লুকোচুরি গল্প পর্ব-২৮+২৯

0
614

#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_২৮
#ইশরাত_জাহান
🦋
কেয়াকে সাজিয়ে স্টেজে বসানো হয়েছে।কেয়াকে কলাপাতা রঙের সাথে হলুদের মিশ্রণে একটি শাড়ি পরানো হয়েছে।মাথায় গলায় ও হাতে ফ্রেশ ফুলের গহনা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।সেখান থেকে নীরা ও দীপান্বিতাকে ফুলের চুরি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।এখন কেয়ার একপাশে নীরা আর একপাশে দীপান্বিতা বসে আছে।একটু পর কেয়ার হাতে মেহেদী দেওয়া হবে।আপাতত সবাই এসে এসে কেয়াকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছে।

মেহেদী দেওয়ার জন্য দুজন মেয়ে এসেছে পার্লার থেকে।কেয়ার হাতে তারা মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।মেহেদী দেওয়ার পর পার্লারের মেয়েটি বলে,”বরের নাম কি দিবো?”

নীরা বলে ওঠে,”সাদা বিলাই।”

সবাই হেসে দেয় একসাথে।কেয়া চশমার ভিতর থেকে নীরাকে চোখ গরম দিতে থাকে। রিককে আনা হয়েছে হলুদের নতুন পাঞ্জাবী পরিধান করিয়ে।নীরব ও দ্বীপ মিলে রিককে কেয়ার পাশে এসে বসিয়ে দেয়।একে একে এবার সব মেয়েদের হাতে মেহেদী দেওয়া হবে।নীরা ও দীপান্বিতা হাতে মেহেদী দিতে বসে।নীরা হাত পেতে বসার পর পরই দ্বীপ এসে নীরার সামনে বসে বলে,”আজকে আমি দিয়ে দিবো তোমার হাতে মেহেদী।”

সবাই তাকিয়ে আছে দ্বীপের দিকে।কেয়া নিজের বিয়ের জন্য এক্সসাইটেড থাকলেও লজ্জায় মুখ নিচু রাখতো।কিন্তু দ্বীপের মতো মুডি স্যার যাকে কি না সবাই ভয় পায় সে তার বউয়ের কাছে এতটা রোমান্টিক এগুলো যেনো কেয়াকে অবাক করে দেয়।মনে মনে বলে,”স্যার হলে কি হয়েছে?আমার বান্ধবী রোমান্টিক এক বর পেয়েছে।”

মিসেস নাজনীন মেয়েকে তার মতো সুখী দেখে খুব খুশি হন।তিনি তো জানতেন দ্বীপ তার মেয়েকে এভাবেই সুখে রাখবে।মিস্টার রবিন এসে মিসেস নাজনীনের পাশে দাড়িয়ে বলেন,”কি দেখছো এভাবে?তোমার সন্তানেরা সুখেই আছে।”

“আমার মেয়ের এই সুখ নিজ চোখে দেখবো বলেই তো মেয়েকে সফলতা হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলাম।আমার আর আফসোস নেই।আমার মেয়েকে তার মতো করে আগলে রাখার মানুষ যে পেয়ে গেছি।এভাবে সুখে থাকলে আমাদের মেয়ের আর কিছুই লাগবে না।”

“তারমানে নীরার পড়াশোনা বন্ধ করে সংসার করতে দেওয়া যাবে।কি বলো?”

মিসেস নাজনীন বিরক্তিকর চোখে তাকালেন মিস্টার রবিনের দিকে।বলেন,”এই তোমার মাথায় ছাই পাশ কথা বার্তা আসে বলেই আমার মেয়ে পড়াশোনায় মন দেয় না।”

“হা হা হা।”

হাসতে থাকেন মিস্টার রবিন।তারপর বলেন,”আমার মেয়েকে আমি যেমন মাথায় উঠিয়েছি তার দ্বিগুণ তাকে মাথায় উঠিয়ে রেখেছে তার স্বামী। দেখোনা বউ থুয়ে এক রাত থাকতে পারলো না।কেমন হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছিলো।আজ আবার হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।”

