#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_১৬
#ইশরাত_জাহান
🦋
দুপুরে দ্বীপ বাসায় আসে একটু দেরি করে।বাসায় আসার সাথে সাথে মিসেস সাবিনা বলেন,”ক্যাডার সাহেব এসেছেন!আপনার বউ তো না খেয়ে অপেক্ষা করছে।বলেছে আমার উনি আসলে একসাথে খাবো।”
হাত ঘড়ির দিকে তাকালো দ্বীপ।দেখলো বিকাল হয়ে এসেছে।প্রায় চারটা ছুঁই ছুঁই।নীরা এখনও না খেয়ে আছে।কি এমন হলো যে মেয়েটা এমন করছে এটা বুঝতে পারছে না দ্বীপ।লোক দেখানো কাজ এত কেনো করবে?
দ্বীপ ঘরে আসার সাথে সাথে নীরা দ্বীপের বাড়ি পড়ার পোশাক বের করে দেয়।দ্বীপ বলে,”তুমি নাকি না খেয়ে আছো?”
“হ্যা,আপনি আর আমি একসাথে খাবো তাই।”
“কি হয়েছে তোমার বলোতো?এক থাপ্পড়ে ঘাড় ত্যারা থেকে ঘার সোজা হয়ে গেলো নাকি!”
“ধুর,আপনিও না পড়ে আছেন এক বিষয় নিয়ে।মানুষ বুঝি বদলায় না।”লজ্জা পাওয়ার ভান করে।আবার বলে ওঠে,”তাড়াতাড়ি যান গোছল করে আসেন।দুপুরে না খেয়ে আছি।পেটের ভিতরে ছুঁচোগুলো দৌড়াচ্ছে।”
“আচ্ছা।”বলেই দ্বীপ চলে গেলো গোছল করতে।ফ্রেশ হয়ে একসাথে দুপুরের খাবার খেলো।
বিকাল হওয়ার সাথে সাথে কেয়া এসেছে নীরার সাথে দেখা করতে।অনেকদিন হয়ে গেছে দেখা করে না।কেয়া ও নীরা একসাথে ছাদে গল্প করছে।কেয়া বলে ওঠে,”জানিস সাদা বিলাই আমাকে প্রপোজ করেছে।”
“কবে!কখন!কথায়!আমাকে বলিস নি কেনো?”
“আরে কালকে করেছে প্রোপজ।আমি এখনও ঝুলিয়ে রেখেছি।একসেপ্ট করিনি।”
“কেনো করিসনি একসেপ্ট?”
“কেনো আবার!জানিস না মেয়েদের একটু লজ্জা পেয়ে পেয়ে দেরি করতে হয়।আমি ও সাদা বিলাইকে একটু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তারপর একসেপ্ট করবো।”
“মেয়েদেরকে লজ্জা পেতে হয়?লজ্জা পাওয়ার বেনিফিট কি?”
“একটা মেয়ে যতো বেশি লজ্জা পাবে তার পার্টনার তাকে ততো বেশি আদর যত্ন করে।”
কেয়ার কথা শুনে নীরা মনে মনে বলে,”তাহলে আমাকেও লজ্জা পেতে হবে!আজ থেকে আমিও লজ্জা পাবো।কিন্তু আমার তো অত বেশি লজ্জা লাগে না!”
কেয়া আর নীরার আড্ডার ভিতরেই রিক কল করে কেয়াকে।কল রিসিভ করলে রিক বলে,”কোথায় তুমি,চশমিশ?”
“এই তো আপনার বাসার উল্টো বাসায়।আগে যেই বাসাটা আমার বান্ধবীর ছিলো ওটাতে এখন আমাকেও পাবেন না।আমি এখন বান্ধবীর আরেক বাসায়।”
“পিছনে ঘুরে দেখো।”
কেয়া পিছনে ঘুরে দেখে রিক দাড়িয়ে আছে তাদের ছাদে। রিককে দেখে কেয়া কল কেটে দেয়।সাথে সাথে কেয়া তার ওড়নার শেষ কিনারা আঙুলের সাথে পেচিয়ে পেচিয়ে ফ্লোরের দিকে তাকায়।কেয়ার লজ্জা লজ্জা ভাব দেখে নীরা বিরক্ত।এভাবে কেউ লজ্জা পায়?তারপর নীরা তাকালো রিকের দিকে।রিক কেয়ার লজ্জা পাওয়া দেখে হাসতে থাকে।কেয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে এক নাগাড়ে।
কেয়াকে লজ্জা পেতে দেখে রিক বলে,”আয় হায় চশমিশ!তোমাকে তো লজ্জা পেলে আরো বেশি সুন্দর লাগে।চশমার ভিতরে তোমার ওই চোখে আমার জন্য লজ্জার আবির্ভাব ফুটে উঠেছে। ইশ এটাকেই তো বলে লুকোচুরি গল্প।”
এই রিকও লুকোচুরি গল্প বললো।ক্যাডার সাহেবও ডায়েরির পাতায় লুকোচুরি গল্প লিখেছে।লজ্জা পেলে বুঝি ক্যাডার সাহেব বুঝে যাবে যে তার চন্দ্র পাখি তাকে নিয়ে লুকোচুরি গল্পে মশগুল হয়ে গেছে।আজকে নীরাও লজ্জা পাওয়ার চেষ্টা করবে।
সন্ধায় দ্বীপ নীরাকে বলে,”বই খাতা বের করো পড়তে হবে।”
নীরা তার ওড়নার কোনায় আঙ্গুল দিয়ে ঘোরাতে থাকে আর ফ্লোরে তাকিয়ে মিটমিট হাসতে থাকে।দ্বীপ দেখলো নীরার কান্ড।কিন্তু কিছু বুঝলো না।দ্বীপ আবার বলে,”কি হলো?পড়তে বসবে না?”
নীরা ফ্লোরে তাকিয়ে ওড়নার কোনায় আঙ্গুল পেচাতে পেচাতে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝায়।দ্বীপ এবার ফোশ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,”পড়তে বসার আহ্বান দিয়েছি বাসর করতে আহ্বান দেইনি যে এভাবে লজ্জা পাবে।পরীক্ষার পর লজ্জা পাওয়ার মতো সুযোগ ও কাজ দুটোই করে দিবো।এখন পড়াশোনায় ফোকাস হও।”
শেষ,নীরার লজ্জা পাওয়া শেষ।এমন রসকষহীন বর থাকলে কিভাবে লজ্জা পাবে সে?এমনিতেও নীরার দ্বারা ওসব লজ্জা তারপর ন্যাকা ন্যাকা ভাব আসে না।নীরা সবসময় স্ট্রেট থাকে।সেখানে আজ একটু লজ্জার অভিনয় করলো।কিন্তু এই ক্যাডার সাহেব তা হতে দিলো না।
শীত পড়েছে খুব।তাই আজ মিসেস সাবিনা ও দীপান্বিতা মিলে পিঠা বানাতে থাকে।মিসেস শিউলি ভাত চাপিয়ে দেন। পিংকিও সাহায্য করতে থাকে।মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন এসেছেন।দ্বীপের বাবা মা দাওয়াত দিয়েছেন।নীরা ও দ্বীপ পড়তে বসেছে।দ্বীপ নীরাকে পড়াচ্ছে। আর কয়েকদিন পর নীরার পরীক্ষা।আবার এর ভিতরে নীরব আসবে।শীতকালে এমনিতেই পিঠার আমেজ থাকে।একের পর এক আনন্দ অনুষ্ঠান শীতকালেই বেশি হয়। আর এর ভিতরে নীরার পরীক্ষা।দ্বীপ ও তার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই নীরা কোনো কাজ করলো কি না এগুলো নিয়ে।দ্বীপ ভালো করেই জানে নীরাকে কাজ করতে বললে নীরা বই ফেলে কাজের দিকে দৌড় দিবে।
রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।নীরা মিস্টার রবিনের এক বাহু ধরে তার কাঁধে মাথা দিয়ে আছে।বিয়ের আগে বাসায় থাকলে মিস্টার রবিন যখনই কাজ করে বাসায় আসতো নীরা সাথে সাথে তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরতো।বিয়ের পর সবকিছু পাল্টে গেছে।নিজের স্থায়ী বাড়ি নিজের জীবন নিজের কাছের মানুষের জায়গা সবকিছু।কিন্তু তারপরও নীরা আজ সুখী।তাকে তার শ্বশুর বাড়ির সবাই ভালোবাসে।তার আসল মানুষ তাকে এতগুলো বছর ধরে ভালোবাসে।এগুলো কি কম নাকি?
মিস্টার রবিন নীরাকে বলেন,”শুনলাম তুমি নাকি পারফেক্ট বউ হওয়ার চেষ্টা করছো।সকাল সকাল উঠে রান্না বান্না করেছো পড়াশোনা করেছো।সবাই তো তোমার খুব প্রশংসা করছে।বরের প্রতি এত যত্ন এসেছে দেখে সবাই খুশী।”
নীরা তাকালো বাবার দিকে।পাশেই মা শশুর শাশুড়ি ও অন্যান্য সবাই আছে।নীরা বলে,”আমি তো তোমারই মেয়ে আব্বু।তুমি যেমন তোমার বউয়ের জন্য পাগল,আমিও তো তেমনই হবো আমার বরের পাগল।এগুলো তো বংশগত রোগ।বাবা যেমন রোমান্টিক হবে তার সন্তানও তেমন রোমান্টিক হবে।”
খুক খুক করে কাশতে থাকেন মিস্টার রবিন।মিস্টার সমুদ্রর বিষম ওঠে।মিসেস নাজনীন মেয়ের আর তার বাবার দিকে চোখ গরম করে তাকায়।মিসেস সাবিনা ও দীপান্বিতা মিটমিট হাসতে থাকে।দ্বীপ কি করবে নিজেও জানে না তাই সে ঘরে চলে আসে।পিংকি আর মিসেস শিউলি নিজেদের মত ঘরে আছে তাই এগুলো দেখছে না।অভ্র সবার এই ভাবভঙ্গি বুঝে উঠতে পারছে না।সে তার মত কার্টুন দেখতে ব্যাস্ত।
মিসেস সাবিনা মিস্টার রবিনকে বিষম খেতে দেখে ফিসফিস করে বলেন,”উম ঢং দেখলে বাচি না।মেয়েটা তো ঠিকই বলেছে।বাবা মা যেমন সন্তান তেমন হয়।তবে তোমার ক্ষেত্রে উল্টো।তোমার বাবা তো রোমান্সের ঠেলায় দুটো বিয়ে করেছিলো তুমি তো তার এক অংশও দেখাও নি।উল্টো ছেলেকে তোমার মত বই পাগল বানিয়েছো।এখন ছেলে আমার বই ছেড়ে বউ লাগল হলেই বাচি।”
ছেলের বউ আসার পর থেকে যেনো বুড়ো বয়সে বউও যুবতী মনের হয়ে উঠেছে।মিস্টার সমুদ্রের যেনো দিন দিন বিষম খাওয়ার গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মিস্টার সমুদ্র মিসেস সাবিনার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলেন,”ছেলের বউয়ের ছোঁয়া লেগেছে মনে! চলো আবার বিয়ে করে নব দম্পত্তি হয়ে যাই।তোমার মনের যত রং লেগেছে মিটিয়ে দেই।”
“সেই সৌভাগ্য কি আর আমার কপালে আছে।”বলেই হামি দিয়ে সোফা থেকে উঠে পড়েন মিসেস সাবিনা।
মিসেস নাজনীন নীরার কাছে এসে নীরার কানে কানে বলেন,”বিয়ে হয়েছে সবকিছু বুঝতে শিখেছো,এটা শিখো নি যে কোথায় কি বলতে হয়?”
“আমি তো সত্যি কথাই বলেছি।বাবা তো তুমি বলতে অন্ধ।তুমি বললে বাবা যাবে ডানে তুমি বললে বাবা যাবে বামে।আমার কপালে বর জুটেছে তার উল্টো।আমাকে কি করতে হয়! বর যদি বলে চলো ডানে আমিও চলি ডানে বর যদি বলে চলো বামে আমিও চলি বামে।”
মিস্টার রবিন মেয়েকে বলেন,”এগুলো বলতে নেই মা।তোমার আম্মু লজ্জা পায়।”
বলেই নীরা ও মিস্টার রবিন হাসতে থাকে।
মিসেস নাজনীন বুঝতে পেরেছে এরা বাবা মেয়ে মিলে তাকে পচাইতে থাকবে।তাই তিনি কথা বাড়ায় না।তাড়াতাড়ি করে বিদায় জানিয়ে চলে যান বাসায়।
চলবে…?
#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_১৭
#ইশরাত_জাহান
🦋
আজ নিরাদের বিদায় অনুষ্ঠান।বিদায় অনুষ্ঠানটি খুব বড় ভাবে আয়োজন করা হবে।সাথে পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড দিবে।বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে মেয়েদের নীল শাড়ি ও ছেলেদের পাঞ্জাবী পড়তে বলা হয়েছে।নীরা এই কয়েকদিনের ভিতরে তার ও দ্বীপের জন্য একসাথে ম্যাচিং করে ড্রেস কিনেছে।আজকে সন্ধায় নীরব আসবে।কয়েকটা দিন শুধু নীরার বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে থাকতে হয়েছে।আজকে সারাদিন তার ছুটি।দ্বীপ তাকে এই করা শাসনে রাখে আবার দ্বীপই তাকে ছুটি দেয়।
দ্বীপ ফ্রেশ হয়ে রেডি হবে নীরা তখন দ্বীপকে বলে,”আজকে আপনি এই পাঞ্জাবি পড়বেন।”
দ্বীপ তাকায় পাঞ্জাবির দিকে।পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে নীরাকে বলে,”এটা কখন কিনেছো?”
“ছুটির ভিতরেই কিনেছি।আপনাকে সারপ্রাইজ দিবো তাই দেখাইনি।এখন তাড়াতাড়ি পড়ে আসুন।”
দ্বীপ নীরার থেকে প্রথম কোনো পুরষ্কার পেয়েছে।এতে দ্বীপের ভালো লাগছে।তাই সে পাঞ্জাবি নিয়ে চলে গেলো অথচ দ্বীপ নিজেও জানে না নীরা তার সাথে ম্যাচিং করে শাড়ি পড়বে।
নীরা শাড়ি পরে ড্রয়িং রুমে এসেছে।কয়েকদিন পড়াশোনার চাপে ঘরের কাজ করতে পারে না।এর জন্য কেউ তাকে জোর করেনি।তবে পিংকি নীরাকে কথা শুনিয়ে শুনিয়ে ঘরের অনেক কাজ করেছে।এতে নীরার মনে একটু জেদ চেপেছে।পরীক্ষা শেষ হলে ঘরের কাজে মন দিবে এমন এক জেদ নীরা মনে মনে করে রেখেছে।ড্রয়িং রুমে এসে নীরা দেখে পিংকি অনেক সুন্দর করে শাড়ি পড়েছে। নৃত্যে নাম দিয়েছে হয়তো।পিংকি অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করে,নীরার কলেজেই।আজ সিনিয়র জুনিয়র সবাই নৃত্য করবে। যার যার ইচ্ছা। পিংকিও নাম দিয়েছে।
নীরার ইচ্ছা ছিলো নৃত্য করার।কিন্তু সে এখন নৃত্য করতে পারবে না।তার ক্যাডার সাহেব চায় না।পিংকি তো তার ডেমো দেখেছিলো।তাই নীরাকে খোঁচা দিয়ে বলে,”মানুষ বুঝে কাকে কোথায় মানায়।তাই তো আজ আমি নৃত্য করতে পারছি। আর অনেকের মনের ইচ্ছা থাকলেও পূরণ তো করতে পারেই না বরং ডেমো দেখিয়ে দেয়।”
নীরা কি কম নাকি!তাকে কেউ কথা শোনাবে আর সে চুপ থাকবে এমন তো হতেই পারে না।পিংকির কাছে এসে নীরা বলে,”কি বলোতো আমি তো জানতাম না আমার ক্যাডার সাহেব নাচনেওয়ালি দেখলে ঘৃণা করে তাই আবদার করেছিলাম।আমার ক্যাডার সাহেব আমাকে তার ব্যাক্তিগত নারী হিসেবে চায়।কোনো পর পুরুষের সামনে নৃত্য পরিবেশন করা নারী হিসেবে না।আমি এতেই খুশি।”
বলেই হামি দিতে দিতে রান্নাঘরের দিকে যায়।পিংকি রাগে চোখ মুখ লাল করে আছে।এই মেয়ের সাথে কথায় পারবে না।তাকে কিছু একটা করতে হবে।
সকালের খাবার খেয়ে দ্বীপ ও নীরা নিজেদের মতো কলেজে আসে।কলেজ গেট থেকে নীরা নেমে যায়।ওখানেই আসে কেয়া।কেয়া দ্বীপ ও নীরাকে দেখে বলে,”বাব্বা,তোরা তো দেখি সেম কালার সহ সেম প্রিন্টের ড্রেস পড়েছিস! স্যারকে তো পুরো হ্যান্ডসাম প্লাস জেন্টেলম্যান লাগছে।”
“নজর দিবি না।”
“আমার বয়েই গেছে নজর দিতে।আমার সাদা বিলাই আছে।তোর ক্যাডার সাহেবের দিকে তো অন্যান্য মেয়েরা নজর দিচ্ছে।ওই দেখ সিনিয়র আপুরা কিভাবে তাকাচ্ছে।”
নীরা দেখলো প্রায় কিছু সংখ্যক মেয়েরা দ্বীপের দিকে তাকিয়ে আছে।আবার কিছু মেয়েরা কলেজের ভিপিকে দেখতেছে।নীরার হিংসা হতে লাগলো।আরে ভাই ভিপি তারপর আরো হ্যান্ডসাম স্যারের দিকে তাকাচ্ছিস তাকা আমার বরের দিকে কেনো তাকাচ্ছিস?নীরা কেয়াকে বলে,”বুঝলি সাদা বিলাই এর চশমিশ!আমার ক্যাডার সাহেবের নজর দোষ শুধু বাড়িতেই না বাইরেও আছে।কোনো এক ওঝা দেখাতে হবে।যদি নজর থেকে বেঁচে যায়।”
“ধুর তোর মতো রনচন্ডি চ না মানে মেয়ে থাকতে কি আর ওঝা লাগে। এমনিতেও কোনো মেয়ে পাত্তা পাবে না।”
“চন্দ্র পাখি বলেও বললি না কেনো?আমি সবকিছু জেনে গেছি।”
“কিভাবে?”
“তোকে কেনো বলবো!তুই আমাকে বলেছিলি যে ক্যাডার সাহেব আমাকে ভালোবাসে?”
“আরে তুই যে থাপ্পড় থ্যারাপি পেয়েছিস ওগুলো তো একটাও আমি পাই নি।প্রথম দিন তো স্যারের থাপ্পড় খেয়ে অজ্ঞান ছিলি।এখন না হয় তোর অভ্যাস হয়েছে।আমার তো তা না।এই ভয়তে বলিনি।”
কেয়া আসার সাথে সাথে দ্বীপ চলে যায় নিজের স্থানে।কেয়া ও নীরা ঘোরাঘুরি করতে থাকে কলেজে।ঠিক সেই সময় নীরার সামনে একটি ছেলে আসে। ছেলেটি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করে নাম ইশতিয়াক।নীরার কাছে এসে নীরাকে বলে,”তোমাকে অনেক কিউট লাগছে।”
নীরা কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যেতে নেয়। ইশতিয়াক আবার আসে নীরার সামনে।নীরার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে নীরার দিকে গোলাপ ফুল দিয়ে বলে,”দীর্ঘ ছয় মাস হয়েছে আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে বলতে চেয়েও বলতে পারিনি।কিন্তু আজ আর তোমাকে দেখে থমকে থাকতে পারলাম না।তোমাকে এই দুই মাস দেখতে না পেয়ে খুব কষ্ট হয় আমার।আমি তোমার বাড়ির দিকে গেছি কিন্তু তোমাকে পাইনি।আগে যেমন ছাদে বা বাড়ির সামনের মাঠে খেলতে যেতে এখন আর দেখতে পাই না তোমাকে।এই জন্য পাগল পাগল লাগছে নিজেকে।ভালোবাসি খুব খুব খুব ভালোবাসি আমি তোমাকে নীরা।আমার নীরুবতী।”
নীরা ও কেয়া একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে।নীরা কিছু বলার আগে কেয়া বলে,”আফসোস,আপনি আমার জিজু হতে পারলেন না।আপনি যাকে প্রণয় বাক্য দিয়ে নীরুবতী উপাধি দিলেন সে এখন অন্যের চন্দ্র পাখি।”
ইশতিয়াক বুঝতে পারলো না কেয়ার কথা।তাই কেয়ার দিকে ফিরে বলে,”মানে?”
