লুকোচুরি গল্প পর্ব-৩৭ এবং শেষ পর্ব

0
678

#লুকোচুরি_গল্প
#শেষ_পর্ব
#ইশরাত_জাহান
🦋
“বাচ্চারা বলো,A for Apple”
গুটিকয়েক বাচ্চারা মিলে চিল্লিয়ে বলে,A for Apple.”
“তারপর বলো,B for Ball.”
সবাই চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”B for Ball.”
এভাবে করে ছোট ছোট বাচ্চাদের ফ্রীতে পড়াতে থাকে নীরা।রিক নীরব ও দ্বীপের সহায়তায় কেয়া দীপান্বিতা ও নীরা আজ একটি এনজিও চালায়।সরকারি প্রশিক্ষণ এটি।নীরা ইংলিশ কেয়া বিজ্ঞান ও দীপান্বিতা অংক।তিন রমণী মিলে বাচ্চাদের প্রতিদিন পড়াশোনা করায়।আশেপাশে গরীব বাচ্চা যারা আছে সবাইকে এই সংস্থায় বিনামূল্যে পড়াশোনা করাচ্ছে।সাথে করে তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে গত তিন বছর যাবত।সকাল নয়টা থেকে দুপুর বারোটা ক্লাস করায় তারা।এখন সবার ছুটির সময়।বারোটা বাজতেই ঘড়িতে শব্দ হয়।সাথে সাথে পড়া বন্ধ করে নীরা বলে,”তাহলে বাচ্চারা!আজ তোমাদের এই পর্যন্ত ক্লাস।আজ আমি আসি।বাই বাই ভালো থেকো।”

সকল ছাত্রছাত্রী মিলে বলে,”আসসালামু আলাইকুম ম্যাম।”
মিষ্টি হাসি দিয়ে নীরা উত্তর করে,”ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”
বলেই নীরা ক্লাস থেকে বের হয়ে দেখা করে কেয়া ও দীপান্বিতার সাথে।কেয়া ও দীপান্বিতা অন্যদের ক্লাস করিয়ে এসেছে।সবাই একসাথে এক জায়গায় এসে দাঁড়ায়।তারপর সবাই মিলে বাড়িতে যায়।

নীরা বাসায় এসে দরজা খুলতেই নীরাকে এটাক করে তার দের বছরের যমজ দুই মেয়ে(দিশা ও নেহা)। তুতলিয়ে বলে,”আমাদেল নিয়ে দাওনি কেন?”

নীরা ভাবুক ভঙ্গি করে বলে,”আসলে মনে পড়ছে না।ও হ্যাঁ মনে পড়েছে।আমি কত করে চেয়েছি তোমাদের নিয়ে যেতে।কিন্তু তোমাদের বাবা কি পঁচা কি পঁচা।আমাকে বলে তোমার দুই বিচ্ছুকে নিব না।বলেই আমাকে টানতে টানতে নিয়ে যায়।”

নীরার কথা চোখ মুখ উচু করে শুনতে থাকে দিশা ও নেহা।বলে,”পাপা পতা,পাপা বুলো।”
নীরা সারাদিন দ্বীপকে বুড়ো বুড়ো বলে।তাই এখন বাচ্চারাও দ্বীপকে বুলো বলে।

“হ্যাঁ,আমার সোনামনিরা।আচ্ছা দাদীকে বেশি জ্বালাওনি তো?”
বলতে না বলতেই মিসেস সাবিনা এসে বলেন,”তোমার মেয়ে হয়ে তারা জ্বালাবে না।এটা আদৌ মানতে হবে আমাদের!”

মিসেস শিউলি টিপ্পনী কেটে বলেন,”তা নাতবৌ!এই আট বছরে তো মোট চারটা বাচ্চা নিয়েছো এখন পেটেও এক জোড়া রাখছো (নীরার পেটের দিকে তাকিয়ে)। আর কত নিবা?”
হ্যাঁ,নীরা ও দ্বীপের এই লুকোচুরি গল্পের আট বছর হয়ে গেছে।এই আট বছরে নীরার জোড়ায় জোড়ায় মোট চারটি চুনু মুনু এসেছে।কেয়া ও রিকের দুইটি বাবু তবে যমজ না।দুই বছর গ্যাপ দিয়ে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে(হৃদ ও কোয়েল)।দীপান্বিতার একটি মেয়ে বাবু হয়েছে(নিধি)।নীরা নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলে,”এবার আমি নিজেও হাঁফিয়ে গেছি দাদীন।পোলাপান যা হয়েছে এই তাই মানুষ করতে কষ্টও হচ্ছে।বাকিগুলো নিয়ে কি করবো?শখ মিটে গেছে।”

