Monday, October 6, 2025







শক্তিময়ী পর্ব-১৬+১৭

#শক্তিময়ী
পর্ব ১৬
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

বেশ কয়েক বছর যাবৎ আনন্দ ভাইয়া ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে নেন। এতো বড় চাকরি করেন, সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম। এতো কিছুর মধ্যেও আত্মীয় -বন্ধুদের সময় দেওয়া।কারোর বিপদে সাহায্য করা। ছোটবেলায় আমরা দেখেছি, ফজর পড়ে এই বাড়ির কেউ ঘুমাতেন না।

আজ ফজরের পরে আনন্দ ভাইয়ার ঘুম আসছিলো না। তিনি বাড়ির ছাদে গেলেন। অনেকদিন পরে।

বাহ্ ! আলো-আঁধারিতেও ছাদটাকে অপূর্ব মায়াময় লাগছে। বিভিন্ন ফুলের গাঢ় সুবাস। কতো রঙের,কতো ঢঙের ফুল। বিভিন্ন রঙের গোলাপ, কামিনী, চন্দ্রমল্লিকা, বেলি,জুঁই,কসমস,ডালিয়া, কি নেই? আর এতো পাখি এলো কোথা থেকে? এতো পাখি একসাথে তাঁদের ছাদে তো কখনো দেখেন নি।

ছাদের ঐ কোণায় অদ্বিতীয়া। খাবার ছিটাচ্ছে। রাজ্যের পাখি এসে হামলে পড়েছে। ছোটো ছোট অনেকগুলো পাত্রে পানি। কতোগুলো তৃষ্ণার্ত পাখি জান ভরে পানি খাচ্ছে। অদিতি এক পিস পাউরুটি ধরে আছে। একটা কাক পরম নিশ্চিন্তে সেই পাউরুটি খাচ্ছে।

“অদিতি।”

অদিতি চমকে তাকালো। এতোক্ষণ আনন্দ ভাইয়ের উপস্থিতি সে টের পায় নি।

“এতো ভোরে ছাদে কেন, মা? রাতে ঘুম হয় নি?”

“হয়েছে আব্বু।আপনার ঘুম হয় নি? এতো ভোরে আপনি এখানে যে?”

“এরা কি রোজ এখানে আসে?”

“জ্বী।”

“তুমি কি রোজ ওদের খাওয়াও?”

“জ্বী আব্বু।”

“কবে থেকে?”

“অনেক আগের থেকে, ক্লাস এইটে পড়ার সময় থেকে।”

“বলো কি?আমিতো জানি না। কেউ আমাকে বলে নি। এই বাড়ি যে শ্রেষ্ঠ সুন্দর বাড়ি নির্বাচিত হলো, তুমি গাছপালা লাগানোর জন্য এতো বড় পুরষ্কার পেলে,তখনও তো এই পাখিগুলোর প্রসঙ্গ আসে নি! ”

“ওরা একটু খাওয়া দাওয়া করে চলে যায়, এটা নিয়ে কি বলবো,আব্বু?”

“শুধু ভোরেই খাবার দাও?”

“জ্বী না, তিন বেলা। আমি দুপুরে বাসায় না থাকলে মা বা মাজেদা খালা দিয়ে দেন। ভোরে,দুপুর একটার দিকে, মাগরিবের আগে।”

“কি খাওয়াও?”

“ওদের খাবার কিনে নিয়ে আসি,এছাড়া চাল, ভাত,রুটি, ছোলা,পাউরুটি,কেক, এইসব। আর পানি।”

চারিদিকে কাক,চড়ুই, শালিক,টিয়া, কবুতর,আরও কতো রকমের পাখি।

“তুমি ঘুম থেকে কখন উঠো অদিতি?”

“ফজরের নামাজের খানিকক্ষণ আগে।”

“নামাজ পড়ো?”

“জ্বী আব্বু।”

“পাঁচ ওয়াক্ত ই?”

“জ্বী।”

“ফজরের নামাজের পরে আর ঘুমাও না?”

“জ্বী না আব্বু।”

“তাহলে তো রাতে তোমার আগে আগে শুয়ে পড়া দরকার,মা। দিনে সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমাতে তো হবেই। কি নিয়ে পড়াশোনা করবে ভেবেছো?তুমি বিদেশে পড়তে চাও?”

“জ্বী না আব্বু।”

“খরচ নিয়ে চিন্তা কোরো না। তুমি বিদেশে পড়তে যেতে পারো অনায়াসে, সমুদ্র গেছে, দুই বছর পরে এ লেভেল শেষ করে পরীও যাবে, তাহলে তুমি না কেন? ”

“আব্বু,আমি বিদেশে অ্যাডজাস্ট করতে পারবো না।আমি দেশেই থাকবো।”

“কিসে ইন্টারেস্ট তোমার? কোথায় পড়তে চাও?”

“ঢাকা ভার্সিটিতে পড়তে চাই, আব্বু। ইকোনমিকস ফার্স্ট চয়েস।”

” তুমি বিজ্ঞানে,অংকে এতো ভালো,সায়েন্সের কোনো সাবজেক্টে পড়তে চাও না? মেডিকেল বা বুয়েটে? ”

“আসলে আমিও পাজলড আব্বু।”

” তোমার মা বা দাদা কোনো পরামর্শ দেন নি?”

“দিয়েছেন, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না যে কি পড়বো।”

“ওকে। এই নিয়ে তাহলে আমরা একটা মিটিং এ বসবো।”

আনন্দ ভাইয়া মেয়ের প্রতি ভীষণ মমতা অনুভব করলেন। অদিতি তাঁর ঔরসে তিথির গর্ভে হয় নি,তাতে কি? তাঁর নবজাতক অদিতির কথা মনে হলো, তিন মাস বয়সে তিথি যখন ওকে বাড়ি নিয়ে এলো, সেই তুলতুলে বাচ্চাটার কথা মনে পড়লো। মনে পড়লো, রাতের বেলায় শুধুমাত্র আয়ার সাথে এক ঘরে থাকা ছোট্ট অদিতির কান্নার কথা, কাঁদতে কাঁদতে গলা ভেঙে যেতো, আয়া হয়তো তাকে ভেজা কাঁথাতে ফেলে রাখতো, ফিডার দিতো না,দিলেও সেটার তাপমাত্রা ঠিক হতো না, হয়তো অদিতির ভয় লাগতো, শীত বা গরম লাগতো, পেট ব্যথা হতো কিংবা ক্ষুধা লাগতো ভীষণ অথবা তিথির নিরাপদ ও ভালোবাসাময় কোলের জন্য তার প্রাণ ছটফট করতো। সে তার অসুবিধার কথা জানান দিতো তারস্বরে কেঁদে। আর সেই কান্না শুনে আনন্দ ভাইয়ার ইচ্ছে হতো বাচ্চাটাকে একটা আছাড় মারার। ছি ছি, কি অন্যায়ই না তিনি করেছেন বাচ্চাটা এবং তিথির সাথে।

হালকা-পাতলা, ছিপছিপে মেয়েটার পানপাতা গড়নের ভারি মিষ্টি মুখটার দিকে তাকিয়ে তাঁর হঠাৎ মনে হলো, অদিতি এতো মিষ্টি মুখশ্রী জেনেটিক ভাবে কার কাছ থেকে পেয়েছে? তার জন্মদাতা নাকি গর্ভধারিণী? এতো সুন্দর চোখজোড়ার সাথে কার চোখের মিল?অদিতির বাবার,মায়ের, খালার,দাদীর, কার সাথে এতো মিল? কি হতভাগ্য বাপ-মা। এমন ফুলের মতো সুন্দর মেয়ের সান্নিধ্য হতে নিজেরাই নিজেদের বঞ্চিত করলো। আর বিধাতার ইচ্ছা বুঝাও মানুষের অসাধ্য। এতো চমৎকার একটা মেয়ে জন্ম নিলো কিনা অসৎ চরিত্রের মহিলার পেটে,লম্পট একটা লোকের ঔরসে? নানা,নানিও মহা ঠগবাজ। মেয়ের পেটে বাচ্চাটাকে আর দুই মাস রাখতে রাজি হয়েছিলো তিথির অনেক কাকুতি মিনতি ও অনেক টাকার বিনিময়ে, তাছাড়া তাদেরকে আর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে পুলিশে দেওয়া হবে,তিথির এমন হুমকিতে। এতো টাকা পেয়েও তারা বারবার বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নিতো তিথির কাছ থেকে, যুক্তি ছিলো মেয়েকে এই অবস্থায় গ্রামের বাড়ি বা আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে নেওয়া যাবে না, লোক জানাজানি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। কাজেই এখানে একটা ঘর ভাড়া করে থাকতে হবে,তিনজনের খাওয়ার খরচ। প্রেগন্যান্ট মেয়েটার বাবা-মা ঢাকাতে যখন এসেছে তাহলে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে যাওয়া ভালো। চোখে কম দেখছে তাই ভালো চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে।ডাক্তার চশমা পরতে বলেছেন,সুতরাং চশমা কিনে দাও। বুকে প্রায় ব্যথা করে,হার্টের ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করো। গ্রামে বড় দোকান করার টাকা তো দিয়েছিলেনই তিথি ভাবী । আনন্দ ভাইয়া বারবার বলেছিলেন ওদেরকে আর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে পুলিশকে জানাতে,তিথি ভাবী রাজি হন নি। কি প্রমাণ আছে যে ওরা গর্ভপাত করাতে এসেছে? আর এইসব ক্লিনিকগুলোতে যে মোটা টাকার বিনিময়ে অনেকেই পেট খালাস করতে আসে,তা কি পুলিশ জানে না? বাচ্চাটা ভালোই ভালোই জন্ম নিক,এটা ছাড়া তিথি ভাবীর আর কিছু চাওয়ার ছিলো না।

