#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_৪
#ইশরাত_জাহান
🦋
নীরা নাচতে নাচতে ঘরে এসে কেয়াকে কল দেয়।কেয়া কল রিসিভ করলে বলে,”দোস্ত কাল থেকে কলেজ যাব না।আপাতত কলেজ যেতে না করে দিয়েছে আম্মু।”
“দোস্ত তাহলে আমিও যাব না কলেজে।তুই না গেলে আমি কেনো যাব?”
“আচ্ছা তাহলে আয় আমাদের বাসায়।একসাথে মজা করব।”
“কালকে না দোস্ত। কাল বিকালে একটু বাইরে যাব আমি।পরশুদিন থেকে থাকব তোর সাথে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।এমনিতেও কাল ওই খচ্চর পড়াতে আসবে আমাকে।”
“দোস্ত বিয়ের আগে বরের কাছে পড়তে বসবি। আহ কি রোমান্টিক মোমেন্ট না বল?”
“ধুর,তুই ওই লোকের সাথে রোমান্টিক দেখছিস!কিভাবে বিয়ে ভাঙবো সেটা বল।”
“খুবই সিম্পল। কালকে পড়াতে আসলে পড়াশোনা না করে জ্বালাতে থাক।দেখবি রেগে যাবে। স্যার তো মুডি প্লাস পড়াশোনার প্রতি বেশি সচেতন।তোর মত ডাব্বা খাওয়া আবার যদি দেখে বিয়ের আগেই মাথায় চড়ে বসেছিস তখন নিজে থেকেই বিয়ে ভেঙ্গে দিবে।”
“হ্যা,ঠিক বলেছিস। কাল খুব জ্বালাবো আমি ওই ক্যাডার সাহেবকে।যখন দেখবে আমি বউ হলে তার জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে।নিজে থেকে রাস্তা কেটে চলে যাবে।”
“আচ্ছা দোস্ত বেস্ট অফ লাক।মা ডাকছে খেতে যেতে হবে,বাই।”
“বাই।”
সকালে~~~~~
নীরা কলেজে যায়নি বলে ছাদে উঠেছিলো।দীপান্বিতা এসেছে ঠিক সেই সময়। দীপান্বিতাদের ছাদ থেকে নীরাদের ছাদের দূরত্ব নেই বললেই চলে।ডিগবাজি দিয়ে ওপর ছাদে চলে যাওয়া সম্ভব। দীপান্বিতা নীরাকে দেখে বলে,”হবু ভাবী যে!এত সকালে ছাদে।আমাদের ভাগ্য কতটা ভালো তাইনা বল?পাশাপাশি বাসা থেকে বিয়ে হবে।”
মুখ ফুলিয়ে নীরা বলে,”আপু তুমিও?”
“আমিও কি?”
“ওই ক্যাডার সাহেব আমার শিক্ষক তাকে বিয়ে করা মানায়?”
“কেনো মানাবে না?”
“কেমন দেখা যায়? স্যার আর ছাত্রীর বিয়ে!”
জোরে হেসে দেয় দীপান্বিতা।বলে,”আমার ভাই নাহয় একজন শিক্ষক।তাই বলে কি এখন কাউকে বিয়ে করতে পারবে না?ভাইয়ের জন্য যে পাত্রী দেখতে যাব সে তো কোনো না কোনো কলেজের ছাত্রী হবে।বিউটি দেখে নিশ্চয়ই ভাইকে বিয়ে দিবো না?”
“হুম,বুঝলাম।তুমিও লেগে আছো আমাদের বিয়ে দেওয়ার জন্য।”(মনে মনে বলে নীরা)।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীপান্বিতা বলে,”তোমার সেই খাদ্য বিশেষজ্ঞ ভাইয়ের কি খবর?বিয়েতে আসবে কি?”
“ভাই তো তেমন কথা বলার সময় পায় না।আজ পাঁচ বছর হলো বাইরে।মাসে দুই একবার ছাড়া কথা বলে না।ভাইকে তো তুমি জানো খুব ভালো করে।পরীক্ষার আগে কারো সাথে কোনো কথা বলে না।বিয়েতে আসবে না ভাই। আর কয়দিন পর ওর পরীক্ষা।”
“ওহ আচ্ছা,তাহলে আজ আমি আসি।রেডি থেকো কাল সকালে আমরা শপিং করতে যাবো।”বলেই চলে গেলো দীপান্বিতা।
নীরা বুঝতে পেরেছে দীপান্বিতা কষ্ট পেয়েছে।নীরব ও দীপান্বিতা একে অপরকে ভালোবাসতো।নীরব জার্মান যাওয়ার পরও খোঁজ নিয়েছিলো দীপান্বিতার।কিন্তু এক বছর পর থেকে আর কোনো খোঁজ খবর নেয় না।কেনো এমন করছে নীরব এটা নীরা জানে না।
সন্ধায় দ্বীপ আসার আগে নীরা গান গায়,
“বিয়ের আগে জামাই আসবে আমায় পড়াইতে। আহা কি জীবন আমি পেলাম,তাতেই যায় আমার সময় ভাবিতে ভাবিতে।”
এমন সময় দ্বীপ এসেছে নীরাকে পড়াতে।নীরা ভদ্র মেয়ের মত করে কিছুক্ষণ চুপ ছিলো।হঠাৎ করে নীরা বলে ওঠে,”স্যার।”
“হুম,বল?”
“আপনাকে না এখন আমার স্যার মনে হচ্ছে না।”
“তাহলে কি মনে হচ্ছে?”
“আমার হবু বর।”
“মানে?”
“বুঝতে পারছে না? কাল তো আমাদের মানে আপনার আর আমার বিয়ের কেনাকাটা আছে।তারপর আমাদের মেহেদি রাত।আপনার নামে আমি আমার এই বাম হাতে মেহেদি দিবো।তারপর হবে আমাদের হলুদের অনুষ্ঠান।আপনাকে আর আমাকে জনে জনে এসে হলুদ লাগিয়ে দিবে। আর তার পরের দিন আমি আর আপনি তিন কবুল বলে হয়ে যাবো একে অপরের।”
খুক খুক করে কাশতে থাকে দ্বীপ।নীরা পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।বলে,”এই নিন পানি খান।”
দ্বীপ পানি খেয়ে বলে,”বিয়ের সময় হলে বিয়ে হবে এখন পড়তে বস।”
“আচ্ছা এখন আপনাকে আমি ঠিক কি নজরে দেখবো বলুনতো?আমার কলেজের স্যার নাকি প্রাইভেট স্যার নাকি আমার হবু বর?”
দ্বীপ তাকায় নীরার দিকে।দেখতে পায় নীরা না পড়ার বাহানা করছে।তাই বলে,”আপাতত স্যার ভেবে রেসপেক্ট করো। কাল থেকে নাহয় আমাকে হবু বর ভেবে নিও।”
“কিন্তু স্যার মন তো আমার পড়ার ভিতরে নেই।মন তো আমার এখন বিয়ে নিয়ে পরে আছে।বিয়েতে কি কি কিনবো,কি কি পরবো আর কি কি করবো এসব নিয়ে।”
আর বলতে পারে না নীরা।ঠাস করে ডান গালে খায় এক থাপ্পড়।দ্বীপ এবার রেগে বলে,”সেই ধরে দেখছি বিয়ে বিয়ে করেই যাচ্ছো।তুমি কি মনে কর?আমি জানি না যে তুমি বিয়ে করবে না।শুধু শুধু পড়াশোনা থেকে মনোযোগ সরানোর ধান্দা তাই না?চুপচাপ এখন পড়তে বসো।”
এক থাপ্পড়ে পড়াশোনায় মনোযোগ এসে যায় নীরার।এটা আজ থেকে না সেই সাত মাস থেকে হয়ে আসছে।সাত মাস হতে চললো দ্বীপ তাকে পড়ায়। আর এই সাত মাসে কয়বার যে নীরার গাল লাল হয়েছে তা নীরার কাছে অগণিত।
দ্বীপ নীরাকে পড়ানো শেষ করে চলে গেলো।নীরা বিড়বিড় করে বলে,”খচ্চর বেডা।আমার গাল করে লাল।আবার করবে আমায় বিয়ে।তোকে আমি করাবো কলিজা ভরে বিয়ে।তানাহলে আমার নামও নীরা নয়।”
~~~~~~
আজ নীরা ও দ্বীপ সপরিবারে একসাথে গেছে শপিংমলে।সবাই মিলে শপিং করতে থাকে। কেয়াও আছে নীরার সাথে।
নীরা কেয়ার কানে ফিসফিস করে বলে,”দোস্ত দেখতে দেখতে তো সময় এগিয়ে আসছে।বিয়ে ভাঙার তো কোনো নাম গন্ধ নেই।আজ আবার কেনাকাটা করতে এসেছি।”
“আরে দোস্ত পেরা নিবি না।শুধু চিল কর।এই সুযোগে কিছু ড্রেস তো পাবি।তাছাড়া শপিং করলেই তো আর বিয়ে হয় না।”
“আসলেই ঠিক বলেছিস তুই।এই সুযোগে অনেক কেনাকাটা করতে পারবো।খুব ভালো আইডিয়া।”বলেই নীরা বিয়ের জামাকাপড় বাদ দিয়ে রেগুলার জামা কাপড় চয়েস করতে থাকে।
নীরার এই খামখেয়ালী গুলো সবাই দেখতে থাকে।কিন্তু কেউ কিছু বলে না।সবাই জানে নীরার মত ঘাড় তেরা আর দুটো নেই।দ্বীপের মা নীরাকে কাপড়গুলো কিনে দিতে সাহায্য করে।নীরার মা চেয়ে চেয়ে তামাশা দেখে।শেষে না পেরে নিজেই মেয়ের জন্য বেনারসি কিনে নেয়।
চলবে…?