মিসেস শিউলি ও মিসেস সাবিনা হেসে দেন।নীরা বলে,”দায়ান আর দিহান(নীরার বড় যমজ ছেলে এখন সাত বছর চলে)এরা কোথায়?স্কুল থেকে আসেনি?”

মিসেস সাবিনা বলেন,”তোমাদের বাবা ওকে আনতে গেছে। আর অভ্র নানাভাই আসবে কাল।তোমার baby shower হবে তাই।”
অভ্র এখন বোর্ডিংয়ে পড়াশোনা করে।অভ্রকে ছয় বছর বয়সে বোর্ডিংয়ে দেওয়া হয়।অভ্র ওখানে যেতে না করেনি। বরং সবার সাথে সেও রাজি হয়েছে।শিক্ষকদের ব্যাবহার ও অন্যান্য ছাত্রদের দেখে অভ্র এখন ওখানে থাকতে আনন্দ পায়।দীপান্বিতা মাসে একবার করে সাত দিনের জন্য অভ্রকে নিজের কাছে এনে রাখে।বোর্ডিংয়ের লোকদের সাথে কথা বলা আছে তার।

বিকালে,
দ্বীপ বাসায় এসে নিজের রুমে ঢুকে মাথায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে পড়ে।পুরো ঘর এলোমেলো।সোফায় স্কুল ড্রেস খাট অগোছালো কাথা কম্বল এলোমেলো।মিউজিক বক্সে গান চলছে,
‘লুংগি ড্যান্স লুংগি ড্যান্স লুংগি ড্যান্স’ গানের তালে দ্বীপের লুংগি পরে নাচতে থাকে পাঁচ বিচ্ছু।বাচ্চা ও মা সাথে করে পেটের ভিতর বেড়ে ওঠা সন্তান মনে হয় পেটেই ডিজে ড্যান্স করছে।তানাহলে এভাবে কেউ সাত মাস অবস্থায় লাফালাফি করতে পারে।মনের খুশিতে নাচানাচি করছে।দেখলে মনে হবে সে প্রেগনেন্ট না তার এমনি এমনি পেট বেড়েছে।তাও আবার ইয়া বড় এক পেট।নীরা মনের খুশিতে নাচতে থাকে কিন্তু হঠাৎ করে গান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নীরার নাচ বন্ধ হয়ে যায়।কিন্তু দিশা ও নেহা এখনও লাফিয়ে লাফিয়ে বলে,”লুংগি দান্ট লুংগি দান্ট।”

বলার পর যখন হুশ ফিরলো গান বন্ধ তখন ওরা বলে,”কি হলো!গান বন্ধ কেনোওও?”

নীরা ও দায়ান দীহান দ্বীপের দিকে তাকিয়ে আছে।বাচ্চারা বাবাকে দেখা মাত্রই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বাবাকে।দ্বীপ একসাথে তার চার সন্তানকে বুকে আগলে নেয়।তারপর বলে,”I miss you all.”

বাচ্চারা বলে,”আমিও।”
দ্বীপ সবাইকে চকলেট দিয়ে বলে,”পাপার গিফট।এখন তোমরা পাপকে গিফট দেও।”

চার বাচ্চা এসে দ্বীপকে চুনু দিয়ে দেয়।অতঃপর দ্বীপ নীরার কাছে আসে।বাচ্চারা চলে গেছে ছাদে।দ্বীপ বলে,”বাচ্চাগুলো তো এমনিতেই বিচ্ছু হয়েছে।পেটের গুলোকে কি আসার আগেই বিচ্ছু বানাবে?”

নীরা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,”আমি আর পারছি না ক্যাডার সাহেব।এই বারবার বাবু নিতে নিতে পেট ফুলে কুমড়ো হয় তার ভিতর আবার আপনার একশত এক রুলস।”

“তো আমি কি করবো?”