এই সেই বাচ্চা। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে অদিতির মতো লক্ষী, ভদ্র, নির্লোভ, নিঃস্বার্থ, সৎ,সত্যবাদী, পরোপকারী মেয়ে মোটামুটি বিরল। আরও আছে। অদিতি ধর্মপ্রাণ, সহিষ্ণু, কঠিন পরিশ্রমী,বুদ্ধিমতী।অদিতি বড্ড মমতাময়ী। ওর আত্মমর্যাদা জ্ঞানও টনটনে। এতো সুন্দর মন মানসিকতা নিয়ে বড় হচ্ছে এই মেয়ে, সবটাই কি তিথির শিক্ষা ও যত্নের ফল? এর চেয়ে বেশি সুশিক্ষা, শ্রম,সময় তো তিথি সমুদ্র আর পরীকেও দিয়েছে, ওরা ভালো,কিন্তু অদিতির ধারে কাছে নয়। জিন বলে একটা ব্যাপার আছে, অদিতির মধ্যে কি তার নিজের বাপ-মা, পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের জিনের প্রভাব নেই? চোর বাটপারদের একটা ফ্যামিলি।

আনন্দ ভাইয়া নিজের ভাবনায় লজ্জিত হলেন। এতো কথা ভাবছেন কেন তিনি?অদিতি তাঁর ও তিথি ভাবীর মেয়ে। ব্যাস, অদিতির আর কোনো বাপ-মা নেই। অদিতির জন্মের কয়েক ঘন্টার মধ্যে পালিয়েছে ওরা। মেয়েটা তার বাচ্চাকে দেখে নি,দেখতেও চায়নি। বদমাশ মেয়ে একটা।
থাক,গালি দেওয়ার দরকার নেই। হাজার হোক,মেয়েটা অদিতিকে নয় মাস পেটে ধরেছিল।

আহা রে অদিতি। আনন্দ ভাইয়ার এতোদিনে বুঝি পুরোপুরি চোখ খুললো। ছোট্ট থেকে মেয়েটাকে কথা আর ব্যবহার দিয়ে অনেকেই জানিয়ে দিয়েছে, “এই পরিবার তোমার নয়। তোমাকে এই পরিবারে কেউ চায় না একজন-দুজন ছাড়া। তুমি এই সংসারের সমস্ত অশান্তির মূল। তোমাকে তোমার নিজের মা-বাপ-পরিবারের কেউ চায় নি, তুমি ওদেরও অশান্তির কারণ ছিলে, ওরা তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো,একান্ত ভাবে চেয়েছিলো। দেখেছো,তোমাকে কেউ ভালোবাসে না। যাকে মা বলে ডাকো,সে নিতান্ত ভালোমানুষ বলে তোমাকে খেতে-পরতে দিচ্ছে। এমন যদি হয়,তাকে এমন অবস্থায় পড়তে হলো যে, তার সন্তানদের যে কোনো একজনকে চির বিসর্জন দিতে হবে,সে এক মুহূর্ত চিন্তা না করে তোমাকে বিসর্জন দিবে।পরী বা সমুদ্রকে কখনোই নয়। ”

এসব কথায় রক্তাক্ত হতে হতে, সবার ঘৃণা, অবহেলায় বড় হয়েছে অদিতি।

অফিস থেকে ফেরার পর থেকে আনন্দ ভাইয়াকে খুব আনমনা দেখে তিথি ভাবী জানতে চাইলেন কি হয়েছে।

