#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_৩৪
#ইশরাত_জাহান
🦋
দুপুরের খাবার খেয়ে মাত্র বসেছে রিক ও কেয়া।এখন আর কেয়া রিকের সাথে কথা বলতে লজ্জা পায় না।রিক ও কেয়া মিলে একসাথে গল্প করতে থাকে।তখনই কল আসে নীরার।কেয়া রিসিভ করতেই নীরা বলে,”শোন শাকচুন্নি! বরের কোল ছেড়ে এবার আমার শ্বশুর বাড়িতে আয়।আমার ননদের বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
কেয়া চশমায় হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে বলে,”নীরব ভাইয়ের কি হবে তাহলে?ভাইয়া না আপুকে অনেক ভালোবাসে?”
নীরা কপাল চাপড়ে বলে,”ওরে আমার ননদ আর আমার ভাইয়ের বিয়ের কথাটাই বলছি।তুই আর কমলালেবু(রিক) তাড়াতাড়ি চলে আয় তো।”
“আচ্ছা দোস্ত আমি ওর সাথে কথা বলে আসছি।”
“আমি হলে ক্যাডার সাহেবের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসতাম।বরকে টাইট দিতে শেখ।”
টিটকিরি মেরে কেয়া বলে,”হ্যাঁ আর তোমার জামাই কি করতো?তোমাকে কোলে করে ঘরে নিয়ে আসতো।”
“ওটাকে ভালোবাসা বলে। মাই ক্যাডার সাহেব ইজ দা বেস্ট হাসব্যান্ড।তাড়াতাড়ি আয়।”
বলেই কল কাটে নীরা।কেয়া রিকের সাথে কথা বলে চলে যায় দ্বীপের বাসায় সাথে করে রিকের মাকেও নিয়ে যায়।মিসেস নাজনীন রিকের মায়ের সাথে সোফায় বসে সবকিছু বলতে থাকেন।রিক দ্বীপ আর নীরব অভ্রকে নিয়ে গল্প করছে।কেয়া নীরা ও দীপান্বিতা তাদের ঘরে বসে আছে।এখন বড়রা মিলে বিয়ের তারিখ ঠিক করবে।তাই সবাইকে ডাকা।
সোফায় বসে আছে বড়রা সবাই।দীপান্বিতা ঘরে ছিলো নীরা টেনে নিয়ে এসেছে।ড্রয়িং রুমের সাথে খাবার টেবিল।সেখানে বসে মেয়েরা আলাপ শুনছে।পুরুষ মানুষ সাথে দ্বীপ ও রিক বসেছে সোফায়।মিস্টার সমুদ্র বলেন,”সামনে তো রোজা।আপনাদের কি ইচ্ছা রোজার ঈদ শেষ করে বিয়ে দেওয়ার?”
দ্বীপ বলে ওঠে,”এত দেরি করার কি দরকার?অলরেডি এদের রিলেশনশিপ গেপ ছিলো অনেক।তাই আমার মনে হয় এদের বিয়ে তাড়াতাড়ি দেওয়াই ভালো।”
মিস্টার সমুদ্র বলেন,”শুভ কাজে দেরি করতে নেই।আমরা তাহলে কবে থেকে বিয়ের আয়োজন শুরু করবো?”
বাবার কথার উত্তরে দ্বীপ বলে,”আমরা কাল থেকেই আয়োজন শুরু করি।এই মাসের মধ্যেই বিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করলেই ভালো হয়।আমার আপাতত কলেজের প্রেসার নেই।”
নীরা আপত্তি জানিয়ে বলে,”কিন্তু এই মাসে তো হাতে গোনা দশ বারোদিন আছে।কিভাবে কি করবো?”
“আমরা সবাই আছি তো।ম্যানেজ হয়ে যাবে।এই মাসের মধ্যে বোনের বিয়ে হলে আমিও একটু শান্তিতে বোনের বিয়ে ইনজয় করতে পারব।”
সবাই খুশি হয়ে দ্বীপের কথাতে রাজি হলো। কালকে থেকেই কেনাকাটা শুরু করবে।লোকজন ডাকবে।তারপর ধুমধাম করে বিয়ে হবে দীপান্বিতা ও নীরবের।নীরা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো দ্বীপের দিকে।কিন্তু এত লোকজনের ভিতর কিছু বললো না।
রাতের খাবার শেষ করে নীরা ঘরে এসে দ্বীপকে বলে,”সত্যি করে বলুন!”
