#শক্তিময়ী
বড় গল্প
দ্বিতীয় পর্ব
নাহিদ ফারজানা সোমা
কাহিনীর শুরুটা বেশ লেগেছে না? সমস্ত আইন -কানুন মেনে ভাবীর মেয়ের গৃহপ্রবেশ হলো। আমরা সদর দরজায় কিছু সাজ-সজ্জার ব্যবস্থা করেছিলাম নতুন অতিথির আগমন উপলক্ষে, আনন্দ ভাইয়া টান মেরে ছিঁড়ে ফেললেন। ভাবী যখন মেয়ে কোলে ঘরে ঢুকলেন, আমার ফুপা-ফুপু তাঁদের ঘরে। দরজা বন্ধ। ভাবীর আব্বা-আম্মা আসেন নি।আমাদের কোনো মুরব্বি আত্মীয় স্বজন আসেন নি। ভাবীর বিশাল বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্য অনুপস্থিত। তাদের অভিভাবকেরা আসার অনুমতি দেন নি। ফুপা-ফুপুর বাড়িতে সবসময় মেহমানের আনাগোণা। সেই ফুপু কাল রাতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন আজকে যেন আমরা তাঁর বাসায় ভীড় না করি।ফুপুর শরীর খারাপ।
ভাবী ফুপা-ফুপুর দরজায় টোকা দিয়ে বললেন,”বাবা, মা, আসবো?”
কোনো উত্তর এলো না।
ভাবী আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার নক করলেন।
ফুপু কঠিন স্বরে বললেন,”আমাদের বিরক্ত কোরোনা। আমাদেরকে আমাদের মতো থাকতে দাও, তুমি তোমার মতো থাকো।”
“বাচ্চাকে একটু দেখবেন না মা? ”
ঠাস করে দরজা খুলে গেলো। ফুপুর মুখ রাগে টকটকে লাল।
” কেন বিরক্ত করছো? যাও এখান থেকে। দ্বিতীয় বার এমন ধরনের আব্দার যেন না শুনি।”
আনন্দ ভাইয়া আমাদের বাইরের গেট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে চলে গেছেন। তাঁর মুখ শ্রাবণের আকাশের মতো ঘোর অন্ধকার।
ভাবীর মনটা খুব খারাপ হয়েছে বুঝতে পারছি। কিন্তু তিনি নিজেই হেসে বললেন, “দু’এক দিন এমন চলবে,তারপরে সব ঠিক হয়ে যাবে।এটুকু রি-অ্যাকশন খুব স্বাভাবিক। ”
সবচেয়ে বড় বাধা হলো সমুদ্র। আমার ভাই পো।আনন্দ ভাইয়ের ছেলে। মাত্র পাঁচ বছর বয়স। তাকে অনেক আগে থেকে ভাবী খুব চমৎকার করে কাউন্সেল করেছেন। তার নিজেরও আগ্রহ ছিলো খুব। কিন্তু আজ পাশা উল্টে গেছে। সমুদ্র তারস্বরে চিৎকার করছে। বাচ্চাটা তার বোন না। ও ফকিরের বাচ্চা। ও এই ঘরে থাকতে পারবে না। মায়ের কাছেও ও থাকতে পারবে না। তারপরে পাঁচ বছরের সমুদ্র যা বললো,আমরা আকাশ থেকে পড়লাম,”ডটার অফ এ বিচ।”
তিথি ভাবীর গুণের প্রশংসা না করে পারা যায় না। এতোটুকু ধৈর্য্য হারা না হয়ে সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে বললেন,”তুমি যা বলেছো,তার মানে কি?”
“জানি না, বাট সি ইজ এ ডটার অফ বিচ। এ ডার্টি গার্ল।”
“না বাবা, ও লক্ষী মেয়ে। তোমার মতো অতো লক্ষী না অবশ্য। দেখো, কি করে ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছে। ”
“আমি ওর ভাই না।ও ফকিরের বাচ্চা। সরাও ওকে।”
আমাদের সবার খুব খারাপ লাগছে। সমুদ্র ভারি লক্ষী ছেলে। এই নিষ্পাপ শিশুর মাথায় ও কানে এসব কে ঢোকালো?
