#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_৩
#ইশরাত_জাহান
🦋
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে কেয়া বাসায় যাচ্ছে।কলেজ ড্রেস পরে আসবে।কেয়া সিড়ি দিয়ে নামার সময় রিকের সঙ্গে ধাক্কা খায়।সিনেমাতে ধাক্কা খেলে নায়ক নায়িকা বিরক্ত হলেও রিক আর কেয়ার যেনো মনের ভিতর ভালোবাসার ঘণ্টা বাজতে থাকে।রিক কেয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগে কেয়া সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায়। আপাতত কথা বলবে না কেয়া।নিজের পিছনে কিছুদিন লাটাইয়ের মত ঘুরাবে।রিক জানতো না কেয়া রাতে এখানে ছিলো।জানলে সে বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে নীরাদের ফ্ল্যাটে আসতো।এখন আফসোস করতে করতে বলে,”যার জন্য কাল সারারাত নিজের বাসায় না থেকে অন্যের বাসায় পাহারা দিয়েছিলাম সে কি না আমার বাসাতেই ছিলো।ভালোবাসার খোজে গিয়েছিলাম আর ভালোবাসা ছিলো আমার নিকটে।বেটার লাক নেক্সট টাইম।”বলেই নিজেকে শান্তনা দিলো।
কলেজে এসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে নীরা ও কেয়া।দ্বীপ কলেজ গেট দিয়ে মাত্র ঢুকছে।ছাত্র ছাত্রীরা তাকে সালাম করে মানবতার সাথে কথা বলে।অনেকে তো আবার দ্বীপের দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়েই আছে।কেয়া নীরাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,”দোস্ত তোর হবু বর গেলো ফিলিংস টা কেমন?”
নীরা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো কেয়ার দিকে।কেয়া অন্য দিকে ফিরে মিটমিট হাসতে থাকে।সবাই যে যার ক্লাসে এসে নির্দিষ্ট বেঞ্চে বসে।
দ্বীপ এসেছে ক্লাসে সকল ছাত্র ছাত্রীরা দাড়িয়ে সম্মান দিলো তাকে।তারপর ক্লাস শুরু করা হলো।ক্লাসের ভিতরে নীরার কোনো মনোযোগ নেই।সে তো কোরিয়ান ড্রামা গুলো নিয়ে ভাবছে। হঠাৎ করে কেয়া নীরাকে খোঁচা দিয়ে বলে,”দোস্ত নিজের হবু বরের সঙ্গে ক্লাস করছিস,ফিলিংসটা কেমন?”
“ওই ছেরি ওই,কিসের হবু বর ও?আমি ওনাকে বিয়ে করবো না।তাই সে আমার হবু বর না।”
নীরা ও কেয়ার কথা বলা দেখতে পায় দ্বীপ।ক্লাসের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি খেয়াল করে।তাই দ্বীপ নীরা ও কেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”স্ট্যান্ড আপ।”
নীরা ও কেয়া উঠে দাড়ালো।দ্বীপ আবার বলে ওঠে,”এটা ক্লাস,তোমাদের মামার বাসা না যে ছুটি কাটাতে এখানে গল্প করবে।বই বের করো।”
“এই যা বই তো আনিনি।এখন তো এই খারূচ আমাদের কান ধরিয়ে রাখবে।কোন দুঃখে যে কেয়ার বাচ্চা কথা বলতে গেলো?”মনে মনে বলে নীরা।
নীরা বই বের করছে না দেখে দ্বীপ বুঝে যায় এরা আজও বই আনেনি।সাথে সাথে দ্বীপ বলে,”বই নিয়ে আসো নাই তাইতো?”
“জী, মানে স্যার ভু”
বাকি কথা বলার আগে দ্বীপ বলে ওঠে,”এখানে আসো।কান ধরে সবার সামনে দাড়িয়ে থাকবে।”
নীরাকে যেতে হয় সবার সামনে।কান ধরে দাড়িয়ে থাকে নীরা।এবার দ্বীপ কেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”হেয় ইউ,তোমাকে কি ইনভিটেশন কার্ড দিতে হবে? তুমি ও ওর মত বই তো নিয়ে আসলে না আবার ক্লাসে গল্প করতে থাকো।তুমিও এখানে এসে কান ধরে দাড়াও।”
কেয়াও কান ধরে দাড়ালো নীরার পাশে।টানা দশ মিনিট কান ধরে দাড়ানোর পর নীরার হাত ব্যাথা অনুভব করে।কানে হাত দেয়া অবস্থায় বলে,”খারুচ কোথাকার।ক্লাসে সবার সামনে কান ধরে দাড় করিয়ে রেখেছে।এ নাকি আবার আমার হবু বর?”
“তুই না বললি বিয়ে করবি না।ইনি তোর হবু বর না।এখন আবার হবু বর বানিয়ে দিলি।”
“বিয়ে করবো না এটা যেমন ঠিক।এখনও বিয়ে ভাঙ্গিনি সে দিক থেকে উনি আমার হবু বর এটাও ঠিক।”বলেই দ্বীপের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কাটলো নীরা।দ্বীপ চশমার আড়াল থেকে দেখেছে।কিন্তু কিছু বলেনি।না দেখার ভান করে ক্লাস শেষ করে।
কলেজে শেষ করে বাসায় এসে নীরা।মিসেস নাজনীন টিভি দেখছেন।নীরা সেখানে যেয়ে বলে,”আমি ওই খারুচ প্রতিবেশীকে বিয়ে করবো না।”
“রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলো নীরা।উনি তোমার হবু স্বামী।তোমার সাথে ছয়দিন পর বিয়ে।”
“কিসের স্বামী হ্যা?পুরো ক্লাসে সবার সামনে কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখে।সে কি না আবার হবু স্বামী?”
“তুমি ছাত্রী হিসেবে যেমন কাজ করবে তেমনি ফল পাবে।তর্ক না করে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেও।সন্ধায় দ্বীপ পড়াতে আসবে।”
“বিয়ের আগে কি না হবু বউকে পড়াবে! এ কেমন বিবাহ?”
“এটা আমি আর দ্বীপ বুঝে নিবো।তুমি তোমার মত পড়াশোনা চালিয়ে যাও।”
মায়ের সাথে কথায় পারবে না দেখে নীরা চলে গেলো ঘরে।গোছল করে খেয়ে দেয়ে একটু মিনির সাথে খেলাধুলা করলো।সন্ধার দিকে দ্বীপ এসেছে পড়াতে।দ্বীপ ও নীরা পড়ার টেবিলে বসে আছে।দ্বীপ বলে,”তোমার তো ম্যাথ এ সমস্যা আছে।বের করো বই।”
নীরা বই এর পৃষ্ঠা বের করতে করতে বলে,”স্যার জীবনে অনেক ম্যাথে সমস্যা দেখেছি।কোনো না কোনো ভাবে সমাধান পেয়ে যাচ্ছি।এই ম্যাথ টি একটু বুঝিয়ে দিবেন?”
“কোন ম্যাথ?”
নীরা বত্রিশ পাটি বের করে বলে,”একটি লোক যখন বিয়ের ছয়দিন আগে তার ছাত্রী ওরফে হবু বউকে পড়াতে আসে।তাহলে ঐ লোক আর তার ছাত্রী বিয়ের প্রস্তুতি কয়দিন আগে থেকে নিবে?
দ্বীপ চোখের চশমা ঠিক করে নেয়।তারপর বলে,”একটি ছাত্রী যদি বিয়ের ছয়দিন আগে তার শিক্ষক ওরফে হবু বরের কাছে কষিয়ে এক থাপ্পর খায়।তাহলে ঐ ছাত্রী কবে থেকে পড়াশোনায় মনোযোগী হবে?”
শুকনো ঢোক গিলে বই বের করলো নীরা।বিয়ে হবে আর ছয়দিন পর।তার আগে তো আবার কেনা কাটা করবে,মেহেন্দি আর গায়ে হলুদ আছে।এদিকে কি না হবু বর হয়ে হবু বউকে পড়াশোনার জন্য শাসন করছে।থাপ্পড়ের হুমকিও দিচ্ছে।মনে মনে নীরা বলে,”এমন বিয়ে করবো না আমি।”
নীরাকে পড়ানো শেষ করে দ্বীপ চলে যায়।নীরা প্ল্যান করতে থাকে কিভাবে বিয়ে ভাঙবে।বাবাকে বলে দেখবে একবার।দৌড় দিয়ে চলে গেলো নীরা মিস্টার রবিনের কাছে।মিস্টার রবিন একটু আগে শোরুম থেকে এসেছেন।নাস্তা করে টিভি দেখছে।নীরা আশেপাশে তাকালো।মিসেস নাজনীন নেই।এই সুযোগে বাবাকে বস করতে হবে।সাথে সাথে বাবার পাশে বসে বাবাকে জড়িয়ে বলে,”ও বাবা,আমি না তোমার আদরের একমাত্র মেয়ে।আমাকে ওই সুগার ড্যাডির সাথে বিয়ে দিতে পারো তুমি?”
“ছিঃ মা এভাবে কাউকে বলতে নেই।দ্বীপ যথেষ্ট ইয়ং এবং হ্যান্ডসাম পারসন।সুগার ড্যাডি তো বলা হয় বাবার বয়সীদের।দ্বীপ তো তোমার বাবার বয়সী না।”
“বাবার বয়সী না হলেও বাবার মত। শিক্ষক হলো পিতা মাতার সমতুল্য।ম্যাম হলে মাতা স্যার হলে পিতা।এদের বিয়ে করলে বলতে হবে নাউযুবিল্লাহ।”
মেয়ের কথায় হেসে দেন মিস্টার রবিন।বলে,”দ্বীপকে তোমার পছন্দ না কেনো?”
“কিভাবে পছন্দ হবে?আজকের দিন বাদ দিলে আর দুইদিন পরেই বিয়ের অনুষ্ঠান।উনি কি না আমাকে এখনও পড়াতে আসছে।আবার কলেজেও শাসন করে।এমন লোককে কে বিয়ে করতে চাইবে?”
“তুমি যেমন বাঁদরের মত লাফালাফি করো তাতে ও ঠিকই কাজ করে।”রান্নাঘর থেকে আসতে আসতে বলে মিসেস নাজনীন।
“থাক না মেয়েটাকে আর বোকো না।কয়দিন পর তো বিয়ে।আপাতত কলেজে যাওয়ার দরকার নেই।”
“তুমি আর নীরব আদর দিয়ে বাঁদর বানিয়েছো।ঠিক আছে কলেজে যেতে হবে না।কালকের দিন টুকু শুধু দ্বীপ এসে পড়িয়ে যাবে।এমনিতেও বিয়ের পরে দুই তিনদিন পড়াশোনা করবে না।”
নীরা খুশিতে নেচে উঠলো।আপাতত কলেজে যাবে না।কি মজা তার।
চলবে…?