দ্বীপ নীরার দিকে তাকিয়ে বলে,”কি?”
“এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার কারণ কি?”
“কি আবার?বোনের সংসার তাড়াতাড়ি হবে।”
“আমাকে কি খুকি মনে হয়?”
“কিছুতেই না।তুমি তো আমার খোকন খুকির মা।”
“ইয়ার্কি ছাড়েন।বিয়েটা এত তাড়াতাড়ি কেন?আপনি জানেন আমি একটু পার্লারে যেতে চেয়েছিলাম।আপনার জন্য পারতেছি না।এত তাড়াতাড়ি বিয়েতে কি করবো?”
“আমার বউকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুন্দর লাগে।”
“টাকা বাঁচানোর ধান্দা। কিপ্টা জামাই আমার।”
“মাসে মাসে যে হাজার টাকার জিনিস এনে দেই তা চোখে পড়ে না?চুপচাপ কোনো কথা না বলে বিয়ে ইনজয় করো।”
নীরা এসে দ্বীপের কলে বসে।বলে,”নিজের বউ বাচ্চাকে সুরক্ষিত রাখতে কত চেষ্টা আমার ক্যাডার সাহেবের।”
“বুঝতে পেরেছো তাহলে?”
“কেনো বুঝবো না?আমার ক্যাডার সাহেব আমাকে ভালোবাসে।এটা জানার পর থেকে আমার ক্যাডার সাহেবের মন পড়তে শুরু করেছি।”
বলেই নীরা দ্বীপের চোখ থেকে চশমা খুলে নেয়।চশমা পাশের টেবিলে রেখে বলে,”কয়েকমাস পর থেকে আমাকে আরো সচেতন হতে হবে।লাফালাফি করা যাবে না।ভারী কিছু নেওয়া যাবে না তাই আপনি তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলতে চান।”
দ্বীপ ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে।বলে,”আমার চুনু মুনুদের মায়ের দেখছি চুনু মুনু আসার আগমনে বুদ্ধির আগমন করেছে।”
“হে হে হে।”ভেংচি হাসি দেয় নীরা।
_____
আজ নীরব ও দীপান্বিতার বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে যাবে একসাথে পুরো পরিবার।শনিবার হলেও কলেজে যেতে হবে দ্বীপের।যাওয়ার আগে বারবার নীরাকে বলেছে,”তুমি যেনো মার্কেটে যাবে না।আমি এসে নিয়ে যাবো।রিস্ক নেওয়ার কোনো দরকার নেই।”
নীরা মুখ গোমড়া করে বলে,”বাহ!আমার ভাই আর ননদের বিয়ে আমি কিছু করবো না।আনন্দ করবো না আমি?”
“আনন্দ করবে তবে এখন বুঝেশুনে।বাবুদের আগমনটাও তো বুঝতে হবে।”
বলেই নীরার গালে হাত দিয়ে নীরার দিকে তাকায় দ্বীপ।নীরা আলতো হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে বলে,”ঠিক আছে আমি ওদের সাথে যাবো না।কিন্তু আপনি কলেজ থেকে এসে আমাকে নিয়ে যাবেন।”
“আচ্ছা,ঠিক আছে। দাদীন আছে বাসায়।কিছু লাগলে ডাক দিও।পারলে তুমি দাদীনের সাথে বসেই গল্প করবে।”
“হুম।”
দ্বীপ নীরার কপালে ভালোবাসা দিয়ে বিদায় নেয়।সবাই মিলে কিছুক্ষণ পর বের হবে।দুপুরে সবাই বাইরে খাবে।নীরার জন্য মিসেস সাবিনা রান্না করে রেখেছেন।
______
দ্বীপ কলেজে থেকে এসেছে।নীরা সাথে সাথে দ্বীপকে জড়িয়ে বলে,”মিস ইউ,ক্যাডার সাহেব।”
দ্বীপ নীরাকে আগলে বলে,”মিস মাই চন্দ্রপাখি অ্যান্ড মাই চুনু মুনু।”
বলেই নীরাকে নিয়ে ঘরে যায়।দ্বীপ গোসল করে বাইরের যাওয়ার ড্রেস পরেই নীরার সাথে দুপুরের খাবার খায়।মিসেস সাবিনা এখন ঝাল মশলা অল্প দিয়ে রান্না করেন।নীরার যেনো গ্যাসের সমস্যা না হয় আর শরীরে পুষ্টি বেশি বেশি থাকে তাই।দ্বীপ নীরার সাথে সেই খাবারটি খাচ্ছে।নীরা বলে,”মামণি তো ফ্রিজে মাংস রেখেছে।আমি গরম করে দেই?”