আমি বললাম, “সমুদ্র বাবা, তোমার ফুপ্পিসোনাকে তোমার আব্বু আদর করেন না? ”
“করেন।”
“অল্প না বেশি? ”
“বেশি।”
“তোমার আব্বুতো বড় ভাই, ফুপ্পিসোনা ছোট বোন। তাই আব্বু ফুপ্পিসোনাকে অনেক ভালোবাসেন। ঠিক তুমিও হচ্ছো বড় ভাই আর ও হলো তোমার ছোট বোন….”
পিছন থেকে আমার ফুপির গলা শুনলাম।
” তোকে কি ভাড়া করে আনা হয়েছে লেকচার দেওয়ার জন্য? কোন সাহসে বলতে যাস, ঐ বেজন্মাটা আমার নাতির বোন?”
তিথি ভাবী আর্তনাদ করে উঠলেন,”কি বলছেন মা? কি শব্দ শেখাচ্ছেন নিজের নাতিকে? আর এই বাচ্চার উপরে এতো আক্রোশ কেন মা?আমি তো আপনাদের অনুমতি নিয়েছি। ”
“মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে অনুমতি নিয়েছো। যা করেছো,তাকে অনুমতি নেয়া বলে না। ঘর আর ঘর রইলো না,নরক হয়ে গেলো। সমুদ্রের ধারে কাছে এই বাচ্চাকে রাখবে না বলে দিলাম।”
আমি আমার চিরচেনা ফুপুর এই রূপ দেখে অবাক হচ্ছিলাম খুব। আমার রূপবতী, গুণবতী, মায়াবতী ফুপু। বাপ-মা-ভাই-বোন, ভাই বোনদের আন্ডাবাচ্চা, স্বামী,সন্তান,শ্বশুরবাড়ির লোকজন,পাড়াপ্রতিবেশী সবার জন্য ফুপুর মায়া। মিথ্যা মায়া না,খাঁটি ভালোবাসা। গরীব -দুঃখীর প্রতি ভালোবাসা।এতো মমতাময়ী নারী তিন মাস বয়সী একটি বাচ্চাকে সহ্য করতে পারছেন না।কি আশ্চর্য !
পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো। ভাইয়া ফিরলেন অনেক রাত করে। তারপরে ফুপু-ফুপা এবং ভাবীর অনুরোধ অগ্রাহ্য করে না খেয়ে শুতে চলে গেলেন গেস্ট রুমে। ভাবীর সাথে কোনো বাক্যালাপ নেই।
রাতে সমুদ্র ভীষণ জ্বালাতন করলো। সে বাবা-মা দু’জনের মাঝখানে শোবে।আর সেই খাটে এই নতুন অতিথিকে রাখা যাবে না। ভাবী দুই পাশে দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে শুতে চাইলেন, সমুদ্রকে আমার সাথে বা ওর বাবার সাথে শুতে বললেন, কোনো লাভ হলো না। সে এক রাতেই অজানা কারণে পাক্কা শিশু ভিলেন হয়ে গেলো।
আনন্দ ভাইয়া ভাবীর সাথে কথা বলা প্রায় বন্ধ করে দিলেন। রাতে অন্য ঘরে থাকেন। সমুদ্র ভীষণ জ্বালাতন শুরু করলো। দাদা-দাদি, নানা-নানি উচ্চশিক্ষিত হলে কি হবে, নাতিকে তাঁরা অত্যন্ত প্রশ্রয় দিয়ে বড় করেছেন। আর বাচ্চাটা আসার পরে তো কথাই নেই। সমুদ্র একটু অসভ্য ই হয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে সবাই আবার কথা শোনায় ভাবীকে,” এক জঞ্জাল নিয়ে এসেছে কোত্থেকে। তাকে নিয়েই দিন পার। নিজের পেটের ছেলের খবর নেই। ”
তিথি ভাবীর আব্বা-আম্মাও চরম অসন্তুষ্ট মেয়ের উপরে। প্রথম কথা,জামাই ভীষণ রেগে গিয়েছে,দ্বিতীয়ত নিজের ক্যারিয়ার, সংসার,সন্তান বাদ দিয়ে এক হারাম বাচ্চাকে পালন করা কেন? জানাই গেছে, অতি দরিদ্র, অশিক্ষিত পরিবারের অবৈধ সন্তান। তাকে কোন্ আক্কেলে রীতিমতো নাটক-সিনেমা করে দত্তক নেয়া? তাঁরাও এ বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। ভাবীর জন্য ঐ বাসায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, কিন্তু বাচ্চাটাকে নেওয়া যাবে না।
আমারও মনে হলো,এতো বাধার মধ্যে বাচ্চাটাকে ভাবীর রাখা উচিৎ হবে না। কোর্টকে বলে ওকে অন্য কোথাও পাঠানোর আবেদন করুক। এতো সুন্দর, সুখী পরিবারের বড়ই বিশৃঙ্খল হাল। আমরা, মানে ভাবীর ভক্তকুল আসলে ভাবী বা বাচ্চা কারোর প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। এতো প্রতিকূলতার মাঝে বাচ্চা মানুষ করা যায় না।
ভাবী সিদ্ধান্তে অনড়। এতিম খানায় বা হোমে বাচ্চাদের যেমনই হোক,খেতে -পরতে দেওয়া হয়, কিন্তু বাচ্চারা আদর, ভালোবাসা, যত্ন, পারিবারিক পরিবেশ কতোটুকু পায়? ভাবীর এটুকু অধিকার নেই একটা ছোট্ট মানুষকে ভালোবাসাময় পৃথিবী উপহার দেওয়া? তিনি তো তাঁর অন্যান্য দায়িত্বে কোনো অবহেলা করছেন না।
আমরা বললাম,” ভাবী, ব্যাপারটা তোমার জন্য ভীষণ টাফ হয়ে যাবে। আর এখানে থাকলে পৃথিবীটা বাবুর কাছে আরও বিষময় হয়ে যাবে। এর থেকে ওর এতিমখানায় থাকা ভালো।”
ভাবীও কিছুটা দিশাহারা। তবু দৃঢ় গলায় বললেন,”আমার মেয়েকে আমিই পালবো।”
ভাবী মেয়ের নাম রাখলেন “অদ্বিতীয়া। ”
সপ্তাহ খানেক পরে সবাই ভাবীর সাথে অল্প হলেও স্বাভাবিক হতে লাগলেন, কিন্তু অদ্বিতীয়ার ব্যাপারে আগের অবস্হানে অনড়। সবারই একই বক্তব্য, “আমরা তো আগেই বলেছিলাম বাচ্চাটাকে আমরা মানতে পারবো না, আদর-ভালোবাসা-কর্তব্য তো বহুদূর। ”
” আনন্দ ভাইয়া অন্য ঘরে ঘুমান। এটা কি ঠিক?ভাবী কষ্ট পাছেন।”
“এটা স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারপরও বলবো, আনন্দের ঘেন্নাপিত্তি নেই, একটা বেজন্মার সাথে ঘুমাবে? আনন্দও ঘুমাবে না,সমুদ্রও না। একটা জারজের ট্যাঁ ট্যাঁ শুনতেও ঘেন্না লাগে।”
কি বলি! কি বলার আছে!
ফুপু গজগজ করেন,”নিজের ছেলেকে বাদ দিয়ে একটার বেশ্যার মেয়েকে নিয়ে দিনরাত পড়ে আছে।তার কতোটা বাড়াবাড়ি সহ্য করছি বুঝতে পারছিস? মায়ের অবহেলা পেয়ে সমুদ্র দিনকে দিন জিদ্দি হয়ে যাচ্ছে। যাবেই তো। ওর দিকে কোনো খেয়াল করলে তো?”
“এটা ফুপু মানতে পারলাম না। ভাবী সমুদ্রকে অনেক সময় আর মনোযোগ দেন। অদ্বিতীয়াকে আনার বহু আগ থেকে ভাবী সমুদ্রকে কাউন্সেল করেছিলেন। অনেক যত্ন আর সুশিক্ষা দিয়ে ভাবী সমুদ্রকে বড় করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে ছেলেটা কেন এতো বেয়াড়া হয়ে গেলো, ভাবীতো কোনো বৈষম্য করেন না দুজনের মধ্যে। ”
“কেন করবে না? সমুদ্র তার পেটের ছেলে। আর ঐ বাচ্চাটা….”
“সমুদ্রের আপন ছোট ভাই বোন হলেও ও এমন হিংসা করবে?”
“করবে না। রক্তের টান অনেক বড় টান। তিথি ভীষণ অন্যায় করেছে। ওর জন্য বাড়ির প্রতিটা মানুষের অশান্তি। ”
“ফুপু, আমি তোমার মতো এতো মমতাময়ী মহিলা দেখিনি। আমাদের দাদি,দাদা, চাচারা,ফুপুরা, বাপ-মা,মামারা,খালারা,নানা-নানু সবাই এতো ভালো,উদার, আমি খুব গর্বিত ছিলাম ফুপু নিজের পরিবারের বিষয়ে। কিন্তু ছোট্ট একটা বাচ্চা, হোক সে ব্যাভিচারের ফসল, তাকে নিয়ে তোমাদের এতো রাগ, ঘৃণা…., আমি মিলাতে পারছি না ফুপু।”
” তিথির নিজের বাচ্চা আছে, আল্লাহর রহমতে আরও হবে, ও কেন সবার মতামতের প্রাধান্য না দিয়ে, সবার মনের অবস্থাকে বোঝার চেষ্টা না করে, কানের কাছে ঘ্যানরঘ্যানর করে এমন একটা বিষয় মেনে নিতে বাধ্য করলো?এতো দরদ, তাকে এতিম খানায় দিয়ে আসতো, হোমে রেখে আসতো,খরচাপাতি সে দিতো,তাকে দত্তক নিলো কেনো?এটা যে আনন্দের উপরে,আমাদের সবার উপরে সাইকোলজিক্যাল টরচার,ও কেন বুঝলো না?”
“এতিমখানা বা হোমে বাচ্চারা অনেক কষ্টে থাকে ফুপু। ভালো খাওয়া, ভালো চিকিৎসা, ভালো শিক্ষা কিছুই নেই, আর সবচেয়ে বড় অভাব হলো ভালোবাসার অভাব,মমতার অভাব।”
“তাহলে চল্, রাস্তায় বের হয়ে এসব আতুরদের খুঁজতে থাকি আর বাসায় নিয়ে আসি। ”
প্রস্তাব দেওয়া হলো, ভাবী-আনন্দ ভাইয়া – সমুদ্র এক ঘরে ঘুমাবে, কোণার দিকের ছোট ঘরটায় অদ্বিতীয়া থাকবে,তার দেখভালের জন্য একটা মেয়ে রাখা হবে।মজিদা বু’রা তো আছেই। ভাবী এতো কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন, তিনি এই ব্যবস্থা মেনে নিতে বাধ্য হলেন।
প্রথম কয়েকদিন অদ্বিতীয়ার বুকফাটা কান্না। ভাবী চোখের পানি মুছেন, কয়েকবার করে যান, মেয়েকে কোলে নেন, ছেড়ে আসতে গেলেই শিশুকন্ঠের সবল কিন্তু করুণ চিৎকার। বাসার সবার বিরক্তির সীমা রইলো না।
আমাদের পাগলা, হাসিখুশি, চঞ্চল তিথি ভাবী চুপচাপ হয়ে গেলেন। একদিন অশান্তির এক পর্যায়ে বললেন,”আপনারা বলেছিলেন,একে আদর না করলে,ভালো না বাসলে আমি যেন কিছু মনে না করি।আমি আমার কথা
রেখেছি। ওর জন্য আপনাদের কাছে আমি সামান্য আশা করিনা, ভবিষ্যতেও করবো না।কিন্তু আপনারা কথা রাখলেন কোথায়?মেয়েটাকে অত্যাচার করার কথা তো আপনাদের ছিলো না? তাকে উঠতে জারজ,শুতে জারজ বলার কথাতো ছিলো না। কয়েকমাসের বাচ্চার তো একা ঘরে থাকার কথা ছিলো না। ”
“একা কোথায়?ঘরে লোক তো থাকেই। ”
“হ্যাঁ, লোক থাকে। কিন্তু বাবু পেশাবে ভিজে গেলে সে টের পায় না। বাবুর খিদে লাগলে ঘুম থেকে উঠে সে দুধ বানায় না।”
আনন্দ ভাই বললেন,”এভাবে হবে না।তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে আলাদা কোথাও থাকো।সমুদ্রকে, আমাকে বা বাড়ির আর কাউকে তোমার দরকার নেই। ”
“কি বলছিস আনন্দ? কিসের মধ্যে কি? শোনো তিথি,তোমাকে আমরা অনেক ভালোবাসি, ব্যাপারটা তুমি জানোও। মাঝখান থেকে একটা ঝামেলা নিয়ে এসে এতো গন্ডগোল। তুমি ঐ বাচ্চাকে নিয়ে আদিখ্যেতা কম করো।সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
ভাবী আমাদের হাইলি কোয়ালিফাইড। ইচ্ছা করলেই ভালো চাকরি পেতে পারে। মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকতে পারে। কিন্তু ভাবী খুব ভালো একটা মেয়ে। নিজের ইগো দেখাতে যেয়ে সে পরিস্থিতি আরো জটিল করবে না।
এভাবে অদ্বিতীয়া বড় হতে থাকলো। পুতুল একটা। এই অ্যাত্তো বড় বড় দুটো চোখ, দু’চোখ ভরা লম্বা, ঘন পাপড়ি। বোঁচা নাক। মাথা ভরা চুল। সমুদ্রের জন্য সবচেয়ে দামী দুধ কেনা হতো, কতো রকম ফলের রস, কতো রকম পুষ্টিকর খাবার, জামা-কাপড়ের সংখ্যা এখন পর্যন্ত নিজেদেরও জানা নেই, খেলনা দিয়ে ঘর ভরা। ভাবী এতোকিছু করেননি, পরিমিতিবোধ তাঁর আছে। পাগলামি করতেন আনন্দ ভাইয়া, ফুপা-ফুপু,ভাবীর বাপ-মা,অন্যান্য মুরব্বিরা। আমরা কিছু কিনে আনলে ভাবী বলতেন,”এতো বেশি একজনকে দিতে হয় নারে। এটা চরম অপচয়। রীতিমতো পাপ। এতো পেলে মানুষ স্বার্থপর হয়ে যায় ।”
আমরা হাসতাম। কয়েকমাসের সমুদ্রকে বুকে জড়িয়ে বলতাম,”ও সমুদ্দুর সোনা, এতো জিনিস পেলে তুই নাকি পচা হয়ে যাবি?কি বলে মা এইসব?”
অদ্বিতীয়ার জন্য খুব ভালো মানের দুধ, খাবার কেনা হয় না। বেবি পাউডার, বেবি অয়েল,বেবি লোশন সবই খুব কম কম, টাইট করে হিসাব করা। খেলনা আমরা চাচা-ফুপু-মামা-খালারা যা আনি,তাই। বেশি আনা যায়না। অশান্তি হয়।
চলবে।