“তিথি, গতকাল তুমি আম্মাকে এতো অপমান করলে, তোমার ঐ বাসায় যাওয়া উচিৎ। আম্মার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। ”

“তা তো যাবোই। আব্বু -আম্মুকে দেখাশোনার ব্যাপার আছে না? উনাদের কয়েকদিন না দেখলেই আমার দম আটকে মরার দশা হয়।তবে ক্ষমা চাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমি কোনো অন্যায় কথা বলিনি যে আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে।”

“এখন যাবে? ”

“যাওয়া যায়।”

তিথি ভাবী বাপের বাড়ি ঢুকলেন বরাবর যেমন ঢুকেন তেমনি স্বাভাবিক ভাবে। বাবা-মায়ের পছন্দের খাবার নিয়ে, মায়ের একটা ওষুধ প্রায় ফুরানোর পথে, সেই ওষুধ দুই মাসের পরিমাণ নিয়ে, গৃহকর্মী সেবারে কথায় কথায় বলছিলো তার কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি খুব পছন্দ, তার জন্য সেই রঙের খুব ভালো মানের টাঙাইল সূতি শাড়ি, দুই ডজন কাঁচের চুড়ি নিয়ে।

বাবা-মা জামাই আদর করলেন অনেক,মেয়ের সাঘে গম্ভীর। ভাবীর মা বললেন,”তিথি,আমাদের আল্লাহর রহমতে টাকা পয়সার সমস্যা নেই। তোমার ওষুধ আনার দরকার নেই। এই ওষুধগুলোও ফিরিয়ে নিয়ে যাও।”

“এই ওষুধ আমি ফিরিয়ে নিয়ে কি করবো? আর তোমরা বরাবরই অনেক বড়লোক। কিন্তু আমি বিয়ের আগ থেকে তোমাদের ওষুধ নিজে কিনে আনি। এটা আমার অভ্যাস বা শখ। তোমরা ওষুধ কিনতে ভুলে যাও। এখন নতুন করে এমন অফিস আদেশের কারণ কি?”

“তুমি গতকাল যেমন আচরণ করেছো,তার পরে তোমার কাছ থেকে কিছু নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।”

” গতকালের ব্যবহারের জন্য আমি এতোটুকু লজ্জিত বা অনুতপ্ত নই আম্মু। আমি তোমাকে একটাও অন্যায় কথা বলিনি। ”

“ভালো কথা। তুমি অন্যায় করো নি। আমিই দোষ করেছি। আমিই তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ক্ষমা চেয়ে বলছি,আমি আর তোমার আব্বু আমাদের জীবদ্দশায় তোমার কোনো রকম সাহায্য নিবো না। উপহার,খাবার,ওষুধ পত্র কিচ্ছু না,সেবাও না। তুমি তোমার ইচ্ছামতো আসবে,থাকবে,এটা তোমারই বাসা।কিন্তু আমরা তোমার বাসায় আর যাচ্ছি না বা তোমার কোনো উপহার গ্রহণ করছি না।”

“এ কেমন কথা বলছেন আম্মা! তিথির বাসায় যেতে না চাইলে যাবেন না,কিন্তু আমি কি দোষ করলাম? আমার বাসায় আসবেন। বাবা-মা আপনাদের সাথে কয়েকদিন গল্প না করতে পারলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আপনারা আসবেন না মানে?”

“বাবা, আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া, এমন বেয়াই বেয়ান পেয়েছি। উনারা যখন খুশি চলে আসবেন, তোমরা আসবে। পরীকে আনলে না কেন?”

“বলেছিলাম আম্মা। আসলো না। আজ তাদের ফ্রেন্ডদের স্পেশাল গ্রুপ চ্যাটিং,ভিডিও কলের ডেট। সেটা ফেলে সে আসবে না।”

“যুগটাই এমন। এই বয়সে এমন একটু করবেই। ”

“অদিতি তো এমন নয় আম্মা। ও তো পরীর থেকে মাত্র এক বছর নয় মাসের বড়। ”

“বাবা আনন্দ, কার সাথে কার তুলনা করছো বাবা? কোথায় আমার পরী আর কোথায় ঐ বেজাত একটা মেয়ে ! ”