“তোমারই তো জামাই।তোমার মতোই হয়েছে।”

“যাক জামাই আমার শ্বশুরের ছোঁয়া পেয়েছে।বউকে ভালোবাসে খুব।”

মিস্টার রবিন ও মিসেস নাজনীনের কথা শুনতে পান মিসেস সাবিনা ও মিস্টার সমুদ্র।মিসেস সাবিনা বলেন,”দেখেছো বেয়াই বেয়াইদের।কত প্রেম তাদের ভিতর।কিন্তু তুমি এক পানসে লোক।কখনও ভালোবেসে কোথাও ঘুরতেও নিয়ে যাওনি আজ অব্দি।”

“শুরু হয়ে গেছে তোমার?”

“হ্যাঁ,শুরু তো খালি আমিই করি।কোনোদিন শেষ করতে পারোনি।”

বলেই মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যান মিসেস সাবিনা।মিস্টার সমুদ্র বিড়বিড় করে বলেন,”বুড়ি হয়েও ভিম্রতি।”

“বউকে ভালোবাসা সুন্নত,বেয়াই সাপ।”কাছে এসে বলেন মিস্টার রবিন।

হালকা হেসে গল্প করতে থাকবেন মিস্টার রবিন ও মিস্টার সমুদ্র।মিসেস নাজনীন গেছেন মিসেস সাবিনার সাথে গল্প করতে।

দ্বীপ নীরার হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।নীরা চুপচাপ দেখতে থাকে।মেহেদী দেওয়া শেষে দ্বীপ বলে,”কেমন হয়েছে?”

নীরা বলে,”এর থেকে তো জিলাপির প্যাচ করা সহজ।কথায় ফুল কোথায় ডাল কিছুই বুঝতে পারছি না তারপরও সুন্দর হয়েছে।”

অভ্র নীরার কাছে এসে নীরার হাত দেখে।দ্বীপকে বলে,”এটা কি মামু?এর থেকে ভালো আমি ভুতের বাড়ি আকাতে পারি।”

সবাই হেসে দেয় অভ্রর কথায়।নীরব এসে দাঁড়ায় অভ্রর কাছে।বলে,”সবাই ছবি তুলছে বাবাই। চলো আমরাও ছবি তুলি।”

অভ্র রাজি হয়।চলে যায় নীরবের সাথে।অভ্র নিজেও ছোট কলাপাতা রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে।নীরবের কোলে অভ্রকে ছবি তুলতে দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দীপান্বিতা।খুব সুন্দর লাগছে দুজনকে।যেনো মনে হচ্ছে বাবা ছেলে।তামান্না দেখতে ফর্সা ও সুন্দরী ছিলো ওর স্বামী কেমন ছিলো এটা জানে না দীপান্বিতা।কিভাবে জানবে? সময়ই তো পায়নি ওদের ব্যাপারে জানার।ভেবেছিলো অভ্র হওয়ার পর কেস করবে কিন্তু তার আগেই মারা গেলো তামান্না।অভ্রর জন্মের সময় ওর মুখটি লাল টমেটোর মতো হয়েছিলো।অতিরিক্ত ফর্সা মুখে রক্ত জমাট বাঁধা ছিলো।সেই অভ্র আজ দীপান্বিতার ভালোবাসার মানুষের কোলে আদর নিচ্ছে।দীপান্বিতার চোখ দিয়ে নিজ থেকেই সুখের পানি চলে আসে।

মিসেস নাজনীন তাকান দীপান্বিতার দিকে।দেখতে পান দীপান্বিতা মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে অভ্র ও নীরবের দিকে।সাথে সাথে মিসেস নাজনীন কথা বলেন মিসেস সাবিনার সাথে।বলেন,”আচ্ছা আপা,আমার ছেলেকে আপনার কাছে কেমন লাগে?”

মিসেস সাবিনা বলেন”ছেলে তো আপনার মাশাআল্লাহ।শিক্ষিত ভদ্র আবার এখন তো একজন নিউট্রিশন।কেনো বলুন তো?”

“আমি ছেলের বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছি।কিন্তু আমার মনে হয়েছে আমাদের কাছেই তো আছে যোগ্য পাত্রী।এছাড়া আমাদের মধ্যে এখন আত্মীয়তার সম্পর্ক এসেই গেছে।এটাকে আরো মজবুত করতে চেয়েছিলাম আর কি।”

মিসেস সাবিনা বুঝতে পারলেন মিসেস নাজনীনের কথা।তাই বলেন,”আপনার মেয়েকে আমি নিয়ে নিয়েছি বলে আমার মেয়েটিকেও কি আপনি নিতে চান,আপা?”

“যদি বলি হ্যাঁ তাই?”

“আমার আপত্তি নেই।বাসায় সবাই একসাথে কথা বলে দেখি এই ব্যাপারে।সবাই মিলে না হয় একসাথে মিটিং করবো।”

“আচ্ছা।”

ছবি তোলার মাঝে নীরব অভ্রর কানে কানে বলে,”তোমার আম্মুকে বলো আমাদের সাথে ছবি তুলতে।আমরা তিনজনে মিলে একটা ফ্যামিলি হয়ে যাবো।তুমি খুশি হবে না তাতে?”

কিছুক্ষণ নীরবের দিকে তাকিয়ে অভ্র বলে,”হ্যাপি ফ্যামিলি?”

নীরব স্মিত হেসে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ হ্যাঁ।অভ্র নীরবের গালে চুমু খেয়ে দৌড়ে যায় দীপান্বিতার কাছে।দীপান্বিতাকে বলে,”আম্মু আসো ছবি তুলবো।”

“তুমি তুলো বাবাই।আমি পড়ে তুলবো।”

“না আম্মু আমি হ্যাপি ফ্যামিলি হয়ে ছবি তুলবো।তুমি আসো।”

বলেই দীপান্বিতাকে টেনে নিয়ে যায় নীরবের পাশে।তারপর অভ্র কোল উচু করে নীরবকে দেখায়। বোঝাতে চায় সে নীরবের কোলে উঠবে।নীরব মৃদু হেসে অভ্রকে কোলে নিয়ে দীপান্বিতার সাথে ছবি তোলে।মিসেস নাজনীন খুশি হয়ে তাকিয়ে আছেন ছেলের দিকে।মিস্টার রবিন বলেন,”ছেলের সুখটাও ছেলে খুঁজে নিয়েছে।”

“হুম,আমি আপার সাথে কথা বলেছি।উনি বললেন মিটিং করবেন।দেখা যাক কি হয়।”

মিসেস সাবিনা এসে মিস্টার সমুদ্র ও মিসেস শিউলির কাছে বলেন,”দীপান্বিতার সাথে নীরবকে বেশ মানিয়েছে।কি বলো তোমরা?”

মিস্টার সমুদ্র বলেন”হ্যাঁ,কিন্তু নীরবের বাসা থেকে কি মানবে?”

“আপা নিজেই প্রস্তাব দিয়েছেন আমার কাছে।”

মিসেস শিউলি বলেন,”তাইলে আর অপেক্ষা কিসের বউমা? হ্যাঁ বইলা দেও।নাতি আমাদের কাছেই থাকবে।এছাড়া অভ্রকে তো আমরা বোর্ডিংয়ে দিয়ে দিবো।সমস্যার তো কিছু নেই।”

“দীপান্বিতার সাথে তো কথা বলতে হবে।”

“আচ্ছা,বাড়ি যেয়ে কথা বলে দেখি।”

দ্বীপ ও নীরা চলে যায় কাপল পিক তুলতে।তারপর কেয়া ও রিক ছবি তুলতে থাকে।সবাই একসাথে অনেকগুলো ছবি তুলে নেয়।কেয়া ও রিকের পরিবার সাথে দূরের কিছু আত্মীয় আজ সেন্টারেই থাকবে।এই বড় সেন্টার তারা দুই দিনের জন্য ভাড়া নিয়েছে।রাতে অনুষ্ঠান করে বউকে বাসায় নিয়ে যাওয়া ঝামেলা। আর গুরুজনদের তো একেকটি কথা আছেই। কারো কারো মতে,”রাতের বেলা বিয়ের আগেরদিন মেয়েদের বাইরে থাকতে নেই।নজর লাগে এতে।”
তাই আর কেউ রিস্ক নেয়নি।যদিও কেউ বিশ্বাস করেনা এসব কথা।কিন্তু মুরুব্বিদের সম্মানের খাতিরে এই ব্যাবস্থা।

রাত গভীর হয়েছে অনুষ্ঠান শেষ তাই দ্বীপ নীরাকে বলে,”চলো বাসায় যেতে হবে। কাল আবার বিয়ের কাজ আছে।জুম্মা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বিয়ের ব্যাবস্থা করতে হবে।”

কেয়া এখানে থাকবে তাই নীরা বলে,”আজকে আমিও কেয়ার সাথে থাকবো।বান্ধবীর বিয়েতে বান্ধবীর সাথে থাকি?”

“না, কাল এসে সারাদিন আনন্দ করবে।এখন চলো।”

নীরা লাফাতে লাফাতে বলে,”না আমি আজ এখানে থাকবো।”

“এর পাগলামি শুরু হয়েছে,বাবা।তোমরা আসো আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।”

মিস্টার সমুদ্রকে বলেই দ্বীপ নীরাকে কোলে করে উঠিয়ে নিয়ে যায়।নীরা চিল্লাতে চিল্লাতে বলে,”মেরে দোস্তি কা দুশমান।ছড়িয়ে মুঝে।”

কে আর কি বলবে!সবাই জানে নীরা হাফ মেন্টাল আর দ্বীপ বউয়ের জন্য মেন্টাল।কেয়া মিটমিট হেসে রিকের দিকে তাকায়।রিক সাথে সাথে দ্বীপ ও নীরাকে ইশারা করে কেয়াকে চোখ টিপ দেয়।

দ্বীপ নীরাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।নীরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,”আপনি বউ পাগল হয়েছেন ক্যাডার সাহেব।এটা কি আপনি জানেন?”

“আমার বউয়ের জন্য আমি পাগল হবো না তো কি ওই বখাটে নান্টু হবে?”

“জেলাস?”

“ভীষন আকারে জেলাস।”

“একটু থাকলে কি হতো? কাল বান্ধবীর বিয়ে হয়ে যাবে।”

“আমার চুনু মুনু আনা মিস হয়ে যাবে।”

“লুচু,ক্যাডার সাহেব।”

“বউকে ভালোবাসাকে লুচু বলে না চন্দ্রপাখি।বউকে ভালোবাসাকে আসল পুরুষত্ব বলে।”

“হয়েছে এবার চলেন।আমার ঘুম আসছে।”

দ্বীপ গাড়ি চালানো শুরু করে।নীরা দ্বীপের কাধে মাথা রেখে বসে আছে।

নীরব বাইক আনিয়েছে কল করে। বাইকে করে যাবে তাই।অভ্র আবদার করে নীরবের সাথে বাইকে যাবে।তাই জেদ ধরে।মিসেস শিউলি ইচ্ছা করে বলেন,”পোলাডা আবদার করছে মা হয়ে পূরণ কর।”

দীপান্বিতা তর্ক না করে রাজি হলো।চোখে মুখে ঘুম চলে এসেছে তার।নীরবের সামনে অভ্র বসেছে আর পিছনে দীপান্বিতা।কিছুদূর যেয়ে নীরব অভ্রকে বলে,”বাবাই বাইকে চড়তে কেমন লাগছে?”

“খুব ভালো।”

“কোনো একজনের এমন ভালো লাগতো।কি জানি এখন তার মন পাল্টেছে কি না।বলছি বাবাই আরেকটু বেশি ঘুরবে কি?তাহলে বাইকে এক রাউন্ড দিবো তোমাকে নিয়ে।”

অভ্র খুশি হয়ে বলে,”হ্যাঁ হ্যাঁ দেও।আমি খুব মজা পাচ্ছি।”

নীরব অভ্রকে কোলে নিয়ে বাইক চালাতে থাকে।অভ্রর ছোট ছোট হাত ধরে নিরব বাইক ধরে আছে।অভ্র ভাবছে সে নিজে বাইক চালাচ্ছে।এতেই যেনো তার ভালো লাগা।দীপান্বিতা অভ্রকে এত খুশি হতে দেখে বাধা দেয় না।চুপচাপ দেখতে থাকে ছেলের খুশি।

চলবে…?
#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_২৯
#ইশরাত_জাহান
🦋
শীতের রাতের ঘন কুয়াশায় বাইকে করে প্রণয় পুরুষের সাথে অনেকদিন পর সময় কাটাচ্ছে দীপান্বিতা।মুখে তার কোনো কথা নেই।শুধু প্রণয় পুরুষের প্রতি জমা আছে কিছু অভিমান।কেনো সে এতগুলো বছর কথা বলেনি।কেনো সে তার বিপদের কথাগুলো শুনতে চায়নি।এবার একটু সেও বুঝুক অভিমানের পাল্লা ভারী হলে কতটা যন্ত্রণা বসবাস করে মনের গহীনে।

অভ্র ঘুমিয়ে গেছে নীরবের কোলে।দীপান্বিতা নীরবের কাধে এক হাত দিয়ে রেখেছে।নীরবের দৃষ্টি রাস্তার দিকে কিন্তু মন তার মায়াবন বিহারিনীর দিকে।অভ্র ঘুমিয়ে আছে বুঝতে পেরে নীরব বাইক নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসে।বাইক থামতেই দীপান্বিতার মন খারাপ হয়ে যায়।মনে মনে বলে,”এই পথ যদি শেষ না হতো!”

“তাহলে আমাদের পথ যাত্রা আবার শুরু করা যাক?”(নীরব বলে)

থতমত খেয়ে যায় দীপান্বিতা।স্মিত হেসে নীরব বলে,”প্রিয়তমার মনে আমার জন্য এখনও বাসা বেঁধে আছে।খুব সহজেই বুঝতে পারি সে কি চায়।”

“হ্যাঁ,খুব ভালো বুঝতে পারেন।তাই তো আমার বিপদটা বুঝতে পারেননি।”

“সবকিছু তো নতুন করে শুরু করা যায়?”

“আপনি করেন নতুন করে শুরু।আমি চললাম।”

বলেই অভ্রকে কোলে নিয়ে চলে যায় দীপান্বিতা।নীরব বিড়বিড় করে বলে,”এ মেয়ে সোজা কথা শুনবে না।বাকা পথ দেখতে হবে আমাকে।”

বলেই বাসায় চলে যায় নীরব।
নীরবদের আসার আগেই চলে আসে দ্বীপ ও নীরা।দ্বীপ গাড়ি থেকে নামার পর নীরা দুই হাত উচু করে বলে,”কোলে করে যেমন গাড়িতে উঠিয়েছেন ঠিক কোলে করে এখন আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে যাবেন।আমি এখন অলস বোধ করছি।”

দ্বীপ নীরাকে কোলে নেয়।তারপর বলে,”এভাবে বউ আবদার করলে কি আর না বলা যায়?”

দুজনে হেসে উপরে যেতে থাকে।দ্বীপ নীরাকে কোলে নিয়ে নীরার দিকে তাকিয়ে হাঁটছে আর নীরা দ্বীপের চশমা দেওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিতে থাকে।ফ্ল্যাটের সামনে আসার পর দ্বীপ বলে,”আমার পকেটে দেখো চাবি আছে।দরজা খুলো তুমি।”

নীরা চাবি নিয়ে দ্বীপের কোলে থেকেই দরজা খুলে।ঘরে এসে তাড়াতাড়ি করে হিজাব খুলতে যাবে দ্বীপ হাত ধরে বাধা দিয়ে বলে,”আমি খুলে দিচ্ছি হিজাব।”

নীরা খুশি হয়ে বলে,”ওকে,ক্যাডার সাহেব।”

দ্বীপ ধীরে ধীরে নীরার মাথায় থাকা গাজরা খুলে দেয় তারপর হিজাব খুলতে থাকে।নীরা আয়নায় তাকিয়ে নিজের স্বামীর এই ভালোবাসাগুলো উপভোগ করতে থাকে।আয়নায় দ্বীপের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বলে,”এভাবেই আমাকে সব সময় ভালোবাসবেন তো,ক্যাডার সাহেব?”

দ্বীপ আয়নাতে নীরার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর নীরাকে জড়িয়ে ধরে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,”সারাজীবন ভালোবেসে কাছে আগলে রাখবো বলেই তো আমার এই ইচড়ে পাকা চন্দ্রপাখিকে বিয়ে করা।উল্টো চিন্তা তো আমার হচ্ছে।”

নীরা আয়নায় দ্বীপের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।বোঝাতে চাইছে দ্বীপ কিসের জন্য চিন্তা করছে।দ্বীপ বলে,”এই যে আমাদের এজ ডিফারেন্ট।তুমি কি আমার বয়স বাড়লেও এতটা ভালোবাসবে?আস্তে আস্তে যখন আমার চুল পাকতে শুরু করবে এই ভালোবাসা কি স্থায়ী থাকবে?”

নীরা দ্বীপের দিকে ঘুরে দ্বীপকে পুরোপুরিভাবে আলিঙ্গন করে বলে,”আমার হবু চুনু মুনুদের বাবাকে আমি কখনও ছেড়ে যাবো না।মৃত্যু ছাড়া আমি কখনও আপনার থেকে আলাদা হবো না,ক্যাডার সাহেব।তাতে আপনি বুড়ো হন না কেনো।”

“ভালোবাসি আমার চন্দ্রপাখি।”(বলেই দ্বীপ নীরাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে)

____
কেয়া ও রিক সবার পরিবার আজ কমিউনিটি সেন্টারে আছে।কেয়ারা এক পাশের রুমে আছে তার ওপর পাশের রুমে রিকেরা আছে।হঠাৎ গভীররাতে কেয়ার ফোনে এসএমএস আসে।কেয়া জেগে ছিলো।ভাবছিলো কাল তার পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে রিকের সাথে থাকবে।ফোনের এসএমএস এর জন্য আলো জ্বলতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় কেয়া।ফোন হাতে নিয়ে দেখে রিকের এসএমএস।

“জানি তুমি ঘুমিয়ে নেই।তাড়াতাড়ি ছাদে আসো।আমি আছি তোমার অপেক্ষায়,মাই ডিয়ার চশমিশ।”

রিকের এসএমএস দেখে অবাক হয়ে বালিশের পাশে থাকা চশমা নিয়ে চোখে সেট করে কেয়া।তারপর আবার এসএমএস পড়ে। নাহ রিক তাকে এই রাতে ছাদে যেতে বলেছে।পাশে তাকিয়ে সবাইকে পরখ করে নেয়।সবাই ঘুমে বিভোর হয়ে আছে।কেয়া তাড়াতাড়ি করে একটি চাদর গায়ে মুড়িয়ে কাপতে কাপতে চলে যায় তার সাদা বিলায়ের দিকে।এত রাতে রিক তার জন্যে অপেক্ষা করছে সে কি না যেয়ে পারে?ছাদে এসে দেখে রিক নিজেও একটি চাদর মুড়িয়ে কাপতে থাকে।ভ্রু কুচকে তাকায় কেয়া।রিক কেয়ার কাছে আসে।

বলে,”তোমার এই চশমার ভিতরে ভ্রু কুচকে তাকানো দেখতে আমার অনেক ভালো লাগে,চশমিশ।”

“আর কয়েকঘন্টা পর তো আমাদের বিয়ে।এখন এই হাড় কাঁপানো শীতে ডেকেছেন কেনো?”

“বিয়ের আগের দিন রাতে হবু বউয়ের সাথে প্রেম করবো তাই।”

“শীতে মরে যাচ্ছি।কি কুয়াশা দেখেছেন? গাছগুলো কুয়াশায় ভিজে আছে।”

“আর এই শীতল হাওয়াতে একটু চন্দ্র বিলাস করছি আমি আর আমার চশমিশ।”

কেয়া রিকের ভালো লাগার মুহূর্তকে বাধা দিতে চায় না।তাই রিককে আর কিছু না বলে চুপ থাকে।রিক বলে,”হাড় কাঁপানো শীত হোক আর চৈত্র মাসের সূর্যের করা উত্তাপ ভালোবাসার মুহূর্ত থাকবে সব সময়।এগুলো নিজেদেরকেই তো অর্জন করে নিতে হবে।”

লজ্জাতক দৃষ্টিতে চশমার ফাকে কেয়া তাকায় রিকের দিকে।বলে,”এত ভালোবাসেন আমাকে?”

“অনেক,কেনো তুমি বাসোনা?”

“বলেছি একবারও?”

“ভালোবাসি বলোনি তো একবারও।”

“সব কথা কি মুখে বলতেই হবে?”

“প্রিয় মানুষের মুখে ভালোবাসি শুনতে পাওয়ার অনুভূতিটাই যে ভিন্ন,চশমিশ।একটিবার বলবে আমার এই চোখের দিকে তাকিয়ে?ভালোবাসি।”

কেয়া লজ্জা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।এই কনকনে শীতে এখন তার হাতের উপর লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়। কখনও কাউকে ভালোবাসা প্রকাশ করেনি।আজ কিভাবে বলবে?

রিক বলে,”হায় মেরে চশমিশ!ভালোবাসি বলতে এত লজ্জা?”

“ধেত।”

“বলো একটিবার।”

কেয়া এবার তাকায় রিকের দিকে।দূরত্ব কমিয়ে কিছুটা কাছে এসে চাঁদ বরাবর দাড়িয়ে থাকা রিকের কানের কাছে আসে।ফিসফিস করে রিকের কানে বলে,”আমি ভালোবাসি আমার এই সাদা বিয়ালাইকে।অনেক বেশি ভালোবাসি তাকে।”

বলেই দৌড়ে চলে যায় কেয়া।এখন তার খুব লজ্জা লাগছে এখানে থাকতে।রিক হালকা হাসে।চাঁদের দিকে তাকিয়ে আনমনে এক চোখ টিপ দেয় রিক।যেনো চাঁদকে সাক্ষী রেখেছিলো আজ তার চশমিশ তাকে প্রোপজ করেছে।

ঘরে এসে বসতেই কেয়ার ফোনে আবার একটি এসএমএস আসে।না এবার আর রিক দেয়নি এসএমএস।এবার এসএমএস দিয়েছে নীরা।লেখা,”আরে দোস্ত বিয়ের আগে হাড় কাঁপানো শীতে ছাদে দাড়িয়ে প্রেম করলে জ্বর আসে না।”

কেয়া লেখে,”তুই কি করে জানলি?”

“আইডিয়া যে আমার ছিলো।রিক ভাই তোর মুখে ভালোবাসি শুনতে চেয়েছিলো তাই আমি বলেছিলাম আপনি ওকে রাতের বেলায় একটু ইমোশনাল করে দিবেন।”

কেয়া স্মিত হেসে নীরাকে গুড নাইট জানিয়ে দেয়।দ্বীপের বুকে মাথা দিয়ে নীরা কেয়াকে গুড নাইট লিখে দেয়।নীরা কেয়ার এই রোমান্টিক মোমেন্ট এর জন্যই থাকতে চেয়েছিলো আজ কেয়ার কাছে।কিন্তু ক্যাডার সাহেব তা হতে দিলো কোথায়!নীরা দ্বীপের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার লুচু ক্যাডার সাহেব।”

দ্বীপ বলে,”অনেক প্রেম হয়েছে এখন ঘুমাও চন্দ্রপাখি।”

চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে