Sunday, October 5, 2025







শক্তিময়ী পর্ব-২৮+২৯

#শক্তিময়ী
২৮ তম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। কাজ আর কাজ। কিন্তু অদিতির কোনো ক্লান্তি নেই। ভালবেসে কাজ করে যে! কাজ তার প্যাশন। মা,দাদা-দাদুর দেখাশোনা, মাজেদা বু অসুস্থ , তাঁর দেখভাল করা, ছাদ বাগান-বারান্দার বাগান-বাসার সামনের ও পিছনের বাগান মিলে কতো শত গাছ,তাদের পরিচর্যা, রেস্টুরেন্ট আর কাপড়ের ব্যবসা সামলানো, মেয়েটা পারে বটে।
নিজের সুন্দর মনটার জন্য আর আনন্দ ভাইয়ার আত্মা শান্তি পাবে এই কথা চিন্তা করে আত্মীয় স্বজন সবার সাথে তার দারুণ সম্পর্ক, আসা-যাওয়া। আমি ভেবে পাই না,একটা বাচ্চা মেয়ে এতো কিছু একসাথে করে কেমন করে। কতোটা ফিজিক্যাল আর মেন্টাল ফিটনেস আমাদের অদ্বিতীয়ার।

তিথি ভাবীর পরিশ্রম করার ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা, মনের সৌন্দর্য বরাবরই অপরিসীম। মেয়ে মা’কে ছাড়িয়ে গেছে।

ফুপা-ফুপু -ভাবী সামলে উঠেছেন অনেক। এটাও অদিতির জন্য। দাদা-দাদি আর মা’কে সারাক্ষণ শুনিয়েছে,বুঝিয়েছে যে এতো দুর্বল চিত্তের বাপ-মা-বৌ আনন্দ ভাইয়ের কাম্য ছিলো না কখনোই। তিনি আত্মবিশ্বাসী ও মানসিক ভাবে শক্তিশালীদের ভালোবাসতেন। নিজেও তাই ছিলেন। ছেলে বা স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে ফুপা-ফুপু -তিথি ভাবী যেন উঠে দাঁড়ান, ঘুরে দাঁড়ান, ঝাঁপিয়ে পড়েন সৎ কর্মযজ্ঞে।

কথার শক্তি দারুণ। ফুপা-ফুপু-ভাবী স্বাভাবিক হয়েছেন। মনে কষ্টের সমুদ্র। কিন্তু সেই সমুদ্রে জোয়ার আসতে দেন না। ফুপা-ফুপু-ভাবী ভোর বেলায় হাঁটেন, যোগ ব্যায়াম করেন,মেডিটেশন করেন, সংসার ধর্ম পালন করেন, তাঁরা তিনজন একটা বৃদ্ধাশ্রমে যুক্ত হয়েছেন, নিম্নবিত্তদের জন্য। আবদুর রহমান নামের একজন ভদ্রলোক এই বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা। আবদুর রহমান সাহেব পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন। রাঘব বোয়ালদের মতো নয়, নিতান্ত চুনোপুঁটির মতো তিনি কিছু অবৈধ উপার্জন করেছিলেন।পরবর্তীতে লজ্জা,অনুশোচনা, আত্মগ্লানি আর তীব্র অপরাধবোধ ভদ্রলোককে আচ্ছন্ন করে ফেলে।আল্লাহর কাছে বারবার মাফ চেয়েও একফোঁটা শান্তি মিলছিলো না। তারপরে এই বৃদ্ধাশ্রমের চিন্তা তাঁর মাথায় আসে। ঢাকার এক দরিদ্র এলাকায় এক টুকরা জমি। তাতে টিনশেডের বড় বড় আটটা ঘর। বত্রিশ জন অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকেন। ছেলে মেয়েদের ঘরে ঠাঁই হয়নি। উল্টে তাঁদেরই ভাঙা ঘর থেকে ছেলে-মেয়েরা তাঁদের তাড়িয়ে দিয়েছে। একসময় তাঁদের অনেকেই নিজেদের বৃদ্ধ বাপ-মাকে অবাঞ্ছিত করেছিলেন এই সন্তানদের দুমুঠো বেশি খাওয়াবেন বলে, একটু ভালো রাখবেন বলে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কবের থেকে কে জানে? এখন সন্তান দ্বারা বিতাড়িত এই মানুষগুলো নিজেদের পূর্ব কর্মকাণ্ডের জন্য দারুণ লজ্জিত, অনুতপ্ত। কিন্তু তাতে লাভ কি?

স্নেহ নিম্নগামী, এই চরম গ্লানিময় কথাটা ছোটবেলা থেকে সবার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কে এই অশুভ কথাটা আবিষ্কার করেছিলেন কে জানে! মানুষ তাই বাপ-মায়ের থেকে সন্তানকে বেশি ভালোবাসে, সন্তান এবং স্বামী বা স্ত্রীর সুখের চিন্তায় বাপ-মায়ের হাত ছেড়ে দেয়। স্বামী-স্ত্রী -ছেলে-মেয়ে মিলে পরিবার।এখানে যে-ই ঢুকুক, স্বামী বা স্ত্রীর বাবা-মা হলেও সে অনাকাঙ্ক্ষিত, অপাংক্তেয়। কি কুশিক্ষা! ছি!

বৃদ্ধাশ্রমে আটখানা ঘর ছাড়াও বিশাল একটা রান্নাঘর আছে। রান্নার জন্য চারজন রাঁধুনি আছেন। ঘর দুয়ার পরিস্কারের জন্য চারজন কর্মচারী। বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের দেখাশোনার জন্য চারজন কর্মচারী। অনেকে একা বাথরুমে যেতে পারেন না, কেউ অসুস্থ হলে বিছানা নোংরা করে ফেলেন, কারোর একা একা গোসল করার ক্ষমতা নেই, সাহায্যকারীর দরকার তো হয়ই। তাদেরও খাবার দিতে হয়,বেতন দিতে হয়। আবদুর রহমান সাহেবের একার অর্থে সমস্ত ব্যাপারটা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। তবে ভদ্রলোকের সদিচ্ছা , চেষ্টা আর পরিশ্রমের কোনো তুলনা নেই। নিজ হাতে অকাতরে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মলমূত্র পরিষ্কার করেন, বিছানার চাদর কাচেন, বৃদ্ধাশ্রমের প্রত্যেক সদস্যের খেয়াল রাখেন। কিন্তু হাতে টাকা পয়সা নেই আর। দাতাও নেই।

এই পরিস্থিতিতে অদিতি ফুপা-ফুপু ও ভাবীকে এই বৃদ্ধাশ্রমের সন্ধান দিলো। আমার ফুপা-ফুপু ও ভাবী এখন এঁদের নিয়ে মহাব্যস্ত। এঁদের ভালো-মন্দ খাওয়ানো, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, গরম যেন না লাগে সেই ব্যবস্থা করা,আবার ঠান্ডায় যেন কেউ কষ্ট না পায় সেই ব্যবস্থাও করা, তাঁদের সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করা, তাঁদের ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা নিরলস ভাবে ফুপা-ফুপু,তিথি ভাবী ও আবদুর রহমান সাহেব করে চলেছেন। এখন বৃদ্ধাশ্রমের কলেবর বৃদ্ধি করতে হবে। জমি কেনা,ঘর তোলা অনেক কাজ। কাজেই অনেক চিন্তা, অনেক ছোটাছুটি।

এছাড়া ফুপু পাঁচজন করে দরিদ্র মেয়ে বা মহিলাকে সেলাইয়ের কোর্স করান বাসায়। তিন মাসের কোর্স। বিভিন্ন ডিজাইনের ব্লাউজ, পেটিকোট,সালোয়ার,কামিজ,ফ্রকের জন্য কাপড় কাটা, সেলাই মেশিন চালিয়ে সেলাই। তিন মাস পরে আবার নতুন ট্রেইনি।

ভাবীতো স্কুলে পড়ান ই, সামাজিক কাজও অনেক করেন,এখন এগুলোও যুক্ত হয়েছে। এতো ব্যস্ত,কর্মঠ, সমাজবান্ধব পরিবার খুব কমই আছে।

” পরীকে মানুষ করতে পারলাম না। সমুদ্রকেও খুব ভালো বলতে পারি না।শুধু অদিতি আমার মনের মতো হয়েছে। মা হিসাবে আমার অনেক ব্যর্থতা। এটা আমার জন্য চরম কষ্টের বিষয়। কি খামতি ছিলো আমার সন্তান পালনে?আমি তো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।” তিথি ভাবীর এই কথা আমাদের প্রায় শুনতে হয়।

ফুপু বলেন,”আমি স্বাক্ষী, তুমি তোমার সবটুকু দিয়েছো সমুদ্র -পরীর জন্য। ওরা তোমার শিক্ষা নিতে পারে নি,বিশেষ করে পরী। তোমার কোনো দায় নেই মা।বরং আমি,তোমার বাবা,আনন্দ অনেকটা দায়ী। ”

“কে দায়ী, সেটা বড় কথা নয়। পরী মানুষ হলো না,এটাই চরম দুঃখ। একটা প্রাণ পৃথিবীতে এলো শুধু ভোগ বিলাস আর স্বেচ্ছাচারিতা করতে।জীবনের সৌন্দর্যটাই সে বুঝলো না।”

