#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_২৬
#ইশরাত_জাহান
🦋
{১৮+ এলার্ট…}
নীরব দীপান্বিতাকে কল দিচ্ছে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে।নীরার থেকে দীপান্বিতার নতুন নাম্বার নিয়েছে নীরব।প্রথম কল আসাতে রিসিভ করে দীপান্বিতা।সেই যে নীরবের কণ্ঠ পেয়েছে আর রিসিভ করে না এই কল।অতঃপর নীরব ব্যালকনিতে আসে।গিটার নিয়ে গাইতে থাকে,
“মায়াবন বিহারিনী হরিণী….”
দীপান্বিতার ঘরের জানালা খুলে যায়।নীরব খুশি হয়।পুরনো ভালোবাসা পুরনো স্মৃতি ধরে এখনও দীপান্বিতা চাঁদকে সাক্ষী রেখে প্রেম নিবেদন করবে।কিন্তু নীরবের খুশিকে পানিতে ফেলে জানালার কাছে দেখা যায় অভ্রকে।অভ্র নীরবকে বলে,”তুমি অনেক সুন্দর গান গাও,মামু।”
নীরব ক্ষিপ্ত হয়ে মনে মনে বলে,”মামু!”
ছোট্ট অভ্র কোমরে হাত দিয়ে বলে,”কিন্তু এত রাতে এত জোরে গান গাচ্ছো কেন?আশেপাশে কেউ তো ঘুমাতে পারবে না।এখন আমার ঘুমের সময়।সকালে গান শুনাবে।”
বলেই খট করে জানালা লাগিয়ে দেয় অভ্র।”তোর মামু আমি হওয়াচ্ছি পুঁচকে।”(বিড়বিড় করে বলে নীরব)
নীরা হসপিটাল থেকে এসে ফ্রেশ হয়।ঠিক তখনই দ্বীপ নীরার হাতে একটি প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে,”এটা পরে আসো।”
নীরা প্যাকেটটি হাতে নিয়ে ভিতরে কি আছে দেখতে থাকে।প্যাকেটের ভিতরে একটি গাঢ় খয়েরী রঙের জর্জেট শাড়ি।শাড়িটি দেখে নীরা বলে,”কি ব্যাপার ক্যাডার সাহেব?আজ হঠাৎ রাতের বেলায় শাড়ি পরতে বলছেন?”
“চন্দ্র বিলাস করবো।”
নীরা খুশি হয়ে ওয়াশরুমে গেলো শাড়ি পরতে।আদা ঘণ্টা পর ওয়াশরুম থেকে বেড় হয় নীরা।নীরা বের হওয়ার সাথে সাথে দ্বীপ তাকায় নীরার দিকে।টুকটুকে খয়েরী রঙের শাড়ির সাথে স্লিভলেস ব্লাউজ চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া।নীরাকে দেখতে একদম দ্বীপের মনের মত লাগছে।নীরা আয়নার সামনে যেয়ে মেকআপ বক্সে হাত দিতে যায় ওমনি দ্বীপ বলে,”খবরদার কোনো প্রকার আর্টিফিশিয়াল প্রোডাক্ট ব্যাবহার করবে না।”
থেমে যায় নীরা।পিছনে ঘুরে নীরা বলে,”এত কষ্ট করে শাড়ি পড়েছি একটু সাজবো না!অন্তত লিপস্টিক দেই ঠোঁটে।”
“উহুম,কোনো প্রকার লিপস্টিকের স্বাদ আমি নিবো না।পরে ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।তার থেকে বরং আমি নেচারাল ঠোঁটের স্বাদ গ্রহণ করতে চাই,চন্দ্রপাখি।”
লজ্জায় এদিক ওদিক চাওয়া চাওয়ি করে নীরা।বলে,”চলুন চন্দ্র বিলাস করি আমরা?”
