লুকোচুরি গল্প পর্ব-২২+২৩

0
517

#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব২২
#ইশরাত_জাহান
🦋
সকালে গোসল করে শাড়ি পরে দীপান্বিতা।একটু পর লাইভ করবে শাড়ি সেলের জন্য।ভেজা চুলে হিজাব বাধা সম্ভব না।তাই আপাতত চুল মেলে রেখে ভেজা জামা কাপড় নিয়ে ছাদে আসে।কাপড় চোপড় রোদে শুকাতে দিবে।ছাদে এসে কাপড়গুলো তারে মেলতে থাকে দীপান্বিতা।নীরব ছাদেই ছিলো। সিগারেটে নিজেকে ব্যাস্ত রেখেছিলো।একজন নিউট্রিশন হয়েও আজ নিজের সঙ্গী হিসেবে সিগারেট বেচে নিয়েছে।দীপান্বিতা ছাদে আসাতে আনমনে তার চোখ যায় সেদিকে।কতদিন পর আজ শাড়ি পরা অবস্থায় দেখলো নিজের মায়াবন বিহারিনীকে।দেখে নিজের চোখের পিপাসা মেটাতে থাকে নীরব।ঠিক তখনই অভ্র এসে দীপান্বিতার শাড়ির আঁচল ধরে টান দেয়।সাথে সাথে দীপান্বিতা হাত দিয়ে শরীরের কাপড় ঠিক রাখতে সক্ষম হয়।শাড়ি দিক বেদিক না হলেও কোমর থেকে হালকা শাড়ির পার সরে যায়।অভ্রকে দেখে নীরবের বিবেকে নাড়া দেয়।সে তার নিষিদ্ধ নারীকে দেখছে।

এদিকে শাড়ির এমন অবস্থা হওয়াতে নীরব দীপান্বিতাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,”লাইভে এসে তো আজকাল মানুষ নিজেদের রূপ যৌবন দেখিয়ে ইনকাম করছে।এখন কি তাদের ছাদে এসেও বাকিটুকু খোয়াতে হবে?না জানি কত কি দেখতে হয়।”

পিছন থেকে নীরবের এমন দৃষ্টিকটু কথা সহ্য করতে পারে না দীপান্বিতা।ছাদ থেকে সোজা ঘরে চলে আসে।ঘরে এসে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।অভ্র দীপান্বিতার পিছনে এসে দীপান্বিতাকে বলে,”কি হয়েছে আম্মু?”

আজ প্রথম দীপান্বিতা রাগে দুঃখে অভ্রকে চড় মেরে বলে,”কে তোর আম্মু?আমি তোর আম্মু না।চলে যা চোখের সামনে থেকে।”

বলেই বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে থাকে।বেশ কিছুক্ষণ কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যায় দীপান্বিতা।আজ আর লাইভ করা হলো না তার।ঘণ্টা খানিক পর মিসেস সাবিনা এসে ডাক দেন দীপান্বিতাকে।দীপান্বিতাকে ডেকে বলেন,”লাইভ করিস নি?অভ্রকে তো গোসল করাতে হবে।”

“অভ্রকে আজ তুমি গোসল করিয়ে দেও মা।”

“নানাভাই কোথায়?”

“কোথায় মানে?ও তোমার কাছে নেই?”

“না।আমি তো রান্না করতে ব্যাস্ত।কিছু হয়েছে?”

“আমি আজকে ওকে রাগের মাথায় মেরেছি মা।কটু কথা শুনিয়েছি।মাথা গরম ছিলো তাই।গেলো কোথায় ছেলেটা আমার?”

বলেই খাট থেকে লাফ দিয়ে ওঠে দীপান্বিতা।নীরার পরীক্ষার আজ শেষ দিন।দ্বীপ নিজেও আজ পরীক্ষার সেন্টারে ব্যাস্ত।পিংকি ওইদিনের পরেই চলে যায় হোস্টেলে।মিস্টার সমুদ্র নিজের কাজে গেছেন।মিসেস শিউলি তালিমের দাওয়াত পেয়েছেন তাই সেখানে গেছেন।বাসায় শুধু মিসেস সাবিনা ও দীপান্বিতা ছিলো।মিসেস সাবিনা রান্না করছেন।এমনিতেই দীপান্বিতার ঘর রান্নাঘর থেকে দূরে তারউপর প্রেসার কুকারে সিটি বাজার শব্দে দীপান্বিতার কথা শুনতে পান না।যদি শুনতে পেতো তাহলে তখনই অভ্রকে নিজের কাছে নিয়ে নিতেন।