“আমাকে চুনু মুনু গিফট করা বন্ধ করুন ক্যাডার সাহেব।”

“এক ডজন এর জন্য দাবি ছিলো তোমার, চন্দ্রপাখি।”

“আমার এখন শখ মিটে গেছে।এতগুলো বাচ্চা নিলে সরকার আমাদের উপর আইনি পদক্ষেপ নিবে।বলবে,এরা হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধির আসল কারণ।এদের জন্যই দেশের জনসংখ্যা বেড়ে আজ বাংলাদেশ দরিদ্র।”

“হুম বুঝলাম।এখন তাহলে আমি চুনু মুনু গিফট করা থেকে রিটায়ার্ড পেলাম।”

“জি,ক্যাডার সাহেব।আসুন আপনাকে খাবার দেই।”

বলেই নীরা চলে যায় ভাত বাড়তে।দ্বীপ ফ্রেশ হয়ে চলে আসে।দুজনে একসাথে খাওয়া দাওয়া করে।বাচ্চারা বিকালে ঘুম থেকে উঠছিলো না বলেই নীরা গান চালিয়ে নাচতে শুরু করে।অতঃপর দ্বীপ আসাতে এখন সব কাজিন মহল একসাথে হয়ে খেলাধুলা করছে।

_______
দীপান্বিতা ও কেয়া মিলে প্লেট সাজাচ্ছে।baby shower এর থালা সাজানো হচ্ছে।এদিকে নীরাকে সবাই কিছু না কিছু খাওয়াবে।তাই বড় একটি প্লেটে খাবার সাজানো হয়।নীরাকে একটি শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে।মাথায় শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকা।কেয়া ও দীপান্বিতা মিলে নীরাকে এনে বসিয়েছে নীরার আসনে।একে একে সবাই মিলে নীরাকে দোয়া করে দেয়।মিসেস শিউলি গুরুজন তাই তিনি নীরার হাতে baby shower এর থালা তুলে দেন।কিছু দোয়া পড়ে নীরার গায়ে ফু দিয়ে দেন।অতঃপর বলেন,”আর পুতি চাই না গো নাতবৌ।আমার নাতির সম্পত্তি তো শেষ হয়ে যাবে।”

আরেক প্রতিবেশী রসিকতা করে বলেন,”তা বলি তোমার দাদুভাইও তো কম না।বিয়ের পরপর যে মেয়েটাকে বাচ্চা দিচ্ছে এখন বছরের পর বছর বাচ্চা দিতেই আছে।”

আরেক প্রতিবেশী বলেন,”আমাদের অবশ্য ভালো।বছর বছর দাওয়াত পাচ্ছি।”

মিসেস শিউলি বলেন,”দেখছো তো নাতবৌ!তোমাগো জন্য এখন প্রতিবেশীরা বছরের পর বছর আমাগো বাড়িতে আইতে পারে দাওয়াতের জন্য। আর যে কত টাকা যাইবো।”
বলেই সবাই হেসে দেন।

“এই যা!আমরা আসার আগেই baby shower হয়ে গেলো।”
কথাটি শ্রবণ হতেই সবাই মিলে পিছনে তাকিয়ে দেখে পিংকি ও তার স্বামী।সাথে করে মিষ্টি হাসি দেওয়া একটি মেয়ে।মেয়েটির বয়স দুই বছর।মিসেস সাবিনা এসে পিংকিকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মামীকে তো ভুলেই গেছো।”

“সংসার শুরু করলে কি আর বাবার বাড়ির দিকে চোখ আসে মামী?তুমি নিজেই তো তোমার বাবার বাড়ির দিকে কম যাও।”

মিসেস সাবিনা হেসে দেন।বলেন,”এটাই যে নিয়ম মা।”

নীরা বলে,”ভাগ্যিস আমাকে আম্মু জোর করে বিয়ে দেয়।নাহলে আমাকেও আজ এটা ভুগতে হতো।”

দীপান্বিতা নীরার কাছে এসে বলে,”শুধু কি তুমি লিটিল ভাবী?আমিও তো তোমার মতো লাকি।”
নীরা এক হাতে জড়িয়ে ধরে দীপান্বিতাকে।ঠিক তখনই দরজায় দাড়িয়ে অভ্র বলে,”আম্মু।”

সাথে সাথে দীপান্বিতার চোখ যায় সেদিকে।দীপান্বিতা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার বাবাই।আমার কলিজা।কত মনে পরে তোমার কথা।এই এসেছো আর যেতে দিবো না।”

অভ্রর বয়স বারো বছর।কয়েকদিন পরেই তেরো হবে।পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে অভ্র।বলে,”আমাকে তো টপার হতে হবে।তবে আমি মামুর মত না আব্বুর মত বাইরে থেকে পড়াশোনা করতে চাই।আমার তামু(তামান্না) মায়ের সপ্ন পূরণ করতে চাই।”

অভ্রকে দীপান্বিতা সব সত্যি বলে দিয়েছে যখন অভ্রর সাত বছর বয়স।প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করিয়ে অভ্রকে সব সত্যি বলে দেয় দীপান্বিতা।অন্যদের থেকে জানার থেকে ভালো সে সত্যি জানিয়ে নিজের কোলে আগলে রাখবে অভ্রকে।অভ্র তার জন্মের সময়ের ঘটনা জানার পর কিছুটা কষ্ট পেলেও সবার ভালোবাসায় তা ঢাকা পরে যায়।অভ্র চায় সে তার মৃত মায়ের সপ্ন পূরণ করবে।স্কুল জীবনে থাকতে তামান্না দীপান্বিতাকে বলতো,”আমার প্রথম যদি ছেলে সন্তান হয় ওকে উচ্চ শিক্ষিত করিয়ে বিদেশ পাঠাবো।তারপর তোর মেয়ে হলে তার সাথে বিয়ে দিবো।”

দীপান্বিতা বলতো,”আমার যদি মেয়ে না হয়?”

তামান্না মুখ শুকিয়ে বলতো,”তাহলে তোর কোনো ভাগ্নি দেখে বিয়ে দিবো।”
বলেই দুই বান্ধবী হেসে দিতো।

পুরনো কথা মাথা থেকে বিচ্ছেদ ঘটে নীরার চিৎকারে।নীরা জোরে চিৎকার করে বলে,”ও মা গো।”

মিসেস নাজনীন এতক্ষণ হাসাহাসি করলেও নীরার চিৎকারে আতঙ্কে তাকান নীরার দিকে।দ্বীপ ও বাকি ছেলেরা ঘরে ছিলো।মেয়েলি কাজে ওরা থাকতে চায়নি।নীরার ছটফটানিতে বাইরে চলে আসে ওরা।দেখতে পায় নীরা পেটে হাত দিয়ে বলছে,”খুব পেটে ব্যাথা করছে।ঘর ঘুরছে আমার।এমন তো এর আগে হয়নি।”

মিসেস নাজনীন ও মিসেস সাবিনা মিলে নীরার মাথায় তেল পানি দিতে থাকে।কেয়া ও দীপান্বিতা মিলে নীরার হাত পা মালিশ করছে।দ্বীপ সাথে সাথে নীরার কাছে এসে বলে,”কি হয়েছে?”

নীরা কান্না করতে করতে বলে,”আমি মনে হয় আজ মারা যাবো ক্যাডার সাহেব।খুব ব্যাথা করছে।ওরা পেটের ভিতর খুব লাথি দিচ্ছে।”

ছেলে মেয়েরা মায়ের এমন অবস্থা দেখে আতকে ওঠে।কান্না করে দেয় নীরার কাছে এসে।নীরা তাকায় ওদের দিকে।কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।রিক বাচ্চাদের কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে।কিছুক্ষণ নীরাকে ঘরোয়া উপায়ে ডাক্তারের পরামর্শে চলার পরও যখন কাজ হয় না তখন ডাক্তারকে ফোন দিয়ে শুনতে পায়,”অনেক সময় প্রেগনেন্সির সাত মাসেও ডেলিভারি হয়।এটাকে প্রী মেচিয়োর বেবী বলে।ওনাকে হসপিটালে আনতে হবে।”

নীরাকে কোলে করে নিয়ে দ্বীপ গাড়িতে ওঠে।নীরাকে ধরে বসে আছে কেয়া ও দীপান্বিতা।নীরব তার পার্সোনাল ডক্টর ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে হসপিটালে নীরার ভর্তির ব্যাবস্থা করে।বাচ্চাদের কান্নাকাটি বেড়ে যায় তাই বাধ্য হয়ে তাদেরকে নিয়ে হসপিটালে আসেন মিসেস নাজনীন।অন্যান্যরা আরো জিনিস পত্র গুছিয়ে নিয়ে আসছেন।

হসপিটালে আসার পর নীরাকে দেখে ডাক্তার বলেন,”ওনার ডেলিভারি করতে হবে।”

নীরাকে নিয়ে অপারেশন রুমে যাওয়ার আগে নীরা তাদেরকে বাধা দিয়ে বলে,”আমি আমার পরিবারকে কিছু বলতে চাই।”

দ্বীপ তড়িৎ গতিতে নীরার কাছে এসে নীরার হাত ধরে বলে,”হ্যাঁ বলো চন্দ্রপাখি।”

নীরা বলতে শুরু করে,”আমি জানি না আমি বাঁচবো কি না।যদি আমি মারা যাই আপনি যেনো দ্বিতীয় বিয়ে করবেন না।”

সবাই হা হয়ে যায় নীরার কথা শুনে। দায়ান ও দিহান এগিয়ে এসে শুনতে থাকে মায়ের কথা।নীরা বলে,”আপনি আরেকটি বিয়ে করলে সেই ঘরেও আরো সন্তান হবে।তখন আমার চার সন্তান সৎ মায়ের কাছ থেকে অনেক মার খাবে। মরার পর ভুত হয়ে আমি এসব দেখতে পারবো না।”

দ্বীপ বলে,”মাথা কি গেছে নাকি? মরার পর ভুত!এসব কি কথা?”

নীরা চিল্লিয়ে পেইন সহ বলে,”হ্যা হ্যা ভুত।আপনি কি মনে করেছেন?আমি মরে গেলে আরেক বিয়ে করবেন।আসলে এটা হবে না।আমি ভুত হয়ে আপনাদের দেখবো।
যাতে আমার মৃত্যুর পর আপনি বিয়ে না করতে পারেন।”

“মাথা গেছে তোমার?

নীরা বলে,”হ্যাঁ,আমার মাথা গেছে।লোকে যেমন দারোয়ান হয়ে চোর পাহারা দেয় আমি তেমন ভুত হয়ে সতিন পাহারা দিবো।”

মিসেস নাজনীন বিরক্ত চোখে তাকান।মেয়ের এতগুলো বাচ্চা হলো।হায়ার এডুকেশন কমপ্লিট করলো আবার এখন একজন উদ্যোক্তা সাথে ছোটখাটো শিক্ষক সে কি না এমন কথা বলে।

দ্বীপ নীরাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নার্সকে বলে,”ওকে নিয়ে যান তো ভিতরে। বউ সহ বাচ্চাকে নিয়ে আসবেন।”

নীরা তার চার সন্তানকে জোরে জোরে বলে,”শোনো চুনু মুনুরা।তোমাদের মা মারা গেলেও ভুত হয়ে আসবে।তাই তোমরা পাপাকে আরেকটি বিয়ে করতে দিবে না।”

দায়ান ও দিহান বলে ওঠে,”হ্যাঁ হ্যাঁ পাপাকে বিয়ে করতে দিবনা।”

ভাইদের এমন বলতে দেখে দিশা ও নেহা বলে,”হ্যাঁ হ্যাঁ বিয়ে কলতে দিবনা।”

সব ভাই বোন মিলে বলে,”সৎ মা আসবে না আনবো না।আসবে না আনবো না।তুমি আম্মু চিন্তা করোনা।”

নার্স নীরাকে নিয়ে ভিতরে যাচ্ছে।নীরা জোরে জোরে বলে,”আমি মারা গেলে ভুত হয়ে আপনার সব সম্পত্তি ভ্যানিশ করে আমার সন্তানদের নামে করে দিবো।আপনি কিন্তু অন্য বিয়ে করার কথা মাথায় আনবেন না ক্যাডার সাহেব।কারণ ভুতের অনেক পাওয়ার থাকে।তারা ম্যাজিক জানে।আমি ম্যাজিক করে আপনার দ্বিতীয় সংসার ভেঙ্গে দিবো।”

দিশা ও নেহা তুতলিয়ে বলে,”আনবে না ক্যাডাল তাহেব।”
দ্বীপের মাথায় হাত। চার বিচ্ছু মায়ের মত পাগল।বাকিরা হাসবে নাকি চিন্তা করবে বুঝতে পারছে না।
________
নীরাকে অপারেশন রুমে নেওয়ার পর সবকিছু শান্ত হয়ে আছে।দ্বীপ একটি বেঞ্চে বসে চিন্তা করতে থাকে।বাবাকে চিন্তা করতে দেখে বাচ্চাগুলো চুপ করে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।ছোট দুই দিশা ও নেহা কান্না করতে শুরু করে।তাদেরকে কোলে নিয়ে শান্তনা দিচ্ছে কেয়া ও রিক।কিছুক্ষণ পর রুম থেকে দুটো বাচ্চার কান্নার আওয়াজ বের হয়। নার্সের কোলে করে আসে ছোট ছোট পুষ্টিহীনতার দুইটি বাবু।একটি ছেলে ও একটি মেয়ে।নার্স এসে দাঁড়াতে দ্বীপ তাদেরকে কোলে নেয়।কিছুক্ষণ দেখার পর বাচ্চাদের কানে আজান দিতে থাকে।দ্বীপ ও মিসেস নাজনীন একসাথে বলে,”বাচ্চাদের মা কেমন আছে?”

দিশা ও নেহা বলে,”বাত্তাদেল মা কেমুন আতে।”

নার্স হেসে দেয়।বলে,”আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।আপনারা ঠিক সময়ে আনতে পেরেছেন তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা করে ডেঞ্জার থেকে মুক্ত।”
নার্সের কথায় সবাই শান্তির নিঃশ্বাস নিতে থাকে।

________
নীরাকে বাসায় আনা হয়েছে আজ দুই মাস।সোফায় বসে মাথায় হাত দিয়ে মেয়ে বাবুকে ফিডিং করায় নীরা।মিসেস শিউলি ছেলে বাবু কোলে নিয়ে আছেন।দিশা ও নেহা কান্নাকাটি করছে।বাচ্চা নব্য দুজনকে ফিডিং করাতে করাতে হাপিয়ে গেছে নীরা।এখন আবার এরা আবদার করছে।ওদিকে দায়ান ও দিহান গোসল না করে মারামারি করছে চিল্লাচিল্লি করছে।মেয়েকে খাওয়ানোর পর ছেলে কেদে ওঠে আবার ছেলেকে শান্ত করার পর মেয়ে কান্না করে।এক কথায় নীরা শেষ।

মিসেস শিউলি বলেন,”কি গো নাতবৌ। আর যমজ কবে নিবা?”

“একবার মরণের হাত থেকে ফিরে আসছি। আর যাইতাম না।”
মিসেস শিউলি হেসে দেন।মিসেস সাবিনা রান্না শেষ করে নীরার কাছে এসে বাবুকে কোলে নিয়ে বলেন,”এবার যমজ মেয়ে দুটোকে আদর করো মা।”

বিরক্ত হয়ে নীরা বলে,”আমাকে এবার একটু আদর করতো।”

মিসেস শিউলি বলেন,”তোমার আর আদর করতে দিমু না।আমি ভাই এবার পুতি হইলে নিজেই বিয়ে কইরা নতুন হউর বাড়ি যামু।”

_______
বাবুদের ফিডিং করিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দোলনায় রেখেছে। দায়ান ও দিহান মিলে দিশা ও নেহাকে নিয়ে বাচ্চাদের ঘরে ঘুমাতে গেছে।দ্বীপ নীরার কাছে এসে বলে,”তাহলে শুরু করা যাক?”
“কি!”
“মিশন নেক্সট চুনু মুনু।”
“মাফ চাই, আমার ভুল হয়ে গেছে।তখন আমার আবেগ কাজ করেছিলো এখন বিবেকে নাড়া দেয়।গুড নাইট ক্যাডার সাহেব।”

বলেই নীরা কাথা মুড়ি দেয়।দ্বীপ আলতো হেসে নীরার গা ঘেসে শুয়ে নীরার মাথায় হাত দিয়ে বলে,”পাগলী চন্দ্রপাখি।”
নীরা দ্বীপের দিকে তাকায়।দেখতে পায় চশমা পরিহিত সেই সুদর্শন পুরুষ। যার ছয়টি বাচ্চার মা এখন সে।দ্বীপের দিকে ফিরে নীরা বলে,”বউ পাগলা ক্যাডার সাহেব।”
বলেই দুজনে হেসে দেয়।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে