#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_২
#ইশরাত_জাহান
🦋
নীরা ঘরে এসে কিছুক্ষণ শোক পালন করে।ঠিক সেই সময় মিনি আসে তার কোলে।মিনিকে আদর করতে করতে নীরা বলে,”ক্যাডার সাহেব আমাকে খালি মারে।কথায় কথায় পড়তে বলে।তুই বল জীবনে কি খালি পড়াশোনা সব?আমাদের কি একটু কম পড়াশোনা করলে সমস্যা আছে?উল্টো আমরা কত মহান কাজ করি।আমরা কম পড়াশোনা করে খারাপ রেজাল্ট করে উল্টো অন্যদের টপ রেজাল্ট করতে সাহায্য করি।আমাদের জন্য কত কত ছাত্র ছাত্রী আজ টপ লেভেলে যাবে।কারণ আমরা লো লেভেলে থাকবো।সেখানে উনি আমাকে পড়ার জন্য খালি শাসন করে।এক আমার আম্মু আরেক হলো ওই ক্যাডার সাহেব।তাকে কি না আবার করতে হবে বিয়ে।”
নীরা একা একা বকতে থাকে।এদিকে তার মিনি মিয়াও মিয়াও করতে থাকে।
এর কিছুক্ষণ পর নীরার ফোনে ভিডিও কল আসে।নীরব দিয়েছে কল।ভাইয়ের কল দেখে বিয়ের কথা ভুলে যায় নীরা।নীরা কল রিসিভ করে।ওপাশ থেকে ভিডিও কলে নীরব বলে,”কেমন আছিস বোন?”
“আমি ভালো আছি,তুমি?”
“তোদের ছাড়া ভালো নেই।সারাদিন ব্যাস্ত থাকতে হয়।ফ্রী সময়ে তোদের মিস করি।”
ইমোশন হয়ে গেলো নীরা।বলে,”তুমি চলে এসো তাড়াতাড়ি ভাই।”
নীরব বোনের সেন্টি খাওয়া দেখে বলে,”এইতো কয়দিন পরেই এক্সাম তারপর নিউট্রিশন স্পেশালিস্ট এর সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারলে বিডিতে নিজের অবস্থান করে ফেলবো।বাংলাদেশে খাদ্য তালিকার যে অবস্থা এতে ওখানে একদিনে লাখ লাখ টাকা কামাতে পারবো।”বলেই হেসে দেয়।
নীরাও ভাইয়ের কথায় তাল মিলিয়ে হাসে।নীরা যাই করুক নীরব সবসময় তার বোনকে সাপোর্ট করে।মিসেস নাজনীন তো নীরবকে এর জন্য অনেক বকা দেন।কিন্তু লাভের লাভ শূন্য।
রাতে খাবার টেবিলে নীরা তার মত খেয়ে কতগুলো কাটা মিনিকে খাইয়ে দেয়।মিসেস নাজনীন মিনিকে পছন্দ করে না।বিড়ালের লোম তার বিরক্ত লাগে।কিন্তু মেয়ে ভালোবাসে এই মিনিকে।তাই আর কিছু বলে না।এর আগেও একটি বিড়াল ছিলো নীরার।অনেক কষ্টে তাড়িয়ে দেয় তিনি।সেই সময় নীরার খুব কান্না কাটি শুরু হয়।কান্না করতে করতে প্রায় জ্বর চলে আসে।তারপর একদিন হঠাৎ এই মিনি আসে তার দুয়ারে।মিসেস নাজনীন যতই বলুক বিড়াল সহ্য হয় না নীরার বার বার মনে হয় তার মা এই মিনিকে এনেছে।কারণ মিনির লোমগুলো খুব সুন্দর ভাবে পরিষ্কার ছিলো।মিনির নখও কাটা যাতে আছর না লাগে।এছাড়াও মিনির গলায় একটি ঘণ্টা আকারে চেনের চিহ্ন আছে।
মিসেস নাজনীন সন্তানদের প্রতি খুব যত্নশীল।সন্তানের জন্য কোনটা বেস্ট হবে তাই ভাবেন।এই যে দ্বীপের মা বাবা খুবই ভালো মনের মানুষ।দ্বীপের মা মিসেস সাবিনা তো সহজ সরল।তাই তো যখনই নীরার জন্য তার কাছে আবদার করলেন তিনি রাজি হলেন।কথাগুলো ভাবছে আর মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে মিসেস নাজনীন। চাইল্ডিশ মন মানসিকতা নীরার।মা যে তার সুখ দেখতে চায় এটা নীরা বুঝে না।উড়তে থাকা বয়স যে এখন তার।ভেবেই চোখের কোনা থেকে পানি মুছলেন।
মিনিকে নিয়ে নীরা ঘরে এসে ঘুমিয়ে গেলো।নীরা ঘুমানোর পর মিসেস নাজনীন এসে নীরার গায়ে কম্বল ঠিক করে দিলেন।দরজা দিয়ে সব কিছুই দেখছিলেন মিস্টার রবিন।
মিসেস নাজনীন ঘরে আসার পর মিস্টার রবিন বলে ,”মেয়েকে নিজের চোখের বাইরে রাখতে পারো না আবার শাসন কর।”
মিসেস নাজনীন হালকা হেসে বলে,”শুধু কি মেয়ে?তোমরা সবাই আমার জীবন।নীরব আছে সেই দূর দেশে ভিডিও কলে দেখি তাকে।মেয়েই তো এখন আমার কাছে থাকে।”
“এত তাড়াতাড়ি নীরার বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে?”
“ওর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।আমিও চাইনি ওকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে।দ্বীপের মায়ের প্রপোজাল পেয়ে প্রথমে রাজি হতে চাইনি। পরে ভাবলাম মেয়ে আমার একদিন বিয়ে দিতেই হবে।দ্বীপ কাছে থাকে ছোট থেকে ওকে চিনে।দ্বীপ অনেক কর্মঠ আবার ধৈর্যশীল।আমাদের মেয়েকে ওই সোজা করতে পারবে।মিসেস সাবিনা আমাদের নীরাকে আগলে রাখবে খুব সুন্দর করে।এদিকে মেয়ে আমার দূরে কোথাও না যেয়ে পাশের বাসায় থাকবে।দ্বীপের সাথে এখন বিয়ে দিলে অন্তত মেয়েকে দেখতে তো পাবো।”
বলেই স্বামীর বক্ষে মাথা রাখলেন মিসেস নাজনীন।মিস্টার রবিন জানেন এখন তার বিবিজান মুখ লুকিয়ে কান্না করবে।প্রকাশ্যে ভালোবাসা ও কান্না কোনোটাই দেখতে পারেন না তিনি।মিসেস নাজনীনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মিস্টার রবিন।
সকালে~~~
নীরাকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ঘুম থেকে ডাকছে কেয়া।নীরা বিরক্ত হয়ে উঠে বসে।ঘুমের ভাব এখনও কাটেনি তার।ঝিমুতে ঝিমুতে বলে,”কি হয়েছে কি?আজ শনিবার কলেজ বন্ধ।বিরক্ত করছিস কেনো?”
কেয়া নীরার হাত ধরে টানতে টানতে বলে,”দোস্ত ওঠ সকাল এগারোটা বাজে আর তোর ঘুম শেষ হয় না।আজ আমরা পার্লারে যাবো।পার্লারের নতুন অফার এসেছে আজ।হেয়ার কেয়ার সহ ফেস ক্লিঞ্জিং।তাড়াতাড়ি রেডি হো।”
পার্লারের কথা শুনে নীরার ঘুম হাওয়া।নীরা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নেয়।তারপর মিসেস নাজনীনকে বলে পার্লারে যায়।নীরা সাজগোজ করতে খুব ভালোবাসে।মিসেস নাজনীন এদিকে মেয়েকে বাধা দেয় না।মেয়ে তার পরীর মত থাকবে তবেই তো তার ভালো লাগা।
পার্লার থেকে ফ্রেশিয়াল ও হেয়ার কেয়ার করে বাসায় এসে নীরা ও কেয়া।আসতে আসতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়।নীরা সোফায় বসে কেয়াকে জিজ্ঞাসা করে,”দোস্ত তুই তো পার্লারে যেতে পছন্দ করিস না।তোর নাকি নেচারাল স্কিন ভালো লাগে।তাহলে আজ কেনো পার্লারে গেলি?”
কেয়া দুষ্টু হেসে বলে,”আণ্টি বলল আজ তোকে দ্বীপ স্যার পুরো পরিবারসহ দেখতে আসবে।তাই তোকে নিয়ে একটু পার্লার থেকে মন ভালো করে নিয়ে আসি।”
নীরা হা হয়ে গেলো যেনো।ধোঁকা দিলো তাকে।শেষমেশ বান্ধবীও এমন হয়ে গেলো।রাগ উঠলো তার।চিল্লিয়ে বলে,”তুই এক্ষনি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবি।বান্ধবী নামে কলঙ্ক তুই।”
“আণ্টি আমাকে ডেকেছে তুই যেতে বলার কে?আমি আন্টির কথাতে এসেছি।”
নীরা চুপ করে বসে আছে।কেয়া নীরার কাছে এসে নীরাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”দোস্ত দেখতে আসবে শুধু আজকে।দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয় না।এত রিয়েক্ট করিস না একদম নরমাল থাক।দ্বীপ স্যার আছে না তোর জন্য।উনি দেখিস নিজেই বিয়ে করতে চাইবে না।”
“তুই শিওর উনি না করে দিব?”
“তোর কি মনে হয় এই বাংলাদেশে সুন্দরী মেয়ে আমরা একা আছি?আমাদের থেকেও সুন্দরী প্লাস ভালো মেধাবী অনেক মেয়ে আছে।দ্বীপ স্যার যেখানে একজন বিসিএস ক্যাডার উচ্চ শিক্ষিত একজন মানুষ আমার মনে হয় না এই বিয়ে উনি করতে চাইবে। আর তুই ওনার সাথে কথা বলার সুযোগ পাবি তো।”
নীরা আশার আলো পেলো কেয়ার কথায়।তাই বেল,”হ্যা ঠিক বলেছিস তুই।উনি নিজেই আমাকে পছন্দ করে না।কেমন রাগ রাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।দেখলেই বোঝা যায় আমাকে তিনি পছন্দ করে না।”
কেয়া মিটিমিটি হাসে আর বলে,”এই তো দোস্ত জাস্ট চিল কর।আয় তোকে শাড়ি পড়িয়ে দেই।”
“আবার শাড়ি কেনো?”
“আণ্টি বলেছে তাই।তুই না করিস না প্লিজ।শাড়ি পড়লেই তো আর বিয়ে হয় না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে দে শাড়ি পরিয়ে।”
নীরাকে শাড়ি পরিয়ে দেয় কেয়া।শাড়ি পরানোর ভিতর কেয়া বলে,”দোস্ত তোদের বাসার ওই সাদা বিল্লি টা কোথায়?”
নীরা মিনিকে দেখিয়ে বলে,”চোখে দেখস না নাকি?ওই যে আমার মিনি।”
‘চ’ শব্দ করে কেয়া বলে,”আরে এটা না।আমি তোদের দোতলার ওই বিলেতি ছেলের কথা বলছি।”
নীরা বুঝতে পারলো কার কথা বলছে কেয়া।
পিঞ্চ মেরে কেয়াকে বলে,”ওও আচ্ছা তুইও ওর খোঁজ নিচ্ছিস তাহলে?”
“আমিও খোঁজ নিচ্ছি মানে।ওই সাদা বিল্লিও কি আমার খোঁজ নেয়?”
“হ্যা,কাল আমাকে বলেছিলো তোর ব্যাপারে।তোর নাম্বার চেয়েছে অবশ্য।আমি দেই নি তখন বলে তোর সাথে আলাদা কথা বলিয়ে দিতে।”
খুশি হয় কেয়া।জিজ্ঞাসা করে,”তুই কি বলেছিস তাকে?”
“আমি হ্যা বুঝিয়েছি।”মন ভাঙ্গার কথা আর বলেনা কেয়াকে। রিককে তো আর ভালো বাসেনি।রিক আর কেয়া যেহেতু দুজন দুজনের উপর লাড্ডু খেয়ে বসে আছে।সে কেনো বাধা হতে যাবে?
দ্বীপ ও তার পুরো পরিবার এসেছে নীরাদের বাসায়।নীরার মা সবকিছু রেডি করেছে সাথে অবশ্য রিকের মাও ছিলেন।
দ্বীপ সোফায় বসে আছে। গায়ে কালো রঙের সুট চোখে চশমা মুখে চাপদারি আর মাথার চুলগুলো স্পাইক করা।দ্বীপ সবসময় এভাবেই পরিপাটি যেনো তাকে দেখতে জেন্টেলম্যান লাগে।কলেজের অনেক মেয়ে ক্রাস খেয়ে বসে আছে তার উপর।নীরার কাছেও ভালো লাগে তাই তো সে দ্বীপকে ক্যাডার সাহেব বলে।কিন্তু ওই যে পড়াশোনা ওটা এসে দেয়াল হয়েছে নীরার মনে।
নীরাকে ঘর থেকে ড্রয়িং রুমে আনে কেয়া।নীরার হাতে শরবতের ট্রে দেওয়া হয়। শাড়ির আচল দিয়ে নীরার মাথায় বধূবেশে রাখে কেয়া।নীরা বেচারি টাল সামলাতে পারে না।ট্রেতে গুনে গুনে দশটি গ্লাস।আবার মাথায় কাপড় দেওয়া আছে।নীরা ফিসফিস করে কেয়াকে বলে,”ওই ছেমরি তুই আমার মাথায় কাপড় দিয়ে দিবি ভালো কথা। ঘরের ভিতর থেকে সেফটিপিন দিয়ে নিয়ে আসতে পারলি না?”
কেয়া বলে,”দোস্ত আমি কি জানতাম মাথায় কাপড় দিতে হবে।আণ্টি এই মাত্র বলে গেলো তাও তোকে ড্রয়িং রুমে আনার পর।”
বলেই নীরাকে নিয়ে গেলো দ্বীপের পরিবারের সামনে।
দ্বীপের পাশে মিস্টার সমুদ্র ও মিসেস সাবিনা বসে আছেন।মিস্টার সমুদ্রের কোলে অভ্র বসে আছে।দীপান্বিতা নীরার কাছে বসেছে।নীরা এসে সবাইকে সালাম দেয়।কিন্তু বিয়ের কথাবার্তা চললে মেয়েরা যে লজ্জা পায় তার ছিটেফোটাও নেই নীরার ভিতর। দ্বীপ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।এখনও তাকায়নি নীরার দিকে।দীপান্বিতা খেয়াল করলো বিষয়টি।তাই দীপান্বিতা বলে,”ভাই একটু তাকাও তোমার হবু বউয়ের দিকে।”
দীপান্বিতার কথায় দ্বীপ তাকায় নীরার দিকে।দেখতে পায় কমলা রঙের তাতের শাড়ি পরিহিতা নারীকে।মুখে মেকআপ এর সৌন্দর্য। বেশ সাভাবিক আছে সে।তাকে যে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে তাও আবার তারই শিক্ষক এতে যেনো তার কোনো রিয়েকশন নেই।দীপান্বিতা দেখলো দ্বীপ নীরাকে পর্যবেক্ষণ করছে।দীপান্বিতা বলে ওঠে,”কেমন লাগছে আমাদের নীরাকে?”
গলা খাকারি দেয় দ্বীপ।এটা কোনো জায়গা হলো প্রশ্ন করার?কিভাবে উত্তর দিবে সে?লজ্জা তো নীরার না তারই লাগছে এবার।শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে খেতে চায় দ্বীপ ।অভ্র মামুর গলা খাকারি দেখে ঠান্ডা লেগেছে ভেবে নেয়।তাই বলে,”মামু এই শীতে তুমি শরবত নিও না।তোমার ঠান্ডা লেগেছে তো।”
ভাগ্নের কথায় আর খেতে পারলো না।রেখে দিলো গ্লাস।
দেখাদেখির মাঝে মিস্টার রবিন বলে ওঠে,”আমরা তো এমনিতেও অনেক কথাবার্তা বলেছি।এবার একটু ছেলেমেয়েদের কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।”
মিসেস নাজনীন চোখ বড়বড় করে তাকালেন মিস্টার রবিনের দিকে।ফিসফিস করে বলে,”তুমি জানোনা তোমার মেয়ে কেমন?ও তো সুযোগ পেলে আজই বিয়ে ভেঙ্গে দিবে।”
শুষ্ক ঢোক গিলে মিস্টার রবিন বলে,”এমনিতেও তো বিয়ে না হওয়া অব্দি দ্বীপ নীরাকে পড়াতে আসবে।তাহলে আজ কি সমস্যা?”
মিসেস নাজনীন কিছু বলতে যাবে তার আগে মিস্টার সমুদ্র বলে ওঠে,”হ্যা হ্যা ওদেরকে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হোক।”
সবার সম্মতিতে দ্বীপ ও নীরাকে নেওয়া হলো নীরার ঘরে।বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে দ্বীপ ও নীরা।কারোর মুখে কোনো কথা নেই।দ্বীপ তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে। আর নীরা সে তো শুনতে চায় দ্বীপ কি বলে।কিন্তু দ্বীপ তো স্ট্যাচু হয়েই আছে তো আছে।
না পেরে বেলকুনিতে বর্ডার দেওয়া ছোট দেওয়ালে হালকা ঝুঁকে কোমর বাঁকিয়ে দ্বীপের দিকে তাকায় নীরা। যাতে করে দ্বীপের নজর এবার তার দিকে আসে ওই চাঁদের দিকে না। হয়েছেও ঠিক তাই মুখের সামনে আসাতে দ্বীপ তাকায় নীরার দিকে কিন্তু কিছু বলে না।নীরা এবারও দ্বীপকে চুপ থাকতে দেখে বলে,”আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি স্যার?আমি তো ফেলটুশ।আমার মত মেয়ে আপনার বউ হলে লোকে বলবে ওই দেখো ফেলটুশ এর বর।ভালো লাগবে শুনতে!পারবেন কি এটা মেনে নিতে?”
নীরার কথার পিঠে দ্বীপ বলে ওঠে,”প্ল্যান কি তোমার?”
কিছু বুঝে ওঠে না নীরা।তাই বলে,”বুঝিনি আমি।”
হাত দুটো পকেট থেকে বের করে বুকের উপর ভাজ করে দ্বীপ বলে,”যেহেতু আমরা দুজনেই মনের মত সঙ্গী পাচ্ছি না তাই জিজ্ঞাসা করলাম।বিয়ে ভাঙ্গার জন্য কোনো প্ল্যান কি আছে?”
চোখ ছোট ছোট করে নীরা বলে,”আমি কেনো বিয়ে ভাঙ্গার প্ল্যান করবো? বিয়ে তো ভাঙবেন আপনি।”
“সম্ভব না আমার দ্বারা।এখন কিছু বলতে গেলেই বয়স নিয়ে খোটা দিচ্ছে।বাসার সবার ভোট এখন তোমার দিকে।মা বাবাকে বলেও লাভ হচ্ছে না।তোমার মত ইচড়ে পাকা মেয়েই পারবে বিয়ে ভাঙতে। যা করার করতে হয় কর এই বিয়ে টা ভাঙ্গার জন্য।বেস্ট অফ লাক,আসছি আমি।”
বলেই চলে গেলো দ্বীপ।হা হয়ে তাকিয়ে আছে নীরা।বিয়ে ভাঙবে না তাহলে!এখন কি করবে?
নীরাকে আবার ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসা হয়।এবার দ্বীপের মা মিসেস সাবিনার পাশে বসানো হয়েছে নীরাকে।মিসেস সাবিনা নীরাকে আংটি পরিয়ে দিচ্ছেন। আংটি পরানোর পর সবাই চলে যায়।বিয়ে এক সপ্তাহ পরে হবে বলে ঠিক করা হয়েছে।
নীরার সাথে আজ কেয়া থাকবে।রাত তো অনেক হয়েছে তাই আর বাসায় গেলো না কেয়া।রিককে দেখতে চেয়েছিলো কিন্তু রিক তো এখানে আসেনি।নীরার দিকে তাকিয়ে দেখে মন খারাপ করে আঙুলের দিকে তাকিয়ে আছে নীরা।কেয়া শান্তনা দিয়ে বলে,”আরে ইয়ার জাস্ট চিল।আংটি পরালেই তো আর বিয়ে হয় না।”
থুতনিতে হাত দিয়ে নীরা বলে,”আর কি কি করলেই বিয়ে হয় না দোস্ত?দুপুর ধরেই তো খালি শুনছি এটা করলে বিয়ে হয় না ওটা করলে বিয়ে হয় না।”
চলবে…?