“মানে এই যে আমার বান্ধবী বিবাহিত।”
ইশতিয়াক মন খারাপ করে দুঃখিত বলে স্থান ত্যাগ করে।কেয়া হাসতে থাকে।বলে,”দোস্ত এই ছেলেটা আগে আসলে তোর আর সুগার ড্যাডি বিয়ে করতে হতো না।মনে আছে আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিলি তোর সাথে সুগার ড্যাডির বিয়ে ঠিক হয়েছে?”
নীরার কোনো উত্তর না পেয়ে কেয়া খোঁচাতে থাকে নীরাকে।বলে,”কি হলো?এই তুই তোর জামাই থুয়ে ইশতিয়াক ভাইয়ের প্রেমে পড়লি নাকি?”
নীরা সামনে তাকিয়ে কাদো কাদো ফেস করে বলে,”সামনে দেখ।”
কেয়া সামনে তাকিয়ে দেখে দ্বীপ রাগে ফেটে যাওয়া ফেস করে নীরার দিকে তাকিয়ে আছে।কেয়া বলে,”কাম সারছে রে!”
অনুষ্ঠানের নাচ গান ও বক্তৃতা শুরু হবে বলে সবাই নিজ নিজ জায়গায় বসে।স্যাররা কিছু বক্তৃতা দেয়।তারপর গান গাওয়া শুরু হয়।গান শেষে নৃত্য পরিবেশন করা হয়।একেক করে কয়েকজন নৃত্য করার পর পিংকিকে ডাকা হয় নৃত্যের জন্য।পিংকি গানের তালে প্রতিটি স্টেপ খুব সুন্দর ভাবে নাচে।পিংকির নাচ দেখছিলো দ্বীপ।মূলত দ্বীপ একা না সবাই দেখছে পিংকির নাচ।কিন্তু নীরার চোখে যেনো একা দ্বীপকেই বাদছে।
অনুষ্ঠান শেষে সবাই রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে বাইরে এসে ছবি তুলতে থাকে।ইন্টারের পরীক্ষার্থীরা একসাথে ছবি তুলে কেউ কেউ কান্নাকাটি করে আবার কেউ কেউ বাড়ি চলে আসে।নীরা ও কেয়া গেটের কাছে এসে দাঁড়ায়।দ্বীপ ও রিক আসবে।রিক এসে কেয়ার সাথে ঘুরতে যাবে আর দ্বীপ ও নীরা বাড়িতে যাবে।দ্বীপ এসে নীরার কাছে দাড়াতেই রিক চলে আসে।রিকের হাতে বেলি ফুলের মালা।কেয়ার হাতে দিয়ে বলে,”তোমার এই নীল শাড়ির সাথে বেলি ফুলের মালা অনেক সুন্দর লাগবে,চশমিশ।”
কেয়া লজ্জা পেলো একটু।তারপর রিকের কাছ থেকে বেলি ফুলের মালা নিয়ে নীরাকে বলে,”আমার খোঁপায় একটু ফুল দিয়ে দে দোস্ত।”
নীরা কেয়ার খোঁপায় ফুল গুঁজে দিয়ে দেয়।তারপর তারা বিদায় নেয়।নীরা গাড়িতে উঠতেই দ্বীপ বলে,”আজকাল ছেলেদের থেকে খুব প্রোপজ পাওয়া হচ্ছে।”
নীরা হামি দিতে দিতে বলে,”ঘরে টিউব লাইট বর থাকলে যা হয়। বর তো আর ফুল দেয় না পর দেয়।কিন্তু আফসোস ফুল আর নেওয়া হয় না।এদিকে বান্ধবীদের দেখি বিএফ থেকে ফুলের মালাও গিফট পায়।আমারও ভাগ্য আর লোকেরও ভাগ্য।”
দ্বীপ রাগে জেদে জোরে স্প্রিডে গাড়ি চালায়।নীরা ভয় পেয়ে যায় এবার।বলতে থাকে,”মরে যাবো আমি মরে যাবো।ওরে ক্যাডার সাহেব লাগবে না আমার ফুল।আমার লাইফে আপনার মত ব্লাডিফুল থাকতে অন্য ফুল কেনো নিবো বলুন।গাড়ি আস্তে চালান।”
কে শোনে কার কথা দ্বীপ জোরে গাড়ি চালিয়ে আসে বাড়ির সামনে।নীরা হাফ ছেড়ে বলে,”এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম। আর জীবনেও আপনার সাথে আমি এক গাড়িতে উঠবো না।যদিও উঠি তার আগে আপনার নামে আমি জিডি করে রাখবো।আমার মৃত্যুর জন্য আপনি দায়ী থাকবেন।”
বলেই নীরা বাসায় চলে আসে।বাসায় এসে হিজাব খুলে শাড়ি পরেই থাকে।কারণ আর কিছুক্ষণ পর নীরব আসবে।নীরা ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে এসে মাথায় খোঁপা করে।ঠিক তখনই পিছন থেকে দ্বীপ নীরার খোঁপায় বেলি ফুলের মালা গুঁজে দেয়।নীরা আয়নায় এই দৃশ্য দেখতে থাকে।
মাথায় বেলি ফুলের মালা গুঁজে দিয়ে দ্বীপ বলে,”আমার ব্যাক্তিগত নারী শুধু আমার।তাকে না দিবে অন্যকেউ ফুল না দিবে অন্য কেউ ভালোবাসা।”
বলেই দ্বীপ নীরার দিকে ঝুঁকে আসে।নীরা বুঝতে পারে দ্বীপ তাকে এবার ভালোবাসার পরশ ছুঁয়ে দিবে।তাই নীরা চোখ বন্ধ করে নেয়।এবার যেনো নীরার সত্যি লজ্জা করছে।দ্বীপের গরম নিঃশ্বাস নীরার মুখে আলাদা অনুভূতি নিয়ে আসে।ঠিক সাথে সাথেই নীরা ফিল করে তার গালে শুকনো খরখরা কিছুর ছোঁয়া।ঠোঁটের ছোঁয়া কি এমন অদ্ভুত লাগে!নীরার কেনো এমন লাগছে?সাথে সাথে চোখ খুলে নীরা।দেখতে পায় দ্বীপ একটি গোলাপ দিয়ে তার গাল স্লাইড করছে।বিরক্ত হলো নীরা।কি ভাবলো আর কি হলো,ধুর।
দ্বীপ নীরার মাথায় টোকা দিয়ে বলে,”যত্তসব দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় বিচরণ করে তাইনা?”
বলেই নীরার হাতে গোলাপ দিয়ে চলে যায় ঘর থেকে।নীরা গোলাপ হাতে নিয়ে বলে,”রসকষহীন ক্যাডার সাহেব।বউকে একটা চুমু দিতে পারে না।আমিও বা ভুলি কি করে!ইনি তো আট বছর ধরে ভালোবাসার প্রকাশই করতে পারেনি।আবার দিবে চুমু!একবার পরীক্ষা শেষ হোক আমি যদি আপনার থেকে এক ডজন বাচ্চা না নিয়েছি তো আমার নাম মুনজেরিন নীরা না।”
বলেই নীরা গোলাপ ফুল নিয়ে খোঁপার এক কোনায় গুঁজে।
চলবে…?