লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব-০২

0
761

#লাল_নীল_ঝাড়বাতি(পর্ব:২)
#নাফিসা_আনজুম

বিশ্বাস কর ওনার কথায় আমি এত্তো খুশি হয়েছি তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।
এবার ঝটপট রেডি হয়ে নে তো। আর জানিস তো আয়ান ভাইয়া যখন বলেছে তোকে বিয়ে করবে। তখন করেই ছাড়বে।

আপু প্লীজ, তোরা এভাবে আমাকে জোড় করতে পারিস না।

কিহ, দেখ ঝুম এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমরা তোকে মোটেও জোড় করছি না। তুই নিজেও কিছুদিন আগে আমাকে বলেছিস যে আয়ান ভাইয়াকে তোর ভালো লাগে। শুধু একটু গম্ভীর কিন্তু মানিয়ে নেওয়া যাবে।
বল বলছিস কি না,,

হ্যা বলেছিলাম, কিন্তু সত্যি সত্যি বিয়ে করবো বলিনি তো

বিয়ে আবার মিথ্যে মিথ্যে করে নাকি, অনেক না*টক করেছিস আর না। চল রেডি করে দেই।

আপু সাজিয়ে দিচ্ছে আর আমি বসে বসে ভাবছি,এই এত্তো সুন্দর ছেলেটা আমার জামাই হবে। আপুর বিয়ের দিন প্রথম ওনাকে দেখে আমি সহ আমার বান্ধবীগষ্টি ফিদা হয়ে গেছিলাম। ওনার ফর্সা মুখে কালো চাপ দাড়ি, গোলাপি ঠোঁট আর গম্ভীরর্যতা দেখেই ওনার প্রেমে পরে গেছি। কিন্তু কখনো বলার সাহস পাই নি। ওনাকে দেখেও ভয় লাগতো আর অন্যদিকে উনি আমার বড় বোনের ভাসুর, আমার জন্য যদি আবার কোনো ঝামেলা হয়। এই ভয়ে কখনো বলা হয় নি। কিন্তু আজকে হঠাৎ এসব একদম স্বপ্নের মতো লাগছে। সাথে একরাশ ভালোলাগা। ইশশশ এত্তো কিউট জামাই হবে আমার ভাবলেই নাগিন ডান্স দিতে ইচ্ছা করছে কিন্তু নাচা যাবে না, এমন ভাব করতে হবে যেনো আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে সব হচ্ছে। কারন আমি বুদ্ধি হওয়ার বয়স থেকেই বলে আসছি, আমার জামাই হবে একদম আমার কার্বন কপি, আর বয়স ও সেম। কিন্তু এখন তেমন কিচ্ছু হচ্ছে না তাই আমি মন খারাপের ভান ধরে থাকবো।
আপুর কথায় ভাবনায় ছেদ পড়লো,,

বাহ ঝুম তোকে এই শাড়িটা যা মানিয়েছে, আয়ান ভাইয়ার পছন্দ আছে বলতে হবে। আমার বোন কি কম সুন্দরি নাকি।

আপুর কথা শুনে লজ্জা লাগতেছে,

হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। আয়নায় তাকা।

আয়নায় তাকালাম,
লাল খয়েরির সাথে গোল্ডেন কালার। সাথে ম্যাচিং পাথরের জুয়েলারি আর ডিব সাজ। আপু পারেও বটে। মনে হচ্ছে পার্লার থেকে সেজেছি। এর মধ্যে বাহির থেকে বেশ কয়েকবার ডাক পরেছে, তাই আপু তাড়া দিলো তারাতাড়ি বের হওয়ার জন্য। আপু দড়জা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে অনেকেই ঘরে ঢুকলো। আমি তো অবাক, এতো মানুষ এসেছে বাড়িতে বুঝতেই পারি নি। মামা মামি চাচা চাচী সহ আরো অনেকেই এসেছে।

একটু পর বিয়ে পরানো হবে, আমি আর উনি সামনাসামনি বসে আছি, আমি বসার পর একবারো মাথা তুলে সামনে তাকাই নি। সবাই তো রিতিমতো কানাঘুষা শুরু করছে যে আমাকে হয়তো মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে নয়তো আমি এতো চুপচাপ কেনো, আমার নাকি চুপচাপ মানায় না। কিন্তু আমি কিভাবে বোঝাবো যে আমার লজ্জা লাগছে, ভীষণ লজ্জা লাগতেছে আমার।

হটাৎ উনি সবার মাঝে বলে উঠলো, ঝুমুর তোমার কি ইচ্ছে নেই এ বিয়েতে। না থাকলে বলো তবুও এইভাবে চুপচাপ বসে সবার মনে দ্বিধাদন্দ রেখো না। তোমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করবো না আমি তোমায়।

আমি এইবার মুখ তুলে তাকালাম, মানুষটা আমার সাথে ম্যাচ রেখে শেরওয়ানি পরেছে,কি অপূর্ব লাগছে দেখতে। নিখুঁতভাবে সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি যেনো আবারো প্রেমে পরে গেলাম ঐ চাহনির। মন চাচ্ছে চোখদুটোতে একবার ছুঁয়ে দেই। কিন্তু এখন তো সেটা সম্ভব না তাই অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত রাখলাম। শুনেছি ছেলে মানুষ বউকে দেখে নিজেকে সংযত রাখে কিন্তু আমি মেয়ে হয়ে রাখছি তাই নিজেকে খুব নির্লজ্জ মনে হচ্ছে।
যাই হোক একা একা তখন তো খুব আমাকে থ্রেট দিয়ে আসলো কিন্তু এখন সবার সামনে এতো সাধু বান্দা কেনো সাজতেছে লোকটা, আমি না চাইলে নাকি বিয়ে করবে না। এখন না বললে যদি সত্যি সত্যি বিয়ে না করে তাহলে আমি এতো কিউট জামাই কোথায় পাবো তাই একটু হেঁসে বললাম যে আমরা তো প্রেম করছি বিয়ে করার জন্যই তাহলে আমার মত থাকবে না কেনো।

আমার কথায় উপস্থিত সবাই চুপ হয়ে গেলো,ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি কেমন রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মনে হয় এক্ষুনি খেয়ে ফেলবে। আমার কি দোষ ভাই, আমার সামনে এতো সাধু সাজতে গেলে একটু আধটু বাঁশ খেতেই হবে।

বিয়ে পরানো শেষ হলে আপু আমাকে সাইডে নিয়ে গিয়ে বললো,
ঝুম সত্যি কি তোর আর আয়ান ভাইয়ার কোনো সম্পর্ক ছিলো।

আপু তোর আয়ান ভাই কি প্রেম করার মতো মানুষ নাকি, উনাকে দেখলেই তো মনে হয় আনরোমান্টিক মানুষ ওনাকে দিয়ে প্রেম ভালোবাসা আশা করিস কোন দুঃখে।

তাহলে তুই সবার সামনে বললি,

আর এ আমি তো এমনি বলেছি,

হায় আল্লাহ, তুই ওনাকে আনরোমান্টিক মনে করিস, আমার তো মনে হয় ফাহিমের থেকেও ভাইয়া বেশি রোমান্টিক মাঝে মাঝে ওনার কথা শুনে আমার তাই মনে হয়। তবে উনি সবার মতো না যে সবসময় আলগা পিরিত দেখাবে, সারাক্ষণ বউয়ের পেছন পেছন ঘুরবে, উনি সব ভালোবাসা কাজেই করে দেখাবে, শেষের কথাগুলা ফাহিম ভাইকে দেখেই বললো আপু।

ফাহিম ভাই এসে বলতেছে,
কিহ আমি আলগা পিরিত দেখাই, সবসময় একটু কাছে থাকি জন্য এইভাবে আমার ভালোবাসাকে অপমান করছো।

আরে না আমি অপমান কই করলাম আমি তো আয়ান ভাইয়ার কথা বললাম।(আপু)

হ্যা বুঝি তো,কিন্তু শালীকা তো এখন বড় ভাবি হয়ে গেছে,ওর সামনে বেশি কিছু বললাম না( ফাহিম)

না না জিজু, আমি শালী শালিইই থাকবো, ভাবি হবো না। শালী দুলাভাইয়ের কাছে আবদার করতে পারবে কিন্তু ভাবি তো পারবে না।

শালী আমার চালাক আছে,

দেখতে হবে না শালিটা কার।

এরপর খাওয়াদাওয়া শেষ করে বিয়ে বিদায়ের পালা। আমি প্রথমে যেতে চাচ্ছিলাম না কিন্তু ওনার একটা ধমক খেয়ে আর কথা বাড়াই নি। উনি আমার একটা হাত ধরে আছে, আমি ওনেকবার খোলার চেষ্টা করছি কিন্তু উনি ছাড়ছেই না।বারবার বলতেছি একটু ছাড়েন দরকার আছে না উনি ছাড়ছেই না উল্টো আমাকেই ধমক দিয়ে বলে যে এতো নড়াচড়া করে লাভ নাই আমি ছাড়বো না। বাধ্য হয়ে বললায় প্লিজ ছাড়েন আমি বাথরুমে যাবো।

পাঁচ মিনিট সময় দিলাম, এর মধ্যেই আসবা,এই বলে হাত ছাড়লো।

আমি বললাম পাঁচ মিনিট না ছাই, পাক্কা ত্রিশ মিনিট পর এসে দেখি আপু দুলাভাই আর উনি সোফায় বসে আছে। মানুষ জন ও কমে গেছে। এগারোটা পার হয়েছে সবাই হয়তো চলে গেছে। আমি যেতেই উনি উঠে আবার আমার হাত ধরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে আসলেন।

কি আশ্চর্য, আমার বিয়ে হলো, বিদায় হলো আমার কান্না পাচ্ছে না কেনো। এতো চেষ্টা করতেছি কান্না করার তবুও হচ্ছে না। আমি হয়তো এমন একজন মেয়ে যার বিয়ে প্রেম করেও হয় নি তবুও কান্না করি নি।
যাই হোক ঐরকমেই চলে আসলাম শশুর বাড়িতে। এই বাড়িও তো দেখি একদম ফাঁকা। এমনিতেও আশেপাশে কোনো বাড়ি নেই, তিনতলা একটা বাড়ি,চারপাশে #লাল_নীল_ঝাড়বাতি জ্বলছে বাড়িটা যেনো অপরূপ লাগতেছে। আমি গাড়ি থেকে নামতেই উনি আমার হাত ধরলো, ঐদিকে আপু আর ফাহিম ভাই। ওরা একটু সামনে এগোতেই মানুষটা এমন একটা কান্ড করে বসলো যে লজ্জায় পরে গেলাম।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে