শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-০৮

0
1110

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৮

সেই কখন থেকে কান ধরে উঠবস করছে ইভু।। হাত পায়ের অবস্থা বেসামাল।।ব্যাথায় টনটন করছে।। রুমে আসার পর থেকে ইফার রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।। কিন্তু তাতে কোনো হেলেদুলে নেই ইফার।।সে শান্ত মনে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছে চলেছে।। ইভু ইফার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বললো…

— “দেখ বনু,, এবারের মত মাপ করে দে..!! আই প্রমিস,, আর কখনো তোকে বলবো না।। শরীরটা ব্যাথায় টনটন করছে” ।।

— “আমি তোকে একবারও বলেছি ,, এভাবে কান ধরে সার্কাজ দেখাতে।।তাই তোর শরীর ব্যাথা করলে আমি কি করতে পারি”,!!( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ইফা)

— “প্লীজ বনু এভাবে বলিস না।। আমি সত্যিই দুঃখিত ।।(পকেট থেকে কয়েকটা চকলেট বের ইফার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো) দেখ তোর জন্য কতো গুলো চকলেট এনেছি।। সবগুলো শুধু তোর”।।

— “আমি কি একবারও বলেছি ,,, আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসতে।। তাছাড়া আমি বাচ্চা নয় ,, ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে।। একজন এডালফ্ট মেয়েকে চকলেট হাতে মানায় না”।।( অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ইফা)

ইভুর বুঝতে বাকি রইল না।। সেদিনাকার ইমতিয়াজ আমহৃদ এর কথাগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছে।। ইফার এমন বিহেবে কষ্ট হচ্ছে ইভুর।।তবুও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।। আজ যেভাবে হোক ,, ইফার রাগ সে ভাঙিয়েই ছাড়বে।।ইফাকে টেনে বেডের উপর বসিয়ে দিলো।।ড্রেসিং টেবিল খুঁজে সব কসমেটিক গুলো একে একে ইফার সামনে সাজিয়ে রাখলো।।ইফা বিরক্তিকর চোখে কসমেটিক গুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল।।এক মাসে পেরিয়ে গেছে এই কসমেটিক গুলো তার ছুঁয়ে দেখা হয়না।।অথচ একসময় এগুলো ছাড়া তার দিন কাটত না।। ইভু ইফার ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে একটা রেড কালার নেলপলিশ নিয়ে ইফার হাতে লাগিয়ে দিল।। নখের উপর ঠান্ডা ভেজা জাতীয় কিছু অনুভব করাতে হাত সরিয়ে নিল সে।। বুঝতে অসুবিধা হলো না,, ইভু স্বযত্নে নেলপলিশ লাগিয়ে দিচ্ছে।।

— “মানুষের মাথায় রাগ উঠলে ,, সে কিনা করতে পারে না।। সেদিন আমার মাথাও রাগ উঠে গিয়েছিল…

— “তাহলে আমার রাগটা কি যথেষ্ট ছিল না।। তুই তো আমাকে কোনোরুপ ওয়ার্নিং দিস নি ।। কিন্তু আমি দিয়েছিলাম।। শুধু একটা ভুলের জন্য আমার প্রিয় নেইলগুলো কাটতে হলো।।শারীরিক + মানসিক আঘাত সহ্য করতে হলো।। একমাস পর এসেছিস আমার রাগ অভিমান ভাঙাতে।।আমি কারো উপর কোনো অভিমান করিনি।।প্লীজ এখান থেকে যা…!!

কথাগুলো বলে দাড়ালো না ইফা।। চঞ্চল পায়ে বেলকেনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।। কথাগুলো তখন গলায় পেঁচিয়ে নয়নের নীড় হয়ে বেরিয়ে আসে চাইছিল।।বড্ড কষ্ট হচ্ছিল ,,, ভাইয়ের উপর রেগে থাকতে।। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করেছে।। হঠাৎ প্রচন্ড জোরে সাউন্ড সিস্টেম বাজার কারনে হুশ ফিরল তার।।মনে হচ্ছে এই বুঝি বেলকেনির ফ্লোর ভেঙ্গে নিচে পড়ে গেল।। বক্ষে থু থু ছিটিয়ে রুমের মধ্যে ফিরে এলো ।।ইভু সাউন্ড সিস্টেম অন করে উড়ুম ধরুম নাচছে।।বোনের রাগ ভাঙাতে এমন উদ্ভর কাজ করছে ইভু।। চোখ গোলগোল করে ইভুর দিকে তাকিয়ে আছে।।তার ভাবনার মাঝেই রুমে প্রবেশ করলেন রুমকি ।।হাতে খাবারের প্লেট ।। অতি সাবধানে প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে সেও ইভুর সাথে ডান্স শুরু করে দিয়েছে।।পড়নে শাড়ি থাকার কারনে খুলে খুলে যাচ্ছে।।তাতে কোনো প্রভাব পড়ছে না রুমকির মধ্যে ।।সে দুহাতে শাড়ি ধরে ইভুর সাথে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।এই মুহুর্তে এক্সজেকলি ইফার কি করা উচিত বুঝতে পারছে না।। ইতিমধ্যে ইভু ইফার হাত টেনে দুজনের মাঝখানে এনে দাঁড় করিয়ে দিলো।।ইফার তার ভাই আর মায়ের উদ্ভর নাচ দেখে আর রাগ করে থাকতে পারেনি। একসাথে তিনজনে নাচ শুরু করে দিল…….

🎶🎶 দিলকে কিল করে আজ করবো করবো চিল,,
জাস্ট চিল 🎶🎶

||||||

— “হয়েছে ,, অনেক হয়েছে আমাদের নাচ ।। আর পারছি না।।এবার আয় দু’জনে খাবার খেয়ে নিবি।। ইফা সারাদিন কিছু খায়নি”।।(ঘনঘন শ্বাস নিয়ে রুমকি)

— “কি বলছ,, বোনু আজকে কিছু খায়নি”।

রুমকির কথায় হুশ ফিরল ইভু ।। কিন্তু এখনও স্ফুরন ভাবে নেচে যাচ্ছে ইফা।। ইভু ইফাকে থামিয়ে দিয়ে ,, নিজের হাত খাইয়ে দিতে লাগলো।।আর রুমকি দাঁড়িয়ে ভাই বোনের অফুরন্ত ভালোবাসা গুলো দেখছে।।
________________________
নদীর পাড়ে শান্ত মনে বসে আছে ইফা।।চোখের গভীর আকর্ষণ নদীর এলোমেলো স্রোত ধারার মধ্যে।। হঠাৎ হঠাৎ নদীর তীরে আঁচড়ে পড়া ঢেউ গুলো খুব ভালো লাগছে।।কখনো জলরাশি গুলো একত্রিত হয়ে বিশাল বিশাল ঢেউয়ের সৃষ্টি করে ।। আবার কখনো কখনো একটার উপর আরেকটা ঢেউ খেলে প্রবাহের দিক পাল্টে দিচ্ছে।। ভার্সিটিতে যাওয়ার কথা থাকলেও যাওয়া হয়নি আজ।।সবাই আদ্রিক আহম্মেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।। হাজার বার বলার পরেও যায়নি ইফা।।এই নিয়ে ইমতিয়াজ আমহৃদ একটু রেগে আছে ।। তিনি নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত।।চেয়েছিলেন ইফার সাথে সব মনমালিন্য দূর করে রৌধিক আর আদ্রিতার সম্পর্কটা আগের মত স্বাভাবিক করে দিতে।। কিন্তু ইফা নাকোচ করে দিয়েছে।। প্রথমবার বাবার কথা অমান্য করেছে তাই মনটা তার বেশ খারাপ ।।মন ভালো করতে এখানে আসা‌।।কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকালো সে।।বড় সাইজের একটা টেডি বসে আছে।।দেখা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ,, এটা টেডি নয় ।।টেডির ভেতরে কেউ একজন বসে আছে।।ইফাকে বলার সুযোগ না দিয়েই বলতে শুরু করলো…

— “আমি কুকুর কে খুব ভয় পাই ।। আমার পেছনে একটা কুকুর পড়ছে ,, তাই বাধ্য হয়ে এদিকে ছুটে এসেছি” ।।(নাকে বাজিয়ে বাজিয়ে)

টেডির কথা শুনে ভুতুড়ে ঢোক গিলছে ইফা।।এখন যদি এখানে কুকুরটা চলে আসে ,, তাহলে ইফাকে আস্ত রাখবে না ।।দুজনের ভয়ের কারন কুকুর।।টেডি ছাড়া কাউকে আসেপাশে দেখা যাচ্ছে না।। এতোক্ষণে ঘেউ ঘেউ করতে করতে কুকুর টা তাদের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।।ভয়ে ভয়ে থরথর করে শরীর কাঁপছে ইফার ।।উপায়হীন হয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো টেডিকে।।টেডিটা দুহাতে ইফাকে জড়িয়ে ধরে সুরেলা কণ্ঠে বললো….

— “ভয় পেয় না ইফা ।। আমার গাড়ি আছে ,, চল আমরা এখান চলে যায়”।।

নিজের নামটা শুনে প্রচন্ড চমকালো ইফা।। স্পষ্ট মনে আছে,, এখন পর্যন্ত নিজের নাম বলে নি ।।তাহলে জানলো কিভাবে।।সেই কৌতূহলের চেয়ে ,, কুকুরের ভয়টা বেশী কাজ করছে ইফার মধ্যে।।টেডিটার আগেই দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে গেল ইফা।।সেদিনের পর থেকে গাড়ি ছাড়াই বের হয় ইফা।।হলো তার বিপরীত।।টেডিটা লাফ দিয়ে গাড়ির উপরে উঠে গেছে আর ইফার ডোর খোলার চেষ্টা করছে ।। সবগুলো চাবী দিয়ে লক করে রেখেছে।।কুকুরটা ছোট ছোট পায়ে ভর করে ইফার দিকে এগিয়ে আসছে।। ইফা পিছুতে পিছুতে গাড়ির সাথে লেপ্টে আছে।।ক্রমশ ভেতরের ভয় তাকে জোখে ধরছে।।চোখের সামনে ঝাঁপসা হয়ে অন্ধকার ধরা দিল।।জ্ঞান হারিয়ে নুইয়ে পড়লো রাস্তার মাঝখানে।।
ইফাকে জ্ঞান হারাতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল রৌধিক।। টেডির ড্রেসটা খুলে ,,উপর থেকে নিচে নেমে এলো।। গাড়ির লকটা খুলে ইফাকে ভেতরে বসিয়ে দিল।।‌ ব্যাক সিট থেকে খাবারগুলো বের করে কুকুরকে দিয়ে ,, ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো।। একটু ঝুঁকে ইফার সিট বেল্ট লাগিয়ে দিল।। এলোমেলো চুলগুলো দুহাতে সরিয়ে দিয়ে অদৃষ্টে অধর ছুয়ে দিল।।আলতো হাতে মাথাটা নিজের বুকে জরিয়ে ধরে ড্রাইভ করতে করতে বললো…

— “সরি মাই ইফুপরী ।।আই এম এক্সটেমলি সরি।।আমি জানি তুমি আমার উপর বড্ড অভিমান করে আছ?? সেটাই স্বাভাবিক।।তোমাকে মেন্টাল আঘাত করে আমার সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি দুঃখিত।।কি করবো বলো‌,, তুমি সোজাসুজি আমার সাথে যাবে না।।উল্টো সিনক্রেট করবে।তাই বাধ্য হয়ে এমনটা করলাম”।।

ইমতিয়াজ আমহৃদ এর কথার ধরনে বুঝতে অসুবিধে হয় নি রৌধিকের। ইফা তার উপর অত্যন্ত রেগে আছে।। সরাসরি আসলে ইফা রৌধিকের সাথে যেত না ,, তাই বাধ্য হয়ে কুকুরের ভয়টা দেখিয়ে নিয়ে এলো।। প্রথম কুকুরকে কিছু খাবার দিয়ে লোলুপ করে ইফা কাছে নিয়ে গিয়েছিল।। এরজন্যই হয়তো বলে ,, কুকুর গন্ধ শুঁকে শুঁকে সব জায়গায় পৌছাতে পারে।।

চলবে..🎀🎀

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে