লজ্জাবতী পর্ব-১০

0
499

#লজ্জাবতী
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব-১০

রিধীকা চোখের জল মুছে মায়ের মুখোমুখি দাঁড়াল। মাথার চুল এলোমেলো। শাড়ির আঁচল মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। রিধীকা আচমকা মায়ের হাতখানা চেপে ধরে হিম শীতল কণ্ঠে বলল,
-‘আমার সংসারটা ভেঙে দিয়ে এবার শান্তি হয়েছে মা তোমার? এখন চুপ করে আছো কেন মা? বলো…? রিধীকার চিৎকার শুনে রেণুবালা কেঁপে উঠল। তিনিও কম যান না। হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে, দ্বিগুণ স্বরে চেঁচিয়ে বলল,
-‘আমি তোর সংসার ভাঙব কোন দুঃখে? তুই নিজের দোষে সংসার খুঁড়িয়েছিস মুখপুরী। স্বামীর মন জুগিয়ে চলতে পারিস না?
-‘বিয়ের পর থেকে সারাক্ষণ তুমি আমাকে বুদ্ধি দিতে কীভাবে স্বামীর মন পেতে হবে। কীভাবে আমার বয়স্ক বিধবা শাশুড়ীর সাথে টক্কর দিতে হবে। কীভাবে রান্নার সময় ভাল ভাল খাবার গুলো লুকিয়ে ফেলতে হবে। পরে ঘরের দরজা বন্ধ করে চুপিচুপি খেতে হবে। কীভাবে স্বামীর কানে তার মায়ের নামে বিষ ঢেলে ঢেলে তার স্বচ্ছ মনটা অস্বচ্ছতায় ভরিয়ে দিতে হবে। কীভাবে সামান্য বিষয় নিয়ে সংসারে অ’শান্তি করতে হবে। সবই তো তোমার শিখানো মা। তারপরও আমি বিয়ের ছয়মাস না ঘুরতেই সংসারটা কেন করতে পারলাম না মা? ওই ঘৃণ্য কাজটা তুমি আমাকে কেন করতে বললে? শুধুমাত্র তোমার কূটবুদ্ধি শুনে আমার শাশুড়ীর স্নানের জায়গায় শ্যাম্পু ঢেলে রেখেছিলাম। ওই বুড়ো মানুষটা আছাড় খেয়ে কোমড় ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি মা। পা দুটোরও যাতা অবস্থা। কী জানি আর কোনদিন হাঁটতে পারবে না কী! আমার খুব অনুশোচনা হচ্ছে। মানুষটা এতটাও খারাপ ছিল না মা। তুমি শুধু শুধু তার নামে আমার কাছে বদনাম করতে। আমি যদি কখনো মন খারাপ করে ফোনে তোমাকে তার ব্যপারে তিল পরিমাণ বলতাম। তুমি তাল বানিয়ে ফেলতে। তার নামে একগাদা বিষ ঢালতে আমার কানে। আসলে তুমি নিজে খারাপ, দজ্জাল মহিলা। সারাক্ষণ বৌদিমণির সাথে খিটমিট করতে। তাই ভাবতে তোমার মতো সবাই খারাপ। আমি আর জীবনেও তোমাদের জামাইয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বড় গলায় দুটো কথা বলতে পারব না। চোখে চোখ রাখতে পারব না। হয়ত সে আমাকে কোনদিন আর ফিরিয়ে নিতেই আসবে না। কেন আমার সংসারে নাক গলাতে, দিনের পর দিন মা তুমি? আমিই বা কেমন পাগল। অন্যায় হচ্ছে জেনেও তোমার প্রতিটা কথা বেদবাক্য মনে করে মেনে নিয়েছি। আমি যদি সংসার না করতে পারি। তবে মনে রেখ, তোমার সংসারেও আমি আগুন লাগিয়ে দেব।
কথাগুলো বলেই দৌঁড়ে গিয়ে টেবিলের সমস্ত থালাবাসন ফেলে দিল রিধীকা। তারপর কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে চলে গেল, অভাগী মেয়েটা।

ভোররাতে অনুপমরা বাসায় পৌঁছে গেল। মাধু ঘুমে ঢুলুঢুলু করছিল। অনুপম চাবি দিয়ে তালা খুলে বলল,
-‘এক মিনিট তুমি একটু দাঁড়াও মাধুসোনা? আমি আসছি। অনুপম ব্যাচেলর বাসায় ঢুকে গেল। তিনজন ছাত্র আর দুইজন চাকুরীজীবি ছেলে মিলে তিনতলায় দুইরুম নিয়ে ভাড়া থাকে অনুপমরা। অনুপম প্রদীপ জ্বেলে নিয়ে দরজায় এলো। প্রদীপের আলোতে মাধুর মায়াবী মুখ দেখে, মাথায় চুমু খেয়ে বলল,
-‘আমার লক্ষ্মীবউ। এই প্রথম আমার গৃহে প্রবেশ করলে। একটু বরণ না করলে হয়? মাধু লজ্জা পেল। অনুপমের হাত ধরে ঘরে প্রবেশ করল। বাড়িওয়ালা আন্টিকে খবর দেওয়া হয়েছে। তিনি খুব বিনয়ী। খবর পেয়ে ছুটে এলেন। মাধুকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। মুখে হাত রেখে, চুমু খেয়ে বললেন,
-‘ইশ, কী লক্ষ্মীমন্ত বউ।
ততক্ষণে সবাই জেগে গেছে। মাধুর সাথে কুশলাদি করছে। আন্টি, অনুপমকে ডেকে বলল,
-‘এভাবে তো বউ নিয়ে থাকতে পারবা না। দোতলার রুম খালি হয়েছে। বউ নিয়ে উঠে যাও। যতক্ষণ থাকার মতো জিনিসপত্র না কেনা হয়। বৌমা বরং আমার সাথে থাকবে। কেমন?
অনুপম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সত্যিই কারো জন্য কিছুই ঠেকে থাকে না। সৃষ্টিকর্তা একটা না একটা ব্যবস্থা ঠিকই করে দেন।
সকালে অনুপম অফিসে চলে গেল। ছুটি নিয়ে আসবাবপত্রর দোকানে ঢুকল। একটা খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, সহ প্রয়োজনীয় অনেককিছু কিনে ছোট গাড়ি ভরে বাসায় নিয়ে এলো। দুই তিনদিন সময় লাগিয়ে মাধুর নতুন সংসার একটু একটু করে নিজের হাতে বেশ উচ্ছ্বাস নিয়ে গোছাল মাধু।
ছুটির দিন ভোরে উঠে, অনুপম এক গাদা বাজার করে নিয়ে এলো। আজ নিজের সংসারে প্রথম রান্না করবে মাধু। এই তিনদিন বাড়িওয়ালা আন্টি নিয়ম করে খাবার দিয়ে যেত। আজ এক ফাঁকে মাধুও তাদের দুপুরে খাওয়ার জন্য নেমন্তন্ন করে এসেছে। অনুপম, মাধুর হাতে হাতে সবজি, মাছ, মাংস কেটে বেছে দিল। মাধু কোমড়ে আঁচল গুঁজে মনের সুখে রান্না করছে। এই রকম একটা সংসারের স্বপ্ন প্রতিটা বাঙালী মেয়েই দেখে। কেউ খুব দ্রুত পায়। কেউবা দেরিতে পায়।
অনুপম দ্রুত হাতে টেবিল গুছিয়ে ফেলল। সেই সকাল থেকে মেয়েটা এত পদ রাঁধতে রাঁধতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। অনুপম বকে,ধমকে মাধুকে রান্না ঘর থেকে ঠেলে পাঠাল। বলল,
-‘বিশ্রাম নিয়ে স্নান সেরে নাও। যা রেঁধেছ এই অনেক। এত খাবার কে খাবে? মাধু হাসিমুখে ঘরে চলে গেল। নতুন বাসায় এসে, অনুপমের আশেপাশে থাকতে মাধুর খুব ভাল লাগে। মনটা আনন্দে ভরে যায়।এত সুখও মাধুর ভাগ্যে লেখা ছিল বুঝি?

আংকেল, আন্টির সব গুলো ছেলেমেয়ে প্রবাসী। তারা শুধু দুজন কাজের লোক নিয়ে এক ইউনিটে থাকে। আর সবগুলো ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া। ছেলেমেয়েরা তাদের প্রায়ই নিয়ে যেতে চায়। তবে তারা শেকড় ছেড়ে যাবে না। জীবনের অন্তীম সময়ে, বুড়ো, বুড়ির একসাথে দেশেই কাটিয়ে
দেওয়ার ইচ্ছে। দুপুরে তারা দুজন খেতে এসে মাধুর রান্নার খুব প্রশংসা করল। নিজের রান্নার প্রশংসা শুনতে কার না ভাল লাগে? মাধুর মনটাও আনন্দে ভরে গেল। তারা খেয়েদেয়ে চলে যেতেই অনুপম, মাধুকে নিয়ে খেতে বসল। বড় কাতলা মাছের মাথাটা মাধুর পাতে তুলে দিল। অতি সুখে মাধুর চোখের কোণে জল জমেছে। এত বড় মাথাটা দুজন ভাগাভাগি করে খেলো। মুরগীর দুটো রান দুজন খুব তৃপ্তি করে খেলো।
রাতে, মাধুর চোখদুটো চেপে ধরে অনুপম শোবার ঘরে নিয়ে গেল। চোখের উপর থেকে আস্তে করে হাতটা সরাতেই মাধু অবাক বিস্ময়ে মুখে হাত দিল। অনুপম রীতিমতো ফুল, মোমবাতি, বেলুন দিয়ে বাসরঘর সাজিয়েছে। মাধু, অনুপমের বুকে মুখ লুকাল। অনুপম নীচু কণ্ঠে দুষ্টুমি করে বলল,
-‘ দুপুরে নতুন বউয়ের হাতের খাবার খেলাম। রাতে ফুলসজ্জা করব না?
মাধু, অনুপমের বুকে মৃদু কিল মেরে বলল,
-‘ধেৎ..
অনুপম হাঁটু মুড়ে মাধুর সামনে বসল। মাধুর পেটের উপর কান পেতে, হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
-‘কী অবস্থা আমার নতুন মায়ের?
মাধু বলল,
-‘ইশ, মেয়ে হবে না। আমার একদম আপনার মতো ছেলে হবে দেইখেন!
অনুপম, মাধুর নাক চেপে ধরে বলল,
-‘না আমার কণ্যা হবে।
-‘সে দেখা যাবেক্ষণ।

দিনগুলো দেখতে দেখতে হাসি, মজা, আনন্দ, দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া, নীরব রাগ-অভিমানে স্বপ্নের মতো কেটে গেল। মাধুর হওয়ার ডেইট ঘনিয়ে এসেছে। পেট ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। এর মাঝে একদিন সবাই এই বাসায় এসে, ঘটা করে মাধুর স্বাধের অনুষ্ঠান করে গেছে। শুধু রেণুবালা আর রিধীকা আসেনি। ঝর্ণারানী, মাধুকে সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। মাধু, অনুপমকে ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি। অনুপম বলেছে,
-‘এখানে যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। মাধু, আমার কাছেই থাকুক। বাচ্চা হওয়ার পর নাহয় আপনি এসে মাধুর কাছে থাকবেন। কিংবা আমি ওকে আপনার কাছে রেখে আসব।
ফলে তারা আর অমত করেনি। খুশি মনেই মাধুকে রেখে গেছে।

এই বাড়িতে কোন কিছুর অভাব নেই মাধুর। আবদার করার আগেই অনুপম নিজের সাধ্যমতো সবকিছু এনে দেয়। তবুও রিধীকার কথা ভেবে দিনগুলো কী এক বিষণ্ণতায় কাটে। মাঝে মাঝেই রিধীকা ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে। নিজের মাকে শাপশাপান্ত করে। মাধু বলেছে, তুমি বরং এখানে এসে কিছুদিন থেকে যাও ছোটদি? ভাল লাগবে। রিধীকা বিরস মুখে বলে,
-‘আমার আর ভাল লাগা। পাঁচ মাস হয়ে গেল। মানুষটা না একটু ফোনে কথা বলে, আর না একটু দেখতে এসেছে আমায়। মানুষটার আদরের চিহ্ন এখনো আমাকে শরীরে আছে, জানো বৌদিমণি? আমি কিছুতেই মানুষটাকে ভুলতে পারি না। রাতের আঁধারে বড্ড বেশি মানুষটাকে মনে পড়ে। আমি নাহয় একটা মস্তবড় ভুল করেই ফেলেছি। মানুষটা কী পাষাণ তাই না? আমি ফোন দিলেও রিসিভ করে না। আমার এই একাকীত্বের দহন আর ভাল লাগে না বৌদিমণি। আমি তার সাথে সংসার করতে চাই! বড়দাভাইকে বলে, তার সাথে আমার সংসার করার ব্যবস্থা করে দাও না বৌদিমণি?
অনুপম, রিধীকার বর জয়ন্তর সাথে কথা বলেছিল। লোকটা, অনুপমকেও ভদ্রভাবে অপমান করে ফোন রেখে দিয়েছে।

রেণুবালা রাঁধতেছিল। আজকাল শরীর আর সায় দেয় না। পরের মেয়ে ঘরে আসার পর সুখের মুখ দেখেছিল রেণুবালা। সংসারে কার কূ’নজর লেগেছিল কেন জানে! বউ নিয়েও বেশিদিন খেতে পারল না। এখনকার মেয়েটা খুব বেয়াদব। মুখ বুজে সহ্য করে না। একটু কিছু হলেই বরের হাত ধরে ড্যাঙড্যাঙ করে নতুন সংসার পাতে। কী এমন ক্ষতি হতো? মাধু, রেণুবালার পা’দুটো জড়িয়ে ধরে যদি বলত, -‘মা আমি কোথাও যাব না। আপনার সংসারের এক কোণে পরে থাকতে চাই! তাহলেই তো রেণুবালা মাপ করে দিত৷ রিধীকাটাও একটা কাজ করে না। সারাক্ষণ দরজা বন্ধ করে, ঘরে শুয়ে বসে থাকে। খাওয়ার সময় হলে গাণ্ডেপিণ্ডে গিলে, নিজের ঘরে চলে যায়। মায়ের যে বয়স হয়েছে। সে খেয়াল কারো নেই। এত মানুষ মরে, বলি আমার কেন মরণ হয় না! নিজের রাগ কার সাথে দেখাবে রেণুবালা বুঝতে পারল না। রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে থালাবাসন ঠাস ঠাস করে ফেলছে।

সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। রিধীকা মন খারাপ করে, ছাদে বসে ছিল। বেখেয়ালে বাড়ির গেইটে চোখ পড়তেই দেখল। জয়ন্ত আসছে। রিধীকার মনের ভেতর একশো পাওয়ারের বাল্ব জ্বেলে উঠল। দৌঁড়ে ছাদ থেকে নেমে গেল। ব্যস্ত হাতে এলোমেলো শাড়ি ঠিক করে পরল। চুল পরিপাটি করে মাথা ভর্তি সিঁদুর পরল। চোখে মোটা করে কাজল টানল। এলোমেলো ঘরটা গোছানোর চেষ্টা করছে। এতদিন পর প্রিয় মুখটা দেখে, উত্তেজনায় কোন কাজই এগোচ্ছে না। সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
জয়ন্তকে দেখে, রেণুবালা হাসিমুখে এগিয়ে গেল। তবে জয়ন্ত রেণুবালার সাথে একটা কথাও বলল না। অনিকেতকে ডেকে বলল,
-‘তোমার বোন কোথায়?
-‘রিধী ঘরেই আছে। আপনি যান।
জয়ন্ত সিঁড়ি দিয়ে উঠে রিধীকার ঘরে চলে গেল। এতদিন পর মানুষটার আসার সময় হলো? রিধীকা অভিমানে মাথা নীচু করে রইল। জয়ন্ত পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে দেখল। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-‘কেমন আছো রিধী?
তীব্র অভিমানে এই এতটুকু মায়াময় কথায় ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিল রিধীকা। জয়ন্ত দু’পা এগিয়ে এলো। জয়ন্তর গরম নিঃশ্বাসে রিধীকার বুকের ভেতর মৃদু কাঁপন ধরেছে। কাঁদতে কাঁদতে জয়ন্তর পাদু’টো জড়িয়ে ধরে বসে পরল মেয়েটা। বলল,
-‘আমাকে মারুন, কাটুন, যা খুশি তাই করুণ। তবুও দয়া করে আমাকে আপনার সাথে নিয়ে যান। আমার আর এই একাকীত্ব একদম সহ্য হচ্ছে না। এবার যদি আমাকে ফেলে রেখে যান। ভগবানের দিব্যি, আমি বিষ খাব।
-‘রিধীকা…
জয়ন্তও মনে মনে দূর্বল হয়ে পড়েছে। না তাকে নরম হলে চলবে না। শক্ত হতে হবে। শীতল কণ্ঠে বলল,
-‘তুমি যে অন্যায় করেছ, তারপরও আমার সাথে যেতে চাও?
রিধীকার গলা ভেঙে এলো। শুকনো কণ্ঠে বলল,
-‘আমায় ক্ষমা করে দিন।
জয়ন্ত মলিন হাসল। বলল,
-‘যাবে আমার সাথে?
-‘হ্যাঁ যাব।
-‘তাহলে যে শর্ত মেনে যেতে হবে?
-‘আপনার সব শর্ত মানতে রাজি আমি। তবুও আমায় নিয়ে যান।
-‘আজ আমার হাত ধরে এই বাড়ি ছাড়লে, এই বাড়ির কারো সাথে আর জীবনেও যোগাযোগ রাখতে পারবে না তুমি। আমার কথা মতো তোমাকে চলতে হবে।
আর আমি যদি কখনো শুনি আমার মাকে তুমি অন্যায় ভাবে কষ্ট দিয়েছ। সেদিনই হবে আমার সাথে সংসার করা তোমার শেষ দিন। আজ এখানে আমি কিছুতেই তোমাকে নিতে আসতাম না। আমার মায়ের রিকুয়েষ্টে শুধু তোমাকে শেষ একটা সুযোগ দিতে এসেছি।
রিধীকা খুশিমনে ঝটপট ব্যাগ গুছিয়ে ফেলল। এই নরকপুরী থেকে যত তাড়াতাড়ি মুক্ত হবে ততই মঙ্গল। একবার যে ভুল রিধীকা করেছে। সেই ভুল আর জীবনেও রিধীকা করবে না। পাঁচ মাসে বাপের বাড়ি পরে থেকে সারাক্ষণ মায়ের খোঁটা, অভিশাপ, পাড়াপ্রতিবেশিদের রিধীকাকে নিয়ে তিক্তবাণ, ব্যঙ্গ, লাঞ্ছনা শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে। রিধীকার বেশ শিক্ষে হয়েছে। আসলে যতই বিয়ের আগে মেয়েদের মা-বাবা আদর করুক। ভালোবেসে মাথায় তুলে রাখুক। ভাগ্যেক্রমে স্বামীর সংসার না করতে পারলে, বোঝা যায় তাদের আসল রঙ, রুপ।
জয়ন্ত’র হাত ধরে, বাবার বাড়ির সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে রিধীকা সারাজীবনের জন্য চলে গেল। আজও পাশের বাড়ির ছাদ থেকে একজোড়া তৃষ্ণার্ত, ভেজা চোখ রিধীকাকে মনের আঁশ মিটিয়ে দেখে নিল।

অনুপম ভোরে উঠে, নাস্তা তৈরি করে নিজে খেয়েদেয়ে ঘুমন্ত মাধুর কপালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিয়ে, অফিসে চলে গেল। মাধুর পেট অসম্ভব বড় হয়েছে। সারারাত জেগে ছটফট করে মেয়েটা। একদম ভোরের দিকে ঘুমায়। তাই অনুপম আর সকালে মাধুকে ডাকে না।
বেলা দশটার দিকে মাধুর ঘুম ভাঙল। উঠে দেখে, তলপেটে চিনচিনে ব্যথা। কাপড় ভেজা। সময় গড়ায়।একটু একটু করে ব্যথা বাড়ে। মাধু বাথরুমে ফ্রেশ হতে গিয়ে রক্ত দেখে ভয় পেল। পেটে আলতো করে হাত চেপে ধরে কেঁদে দিল। অসহ্য ব্যথায় মাধু বেসামাল হয়ে গেল। তাড়াহুড়ো করে ফোন হাতে নিল। দূর্ভাগ্যক্রমে ফোনে চার্জ নেই। বাসায় কারেন্ট নেই। এদিকে বাড়িওয়ালী আন্টিও আজ দুদিন যাবৎ বাসায় নেই। তার বোনের বাসায় বেড়াতে গেছে। অতিরিক্ত পেট ব্যথায় নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে মাধুর। এদিকে মল ভেঙে গেছে। পরনের কাপড় ভেজা। মাধু ঘরের মেইন দরজা খুলে, ওখানেই মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে বসে পরল। অতিরিক্ত ব্যথা, ভয়, আতঙ্কে ধীরে ধীরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল মেয়েটা।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে