#শত্রু_শত্রু_খেলা
#সূচনা_পর্ব
#মেঘা_সুবাশ্রী(লেখিকা)
দরজার সামনে দুই কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়া। তিনতলার করিডোরের মধ্যে দাঁড়ানো সে। সিঁড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় দুই’ একজন অবাক হয়ে প্রিয়াকে দেখছে আর মিটি মিটি হাসছে।
প্রিয়ার তো রা*গে পিত্তি জ্ব*লে যাচ্ছে। ল*জ্জা আর রাগে মুখ কালো করে রেখেছে।
প্রিয়া মাত্রই কলেজ থেকে ফিরেছে। আর এসেই মায়ের রা*গী চেহারার সম্মুখীন হলো। সে তার মাকে প্রচুর ভ*য় পায়। মায়ের রাগী মুখ দেখে ভয়ে আর কিছু বলতে পারলো না। ছাদের বাগান থেকে দুইটা ফুল ছিঁড়ার অপ*রাধে প্রিয়ার নামে তার মায়ের কাছে নালিশ করেছে বাড়িওয়ালার ব*জ্জাত ছেলে সৌরবিদ্যুৎ। তার মাও রে*গে তাকে কর্কশ ভাষায় বলেন—
“দরজার সামনে দুই কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবি। ১৭ বছর বয়স তাও এখনো বাচ্চামো যায়নি। অন্যের গাছের ফুল ছিঁড়তে তোর ল*জ্জা লাগে না। আমি যতক্ষণ না বলবো ততক্ষণ পর্যন্ত নড়বি না।”
মা’কে তো কিছু বলতে পারছে না তবে মনে মনে সে ভেবে নিয়েছে ঐ ব*জ্জাত ছেলেকে দেখে নিবে। দুইটা ফুল ছি*ড়েছে বলে তাকে এত বড়ো শা*স্তি দিল।
প্রিয়াকে এভাবে দরজার সামনে দেখে বাড়িওয়ালার বউ নাজমা জিজ্ঞেস করলেন কিরে মারিয়া, প্রিয়া’কে তুই এভাবে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস কেনো?
প্রিয়া নাজমাকে দেখে ভীষণ ল*জ্জা পেলো। হাত নামানোর জন্য হাঁসফাস করছে। কিন্তু মায়ের অ*গ্নি দু’চোখ দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
নাজমা এসে প্রিয়ার দু’হাত নামিয়ে দিলেন। মারিয়াকে কিছুক্ষণ বকলেন। তার ছেলে বিচার দিয়েছে বলে’কি এত বড়ো একটা মেয়েকে এভাবে কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবে? ব্যাপার টা ল*জ্জাজনক। প্রিয়ার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন নাজমা। যা মা তুই ঘরে যা।
প্রিয়া রুমে এসে নিজের মাথায় চাপ দিল। কীভাবে এই ছেলেকে শায়ে*স্তা করবে? বাবা-মা দুইজন কতো ভালো আর এই ছেলে এতো ব*জ্জাত কোত্থেকে হলো প্রিয়ার মাথায় আসে না। আপাতত মাথা ঠান্ডা করার জন্য ফ্রেশ হতে গেলো।
দুপুরের খাবার প্রিয়ার গলা দিয়ে নামলো না। তার মায়ের সেই অ*গ্নি দৃষ্টি এখনো তার দিকে। রুমে দরজা দিয়ে বসে আছে সে। তার বাবা নিজে প্রিয়ার রুমে খাবার নিয়ে আসলেন।
দুইটা ফুল ছিঁ*ড়লে কেউ চো*র হয় না। যদি অন্যায় করে আরও কত শা*স্তি আছে তাই বলে এভাবে দরজার সামনে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবে। মেয়েটা কি এখন ছোটো?
আনোয়ার মারিয়াকে কিছুক্ষণ বকাঝকা করলেন। তারপর নিজে মেয়ের জন্য খাবার নিয়ে খাইয়ে দিলেন।
_________________
বিকেলে বারান্দায় বসে আনমনা হয়ে প্রিয়া বসে আছে। সে হাজার খুঁজেও একটা বুদ্ধি বের করতে পারেনি। তিনতলার এই বারান্দা থেকে রাস্তার সবকিছু দেখা যায়। সে বসে গাড়ি গুনছে কতগুলো গাড়ি গিয়েছে আর কতগুলো রিকশা যাচ্ছে। আচমকা তার চোখ পড়লো পাশের বারান্দার দিকে।
পাশের বারান্দা ব*জ্জাত ছেলেটার। সেখানে ঐ ছেলেটা অনেকগুলো আন্ডারওয়্যার শুকাতে দিয়েছে।
প্রিয়ার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি আসল। সে দ্রুত রুম থেকে একটা বাঁশের কঞ্চি(লাঠি) নিয়ে আসল। তার বারান্দায় কাঁটামুকুটের গাছ ছিল। সেখান থেকে কিছু কাঁ*টা নিয়ে নিল। একটা পলিতে ভরে বাঁশের কঞ্চিতে বেঁধে তারপর আন্ডারওয়্যার বরাবর নিয়ে গিয়ে সেগুলো তার ভিতরে প্রবেশ করালো।
কিছুদিন আগে ঘুরতে গিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে সে বাঁশের কঞ্চি নিয়ে এসেছিলো। এখন সেগুলো তার কাজে লাগালো। বাহ্! বেশ বুদ্ধি রে তোর প্রিয়া। নিজেই নিজের প্রশংসা করল।
সন্ধ্যায় পড়তে বসেছে। প্রিয়া হাঁসফাস করছে কখন এই ছেলে আন্ডারওয়্যার পরবে আর কখন কাঁ*টাগুলোর গু*তো খাবে আর কখন চেঁচাবে। তার তো একদম তর সইছে না।
রাতে ঘুমাতে গিয়েও বেশ ভেবেছে এই ছেলের হা*ড়মজ্জা কিভাবে ভা*ঙবে। তারপর সেও মজা লু*টবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দাঁড়ালো প্রিয়া। আচমকা তার চোখ পড়লো বাড়িওয়ালার ছেলেটার উপর। সে মর্নিং ওয়াক করে বাসায় ফিরছে। প্রিয়া অতিদ্রুত কিছু একটা ভাবলো। কিন্তু খুব বেশি কিছু মাথায় আসলো না। তখন তার চোখ পড়লো পানির জগের উপর। এখান থেকে পানি ছুঁ*ড়ে মা*রলে বুঝার সাধ্য নেই কে মে*রেছে। কিন্তু কেলে*কারী একটা ব্যাপার হয়ে যাবে।
পানির জগ হাতে নিয়েও রেখে দিল। তাকে অন্যকিছু ভাবতে হবে।
_______
সৌরভ ছাদে এসে তার বাগানে প্রথমে গাছে পানি দিল। কিছু আগাছা ছিল তা পরিষ্কার করলো। গাছের পাতা ছিঁড়াও তার পছন্দ নয়। আর সেখানে ফুল হলে তো আর কথায় নেই। কিন্তু গত তিনমাস ধরে সে এটাই বুঝতে পারতো না তার গোলাপ ফুল কোথায় যায়?
পরশু তাই সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে এই ফুলচোর টা’কে ধরার জন্য। ভেবেছিলো কোনো বাচ্চা ছেলে-মেয়ে ফুল ছিঁড়েছে হয়তো। তবে তার এই ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়েছে। চিত্র পুরো উল্টো হয়েছে। সে ফুল চো*রকে দেখে বেশ অবাক হয়েছে। সেই থেকে রা*গের মাত্রা বেড়েছে।
এত বড়ো একটা মেয়ে তার বাগানের ফুল চু*রি করে রোজ। গত তিনমাস পর অবশেষে সে এই চো*রকে ধরেছে।
তাই তো বাধ্য হয়ে তার মা’কে নালিশ করেছে।
বাগানের পানি দেওয়া শেষ হলে নিচে নেমে আসে সৌরভ। কিন্তু তিনতলার মাঝামাঝি এসেই যেই সিঁড়িতে পা রাখবে পিচ্ছলা খেয়ে ধরাম করে পড়ে যায়। সৌরভ আহ্ বলে একটা বিকট চিৎকার দেয়।
চিৎকারের শব্দ শুনে মারিয়া আর নাজমা দুইজনে দরজা খুলে দেখে কে চিৎকার দিলো? নাজমা আর মারিয়ারা দু’জনে পাশাপাশি তিনতলায় থাকে।
মারিয়া এসে সৌরভকে ধরে উঠালো। নাজমা ছেলেকে কতক্ষণ বকলেন। এত বড়ো ছেলে তাও চোখ কান খোলা নেই কেনো? এভাবে সিঁড়িতে পড়ে কীভাবে?
মারিয়া সরিষার তেল গরম করে সৌরভের পায়ে মালিশ করে দিলেন। নাজমা তখনো ছেলেকে বকছেন।
সৌরভ মনে মনে ভাবছে অন্যকথা। সিঁড়িতে তেল উদয় হলো কোত্থেকে? কেউ ইচ্ছে করে ফেলেনি তো? কিন্তু কে হতে পারে?
মাসুদ ছেলেকে এভাবে দেখে মনে মনে হাসলেন। তার ছেলে ভীষণ খুঁতখুঁতো স্বভাবের। কিন্তু এখন বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। তবে হুটহাট পড়ে যাওয়ার মত ছেলে নয় সে। কাহিনী অন্যকিছু মনে হচ্ছে। কিছুটা টি*প্পনী মে*রে বললো
হুটহাট পড়ে যাওয়ার মত ছেলে তো তুমি নয়! তা সৌরভ পড়লে কি করে?