শ্বশুর -শাশুড়ি আর তিথি ভাবীকে হতভম্ব করে দিয়ে আনন্দ ভাইয়া বললেন,” এভাবে বলবেন না আম্মা। অদিতি আমার বড় মেয়ে। সমুদ্র -পরীর চেয়ে কোনো অংশে ও আমার কাছে কম নয়। অনেক, অনেক জুলুম করেছি আমার মেয়েটার উপরে।ভাবলে নিজেকে খুব নীচ মনে হয়। অদিতি আমার আর তিথির মেয়ে।তিন ছেলেমেয়েই আমাদের কাছে সমান।”

চলবে।

#শক্তিময়ী
পর্ব ১৭
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

ভাবীর আব্বা আম্মা কোনোভাবেই মেয়ের রান্না করে আনা খাবার,ওষুধ রাখলেন না। আনন্দ ভাইয়া বললেন,” এই খাবারগুলো শখ করে আমি আপনাদের জন্য কিনেছি,আপনারা ভালোবাসেন বলে।এগুলো রাখতেই হবে।”

অনিচ্ছা স্বত্বেও খালাম্মা-খালু আনন্দ ভাইয়ের কেনা খাবারগুলো রাখলেন । তিথি ভাবীর আব্বা -আম্মাকে আমরা কেউ বলি খালু-খালাম্মা,কেউ ডাকি আংকেল-আন্টি।উনারা আমাদের খুব প্রিয়। অনেক আদর পাই উনাদের কাছ থেকে। এখন মনে হয়, আমাদের কেউ যদি এতো ধনী,উচ্চশিক্ষিত, প্রভাবশালী না হতো, তাহলে সে এতোটা আদর যত্ন পেতো কি? হয়তো পেতো,হয়তো পেতো না।ফুপা,ফুপুরটা বলতে পারি। সব নিকটাত্মীয়ই শিক্ষিত,স্বচ্ছল। অল্প কয়েকজন আছেন যাঁরা নিম্নবিত্ত। শুধু মাত্র নাম স্বাক্ষর করতে পারেন,এমন আত্মীয়ও আছেন ফুপা ও ফুপুর সাইডে। আমাদের এক দূরের আত্মীয় আছেন যিনি রিকশা চালান। কয়েকজন দুলাভাই বা ভাবীদের বাবার বাড়ির সদস্যরা আছেন যাঁরা আর্থিক বা শিক্ষাগত যোগ্যতায় কিংবা সামাজিক অবস্থানে আমাদের ধারে কাছে নন। কিন্তু ফুপা,ফুপুর বা আমার বাপ,চাচা,অন্যান্য ফুপুদের কাছে তাঁদের আদর যত্নের, সম্মানের কোনো ত্রুটি হয় না। বিশেষ করে আনন্দ ভাইয়াদের বাসায়। ফুপা-ফুপু তাঁদের আদরে, সম্মানে ভরিয়ে রাখেন। তাঁদের পছন্দের খাবারের আয়োজন করেন। ডাক্তার দেখাতে নিয়ে
যান। দর্শনীয় নানা জায়গায় ঘুরাতে নিয়ে যান।তাঁদের নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি বেড়াতে যান। তাঁদের পরিচয় দিতে সামান্য কুন্ঠাও বোধ করেন না। তাঁদের আরও কটা দিন থাকার জন্য চাপাচাপি করেন।আনন্দ ভাইয়া আর তিথি ভাবী আরেক কাঠি সরেস।

এই শিক্ষাটা আমার বাবা-চাচা-ফুপুরা তাঁদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। আমার দাদা-দাদী খুব ভালো ভাবে সব ক’জন সন্তানকে মানুষ করেছেন। ছোট থেকে নামাজ পড়া,রোজা রাখা ছিলো বাধ্যতামূলক। কোরান শরীফ পড়তে হতো নিয়মিত। আমার দাদাজান ঐ আমলে আলীগড় ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে এম.এ পাশ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে এমএসসি করেন। তিনি পাক ভারত উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত আলেমের কাছ থেকে কোরান শরীফ, এর অনুবাদ , ব্যাখ্যা, ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রভূত ও সঠিক জ্ঞান লাভ করেন। অর্জিত জ্ঞান তিনি স্ত্রী -পুত্র -কন্যা-আত্মীয় -বন্ধু, পরিচিত সবার মধ্যে বিতরণ করেছেন। ধর্মের প্রতিটা নিয়ম কানুন তিনি নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। পরম ভক্তির সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রমজান মাসে তিরিশ রোজা রাখা, পাই পাই হিসেব করে যাকাত আদায় করা এগুলোতে করতেনই। হজ্জ একবার আদায় করেছেন উনার বাবা-মা,দাদির বাবা-মা আর দাদিকে নিয়ে। এরপরে অনেকে ওমরাহ করার উপদেশ দিয়েছেন। দাদা ওমরাহ করেন নি। তিনি গ্রামে ছেলেদের ও মেয়েদের জন্য আলাদা আলাদা হাই স্কুল ও একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুল-কলেজে লেখাপড়া,খেলাধূলা,সংস্কৃতি চর্চা কেমন হচ্ছে, নৈতিক শিক্ষা কেমন দেওয়া হচ্ছে, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি নিজে যেয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। দাদার নানার বাড়ির গ্রাম খুব অনুন্নত ছিলো। দাদা সেখানে বড় একটা দালান তৈরি করেন এতিম ও দরিদ্রদের জন্য। সেখানে চার বেলা এতিমরা ভালো, পুষ্টিকর খাবার পায়, বছরে তিনবার ভালো জামাকাপড় পায়। নিজেই কয়েকজন শিক্ষক নির্বাচন করেছিলেন দাদা,তাঁরা শিশুদের যত্ন করে পড়াতেন। সেই শিক্ষকদেরও উপযুক্ত বেতন, সুবিধা -অসুবিধার দিকে দাদার তীক্ষ্ণ নজর ছিল। দাদার বাবা-মায়ের অসুস্থতার সময় তিনি নিজে বাপ-মায়ের সেবা করতেন, মল-মুত্র দুই হাতে সাফ করতেন, এসব কাজে ভাইবোনদের সাহায্য নিতেন কিন্তু কখনো নিজের বৌ বা ভাইদের বৌদের ডাকতেন না। দাদি, আরও দু’একজন ভাই বৌ সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা যত্ন করতেন। তখন দাদা বাধা দিতেন না। দাদাজানের এক বোন বাবা-মা’কে দেখতে আসতেন না বললেই চলে। আসলেও বাবা-মায়ের কাছে থাকার চাইতে এর ওর সাথে গল্প করায় তাঁর মন বেশি ছিলো। দাদার আব্বা-আম্মা এই মেয়েকে খুব দেখতে চাইতেন। প্রায়ই বলতেন,”আমিনা কোথায়?ভালো আছে? ওকে দেখতে ইচ্ছা করে। মরার সময় সব সন্তান পাশে থাকিস।”

দাদাজান একদিন গেলেন বোনের বাড়ি। তাঁরাও খুব অবস্থা সম্পন্ন। দাদাজান বোনকে বললেন,” আব্বার অবস্থা বেশ খারাপ। যে কোন সময় ইন্তেকাল করতে পারেন। মায়ের অবস্হাও ভালো না। তোর কথা সারাক্ষণ বলেন। তুই কিছুদিন আব্বা-মায়ের কাছে থাক।”

“আমি কি ভাবে থাকবো ভাইজান?আমার বাচ্চাকাচ্চার কি হবে?আমার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি? এতো বড় সংসার ফেলে যাওয়া যায়?”

“আমি কি তোকে আমার ভাগ্নে-ভাগ্নি ছাড়া যেতে বলতে পারি,বোন? ওরাতো তোর সাথেই থাকবে। ওদের স্কুলে আনা নেওয়ার ব্যবস্হাও আমরা করবো। আমরা এতোজন থাকতে আমাদের ভাগ্নে ভাগ্নির দেখাশোনার কোনো ত্রুটি হবে না,ইনশাআল্লাহ। তাঐ সাহেব,মা ঐ আম্মা, ভাই সাহেব,আপনারাও দয়া করে চলুন। আপনাদের কোনো অসুবিধা হবে না।”

“সুবিধা অসুবিধার কথা না। আমরা তোমাদের বাসায় যেয়ে থাকবো কেন?পাশাপাশি গ্রাম। আমিনারও থাকার দরকার কি?মাঝেমধ্যে যাবে, সারাদিন থেকে চলে আসবে। থাকাথাকির দরকার কি? তোমাদের বাড়িতে লোকজন, চাকর বাকরের অভাব? ”

“মাঐ আম্মা,চাকর শব্দটা ব্যবহার না করাটাই ভালো।আমরা সবাই আল্লাহর চাকর। আর যাঁরা আমাদের বাড়িতে কাজ করেন,তাঁদের দিয়ে আমরা সব কাজ করাই না। আব্বা-আম্মার ময়লা পরিস্কারের দায়িত্ব আমাদের সন্তানদের। বাবা-মায়ের সেবা করা প্রত্যেক সন্তানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। ”

“তা তোমরা ভাইরা তো সব এক বাড়িতেই থাকো। বৌরা কি করছে?এতোগুলো বৌ।”

আমিনা বললেন,”দুঃখের কথা বলবেন না আম্মা, ঐ বাড়িতে আমার ভাইরা কাজ করবেন তবু বউদের কাজ করতে দেবেন না। বউরা কাজ করলে কি আমাকে ডাকার দরকার হয়? আমরা বোনরা যাবো,বাপ-মায়ের কাছে বসবো, তাঁদের সময় দিবো, কিন্তু নিজেদের ঘর সংসার ফেলে আমাদের ওখানে যেয়ে থাকতে হবে, আব্বা-মা’কে আমাদেরই সেবা করতে হবে ঘরে এতোগুলা বৌ থাকতে?”

“তোর আব্বা-মায়ের জন্য মন টানে না,আমিনা?”

” টানবে না কেন,ভাইজান। খুবই মন টানে। কিন্তু সংসার ছেড়ে যাওয়া সম্ভব?দু’চারদিন হলে হয়।”

“আচ্ছা, তোর সময়মতো আসিস।আব্বা-মা তোকে খুব দেখতে চান।”

” মেয়ে বিয়ে দিয়ে পরের ঘরে পাঠিয়ে অতো ডাকাডাকি করা উচিৎ না। তাহলে মেয়ে সংসারে মন বসাবে কেমন করে? শ্বশুর ঘর মেয়েদের নিজের ঘর। শ্বশুর শাশুড়ি, স্বামী,বাচ্চা কাচ্চা এদের ফেলে দুদিন পরপর বাপের বাড়ি দৌড়ানো যায় না। তোমার বাপ মায়ের সেবার দায়িত্ব এখন পুরোপুরি বৌদের,মেয়েদের না। মেয়েরা তাদের শ্বশুর -শাশুড়ির সেবা করবে। এটাই নিয়ম।”

“আসি মাঐ আম্মা। শুধু এটুকু বলি, বাপ-মাকে দেখাশোনা করা ছেলেমেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক, শ্বশুর -শাশুড়ির সেবা নয়। তবে যার মধ্যে মানুষ বাস করে, সে বাপ-মা-শ্বশুর-শাশুড়ি সবারই দরকারে পাশে থাকে। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের বাড়ির বৌরা যেভাবে আব্বা-মায়ের দেখাশোনা করছে, আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুন। তাদের পরিবারের খারাপ সময়ে তারা তো পাশে থাকেই,আমরাও সন্তানের মতো পাশে থাকি। আর আমিনা,তোকে সেবা করার জন্য না,বাপ মায়ের পাশে কটা দিন থাকার জন্য নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। ”

দাদাজানের আব্বা মারা যাওয়ার পর প্রথম সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে কথা উঠালেন আমিনা আর তাঁর স্বামী। তিন বোনকে তাঁদের ন্যায্য পাওনা কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দাদাজান। এর দু’বছরের মধ্যে আমিনা আরেকটা সন্তান প্রসব করতে যেয়ে মারা যান। দাদাজান ভাগনে ভাগনিকে আপন সন্তানের মতো মানুষ করেন। নবজাতক আমার দাদির কোলে আশ্রয় পায়। আমার সেই চাচা-ফুপুরাও সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁদের বাবা মানে আমীনার স্বামী বৌয়ের মরার তিন মাসের মধ্যে আবার বিয়ে করেন।সেই সংসার মোটেও সুখের হয় নি। আমিনার প্রতাপশালী শ্বশুর শাশুড়ি অনেক কষ্ট পেয়ে তিলে তিলে মারা যান। শরীরে ঘা হয়ে গিয়েছিল। নড়তে চড়তে পারতেন না। ছেলেরা দেখতো না,বৌরা দূরের কথা। চার মেয়েকে বারবার খবর পাঠিয়েছেন লোক মারফত, তাঁরা সহজে আসতেন না। আসলেও দুদিনে হাঁপিয়ে উঠতেন। ছেলেমেয়ে,সংসার,শ্বশুর শাশুড়ির দোহাই দিতেন। ভাই বোন ভাবীদের মধ্যে বিচ্ছিরি ঝগড়াঝাটি হতো।