দ্বীপ নীরাকে নিয়ে নিজেদের ছাদে যায়।ছাদ অনেক সুন্দর করে সাজানো।চারিদিকে হলুদ গোলাপের গাছ।নীরার পছন্দের ফুল গাছ দিয়ে ছাদ বাগান করেছে দ্বীপ।পরীক্ষার এই কয়েকদিন নীরা ছাদে আসতে পারেনি।আজ প্রথম আসলো।এসেই মুগ্ধ হয়ে তাকালো সেদিকে।দ্বীপ নীরার হাত ধরে নিজের কাছে টান দিয়ে কপালে কপাল মিলিয়ে বলে,”আমার জীবনের একাংশ আমার চন্দ্রপাখি।খুব খুব খুব ভালোবাসি।”
নীরা চুপচাপ দ্বীপের কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ নিচের দিকে করে আছে।চশমা চোখের ভিতর থেকে দ্বীপ তাকায় নীরার দিকে।ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে নীরার গালে ঠুস করে এক চুমু দেয়।কেপে ওঠে নীরা।দ্বীপ এর আগেও তাকে চুমু দিয়েছিলো।কিন্তু আজকের চুমু যেনো ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ করেছে।
দ্বীপ বলে ওঠে,”আজ এই চাঁদকে সাক্ষী রেখে আমার চন্দ্রপাখিকে দিলাম প্রেমের আবেদন। চন্দ্রপাখি কি করেছে আমার প্রেমকে গ্রহণ?”
নীরা আস্তে আস্তে তাকায় দ্বীপের দিকে।বলে,”আপনার প্রেমে সাড়া দিয়েছি তো আমি সেই অনেক আগে,ক্যাডার সাহেব।আপনার ডায়েরির পাতায় লেখা আমার জন্য আপনার মনে লুকোচুরি প্রেম কাহিনী আমি অনেক আগেই পড়ে নিয়েছি।সেদিন থেকে আমার মনেও তৈরি হয় আপনার জন্য লুকোচুরি প্রেম অনুভূতি।”
“দুজনের এই লুকোচুরি প্রেমের সমীকরণে আজ পূর্ণ হবে আমাদের লুকোচুরি গল্প।”
মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে দিলো নীরা।তারপর কিছুক্ষণ চাঁদের দিকে তাকিয়ে নিরবতা পালন করে দুজনে।দ্বীপের কাধে মাথা দিয়ে নীরা তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে।কিছুক্ষণ চন্দ্র বিলাস করে দ্বীপ ও নীরা ঘরে আসে।ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দ্বীপ নীরাকে কোলে নেয়।নীরা তাকিয়ে আছে দ্বীপের দিকে।
দ্বীপ বলে,”বড্ড প্রেম করতে ইচ্ছা করছে, চন্দ্রপাখি।আজ আমি আমার চন্দ্রপাখিকে একদম নিজের করে পেতে চাই।”
নিচের ঠোঁটের সাথে উপরের মিলিয়ে লজ্জা প্রকাশ করে নীরা।দ্বীপ তাকায় সেদিকে।বলে,”আজ এত লজ্জা কেনো চন্দ্রপাখি!এক ডজন চুমু মুনু চাই না তোমার?”
দ্বীপের বুকে মাথা গুঁজে বলে,”হুম।”
হালকা হেসে দ্বীপ নীরাকে বসিয়ে দেয় খাটের উপরে।তারপর যখনই দ্বীপ নীরার কাছে আসতে যাবে নীরা দূরে সরে যায়।দ্বীপ বলে,”এভাবে নড়াচড়া করলে তো ক্রিকেট টিম আসতে পারবে না,বউ।”
নীরা চোখ বন্ধ করে থাকে।তারপর দ্বীপ নীরাকে নিজের কাছে টেনে আলিঙ্গন করে নেয়।
সকালে,
নীরার ঘুম ভেংগে যায় দ্বীপের আগে।সাথে সাথে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা বানাতে যায় নীরা।দ্বীপ এতক্ষণ ঘুমের অভিনয় করতে থেকে।কিন্তু ইচ্ছা করেই নীরাকে কিছু বুঝতে দেয়নি।নীরা নাস্তা বানাতে থাকে ঠিক তখন রান্নাঘরে সবাই হাজির হন।একে একে মিসেস শিউলি মিসেস সাবিনা ও দীপান্বিতা এসে নীরাকে সাহায্য করতে থাকে।
নীরা মিসেস সাবিনাকে বলে,”রুটি ঠিকমত হচ্ছে তো,মামনি?”