দ্বীপ নীরার হাত ধরে আটকে বলে,”কোনো দরকার নেই।আমার বউ যদি মা হওয়ায় এত কষ্ট করে আমি কেনো বাবা হওয়ায় কষ্ট করবো না?”
নীরা মিষ্টি এক হাসি দেয়।দ্বীপ নিজেও খাচ্ছে নীরাকেও খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়া দাওয়ার পর দ্বীপ নীরাকে নিয়ে চলে যায় শপিং মলে।শপিং করার ভিতরে দ্বীপ নীরাকে নিয়ে এক কর্নারে আসে।ওখানে বাচ্চাদের জিনিসপত্র বিক্রি হয়।সেখান থেকে ঘোরাঘুরি করে অনেক কিছু দেখতে থাকে দ্বীপ ও নীরা।অভ্রর জন্য কিছু খেলনা আর দুইটি বাবুর ছবি কিনে নেয়।একটি ছবি মেয়ে বাবুর আরেকটি ছবি ছেলে বাবুর।মিসেস শিউলি বলেছেন,”ঘরে বাচ্চাদের ছবি টাঙাইয়া ওই ছবি সারাদিন দেখবা।তোমার বাচ্চাটাও ওরকম সুন্দর হইবো।”
দ্বীপ কথাটি না মানলেও নীরার খুব ভালো লাগে কথাটি।নীরা বলে,”আমার ওমন বাবুর দরকার নেই।আল্লাহ যেমন দিবে তাতেই খুশি।কিন্তু আমি এমনিতেই ঘরে বাবুর ছবি চাই।ওদের দেখলে আমি অনুভব করবো যে আমাদের চুনু মুনু আমার গর্ভে আছে।এমনিতেও ওরা আমাকে উষ্টা দিয়ে উগান্ডায় পাঠাবে।কিন্তু তারপরও আমি চাই বাবুদের ছবি।”
নীরার আবদার দ্বীপ না করতে পারে না।তাই নীরাকে নিয়ে বেবী শপ থেকে কিনে দেয় বাবুদের ছবি।
চলবে…?
#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_৩৫
#ইশরাত_জাহান
🦋
রাতের বেলা নীরা ব্যাগ প্যাক করতে থাকে। দ্বীপ ঘরে এসে নীরাকে ব্যাগ প্যাক করতে দেখে অবাক হয়।বলে,”এখন ব্যাগ প্যাক করছো কেনো? কোথাও তো যাওয়ার কথা না আমাদের?”
“আমরা নয় ক্যাডার সাহেব আমি একা যাবো।আমার বাসায়।”
“কেনো?কি হয়েছে?”
নীরা কোনো উত্তর না দিয়ে ব্যাগ প্যাক করছে।দ্বীপ নীরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,”কি হয়েছে বলবে তো?”
“আপনি কি কিছুই বুঝেন না ক্যাডার সাহেব?”
আতঙ্কে দ্বীপ বলে,”কি বুঝবো আমি?”
দ্বীপের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ।যেনো সে কি করেছে কিছুই বুঝতে পারছে না।বুঝবে কিভাবে?সে তো কিছুই করেনি।নীরা হাসতে থাকে।বলে,”আমার ভাইয়ের কাল গায়ে হলুদ ।আমাকে কি এখানে থাকলে হবে?তাই বাপের বাড়ি যাচ্ছি।”
দ্বীপ নীরার ব্যাগ থেকে জামা কাপড় নিয়ে আলমারিতে রাখতে রাখতে বলে,”কোথাও যাবে না তুমি।এখানেই থাকবে।”
ভ্রু কুচকে নীরা বলে,”মানে কি?”
