#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৯
ইফা করুন চোখে ডান হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।।একটুও হাত নাড়ানোর শক্তি খুঁজে পাচ্ছেনা।। একটু আগে ডাক্তারের কাছে গিয়ে কিছু চেস্ট করে এসেছে।। ডাক্তারের ধারণা হাতের কব্জির জোড়ায় সামান্য চিড় হয়েছে।। ইফা যখন জ্ঞান হারিয়েছিল ,, তখন একটু এলোমেলো ভাবে নিচে পড়েছিল।।তাই হাতের কব্জি বেকায়দায় পড়েছিল।। ফলশ্রুতিতে হাতের উপর আঘাত পেয়েছে।। এই নিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছিলো ইভু ।।রৌধিকেও অনেক কথা শুনিয়েছে।।
অকের্য হাতটা দিয়ে গভীর ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।।আগের থেকে বেশ ফুলে গেছে।। জায়গায় একদম কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছে।।জ্ঞান ফেরার পর থেকে কাউকে কিছু জানায়নি।।মুখ চেপে ব্যাথাটা সবটা সহ্য করে নিয়েছে।।ইভু ইফার হাত পর্যবেক্ষণ করতে পেরে হসপিটালে নিয়ে যায়।। হঠাৎ নিজের হাতের উপর কারো তৈলাক্ত চিপচিপে হাত আবিষ্কার করলো।।হাতটা স্বযত্নে ইফার হাতের উপর হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।। হাতের অংশিধারীকে দেখার উদ্দেশ্যে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো ইফা।।তার দু ইঞ্চি দূরে রৌধিক দাঁড়িয়ে আছে।। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ।।হয়তো নিজের করা কাজের অনুসূচনা হচ্ছে।। কিন্তু রৌধিকের ছায়াটা দেখার বিন্দুমাত্র আগ্রহ খুজে পাচ্ছে না ইফা।। চটজলদি বালিশের উপর থেকে নিজের বেদনা প্রহার হাতটা সরিয়ে নিল।। খানিকক্ষনের জন্য মাথা থেকে ব্যাথার কথাটা বেরিয়ে গিয়েছিল।। প্রক্ষান্তরে ,, হাতে টান পড়াতে ব্যাথাটা চাড়া দিয়ে উঠলো।। আহহহ করতে গিয়েও নয়ন যুগল বন্ধ করে ঠোঁট চেপে আঘাতটা সহ্য করে নিল সে।।চোখ খুলে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিল।।এখন আগের মতো বেশী কথা বলে না ,, কথায় কথায় ঠোঁট প্রশস্ত করে মাতাল করে হাসে না।।এখন ক্ষণেক্ষণে ঘনঘন নয়ন যুগল বন্ধ করে নেয়।।কেউ কথা বললে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।।কথায় কথায় নাক ফুলিয়ে লাল করে ফেলা ।। এগুলো এখন নিতৃদিনের অভ্যস।।সকলের দৃষ্টি এড়াতে গরম কফির কাপটায় চুমুক দিল।। আকস্মিক ঘটা এমন দূর্ঘটনার জন্য ঠোঁটের উর্ধ্বে পুরু চামড়াটা মুহূর্তেই লালচে হয়ে উঠলো।।ডান হাতের তর্জনীটা অধরের উপর রাখতে মৃদু চিৎকার করে উঠলো সে।। একদিকে হাতের ব্যাথা অন্যদিকে ঠোঁটের দূর্ঘটনায় নিজেকে সামলাতে পারবো না।।
এতোক্ষণ ইফার ইগনোর অসহায় চোখে দেখলেও এবার আর সহ্য করতে পারলো না।।।দুকাধে হাত রেখে ইফাকে নিজের খুব কাছে টেনে নিল ।।হাতের দিক পরিবর্তন করে গালে রেখে ফুঁ দিতে লাগলো।।
রৌধিকের এমন ব্যবহারে কেঁপে কেঁপে উঠছে ইফা।।উষ্ণ গরম হাওয়ায় পুরো শরীরে পশম দাঁড়িয়ে গেছে।। আবেশে নয়ন আবেষ্টিত করে নিল ইফা। হার্ট বিট দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে ।।বাহিরে থেকে যেকেউ সেই ধুকপুকানি শুনতে সক্ষম হবে।।
— আপনার ধারণা,, পৃথিবীতে সবকিছু টাকা দিয়ে পাওয়া যায়।।একটা কাজ করুন আপনার কিছু টাকা আমাকে দিয়ে দিন।।আমি নাহয় বাইরে থেকেই কেয়ার গুলো কিনে নিব।।
কথাগুলো বলেই রৌধিকের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল ইফা।।রৌধিকের দিকে তাকালেই সেদিকার দৃশ্য গুলো ভেসে উঠছে।।ইফার দমবন্ধ বিহেবে রৌধিকের উপলব্ধি করতে সমস্যা হলো না ,, সেদিনের টাকা দেওয়া বিষয়টাকে ইঙ্গিত করছে।।
___________________
হাসির শব্দে আহম্মেদ বাড়ি কম্পিত হচ্ছে।।আড্ডায় মেতে উঠেছে মহল।। কিন্তু সেখানে কোনো যোগসূত্র নেই ইফা।।সে শান্তমনে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও তার কিছু যায় আসে না।।টু সিটের এক সোফায় আদ্রিক আহম্মেদ এর পাশে বসে আছে ইফা।। আদ্রিক আহম্মেদ জোর করে তার পাশে ইফাকে বসিয়েছে।। চাইলেও ইফা এখান থেকে উঠতে পারছে না।।এখানে কি এই বাড়িতেই থাকতেও চাইছে না।।বাড়িটা রাজপ্রাসাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।।বিদেশী টাকায় তৈরি করা।। দেয়ালের মাঝে আদ্রিক আহম্মেদ আর ইমতিয়াজ আমহৃদ এর ছবি বড় করে বাঁধিয়ে রাখা।। প্রথমবার যখন এই বাড়িতে পা রেখেছিল,,তখন বাড়িটা ভালোভাবে খেয়াল করেনি ।।ইফার সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে রৌধিকের রুমের বেলকেনিটা।।সেখান থেকে ফুলে ফুলে ভরা বাগান,, ছোট একটা নদী দেখা যায়।।ইফার ভাবনার মাঝেই হুরমুর করে বাড়িতে ঢুকলেন এক ভদ্রলোক।। ইশারায় ইফাকে উঠে অন্যকোথাও বসতে বললেন ।।পড়নে ব্ল্যাক সুট,,, মাথায় পালোয়ানদের মতো ব্ল্যাক টুপি।।বয়স পঞ্চাশ উর্ধ্বে।। মোটা সরু ঘুটঘুটে কালো গোঁফ।। নির্ঘাত কার্লার ইউস করে এতো কালো করেছে।।দেখতে সার্কাসের জোকারের চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছে না।। পেছনে একজন স্বল্প বয়সী তরুন যুবক দেখা যাচ্ছে।।হয়তো ইনি তার এসিস্ট্যান্ট।।
ইফা উঠে পাশের সোফায় বসে পড়লো।।ইফা উঠতেই বিনা বাক্যয় জায়গাটা তিনি দখল করে নিলেন।। এসিস্ট্যান্ট ব্যাগ থেকে একটা ল্যাপটপ বের করে লোকটার দিকে এগিয়ে দিলেন।। বললেন…
— এখানে আনুমানিক ২০০- ২২০টি ছবির মতো আছে।।সবাই তোর মতো নামকরা বিজন্যাস ম্যান ।। ছবিগুলোর সাথে বায়োডাটা দেওয়া আছে ,, যেটা পছন্দ হয় সিলেক্ট করে জানিয়ে দিবি ।।আর পছন্দ না হলে জানাবি আরো পাত্রী আছে।।
আদ্রিক আহম্মেদ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ইমতিয়াজ আমহৃদ কে উদ্দেশ্য করে বললেন..
— রৌধিকের বয়স কম তো হলো না ,, এই নিয়ে হাজার হাজারটা পাত্রী দেখা পেরিয়ে গেছে।। কিন্তু পাত্রী পছন্দ হচ্ছে না বলে ,, নাকোচ করে দিয়েছে।।তাই জলিলকে ডেকেছি।।।
ইমতিয়াজ আমহৃদ কিছুক্ষণ কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জলিল নামক লোকটার দিকে।।এই মানুষটিকে তার বড্ড চেনা লাগছে ।।কোথাও একটা দেখেছে ,, মনে পড়ছে না।। ২৯ পাটির দাঁত বের করে শব্দ করে হাসলেন জলিল ।। দাঁতগুলো একদম বিশ্রী ধরনের টকটকে লাল রঙের।। দাঁত ব্রাশ করা হয়না কতোদিন হিসেব নেই।। দাঁতের এমন বিশ্রী অবস্থা দেখে একটা ইচ্ছে জাগলো ইফার মনে ।।একদম ভয়ংকর ইচ্ছে।।ওয়াশরুম পরিস্কার করার নোংরা ব্রাশ দিয়ে লোকটার দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিতে ।।যদি তাতে দাঁতের একটু উন্নতি হয়।।তাহলে হয়তো রাতারাতি পরিচিতি পাবে ইফার এই টেকনিক।। সব জায়গায় টুথপেস্ট,, টুথব্রাশ রেখে ইফার তৈরি করা ফলমূলা ছরিয়ে পড়বে।।
— আরে ওকে চিনতে পারলি না।।ও তো জলিল ।। আমাদের শিক্ষক জামাল স্যারের ছেলে ।।এখন ঘটকালি করে।।
আদ্রিক আহম্মেদের কথায় দ্বিধায় ভুগছেন ইমতিয়াজ আমহৃদ।।একেই হয়তো বলে ,,আকাশ থেকে পড়ে খেজুর গাছে আটকে যাওয়া।। এটা কিভাবে সম্ভব ,, ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্রটা শেষে কিনা …!! ভাগ্যের কারনে হয়তো এমন হয়েছে।।ইফার পছন্দ হলো না জলিল নামক লোকটাকে।। এমনিতে জোকারের পোশাক পড়ে এসেছে।।হাতে ছাতা নেই।।প্রাচীন প্রান্থা অনুযায়ী ,, ঘটক চেনার বেস্ট উপায় কালো ডাট ওয়ালা লম্বা ছাতা।।সাথে আবার এসিস্ট্যান্টও আছে।।একেই হয়তো বলে ডিজিটাল ঘটক।।
জলিলকে দেখে বিরক্তিকর ভাঁজ ফুটে উঠলো রৌধিকের মাথায়।।লোকটাকে কতোবার থ্রেট করেছে,, তার হিসেব নেই।।তবুও বেহায়ার মতো আহম্মেদ বিলায় ছুটে আসে।।রৌধিক ক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিয়ে জলিল আর আদ্রিক আহম্মেদের মাঝখানে বসে পড়ল।।।টুসিটের সোফায় তিনজনের বসার একটু চাপাচাপি হওয়ার কথা থাকলেও হলো না।।রৌধিক একদম সেঁটে বসেছে জলিল ঘটকের দিকে।।লোকটার দম যায় যায় অবস্থা।। তবুও মুখে সৌজন্যে হাসি রেখে উঠার চেষ্টা করলেন।। রৌধিকের চেষ্টায় প্রায় মিনিট পাঁচেক পর উঠতে সক্ষম হলেন।।রৌধিক বাবার কাঁধে হাত রেখে বললো..
— বাবা দেখ ,, আমি এখনো তোমার টাকায় খাই ,, পড়ি ।। নিজে উপার্জন করা এখনও শিখি নি ।। কোন বাবা তার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবে।। তাছাড়া আদ্রিতার বয়সও কম হলো না।। তুমি আদ্রিতার বিয়েটা আগে দাও ….!!
কিছুক্ষণ মৌন্যতা অবলম্বন করলেন আদ্রিক আহম্মেদ।। তিনি রৌধিকের কথার সাথে একমত।।আদ্রিতা ইভুর দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।।এই মুহূর্তে রৌধিকের মাথায় হাজারটা বেল ভাঙতে ইচ্ছে করছে।।ইভুও লোকটার প্রতি চরম বিরক্ত…!!
— জলিল তুই রৌধিকের পাত্রী দেখা বাদ দিয়ে আদ্রিতার …
— আহহ বাবা ,, নিজের ঘরে ছেলে থাকতে অন্যদিকে তাকাচ্ছো কেন।।এদিকে তাকিয়ে দেখ ,, আদ্রিতা আর ইভুকে কতো সুন্দর লাগছে ।।আঙ্কেল আদ্রিতাকে নিজের মেয়ের মত দেখে ।। অনেকদিনের বন্ধুত্ব তোমাদের।।বেয়াই হবে ,, তখন আদ্রিতার শ্বশুরকে নিয়ে তুমি ব্যস্ত থাকলে।। আঙ্কেল তার বেয়াইকে নিয়ে।দেখা যাবে তোমাদের বন্ধুত্বে আবার ফাটল ধরল ।।তাই বললাম আর কি…??
কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো মাঝখানে ।।কোথাও না কোথাও রৌধিকের কথা ঠিক।। অতঃপর সবাই রাজি হলেন দুজনের বিয়ে দিতে।।
__________________
কাবার্ড থেকে খুঁজে পরপর তিনটে শার্ট বের করলো রৌধিক।।এই ৩ টা শার্ট তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়।।একটাও পরার মতো অবস্থায় নেই।।প্রতিটা দাগে ভরপুর।।কোনো অদ্ভুত মুহূর্তের স্বাক্ষী।। প্রথমটায় কাঁদার দাগ ,, দ্বিতীয়টায় রক্তের দাগ ,, তৃতীয় টায় নেলপলিশের দাগ ।। শার্ট গুলো চিবুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে।। মনে হচ্ছে ইফা গভীর ভাবে তার সাথে মিশে আছে।।নাহয় রাগের বশে একটু বলেছিল ,, কাছাকাছি না আসতে।।তাই বলে সত্যিই আসবে না।।আচ্ছা মেয়েটা কি তার অভিমান গুলো বুঝতে পারে নি।। শব্দকরে চুমু খেল শার্টের উপর ।।
২ দিন হয়েছে ইফারা তাদের বাড়িতে ফিরে গেছে।।যতক্ষন এখানে ছিল যথাসম্ভব ইফার অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করছে ।। কিন্তু সব বৃথা।।
— ভাইয়া এইসব কি করছিস তুই ?? (চোখে হাত দিয়ে আদ্রিতা)
বোনের সামনে চরম লজ্জায় পড়ে রৌধিক।।আদ্রিতার হাত ধরে পাশে বসিয়ে দিলো করুন সুরে বললো…
— আদ্রু ,, বাবাকে বলে তাড়াতাড়ি আমার বিয়েটা দিয়ে দে না ।।প্লীজ ….!! আমি বিয়ের অভাবে দিনদিন পাগল হয়ে যাচ্ছি।।
চলবে…🎀🎀