বলেই যখন নীরা তাকায় মিসেস সাবিনার দিকে,মিসেস সাবিনা হা হয়ে তাকায় নীরার দিকে।নীরার ঠোঁট ফুলে লাল।মিসেস সাবিনা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলেন,”হ্যাঁ।সব ঠিকঠাক হয়েছে।”
মিসেস শিউলি নীরার ঠোঁট দেখে ইচ্ছা করে নীরার কাছে আসেন।এসে নীরার গলা থেকে চুল সরিয়ে বলেন,”দেখিতো নাতবৌ তোমার এদিক ওদিক কিছু আছে কি না।”
নীরার খেয়াল নেই রাতের কথা।তাই সে বলে,”কি থাকবে দাদীন?”
“আমার নাতির ভালোবাসা।”
বলেই দেখতে পান গলার কোনায় জমাট বাঁধা রক্তের দলা।হালকা হেসে মিসেস শিউলি বলেন,”বুঝছো গো বউমা।খুব তাড়াতাড়ি নাতির ঘরে পুতি আইবো।”
সাথে সাথে নীরা দৌড় দিয়ে ঘরে যায়।মিসেস শিউলি হেসে দেন।সকালে শুধু গোসল করে চুল শুকিয়ে মাথায় ওড়না দিয়ে গিয়েছিলো রান্নাঘরে।এখন আয়নার সামনে এসে নিজেকে দেখে নিজেই অবাক।চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”আমার ঠোট!”
দ্বীপ ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়ে বলে,”চিল্লাও কেন? লোকে জেনে যাবে তো?”
“ওহ আমি চিল্লালে লোকে জেনে যাবে! আর আপনি যে এত বড় একটা চিহ্ন দিয়ে রেখেছেন তাতে কি হবে?”
“লোকে বলবে প্রফেসর আদনান কবির দ্বীপ তার বউকে খুব ভালোবাসে।তাই চিহ্ন দিয়েছে।”
“শুনুন বাজে কথা বলবেন না।আজ কেয়ার গায়ে হলুদ।এই ঠোঁটে কি লিপস্টিক দেওয়া যায়?আমি কিভাবে থাকবো?”
“মাস্ক পরে থেকো।একচুয়ালী ভালোই হবে।আমার চন্দ্রপাখির ঠোঁট আমি ছাড়া কেউ দেখবে না।”
“ইহহহহ আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।”
হো হো করে হেসে দ্বীপ একটি মলম দিয়ে বলে,”এটা মাখো ঠোঁটে।বিকেলের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”
নীরা মলম মেখে বলে,”বিকেলের আগে আমি ঘর থেকে বের হচ্ছি না।ইশ মানুষ কি ভাবছে।ছিঃ ছিঃ ছিঃ।”
“মানুষ যখন এক ডজন বাবু দেখবে তখনই আমাদের উপর অস্কার ছুড়ে মারবে।এটা তো সামান্য এক লাভ বাইট।”
“লাগামহীন প্রফেসর।”
“যাহ বাবা বউয়ের কাছে কি না শুনতে হয় লাগামহীন!বলি আমি কি পাশের বাড়ির টুনিকে বলবো এসব কথা?”
“আপনি বলেই দেখেন না।ওই টুনির মাথার চুল একটাও আস্ত থাকবে না।”
“হিংসুটে চন্দ্রপাখি।”
“আমার জামাইয়ের জন্য আমি হিংসুটে হব।আপনার সমস্যা?”
“একদমই না।বলছি সারাদিনে যখন বাইরে বেড় হবেই না।তাহলে এখন আবার প্রেম করা যাক।”
“মাথা খারাপ আপনার!খুদা লেগেছে আমার খুব।তাড়াতাড়ি রান্নাঘর থেকে খাবার আনেন।”
বলতে না বলতেই দীপান্বিতা দরজায় টোকা দিয়ে বলে,”আসবো লিটিল ভাবী।”
“হ্যাঁ আসো।”
“মা বলেছে তোমাদের খাবার দিতে। আর কোনো সমস্যা হলে মাকে বলবে ঠিক আছে?”
“আচ্ছা।”
“আমি এখন লাইভে যাচ্ছি। দাদীন তোমাদের বাসায় গেছে।বিকালের আগেই কেয়াকে গোসল করানো হবে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো।”
“আচ্ছা।”
কথা বলেই চলে গেলো দীপান্বিতা।দ্বীপ আর নীরা একসাথে সকালের খাবার খাচ্ছে।দ্বীপ এখন কলেজে যাবে।নীরা দ্বীপকে বলে,”শুনুন ক্যাডার সাহেব,আমার জন্য একটি গাজরা নিয়ে আসবেন।সেই গাজরা আমার এলোমেলো খোঁপায় পরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।”
“ঠিক আছে।”
বলেই চলে যায় দ্বীপ।নীরা দ্বীপের বুকশেলফ এর দিকে যায়।ঠিক সেই সময় দ্বীপ আবারও এসে নীরাকে ঘুরিয়ে নীরার কপালে একটি চুমু দিয়ে আবার চলে যায়।
নীরা হাসতে থাকে।তারপর আবারও মনোযোগ দেয় দ্বীপের বুকশেলফ এর দিকে।একটি বই নিয়ে বইয়ের পাতায় মনোযোগ দিতে থাকে নীরা।
দীপান্বিতা লাইভ করছে।অনেকে অনেক ধরনের কমেন্ট করছে।এগুলো দীপান্বিতা পড়ে পড়ে উত্তর দেয়।হঠাৎ একটি কমেন্ট পড়তে যেয়ে দীপান্বিতা থেমে যায়।
সেখানে লেখা,”ওহে মায়াবন বিহারিনি,রাগ করে থেকো না তুমি।”
দীপান্বিতা কমেন্ট ইগনোর করে আরেকটি কমেন্ট পড়ে উত্তর দেয়।তারপর আবারও নীরবের কমেন্ট আসে,”একবার বিয়ে কর আমাকে।এই শাড়ি সবগুলো আমিই কিনবো।কোনো লাইভ করতে দিব না তোমাকে।আমার বউ বিয়ের পর লাইভে যাবে না।”
এরকম আরো কিছু কমেন্ট আসে।কিছু কিছু পাবলিক নীরবের কমেন্টে হাহা দেয় তো কিছু কিছু কেয়ার দেয়।দীপান্বিতা কমেন্টগুলা মনে মনে পড়ে উত্তর না দিয়ে অন্যান্য কমেন্টের উত্তর দেয়
চলবে…?
#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_২৭
#ইশরাত_জাহান
🦋
দুপুর হয়ে এসেছে।এখন কেয়াকে গোসল করানো হবে।কেয়া ও রিকের গায়ে হলুদ থেকে বৌভাত সকল অনুষ্ঠান কমিউনিটি সেন্টারে হবে।রিকের বাবা এসেছেন আজ দুইদিন হয়েছে।ছেলের বিয়ে দিয়ে কয়েকদিন থেকে আবার চলে যাবেন। রিককে বাংলাদেশের ব্যাবসা সম্পর্কে বুঝিয়ে দিবেন তিনি।
নীরা বসে আছে দ্বীপের জন্য।দীপান্বিতা মাত্র লাইভ শেষ করলো।নিজের শাড়িগুলো থেকে নীরাকে একটি শাড়ি দিয়ে নিজের জন্য একটি শাড়ি রাখলো।কলাপাতা পারের হলুদ শাড়ি দীপান্বিতার কাছে এভেইলেবল।তাই আর আলাদা করে কেনা লাগেনি।
দ্বীপ চলে এসেছে।আজকে হাফ টাইম ক্লাস করিয়েছে।দ্বীপের হাতে একটি ছোট প্যাকেট।নীরা প্যাকেটটি দেখে হেসে বলে,”আমার জন্য গাজরা এনেছেন,ক্যাডার সাহেব?”
“হ্যা।চোখ বন্ধ কর।”
“আচ্ছা।”
বলেই চোখ বন্ধ করে নীরা।তারপর অনুভব করে দ্বীপ তার মাথায় হাত রেখেছে।সমস্ত চুলগুলো একসাথে করে বেধে দিচ্ছে দ্বীপ।অতঃপর নীরা অনুভব করে তার মাথার উপর পাতলা কোনো কিছু দেওয়া। গাজরার জায়গায় অন্য কিছু অনুভব করে চোখ মেলে তাকালো নীরা।দেখতে পেলো হলুদ ও সোনালী রঙের মিশ্রণে একটি সুন্দর হিজাব।হিজাব দেখে কপাল কুঁচকে নীরা বলে,”আমার গাজরা কোথায়?”
“গাজরার থেকেও দামী উপহার দিয়েছি।আমার বউয়ের সৌন্দর্য্য আমি ছাড়া অন্য কেউ দেখবে না।তাই এই হিজাব পরেই অনুষ্ঠানে যাবে।”
“আমি খেলবো না।”
“এখন খেলার মুড আছে বুঝি?”
“আরে!খালি বাজে কথা।দুষ্টু প্রফেসর আমার।আমি চেয়েছি গাজরা আপনি এনে দিলেন হিজাব।আজকে কি সুন্দর সবাই নিজেকে ফুল দিয়ে সাজাবে। আর আমি কি না,ধুর।”
বলেই শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় নীরা।এদিকে নীরব এত চেষ্টা করেও পারছে না দীপান্বিতার অভিমান ভাঙাতে।তাই অসহায় হয়ে বসে আছে ব্যালকনিতে।অভ্র তাদের ব্যালকনি দিয়ে তাকিয়ে আছে নীরবের দিকে।নীরবকে বলে,”কি করছো মামু?”
“তোমার মায়ের অভিমান ভাঙাতে চাইছি পুচকু।”
অভ্র বড়দের মত ভাব করে বলে,”আমার আম্মু অভিমান করেছে কেন?”
“আমি ভালোবাসিনি তাই।”
“তাহলে তো তুমি পঁচা।”
“আমি তো এখন ভালোবাসতে চাই তোমার আম্মুকে।”
“ওহ,তাহলে তুমি ভালো।”
“কি করা যায় বলোতো?”
কিছুক্ষণ ভাবুক ছেলেদের মত ভঙ্গি করে অভ্র বলে,”কাল রাতের মত গান শোনাও আমাকে।আপাতত মাথায় বুদ্ধি আসছে না।”
নীরব কিছু বলতে যাবে তার আগে দীপান্বিতা এসে দাঁড়ায় অভ্রর পাশে।অভ্রকে উদ্দেশ্য করে দীপান্বিতা বলে,”এখানে কি কর বাবাই?ভিতরে আসো।”
বলেই ঘরে ঢোকে দীপান্বিতা।নীরব গলা উছিয়ে গান গায়,
“বাড়ির পাশে আমার উনি,
কথা কয় না আমার সাথে।
বন্ধু আমার রাগ করিছে,
ভাব লয় হারা দিন ভরে।
অভ্র পিছনে ফিরে বলে,”ওয়াও মামু অনেক সুন্দর গান গাও তুমি।”
বলেই হাত তালি দেয় অভ্র।নীরব বারবার মামু ডাক শুনে আর আহত হয়।তারপরও চুপ করে আছে।বিড়বিড় করে বলে,”আগে তোর মাকে বসে আনি তারপর এই মামা ডাক বাদ দিয়ে ডাকবি বাবা।”
নীরা শাড়ি পরে বের হতেই নীরবের এই গান শুনতে পেলো।দ্বীপ খাটে বসে ছিলো।এমন উল্টা পাল্টা কথা দিয়ে গান শুনে নীরার দিকে ফিরে বলে,”তোমরা ভাই বোন দুটো কি মেন্টাল এসাইলাম থেকে ডেলিভারি হয়েছিলে?”
“আলতু ফালতু কথা বলবেন না আমাদের নিয়ে।আমরা এরকম বলেই তো আজ আপনাদের ভাই বোনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি।”
“হ্যা।সে তো দেখতেই পাচ্ছি।এক বোন নিজের গায়ে হলুদের দিন মঞ্চ কাপিয়ে দেয়। আর ভাই প্রতিবেশীর গায়ে হলুদের দিন এলাকা কপিয়ে দেয়।”
“আমার ভাই আপনার বোনের প্রেমে পরে দেবদাস হয়েছে।আপনি কি করছেন ভাই হয়ে?একবারও বোনকে বুঝিয়েছেন!”
হামি তুলতে তুলতে দ্বীপ বলে,”ওসব কুটনি বুদ্ধি তোমার মাথায় চলে।আমি এতে নেই।”
ভেংচি কেটে নীরা নিজেকে সাজাতে থাকে।কেয়াকে কমিউনিটি সেন্টারে নেওয়ার আগে তাদেরকে যেতে হবে।কমিউনিটি সেন্টারে যেয়েই গোসলের পর্ব চলবে।নীরা হিজাব বাঁধছে আর দ্বীপ কলাপাতা রঙের পাঞ্জাবী পরে এসে আয়নায় নিজের চুল সেট করছে।নীরা আড় চোখে তাকিয়ে দেখতে থাকে।হিজাব বেধে বলে,”এটা কি হলো?”
“কোনটা কি হলো?”
“আপনি কেনো চুল সেট করছেন?”
“তাহলে কি করবো?”
“না,আপনি হ্যান্ডসাম দেখতে হলে তো আমার জীবন তেজপাতা।”
বলেই দ্বীপের চুলগুলো এলোমেলো করে দেয় নীরা।স্মিত হেসে দ্বীপ নীরাকে বলে,”চোখ বন্ধ কর।”
“কেনো?”
“কর।”
“আচ্ছা।”
বলেই চোখ বন্ধ করে নীরা।দ্বীপ নীরার হিজাব দেওয়া মাথায় সুন্দর করে ক্লিপ দিয়ে বেলি ফুলের গাজরা সেট করে দেয়।কপালের উপর থেকে রাউন্ড করে মাথার পিছনে গাজরার দুই প্রান্ত একসাথে করে বেলি ফুলের চিকন গাজরা। গাজরা সেট করে দ্বীপ বলে,”চোখ খোলো।”
নীরা চোখ খুলে নিজেকে আয়নায় দেখে।হিজাবের উপর দিয়ে দ্বীপের দেওয়া এই গাজরা খুব সুন্দর মানিয়েছে।নীরা খুশি হয়ে দ্বীপকে জড়িয়ে ধরে।বলে,”আমার ক্যাডার সাহেব আমাকে এত সুন্দর করে সাজিয়ে দিবে ভাবতেই পারিনি।”
“খুশি হয়েছো তুমি?”
“খুব খুব খুব।”
“আচ্ছা এবার চলো।”
“মুখে কিছু লাগাবো না?”
“একদম না।তুমি এমনিতেই সুন্দর আছো।ওসব কিছু লাগাতে হবে না।বিশেষ করে লিপস্টিক তো নাই। কার না কার নজর লাগবে আমার বউয়ের উপর।তখন হবে আরেক ঝামেলা।”
মেকি হেসে নীরা বলে,”জেলাস ক্যাডার সাহেব।”
নীরার হাত ধরে নিজের কাছে এনে বলে,”বউ তো আমার শখের নারী।তার জন্যই তো জেলাস হব আমি।”
বলেই দুজনে একসাথে হেসে দেয়।তারপর ড্রয়িং রুমে এসে দেখে দীপান্বিতা ও অভ্র রেডি হয়ে এসেছে।মিসেস সাবিনা মিসেস শিউলি ও মিসেস নাজনীন কমিউনিটি সেন্টারে আছেন রিকের মা বাবার সাথে। বড়রা মিলে কিছু নিয়ম কানুনের কাজ করছে।এছাড়া সমস্ত কাজ কেটারিংয়ের লোক করছে।নীরা ও দ্বীপকে একসাথে দেখে নতুন সাজের সাথে দীপান্বিতা ওদের কিছু ছবি তুলে নিলো।এর ভিতর কলাপাতা রঙের পাঞ্জাবী পরে এসেছে নীরব।আজকের গায়ে হলুদে ছেলেদের পাঞ্জাবী কলাপাতা রঙের হবে।মেয়েরা কলাপাতা পারের হলুদ শাড়ি।সবাই মিলে একসাথে রওনা দেয় কমিউনিটি সেন্টারে।
কেয়াকে নিয়ে এসেছে কেয়ার বাবা মা।চশমা চোখে সুতির হলুদ শাড়ি পরে আছে কেয়া। গোসলের জন্য তাকে আপাতত নরমাল শাড়ি পরানো হয়েছে।সাথে করে গায়ে একটি গামছা জড়িয়ে দেওয়া আর কানের গোড়ায় দুইটি লাল গোলাপ দেওয়া আছে।বিয়ের কনের ভাব চলে এসেছে কেয়ার মুখশ্রীতে।
রিককে নিয়ে এসেছে নীরব ও দ্বীপ।রিক ও কেয়াকে কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ফাঁকা জায়গায় রোদে পাশাপাশি দাড় করিয়ে মাঝখান থেকে বড় এক মোটা কাপড়ের পর্দা দেওয়া হয়েছে।কেয়ার গোসলের দিকে ছেলেরা আসবে না। আর রিকের গোসলে মেয়েরা যাবে না।
গোসলের আগে সবাই মিলে হালকা হলুদ ছোঁয়ালো একে অপরকে।ছেলেরা ছেলেদের মতো করে আর মেয়েরা মেয়েদের মতো করে আনন্দ করছে।অবশেষে রিক ও কেয়ার হলুদের গোসল সম্পূর্ণ করা হলো।শীতে কাপতে থাকে রিক ও কেয়া।
নীরা কেয়াকে বলে,”আরে দোস্ত এত কাপছিস কেনো?বিয়েতে গোসল করলে তো আর জ্বর আসে না।”
সবাই মিলে হাসতে থাকে।নীরার বিয়ের সময় কেয়া কথায় কথায় বলতো দোস্ত এটা করলে বিয়ে হয় না ওটা করলে বিয়ে হয় না।এগুলো মনে পরে গেলো নীরা ও কেয়ার।
কেয়া বলে,”রিভেঞ্জ নিচ্ছিস?সেই তো বরের সাথে খুশি খুশি সংসার করছিস। আর আমার বিয়েতে শীতে কাপাকাপি করাচ্ছিস।”
পর্দার ওপাশ থেকে রিক বলে,”ডোন্ট ওয়ারী চশমিশ।তোমার সাদা বিলাইও এই শীতে তোমার মতো ভিজে একাকার।আমরা একসাথে একই দুঃখ ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।”
কেয়া রিকের কথা শুনে খুশি হয়।নীরা ও দীপান্বিতা মিলে কেয়াকে নিয়ে যায় কাপড় পাল্টাতে।এখন কেয়াকে হলুদের সাজে সাজানো হবে।কেয়াকে একটি রুমে বসিয়ে রাখার পর পরই অভ্র এসে নীরাকে ডাক দেয়।বলে,মামু ডাকছে তোমাকে।”
নীরা চলে যায় সেখানে।দ্বীপ উল্টো দিকে ফিরে আছে।নীরা এসে বলে,”আমাকে ডেকেছিলেন ক্যাডার সাহেব?”
দ্বীপ নীরার দিকে ঘুরে তাকিয়ে নীরার কাছে আসে।তারপর নীরার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় নির্জন পরিবেশে।কোনো কিছু না বলেই নীরার গালে আলতো করে হলুদ মেখে দেয়।তারপর নীরার গাল থেকে নিজের গালেও মেখে নেয় হলুদ।নীরা তাকিয়ে থাকে দ্বীপের চশমা দেওয়া চোখের দিকে।নীরার নাকের সাথে দ্বীপ আলতোভাবে নিজের নাক ছুঁয়ে বলে,”আমাদের বিয়ের সময় ইচ্ছা ছিলো তোমাকে এভাবে হলুদ ছোয়ানোর।কিন্তু তখন তুমি ছিলে আমার জন্য নিষিদ্ধ।কবুল বলার আগে তো ভালোবাসার মুহূর্ত গড়ে তুলতে চাইনি।আমার পুরুষ মনকে আমি কবর দিয়ে রেখেছিলাম অনেক কষ্টে।আজ তার পুনর্জন্ম নিচ্ছে,চন্দ্রপাখি।”
নীরা দ্বীপকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ভালোবাসি আপনার সমস্ত চিন্তাভাবনাকে।ভালোবাসি আপনার এই ছোট ছোট মুহূর্তকে।ভালোবাসি আপনার সুপ্ত অনুভূতিকে।আমি ভালোবাসি আমার এই আস্ত ক্যাডার সাহেবকে।”
চলবে…?