সাড়া ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে যাচ্ছে দীপান্বিতা।অভ্রকে খুঁজে পাচ্ছে না কোথাও।এবার যেনো নিজেই জ্ঞান হারাবে দীপান্বিতা।এই বাড়ি ওই বাড়ি খুঁজতে থাকে।মিসেস সাবিনা তাড়াতাড়ি খোঁজ নেন মিসেস নাজনীনের কাছ থেকে।কিন্তু না অভ্র সেখানেও নেই। নীরব বাসায় আছে আজ।বিকালে যাবে নিজের সেন্টারে।সোফায় বসে মায়ের কাছে শুনতে পেলো অভ্রকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।বাচ্চা অভ্রকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে বুকে মোচড় দিলো নীরবের নিজেরও।ভাবতে লাগলো ঘণ্টা দুই আগের ঘটনার জন্যই কি এমন হলো?তাড়াতাড়ি করে অভ্রকে খুঁজতে বাইক নিয়ে বের হয় নীরব।নীরার সাথে অভ্রর বেশ কয়েটা ছবি আছে।সেগুলো দেখিয়ে দেখিয়ে খুঁজবে অভ্রকে।

মিসেস সাবিনা ফোন করে দিলেন মিস্টার সমুদ্রকে।অভ্রকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে তিনিও দৌড়ে চলে এসেছেন।গোল্লিতে এ বাড়ি ও বাড়ি করেও অভ্রর কোনো খোঁজ পাওয়া গেলো না।দীপান্বিতার কানে এখন শুধু চার বছর আগের সেই পুরোনো প্রতিশ্রুতি ভেসে আসছে।কেউ একজন তাকে মারা যাওয়ার আগে বারবার বলেছিলো,”আমার অভ্রকে তুমি দেখে রেখো।আমার কলিজার টুকরোর এই দুনিয়ায় কেউ নেই।জন্ম দিয়ে আমি চলে যাচ্ছি।কিন্তু তার আসল গার্জিয়ান তুমি।”

পারলো না আজ দীপান্বিতা।এতগুলো বছর নিজের হাতে গড়ে তোলা অভ্রকে দুই মিনিটে হারিয়ে ফেললো।মাত্র চার বছরের এক শিশু তার মনে কি এতই ক্ষোভ?যে সামান্য একটু কথাতে সে আঘাত পেয়ে চোখের বাইরে চলে গেলো।বাচ্চা হলে কি হবে?সে তো মানুষ।হয়তো এই জন্যই অভ্রর মনেও দাগ কেটে নিয়েছে এই কথাটি।এমনিতেও কত মানুষ ওকে কত রকম কথা শুনিয়ে দেয়।শেষমেশ তার মাও কি না তাকে আজ কথা শুনিয়েছে।সহ্য করতে পারেনি অভ্র।

দ্বীপ নীরাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছে।এমন সময় দ্বীপের ফোনে কল আসে।মিস্টার সমুদ্র করেছে এই ফোন।দ্বীপ ফোন রিসিভ করতেই মিস্টার সমুদ্র বলেন,”অভ্রকে পাওয়া যাচ্ছে না তিন ঘণ্টা হতে চললো।দীপান্বিতার অবস্থা খুবই খারাপ।দুইবার অজ্ঞান হয়েছে।আমি আমাদের এলাকার ভিন্ন গোল্লিতে খুঁজছি।তুমি ওদিক দিয়ে আসার সময় একটু ভালোভাবে পরখ করে নিও।নীরব গেছে গোল্লির মাথায় অভ্রকে খুঁজতে।”

ফোন লাউডে ছিলো।নীরা ও দ্বীপ অভ্রর কথা শুনে দুজনেই নার্ভাস হয়ে গেছে।তারপরও দ্বীপ বলে,”আমরা ভালোভাবে খোঁজ নিচ্ছি বাবা।”

দ্বীপ আস্তে আস্তে ড্রাইভ করছে আর রাস্তায় কোনায় কোনায় ভালোভাবে তাকাচ্ছে।নীরা নিজের জানালার পাশ দিয়ে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখতে থাকে। গোল্লির মাথায় এসে গাড়ি থামিয়ে দ্বীপ ও নীরা একসাথে ভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকে অভ্রকে।বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পর এক জায়গায় দাড়ায় দ্বীপ ও নীরা।হঠাৎ নীরার কানে ভেসে আসে ফোফানির শব্দ।কেউ রাস্তার পাশে একটি ডাস্টবিনের পিছনে কান্না করছে।নীরা তাড়াতাড়ি সেখানে যেয়ে দেখে অভ্র হাঁটু চেপে ধরে কান্না করতে থাকে।নীরা দ্বীপকে ডাক দিয়ে বলে,”অভ্র এখানে ক্যাডার সাহেব।”

দ্বীপ দৌড়ে আসে ওদের কাছে।নীরা অভ্রর হাঁটুতে হাত দিয়ে বলে,”এখানে কিভাবে লেগেছে বাবা?”

“একটা কুকুর আমাকে তাড়া করে।আমি দৌড়াতে দৌড়াতে পড়ে যাই।তারপর এখানে লুকিয়ে থাকি।”

দ্বীপ অভ্রকে কোলে নিয়ে বলে,”তুমি কাউকে কিছু না বলে এভাবে বাসা থেকে বেড়িয়েছো কেনো?তোমাকে সবাই খুঁজছে তো।”

অভ্রকে চোখের পানি মুছে বলে,”আম্মু বলেছে আমাকে চলে যেতে।আম্মু আমার মা না।আমার মা বাবা কে?”

দ্বীপ এবং নীরা একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে অভ্রকে নীরা বলে,”তোমার মায়ের নাম দীপান্বিতা।তোমার মাও যে বাবাও সে।”

বলেই কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করে নীরা।তারপর বাড়ির দিকে রওনা দেয়।নীরা ফোন করে মিস্টার সমুদ্রকে বলে,”আমরা অভ্রকে পেয়েছি।বাসায় আসছি এখনই।”

মিস্টার সমুদ্র সাথে সাথে সবাইকে বলে।দীপান্বিতা তাড়াহুড়া করে মেইন গেটের কাছে এসে অপেক্ষা করে অভ্রর জন্য।নীরবকে কল করে জানিয়ে দেন মিসেস নাজনীন।দ্বীপের গাড়ি এসে বাড়ির সামনে থামতেই দীপান্বিতা অভ্রকে কোলে নিয়ে আদর করে।কান্না করতে করতে বলে,”আম্মুর কথায় কেউ রাগ করে,বাবা?একটু রেগে গেছিলো আম্মু। আর কখনও রাগ করবে না।”

ঠিক তখনই নীরব আসে সেখানে।অভ্রকে দেখে নিজেও এবার শান্তি পেলো।মিস্টার সমুদ্র ও মিসেস সাবিনা চলে গেলেন বাসার ভিতরে।বাচ্চারা সবাই না খেয়ে আছে।মিসেস নাজনীন অভ্রকে আদর করে নিজের ফ্ল্যাটে চলে যান।নীরব এসে দীপান্বিতাকে বলে,”বাচ্চাকে আগলে রাখতে পারেন না?এমন বেপরোয়া থাকেন কেনো আপনার সম্পর্কগুলো?”

দীপান্বিতা চোখের পানি মুছে বলে,”আমি আমার ছেলেকে কিভাবে আগলে রাখবো সেটা আমি বুঝে নিবো।আপনাকে দেখতে হবে না।”

বলেই অভ্রর হাত ধরে হাটা দেয় দীপান্বিতা।নীরব ক্ষিপ্ত হয়ে হাটা দেয় নিজের বাড়ির দিকে।দ্বীপ এদের কান্ড দেখলো।নীরা একবার তাকায় দীপান্বিতার যাওয়ার দিকে আরেকবার তাকায় নীরবের যাওয়ার দিকে।দ্বীপ নীরাকে ধাক্কা দিয়ে বলে,”কি হয়েছে?”

“কেমিস্ট্রি।”

ভ্রু কুঁচকে দ্বীপ বলে,”মানে?”

“যখন কোনো নারী ও পুরুষ একে ওপরের বিপরীত দিকে হাঁটতে থাকে তখন তার মানে কি বোঝায় জানেন?”

দ্বীপ মাথা নাড়ায় মানে না।নীরা আবার বলে,”এরা একে ওপরের বিপরীত মুখী।কিন্তু এদের মিলন আবারও হবে।”

“কোন কবির থেকে শুনেছো এই কথা?”

“লোকে চাইলে এই নীরাও হতে পারে এক কবি।”

“তোমার কি মনে হয়?দীপান্বিতা ও নীরবের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে?”

“বর্তমানে আমার সচক্ষে নেই।তবে আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি এদের মধ্যে কিছু একটা আছে।যেটা এখন প্রকাশ পাচ্ছে না।”

“অভ্রর কি হবে?দীপান্বিতা ওকে এখন নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসে।জীবনে প্রথম মা ডাক শোনার অনুভূতি।তার উপর কারো সাপোর্ট ছাড়াই মানুষ করে অভ্রকে।”

“অভ্রর জন্য এখন আমরা আছি।তখন নাহয় দায়িত্ব নিতে পারিনি।এখন তো পারবো। আর এমনিতেও অভ্রকে দীপান্বিতা আপু বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করাতে চেয়েছে।”

“ভাই হিসেবে বোনের জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।নীরব ছেলে হিসেবে অনেক ভাল।আমার সাথে বসে যখন চায়ের আড্ডা দিতো আমার খুব ভাল লাগতো।তাই নীরবকে আমি না করবো না।কিন্তু অভ্রকে ছাড়া দীপান্বিতা এখন শূন্য।”

“চেষ্টা তো করতে থাকি।দেখা যাক ভাগ্যে কি হয়!”

“হুম।”

বলেই দ্বীপ ও নীরা বাড়ির ভিতরে ঢুকলো।আজ সন্ধায় রিক ও কেয়ার বিয়ের কেনাকাটা হবে।এই জন্য নীরা ও দ্বীপকে ডাকা হয়েছে।দ্বীপ ও নীরা রেডি হয়ে অভ্রকে নিয়ে চলে যায় শপিং মলে।কেয়ার পছন্দের ড্রেস কিনে দেওয়া হয় কেয়াকে। রিককেও কেয়ার পছন্দ করে দেওয়া পাঞ্জাবি কিনে দেওয়া হয়।সবকিছু কেনাকাটা করার পর সবাই বাড়ি ফিরবে কিন্তু নীরা দ্বীপকে খুঁজে পায় না।কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর নীরা দেখলো দ্বীপ বাইরে থেকে আসছে।

নীরা বলে,”কোথায় গিয়েছিলেন?”

“বাইরে একটু কাজ ছিলো তাই।”

“আচ্ছা,চলুন বাসায় যাই।”

বলেই সবাই বাসায় চলে যায়।

{শুনো গিটার সাহেব।তুমি যখন ব্যালকনি দিয়ে গিটারের তালে তালে গাইবে মায়াবন বিহারিনী আমি তখনই আমার জানালা দিয়ে তোমাকে দেখবো।রাতের আধারে প্রেমিক পুরুষের গানের সাথে চন্দ্র বিলাস করার মজা আলাদা।দুজন দুর দূরান্তে থেকেও আমরা গানের তালে করবো প্রেমের আবেদন।}

দীপান্বিতার এই পুরনো কথাগুলো মগজে বারবার বারি খাচ্ছে নীরবের।নীরব খুব সুন্দর গান গাইতে পারে।গিটার বাজানো এক নেশা নীরবের কাছে।সেই নেশায় যোগ দেয় দীপান্বিতা।তখন নীরবকে গিটার সাহেব বলে ডাকতো।আবার যখন নিরব বলতো সে নিউট্রিশন হতে চায় তখন দীপান্বিতা তাকে খাদ্য বিশেষজ্ঞ সাহেব বলে ডাকতো।

পুরনো স্মৃতি মাথা থেকে মুছে ফেলতে চায় নীরব।তাই সে মিসেস নাজনীনকে বলে,”আমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করো মা।আমি আর আপত্তি করবো না।”

চলবে…?

#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব২৩
#ইশরাত_জাহান
🦋
ছেলের কথা শুনে খুশি হন মিসেস নাজনীন।মেয়ে দেখার জন্য তার কিছু বান্ধবীকে কল করেন।শীঘ্রই ছেলের বিয়ে দিতে চান তিনি।

আজ বাসায় সিঙ্গারা বানিয়েছে নীরা।সিঙ্গারার শেপ একদম পারফেক্ট আর আলু রান্নাটা হুবহু হয়েছে।শুধু সিঙ্গারা খেতে যেয়ে মনে হচ্ছে পড়াটার ভিতর আলুর দম মেশানো।সবাই টমেটো সস দিয়ে নীরার এই সিঙ্গারা উপভোগ করছে।মিসেস সাবিনা বলেন,”মা নীরা,তোমার মাকে একটা কল দিয়ে বলো আমাদের বাসায় আসতে।মেয়ের হাতের প্রথম সিঙারা খাবে।”

নীরা খুশিতে খুশিতে কল দেয় মিসেস নাজনীনকে।মিসেস নাজনীন ফোন রিসিভ করে বলেন,”হ্যাঁ মা বল?”

“তাড়াতাড়ি আমার শশুড় বাড়িতে চলে আসো।আমি সিঙ্গারা বানিয়েছি।”

“এখন তো আর সম্ভব না মা।আমি তো বাইরে।”

“বাইরে কোথায়?”

“তোর জন্য ভাবী দেখতে যাচ্ছি।লাইসেন্স পেয়ে গেছি।এখন কি না করা যায়?”

“আমার জন্য ভাবী আনতে যাচ্ছো মানে কী?”

নীরার কথা শুনতে পেলো দীপান্বিতা। আর খেতে পারলো না সিঙ্গারা।বুঝতে পেরেছে নীরবের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছে।মনে মনে বলে,”আমি এই পাঁচটি বছর তার জন্য অপেক্ষা করলাম।এদিকে সে মুভ অন করে নিলো।আমার দোষটা কি তাও বললো না।”

মিসেস নাজনীন বলে ওঠে,”আরে নীরবের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।নীরব অনুমতি দিয়েছে।”

“আমাকে জানাও নাই কেন?”

“আরে আমরা তো দেখতে যাচ্ছি।যদি পছন্দ হয় তারপর তোকে দেখাবো। আর আজই তো বিয়ে হচ্ছে না।”

নীরা বলে ওঠে,”বাড়ির কাছে মেয়ে থাকতে তুমি কোন জায়গায় যাচ্ছো মেয়ে দেখতে?”

“বাড়ির কাছে কোন মেয়ে আছে?সবাই তো ….?”

বাকি কথা বলার আগেই ফোন কেটে গেলো।নীরা আবার কল দেয় মিসেস নাজনীনকে।ফোন বন্ধ বলছে।বাবাকে কল দিতে যেয়েও দিলো না।ভাবলো যেহেতু দেখতে যাচ্ছে যাক।ওরা বাসায় আসলে কথা হবে।

মিসেস নাজনীন ফোন চেক করে দেখেন ফোন বন্ধ হয়ে গেছে।রাতে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিয়েছেন।সকালে মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার আগে তার ডিটেইলস নিতে নিতে ব্যাস্ত।ফোন আর কখন চার্জ দিবেন?

মিসেস সাবিনা বলেন,”কি হয়েছে?”

“মা ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে গেছে। আর ভাইয়া মেয়ে দেখার জন্য হ্যাঁ বলেছে।”

সবাই খুশি হলো।কিন্তু নীরা তাকিয়ে আছে দীপান্বিতার দিকে।দীপান্বিতার মন মরা হয়ে আছে।দ্বীপ নেই বাসায়।সে তার কাজে ব্যাস্ত।

নীরব মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন বসে আছেন সোফায়।সাথে করে যে সম্মন্ধ নিয়ে এসেছে সেও আছেন তাদের সাথে।মেয়ে পক্ষ থেকে অনেক ভালো ব্যাবস্থা করা হয়েছে।একে একে সবাই এসে টি টেবিলে সব খাবারগুলো সাজিয়ে রাখছে।মিসেস নাজনীন তার বান্ধবীর সাথে গল্প করছেন।মেয়ের বাড়ি খুব সুন্দর ফিটফাট।মেয়ে সবে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছে।বাবা ব্যাবসায়ী মা গৃহিণী।

সবকিছু সাজানোর পর সবার অনুমতি পেয়ে মেয়েকে আনা হচ্ছে।মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন মেয়ের হেঁটে আসা দেখছেন।মেয়ে দেখতে মাশাআল্লাহ।যদিও নাম জানে কিন্তু তারপরও ফর্মালিটি এর জন্য মিসেস নাজনীন বলেন,”তোমার নাম কি মা?”

“আমার নাম লামিয়া লিমা।”

তারপর সবাই ভিন্ন ভিন্ন কথা বলে। নীরব এক পলক তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়।সহ্য হচ্ছে তার এসব।কিন্তু সহ্য করতে হবে তাকে।

সবাই ছেলে মেয়েদের আলাদা কথা বলতে বলছে।তাই নীরব ও লিমা আলাদা কিছু কথা বললো।কথা বলা শেষে নীরব সবাইকে বলে,”আমার পছন্দ হয়েছে।তোমরা চাইলে আংটি পড়িয়ে রাখতে পারো।”

লিমাও কোনো আপত্তি জানায়নি।সবাই খুশি হয়।লিমাকে আজই আংটি পরিয়ে দেয় মিসেস নাজনীন।

নীরবের চোখ কাপছে।তার চোখে ভাসছে দীপান্বিতা।কিছুতেই ভুলতে পারছে না মায়াবন বিহারিনীকে।

সবাই গল্প করে সন্ধার একটু পরে বের হলো।মিসেস নাজনীনের খুব ভালো লেগেছে এই পরিবার।

সন্ধায় দ্বীপ বাসায় আসলে নীরা দ্বীপকে সেই পরাটার স্বাদের সিঙ্গারা খেতে দেয়।সিঙ্গারা খাওয়ার পর দ্বীপ ও নীরা ঘরে চলে আসে।দীপান্বিতা মন খারাপ করে ঘরে বসে আছে।নীরা সবকিছু দ্বীপকে খুলে বলে।দ্বীপ সব শুনে বলে,”যেহেতু নীরব মতামত দিয়েছে আর সবাই মেয়ে দেখতে গেছে আমার মনে হয় না দীপান্বিতাকে এর ভিতর আনা উচিত।”

“কিন্তু আমি তো দীপান্বিতা আপুকে কান্না করতে দেখেছি।ভালোবাসা হারানোর কষ্ট অনেক ক্যাডার সাহেব।একবার কেউ প্রেমে পড়লে সে তাকে হারাতে চায় না।”

“তুমি কারও প্রেমে পড়েছ?”

“হুম।আমার ক্যাডার সাহেবের প্রেমে পড়েছি।তাই তো আমি বুঝি দীপান্বিতা আপুর কষ্ট।”

“দীপান্বিতার ব্যাপারটা দেখার আগে দেখতে হবে নীরব কি চায়। আর এদের ভিতরে কি আদৌ দুজনের মনের মিলন আছে নাকি এক তরফা প্রেম তাও তো দেখতে হবে। এমনও হতে পারে নীরব অন্য কাউকে ভালোবাসে।”

“আমার এমন মনে হয় না।ভাইকে আমি দেখেছি,দীপান্বিতা আপুর কথা শুনলে কেমন অন্য মনষ্ক হয়ে যায়।আবার ভাইয়ের ফোনে আমি মায়াবন বিহারিনী নামে দীপান্বিতা আপুর আগের নাম্বার সেভ করা দেখেছি।আমি শিওর ওরা আগে একে অপরকে ভালোবাসতো আর তাও গভীরভাবে।”

“সবার ভালোবাসা দেখে শুধু আমারটাই দেখে না।”বিড়বিড় করে বলেই চেয়ারে বসে পরে দ্বীপ।

নীরা মেকি হাসি দিয়ে দ্বীপের কোলে বসে পড়ে।বলে,”কে বলেছে আমি আপনার ভালোবাসা দেখতে পাই না।আপনার ভালোবাসা দেখতে পাই বলেই তো আপনাকে আরো বেশি ভালোবাসি।”

দ্বীপ নীরাকে ধরে রেখে বলে,”তাহলে বলো না কেন?”

“আপনিও তো বলেননি ক্যাডার সাহেব?”

“কি?”

“আমাকে দেওয়া আপনার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা নাম।কতদিন লুকিয়ে রাখবেন আপনার এই লুকোচুরি গল্প?”

“তুমি সব জানো?”(অবাক হয়ে)

“নীরা দুই হাত দিয়ে দ্বীপের গলা জড়িয়ে বলে,”অনেক আগে থেকে।সেদিন আমি যখন রাগ করে ছিলাম তখন একবার আপনি বলেছিলেন।আমি শুনেছি কিন্তু প্রতিক্রিয়া করিনি।ভাবলাম পরীক্ষা শেষ হলে বলবেন।কিন্তু আপনি তো বলছেন না।একবার বলুন আমাকে দেওয়া নাম।আপনার মুখে শুনতে চাই এই নামটি।”

“চন্দ্রপাখি।”

বলেই দ্বীপ নীরার কপালের সাথে নিজের কপাল এক করে নেয়।দ্বীপ নীরাকে আরও একটু এগিয়ে আসতে যাবে তখনই কল আসে মিস্টার রবিনের।নীরা বাবার কল দেখে রিসিভ করে।

মিস্টার রবিন খুশিতে খুশিতে বলেন,”মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।মেয়ের নাম লামিয়া লিমা।আজই আংটি পরিয়ে এসেছি।তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে তোর ভাইয়ের।”

“মা যে বললো মেয়ে দেখে চলে আসবে।আংটি কেনো পরালে?”

