#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_৩৬
#ইশরাত_জাহান
🦋
দীপান্বিতা ও নীরবের বিয়ে পড়ানো সম্পূর্ণ হলো।এখন এদের বিদায় দেওয়ার সময়।দীপান্বিতা শুধু অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে।অভ্র এতক্ষণ খুশি থাকলেও সবার মুখে নিরবতা দেখে তাকিয়ে আছে ফ্যালফ্যাল করে।দীপান্বিতা জড়িয়ে ধরে অভ্রকে।বলে,”আমার বাবাই।”
মা না হলেও মায়ের ভালোবাসা আদর দিয়ে বড় করেছে অভ্রকে।মায়ার বাঁধন কি ছেড়ে দেওয়া যায়?দীপান্বিতা জড়িয়ে কান্না করছে।নীরব এসে দীপান্বিতার কাধে হাত রাখে।মুখ উচিয়ে নীরবের দিকে তাকায় দীপান্বিতা।নীরব বলে,”অভ্র আমাদের ছেলে।ওকে আমরা দুজনে মিলে মানুষ করবো।চিন্তার কিছুই নেই।”
খুশি হয় দীপান্বিতা।মিসেস সাবিনা এসে বলেন,”আজকে নানুভাই আমাদের সাথে থাকবে।তাই না নানুভাই?”
অভ্র সহমত দেখিয়ে বলে,”হ্যাঁ।আজকে আমি নানু ননাভাইয়ের সাথে থাকবো।”
নীরা এসে বলে,”হ্যাঁ।থাকবে তো নানুর সাথে।এখন চলো আম্মুর সাথে আমরা তোমার আব্বুর বাসায় যাই।না না ওটা তো তোমার আব্বুর বাসা না ওটা তোমার মামীর বাসা।”
নীরব নীরাকে খেপিয়ে দিতে বলে,”বললেই হলো?এখন তোর বাসা এটা।অবশ্য এটা এখন আমার শ্বশুর বাসা।আমার বাসা তো ওটা।”
“লিসেন ব্রো!এটা আমারও শশুর বাসা।আমার বাবা মা ভুল বশত তোমাকে আগে পৃথিবীতে এনেছিলো।কিন্তু আসলে তো ওটা আমারই বাসা।”
“বাবা মা তোকে ভুল করে পৃথিবীতে এনেছিলো।”
“মোটেই না।তুমি ভুলে এসেছো।”
“আমি না তুই।”
“হবে না তুমি ভুল করে এসেছো।”
লেগে গেছে দুই ভাই বোনের ঝগড়া। কনে বিদায় মানুষ কান্না করবে নাকি বর আর বরের বোনের ঝগড়া দেখবে।অবশ্য এখানে সবাই নীরা ও নীরব সম্পর্কে অবগত।নীরা যেখানে আছে সেখানে কোনো কিছু সুস্থ ভাবে হওয়া সম্ভব?কখনোই না।দীপান্বিতা পর্যন্ত হাসতে থাকে তার বিদায় সময়।দ্বীপ এসে নীরাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে বলে,”আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। আপনারা আসতে থাকুন।”
নীরা লাফাতে লাফাতে বলে,”ছাড়ুন ক্যাডার সাহেব।আমার বাবার বাসা নিয়ে কথা শুনায়।ওর বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে?বরের মাথা আমি আজ টাক করে দিবো।”
বলতে বলতে দ্বীপ নিয়ে চলে যায় নীরাকে।বাকিরা ধীরে সুস্থে আসতে থাকে।
দীপান্বিতা এসেছে নিজের শশুরবাড়ি।মিসেস নাজনীন দীপান্বিতাকে মিষ্টি খাইয়ে ঘরে প্রবেশ করে।তারপর নীরার ঘরে নিয়ে যায়।দ্বীপ অভ্র ও রিক নীরবের সাথে বাইরে আড্ডা দিতে থাকে।রাতের বেলা দীপান্বিতার মেকআপ মুছে হালকাভাবে সাজিয়ে দেয় নীরা ও কেয়া।নরমাল ভাবেই লাল রঙের বিয়ের শাড়ি পরিয়ে খোঁপায় রজনীগন্ধার গাজরা দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়।মিসেস নাজনীন তার ছেলের বউয়ের জন্য কিছু হালকা গহনা গড়িয়ে রেখেছিলেন।দীপান্বিতাকে ভারী গহনা খুলে এখন কানে হালকা কানের ফুল চিকন চেইন গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়।অভ্রকে দ্বীপ নিজের বাবা মায়ের কাছে রেখে এসেছে।এখন অভ্রর ঘুমের সময়।কোনো বাহানা না করেই ভালো ছেলের মত অভ্র চলে গেছে মিস্টার সমুদ্র ও মিসেস সাবিনার কাছে।
দীপান্বিতাকে আনা হয়েছে নীরবের ঘরে।হালকা সাজে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা এই বাসর ঘর।দীপান্বিতা ও নীরব দুজনেই ভারী সাজ পছন্দ করে না।খাটের কোনা দিয়ে ফুল দিয়ে সাজানো। আর ঘরের কিছু কিছু জায়গায় ডিজাইন করা মোমবাতি জ্বালানো।দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।দীপান্বিতাকে বসিয়ে দিয়ে বাইরে দাড়ায় নীরা ও কেয়া।দ্বীপ ও রিক মিলে নীরবকে নিয়ে আসে।নীরা ও কেয়াকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সবাই বুঝে যায় কি হয়েছে।নীরব বলে,”ভিক্ষা নেওয়ার জন্য তোকে আমার বাসরটাই খুঁজতে হলো?”
“ভুলে যেও না বিয়েটা কিন্তু আমার ক্রেডিটে হয়েছে।তোমার মতো কেবলা ভাই থাকলে যা হয় আর কি।বোনদের সব করতে হয়।”
“হয়েছে।নিজের সাফাই করতে হবে না।সর এখন।আমার বউ অপেক্ষা করছে।”
“বাহ!এখন বোনের আগে বউ আপন।বিয়ের পর এত চেঞ্জ?”
“তুই কি চাচ্ছিস বলতো?বাসর না করে এখন আমি তোদের খেদমত করি।”
“খেদমত না,পারিশ্রমিক।এই যে তোমার বিয়েতে আমার চুনু মুনুদের নিয়ে এতকিছু করলাম তার পারিশ্রমিক।”
“টাকা ঘরে।”
“তোমার বউও ঘরে।”
“বউয়ের কাছেই তো যেতে চাই।”
“টাকা দেও বউ নেও।”
“সিনেমার ভিলেন তোর মত আচরণ করে।ওরা ঠিক এভাবেই বলে টাকা না দিলে বউ পাবে না।”
“বেশি কথা বললে কিন্তু তোমার বউকে নিয়ে সোজা শশুরবাড়ি চলে যাবো।”
“ওটা এখন আমারও শশুরবাড়ি।”
“ওই বাড়ির পার্মানেন্ট বউ আমি।”
“ওই বাড়ির পার্মানেন্ট জামাই আমি।”
“আমি ওই বাড়িতেই এখন সংসার করি। তাই ওই বাড়িতে আমার অধিকার বেশি।”
“তো যা না।নিজে তো চুনু মুনু এনেছিস।আমাকে বাধা দিচ্ছিস কেনো?”
দ্বীপ পড়েছে বিপাকে।ভাই বোন আনলিমিটেড তর্ক বিতর্ক করা শুরু করেছে।রিক ও কেয়া হাসতে থাকে এদের ভাই বোনদের কান্ড দেখে।নীরা আবার বলে,”এক রাতেই চুনু মুনু আনতে চাচ্ছো তুমি!”
“ভাগ্য ভালো তোর বিয়েতে আমি ছিলাম না।তাহলে তোর বাসরেও আমি বাঁশ দিতাম।”
“আরে আমার তো বাসরই হয়নি।”
এবার নীরব হা হয়ে যায়।অবাক হয়ে বলে,”বাসর না হলে আমার ভাগ্নে/ভাগ্নি কোথায় থেকে আসছে?”
“ওটা এক্সপায়ার্ড বাসর থেকে।তুমি বুঝবে না।টাকা দেও বউ নেও।”
“টাকা কি আমার হ্যান্ড ঘড়ি যে সাথে নিয়ে ঘুরবো?”
“কেনো তুমি জানো না বিয়েতে বাসররাতে টাকা চাওয়া হয়?”
“জানতাম যে শালা শালীরা টাকা চায়।বোন কবে থেকে চায়?”
“এই বোন এখন তোমার শালার বউ।”
দুই ভাই বোনের চিল্লানির শব্দ শুনে হাজির হন মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন।মিসেস নাজনীন এদের শেষের কথাগুলো শুনতে পায় তাই বুঝতে পেরেছেন কাহিনী কি।এক পলক দ্বীপের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত হয়ে বলেন,”এখন তোমার রেস্ট নেওয়ার সময় নীরা। যাও লক্ষ্মী মেয়ের মত রেস্ট নেও।”
মিস্টার রবিন প্রতিবাদ করে বলেন,”আমার মেয়ে এই দিন কি আর ফিরে পাবে?তুমি ওকে বাঁধা দিচ্ছ কেন?”
মিসেস নাজনীন কটমট চোখে তাকান মিস্টার রবিনের দিকে।বলেন,”লাজ শরমের মাথা খেয়েছো বুঝি?তোমার জামাই আছে এখানে দেখতে পাও না।”
মিস্টার রবিন এবার গলা খাকারি দিয়ে নীরাকে বলেন,”মা নীরা!ভাইকে এবার যেতে দেও।ভাইয়ের কষ্ট হচ্ছে তো।”
নীরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,”বউয়ের আচল ধরা স্বভাবটা এবার ছাড়ো আব্বু।কয়দিন পর তোমার নাতি নাতনী আসতে চলেছে। নানাভাইকে যদি দেখে বউকে ভয় পেতে তাহলে ওরা তোমাকে খেপাতে থাকবে।”
মিস্টার রবিন এর বিষম উঠে গেছে।মিসেস নাজনীন বলেন,”হয়েছে তো শান্তি?মেয়েকে উড়ন্ত পাখি বানিয়েছিলে না?এবার বোঝো ঠেলা।”
“আমি কি জানতাম ছেলে জামাই জনের সামনে এভাবে ফেস করতে হবে?”
“বিপদ তো তোমাকে কল করে আসবে?”
দ্বীপ এবার আস্তে করে নীরার ঘরে চলে আসে।প্রথমে ভাই বোন তাও মানা যায়।এখন আবার শশুর শাশুড়ি।কেউ কারো থেকে কম না।অবশেষে তর্ক বিতর্ক শেষে মিসেস রবিন টাকা দেন নীরা ও কেয়াকে।তারপর চলে যান সেখান থেকে।নীরবকে ঘরে ঢুকতে দেয় নীরা ও কেয়া।নীরব যাওয়ার পর নীরা ও কেয়া একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে এক চোখ টিপ দেয়।রিক এটা দেখে বলে,”এখন আবার কি হলো?”
কেয়া দাত বের করে বলে,”বাসরটা দেখবো না?”
“কিন্তু কিভাবে?দরজা তো বন্ধ।ঘরের ভিতর তো এখন ওরা। আর বাইরে আমরা।তাহলে কিভাবে বাসর দেখাবো?”
নীরা একগাল হেসে বলে,”কে বলেছে ঘরে ওরা দুজন?”
অবাক হয়ে রিক বলে,”মানে?বাসর ঘরে বর বউ ছাড়া আর কে আছে?”
“বাসর ঘরে এখন বর বউ সহ আমার দাদীন আছে।”
“দাদীন!কোথায় তিনি?”
“খাটের নিচে।”
“আল্লাহ!তাহলে তো ওনার খুব কষ্ট হচ্ছে।”
“কিছু হবে না। দাদীনের আইডিয়া এটা।”
“কিন্তু আমরা কিভাবে দেখবো?”
নীরা বলে,”আমার ঘর আর ভাইয়ের ঘর পাশাপাশি।আমাদের ব্যালকনির মাঝে শুধু চিকন একটা বর্ডার।ওটা পের হলেই হবে।ব্যালকনির দরজা খোলা।আমরা ওখান থেকেই এন্ট্রি নিয়ে বাসরে সারপ্রাইজ দিবো।”
বলেই নীরা কেয়ার হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে যায়।রিক আর কি তাদের পিছনে দৌড়ায়।নীরা কেয়াকে নিয়ে ঘিরে আসাতে দ্বীপ ভ্রু কুচকে তাকায়।চশমা ঠিক করে বলে,”ওরা বাসায় যাবে না?”
“না।”
“তাহলে?”
“বাসর দেখবে।”
“এই রাতে আর দুষ্টুমি না।অনেক হয়েছে।ওদের এবার রেহাই দেও।”
“আমরা রেহাই দিলেও একজন তো রেহাই দিবে না ক্যাডার সাহেব।”
“কে?”
“সেই ঘণ্টা খানেক ধরে যে দাদীন খাটের নিচে বসে আছে।তার কি হবে?”
“সর্বনাশ! দাদীন ওখানে কেনো?”
“বুড়ি হলে কি হবে দাদী শাশুড়ি আমার এখনও রসিক।”
হাসতে হাসতে বলে নীরা।
“হওয়াচ্ছি তোমার রসিক।”
বলেই হাটা দেয় দ্বীপ।নীরা পথ আটকে বলে,”কোথায় যাচ্ছেন?”
“নীরবের ঘরে।অঘটন ঘটানোর আগে দাদীকে বের করে আনতে হবে।”
“আরে ধুর।বোনের বাসরে কেউ দরজা ধাক্কায়?”
“নাতির বাসরে দাদী আরি পাতে?”
“ধ্যাত!আমার ক্যাডার সাহেব না কিছু বুঝে না।খালি বুঝে চুনু মুনু গিফট করা।আপনি কি বুঝবেন এসবের আনন্দ?”
কেয়া ও রিক মিটমিট হাসতে থাকে।দ্বীপ এবার নীরাকে বলে,”শাট আপ।”
“ইউ শাট আপ।দিন দিন বুড়ো হচ্ছেন।আপনার থেকে দাদীন ভালো।বুড়ি হলে কি হবে মনটা কি সুন্দর কচি।”
“বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু।”
“ভাই ভাবী অঘটন ঘটানোর আগে কি দাদীকে আনতে চান?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে আমাকে নিয়ে ব্যালকনিতে চলুন।”
“কেনো?”
“ওখান থেকে আমরা ভাইয়ের ঘরে যাবো।”
“মাথা খারাপ?”
“আমার মাথা ঠিক আছে।আপনার মাথা খারাপ।আপনি জানেন না বাসরে আরি পাতা এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।”
“কোনো কথা না।আমি দাদীনকে আনছি।তুমি চুপ করে এখানে বসে থাকো।”
“ভে ভে ভে।”
কান্নার অভিনয় করে নীরা।
দ্বীপ বলে,”কি হলো?”
“আপনি আমার একটা ইচ্ছাও পূরণ করেন না ক্যাডার সাহেব।আপনি পঁচা।আমার পেটের বাবু আর আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।তাই এখন আমি সারারাত কান্না করবো।”
বলেই কান্নার অভিনয় করে।দ্বীপ বুঝতে পারলো পাগলী ক্ষেপেছে।সারারাত আর থামবে না।এই মেয়ের যে জেদ।তাই দ্বীপ বাধ্য হয়ে নীরাকে ব্যালকনিতে নিয়ে চিকন বর্ডার পার করে।তারপর নিজেও যায় নীরবের ঘরে।রিক ও কেয়াও সেভাবে আসে।
খাটের নিচে বসে বসে কোমড় ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে দাদীনের।কিন্তু নীরব ও দীপান্বিতার কোনো নড়চড় নেই।এটা বাসর নাকি কোনো শান্তি সমাবেশে এসেছে এটাই বুঝতে পারছেন না তিনি।খাটের এক কোনায় নীরবের পা দেখা যাচ্ছে।এখনও কি দীপান্বিতার মুখ থেকে ঘোমটা ওঠায়নি?এমন চিন্তা ভাবনা করছেন দাদী।এদিকে ঘরের ভিতর চারজন ঢুকে পর্দার আড়াল হয়ে যায়।দ্বীপ বলে,”আমার প্রফেশনের সাথে কি এগুলো যায়?”
“আপনার প্রফেশন ধুয়ে আপনি পানি খান।আমার বর হয়ে এগুলো আপনার সাথে যায়।”
“পাগলী বিয়ে করেছিলাম আমি।ভুগতে তো হবেই।”
“পাগলির জন্য কি কি করেছেন তা কিন্তু আমি জানি!”
“এটাই আমার দূর্ভাগ্য।”
এদিকে রিক ও কেয়া বলাবলি করছে। রিক বলে,”আমরা ভালো অ্যাডভান্স ছিলাম তাই না চশমিশ?”
“হ্যাঁ।”
“এদিকে দেখো!নীরব ভাই এখনও দীপান্বিতা আপুর মুখ থেকে ঘোমটা ওঠায়নি।”
“ছেলে মানুষ এত লজ্জা কিসের?”
“এইটাই তো।”
নীরা বিরক্ত হয়ে বলে,”জানতাম আমার ভাই মেয়েদের দিকে তাকায় না।লজ্জা পায়।কিন্তু প্রেমিকাকে বিয়ে করার পরও এত কিসের লজ্জা?তাড়াতাড়ি ঘোমটা ওঠাবে।আমরা কি সারারাত জেগে দেখবো নাকি?শুধু ওদের একটু বোকা বানিয়েই তো চলে যাবো।”
দ্বীপ টিটকিরি দিয়ে বলে,”আমি আগেই বলেছি এসব করার দরকার নেই।এখন বুঝো।ভাগ্য ভালো শীতকাল।এখানে যে চিপা আর গরম।গরমকাল হলে বাবু আর বাবুর মা সব যেতো।”
“ধুর চুপ করে দেখুন তো।”
নীরব একবার দীপান্বিতার মুখের ঘোমটা ওঠাতে যাচ্ছে তো আবার হাত সরিয়ে নিচ্ছে।এরকম করতে করতে মিনিট দশ লাগিয়ে দিচ্ছে তো ঘোমটা ওঠাতে পারছে না।নীরা আবার বলে,”এরা মনে হয় সারারাত ঘোমটা ওঠানো নিয়ে কাটাবে।বাসর আর হবে না।”
“ভাই হয়ে বোনের বাসর দেখছি।এর থেকে লজ্জার বিষয় আর কিছু আছে বলে মনে হয় না।”
“বোন বাসর করছে কোথায়?”
“চুপ।”
“আচ্ছা দিদুনের কি অবস্থা?আমি তো আগে থেকেই মুভ লাগিয়ে দিয়েছিলাম।কি জানি কোমড়ের কি হাল হলো।”
বলেই কেয়া ঝুঁকে চলে যায় খাটের নিচে।কেয়া খাটের নিচে আসার আগেই সেখানে হাজির হয় মিনি(নীরার বিড়াল)।কেয়া ফিসফিস করে বলে,”দাদীন!”
কেয়ার ডাক আর তার সাথে অন্ধকারে সাদা বিড়াল দেখে মিসেস শিউলি ভয় পেয়ে যান।সাথে সাথে চিল্লিয়ে ওঠেন,”আল্লাহ গো!নাতির বাসরে ভুত।”
নীরবের এতক্ষণ ধরে ঘোমটা ওঠানোর প্রচেষ্টা সাকসেস করলো দীপান্বিতা।নিজের ঘোমটা নিজেই উঠিয়ে নীরবের দিকে তাকিয়ে বলে,”দাদীনের আওয়াজ মনে হলো!”
সাথে সাথে নীরা বেরিয়ে এসে বলে,”আমরা সবাই আছি।”
নীরব দীপান্বিতা দূরেই বসে ছিলো।এদের কথা শুনে আরো দূরে সরে যায়।নীরা বলে,”ভেবেছিলাম তোর ঘোমটা ওঠানোর পর আপুকে তুই ভালোবেসে কি উপহার দিস এটা দেখবো।কিন্তু নাহ!তুই তো দেখছি ক্যাডার সাহেবের থেকেও কেবলা।একজন এই প্রান্তে তো আরেকজন ওপর প্রান্তে।”
দ্বীপ নীরাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বলে,”হয়েছে এদের লজ্জা পাইয়ে দিয়েছ।এবার চলো।”
বলেই নীরাকে টানতে টানতে নিয়ে যায়।কেয়া মিসেস শিউলিকে উঠিয়ে দাত বের করে হাসতে থাকে।মিসেস শিউলি বলেন,”আমার নাতবৌ ঠোঁটকাটা হইলেও হোক কথার মালিক।তোমরা পুরুষেরা বাদাইম্মা।”
বলেই কেয়ার হাত ধরে চলে যান।রিক কেয়ার পিছনে চলে আসে।বাইরে বের হয়ে সবাই অট্টহাসিতে মেতে ওঠে।
চলবে…?