#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০২
বয়ফ্রেন্ডের নাম্বার টা ফোনে জ্বলজ্বল করতে দেখে মাথায় রাগ চেপে গেল ইফার ।। ইচ্ছে করছে ফোনটা তুলে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে।। কিন্তু আহিরের সাথে কোনো কথা বারাতে চাইছে না ইফা।। নিজের মনের মাঝে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ফোনটা কেটে গেল।।মিনিট পেরুতে না পেরুতেই পুর্ণরায় ফোনটা বেজে উঠলো ।। আবার আহির ফোন করেছে।।একের পর এক ফোনের রিং বেজেই চলেছে।।লাইনটা কাটতে না কাটতেই আবার বেজে উঠছে।। ইফা বিরক্তি নিয়ে ফোনটা কেটে দিলো।। কিছুক্ষণ চোখ জোড়া স্থীরভাবে
নাম্বার টার উপর দিয়ে সরিয়ে নিলো।।না চাইতেও ব্লোক করে দিল।। ইন্টারনেট কানেকশন অন করে সকল সোস্যাল মিডিয়ায় থেকে ব্লোক করে দিয়ে ফোনটা রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।। কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ফোনের রিংটোনের আওয়াজ ভেসে এলো।।ইফা ঠিক করে নিয়েছে,, এবারও যদি আহির ফোন করে ।।তাহলে সিম কার্ড আর ফোন কোনোটাই ইউস করবে না সে।। কিন্তু আহির না,, ফোন করছে সারা।। মুখের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে হাতে তুলে নিল।।রিসিভ করে কানের কাছে নিতেই শোনা গেল এক কর্কট কন্ঠস্বর…
— ফোন থাকে কই তোর?? এই নিয়ে আঠারো বার তোর নাম্বারে ডায়াল করেছি ।।আর তুই রিসিভ করার প্রয়োজন বোধ করলি না।।নাকি বয়ফ্রেন্ডের ছেকায় মন পুড়ে গেছে??
— চুপ করবি তুই!! আমি ইফা ,, বেইমান দের দেওয়া কষ্টে কষ্ট পাই না।। জাস্ট শাওয়ার নিতে গিয়েছিলাম।।হাতে ব্যান্ডজ থাকার কারণে একটু দেরী হয়েছে।।বাই দা ওয়ে,, থ্যাংক্স ।।থ্যাংক্স এ লট!!
— কানের নিচে লাগিয়ে দিবো এক চড়!! ফাজিল মেয়ে কোথাকার?? নতুন নতুন প্রেমে পড়ে ফ্রেন্ডদের থেংক্স বলছিস!! সাহস থাকলে আরেকবার বলিস ,, সেখানেই পুঁতে রাখবো।।
মুচকি হাসলো ইফা।। তার ফ্রেন্ডরা এতোটা ভালোবাসে ভাবতে পারেনি সে।।কিছুদিনের জন্য সেই ফ্রেন্ডদের কথা ভুলে গিয়েছিলো সে।। সারা আগেই সবটা জানতে পেরেছিল ,, আহিরের ব্যাপারে।।সেটা ইফার সামনে তুলে ধরতে এতো অভিনয় করেছিল।।আর ইফাও রাজি হয়ে যায়।। কিছু বলার আগে সারা বলে উঠলো…
— হাতের কি অবস্থা তোর !! ডাক্তার দেখিয়ে ছিস ,, মেডিসিন নিয়েছিস,, আন্টি কিছু বলেছে।।
হ্যা!! শব্দটা উচ্চারণ করে আর কিছু বলতে পারলো না।।বাহিরে থেকে অনবরত দরজায় নক করার শব্দ শোনা যাচ্ছে।।সাথে শোনা যাচ্ছে রুমকির দরজা খোলার আকুল কন্ঠস্বর।।
— ইফা তুই কি ঠিক করে রেখেছিস !! আজকে রুমের বাহিরে আসবি না।।আর কিছু খাবিও না।।ঠিক আছে আমি তোর বাবা – ভাইকে ডেকে আনছি।।তারাই যা করার করবে??
ফোনের লাইন কেটে পাশে রেখে দিল ইফা।। এই নিয়ে রুমকি মোট পাঁচ বার এসেছে ,, তাকে ডাকতে।। কিন্তু দরজা খুলে নি।।বাড়িতে আসার পর একবারও রুমের দরজা খুলেনি।। হাতের এই অবস্থা দেখলে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে তাই।। কিছুক্ষণ পর শোনা গেল তিনটি কন্ঠস্বর।।ক্রমশ আওয়াজ বেড়েই চলেছে।। অবশেষে বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিল ইফা।।হুরমুরিয়ে রুমে প্রবেশ করলো রুমকি,,ইভু,, ইমতিয়াজ আমহৃদ।। সাথে সাথে হাত পেছনে লুকিয়ে নিল ইফা।। জোরপূর্বক হাসি দিয়ে সবার সাথে কথা বলছে।।হাত পেছনে নেওয়ার কারনে সন্দেহ হলো রুমকির।।টান দিয়ে হাতটা সামনে আনতে বিচলিত হয়ে গেল সবাই!!রাগে ফেটে পড়লো ইমতিয়াজ আমহৃদ….
— একটু আগে দেখে এলাম গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গা এখন দেখছি হাতে ব্যান্ডেজ ।। নির্ঘাত এক্সিডেন্ট এই অবস্থা হয়েছে।। কালকেই গাড়ি বিক্রি করার ব্যবস্থা করছি!!
— পাপা আমি এক্সিডেন্ট করিনি।। এক্সিডেন্ট করলে মাথায় আঘাত লাগবে কিংবা অন্য কোথায়।।হাতের কেন আঘাত লাগবে।।
— আমি অতো কিছু জানতে চাই না।।কালকে থেকে তোমাকে দিয়ে আসা+নিয়ে আসা সবটা ইভু করবে।।
কথা বাড়ালো না ইফা।।সে ভালোভাবে জানে,, ইমতিয়াজ আমহৃদ এমন কিছু করবে না । শুধুমাত্র রাগের বশে এমন বলেছে।।
________________
সূর্যের আলো চারদিকে তির্যক ভাবে পড়ছে।।বেলা এখন প্রায় ১১ টা ছাড়িয়ে গেছে।।তবে ১২ টা বাজতে ঢেড় দেরী আছে।। কিন্তু দেখে তা বোঝার উপায় নেই।। সূর্যের তাপ ছাড়াই ব্যস্ত নগরী সবসময় মানুষের তাকে উত্তপ্ত থাকে।।আজ সূর্যের তাপ মানুষের তাপের সাথে যোগ দিয়েছে।।কাঠ ফাটা গরমে নগরীতে থাকা কষ্টকর ।। সেখানে মানুষ জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বাধ্য হয়ে বাইরে পা রাখে।।
রাস্তার একপাশ দিয়ে একা একা হেঁটে চলেছে ইফা।। ঘামে শরীর ভিজে গেছে।। তবু সামনের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।। সেকেন্ডে সেকেন্ডে হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিচ্ছে।। সূর্যের তাপে রাস্তায় পা ফেলা সম্ভব হচ্ছে না।।রাস্তায় যেন অগ্নি গোলকের আকার ধারণ করেছে।। সূর্যের তাপ সরাসরি রাস্তাঘাটের উপর পড়ে।।যাতে রাস্তা গরম হয়ে গেছে।।পা ফেললে জুতোর তলা বেধ করে পায়ে এসে লাগছে।। একটু আগে গাড়ি গ্যারেজে দিয়ে এসেছে।।ইভু অবশ্য বলেছিলো গাড়ি সে গ্যারেজে দিয়ে আসবে আর ইফা কেও ভার্সিটিতে পৌঁছে দিবে ।। কিন্তু ইভা নাকোচ করে দিয়েছে।।তখন যদি বুঝতে পারত ,, তার এমন নাজেহাল অবস্থা হবে।।তাহলে বিনা শর্তে রাজি হয়ে যেত।। হঠাৎ বামদিকে চোখ যেতে হাঁসির রেখা ফুটে উঠছে তার মুখে।।দূর থেকে খালি একটা রিক্সায় দেখা যাচ্ছে।। অপেক্ষা না করে সেদিকে ছুঁটে গেল।। এতোক্ষণ হাঁটার সময় একটাও খালি গাড়ি পায়নি।।রিক্সায় উঠার দশ মিনিট পর ঘটে গেল একটা অঘটন ।।রিক্সার সাথে বাইকের সংঘর্ষ হলো।। রিক্সাওয়ালা রিক্সা ধরে কোনোরকম তাল সামলাতে পারলেও ,, ইফা পারলো না।। আংশিক আওয়াজে নিচে পড়ে গেল।। উঠার শক্তি হারিয়ে কিছুক্ষণ নিস্তেজ হয়ে রাস্তায় যেমন ভাবে রাস্তায় পড়েছিল ,, তেমন ভাবে চোখ বন্ধ করে নিল।। চারদিকে ভিড় জমে গেছে।। কিন্তু সেদিকে আক্ষেপ নেই ইফার।।ব্যাথায় শরীর নাড়ানোর মতো শক্তিও খুঁজে পাচ্ছেনা।।
— সরি!!!হঠাৎ করে রিক্সা সামনে এসে পড়াতে,,, আমি ব্রেক সামলাতে পারিনি ধরুন!! আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করুন!!
পরিচিত কোনো কন্ঠস্বর শুনে মাথা তুলে তাকালো ইফা ।।কালকের সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।। বুঝতে একটুও অসুবিধে হলোনা ,,রৌধিকের বাইকের সাথে রিক্সার সংঘর্ষ হয়েছে।।রৌধিক হাত বাড়িয়ে,, আগ্ৰহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।।রৌধিকের হাতে হাত রাখতে নিলে মৃদু চিৎকার করে উঠলো ইফা।। হাতের কনুই ছিলে সাদা চামড়া বের হয়ে এসেছে।।মাঝে মাঝে রক্তের ছিপ ছিপ ফোঁটা।।মাথা নিচু করে নিল ইফা।।কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না।।অন্য হাত ব্যান্ডজ করা।।রৌধিক ইভাকে বুঝতে দেরী করলো না।। একটু ঝুঁকে কোমর আঁকড়ে ধরে উঠানোর চেষ্টা করলো।।হাঁটুতে টান অনুভব করে ,, চিৎকার করে রৌধিকের শার্ট চেপে ধরলো।। কয়েকবার জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানো চেষ্টা করছে।।রৌধিকের বুঝতে বাকি রইল না,,হাঁটুতে কোনো ইনজুরি হয়েছে।। ইফার হাতটা নিজের থেকে আস্তে ছাড়িয়ে গলায় উপর রাখলো।। মৃদু হেসে কোলে নিয়ে নিলো।। হঠাৎ রৌধিক কোলে তুলে নেওয়াতে শকট হয়ে গেল ইফা।। অবাক চোখে রৌধিকের দিকে তাকিয়ে আছে।। ইফাকে বাইকে বসিয়ে দিল।। রিক্সাওয়ালা কে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে ,,রিক্সাটা ঠিক করে নিতে বললো!! সবাইকে যার যার কাজে চলে যেতে বলে,,,রৌধিক বাইকের পেছনের দিকটায় বসে বাইক স্টার্ট দিল।।
_________________
ফার্মেসীর বেন্ধীতে বসে আছে রৌধিক ইফা।।ডাক্তার দুজনকে একটু অপেক্ষা করতে বলে ভেতরে গেছে।।ইফা ভেতরে ভেতরে ভয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে।।ডাক্তার যদি এসে ইনজেকশন পুশ করে দেয়।। একবার রৌধিকের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার ডাক্তার আসছে কিনা দেখছে।।।।।।।
চলবে…..🎀🎀