#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৬
— “বাঁচাও,, প্লীজ বাঁচাও।।আমাকে মেরে ফেললো গো।।কে আছো প্লীজ হেল্প মি!! ভাইয়া….!! কই তুই তাড়াতাড়ি আয়” ।।(দৌড়াতে দৌড়াতে ইফা)
ডয়িং রুমে এসে লাফ দিয়ে রৌধিকের কোলে উঠে পড়লো ইফা।।দুহাত দিয়ে শক্ত করে রৌধিকের গলা পেঁচিয়ে ধরলো।।অপ্রত্যাশিত ভাবে ঘটনাচক্রে এভাবে ইফা জরিয়ে ধরাতে ফ্রিজড হয়ে গেল রৌধিক।।এতোশক্ত করে গলা পেঁচিয়ে ধরেছে,,যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে রৌধিকের ।।খানিকটা ঝুকেও পড়েছে বটে।।তবুও ইফাকে ছাড়ালো না।।মুখের সামনে থেকে ইফার এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দিল।। এতোক্ষণে কুকুর টাও ডয়িং রুমে এসে হাজির হয়েছে।।কুকুর টা তখনও অনবরত ঘেউ ঘেউ করে চলেছে।। কুকুরের আর্তনাদ শুনে হাতের বাঁধন আরো ধিড় হলো ইফার।।রৌধিকের শার্টের বোতামে একটু ব্যাথা পাচ্ছে,, কিন্তু তাতে ইফার কিছু বলার আসে যায় না।।পারলে রৌধিকের বুকের ভেতরে ঢুকে যেত।।এই মুহূর্তে একজনকেই সবচেয়ে বেশি ভয় করছে,,, সেটা হচ্ছে কুকুর।। খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গেছিল ইফার।।চোখ মেলে তাকাতেই কোমরের ব্যাথাটা চাড়া দিয়ে উঠলো।।তাই সকাল সকাল বেরিয়েছিলো একটু মর্নিং ওয়াক করতে।।রাস্তার মাঝখানে কুকুর দেখে ভয়ে নেতিয়ে গেল সে।।ছোট বেলায় কুকুরের সাথে ইফার বেশ ভাব ছিল।। কিন্তু পরবর্তীতে একবার ইফাকে কুকুরের কামড় সহ্য করতে হয়েছিল।।তখন থেকে কুকুরের প্রতি চাঁপা ভয় জমে আছে তার।। কয়েকটা ইটের টুকরা খুঁজে কুকুরের দিকে ছুঁড়লে,,, ইফাকে পাল্টা আঘাত করতে ধাবিত হয় সে।।ভয়ে সেখানে চিৎকার করে উঠলো।। কিন্তু তার চিৎকারে বৃথা গেল।। নিরুপায় হয়ে দৌড়ে বাড়ির দিকে ছুটে আসে।।আর তার পেছনে পেছনে কুকুরটা।।
— “বোনু ভালোভাবে দেখ ,, কুকুরটা চলে গেল!!একটু পানি খেয়ে নে ভালো লাগবে”।।(ইফার মাথায় হাত বুলিয়ে ইভু)
ইভুর গলা শুনে নিভু নিভু চোখে পেছনে ফিরে পরখ করে নিলো।।ইভুর হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে চুমুক দিল।। নিজেকে রৌধিকের কোলে অনুভব করে না পারছে পানি খেতে না পারছে ফেলে দিতে।। গোলগোল চোখ করে শুধু রৌধিকের দিকে তাকিয়ে আছে।।এতো সকালে হঠাৎ রৌধিক এই বাড়িতে কি করছে কিছু বুঝতে পারছে না।। ভাবনার মাঝেই কাশি শুরু হয়ে গেলো তার।।ইফার মাথায় তিনটা চপল মারলে,, কিছুটা শান্ত হলো সে।।চটজলদি রৌধিকের কোল থেকে নিচে নেমে জামা কাপড় ঝাড়তে লাগলো।। এক্সজেকলি কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছে ।।যে ইভু রৌধিককে এক বিন্দু সহ্য করতে পারে না ,, তাকে কিছু বলছে না কেন??
–” সামান্য একটা কুকুর দেখে ,,এভাবে গরুর মতো চেঁচাচ্ছো,,লাফ দিয়ে আমার কোলে উঠে গেলে ।।আর একটা বাঘ দেখলে কি ডায়নোসরের মতো চেঁচাতে”!!(একটু ভাবার অভিনয় করে রৌধিক)
— “আসলে গরুকে ডাকতে গরুর মতো চেঁচাতে হয় ,, আর ডায়নোসর কে ডাকতে হলে ডায়নোসরের মতো।।আর এখন আমার গরুকে দরকার ছিলো,, তাই গরুর মতো চেঁচিয়েছি”!!(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ইফা)
— ”ভাইয়া ,, শেষ পর্যন্ত তোকে গরু বানিয়ে দিল”!!
বলেই শব্দ করে হেসে দিল আদ্রিতা।।আদ্রিতার কথা শুনে বুঝতে বাকি রইল না,, এটাই তার ভাই রৌদু।।যার বাচ্চার মা বলে ধারনা করেছিলেন তাহমিনা।।লজ্জা তাকাতে পারছে না।। কিভাবে এতোক্ষণ রৌধিক কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ছিল।।
_______________
🎶🎶 আমাকে আমার মত থাকতে দাও,,
আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি…..!!!
আমাকে আমার মত থাকতে দাও,,,
আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি
যেটা ছিলনা ছিলনা সেটা না পাওয়াই থাক
সব পেলে নষ্ট জীবন ।।।
তোমার এই দুনিয়ার ঝাপসা আলোর
কিছু সন্ধ্যের গুড়ো হওয়া কাঁচের মতো
যদি উড়ে যেতে চাও তবে গা ভাসিয়ে দিও
দূরবীনে চোখ রাখবো ,, না-না-না……
না-না-না-না……….. না-না-না-না……..
এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার
আমি গল্প লিখছি বাঁচবার
আমি রাখতে চাই আর তার
কোনো দিন দুপুরের আবদার
তাই চেষ্টা করছি বারবার
সাতরে পাড় খোঁজার……..!?!🎶🎶
এইটুকু গান গেয়ে থামলো ইফা।।পূর্ণরায় গরম কফির কাপে হালকা ঠোঁট ছুঁয়ে চুমুক দিল।। হাত বাড়িয়ে মৃদু শব্দ করে কাপটা গ্ৰিলের উপর রাখলো ।। ওয়াইট কার্লার নেলপলিশ টা নিয়ে স্বযত্নে নখের উপর ব্রাশ করতে লাগলো।।দুটো নখের নেলপলিশ দিয়ে আবার কফির কাপে চুমুক দিল।। হঠাৎ করেই দক্ষিনা হাওয়ায় বয়তে শুরু করলো।। কালবৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে।। চঞ্চল নয়ন জোড়া ধীরে বুজে নিলো।। সন্ধ্যার এই ঠান্ডা হিমেল হাওয়া এক অদ্ভুত অনুভূতি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।।সারা শরীরের পশম গুলো দাঁড় করিয়ে দেয়।।এটা ইফার রোজকার দিনের অভ্যাস।। এক কাপ কফির সাথে গোধূলি উপভোগ করা ,, মন খুলে গান গাওয়া।। সন্ধ্যার হাওয়া অনুভব করা।।
চারদিকে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।। তবুও দিনের মৃদু আলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।। আকাশে সূর্য নেই ,,আরো অনেক আগে তলিয়ে গেছে।।পাখিরা তাদের বাসায় ফিরে গেছে।।আকাশে মেঘের আস্তরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।।তবে বৃষ্টি হওয়ায় চান্স নেই বললেই চলে।। পায়ের শব্দে বেষ্টিত করা রাখা আঁখি জোড়া অবারিত করলো ইফা।। চোখ বন্ধ অবস্থায় ,, হালকা শব্দ গুলো গভীর ভাবে উপলব্ধি করা যায়।।যারা চোখে দেখতে পায় না,, তারা উপলব্ধি করে সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে।।তার পাশে রেলিং এ ভর করে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিতা।।দৃষ্টি দূর আকাশের রক্তিম অস্তগুলোর দিকে।। নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিতা বললো…
— “আমি তোমাকে সেই কখন থেকে খুঁজেছি।। কিন্তু কোথাও দেখতে পেলাম না।। তারপর ছাদে এলাম ,,,,আর এসে দেখি তুমি ছাদে।।আচ্ছা একা একা ছাদে আসো ভয় করে না”??
আদ্রিতার কথায় ঠোঁট প্রশস্ত করে শব্দহীন হাসলো ইফা।।বয়সে আদ্রিতা ইফার বড় হবে ,, তার মুখে ভয়ের কথা আশা করেনি।।পূর্নরায় কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো…
— “মানুষ সেই জিনিসটাকে ভয় পায় ,, যেটা সহজে করা হয় না।। কিন্তু যখন তুমি একই জিনিসটা বারবার করবে ।।তখন তোমার মধ্যে ভয় না ,,, ভালোবাসা কাজ করবে।।আর ভালোবাসার জিনিসটা কখনো ভয়ের কারণ হয়না।।ঠিকই তেমনি অন্ধকার দেখতে দেখতে ভয় কেটে গেছে” ।।
নির্বিকার ভাবে কিছুক্ষণ কথাটা ভাবলো আদ্রিতা।।এতো সহজে ভয় দূর করা যেতে পারে ,,সেটা তার ধারনা ছিল না।। আবার কিছুক্ষণ বিরাজ করলো নিরবতা।। ইতস্তত বোধ করে বললো…
— “তোমার আর ভাইয়া মধ্যে সত্যিই কিছু নেই”।।
আদ্রিতার কথার ধরণ বুঝতে অসুবিধা হলো না ইফা।। সংক্ষেপে উত্তর দিলো,,” না”!!
— “তোমার আর ভাইয়ার প্রথম দেখা ,, এক্সিডেন্ট হওয়া ,, কোলে তুলে নেওয়া সব গুলো দিয়ে একটা ফিল্ম তৈরি করা যায়।।তাই না ভাবী…
ভাবী কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইফা।। সাথে সাথে কথা ঘুড়িয়ে বললো,….– ”আই মিন ভালো ফিল্ম হতো”।।
— “একদম রাইট।।বাট এটা ফিল্ম না ,, আর তোমার ভাইয়াও কোনো সুপার স্টার হিরো নয়”।।
________________
ইফার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে রৌধিক ।।
ইফার কাঁচের নেলপলিশ টা মৃদু শব্দ করে রেলিং এর সাথে ঘুরাচ্ছে।। ইফার আর আদ্রিতার কথার মাঝে হুট করে ইভু আর রৌধিকের আগমন।।ইভু গেছে তিনজনের জন্য কফি বানাতে।।ইভু আসতে দেরী হচ্ছে বিধায় আদ্রিতা গেছে ডেকে আনতে ।। হঠাৎ করেই রৌধিকের ফোনে কল আসাতে ,, ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে।। তবুও শান্তি দেয়নি ইফাকে ।।ইফার দুটো নেলপলিশ কে নিজের আয়ত্বে করে রেখেছে।। মূলত ইফাকে জ্বালাতেই এমন বিহেব করা।।ইফা গলা ঝেড়ে আস্তে আস্তে বিরক্তিকর কন্ঠ বললো…
— “ওটা আমার নেলপলিশ ।। প্লীজ দিয়ে দিন,,, ভেঙ্গে যাবে” !!
— “আমি কি একবারও বলেছি ,,এটা আমার নেলপলিশ!! এটাকে একটু ছুলেই কি ভেঙ্গে যাবে ।। আশ্চর্য 😡😡”!! (ঝাঁঝালো কন্ঠে রৌধিক)
— “আমি কখন বললাম ছুলে ভেঙ্গে যাবে।।আমি বলতে চাইছি ,, আপনি যেভাবে নেলপলিশ টা নিয়ে ফাজলামো করছেন ।।যেকোনো টাইমে ভেঙ্গে যাবে।।তখন এটা দিয়ে আমি কি কলবো”??
— “সত্যিই তো ভেঙ্গে গেলে কি করবে।।(ভাবার অভিনয় করে রৌধিক) একটা কাজ করো ,, ভেঙ্গে গেলে আমার মুখে লাগিয়ে দিও”।।
সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল ইফা।। মিনিট পেরুতে না পেরুতেই হাত থেকে নেলপলিশটা পড়ে ভেঙ্গে গেল।।ইফা রৌধিকের দিকে তাকিয়ে ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসছে।।আর রৌধিক ভুতুড়ে ঢোক গিলছে।।এই বুঝি ইফা চারটা কথা শুনিয়ে দিল।। কিন্তু হলো তার বিপরীত!! নিচ থেকে ভাঙ্গা নেলপলিশ গুলো দুহাতে লাগিয়ে ,, রৌধিকের মুখে লাগিয়ে দিলো।।কিছু বুঝে উঠার আগেই,, আরেকটা নেলপলিশ ভেঙে সেটাও রৌধিকের মুখে লাগিয়ে দিলো।।তখনই ছাদে প্রবেশ করলো আদ্রিতা ।।রৌধিকের এমন অবস্থায় দেখে ”””ভুত ভুত””” চিৎকার করে করে নুইড়ে পড়লো নিচে।।
চলবে….🎀🎀