পার্ট: ২৪
হুট করে ঘুম ভেঙে গেলো, মনে পড়লো আমি যে রাগ করে এসে বারান্দায় ঘুমিয়েছি। চোখ খুলে তাকাতেই নিজেকে বিছানায় দেখে বেশ অবাক হলাম। কিন্তু কাব্য তো পাশে নেই ও কোথায় গেলো। আচ্ছা আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ও বারান্দায় গিয়ে ঘুমায়নি তো? তাড়াতাড়ি উঠে বারান্দার দিকে পা বাড়ালাম, কিন্তু বারান্দার দরজাটা তো ভিতর থেকে বন্ধ তাহলে ও গেলো কোথায়?
কাব্য: আমি এখানে। (কাব্য’র কন্ঠ শুনে পিছনে তাকালাম, রুমের ভিতর এসে ঢুকলো হাতে খাবারের প্লেট। মাঝরাতে খিদে তাহলে লেগেছে ভালো ভাবেই)
কাব্য: এসো খাবে।
আমি: তোমাকে কি আমি বলেছি আমার খিদে লেগেছে?
কাব্য: সবকিছু বলতে হয় না।
আমি: ওহ তাই?
কাব্য: জ্বী তাই, ভালোবাসি তো তাই এইটুকু বুঝি। (প্লেট টেবিলে রেখে আমার কাছে এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। বাহ্ সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলো)
কাব্য: ও তিলো খাবে চলো খুব খিদে লেগেছে।
আমি: তোমার খিদে লেগেছে তুমি গিয়ে খাও আমাকে ছাড়ো ঘুমাবো।
কাব্য: হু এখন তো আমাকে রেখে ঘুমাবেই আমি যে এতোক্ষণ বারান্দায় বসে ছিলাম তোমার পাশে এসব তো আর দেখনি।
আমি: বলেছিলাম নাকি যে আমার পাশে এসে বসো আমার ভয় লাগে।
কাব্য: আমার তিলো পাগলী ভয় পায় না আমি জানি সেটা, ভয় পেলে কি আর এতো গোয়েন্দাগিরি করতো।
আমি: ছাড়ো বলছি।
কাব্য: প্লিজ খাবে চলো। আমি জানি তোমার খুব খিদে লেগেছে।
আমি: ভালো হবে না কিন্তু…
কাব্য: ভালো তো হচ্ছেই না, আমি খিদে সহ্য করতে পারিনা পেটে ব্যথা করছে। (দ্যাত রাগ করে থাকারও উপায় নেই)
আমি: চলো।
কাব্য: হুহুহুহু রাগ শেষ।
আমি: এই মাঝরাতে পাগলের মতো হেসো না ভূতেরা ভয় পাবে।
কাব্য: আমার হাসি এতোটাই খারাপ যদি হয় তাহলে আমি যখন হাসি তখন আমার তিলো পাগলী মুগ্ধ নয়নে দেখে কেনো?
আমি: তিলো পাগলীর বয়েই গেছে এমন বানরমার্কা হাসি মুগ্ধ নয়নে দেখার জন্য।
কাব্য: হু।
আমি: হাতে ঠান্ডা লাগে হাত দিয়ে খেতে পারবো না খাইয়ে দাও।
কাব্য: রাগ করে নিজেকে কষ্ট দাও কেন বলতো, খেয়ে নিলেই পারতে।
আমি: তুমি পারবে আমাকে ছাড়া খেয়ে নিতে? (কাব্য কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ খাচ্ছে সাথে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে)
আমি: এতো রাতে খাবার গরম…
কাব্য: গরম করে এনেছি।
আমি: হু?
কাব্য: অবাক হচ্ছ কেন এই শীতের মধ্যে আমার বউ ঠান্ডা খাবার খাবে নাকি? (এখন বউ সন্দেহ করার সময় মনে ছিল না এসব। আর কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলাম)
খাওয়া শেষে কাব্য প্লেট রাখতে গেলো, আমি এসে চুপচাপ বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লাম।
কাব্য: এতো দূরে শুয়ে আছ কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: তিলো ও তিলো প্লিজ আমার বুকে আসো।
আমি: একদম চিল্লাবা না ঘুমুতে দাও।
কাব্য: রেগে থাকাটা স্বাভাবিক কিন্তু আমি তো আমার ভুল বুঝতে পেরেছি ক্ষমা করা যায় না?
আমি: তোমার সবচেয়ে বড় ভুল তুমি আমার থেকে আবারো কথা লুকিয়েছ আর এর জন্য তুমি কখনো ক্ষমা পাবে না।
কাব্য: যখন আব্বু আম্মুর থেকে দূরে চলে এসেছিলাম তখন তো পুরো একা ছিলাম, হ্যাঁ ফারাবী অয়ন হিয়া ওরা ছিল কিন্তু আব্বু আম্মুর ভালোবাসাটা তো ছিল না। সব কষ্ট সয়ে নিয়ে বড় হয়েছি হিয়াকে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি। সব কিছুর মাঝে সম্পর্ক নামক জিনিসটার প্রতি ঘৃণা চলে এসেছিল কিন্তু তিনবছর আগে হুট করে আরশি আমার জীবনে আসে। জানো আরশির প্রতি খুব দূর্বল হয়ে পড়েছিলাম খুব ভালোবাসতাম ওকে আর আরশি আমার এই দূর্বলতার সুযোগ নেয়। দুই বছর সম্পর্ক ছিল, এই দুই বছরে আরশি আমার থেকে কতো কোটি টাকা নিয়েছে তুমি ভাবতেও পারবে না। কয়েকদিন পর বিয়ে করবো, নেক্সট মাসে বিয়ে করবো এসব বলে ও টাকা নিতো আমি ওকে বিশ্বাস করে দিতাম কিন্তু পরে জানতে পারি আরশির অন্য ছেলের সাথে রিলেশন আছে। তারপর একদিন আরশি আমাকে প্রচুর ড্রিংক করায় কিছু বুঝার মতো অবস্থায় ছিলাম না আমি, এই সুযোগে আরশি আমার সিগনেচার নিয়ে সবকিছু ওর নামে নিতে চেয়েছিল কিন্তু ফারাবী চলে আসাতে পারেনি। সেদিন আরশিকে পুলিশে দিয়েছিলাম আর সাথে ভালোবাসা সম্পর্ক এসবের প্রতি ঘৃণা জন্মেছিল মনে। কিন্তু এক বছর পর আবারো তুমি আসলে আমার জীবনে। বিশ্বাস করো তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি আর তাই তোমাকে হারানোর ভয় সবসময় আমাকে তাড়া করতো এখনো করে, তাইতো আরশির কথাটা লুকিয়ে রেখেছিলাম ভয় হতো যদি ভুল বুঝে ছেড়ে চলে যাও। (কাব্য মাথা নিচু করে খুব কাঁদছে, নাহ আর রাগ করে থাকতে পারবো না। ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে জরিয়ে ধরলাম)
আমি: কেঁদো না আমি তোমাকে ছেড়ে কখনো যাবো না, শুধু প্লিজ আমার কাছে কিছু লুকিয়ে রেখো না। জানো তো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা খুব শক্ত একটা বাঁধন, কিন্তু এই বাঁধনটাও ছিঁড়ার ক্ষমতা রাখে সন্দেহ, রাগ, অভিমান। হ্যাঁ প্রত্যেকটা সম্পর্কে রাগ অভিমান থাকা প্রয়োজন কিন্তু সেটা দীর্ঘ সময়ের জন্য না, একজন রাগ করলে অন্য জন সেটা ভাঙিয়ে নিলে তবেই সম্পর্ক সুন্দর হয়। আর দুজনই যদি মনের মধ্যে রাগ অভিমান সন্দেহ এসব পুষে রাখে তাহলে সম্পর্কটা আস্তে আস্তে ভাঙতে শুরু করে। আর একটা কথা মনে রেখো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা একটা পবিত্র সম্পর্ক আর এই পবিত্রতা দিয়ে দুজন মিলে সব বিপদের মোকাবিলা করা যায় তাই কখনো ভালোবাসার মানুষের থেকে কিছু লুকাতে যেও না।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছ?
কাব্য: আমি আমাদেরই শত্রুর কথায় তোমাকে সন্দেহ করেছি তাও ছোট ভাইকে নিয়ে এইটা তো অনেক বড় অন্যায়, তুমি আমার এতো বড় অন্যায়টা ক্ষমা করে দিলে?
আমি: হ্যাঁ দিলাম কারণ ভালোবাসা এমন এক জিনিস যা ক্ষমা করতে শিখায়। যদি তোমাকে ক্ষমা নাই করতে পারলাম তাহলে তোমাকে আমি আবার ভালোবাসি কিভাবে। আচ্ছা তুমিই বলো আমি যদি তোমাকে ক্ষমা না করে রাগটা মনের মধ্যে পুষে রাখতাম তাহলে কি আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতো না?
কাব্য: ক্ষমা করে দাও আমাকে।
আমি: হুম করে তো দিয়েছি তবে আমার একটা কথা রাখতে হবে তোমাকে।
কাব্য: কি?
আমি: আগামীকাল আব্বুকে আনতে যাবো তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।
কাব্য: কিন্তু…
আমি: প্লিজ আর না অনেক হয়েছে। তুমি তো ভালোবাস আব্বু আম্মুকে তাহলে?
কাব্য: আচ্ছা তুমি আব্বুকে ফেলে কিভাবে?
আমি: তুমি যদি লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়ে আব্বুকে দেখতে পারো তাহলে আমি আব্বুর সামান্য ঠিকানাটা জানতে পারবো না?
কাব্য: আব্বুর ঠিকানা তো শুধু আমিই জা…
আমি: তোমার ডায়েরি থেকে পেয়েছি। (কথাটা বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম, ওর লাইব্রেরিতে ঢুকেছি না জানি কতোটা রেগে যাবে এখন। সত্যি কথাটা তো লুকিয়ে রাখা ঠিক না তাই বলে দিলাম কিন্তু কাব্য কোনো রাগ দেখাচ্ছে না কেন? এক চোখ দিয়ে ওর দিকে তাকালাম, ও তো হাসছে)
আমি: এই তুমি হাসছ কেন?
কাব্য: তিলো তাহলে ডাক্তারবাবুকে ভয় পায়।
আমি: হুহ মুটেও না।
কাব্য: দেখলাম তো। আচ্ছা ডায়েরি কোথায় পেয়েছ।
আমি: যেখানে রাখো সেখানে পেয়েছি।
কাব্য: যেহেতু আব্বুকে ফিরিয়ে আনতে চাইছ তাই আর কোনো প্রশ্ন করবো না কিন্তু আব্বু আসবেন তো?
আমি: অপরাধ উনারা করেছিলেন তাই আমার বিশ্বাস আসবেন।
কাব্য: ঠিক আছে আমি যাব কিন্তু আম্মু?
আমি: আম্মুকেও খুঁজে বের করবো।
কাব্য: আমিও তো জানিনা আম্মু কোথায় আছেন বা বেচ…
আমি: প্লিজ এসব বলো না আমি আম্মুকে ঠিক খুঁজে বের করবো।
কাব্য: হুম।
আমি: এবার ঘুমুতে দাও প্লিজ।
বিছানায় এসে শুতেই কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো, এতো রাতে কে ফোন করলো?
আমি: কে ফোন দিয়েছে?
কাব্য: শুভ্রা।
আমি: আমার হাতে দাও। (কাব্য’র থেকে ফোন এনে আমি রিসিভ করলাম)
শুভ্রা: কাব্য শুননা আ…
আমি: মাঝরাতে ফোন দিয়ে ন্যাকামি হচ্ছে।
শুভ্রা: এই তুমি ফোন রিসিভ করেছ কেন আর তুমি কাব্য’র কাছে নাকি? তোমাদের তো একসাথে থাকার কথা না।
আমি: ওমা তাই বুঝি, তাহলে কাব্য’র বুকে কি আমার আত্মা ঘুমাচ্ছে?
শুভ্রা: আমি তো তোমাদের আলাদা করার জন্য পি…
আমি: আমাদের আলাদা করা এতো সহজ না।
শুভ্রা: শুনো আমি কাব্য’কে ভালোবাসি আর তোমাদের ডিভোর্সটা খুব তাড়াতাড়ি করাবো এখন ওর বুক থেকে সরো বলছি।
আমি: ডাক্তারবাবু আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরো তো।
শুভ্রা: তিলোত্তমা আমি কিন্তু তোকে খুন করবো। (আরে কাব্য দেখি সত্যি সত্যি দুষ্টুমি শুরু করে দিছে আমি তো শুভ্রাকে রাগানোর জন্য বলেছি। কাব্য’কে সরিয়ে দিতে চাইলাম ও উল্টো আমাকে জরিয়ে ধরে আমার গলায় নাক ঘষতে শুরু করেছে)
শুভ্রা: কিরে কথা বলছিস না কেন ভয় পেয়েছিস খুন এর কথা শুনে?
আমি: স্বামী যদি বুকে জরিয়ে ধরে এভাবে আদর করে তাহলে কি মুখ দিয়ে কথা আসবে তুমিই বলো তো?
শুভ্রা: আমি যখন বলেছি তোদের আলাদা করবো তাহলে করবোই প্রয়োজন হলে আবারো আরশির সাহায্য নিবো।
আমি: তোমাদের হাতে বেশি সময় নেই যা করার করে নাও কারণ খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাদের পুলিশে দিবো।
কাব্য: তিলো ফোনটা রাখো তো তোমাকে একটু ভালোভাবে আদর করতে দাও।
শুভ্রা: কাব্য কি বলছ এসব আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কাব্য: তুই কিরে শুভ্রা মাঝরাতে ফোন করে দুজন দম্পতির মিলন নষ্ট করছিস ফোন রাখ বলছি। (কথাটা বলেই কাব্য আমার গলার কাছে কামর বসিয়ে দিলো)
আমি: ডাক্তারবাবু আস্তে…
শুভ্রা: উফফফ অসহ্য।
কাব্য: কি ফোন রেখে দিয়েছে?
আমি: বেচারা ফোন এতোক্ষণে আছাড় খেয়ে নিহত হয়ে গেছে।
কাব্য: আর ভুলেও শুভ্রা মাঝরাতে ফোন করবে না হাহাহা।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: এইতো তুমি আবারো আমার হাসি দেখছ।
আমি: কচু দেখছি এই তুমি এতো সুন্দর কেন? সব মেয়েরা তোমার জন্য পাগল কেন? কালো হতে পারলে না তাহলেই তো আমাকে আর এতো জামেলায় পড়তে হতো না। (কাব্য আমার একটা হাত চেপে ধরে আমার বুকের উপর ওর তুতুনি রেখে আমার চোখের দিকে তাকালো)
কাব্য: আমি কালো হলে বুঝি তুমি আমাকে ভালোবাসতে?
আমি: ভালোবাসা সুন্দর চেহারা দেখে হয় না, সুন্দর মন দেখে হয়। তুমি প্রথম যেদিন হসপিটালে আমাকে ভালোবাসার কথা বলেছিলে তখন আমার বিশ্বাস হয়নি কিন্তু পরে তোমার পাগলামি কান্না সব কিছু দেখে বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাস আর তাই আমিও ভালোবেসেছি বুঝেছ ডাক্তারবাবু? (কাব্য’র নাকটা ধরে টেনে দিলাম)
কাব্য: হু বুঝেছি এবার আদর করতে দাও।
আমি: এই না প্লি…(আমাকে বলার সুযোগ না দিয়েই ওর ঠোঁট দুটু আমার ঠোঁটে ডুবিয়ে দিলো)
জানিনা আব্বুর অভিমান কিভাবে ভাঙাবো, আব্বু আসবেন কিনা সেটাও জানিনা কিন্তু আব্বুকে তো ফিরিয়ে আনতেই হবে। খুব ভয় হচ্ছে আমি পারবো তো? তার উপর আরশির লোকদের ভয়, সেদিনের মতো যদি আজ আবার…
কাব্য: উফফফ তোমার ভেজা চুলের গন্ধ আমাকে একেবারে মাতাল করে দেয়। (আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছিলাম আর এসব ভাবছিলাম হঠাৎ কাব্য কোথা থেকে এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো)
আমি: আরে কি হচ্ছে রেডি হতে হবে তো ছাড়ো।
কাব্য: তিলো আব্বু যদি না আসেন? (কাব্য আমাকে ছেড়ে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
আমি: আসবেন দেখো আমরা ঠিক আব্বুকে ফিরিয়ে আনতে পারবো।
কাব্য: হুম।
কাব্য আর আমি রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ড্রয়িংরুমে আসতেই হিয়ার সামনে পরে গেলাম।
হিয়া: এতো সকালে তোমরা কোথায় যাচ্ছ?
কাব্য: আ…
আমি: এখন বলা যাবে না সারপ্রাইজ…
হিয়া: সারপ্রাইজ?
আমি: হুম বিশেষ করে তোমার জন্য। আসি? (হিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হয়তো ভাবছে কিসের সারপ্রাইজ, ও তো আর জানেনা এতো বছর পর নিজের আব্বুকে ও কাছে পাবে)
আমি: ডাক্তারবাবু চলো।
কাব্য’কে গাড়িতে রেখে আমি একা আসলাম, কলিংবেল চাপতেই আব্বু এসে দরজা খুলে দিলেন। এই প্রথম উনাকে সামনাসামনি দেখছি এর আগে তো শুধু পুরনো পিক গুলো দেখেছি। আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, উনার পায়ে ধরে সালাম করলাম।
আব্বু: তুমি কে মা, এভাবে আমাকে সালাম করছ?
আমি: ভিতরে গিয়ে কথা বলি?
আব্বু: হুম আসো।
ড্রয়িংরুমে এসে বসতেই উনি আবার প্রশ্ন করলেন।
আব্বু: বললে নাতো তুমি কে?
আমি: আচ্ছা এই বাসায় আর কেউ থাকে না? না মানে অন্য কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না তাই জিজ্ঞেস করলাম। (আম্মু এখানে থাকলে তো উনি অবশ্যই বলবেন)
আব্বু: না মা আমি একাই থাকি আমার কেউ নেই।
আমি: সত্যি আপনার কেউ নেই? (আব্বুর মুখটা মলিন হয়ে গেলো, পরিবারের সবাই থেকেও নেই এইটার কষ্ট তো আর কম না)
আব্বু: কিন্তু তুমি কে?
আমি: আপনার কাব্য’র…
আব্বু: আমার কাব্য? (চমকে উঠলেন উনি)
আব্বু: তারমানে তুমি আমার বৌমা? (দূরের সোফাটায় বসে ছিলেন উনি, উঠে এসে আমার মাথায় হাত রাখলেন। উনার চোখ দুটু ভিজে গেছে)
আমি: আব্বু আমি আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি যাবেন না আপনার ছেলে মেয়ের কাছে?
আব্বু: আমার কাব্য আর হিয়া কেমন আছে?
আমি: বাবা মা ছাড়া সন্তান যেমন থাকে তেমনি আছে। (উনি মাথা নিচু করে চুপচাপ কেঁদে যাচ্ছেন)
আমি: আব্বু আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে কিন্তু আপনার ছেলেও এসেছে। (অবাক হয়ে তাকালেন উনি)
আব্বু: সত্যি বলছ মা?
আমি: হুম।
কাব্য’কে একটা মিসডকল দিতেই কলিংবেল বেজে উঠলো। আব্বু পাগলের মতো গিয়ে দরজা খুললেন। কাব্য আব্বুকে সালাম করতে যাবে তখনি আব্বু ওকে টেনে বুকে নিলেন। দুজনেই কাঁদছে আর আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে ওদের মিলন দেখছি। বাবা ছেলের ভালোবাসার কাছে আজ সব রাগ অভিমান হেরে গেলো।
চলবে?