“আরে তোর ভাইয়ের তাড়াহুড়া বেশি।তাই আংটি পরানো হয়েছে।মেয়ে দেখতে সুন্দরী।”

“রাখো তোমার সুন্দরী।আমি এখনই আসছি।”

বলেই কল কেটে নীরা যেতে নিলে দ্বীপ বলে,”কোথায় যাচ্ছো?”

“দুই ভাঙ্গা মনের জোড়া লাগাতে।আজকের রাত আমি ওখানে থাকবো।আপনি গেলে আসেন আমি দৌড়ালাম।”

বলেই নীরা দৌড়।দ্বীপ আহত কণ্ঠে বলে,”হায়রে আমার কপাল!এতদিন বউ কাছে আসতো আমি পরীক্ষার অজুহাত দিতাম।এখন আমি বউয়ের কাছে যাই বউ পরিবারের অজুহাত দেয়।আমার মনে হয় আর চুনু মুনু আনা হবে না।”

আজ দ্বীপ নীরাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো।কিন্তু নীরবের কথা শুনে নীরা দৌড়ে চলে গেলো নীরাদের বাসায়।নীরা ভেবেছিলো আজকে মেয়ে দেখতে গেছে যাক।আসার পর নাহয় নীরবের সাথে কথা বলবে।কিন্তু এখন তো নীরব নিজেই ঝামেলা করে দিয়েছে।

নীরা বাসায় এসে সোজা ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে,”আরে এই খাদ্য বিশেষজ্ঞ ভাই আমার।খুব শখ না বিয়ে করার!মেটাচ্ছি তোর শখ।আমার ননদ কান্না করে বন্যা বয়ে দিবে আর তুই করবি অন্য মেয়ে বিয়ে?”

কথাগুলো বলেই হাফাতে থাকে নীরা।নীরার চিল্লানো শুনে বেডরুম থেকে মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন এসে হাজির হয়।নীরব তখনও আসেনি।

মিসেস নাজনীন বলেন,”এটা কেমন ব্যাবহার নীরা?পাশে তোমার শশুড় বাড়ি। আর কয়দিন পর তোমার ভাইয়ের বিয়ে।লোকজন এই সময় খোঁজ খবর নিতে আসে।এসব দেখলে কি বিয়ে হবে?”

“নিকুচি করেছে বিয়ের।কে বলেছে একজনের মন ভেঙ্গে বিয়ে করতে।”

এবার ঘর থেকে নীরব বের হয়ে আসে।নীরাকে বলে,”কি হয়েছে বোন?এভাবে চেচাচ্ছিস কেনো?মেয়ে দেখতে তোকে নিয়ে যাইনি তো কি হয়েছে?বিয়ের আগে ঠিকই যাবি।”

“তোর ওই বিয়েতে যদি আমি তোকে জবাই করে কিমা বানিয়ে ওই লিমাকে না খাইয়েছি তো আমার নাম মুনজেরিন নীরা না।”

মিসেস নাজনীন চোখ রাঙিয়ে বলেন,”বড় ভাই হয় তোমার।মুখ সামলে কথা বল।”

“আরে কিসের বড় ভাই?যে বড় ভাই আমার ননদের মন নিয়ে খেলা করে সে কি করে বড় ভাই হয়?একজনকে মায়াবন বিহারিনী বলে করে দেয় তার হৃদয় হরিণী।করাচ্ছি তোকে বিয়ে।”

বলেই নীরবের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ঘরে।মিসেস নাজনীন এগোতে আসলে নীরা বলে,”ভাই বোনের পার্সোনাল কথা চলবে।মা বাবা নট এলাউ।”

বলেই ধুম করে দরজা লাগিয়ে দেয়।মিসেস নাজনীন ক্ষিপ্ত হয়ে মিস্টার রবিনকে বলেন”এই শিক্ষা দিয়েছো মেয়েকে।এবার বুঝো।”

চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে