পার্ট: ৯
ভাবি: তিলোত্তমা উঠো।
আমি: উহু পরে।
ভাবি: তুমি কি নামাজ পড়ো না..? (লাফ দিয়ে উঠে বসলাম, ভাবি পাশে বসা)
আমি: হ্যাঁ পড়ি তো এই দুদিন পড়া হয়নি পড়বো কিভাবে যা…
ভাবি: কাব্য আমাকে সব বলেছে ওসব ভুলে যাও, আজ থেকে তোমাদের নতুন জীবন শুরু হবে তাই সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করো।
আমি: হুম।
ভাবি: এসো একসাথে দুবোন নামাজ পড়ি, গাদা তিনটাকে তো আর নামাজ পড়াতে পারি না আমরা নাহয় একাই পড়ি।
আমি: কেন ওরা নামাজ পড়ে না..?
ভাবি: গিয়ে দেখো তিন ভাই নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে নামাজের কথা কতো করে বলি শুনেই না।
আমি: এখন থেকে পড়বে চিন্তা করো না।
ভাবি: পড়লে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম।
আমি: দুজন মিলে এমন টাইট দিবো নামাজ না পড়ে যাবে কোথায়..?
ভাবি: ঠিক আছে এখন চলো নামাজের সময় চলে যাচ্ছে।
আমি: ওকে।
ভাবি আর আমি একসাথে নামাজ পড়ে নিলাম। ভাবির মধ্যে বার বার তিশাকে খুঁজে পাচ্ছি। তিশার কথা মনে পড়তেই মন খারাপ হয়ে গেলো, গতকাল সকালে কথা হয়েছিল আর কথা হয়নি ওর সাথে।
ভাবি: আমি নাশতা রেডি করছি তুমি কাব্য’কে ডেকে নিয়ে এসো
আমি: ঠিক আছে।
কাব্য’র রুমে আসলাম, এতো সকালে উঠবে কিনা কে জানে। কিন্তু এখন থেকে তো ওকে রোজ ভোরবেলা উঠতে হবেই নামাজ পড়তে হবে তো। কাব্য ঘুমিয়ে আছে, ওর ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখে আর ডাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না, উল্টো ইচ্ছে হচ্ছে বসে বসে ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখি। কাব্য’র চুলে হাত দিতেই ও জেগে গেলো আর আমার হাতটা চেপে ধরলো।
কাব্য: রাতে জোর করে রুম থেকে আমাকে বের করে দিয়ে এখন আবার ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে (আমার হাতটা ওর বুকের কাছে নিয়ে চেপে ধরে চোখ দুটু বন্ধ রেখেই কথা বলছে। রাতের কথা মনে পড়তেই হাসি পেলো, রাতে তো ও আমার কাছে ঘুমানোর বায়না ধরেছিল আর আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলাম)
কাব্য: এখন আবার হাসা হচ্ছে, বিয়েটা হয়ে যাক সবকিছুর শাস্তি দিবো তোমাকে।
আমি: আপনি আমাকে শাস্তি দিতে পারবেন..?
কাব্য: হ্যাঁ পারবো তো কারণ রোমান্টিক শাস্তি দিতে কারোরই কষ্ট হয়না।
আমি: এবার উঠুন তো ভাবি ডাকছেন আর হ্যাঁ কাল থেকে এভাবে ঘুমালে চলবে না নামাজ পড়তে হবে।
কাব্য: নামাজ..?
আমি: এতো অবাক হওয়ার কি আছে চলুন তো।
কাব্য’কে রেখেই নিচে চলে আসলাম।
ভাবি আর অয়ন নাশতা করছে, অয়ন নাশতা করছে বললে ভুল হবে ও তো বসে বসে ঘুমুচ্ছে হিহিহি।
ভাবি: হাসছ কেন..?
আমি: ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নাশতা খাওয়া দেখে।
ভাবি: দশটার আগে তো কখনো ঘুম থেকেই উঠে না তাই এমন করছে। অয়ন তো উঠেছে ফারাবীকে টেনেও তুলতে পারলাম না।
অয়ন: সব নতুন ভাবির দোষ, বিয়ে করবে উনারা আর শাস্তি পাচ্ছি আমরা।
ভাবি: আমি তো বলেছিলাম এতো তাড়াহুড়োর দরকার নেই কিন্তু কাব্য…
কাব্য: শুনিনি তাই তো..? ভাবি তুমি তো সব জানো তাও কেন এমন করছ..? (কাব্য নিচে নেমে আসতে আসতে বললো। ভাবির মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেলো, কি জানে ভাবি..? ওরা সবাই কি আমার থেকে কিছু লুকুচ্ছে..?)
কাব্য: ভাবি আমি তিলোকে হারাতে পারবো না তাই এতো তাড়াহুড়ো করছি।
ভাবি: ঠিক আছে যা চাইছ তাই হবে, সব শপিং করা শেষ শুধু বেনারসি কেনা বাকি।
কাব্য: তিলোকে নিয়ে তুমি চলে যাও।
ভাবি: না তুমি যাও দুজন মিলে পছন্দ করে আনলেই ভালো হবে।
কাব্য: ঠিক আছে।
আমি: আমাদের সাথে তিশাকে যদি নেই তাহলে কি…
কাব্য: আমি তিশাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি ও আসলেই যাবো। (ইশশ এই কাব্য’টা কি আমি মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই সব বুঝে যায়)
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি হুট করে কতোকিছু হয়ে গেলো। হঠাৎ করে কাব্য আসলো আমার জীবনে আর আজ আমাদের বিয়ে। একটা মেয়ের বিয়ে অথচ তার পাশে কেউ নেই না বাবা মা না অন্য কোনো আত্মীয়স্বজন। অবশ্য আমার তো কেউই নেই আর আব্বু আম্মু…
কাব্য: তিলো রেডি হয়ে নাও তিশা আসছে।
আমি: হুম।
কাব্য: এই তুমি কাঁদছ (কাব্য এসে আমার কাধে ধরে ওর দিকে ফিরালো)
কাব্য: তিলো কাঁদছ কেন..?
আমি: এমনি।
কাব্য: পাগলী এভাবে কেউ কাঁদে আর তুমি যে কাঁদছ আমার কষ্ট হয় না হুম..? (কাব্য আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে জরিয়ে ধরলো)
আমি: আব্বু আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।
কাব্য: ওহ এই ব্যাপার, কান্না থামাও আমার কথা শুনো। সবাই তো আর চিরদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকে না। তুমি চাইলে আমরা বিয়ের পর তোমার আব্বু আম্মুর কবর জিয়ারত করে আসবো।
আমি: সত্যি।
কাব্য: হ্যাঁ আর কেঁদো না যাও রেডি হয়ে নাও।
কাব্য আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো। আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি, একটা মানুষ এতোটা ভালো হতে পারে আর এতোটা ভালোবাসতে পারে…?
রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম সবাই এখানে বসে আছে। তিশাটা যে কেন এখনো আসছে না।
–এইযে তিলোত্তমা (হঠাৎ কারো ডাকে থমথম খেয়ে গেলাম, কে উনি)
ভাবি: তিলোত্তমা ও ফারাবী।
আমি: ওহ ভাইয়া…
ভাইয়া: তুমিই বলে দাও তোমাকে বোন ডাকবো নাকি ভাবি..?
আমি: ভাবি কিভা…
ভাইয়া: কাব্য কিন্তু শুধু আমার ভাই না বন্ধু তাই বললাম হাহাহা।
আমি: ভাই বোনের সম্পর্কটাই ভালো কারণ আমার তো কেউ নেই।
ভাইয়া: আমরা সবাই আছি এখন।
অয়ন: বাব্বাহ্ এতো দেখছি নীরার ছোটবোন, ঠিক নীরার মতো নামাজ পর্দা সবকিছু…
ভাবি: এই চুপ করতো বোরকা পড়ে যাবে নাতো কি পরীর মতো সেজে যাবে।
আমি: ভাবি নীরা কে..?
ভাবি: আমি।
তিশা: এইযে মেডাম (হঠাৎ তিশার কন্ঠ শুনে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম, দুদিন দেখা হয়নি অথচ মনে হচ্ছে কতো বছর হয়ে গেছে)
তিশা: আরে পাগলী এভাবে কাঁদছিস কেন চলে এসেছি এখন থেকে তোর কাছেই থাকবো।
আমি: সত্যি।
তিশা: হ্যাঁ রে বাবা।
কাব্য: যেতে হবে চলো।
একের পর এক বেনারসি দেখে যাচ্ছি কিন্তু আমার ডাক্তারবাবুর পছন্দ হচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে সামনে তাকালাম তখনি সামনের একটি আয়নায় চোখ পড়লো, একটি মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সাথে সাথে পিছনে তাকালাম কিন্তু মেয়েটি নেই। আশ্চর্য এখনি তো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল, মেয়েটির মুখ স্পষ্ট ভাবে দেখিনি। আচ্ছা আমি তো বোরকা পড়া তাহলে কি অন্য কাউকে দেখে হাসছিল..?
তিশা: এই তমা ওদিকে কি দেখছিস এই শাড়িটা দেখ তো।
আমি: ডাক্তারবাবু কে দেখা।
তিশা: আরে কোথায় যাচ্ছিস..?
তিশার কথার উত্তর না দিয়ে চলে আসলাম।
মেয়েটিকে খুঁজছি কিন্তু… ওই তো এই মেয়েটিই তো ছিল। মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়াতেই অবাক হয়ে গেলাম, এইটা তো শুভ্রা।
শুভ্রা: আমি জানতাম তুমি আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ঠিক এখানে চলে আসবে।
আমি: অসহ্য।
শুভ্রা: বিয়ের শপিং করতে এসেছ (চলে আসছিলাম ওর কথা শুনে দাঁড়ালাম)
আমি: তা জেনে আপনি কি করবেন..?
শুভ্রা: বিয়ে করে নিচ্ছ, কাব্য’র সম্পর্কে কতোটুকু জানো..?
আমি: মানে।
শুভ্রা: সময় হলেই বুঝতে পারবে। (মেয়েটা চলে গেলো, অদ্ভুত তো। কিসব বলে গেলো)
কাব্য: তিলো এখানে কি করছ..?
আমি: হুম কিছুনা।
বাসায় চলে আসলাম, শুভ্রার কথাগুলো ভুলতে পারছি না। কাব্য’র সম্পর্কে কি জানিনা বললো শুভ্রা..?
তিশা: তমা এখানে একা দাঁড়িয়ে আছিস কেন..?
আমি: এমনি।
তিশা: কি হয়েছে তোর বলতো, শপিংমলে কথা বলিসনি, নিজের বেনারসিটাও পছন্দ করলি না কি…
আমি: তিশা কাব্য আমার থেকে কি যেন লুকাচ্ছে।
তিশা: কি লুকাবে..?
আমি: জানিনা।
তিশা: কাব্য খুব ভালো ছেলে অযতা ভুল বুঝিস না (তিশার দিকে তাকালাম। কাব্য ভালো ছেলে আমিও জানি কিন্তু কাব্য কিছু একটা যে আমার থেকে লুকাচ্ছে এটাও সত্যি। কি লুকাচ্ছে..?)
তিশা: আমার উপর ভরসা রাখ আমি বলছি কাব্য ভালো ছেলে তোকে কখনো কষ্ট দিবে না তাছাড়া তুই তো কাব্য’কে ভালোবাসিস।
আমি: হুম।
আমি: তিশা আমাকে আর কতো সাজাবি বলতো..?
তিশা: উফফ আর একটু।
আমি: আর একটু আর একটু বলতে বলতে তো ময়দা কম লাগালি না।
তিশা: ওই একদম ময়দা বলবি না, দাঁড়া চুলগুলো ঠিক করে নেই তারপর শেষ।
আমি: চুল ছেড়ে রাখছিস কেন..?
তিশা: কাব্য বলেছে, একটু শান্ত হয়ে বস তো।
আমি: আন্টি আর আঙ্কেল এসেছেন..?
তিশা: হ্যাঁ (সবাই আসলো কিন্তু যে আমাকে তিনবছর ধরে দেখাশোনা করলো সেই মামিই আসলো না। আসবেই বা কি করে যা কান্ড করেছে)
তিশা: এবার নিজেকে আয়নায় দেখ তো, আমি নিশ্চিত আজ কাব্য তোর থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না। (আয়নায় নিজেকে বউ সাজে দেখে কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। প্রত্যেকটা মেয়েই তো এই দিনটা নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখে আমিও দেখতাম তবে আব্বু আম্মু মারা যাওয়ার পর ওসব স্বপ্ন দেখা ভুলে গিয়েছিলাম কিন্তু হুট করে কাব্য আমার জীবনে এসে আবার সব ঠিক করে দিলো)
তিশা: কিরে বল সাজানো কেমন হয়েছে..?
আমি: পুরাই পেত্নী হিহিহি।
তিশা: কি বললি..?
ভাবি: তিশা তিলোত্তমাকে নিয়ে এসো সবাই অপেক্ষা করছে তো।
তিশা: আসছি।
তিশা আমাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো…
তিশা: একটু পর তো তোর বিয়ে এখন কেমন অনুভূতি হচ্ছে একটু বল শুনি।
আমি: অন্য মেয়েদের চেয়ে একটু আলাদা অনুভূতিই হচ্ছে।
তিশা: ওমা কেন..?
আমি: সব মেয়ে তো বাবার বাড়ি থেকে সবাইকে ছেড়ে শশুড় বাড়ি যায় তাই কষ্ট হয় কিন্তু আমার কষ্টটা তো আলাদা, আমার যে আব্বু আম্মুই নেই।
তিশা: প্লিজ তমা কাঁদিস না আমরা আছি তো।
আমি: আজ আব্বু আম্মুকে অনেক বেশি মিসস করছি, যার আব্বু আম্মু নেই সেই বুঝে এই যন্ত্রণা কেমন।
ভাবি: উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে রাত তো কম হলো না চলো চলো।
ভাবি আমাকে এনে সোফায় বসালেন। এতোক্ষণ ঘোমটা দেওয়া ছিল, ভাবি ঘোমটা সরিয়ে দিতেই কাব্য’র দিকে তাকালাম। কাব্য হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, পাশে অয়ন আর আদনান ভাইয়া ওর চোখের সামনে হাত নেড়ে দুষ্টুমি করছে।
কাজী: আপনাদের শেষ তো আমি কি শুরু করবো..? এমনিতে অনেক রাত হয়ে গেলো আমাকে ফিরতে হবে তো।
ভাইয়া: হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি শুরু করুন।
আন্টি: কিরে মা মন খারাপ কেন (আন্টি এসে আমার পাশে বসলেন)
আমি: সবাই এসেছ কিন্তু মামি…
আন্টি: কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি: হুম। (কাজী সাহেব কাব্য’কে কবুল বলতে বলছেন শুনে কাব্য’র দিকে তাকালাম, ও একদমে তিনবার কবুল বলে দিয়েছে। সবাই তো ওর কান্ড দেখে হাসছে। আমাকে কবুল বলতে বললেন, আমি চুপ হয়ে আছি দেখে সবাই কবুল বলতে বলছে। কাব্য’র দিকে তাকালাম ও ভয়ে চুপসে গেছে, হয়তো ভাবছে আমি বলবো না। আমার দিকে তাকিয়ে ভ্র কুঁচকিয়ে হাত নেড়ে জিজ্ঞেস করলো বলছি না কেন। কাব্য’র দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে কবুল বলে দিলাম। কাব্য’র মুখে আমি কখনো এতোটা হাসি দেখিনি, এই মুহূর্তে ও যতোটা খুশি হয়েছে মনে হচ্ছে ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ)
সব নিয়মকানুন শেষ করে ভাবি আর তিশা আমাকে কাব্য’র রুমে নিয়ে আসলো। দুজন মিলে আমার সাথে অনেক দুষ্টুমি করে চলে গেলো। উফফ বাসর রাত বাসর রাত বলে দুজনে আমার কানের বারোটা বাজাই দিছে। ওরা যেতেই রুমের চারপাশে চোখ বোলালাম, রুম দেখে তো আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। বাসর রাত নিয়ে একটা মেয়ের কতো স্বপ্ন থাকে, আমারো ছিল। পুরো রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো থাকবে ভেবেছিলাম কিন্তু এই রুমে তো ফুলের ছিটেফোঁটাও নেই। আমার রোমান্টিক ডাক্তারবাবু এইটা কি করলো..?
কাব্য: শুনেছি সব নতুন বউরা দশ হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে বসে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে আর তুমি পুরো রুমে পায়চারী করছ। (কাব্য এসে মাথার পাগড়ী খুলে টেবিলে রাখতে রাখতে বললো। কথা বলতেই ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু ভাবী বলেছে ও রুমে আসা মাত্রই সালাম করতে তাই সালাম করলাম। কতো গল্পে পড়েছি সিনেমায় দেখেছি নতুন বউরা যখন স্বামীর পায়ে ধরে সালাম করে স্বামী তখন বউকে বুকে নিয়ে জরিয়ে ধরে আর কাব্য আমাকে অবাক করে দিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে ডিম লাইট জ্বালালো)
আমি: ডাক্তারবাবু কি করছেন লাইট অফ করলেন কেন..?
কাব্য: পাগলী বাসর ঘরে কেউ লাইট জ্বালিয়ে রাখে নাকি..?
আমি: এইটা বাসরঘর..? কোনো ফুলের ছিটেফোঁটাও নেই।
কাব্য: আমিই সাজাতে বারণ করেছি অযতা এই ফুলগুলো আমাদের ডিস্টার্ব করবে। ওসব বাদ দাও তুমি রেডি হয়ে নাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি (চোখ বড় বড় করে কাব্য’র দিকে তাকিয়ে আছি, ও ওয়াশরুমে চলে গেলো। কিন্তু কি বলে গেলো, রেডি হবো মানে কি তারমানে কাব্য’র চরিত্র এরকম)
কাব্য: কি হলো এখনো শাড়ি খুলোনি..?
আমি: ডাক্তারবাবু আপনি এসব কি বলছেন..?
কাব্য: আরে কান্না করছ কেন ভুলে গিয়েছ আজ আমাদের বাসর রাত।
আমি: আপনার চরিত্র এমন আর আমি বুঝতে পারিনি।
কাব্য: এখানে চরিত্র খারাপ এর কি দেখলে বাসর রাতে তো… (আর শুনতে পারলাম না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম। ছিঃ কাব্য এতো খারাপ আর আমি বুঝতেও পারিনি)
কাব্য: কাঁদছ কেন এভাবে (কাব্য এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো, পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে ওর হাত দুটু আমার নাভির উপর রাখলো। ইচ্ছে হচ্ছে ওকে খুন করি)
কাব্য: কান্না থামাও।
আমি: ছাড়ুন আমাকে আমি আপনার কাছে থাকবো না আমি তিশার কাছে চলে যাবো।
কাব্য: হুহ বাসর রাতে উনি জামাই রেখে বান্ধবীর কাছে চলে যাবেন।
আমি: ছাড়ুন আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
কাব্য: করো আমার তাতে কি, সকালে ভাবি তোমাকে খোঁচা দিবে ভাববে অন্যকিছুর জন্য চিৎকার করেছ।
আমি: ছিঃ আপনি এতো খারাপ।
কাব্য: হ্যাঁ আমি অনেক খারাপ এখন খারাপ মানুষটার সাথে চলো।
আমি: কোথায় যাবো..?
কাব্য: চলো না। (কাব্য আমার হাত ধরে টেনে পিছনের গেইট দিয়ে বাসার বাইরে নিয়ে আসলো। তারপর আমার চোখ দুটু বেঁধে দিলো)
আমি: কি করছেন।
কাব্য: এতো কথা বলোনা তো, আমরা এখন বাইরে আছি বেশি কথা বললে ভূতে ধরবে (ভূতের কথা শুনে ভয়ে চুপ হয়ে কাব্য’র হাতটা চেপে ধরলাম)
কিছুক্ষণ পর কাব্য আমার চোখের বাঁধন খুলে দিলো। সামনে তাকিয়ে আমি থ হয়ে গেলাম। আমরা নদীর পাড়ে আছি, ঘাটে ছোট একটি নৌকা বাধা। নৌকার দুপাশে রশিতে লন্ঠন ঝুলছে আর লন্ঠন গুলো মিটিমিটি জ্বলছে। চাদের আলোতে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এই লন্ঠন গুলোর কোনো প্রয়জনই ছিল না। নৌকার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, পুরো নৌকা জুড়ে শুধু গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। সবকিছু দেখে কাব্য’র দিকে অবাক হয়ে তাকালাম, ও এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
কাব্য: বাসরঘরে ঢুকেই কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে ফিজিক্যাল রিলেশনের কথা বলুক এইটা কোনো মেয়েই চায় না, যেমনটা চায়নি আমার তিলোত্তমা। আর তাই তো আমার তিলোর জন্য এতোকিছুর আয়োজন।
আমি: থ্যাংকইউ ডাক্তারবাবু (কাব্য’র দিকে ঘুরে খুশিতে ওর গালে চুমু দিয়ে দিলাম। কাব্য গালে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর তাকিয়ে থাকা দেখে বুঝতে পারলাম আমি আসলে খুশিতে কি করেছি, এই প্রথম কাব্য’কে আমি চুমু দিয়েছি ভাবতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। কাব্য এসে একটা আঙ্গুল দিয়ে আমার তুতুনী ধরে মুখটা উপরে তুললো, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি আমি)
কাব্য: বউ সাজে তোমাকে দারুণ লাগছে তার উপর পূর্ণিমা চাঁদের এই স্নিগ্ধ আলো এসে তোমার উপর পড়ছে সাথে লজ্জা সবকিছু মিলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে একদম মায়াবতী (কাব্য’র এই কথায় আরো বেশি লজ্জা পেয়ে ওকে জরিয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লোকালাম। কাব্য আমাকে কোলে তুলে নিলো)
আমি: কি করছেন..?
কাব্য: একদম চুপ আজ কোনো কিছুতে আমাকে বাঁধা দিবে না বুঝেছ। (কিছু না বলে কাব্য’র বুকের পাঞ্জাবী খামছে ধরে ওর বুকের সাথে মিশে রইলাম)
কাব্য আমাকে কোলে করে এনে নৌকায় গোলাপের পাপড়ির উপর বসিয়ে দিলো। কাব্য নৌকার কিনারায় গিয়ে পানিতে হাত দিয়ে কি যেন দেখলো।
কাব্য: পানি কিছুটা ঠান্ডা সহ্য করতে পারবে তো নাকি আবার জ্বর বাধিয়ে ফেলবে..?
আমি: মানে পানিতে কি করবো..?
কাব্য: পানিতে পা ভিজিয়ে নৌকার কিনারায় বসবো।
আমি: ইহহ এতোরাতে তাও নদীতে আমার এমনি ভয় করছে।
কাব্য: কিসের ভয় পাগলী আমি আছি তো (কাব্য’র এই ছোট্র কথাটায় যেন অনেক ভরসা খুঁজে পাই আমি)
পানিতে পা দুটু ভিজিয়ে নৌকার কিনারায় বসে আছি, কাব্য আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বসে আছে।
আমি: পানি তো খুব ঠান্ডা আপনার ঠান্ডা লাগছে না..?
কাব্য: উঁহু পানিতে পা ভিজিয়ে বসার মজাই আলাদা আর আজ তো সাথে আমার তিলো আছে (কাব্য আমাকে এতো ভালোবাসে এতো সুখ সইবে তো আমার কপালে)
কাব্য: কি মেডাম ডাক্তারবাবুর চরিত্র খুব খারাপ তাই না (ইশশ এখন নিজের প্রতি নিজেরই লজ্জা লাগছে কিসব উল্টাপাল্টা ভেবেছি আমি, চরিত্র খারাপ ভেবেছি ছিঃ)
আমি: উঁহু আমার ডাক্তারবাবু অনেক ভালো।
কাব্য: তাই বুঝি..?
কাব্য আমার খোলা চুলে নাক ঘসছে, ওর গরম নিঃশ্বাস গুলো আমার ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে আর আমি বার বার কেঁপে উঠছি। হঠাৎ কাব্য ওর হাত দুটু শাড়ির নিচ দিয়ে আমার খালি পেটে রাখলো, আমি শিউরে উঠে ওর হাতের উপর আমার হাত রাখলাম। কাব্য পাগলের মতো আমার চুলে নাক ঘসছে আর হাত দুটু দিয়ে আমার পেটের মধ্যে খেলা করছে। কাব্য’র প্রতিটি স্পর্শে যেন আমি বার বার কেঁপে উঠছি।
চলবে?
(গতকাল কারো কমেন্ট এর রিপ্লে দিতে পারিনি “সরি” অনেকে বলেছ গল্প দিতে এতো দেরি করেছি কেন “নেট প্রবলেম এর জন্য দিতে দেরি হইছে এখন থেকে আবার প্রতিদিন পাবে”
কয়েকজন বাদে বাকি সবাই বলেছ এই তিনদিন গল্প দেইনি তাই এখন যেন পুষিয়ে দেই “এই দুই পার্ট অনেক বড় করে দিয়েছি তোমাদের কথা রাখার জন্য, খুশি তো?)