“মানে এই যে ভাইয়ের বিয়েতে জয়েন তুমি বরের বাড়ি থেকেও হতে পারবে।”
“ধুর!দুদিন পর ভাই আমার বউ নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে।আজ একটু আড্ডা দিবো ভাই বোন মিলে।আপনি বাধা দিবেন না।”
“ভাই বোনের সময় সারাদিন পড়ে থাকবে।এখন রাতের সময় স্বামীর দিকে দেখো।”
“আমি এখন স্বামীকে দেখার মুডে নেই ক্যাডার সাহেব।”
“স্বামীকে দেখার মুড এনে দিবো?”
“কিভাবে?”
“চুনু মুনুদের উপর আরো চুনু মুনু এনে।”
“এই না।”
“তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।বিয়েতে ইনজয় করবে ভালো কথা।কিন্তু আমার থেকে দূরে যেয়ে নয়।”
“আমার বউ পাগলা ক্যাডার সাহেব।”
“পাগলির বর হয়েছি পাগল তো হবই।”
নীরা খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে দ্বীপকে।
ব্যালকনিতে বসে ফোনে কথা বলছে নীরব।ফোনের ওপর প্রান্তে দীপান্বিতা আছে।নীরব দীপান্বিতাকে বলে,”অভ্র কি ঘুমিয়ে গেছে?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে তুমি ব্যালকনিতে আসো।দেখবো তোমাকে।”
“গায়ে হলুদের আগেরদিন কি দেখা করা ঠিক হবে?”
“একদম ঠিক হবে।আসো তুমি।এই চাঁদের আলোয় আমি আমার মায়াবন বিহারিনীর মুখ দেখতে চাই।”
“আচ্ছা,আসছি।”
বলেই দরজা খুলে ব্যালকনির দিকে আসলো দীপান্বিতা।মুখে তার লাজুক হাসি।নীরব আর দীপান্বিতা আগেও এভাবে অনেকবার দেখা করতো।দীপান্বিতা হাসলে গালে টোল পড়ে।সরাসরি নীরবের সামনে দীপান্বিতা হাসলে নীরব এক দৃষ্টিতে দেখতো তাকে।
দূরে দাঁড়িয়ে দীপান্বিতাকে ফোনে জিজ্ঞাসা করে,”তোমার গালে আগের মতো কি সেই টোল পড়ে?”
দীপান্বিতা হেসে দেয়।সোডিয়ামের আলো জ্বলতে থাকে চারপাশে।সেই আলোতে দীপান্বিতাকে স্পষ্ট দেখতে পায় নীরব।দীপান্বিতার মুখে টোল দেখা যাচ্ছে।নীরব বলে,”আয় হায় মায়াবন বিহারিনী!”
আরো কিছু বলতে যাবে তার আগে নীরা তার রুমের দরজা খুলে ব্যালকনিতে এসে বলে,”কি ভাই? কাল গায়ে হলুদ আজ হবু ভাবীকে দেখার এত তারা?”
তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দেয় দীপান্বিতা।নীরব বলে,”তুই ঘুমাস নি? কাল তো অনুষ্ঠান।সকাল সকাল কাজ করতে হবে।”
“তোমার গায়ে হলুদের জন্য যখন এতটাই তাড়াহুড়া তাহলে তুমি ঘুমাও না কেন?শুধু শুধু আমার ননদিনীর সাথে প্রেম করো তাই না?”
“তোর ননদিনী আমার হবু বউ।”
“লজ্জা করে না বিয়ের আগের দিন এভাবে দেখা করে ফিসফিস করে কথা বলতে?”
“নিজের হবু বউকে নিয়ে নিজে ফিসফিস করছি। তোর বাপের কি?”
“আমার বাপের টাকায় গড়া বাড়িতে বসে প্রেম করো।এতেই আমার অনেক।”
“ওটা আমারও বাপ।আমিও আমার বাপের টাকায় বানানো বাড়িতে বসে প্রেম করছি। যা তো শান্তিমতো প্রেম করতে দে।”
এবার নীরা চিল্লিয়ে বলে,”দেখেছেন ক্যাডার সাহেব!বিয়ের আগে আপনার বোনের সাথে আমার ভাই প্রেম করছে।আবার আমার বাপের বাড়ি নিয়ে খোটা দিচ্ছে।”
নীরব এবার নীরাকে আস্তে করে বলে,”বোন আমার।তোর বাপ মানে আমারও বাপ এখন যদি ঘুম ভেংগে যায় তার।রক্ষা নেই আমার আর।”
দাত বের করে হেসে নীরা বলে,”বাপ নিয়ে খোটা দিয়ে তুমি করেছো পাপ।এবার সামলাও তোমার হাবভাব।”
বলেই দীপান্বিতার দিকে উকি দিয়ে তাকায় নীরা।দীপান্বিতা হা হয়ে এদের ভাই বোনের কাহিনী দেখতে থাকে।নীরা দীপান্বিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”সেই তো বিয়ে করবো না বিয়ে করবো না করেছিলে।এখন আবার প্রেম করছো!আমি ভেবেছিলাম আমার ভাইকে বাসর ঘরেও নাকানি চুবানি দিবে তা না।উল্টো বিয়ে ঠিক হতেই দেখছি ননদ আমার বরভক্ত।”
দ্বীপ নীরার পিছনে দাঁড়িয়ে নীরাকে বলে,”সবাই কি তোমার মতো নাকি?”
নীরা দ্বীপের দিকে ফিরে তাকায়।সেই সুযোগে নীরব ও দীপান্বিতা নিজেদের ঘরে দৌড় দেয়।নীরা ক্ষেপেছে মানে সারারাত তর্ক বিতর্ক হবে।নীরা দ্বীপকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমার মতো মানে?”
“এই যে তোমার নজরে বর ছাড়া সারা দুনিয়া আছে।বর কি চায় তা তো দেখো না।দেখবে কিভাবে?তোমার চোখে তো আছে সারা দুনিয়ার কে কে প্রেম করে এগুলো দেখায়।”
“আমি আমার বরকে দেখি না?”
“মোটেও না।”
“বুড়ো বরকে কি দেখবো হ্যাঁ?”
“এখন আমি বুড়ো?”
“অবশ্যই। যার হবু চুনু মুনু আমার পেটে সে তো আস্তে আস্তে বুড়ো হতেই যাচ্ছে।কয়েক বছর গেলেই তো বাচ্চাদের বিয়ে দিয়ে শশুর হবেন।”
“ওহ!আমি বাচ্চাদের বিয়ে দিয়ে শশুর হবো বুড়ো হবো। আর তুমি বাচ্চাদের বিয়ে দিয়েও কচি খুকি থাকবে?”
“আপনি কি জেলাস?গায়ে ঠেলে ঝগড়া করছেন কেনো?”
“বউ আমার বাচ্চা দেওয়ার আগেই বুড়ো উপাধি দিলো।এই দুঃখ আমি কই রাখি!”
হো হো করে হেসে দেয় নীরা।দ্বীপ নিজেই হাসতে থাকে নীরার সাথে।তারপর চলে যায় ঘরে।
_______
সারাবাড়ি আজ হইহুল্লোড়।সবার মুখে আনন্দ খুশি লেপ্টে আছে।নীরব ও দীপান্বিতার গায়ে হলুদের আয়োজন চলছে।ছেলেরা আজ লুংগি আর পাঞ্জাবি পড়বে।মেয়েরা হলুদ রঙের শাড়ি পড়বে।এটা নীরার ইচ্ছা।ও টিভিতে গ্রাম্য বিয়ে দেখেছিলো।তখন থেকেই ওর ইচ্ছা এমনভাবে ভাইয়ের বিয়ে দেওয়ার।
নীরা ঘরে বসে শাড়ির কুচি ঠিক করার চেষ্টা করে।কিন্তু পারছে না ঠিক করতে।কিভাবে শাড়ি ঠিক করবে?শাড়ির কুচি ঠিক করতে গেলে যে তাকে ঝুঁকতে হবে।এদিকে ডাক্তার তাকে ঝুঁকতে না করেছে।নীরার কুচি ঠিক করার চেষ্টার মধ্যেই এক জোড়া হাত নীরার কুচিগুলো ধরে নেয়।নীরা হাতের মালিকের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে।বলে,”আপনাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে ক্যাডার সাহেব।”
দ্বীপ আলতো হেসে নীরার কুচিগুলো ঠিক করে দেয়।দ্বীপের পরনে সাদা ও সবুজের মিশ্রণে লুংগি ও হলুদ পাঞ্জাবী,মাথায় গামছা বাধা আর চোখে তো সবসময় চশমা থাকবেই।নীরার শাড়ি ঠিক করে দ্বীপ বলে,”আমার চন্দ্রপাখিকে সব থেকে বেশি সুন্দর লাগছে।”
বলেই নীরাকে আয়নার সামনে নিয়ে আসে দ্বীপ।নীরার চুলের বিনুনির খুলে আস্তে আস্তে নীরার চুল আঁচড়ে দেয় দ্বীপ।তারপর একটি হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে চুল খোঁপা করে নেয়।ইউটিউব দেখে দেখে নীরাকে সুন্দরভাবে হিজাব বেধে দেয়।নীরা ম্লান হেসে দেখতে থাকে এই যত্নগুলো।
নীরাকে গোছানোর পর নিজেকে দেখে খুশি হয় নীরা।দ্বীপের দিকে ফিরে বলে,”আমাদের জীবনের এই সুখ চিরস্থায়ী হবে তো ক্যাডার সাহেব?”
“সুখ সারাজীবনের জন্য বরাদ্ধ নয় চন্দ্রপাখি।সুখ দুঃখ মিলেই জীবন।এই জীবনে যেমন কেউ আগে আসে কেউ পড়ে আসে ঠিক তেমন কেউ আগে যাবে তো কেউ পড়ে।সুখগুলো সারাজীবন স্থায়ী হবে না।”
নীরা সাথে সাথে দ্বীপকে জড়িয়ে বলে,”আপনার আগে যেনো আমার বিদায় হয় ক্যাডার সাহেব।”
দ্বীপ নীরার ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে,”হুশ।আমি কি নিয়ে থাকবো তাহলে?তার থেকে বরং এটাই চাওয়া।গেলে দুজনের জীবন একসাথেই যাবে।”
“হ্যাঁ।তাই ভাল।এই দুনিয়া ছেড়ে যেতে হলে একসাথেই যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিক খোদা আমাদের।আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”
“আমিও আমার এই দুষ্টু মিষ্টি চন্দ্রপাখি ছাড়া থাকতে পারবো না।”
দীপান্বিতাকে নিয়ে হলুদের আসরে বসানো হয়েছে।নীরব অভ্রকে কোলে নিয়ে সেখানে হাজির হয়।দীপান্বিতার পাশে অভ্রকে কোলে নিয়ে বসে নীরব।ছোট অভ্রকে আজ লুংগি ও পাঞ্জাবি পরানো হয়েছে।দেখতে একদম নীরব দীপান্বিতার ছেলে মনে হচ্ছে।আশেপাশের সবাই এসে তাদেরকে হলুদ দিতে থাকে।কেয়া ও রিক এসেছে দীপান্বিতা ও নীরবকে হলুদ লাগাতে।অতঃপর সবাই মিলে হাতে মেহেদী দিতে থাকে।নীরা আজকে নিজে থেকেই দ্বীপের সামনে হাত পাতে।বলে,”নিন আপনার এলোমেলো জিলাপির প্যাচ দিয়ে আমার হাত রাঙিয়ে দিন।”
সবাই হেসে দেয় নীরার কথায়।দ্বীপ আজকেও নীরার হাতে মেহেদী দিয়ে দেয়।রিক এসে কেয়ার হাত নিয়ে বসে।বলে,”তোমাকেও মেহেদী দিয়ে হাত রাঙিয়ে দিবো চশমিশ।”
কেয়া স্মিত হেসে বলে,”ঠিক জিজুর মতো করে জিলাপির প্যাচ দিবেন তাই না সাদা বিলাই?”
“যেটাই দেই না কেনো!তোমার বর দিচ্ছে ভালোবেসে।”
বলেই সবাই হাতে মেহেদী দিতে থাকে।দ্বীপ নীরা একপাশে রিক কেয়া একপাশে আর মাঝখানে দীপান্বিতার দুই হাত ধরে আছে পার্লারের মেয়েরা।দ্বীপ নীরার হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে আর রিক কেয়ার হাতে।পার্লারের মেয়েরা দীপান্বিতার হাতে মেহেদী দিতে থাকে।নীরব অভ্র মিলে দীপান্বিতার পাশে বসে আছে।দীপান্বিতার হাতের মেহেদী দেখতে থাকে।মেহেদী দেওয়া শেষ হলে সবাই মিলে নাচগান শুরু করে।সবার নাচ দেখে বেচারি নীরা নাচতে যেতে চায়।কিন্তু দ্বীপ নীরার বাহু ধরে আটকিয়ে বলে,”একদম নাচানাচি করবে না।”
চোখ মুখ কুঁচকে নীরা বলে,”বাহ ভাইয়ের বিয়েতে আনন্দ করতে পারবো না?”
“ভাইয়ের বিয়েটা তাহলে চেঞ্জ করে এক বছর পর করে দেই?তখন আনন্দ করো শান্তি মতো।”
“এই না না।এমনিতেই ভাই আমার দেবদাস হয়ে ছিলো।এখন আবার ডেট পিছাইলে দুঃখে সন্ন্যাসী হয়ে যাবে।”
নাচগান শেষ করে সবাই সবার বাড়িতে চলে আসে।নীরা রুমে এসে হলুদের সাজ খুলতে থাকে।দ্বীপ নীরাকে সাহায্য করে দেয়।নীরা দ্বীপের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার বউ পাগলা ক্যাডার সাহেব।”
বলেই হেসে দেয় দুজনে।
________
নীরব ও দীপান্বিতার বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।দীপান্বিতাকে সাজিয়ে গেছে পার্লারের লোকজন।দ্বীপের কথা রাখতে নীরা সাজেনি।অভ্র বসে বসে দীপান্বিতার সাজ দেখতে থাকে।নীরা ব্যাগ প্যাক করছে এখন।দ্বীপ এসে দেখে নীরার ব্যাগ প্যাক করা।দ্বীপের তাকানো দেখে নীরা দাত বের করে হেসে বলে,”টেনশন নট ক্যাডার সাহেব।আপনার বউ কোথাও যাচ্ছে না যাচ্ছে আপনার বোন।”
আশেপাশের লোকজন হো হো করে হেসে দেয়।মিসেস সাবিনা এসে খাইয়ে দেয় দীপান্বিতাকে।নীরা পেটের দিকে তাকিয়ে বলে,”জানিস চুনু মুনু?তোদের দাদী আমাকে একটুও ভালোবাসে না।তোকেও না।”
মিসেস সাবিনা অবাক চোখে তাকিয়ে বলেন,”ও মা আমার কোন কাজে এমন মনে হলো?”
“এই যে মেয়ের বিদায় বলে এখন খাইয়ে দিচ্ছো।আমাকে তো দেও না।”
মিসেস সাবিনা এবার নীরাকে নিজের কাছে এনে দীপান্বিতা ও নীরাকে খাইয়ে দিতে থাকে।অভ্র চোখ পিটপিট করে তাকায়।মিসেস সাবিনা দুজনকে খাইয়ে দিয়ে অভ্রকে খাইয়ে দেন।
দ্বীপকে দেখে মিসেস সাবিনা বলেন,”কনে বিদায়ের সময় কনের সাথে ভাই যায়।তাই আজ তোরা দুজনে ওই বাড়িতে থাকবি।”
মায়ের কথা শুনে দ্বীপ রাজি হয়।নীরা খুশিতে লাফায়।দ্বীপ সাথে সাথে চোখ গরম দিয়ে তাকায় নীরার দিকে।নীরা জিহ্বা কামড় দিয়ে বলে,”সরি।”
চলবে…?