#লাল_নীল_ঝাড়বাতি(পর্ব:৪)
#নাফিসা_আনজুম
আয়ান চৌধুরীর প্রয়োজন ছিলো তোমাকে। বড্ড বেশি প্রোয়োজন ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতে দেখে ঝুমুরকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। আয়ান দ্রুত নিচে নেমে আসে। ঝুমুর মাত্রই ভেতরে আসছে। তখনি আয়ান নিচে নামে। দেখে ঝুমুর কিচেনের দিকে যাচ্ছে। ঝুমুরকে দেখে এক কাপ কফি চেয়ে আগের দিনের খবরের কাগজটা পরা শুরু করে।
ঝুমুর আয়ানকে কফি দিয়ে সবার জন্য নাস্তা বানায়। কাল ঘুমাতে দেরি হওয়ায় সবার একটু দেরিতেই ঘুম ভাঙ্গে। রজনী এসে দেখে ঝুমুর নাস্তা বানানো প্রায় শেষ,,
এই ঝুম কি করছিস এসব, এতো তাড়াতাড়ি উঠতে গেলি কেন।
আরে আপু সমস্যা নেই, আমার ঘুম আসছিলো না তাই উঠে পরেছি।
আরে শালীকা যে, বিয়ে হয়ে আসতে না আসতেই দায়িত্ব পালন শুরু করেছো দেখি,কথাটা বলতে বলতে ফাহিম ও নিচে আসলো। ওনার আরো দুইটা মামাতো বোন উঠেছে। হটাৎ সোফায় বসে থাকা ওনাকে দেখতে পেয়ে সবাই চোখ টেপাটিপি করে হাসছে। আমি ওদের মতিগতি বুঝতে পারছি না এমন কেনো করছে,,
আপু এসে ফিসফিস করে বলতে লাগলো, এই ঝুম এটা কি হলো বলতো,
কি ,,
আয়ান ভাইয়া তো কখনো নিচে এসে কফি খায় না। মানে এই এতো সকালে তো কখনো নিচেই আসে না। তাহলে আজ,, ব্যাপার কি হুম।
ব্যাপার ওনাকে গিয়েই জিজ্ঞেস কর না। বলে ওদের কাছ থেকে সরে আসলাম। আর ওরা সবাই হেসে উঠল।
আমি রুমে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই উনিও রুমে ঢুকলো।
অফিস যাবো,,
কথাটা বলেই টাওয়াল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরলো। আমি আবার নিচে গেলাম। ওনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসলাম। একটু পর উনি গোসল করে বের হলেন, শুধুমাত্র টাওয়াল পরে,
নাভির একটু নিচে টাওয়াল, ফর্সা বুকে হালকা কালো লোম। গলার একটু নিচে দুইটা লাল তিল, চুল থেকে টপ টপ করে পানি পরছে, গোলাপি ঠোঁট গুলো ভিজে আছে ইচ্ছে করছে ঠোঁট গুলো একবার ছুঁয়ে দেই। একটা ছেলে মানুষ এতোটা সুন্দর হয় এনাকে না দেখলে বুঝতাম না। ওনাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ভাবনার রাজ্যে ঢুকে পরেছি তখনি উনি জোড়ে ডেকে উঠলো,,
এই মেয়ে কখন থেকে ডাকছি হুমম,এইভাবে হা করে ঠোঁটে দিকে তাকিয়ে আছো কেনো। কি..স টিস করতে চাচ্ছিলে নাকি,,
আ,আম আসলে,,,
আমতা আমতা করছো কেনো,
আপনার ঠোঁটগুলো আসলেই অনেক সুন্দর, মন চাচ্ছিলো ছুঁয়ে দেই কিন্তু আপনি কি না কি মনে করেন তাই করলাম না। বলেই এক দৌড়ে নিচে আসলাম।
পাগলি একটা,,
,,,
ত্রিশ মিনিট হবে উনি বেরিয়ে গেছে, আমি বাড়িতে কথা বললাম। চাচা, চাচি মামা,মামি সহ কাছের কিছু আত্নীয় স্বজন আসবে আজকে এই বাড়িতে। আসলে একদিনের দাওয়াতে নিজের মানুষ ছাড়া তো কেউ আসবে না। হটাৎ করে বিয়ে না হলেও আমার বিয়েতে তেমন বড় অনুষ্ঠান করতো না। কারন আপুর বিয়েতে অনেক বড় অনুষ্ঠান করে আব্বু অনেকটাই গ্যাপে পরছিলো। তাই আমিও বলছিলাম আমার বিয়ে খুব সাদামাটা ভাবেই করবো। আব্বুর ছোটখাটো ব্যাবসায় আমাদের দিন ভালো কাটলেও একবারে অনেক বড় অনুষ্ঠান আমাদের জন্য না। আপুর বিয়েতে করা লাগছে কারন আপু বড় মেয়ে ছিলো আর আপুর শশুর শাশুড়ি বলছিলো আমাদের বাড়ির ছেলের বিয়ে অনুষ্ঠান না করলেই নয়। নয়তো আমাদের আত্নীয় স্বজনদের কাছে নত হতে হবে। যদিও ফাহিম ভাইয়া আলাদা ভাবে কিছুটা সাহায্য করতে চেয়েছিলো কিন্তু আব্বু নেয় নি।
এর মাঝে নতুন বউ দেখতে অনেকেই এসেছে কিন্তু আমার হাত, কান একদম খালি। বয়স্ক মহিলারা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করছে। আমার শাশুড়ি এসে বললো,,
বড় বউ মা আমার ঘরে একটু আসোতো, আর একটু জোরে আপুকে ডেকে বললো ছোট বউ সবাইকে নাস্তা দাও, আর ওনাদের উদ্দেশ্যে বললো আপনারা একটু বসুন ভাবি আমরা এক্ষুনি আসছি।
তারপর আমাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে একটা গয়নার বাক্স দিয়ে বললো বউমা এসব পরে নাও। আর প্রথমদিকে কমপক্ষে ছয়মাস পর্যন্ত সবসময় এসব পরে থাকবা। কালকেই দিতাম বাড়িতে এসে অনেকক্ষন বসে ছিলাম কিন্তু তোমরা আসছো না দেখে ঘুমিয়ে পরেছি। আজকে খালি হাত,কান গলায় যদি ওনারা দেখে যেতো তাহলে সারা পাড়ায় বলে বেড়াতো চৌধুরী বাড়ির বড় বউকে স্বর্ন ছাড়াই দেখে আসলাম। তোমার বাবা মা কেমন নির্লজ্জ বলো তো তোমাকে কিচ্ছু দিলো না।
ওনার শেষ কথাটা শুনে চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে। অন্য সময় হলে তো অনেক কথা শুনিয়ে দিতাম, কারন আমার বাবা মা কে নিয়ে কোনো কথা আমার সহ্য হয় না। আমি তো এতো দিন ভেবে আসছি আপু হয়তো খুব সুখেই আছে কিন্তু বড়লোকদের মধ্যে এতো নিচু মনের মানুষ ইনি দেখে বোঝায় যায় না। কোনো কিছুর নাকি অভাব নেই তাহলে বাবার বাড়ি থেকে কি দিলো আর না দিলো এতে এভাবে কেনো বললো। সবার সামনে নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যেনো খুব মিশুক আর ভালো মনের মানুষ।
উনি আবারো ধমক দিয়ে বলে উঠলো, তাড়াতাড়ি এগুলা পরে ওনাদের সামনে যাও নয়তো কেলেঙ্কারি করে ফেলবে। আমি চোখ মুছতেই দেখতে পেলাম আড়াল থেকে একটা ছায়া সরে গেলো। আমি আসতে আসতে চুরি,কানের ঝুমকা, গলার হার সব পরে বাহিরে গেলাম। সবাই দেখে বেশ প্রশংসা করলো। আমার শাশুড়িও ছিলো ওখানে,, ওনার উদ্দেশ্যে কয়েকজন বললো,
সত্যি ভাবি আপনার দুই বউ মাশআল্লাহ, ছেলেগুলাও যেমন বউ ও তেমন বেশ মানিয়ে। এখন শুধু একটা বাচ্চা হলেই সংসারটা পূর্ণ হবে। তা ছোট ছেলের বিয়ে তো প্রায় বছর হলো সুখবর কবে দিবেন।
আপু পাশেই ছিলো, শাশুড়িমা আপুর দিকে চেয়ে বললো সময় হলেই হবে, এখনকার ছেলেমেয়েরা তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিতে চায় না ভাবি কিছুদিন গেলে নেবে।
আমি শাশুড়ি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, সবার সামনে কত্তো ভালো দেখায় আর ভেতরে ভেতরে যেনো না*গিন।আমি চাইলেই তখন মুখের ওপর অনেক কিছু বলতে পারতাম কিন্তু কাল রাতে আয়ান চৌধুরী নিষেধ করেছে কখনো যেনো আমার কারনে ওনার মা কষ্ট না পায়। আর তার ওপর আমি নতুন বউ এজন্য সব সহ্য করে গেছি। বিয়ের আগে আমার কানে স্বর্নের জিনিস ছিলো কিন্তু কালকে সাজার সময় বাড়িতেই খুলে রাখছি শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে জুয়েলারি পরছিলাম জন্য। গলায় একটা সিম্পল লকেট দেয়া চেইন ছিলো সেটাও খুলে রাখছি।
সবাই চলে যাওয়ার পর রুমে এসে একা একা বসে আছি। খারাপ লাগতেছে অনেক, আপুকে তো স্বর্নের শুধু চুরি আর কানের ঝুমকা দিয়েছে কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর কারন একবারেই ওতোকিছু করা সম্ভব ছিলো না। তাহলে কি আপুকেও কথা শুনতে হয়েছিলো। এমন সময় আপু রুমে এসে দড়জা লাগিয়ে দেয়। আমার কাছে এসে গালে আলতো চাপ দিয়ে বলে, মন খারাপ করিস না ঝুম শশুর বাড়িতে একটু আধটু কথা হজম করতে হয়। শুধু শাশুড়িমা এমন তাছাড়া বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ ভালো। আয়ান ভাইয়া বেশি ভালো। আমি আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, মনে হচ্ছে আপুও কান্না করেছে,
আমি আড়াল থেকে শুনেছি মা তোকে কি কি বলেছে। প্রথম দিকে আমাকেও বলছিলো কিন্তু তোর ফাহিম ভাইয়া আমাকে আলাদা করে জিনিস বানিয়ে দিছিলো উনি ভেবেছে সেগুলো আমার বাবার বাড়ি থেকে দিছে তাই আর কিছু বলে নি।আর একটা কথা বনু, তোর চঞ্চলতা দেখে আমার শাশুড়ি আগেও আমাকে বলতো যে তোমার বোন এমন কেনো, স্থির থাকতে পারে না নাকি। আমি তোকে তখন কিছু বলি নাই কারন তুই তো এখানে বেশি থাকিস নি, আমাদের বাড়িতে তো কেউ কিছু বলে না। তোকে বললে হয়তো তুই আসতে চাইতি না আমার কাছে, কিন্তু এখন তোকে একটু চঞ্চলতা কমাতে হবে। একদম না একটু, মানে শাশুড়ির চোখে যাতে ধরা না পরিস সেটুকু। প্লিজ সোনা বোন আমার মানিয়ে নিস। বাড়ির বড় বউ বলে কথা, এইসব বলে একটা হাঁসি দিয়ে আপু চলে গেলো।
ঐ লোকটার ওপর খুব রাগ হচ্ছে এখন,ফাহিম ভাইয়া পড়াশুনা করা অবস্থায় আপুকে স্বর্নের জিনিস বানিয়ে দিয়েছে যাতে ওনার মা কিছু বলতে না পারে আর ইনি বুড়ো হয়ে গেছে,এতো বড় বিজনেস ম্যান অথচ বউকে স্বর্ন দেয় নি। কেনো উনি কি জানে না ওনার মা কেমন। আর আমাদের পরিবার সম্পর্কেও তো ওনার ধারনা আছে, হটাৎ বিয়ে না করলে হয়তো আব্বু কিছু দিতো হটাৎ বিয়ে করার কারনে সেটাও হয় নি। আজকে আসুক ওনার একদিন কি আমার যে কয়দিন লাগে,,
চলবে,,