লুকোচুরি গল্প পর্ব-০৮

0
586

#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_৮
#ইশরাত_জাহান
🦋
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই বৌভাতের জন্য প্রস্তুতি নেয়।নীরাকে সাজাতে বসানো হয়।নীরার সাজের জন্য দীপান্বিতা এসে নীরাকে খাইয়ে দেয়।ঠিক তখনই পিংকি এসে খোঁচা দিয়ে বলে,”এত বড় মেয়েকে আবার খাইয়ে দেওয়া লাগে।”

নীরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।ঠিক তখনই পিছন থেকে দ্বীপ বলে ওঠে,”তোর বিয়ের সময় যখন সাজানো হবে তুই নিজের হাতে খাবি।কেউ তোকে খাওয়ায় দিবে না।আমার বউকে কে কি করলো না করলো এটা আমরা দেখে নিবো।”

প্রিয় ব্যাক্তির মুখে অন্যকে বউ বলে সম্মোধন করা শুনে কষ্ট পেলো পিংকি।বিয়ে করেছে বউ তো হবেই।কিন্তু তাই বলে এভাবে বউ বউ বলে গান গাইতে থাকার তো কিছুই নেই।ওখান থেকে চলে গেলো পিংকি।দীপান্বিতা ও নীরা মিটমিট হাসতে থাকে।দ্বীপ এসেছিলো বৌভাতের জন্য পাঞ্জাবি পড়তে।লোকজন চলে এসেছে।একটু পর দুপুরের খাওয়া দাওয়া শুরু হবে।নীরাকে লোকজন দেখতে আসবে।

বৌভাতের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।দ্বীপ ও নীরাকে একসাথে বসানো হয় তাদের স্টেজে।মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন এসে মেয়ের সাথে দেখা করে আত্মীয়দের কাছে গেছেন।কেয়া এসেছে নীরার কাছে।নীরা মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।কেয়া এসে নীরাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”দোস্ত আমার সাথে কথা বলবি না?”

“তুই যা করেছিস,এতে কথা বলা যায়!”

“আমি কিছু না করলেও তোর বিয়ে হতো।কি সুন্দর বিয়ে করে বর নিয়ে পাশে আছিস।এখন বান্ধবী ভুলে গেলি!এবারের মতো মাফ কর।”আহ্লাদী কণ্ঠে।

“ঠিক আছে,করলাম মাফ।আশেপাশে দেখ তোর সাদা বিলাই এসেছে কি না।”

“আচ্ছা দোস্ত।”
বলেই মনে মনে বলে,”আমি কিছুই করিনি।করেছে তো তোর ক্যাডার সাহেব।তোকে যে হারে হারে চিনে তাই তো এদিক ওদিক লোক লাগিয়ে রেখেছে।তুই নিজেও জানিস না তোর অগোচরে কি কি হয়েছে।”বলেই কেয়া অন্যদিকে যায়।

সবাই খাওয়া দাওয়া করে এখন ছবি তুলতে শুরু করে।এমন সময় পিংকি এসে দ্বীপের হাত ধরে বলে,”চলো আমরাও ছবি তুলি।”

দ্বীপ হাত সরিয়ে নেয়।সাথে সাথে নীরা বলে,”হ্যা হ্যা ছবি তো আমরা সবাই তুলবো।সাথে ফেইসবুকে পোস্ট করবো।ক্যাপশন থাকবে মাই হাব্বি উইথ মাই বিবেকহীন ননদ(সিস্টার ইন ল)।আংকেল আপনি আমাদের ছবি তুলে দেন।”

পিংকি রেগে যায়।সাথে সাথে স্থান ত্যাগ করে।কেয়া এসে জিজ্ঞাসা করে,”এটা কে দোস্ত?”

“আমার না হওয়া সতীন।একদম সুপার গ্লু আঠার মতো।এসেছে মাত্র চার ঘণ্টা হয়েছে।ক্যাডার সাহেবের লেজ ধরার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।”

“এর নামই কি পিংকি?”

“হ্যা কিন্তু তুই কিভাবে জানলি?”

“কিছুনা,এমনি।”বলেই মনে মনে বলে,”আমি যা জানি তুই তাও জানিস না।”

রিক এসে দ্বীপ ও নীরাকে কংগ্রাচুলেট করে।তারপর তাকায় কেয়ার দিকে।নীরা বুঝতে পারে রিক কেয়ার সাথে আলাদা কথা বলতে চায়।তাই নীরা কেয়াকে হাত দিয়ে হালকা খোচা মেরে বলে,”যাও যাও তোমার দিন আসতেছে তাড়াতাড়ি।”

লজ্জা পেয়ে কেয়া চলে যায়। ছাদের এক কোনায় এসে দাড়ায় কেয়া।রিক তার পাশে এসে বলে,”কাল কল দিয়েছিলাম।রিসিভ করনি কেনো?”

“ওতো রাতে কল দিয়েছিলেন কেনো?”
“যদি বলি তোমাকে মিস করতেছিলাম!”
“কেনো?আমাকে হঠাৎ এত মিস করতেছেন কেনো?”
“সব কথা একদিনে বলবো! আস্তে আস্তে জানতে পারবে।”
“আচ্ছা,এমনিতেও কাল রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম।টায়ার্ড লাগছিলো খুব।”
“চলো আমরাও কিছু ছবি তুলি।”
“আচ্ছা।”

বলেই রিক ও কেয়া ছবি তুলতে থাকে।কেয়ার প্রতি রিকের এই এট্রেকশন রিকের মা খুব ভালো করেই খেয়াল করেছেন।ছেলের তার বিয়ের বয়স হতে যাচ্ছে।পঁচিশে পা দিয়েছে।এখন এমনিতেও বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছেন।রিক মাস্টার্সের পাশাপাশি একজন ফ্রিল্যান্সার।মাস্টার্স শেষ হলে বাবার ব্যাবসা সেই দেখবে।তাই ছেলের বিয়ে নিয়ে খুব বেশি টেনশন নেই।কেয়াকে যদি রিক পছন্দ করে থাকে তাহলে কেয়ার বাসায় কথা বলে বিয়ের ব্যাবস্থা করবেন তিনি।

বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে নীরা ঘরে বসে নীরবের সাথে কথা বলতে থাকে।নীরব বোনকে দেখতে থাকে মন দিয়ে।সরাসরি তো দেখতে পারলো না বোনের বিয়ে।
নীরা বলে ওঠে,”ভাইয়া তোমার পরীক্ষা কবে শেষ হবে?”

“এই তো আর দুইটা পরীক্ষা আছে।এরপর সার্টিফিকেট পেলেই চলে আসবো।পরীক্ষা তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো দিয়েছি।দেখা যাক কি হয়!”

“তাড়াতাড়ি চলে এসো আর আমার জন্য অনেক অনেক কসমেটিকস আনবে।”

“ঠিক আছে পাগলী বোন আমার।”

এদের কথার মাঝেই ঘরে দীপান্বিতা আসে।নীরাকে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে আসে।দীপান্বিতা এসে বলে,”কি করছে আমার ভাবী?”

নীরব দীপান্বিতার কন্ঠ শুনতে পেলো।সাথে সাথে নীরাকে বলে,”আমি রাখছি বোন।পড়তে বসতে হবে। হাতে সময় কম,বাই।”
বলেই কল কেটে দেয়।

কল কেটে দিয়ে নীরব যায় ফোনের গ্যালারিতে।কিছু ছবি দেখতে দেখতে বলে,”আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি ভীষন সুখেই আছো।আমার ‘মায়াবন বিহারিনী’।”বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নীরব।

দীপান্বিতা একটু কষ্ট পেলো।আজ পাঁচটি বছর হলো লোকটি জার্মানে গেছে।কোনো খোঁজ খবর নেই তাদের।অথচ এক সময় তাদের কতই প্রণয়ের সম্পর্ক ছিলো।মনের কষ্ট মনেই রেখে দীপান্বিতা বলে,”মা খেতে ডাকছে। আংকেল আন্টি এখনও আছে।আণ্টি থাকতে থাকতে সবাই একসাথে খেতে বসতে চাই।তাই তাড়াতাড়ি এসো।”
বলেই চলে গেলো দীপান্বিতা।দরজার কোনায় এসে চোখ থেকে গড়ে পরা ছোট পানির বিন্দু টুকু মুছতে থাকে।

নীরা খুব বেশি কিছু না বুঝলেও দীপান্বিতার কণ্ঠে মন খারাপের ছাপ স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে।নীরা কিছু বলার আগেই দীপান্বিতা চলে যায়।তাই আর জানতে পারলো না কেনো দীপান্বিতা মন খারাপ করেছে।

রাতের বেলা দ্বীপ ও নীরা ঘুমানোর জন্য ঘরে আসে।দ্বীপ চারপাশ ভালোভাবে পরখ করে।তারপর বলে,”কোথায়?”

চোখ ছোট ছোট করে নীরা বলে,”কে কোথায়?”

“আমাদের বিয়ের আগে পয়দা করা বাচ্চা (মিনি)।”

“ওকে আম্মু আব্বু নিয়ে গেছে। কাল তো ফিরুনিতে যাবো।তাই আজ রাতে ওকে দিয়ে দিয়েছি।”

“আর চারদিন পর তোমার টেস্ট পরীক্ষা।মাথায় আছে তো?”

“বিয়ে করেছি আমি।এখন আমি কারো বউ হয়েছি।সংসারের দায়িত্ব আছে আমার।পড়াশোনা নিয়ে ভাবলে হবে!”

“তোমার বর তোমাকে সংসার করার জন্য পেরা দিচ্ছে না।পড়াশোনা করবে মনোযোগ দিয়ে।আজ ক্লান্ত তাই পড়তে হবে না। কাল থেকে পড়াশোনা শুরু তোমার।আগে তো রাতে দেড় ঘণ্টা পড়াতাম।এখন ছয়ঘণ্টা পড়াবো।”

“এই জন্য বিয়ে করেছি আমি!”
“তা কিসের জন্য বিয়ে করেছো তুমি?”
“মন দিয়ে সংসার করবো বলে।এখন আমি আপনার ছাত্রী না আপনার বউ।”
“তাহলে আসো।”
“কোথায়, আর কেনো?”
“কাছে আসো,সংসার করি।আজ তো বিয়ের দ্বিতীয় রাত।শুরু করি আমাদের সংসার ‘বউ’।”

দ্বীপের ভাব গতি দেখে নীরা আর কিছু বলে না।চুপ করে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে যায়।দ্বীপ ঠোঁট কামড়ে হাসে।লাইট অফ করে সেও ঘুমিয়ে পড়ে।

চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে