#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_৯
#ইশরাত_জাহান
🦋
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে দ্বীপ কলেজে চলে যায় আর নীরা নিজের বাসায় আসে।দীপান্বিতা ও অভ্রকে সাথে করে নিয়ে আসে।দ্বীপ কলেজ শেষ করে নীরাদের বাসায় আসবে।বাসায় এসে নীরা মা বাবাকে জড়িয়ে ধরেছিলো কিছুক্ষণ।তারপর ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে যায়। ব্যালকনিতে দাড়ানোর সাথে সাথে মিসেস শিউলি দ্বীপের দাদী ছাদ থেকে বলে,”কি গো নতবৌ!শশুর বাড়ি দেখবার জন্য এখানে আসছো নাকি?”
“আমি বাসায় থাকলে তো এই ব্যালকনিতে দাড়িয়ে থাকতাম।তোমাদের দেখার ইচ্ছা হলে তোমাদের বাসায় চলে যাবো।”
“তোমার ভাগ্যটা বহুত ভালো।কি সুন্দর বাপের বাড়ি আর শশুর বাড়ি পাশাপাশি পাইছো।আমার নাতনির সোহাগ পাইবা আবার বাপের বাড়ির কথা মনে উঠলে দেখতে পাইবা।”
“তোমার ভাগ্যটাও ভালো দাদী।কি সুন্দর নাটবৌ ফিরুনিতে বাপের বাড়ি আসছে আর তারপরও তার মুখ দেখতে পারছো।কয়জন দাদী শাশুড়ির ভাগ্য এমন হয় বলোতো?”
কথা বলতে বলতে অভ্র আসে সেখানে।তিনজনে মিলে গল্প করে কিছুক্ষণ।
নীরবের ঘরটিতে আজ দীপান্বিতা ও অভ্র থাকবে।কয়েকদিন ধরে বিয়ের কাজকর্মের জন্য অনলাইনে ড্রেস সেল করতে পারেনি দীপান্বিতা।আজ অনলাইনে লাইভে শাড়ি পরে এসেছে।লাইভে এক একটি শাড়ি খুলে দেখাচ্ছে আর দাম বলছে।
জার্মান থেকে দীপান্বিতার লাইভ ভিডিও দেখতে থাকে নীরব।স্ক্রীনে দীপান্বিতার মুখে হাত ছুঁয়ে বলে,
“আমার ময়াবন বিহারিনী।
আমার এক সময়ের প্রণয়ের নারী,
সে এখন আমার জন্য এক নিষিদ্ধ নারী।
তোমায় হারিয়েছি আমি চিরতরে,
তবুও থাকিবে তুমি আমার এই বক্ষস্তরে।”
বলেই চোখের পানি মুছতে থাকে।
নীরব জার্মানে গেছে আজ পাঁচ বছরের একটু বেশি।ফুড নিউট্রিশন নিয়ে পড়াশোনা করতে অনেক জায়গায় এপ্লাই করে সে।কিন্তু ভাগ্য তাকে জার্মানে সিলেক্ট করে।জার্মানে আসার আগে দীপান্বিতার সাথে ছিলো তার প্রেমের সম্পর্ক।দীপান্বিতাকে ছোট থেকেই পছন্দ করতো। আস্তে আস্তে ভালোবাসা শুরু হয়।একই স্কুলে পড়াশোনা করতো তারা।নীরব কলেজে উঠেছিলো আর দীপান্বিতা ক্লাস নাইনে উঠছিলো।এমন সময় নীরব প্রোপজ করে দীপান্বিতাকে।দীর্ঘ আড়াই বছর প্রেম করে তারা।এরপর নীরব চলে যায় জার্মানে।জার্মানে যাওয়ার পরও তাদের কথাবার্তা চলতো।হঠাৎ ছয়মাস পর থেকে দীপান্বিতাকে পাওয়া যায় না।নীরা তখন ছোট তাই ওর কাছেও খোঁজ খবর নিতে পারতো না।এরপর হঠাৎ একদিন মিসেস নাজনীনের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে অভ্র সামনে আসে।
নীরব জিজ্ঞাসা করে,”বাচ্চাটি কে?”
মিসেস নাজনীন বলে ওঠে,”আমাদের দীপান্বিতার ছেলে অভ্র।”
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে আর কথা বলার রুচি থাকে না নীরবের।সাথে সাথে কল কেটে দেয়।এর কয়েকদিন পর দীপান্বিতা কল করেছিলো কিন্তু নীরব কল কেটে দিতো।তারপর নিজে থেকে ফোন নম্বর ও বিভিন্ন ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে।খোঁজ খবর রাখে না দীপান্বিতার।
কলেজে শেষ করে কেয়া এসেছে নীরার সাথে আড্ডা দিতে।কলেজের ভিন্ন ইনফরমেশন সবগুলো মনোযোগ দিয়ে কালেক্ট করেছে কেয়া।দ্বীপ যে তাকে ওয়ারনিং দিয়েছে তাতে এগুলো করতেই হতো। ইনফরমেশন গুলো নীরাকে দিয়ে বলে,”ভালোভাবে পড়শোনা করবি। আর ফাঁকিবাজি হওয়া যাবে না।একজন প্রফেসরের বউ তুই।এটা মাথায় রাখবি।”
নীরা কেয়ার কপালে হাত রেখে বলে,”তুই সুস্থ আছিস তো,দোস্ত?নাকি সাদা বিলাই তোকে প্রেমের মন্ত্র না দিয়ে বিদ্যার মন্ত্র দিয়েছে!যেটা আমাকে ক্যাডার সাহেব দিতে থাকে।”
কেয়া মনে মনে বলে,”তোর ক্যাডার সাহেবের চক্করে পড়াশোনা থেকে কোনো কিছু করার উপায় আছে!আজ যে ওয়ারনিং দিয়েছে আমাকে জীবনেও ভুলবো না।”
কলেজে~~~~
নীরা কলেজে যায় নি তাই কেয়া ও রিক একসাথে বাইকে করে কলেজে যায়।রাস্তায় রোড ক্রসিংয়ের সময় দ্বীপ ও রিকের বাইক পাশাপাশি থাকে।দ্বীপ দেখে ফেলে রিক ও কেয়াকে।তারপর দ্বীপের কক্ষে কেয়াকে ডাক দেয়।
কেয়াকে দ্বীপের কক্ষে আসলে দ্বীপ বলে,”পরীক্ষা আর তিনদিন পর।তুমি নিজে পড়াশোনায় মনোযোগী না সাথে ওই গাধিটাও।কোনো প্রকার পড়াশোনায় অমনোযোগী আমি সহ্য করবো না।আজ থেকে ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে পড়াগুলো আদায় করবে। আর এই তিনদিনে যা যা শিখবে ইনফরমেশন নীরাকে দিবে।তোমাদের ক্লাসের যে টপ স্টুডেন্ট ওর থেকে এই এক সপ্তাহের ইনফরমেশন কালেক্ট করবে।দুজনে পড়াশোনা ঠিক মতো করবে আজ থেকে।নীরাকে আমি পড়াবো আর তোমার খোজ তোমার বাবা মায়ের থেকে নিবো।পড়াশোনায় তুমিও কম ফাঁকিবাজ না।আজ থেকে মনোযোগী না হলে তোমার জন্য ইশতিয়াক স্যারকে ঠিক করবো।খুব ভালো ভাবেই জানো স্যার কেমন?”
শুকনো ঢোক গিলে কেয়া বলে,”দরকার নেই স্যার আমি মনোযোগ দিয়েই পড়বো আর নীরাকেও ইনফরমেশনগুলো দিবো।”
“গুড গার্ল, আর শোনো আমি যে ইনফরমেশন দেওয়াই এটা চ মানে নীরাকে বলার দরকার নেই।”
“ঠিক আছে,কিন্তু চন্দ্রপাখি বলতে যেয়ে থামলেন কেনো স্যার?”একটু দুষ্টুমি করেই বলে কেয়া।
দ্বীপ চোখ রাঙিয়ে বলে,”ক্লাসে যাও,মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো।”
কেয়া ভয়তে চলে যায়।দ্বীপ বিড়বিড় করে বলে,”ছাত্রী যখন বউ আর শালী হয় কত কিছুই না সহ্য করতে হয়।”
সন্ধায় দ্বীপ নীরাকে বলে,”বই বের করো পড়তে বসবে।”
“না,আমি এখন ফিরুনিতে এসেছি।নববধূ আমি এখন। কতদিন পর বাবার বাসায় এসেছি।এখন পড়তে বসবো না।”
“ভালোভাবে বলছি পড়তে বসো।”
“কেমন জামাই আপনি?শশুর বাড়িতে এসেছেন জামাই আদর খাবেন গল্প করবেন আড্ডা দিবেন তা না।খালি বলছে পড়তে বসো পড়তে বসো।এমন জামাই আমার ভালো লাগে না।”
দ্বীপ নীরার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,”দুইটা অপশন দিলাম তোমাকে। চয়েস করবে তুমি।
এক স্যার মুড,এই স্যার যদি একবার শিক্ষক মুডে চলে আসে তাহলে তার শিক্ষক থেরাপি তো জানোই।
দুই স্বামী মুড,এই স্যার যখন স্বামী মুড হয়ে যাবে তখন কিন্তু সে জামাই থেরাপি শুরু করে দিবে।
কারণ তুমি তো চাও আমি স্যার থেকে পারফেক্ট স্বামীতে রুপান্তন হই।”
কান গরম হয়ে আসে নীরার।সাথে সাথে বলে,”এগুলো কিসব কথাবার্তা স্যার?”
“ওমা এখন স্যার হয়ে গেছি!এতক্ষণ না শশুর বাড়ির জামাই আদর নিয়ে বলেছিলে!যেহেতু আমি এই বাড়ির জামাই সেদিক থেকে তুমি তো আমার বউ।তাইনা বউ!”
দূরে সরে আসে নীরা।দ্বীপের কথার ধরন মাইন্ড অন্যদিকে নিয়ে যায় তাকে।দ্বীপ আবারও আলতো হেসে চোখের চশমা ঠিক করে নীরার চোখের দিকে তাকায়। নীরাও তাকায় চশমা ওয়ালা এই চোখের দিকে।
দ্বীপ নীরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”এই স্যারকে যদি স্বামী হিসেবে এখনই চাও সত্যি বলছি এই বছরে তোমার হাতে ইন্টারের রেজাল্ট নয় আমাদের চুনু মুনু আনার রিপোর্ট এনে দিবো।”
নীরা প্রতিত্তর না করে শুকনো ঢোক গিলে।দ্বীপ আবারও বলে,”কিসের মিষ্টি খাওয়াতে চাও সবাইকে?আমাকে ভালো স্যার হওয়ার রেজাল্টের নাকি ভালো স্বামী হওয়ার রেজাল্টের?”
“পড়তে বসবো আমি। আর কোনো ফাঁকিবাজি করবো না।কি কি পড়তে হবে বলেন আমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো পড়তে বসতেছি।”
চলবে…?