো। হাটু গেড়ে বসে পড়লো ছাদের মাঝে। ঈষৎ শব্দে করে কেঁদে উঠল সে। কম্পনরত তনু বার বার কাঁপছিল তার। সৌরভ কোন উদ্দেশ্য তাকে ছাদে ডাকলো।
সৌরভ প্রিয়ার শিয়রে বসে তাকে ধমক দিলো। এই মেয়ে এত কাঁপছো কেনো? তোমার কি মনে হয়? তোমার সাথে রোমান্স করার জন্য এখানে ডেকেছি। ওসব থার্ডক্লাশ মার্কা চিন্তা ভাবনা রেখে ঐখানে বেঞ্চে গিয়ে বসো।
প্রিয়ার রাগ থরথর করে বাড়লো। রেগে গর্জে উঠলো সে।
আপনার সাহস দেখে আমি স্তম্ভিত। একা একটা মেয়েকে কোন দুঃসাহসে এত রাতে আপনি ছাদে ডেকেছেন। তাও নিজের ছোট বোনকে দিয়ে। ভাবতেই আমার গা ঘিন ঘিন করছে।
তা তো করবেই। কারণ তোমার ভাবনাই থার্ডক্লাশ মার্কা। আমার তো দুনিয়াতে মেয়ের অভাব পড়ছে তোমার মত বিশ্ব কালো সুন্দরীকে ডেকে তার সাথে প্রেম করবো।
তো কেনো ডেকেছেন আমার মত বিশ্ব কালো সুন্দরী কে?
এই তো লাইনে এসেছো। যাও আগে বেঞ্চে বসো আমি বলছি।
না, আমি বসবো না। এখানে ঠিক আছি।
অবশ্যই তোমার মত মেয়ের জন্য এই রকম মেঝেই ভালো। এদের আবার ভালো সুন্দর কথার মধ্যে এলার্জি আছে।
যা বলবেন সোজাসাপ্টা বলুন। এত খোঁচাখুঁচি কেনো করছেন।
কি করবো তোমাকে দেখলেই আমার হাত-পা নিশপিশ করে তাই খোঁচাইতে ইচ্ছে করে।
আপনাকে জন্মের সময় নাজমা আন্টি মধু দেয়নি বোধহয়। তাই মুখের ভাষা একদম তিতা করলার মত জ*ঘন্য।
তা একগ্লাস তিতা করলার জুস বানিয়ে দিবো। খেয়ে আমাকে একটু ধন্য করো।
আপনি আসলেই একটা অসহ্য জোকার কোথাকার।
জানি, নতুন নাম থাকলে বলতে পারো।
প্রিয়া না পেরে সে চুপ হয়ে থাকলো কতক্ষণ। তারপর শান্ত গলায় বলল,
ঠিক আছে আমি আসছি। অনেক রাত হয়ে গেছে আম্মু না দেখলে বকবে।
কোথায় যাবে তুমি? আমার কথা শেষ হয়নি কিন্তু এখনো।
কি বলবেন বলেন? তাড়াতাড়ি করেন আমি বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারবো না।
বেঞ্চে গিয়ে বসো। তারপর বলছি।
না এখানে ঠিক আছি।
আচ্ছা, সোজা ভাষা তোমার ভালো লাগে না। চলো তোমাকে ম্যাজিক দেখাই। তারপর সৌরভ গ্যালারি থেকে একটা ছবি বের করলো। যেটা সে ঝুমুর চাচীর মোবাইল থেকে নিয়েছিল। মোবাইলের স্ক্রিনটা প্রিয়ার মুখের সামনে ধরলো সে।
প্রিয়া বিস্ফোরিত নজরে তাকালো সৌরভের দিকে। তার চোখে মুখে আতংক ছড়িয়ে পড়লো। কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
এই ছবি কোথায় পেয়েছেন?
সৌরভ নিশব্দে হাসলো। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকাতে হয়। এখন এই মেয়ে শান্ত হয়েছে। মুখে বিশ্বজয়ের হাসি তার। কিন্তু প্রিয়াকে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
কেনো ভুলে গেলে? আমার সাথে রোমান্স করার সময়ের ছবি আর কি। আমি আর তুমি, তুমি আর আমি একে অপরকে জড়িয়ে তারপর কি যেনো করেছিলাম? বাকিটা মনে পড়ছে না। তুমিই মনে করিয়ে দাও।
দেখুন এসব কিছুই আমাদের মাঝে ছিলো না। শুধু শুধু বাজে বকবেন না।
হুমম,, তা ঠিক। কিন্তু এই কথা তো তুমি আর আমি জানি। কিন্তু বাইরের কেউ তো আর জানে না। এ ছবি দেখলে তখন অন্যকিছু ভাব্বে। তখন কি হবে ভেবেছো? ধরো আমি এই ছবি মারিয়া আন্টিকে যদি দেখায় তাহলে উনিও ঠিকিই এটাই ভাব্বে।
একদম না। কি করতে হবে বলেন? করে দিচ্ছি কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না।
আগে বেঞ্চে গিয়ে বসি। দরকারী কথা দাঁড়িয়ে বলা যায় না।
হুমম’ বলে প্রিয়া মাথা নাড়ায়। তারপর ধুম করে গিয়ে বেঞ্চে বসে পড়ে।
সৌরভ তার মোবাইল বের করলো। একটা নাম্বার ডায়াল করলো। তার আগে প্রিয়াকে শিখিয়ে দিলো এই নাম্বার যেই রিসিভ করুক না কেনো তাকে বলবে তুমি আমার ওয়াইফ হও। আর যাতে আমাকে সেই ব্যক্তি বিরক্ত না করে।
প্রিয়ার মেজাজ চটে গেল। রাগে চোয়াল শক্ত করে বললো,
এসব ননসেন্স কথাবার্তা আমি বলতে পারবো না। দুনিয়াতে তো আপনার মেয়ের অভাব নাই। তাহলে তাদের কাছে যান। তাদের কে গিয়ে বলেন আপনার বউ সাজার জন্য। আমার কাছে কেনো এসেছেন আপনি?
তুমি ঠিকিই বলেছো? দুনিয়াতে মেয়ের অভাব নাই। কিন্তু এই মূহুর্তে তোমার মত বিশ্ব কালো সুন্দরী মেয়ের অভাব আছে। তাই তোমাকে দিয়ে এই কাজটা করাবো।
আমি পারবো না।
ঠিক আছে করো না। আমিও মারিয়া আন্টিকে ছবিটা দিয়ে আসি। কি বলো? তারপর যা হবে তার জন্য আমি দায়ী নয়।
ব্লাক*মেইল করছেন। তাও করবো না আপনার কাজ। যা খুশি আপনি করতে পারেন। আই ডোন্ট কেয়ার।
ওকে, করো না। কিন্তু লুবনাকে কে বলেছিলো আমাকে কল দিতে। সেই মেয়েটা তুমি না তো আবার?
প্রিয়া শুকনো ঢোক গিলল। লুবনার কথা কি করে জানলো সে। আমতা আমতা করে বললো
আসলেই লুবনা আপনাকে পছন্দ করে বলেছিলো আমাকে। আমি শুধু বলেছি ও যেনো আপনাকে মনের কথা বলে। ব্যস এইটুকু আর কিছু করেনি।
ওহহ, এইটুকুই। শেষ তোমার কথা।
হুমম।
আমার নাম্বার পাবলিক টয়লেটের গায়ে কে লিখে এসেছে।
প্রিয়ার এবার জ্ঞানশূন্য হবার উপক্রম। এই ছেলে সব জেনে গেছে। এখন কি হবে তার? হাজার খুঁজেও সে কোনো উপায় খুঁজে পেলো না। আজ তার রক্ষে নেই।
যা বলছিলাম, সব মাফ করে দেবো। যদি আমার এই কাজটা করো।
কিন্তু আমি কেনো?
কারণ, ফোনের ঐ পাশের ব্যক্তি তোমার কথাই জানে তাই। মেয়েটাকে তুমি চেনো। সেদিন আমাদের সাথে ফুচকা স্টলে ছিলো।
পিউ আপুটা। যে আপনার ফেন্ড ছিলো।
হুমম,,, কল অলরেডি দিয়ে দিয়েছি কথা বলো। তোমার যা জানার বাকি কথা পরে জেনে নিও।
প্রিয়া সৌরভের থেকে মোবাইল নিয়ে নেয়। কিছুটা জড়টা কাজ করছে তার মাঝে। কি করে সে বলবে সে সৌরবিদ্যুত এর বউ। নিজেকে শাসিয়ে মেয়েটির উদ্দেশ্য সালাম দিলো সে।
আসসালামু আলাইকুম আপু। ভালো আছেন।
পিউ অবাক হয়ে গেলো। এররাতে সৌরভ প্রিয়াকে পেলো কোথায়? তার সাথে একটু কথা বললে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো তার। এত অবিশ্বাস তার প্রতি। আজো ঘৃণা করে তাকে সৌরভ। একটু কথা বলতে চেয়েছে সে কিন্তু সে প্রিয়াকে তার কল ধরিয়ে দিলো।
পিনপতন নীরবতা তাদের মাঝে। পিউ অনেকক্ষন চুপ থেকে বললো,
তোমাদের তো এখনো বিয়ে হয়নি তবু একসাথে দু’জন এক রুমে কি করছো। বিষয়টা কেমন যেনো মনে হচ্ছে আমার কাছে।
প্রিয়া লজ্জায় আর কথা বলতে পারলো না। এরমধ্যে সৌরভ ছোঁ মেরে মোবাইল নিয়ে নিলো। পিউর উদ্দেশ্য বললো,
যার যেমন মেন্টালিটি সে তো ঐ রকম ভাব্বে, তাই না পিউ? বিয়ে না হলে যে বউয়ের সাথে একরুমে থাকা যায় না তা অবশ্যই তোমার মুখে মানায় না। যেই মেয়ে বিয়ের আগে হাজার ছেলের হাত ধরে বেড়ায় তার মুখে অন্তত এসব বাণী মানায় না। বাই দ্যা ওয়ে আমি আর আমার উডবি মিলে ছাদে চন্দ্রবিলাশ করছি। আমরা বদ্ধরুমের মধ্যে দুজন একা নই। তবে থাকলেও তোমার সমস্যা কোথায়? আপাতত দৃষ্টিতে তোমার সমস্যা থাকার কথা না। এসব কাজ তো তোমার জন্য পানিভাত। আর হ্যাঁ আমার বউয়ের হাত তো শুধু আমিই ধরেছি। তোমার মতো হাজার ছেলের ছোঁয়া নেই সেখানে।
পিউ একটা টুঁশব্দও আর করলো না। খট করে কল কেটে দিলো।
প্রিয়া এখনো বাকরুদ্ধ। এই সৌরবিদ্যুত নিজের স্বার্থে তাকে এভাবে ব্যবহার করছে। ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। আর একমিনিটও সে আর এখানে থাকবে না। চলে যাওয়ার জন্য উদ্বত হতেই সৌরভ পিছু ডেকে বললো,
কাল ভোর পাঁচটায় উঠবে।
প্রিয়া কপাল কুঁচকে বললো কেনো?
ওমা আমার বাগানের কাজ করার কথা ভুলে গেলে?
প্রিয়া আর দাঁড়ালো না। মনে মনে শ’খানেক গালি দিয়ে প্রস্থান করলো সে।
পিছনে সৌরভ এক নির্মল কোমল হাসি দিলো। আজকের রাতটা অতীব সুন্দর।
চলবে,,,,,,,,,