“কি যে বলো মা! পরী এইটুকু একটা মানুষ। সারাটা জীবন সামনে পড়ে আছে। ওর যা ট্যালেন্ট, ও দেখবে কিছু আবিষ্কার টাবিস্কার করে বসবে। আর ওর মনটা অনেক ভালো। ওর সাথে আদর করে কথা বলো, সবাই মিলে ওর সাথে ফ্রী হয়ে যাও, ওর সাথে খোলাখুলি সব সমস্যা নিয়ে কথা বলো,ও ঠিক রাইট ওয়ে বেছে নিবে। আর ভাইয়াতো খুবই ভালো ছেলে।দেশে ফিরবে না,এটা কি খুব বড় অপরাধ? মানছি,ও দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতো, আব্বু যে ভাবে সব আপনজনদের এক সূতোয় বেঁধে রেখেছিলেন, ভাইয়া আব্বুর সেই জায়গাটা নিতে পারতো। এটা ঠিক, এটা আমিও মানি,ভাইয়া আর পরী তাদের মেধা দিয়ে দেশের অনেক উপকার করতে পারতো,এটা তাদের দায়িত্ব ছিলো, এছাড়া আমি ওদের কোনো দোষ দেখি না,মা। আমার ভাইবোনের তুলনা হয় না।”

এদিকে অদিতির ড্রিম প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়েছে। বিল্ডিং বানানোর কাজ চলছে, নিজেদের চাকরি , ব্যবসা, ঘর সংসারের ফাঁকে ফাঁকে আমরা ভাই বোনরা তদারক করি, ডাষ্টবিনে পড়ে থাকা এক মেয়ে শিশু অতি আদরে,স্নেহে বড় হচ্ছে ফুপুর বাসায়।এখন বয়স ছয় মাস। তাকে প্রতিপালনের সমস্ত আর্থিক দায়িত্ব অদিতি নিয়েছে। বাবুটাকে দত্তক নেওয়া হবে না। তবে স্বজন স্নেহে বড় করা হবে। ওরফানেজের কার্যক্রম শুরু হলে তাকে ওখানে থাকতে হবে। এখন একজন ট্রেইনড নার্স বাবুটার দেখাশোনা করছেন। তাছাড়া ফুপা,ফুপু,তিথি ভাবী,অদিতি,শম্পা, রেশমা,আমরা সবাইতো আছি। অদিতি বাবুটার নাম রেখেছে ইলমা। উদ্বুদ্ধ হয়ে লাবণী আপা এক ফেলে দেওয়া শিশুর দায়িত্ব নিয়েছেন। ছেলে শিশু।নাম অর্ক। ওকে জন্ম দিতে যেয়ে অপুষ্ট, অত্যাচারিত মা মারা যান। বাপ,দাদার বাড়ি,নানার বাড়ি কেউ দায়িত্ব নিবেনা। খবর পেয়ে লাবণী আপা অর্ককে নিজের বাসায় রাখার ব্যবস্থা করেছেন অরফানেজ না হওয়া পর্যন্ত। ফুপার গ্রাম থেকে আনা এক নিঃসন্তান মহিলা যিনি শিশু জন্মদানে অপারগ বিধায় তালাকপ্রাপ্তা, সেই মিনু আপা লাবণী আপার বাসায় থেকে অর্ককে অপার মমতায় মানুষ করছেন। অর্ক ও মিনু আপার আর্থিক দায়িত্ব যথারীতি অদিতি নিয়েছে। লাবণী আপা প্রবল আপত্তি করেছিলেন ভাইঝির থেকে টাকা নিতে। কিন্তু অদিতি নিজ সিদ্ধান্তে অটল। লাবণী আপাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, “ফুপি,তুমি যে অর্ক আর মিনু ফুপুকে থাকতে দিয়েছো,তাইতো অনেক। এদেরকে আদর আর সম্মানের সাথে বড় করা,মানুষের মতো মানুষ করা তো আমার নিয়ত। কেন খরচ নিবে না?”

তিথি ভাবীর মা মারা গেছেন কয়েকমাস আগে। অবস্থা যখন খুব খারাপ,তখন এক বিকেলে অদিতিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তিথি ভাবী তখন রুবী খালাম্মার সাথেই থাকতেন। সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে অদিতিকে অনেক আদর করেছিলেন খালাম্মা। নিজের বুকের উপরে অদিতিকে মাথা রাখতে বলেছিলেন। চুলে,মুখে হাত বুলাচ্ছিলেন অবিরত। কপালে,গালে চুমু খেয়েছিলেন। তারপরে এক অজানা অধ্যায়কে মেলে ধরেছিলেন তিন ছেলে মেয়ে আর অদিতির সামনে।

আমাদের সদা হাস্যময়ী, পরোপকারী, উচ্চ শিক্ষিতা খালাম্মার বুকে গোপন কষ্টের এক পাহাড় লুকানো ছিলো। তাঁর মায়ের নাম ছিলো পূরবী। পূরবীর ইতিহাস অনেকটা অদিতির মতো। সমাজের চোখে তিনিও এক জারজ। পূরবীর জন্মের পরে তাঁকে যখন লবণ খাইয়ে মেরে ফেলার পরিকল্পনা চলছিল, শুধু তাঁর ধর্মপ্রাণ নানীর জন্য সম্ভব হচ্ছিল না, তখন এক নিঃসন্তান দম্পতি পূরবীকে বুকে তুলে নেন। শিশুটির নিজের পরিবার হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। পূরবীর পালক বাবা-মা খুব সম্ভ্রান্ত আর অভিজাত ছিলেন। ধনবানও। পূরবী পালক বাবা-মায়ের আদরে বড় হতে থাকেন। তাঁর যখন দুই বছর বয়স,তখন বিয়ের পনেরো বছর পরে মা অন্তঃসত্ত্বা হন। পালক মায়ের এক পুত্র সন্তান হয়। তার দুই বছরের মাথায় ফুটফুটে এক মেয়ে। পূরবীর জন্য তখন আর বাবা-মায়ের আদর অবশিষ্ট নেই। বরং তাঁর উপস্থিতি সবার জন্য একটু অসহনীয় বটে। কিন্তু যেহেতু তাঁরা ভদ্র, শিক্ষিত, তাই মেয়েকে আদর না করলেও, তাঁর সাথে ভালো করে কথা না বললেও তাঁকে ভালো খাবার খেতে দিয়েছেন, ভালো পোশাক দিয়েছেন, ভালো জায়গায় লেখাপড়া শিখিয়েছেন, সব জায়গায় নিজেদের মেয়ে পরিচয় দিয়েছেন। সব দিয়েছেন, দেন নি ভালোবাসা আর সহায় সম্পত্তির ভাগ। পূরবী বিএ পাশ করার পরে তাঁকে ভালো পরিবারে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সাথে বিয়ে দেন। তারপরে তাঁদের দায়িত্ব শেষ। রূপ, শিক্ষা, ব্যবহার আর বাপের বাড়ির নাম ডাকের জন্য পূরবী শ্বশুরবাড়ি আর স্বামীর আদর-সম্মান পেতেন। তবে তাঁদের একটা চাপা ক্ষোভ ছিলো পূরবীর বাপের বাড়িতে জামাই আদর নেই, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির কদর নেই, সবচেয়ে বড় কথা,পূরবীর নিজেরই কোন মূল্য নেই। পূরবী মা হওয়ার পরেও তাঁর বাপের বাড়ির হোলদোল নেই। তারপরে কেমন করে জানাজানি হয়ে গেলো, পূরবী তাঁদের পালক সন্তান। আরও ভয়ংকর, পূরবী জারজ। পূরবী এই কঠিন সত্য জানতেন না, তিনি মানসিক ভাবে একেবারে ভেঙে পড়লেন। এবং সেই অবস্থায় শুরু হলো তাঁর উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা ভয়ংকর চেহারা ধারণ করলেন। ওদিকে পালক বাবা-মা নির্বিকার।

রুবী খালাম্মা শিশুকাল থেকে দেখে আসছেন মায়ের উপরে ভয়ংকর নির্যাতন। বাইরের কেউ টের পেতো না। বাবা মা’কে চড় থাপ্পড় মারছেন, কুৎসিত গালিগালাজ করছেন, দাদা-দাদি -চাচা-ফুপুরা যে যেমন ভাবে পারেন মা’কে অত্যাচার করছেন,এসব দেখতে দেখতে রুবী বড় হতে থাকেন। এর মধ্যে তাঁর একটি বোন হয়। পূরবীর উপরে অত্যাচার বাড়তে থাকে। পারিবারিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়, জারজ মেয়েকে সংসারে রাখা যাবে না। পূরবীকে তালাক দেওয়া হবে। নতুন বৌ ঘরে আনা হবে। তার নাম প্রিয়া। অনেকদিন ধরেই পূরবীর স্বামীর সাথে প্রিয়ার গভীর প্রণয়। তারপরে এক সকালে ঘুম থেকে জেগে রুবী দেখেন, তাঁর জন্মদুঃখী মা লাশ হয়ে গেছেন। রুবী আজও জানেন না,তাঁর মায়ের মৃত্যুর কারণ কি। হত্যা না আত্মহত্যা। রুবীর বাবা আর দাদার বাড়ির লোকেরা প্রচার করলেন হার্ট অ্যাটাক। কেউ প্রতিবাদ করলো না,কেউ ময়নাতদন্ত করতে চাইলো না।পূরবী চলে যাওয়ার পরে কারও কাছ থেকে তেমন সহানুভূতি পান নি দশ বছর বয়সী রুবী আর পাঁচ বছর বয়সী নীলা। মায়ের মৃত্যু রুবী কখনো মেনে নিতে পারেন নি। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস,পূরবীকে খুন করা হয়েছিলো। বাবা প্রায় মারতে মারতে আধমরা করে ফেলতেন মা’কে, বিশেষ করে যেদিন প্রিয়ার সান্নিধ্য বেশি পেতেন কিংবা যেদিন গনিকালয় থেকে ফিরতেন। বাবার এই অভ্যাসটার কথা জানতেন রুবী। এক পতিতা বাবার কারণে অন্তঃসত্ত্বাও হয়ে পড়েছিলো, পরে তার পেট খালাস করা হয়। পূরবীর মৃত্যুর দেড় মাসের মাথায় প্রিয়া বাবার বৌ হয়ে আসেন। তাঁকে নিয়ে বাবার কি আহলাদ! মহিলা ভীষণ খারাপ ছিলেন। সৎ মেয়েদের খুব কষ্ট দিতেন। তাঁর নিজের যখন জমজ ছেলে মেয়ে হলো,তখন রুবী-নীলার অবহেলার সীমা রইলো না। এতো বৈরী পরিবেশে থেকেও লেখাপড়ায় দুই বোনই খুব ভালো ছিলেন। ফলশ্রুতিতে দুই বোনই জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। দুই বোনেরই ভালো বিয়ে হয় উচ্চ শিক্ষিত, উচ্চবিত্ত, অভিজাত পরিবারের ছেলেদের সাথে। দুই বোনকেই যার যার স্বামী ভীষণ পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। দুইজনের স্বামী ই তাঁদের স্ত্রীদের জীবনের আদ্যোপান্ত জানেন। কিন্তু পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে জানান নি। সবাই জানে,মেয়ে দুটোর মা হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার পরে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আপাতদৃষ্টিতে হাসিখুশি, প্রাণোচ্ছ্বল রুবী আসলে মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় স্ত্রী, সৎ মা,পতিতা, বিবাহিত লোকের সাথে সম্পর্ক করে গর্ভবতী হওয়া, পেটের সেই বাচ্চা সবই রুবীর কাছে চরম ঘেন্নার প্রাণী। তিনি যখন জেনেছিলেন , অদিতির মা এক বিবাহিত লোকের সাথে মেলামেশা করে গর্ভবতী হয়, তখন ঘৃণায় তাঁর গা গুলিয়ে উঠেছিল। একই কারণে অদিতির উপরেও তাঁর চরম ঘৃণা। এই মেয়ে আর তার মায়ের জন্য আরেককন মহিলা স্বামীর কাছে কি ভীষণ ভাবেই না নিপীড়িত হচ্ছেন যেমন হয়েছিলেন তাঁর মা পূরবী। তাই রুবী খালাম্মা কখনো পতিতা পল্লীতে যান নি,তাদের সন্তানদের জন্য কোনো কাজ করেন নি সমাজসেবী হয়েও।

তিথি ভাবী ভাঙা গলায় বলেছিলেন,”কষ্টগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করতে মা। কতো বছর ধরে মনের মাঝে যন্ত্রণা পুষে রেখেছো। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তোমার বাবাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া উচিৎ ছিলো। যাহোক,আল্লাহ ওদের বিচার করবেন। কিন্তু মা, অদিতির তো কোনো দোষ নেই। পূরবী আর অদিতির তো একই ইতিহাস। ”

“অদিতি সবার আদর পেলো, আর আমার মা কারোর আদর পেলো না। আমি মায়ের পালক বাবা-মায়ের কাছে গিয়েছিলাম তোদের বাবাকে সাথে নিয়ে। মুখের উপর থুথু ফেলে এসেছি। সেধে আমার মা’কে নিয়ে এলি, নিজেদের বাচ্চা হওয়ার পরে আমার মা’কে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেললি। শয়তানগুলো। নরকেও যেন এদের জায়গা না হয়।”

মায়ের উপরে লাগাতার অত্যাচার, তাঁর অপমৃত্যু, মৃত্যুর কারণ জানা স্বত্বেও কিছু করতে না পারা রুবী খালাম্মাকে গভীর অন্ধকার খাদে ফেলে দিয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন, যেমন অদিতির বেলায় তাঁর মধ্যে কোনো মানবতা বা যুক্তিবোধ কাজ করতো না। অদিতি তাঁর কাছে শুধুমাত্র এক নোংরা মহিলার নোংরা মেয়ে। অদিতির মায়ের জন্য নিশ্চয় অন্য কোনো পূরবীকে অশেষ কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে, এই ধারণা নিয়েই তিনি থাকতেন।

এই মর্মান্তিক ঘটনা প্রকাশ করার চারদিনের মাথায় ভাবীর মা মারা যান। অদিতিকে অনেক দোওয়া করে গিয়েছিলেন তিনি,ক্ষমা চেয়েছিলেন বারবার। খালাম্মার মৃত্যুর পরে ভাবী আরেক দফা স্হবির হয়ে গিয়েছিলেন।মা’কে চিরতরে হারানোর শোক, মায়ের তীব্র যন্ত্রণাময় জীবনের ইতিহাস জেনে ফেলার শোক।

চলবে।
#শক্তিময়ী
২৯ তম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

ফজরের আজান পড়ছে। অদিতি উঠেছে আরও ঘন্টা খানিক আগে। ইলমাকে কিছুক্ষণ কাছে রেখেছে, দুধ বানিয়ে খাইয়েছে। তারপরে নিজে ওজু করে দাদা-দাদি আর মা’কে ডেকেছে নামাজের জন্য। এমন সময় ল্যান্ড লাইনে ফোনটা এলো। পরী আত্মহত্যা করেছে। বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাগারাগি। অভিমান।

ফুপু জ্ঞান হারালেন। ফুপা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। অদিতির মুখ ভাবলেশহীন। ফুপা-ফুপুর কাছে মাজেদা বু’কে বসিয়ে সে জায়নামাজে বসলো। তিথি ভাবীও কিছুই হয়নি এমন ভাবে ওজু করে এসে নামাজ পড়লেন। তারপরে রেশমার কাছে এক কাপ চা চাইলেন।

অদিতি ভাবীকে জড়িয়ে চুপ করে বসে রইলো।

স্রোতের মতো আত্মীয়রা আসছেন। আনন্দ ভাইয়ের মামা-চাচা-খালা-ফুপুরা, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। কেউ ফুপাকে সামলাচ্ছেন,কেউ ফুপুকে। তিথি ভাবীকে ঘিরে বসে আছেন অনেকজন। সবার চোখে পানি। রান্নাঘরের দায়িত্ব নিলেন কেউ কেউ। সকাল নয়টা-দশটার মধ্যে বাসা জনসমুদ্র হয়ে গেলো।

পরীকে ফিরিয়ে আনার অনেক ফর্মালিটিজ। ওর ভার্সিটি, এমব্যাসির সাথে যোগাযোগ। ভিসার জন্য দৌড়াদৌড়ি।

আমার মা-চাচীরা তিথি ভাবীকে কাঁদানোর চেষ্টা করছেন। নিজেরা কাঁদছেন চিৎকার করে। ভাবী উল্টে সবাইকে স্বান্তনা দিচ্ছেন, ” সবাইকেই তো যেতে হবে। আর যে নিজেই চলে যেতে চায়, তাকে কে আটকাবে বলেন? ওর যেরকম লাইফ স্টাইল ছিলো, ওর জীবন দর্শন যেই নিম্ন স্তরের, তাতে পরিণতি এমন হওয়ারই আশংকা ছিলো। কাঁদবেন না,অসুস্থ হয়ে পড়বেন। ও আমাকে-আপনাদের ভালোবাসে নি, আপনারা তাহলে ওর জন্য কেঁদে আকুল হবেন কেন?”

ভাবীর বাবা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,” বাচ্চা মেয়ে,সেন্টিমেন্টাল নাতনি আমার। তুই এমন করে বলছিস কেন তিথি? তুই কি বুঝতে পারছিস তোর নিজের পেটের মেয়ে মরে গেছে? স্বামী হারালি,মা হারালি,মেয়ে হারালি, আল্লাহ তোর জীবনটা এমন নষ্ট করে দিলেন কেন?”

“ছি আব্বু। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন, অনেক। সব ব্যাপারে আমরা আল্লাহকে দোষ দিই কেন? তিনি কি পরীকে মরতে বলেছিলেন? কয়েকমাস পরপর বয়ফ্রেন্ড পাল্টাতে বলেছিলেন? পরীর মৃত্যুর জন্য পরী ই দায়ী,আর দায়ী হলাম আমরা। জন্মের পর থেকে অতি আদর,আহলাদ, মাথায় তুলে রাখা, এতো এতো জামা-জুতা-খেলনার বাহার বড় বোনকে দেখিয়ে দেখিয়ে, সর্বনাশের বীজটা তখনই পোঁতা হয়ে গিয়েছিল। খুব ছোটবেলা থেকে সে বিশ্বাস করা শুরু করেছিলো সে সর্বেসর্বা, তার হুকুম আর পছন্দ মতো দুনিয়া চলবে, সবাই তার দাস দাসী। এর ব্যত্যয় হলেই তার মাথায় আগুন। আমরাই ওকে স্বার্থপর, মাথামোটা বানিয়েছি। পুঁথিগত বিদ্যায় তুখোড় হলে কি হবে, ওর আসলে বুদ্ধি, বিবেক জিনিসগুলো ডেভেলপই করেনি। একদম সুপারফিশিয়াল চিন্তা ভাবনার মেয়ে আমার। এখন এতো কাঁদছো কেন বলোতো? আব্বু, তুমি -আম্মু-আনন্দ আর বাবা-মা মিলে আমার মেয়েটাকে সুস্থ মানুষ হতে দিলে না।ও মানসিক ভাবে বিকৃত একটা মেয়ে। তোমাদের জন্য। শুধু তোমাদের জন্য। তোমরা আমার মেয়েটাকে বাঁচতে দিলে না।”
তারপরে তিথি ভাবী জায়নামাজে জ্ঞান হারালেন। পনেরো দিন অচেতন ছিলেন তিনি, আই সি ইউতে। পরীকে আর শেষ দেখা হয় নি তাঁর।

মুকুল ভাই, রন্জু ভাই সব ফর্মালিটিজ সামলেছেন। ভাইঝির কফিনবন্দি
লাশ নিয়ে এসেছেন সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে, সমুদ্র -পলিন-মার্থাও এসেছেন বাবুকে নিয়ে, চাচাদের সাথে। ভাবীর তখন মরণাপন্ন অবস্থা। যে কোনো সময় চলে যেতে পারেন, ডাক্তারেরা এমনই বলেছিলেন। অদিতি সারাক্ষণ মায়ের হাসপাতালে পড়ে থাকতো, একবার যেয়ে দাদা-দাদিকে দেখে আসতো। চোখ শুকনো, মুখ একদম নিস্পৃহ, যন্ত্রের মতো চলাফেরা। কেউ কোনো প্রশ্ন করলে অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর।

পরী আসলো। সেই যে রাগ করে চলে গিয়েছিল, তারপরে আর আসে নি। ভাবীর মা মারা যাওয়ার পরেও আসে নি। এবারে আসলো। সেই ছোট্ট পরী। ওর ছোটবেলায় ও ডানাকাটা পরীর বাচ্চাই ছিলো। খুব বেশি রকমের সুন্দর, ফুটফুটে, তুলতুলে। সবাই ওকে নিয়ে কাড়াকাড়ি করতো। আজ পরীর মৃত মুখেও রুক্ষতা, অতি মদ্যপানের জন্য দুই চোখের তলায় চর্বির ব্যাগ, অতিকায় দেহ।

সেদিন পুরো পরিবার আমরা অঝোরে কাঁদলাম। চিৎকার করে। যতোক্ষণ বুকের চাপ না কমলো,ততোক্ষণ কাঁদলাম। পরীর অকাল ও অপঘাতে মৃত্যুর তীব্র শোক তো ছিলোই, কিন্তু সেই কষ্টকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল আনন্দ ভাইয়ের জন্য শোক, তিথি ভাবীর মৃত্যুর আশংকায় সীমাহীন যন্ত্রণা। ফুপা-ফুপুর সোনার সংসারের এ কেমন অবস্থা !

পরীকে তার বাবার পাশে শোয়ানো হলো। আমি কল্পনা করলাম, আনন্দ ভাইয়া অতি আদরের মেয়েকে বুকের সাথে জাপটে ধরেছেন, ছোট পরীকে যেমন ধরতেন। মেয়ে বাবার গালে চুমু খাচ্ছে। গলা জড়িয়ে আবদার করছে।আহলাদ করে বলছে,”দেখেছো বাবা, চলে এসেছি তোমার কাছে।”

“সে তো আসবিই আমার রাজকন্যা। আমাকে ছেড়ে তো থাকতেই পারতিস না। বাসায় যতোক্ষণ থাকতাম,তোকে কোল ছাড়া করতাম?”

“বাবা,তুমি আমাকে খুব অন্যায় আদর দিয়েছো।”

“দিবোই তো।”

“না বাবা। অতিরিক্ত অন্যায় আদরটা না দিলেই ভালো করতে।”

দাফনের সময় অদিতি আসে নি।সে মায়ের কাছে ছিলো। বোনকে শেষবারের মতো অদিতি দেখলো শুকনো এবং শূন্য চোখে, নির্লিপ্ত মুখে। বোনের মুখে হাত বুলিয়ে দিলো, কফিনে ঝুঁকে পড়ে বোনের দুই গালে চুমু খেলো।

সমুদ্রের চেয়ে পলিন আর মার্থা অনেক বেশি সহানুভূতিশীল আর দায়িত্ব সচেতন। মা-মেয়ে দু’জনই ভালোবাসা আর মমতার ভাণ্ডার। এই কঠিন দুর্যোগেও সমুদ্রের কথাবার্তা তার অফিস, কাজ,ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এগুলো নিয়ে।

দুর্ঘটনার পনেরো দিনের মাথায় ভাবীর জ্ঞান ফিরলো। এক মাস তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হলো। ভাবী কারোর সাথে কথা বলতেন না,কাঁদতেন না,হাসতেন না, খুব ক্ষুধা পেলে সামান্য কিছু খেতেন। আপন মনে তিনি কি ভাবতেন, তা তাঁর চেহারা দেখে বোঝার উপায় ছিলো না। কেউ ডাকলে তাকাতেন না, প্রশ্ন করলে উত্তর দিতেন না। সারাক্ষণ চুপচাপ বসে থাকা নইলে ওষুধের প্রভাবে ঘুমানো। আমরা সবাই তিথি ভাবী অন্ত প্রাণ। আমরা ভাবীর জন্য জান লড়িয়ে দিলাম। অদিতি মা -দাদা-দাদির খেয়াল রাখা আর ব্যবসা দুটোই সমানতালে চালাতে লাগলো। মেয়েটা এমনিতেই শান্ত, স্বল্পভাষী ছিল, এখন সে বলতে গেলে বোবা হয়ে গেলো।

আনন্দ ভাই মারা যাবার পরে একসময় ফুপা-ফুপু আর ভাবীর জীবনে ছন্দ ফিরে এসেছিল, এর কৃতিত্ব সম্পূর্ণ অদিতির। কিন্তু এখন তাঁদের জীবন একেবারে বিবর্ণ, গতিহীন। কোনো ভাবেই তাঁরা মোটিভেটেড হচ্ছেন না। একঘেঁয়ে রুটিন মেনে খাওয়া,নামাজ পড়া, গোসল, চুপ করে বসে থাকা, প্রায় নির্ঘুম রাত কাটানো। আনিলা আপা এবারে এসে মাত্র তিন সপ্তাহ ছিলেন। আমরা কেউ না কেউ সব সময় থাকি। কিন্তু আমরা তো আনন্দ ভাইয়া আর পরীর সাবস্টিটিউট হতে পারছি না।

ফুপুর মনে হয় মানসিক ভারসাম্য অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে অদিতিকে শুনিয়ে বলেন,” মেয়েটাকে সংসারে না আনলে এমন অনিষ্ট মনে হয় হতো না। কিছু মানুষ থাকে অপয়া।” কিংবা, ” যে মেয়ে মায়ের পেটে
আসামাত্র রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়,এতোগুলো মানুষ খুন হয়,সেই মেয়ের নজর খারাপ।” ফুপা নীরব সমর্থন দেন। ফুপু একদিন অদিতির হাত ধরে করুণ গলায় বলতে লাগলেন,” তোর নামে বাড়ি ঘর,সহায় সম্পত্তি সব লিখে দিবো, কিন্তু আর কাউকে খাস না। আমার আনন্দকে খেলি, পরীকে খেলি, কিন্তু আমার সমুদ্র আর তার বাচ্চাকে খাস না, তিথিকে খাস না,আনিলাকে খাস না। দোহাই লাগে। খেতে হলে আমাকে খা। ”

আমরা ফুপুকে বকা দিই। ফুপু রেগে যান। বলেন,”বেশি জানিস? কুফরি কালাম বলে একটা কথা আছে। কালো যাদু বিশ্বাস করিস না,এতো বড় সাহস! ”

আবার মাঝে মধ্যে একদম স্বাভাবিক, ” ও অদিতি দিদিভাই,শুকিয়ে কি হাল?খাস না? আজ থেকে আমার সামনে বসে খাবি।” ” অদিতি রে, আমাদের ছেড়ে কখনও কোথাও যাবি না। কথা দে বুবু।”

আমরা আড়ালে অদিতিকে বলি,”শোকে তাপে ফুপুর মাথার ঠিক নাই রে। তোকেই ফুপু সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।তুই মন খারাপ করিস না,মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

“ফুপি, দাদুমনির কথায় আমি মন খারাপ করবো? কি যে বলো! দাদুমনি কি বুঝে শুনে কিছু বলছে?তবে কি ফুপি, দাদুমনির মনের গভীরে এ ধরণের চিন্তা লুকিয়ে আছে। আরও অনেকেরই। দাদুমনির ভাবনাগুলো কথা হয়ে বের হয়ে আসে। আমার নিজেরও মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমি কি সত্যিই অলক্ষুণে, অপয়া? আমার ভয় হয়, আমার নজর লেগে তোমাদের কারো ক্ষতি হবে না তো?”

“কি যা তা বলিস অদিতি! কষে একটা থাপ্পড় লাগাবো।”

“আব্বুর একটা চিরকুট পড়বে ফুপি? ”

চিরকুটে লেখা, ” সোনা মা আমার, মাঝেমধ্যে আমার দারুণ ভয় হয়।তোমার দাদা-দাদুকে হারানোর ভয়। দু’জনেই স্ট্রোক করলেন, এরপর থেকে ভয়টা জাঁকিয়ে বসেছে। একসময় বাবা চলে যাবেন,মা চলে যাবেন,কি করে বাঁচবো আমি? বেঁচে থাকবো জানি, কিন্তু বড় কঠিন বাঁচা। বাসায় ফিরে বাবাকে দেখবো না,মা আনন্দ বলে ডাক দিবেন না,ভাবা যায়? চিন্তা করলেই অস্হির লাগে। তারপরে তোমার কথা ভাবি, তখন অস্হিরতা কমে আসে। মনে হয়, আমার আরেকটা মা তো আমার কাছে থাকবেই। ”

চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