সৌরভ জানতো তার বাবা তাকে এই কথাই শোনাবে। সে নিজেও জানে না পড়লো কি করে? কিন্তু প্রচুর রা*গ উঠছে তার মাথায়? বাবার দিকে অ*গ্নিদৃষ্টি দিয়ে বলল
আমি কি আর একবার তোমাকে পড়ে দেখাবো বাবা’।
মাসুদ হু হা করে ছেলের কথায় হেসে দিলেন। তার ছেলের রা*গ সম্পর্কে তার ধারণা আছে। এখন আর কিছু বলা যাবে না।
“সৌরভ কীভাবে পড়ে গেলে তুমি? আমি নাজমার কাছে মাত্রই শুনলাম। অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। তোমার আন্টি বললো তুমি বেশ ব্যথা পেয়েছো। তা বাবা’ বেশি ব্যথা পেয়েছো। হাসপাতালে চলো তাহলে।”
আনোয়ারের কথা শুনে সৌরভ একটু ল*জ্জিত হলো। তার মত এত গম্ভীর স্বভাবের ছেলে পড়ে যাওয়া খুবই বিব্রতকর।
আনোয়ারের কথায় কি জবাব দিবে সে বুঝতে পারলো না। মুখে সামান্য হাসি রেখে বললো নাহ আঙ্কেল বেশি ব্যথা পায়নি, সেরে যাবে এমনিহ। আন্টি আমাকে মালিশ করে দিয়েছে। তাই ব্যথাও কমে গেছে।
আনোয়ার মনে মনে স্বস্থি পেলেন। যাক তাহলে বেশি ব্যথা পায়নি।
আনোয়ার চলে গেলেও পুরো বিল্ডিং এর মানুষ জড়ো হতে লাগলো সৌরভকে দেখতে। সৌরভ মনে মনে বির*ক্ত হলেন। কি এমন হয়েছে যে তাকে দেখতে হবে? ডান পা নাড়িয়ে দেখলো বেশ ব্যথা পেয়েছে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতে চাইছে না সে ব্যাথা পেয়েছে। পায়ের ব্যথা নিয়ে সে সোফায় বসে আছে।
শোভা ভাইয়ের পাশে বসে মিট মিট করে হাসছে। হাতে রুটি আর ভাজির প্লেট। সৌরভকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে ভাইয়া নাস্তা খাবে না। কিন্তু সৌরভের একরোখা জবাব সে এখন খাবে না।
শোভা খাচ্ছে আর ভাইকে আড়চোখে বার বার দেখছে। সৌরভ বোনের মনোভাব বুঝতে পেরে তার দিকে কপাল কুঁচকে তাকালেন। কিছুটা রে*গে বললেন কি সমস্যা তোর? এভাবে পাগলের মত হাসছিস কেনো?
শোভার ভাইয়ের এমন আচরণে ফের হাসি ফেলো। কিন্তু সে আর হাসলো না। মনে মনে বললো ভাই তোমার বাম ঠিক আছে। তবে মুখে বলল ভাইয়া তোমার পা ঠিক আছে। আজ ভার্সিটি কিভাবে যাবে?
সৌরভ নিজেকে ফিট দেখাতে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো। এখানে বেশিক্ষণ থাকলে সে পা*গল হয়ে যাবে। ভার্সিটিও যেতে হবে। আবার তার কোচিংও করাতে হবে। পায়ের ব্যথাকে অগ্রাহ্য করে রেডি হতে লাগল ভার্সিটির উদ্দেশ্য।
______________
প্রিয়ার দ*ম ফে*টে যাচ্ছে হাসিতে। যাক অবশেষে এই ছেলেকে একটা শিক্ষা দিতে পেরেছে। আহ্! কি শান্তি লাগছে তার। মনে মনে নিজেকে নিয়ে বেশ বড়াই করলো। “প্রিয়া তু গ্রেট হো”।
গুনগুন সুরে গান গাইতে লাগলো—
আকাশে বাতাসে চল সাথি উড়ে চল
ডানা মেলেরে,,,
“তুই কি করছিস এখানে? পাগ*লের মত হাসছিস কি জন্য রে? আর কিসের শান্তির কথা বলছিস?”
মায়ের কঠিন ধমকে গান থামিয়ে থমকে যায় প্রিয়া। বি*স্ফোরিত চোখে মায়ের দিকে তাকালো তার মা আবার বুঝে যায়নি তো! ঐ সৌরবিদ্যুৎ এর পড়ার পিছনে তার হাত আছে। আজকে প্রিয়া তুই শেষ। মনে মনে দোয়া পড়লো,
আল্লাহ আজকের জন্য মাফ করে দাও। আর জীবনেও এমন কাজ করবো না।
চলবে,,,,,,,