আমার দাদা খুব বাপ-মা অন্ত প্রাণ প্রাণ মানুষ ছিলেন। পাশাপাশি শ্বশুর শাশুড়ির দেখাশোনা করেছেন খুব। বৃদ্ধ চাচা,মামা,আত্মীয়দের হক আদায় করেছেন। মিথ্যা কথা, মিথ্যাচার একদম সহ্য করতে পারতেন না। খুব সৎ ছিলেন। প্রতিদিন কোনো দরিদ্র অতিথিকে যত্ন করে খাওয়াতেন। ছোট বড় সবাইকে সম্মান করতেন। দাদাজান নামাজে সিজদারত অবস্থায় মারা যান।

আমার দাদী ছিলেন খুব সুন্দর, পুতুলের মতো। দাদি বি এ পাশ করেছিলেন তাঁর বিয়ের পরে। দাদাজানের গুণগুলি দাদির মধ্যেও ছিলো। তিনি সমাজসেবা করতেন। লক্ষ লক্ষ টাকার আয়োজন করে দামী শাড়ি পরে কয়েক হাজার টাকার জিনিস দান করার মতো দান নয়। দাদি অভাবীকে দান করতেন গোপনে। দাইয়ের কাছে কাজ শিখে নিয়ে তিনি,এতো বিদ্যাবতী, সমাজের একজন কর্তা ব্যক্তির স্ত্রী, কৃষক গিন্নির প্রসব করাতেন। দাদি মহিলাদের সেলাই ফোঁড়াই শেখাতেন। একটা মহিলা সমিতি গড়ে তুলেছিলেন আমার দাদি যেখানে বিপন্ন,দরিদ্র মহিলাদের বিভিন্ন কাজ শেখানো হতো স্বনির্ভর হওয়ার জন্য।

দাদা-দাদির সম্পর্ক খুব মধুর ছিল। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিলো খুব। বাবা-মায়ের কাজ কর্ম ছোট বেলা হতে দেখে,তাঁদের সুশিক্ষা পেয়ে আমার বাবা-চাচা-ফুপুরাও হয়েছেন অনেকটা আমার দাদা-দাদির মতো। প্রচন্ড মানবিক।

শুধু অদিতির ক্ষেত্রে ফুপু প্রচন্ড অমানবিক হলেন। অদিতির প্রতি নিষ্ঠুর আচরণকে তিনি হালাল মনে করতেন।

এক বিকেলে ফুপু ঘুম থেকে উঠে কাঁদতে আরম্ভ করলেন। ব্যাকুল হয়ে কান্না।কাউকে কারণ বলছেন না। আসর আর মাগরিব পড়লেন। কোরান শরীফ পড়লেন দীর্ঘক্ষণ। কোনোভাবে তাঁকে সন্ধ্যার নাশতা বা রাতের খাবার খাওয়ানো গেলো না। দীর্ঘ মুনাজাত শেষ করে ফুপু অদিতিকে কাছে ডাকলেন। সে উদ্বিগ্ন হয়ে পাশেই বসেছিল। ফুপু অদিতিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। জানা গেলো,অনেক বছর পরে ফুপু তাঁর বাবা-মাকে স্বপ্ন দেখেছেন। অথচ তাঁদের কথা তিনি সারাক্ষণই ভাবেন। স্বপ্নে ফুপুকে দাদা বলছিলেন, “আম্মা, তুমি এতো জালেম? অনেক কষ্ট পাচ্ছি, আম্মা। ” নিশ্চয় আব্বা অদিতির ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছিলেন।

তিথি ভাবী বললেন,” মা, এই কথাটা আপনার অবচেতন মনই আপনাকে বারবার বলে। বছরের পর বছর ধরে বলে। কিন্তু কাজ তেমন হয় নি দেখে আপনার মন এবারে নানাকে মিডিয়াম বানিয়ে বললো।”

ফুপু অদিতিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলেন। তাঁর অসুস্থতার সময় অদিতি যে সেবা করেছিলো,তা তুলনাহীন। ফুপুর বুক হঠাৎ ধ্বক করে উঠলো। তিনি তাঁর বহুকাল আগে মরে যাওয়া দাদির সাথে অদিতির তীব্র মিল পাচ্ছেন, মায়াভরা চেহারায়, উজ্জ্বল চোখজোড়ায়, সবচেয়ে বড় কথা,অসম্ভব সুন্দর কাজকর্ম, আচরণ, মন মানসিকতায়। এক মুহূর্তের জন্য ফুপুর মনে হলো, অসাধারণ মায়াবতী দাদিই অদিতি হয়ে তাঁর সংসারে পা রেখেছেন।

চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