রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৯

0
3811

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

পুরো এক সপ্তাহ হসপিটালে থেকে তারপর বাসায় আসতে পারলাম। বাসার সামনে এসে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম, হসপিটালে এতো দিন থাকা যায়। কাব্য যে কিভাবে সারাটা দিন হসপিটালে কাটায়…
আমি: আরে কি করছ ডাক্তারবাবু?
কাব্য: দেখতেই তো পারছ কি করছি।
আমি: হ্যাঁ দেখছি কিন্তু আমি তো হেটে যেতে পারবো কোলে নিয়েছ কেন?
কাব্য: তুমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হওনি তাই।
আমি: তাই বলে এখান থেকে বাসার ভিতরে…
কাব্য: উফফফ তুমি না বড্ড বেশি কথা বলো। (কাব্য’র ধমক শুনে চুপ হয়ে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতর চলে যাবো তাও এইটুকু জায়গা ও আমাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে)
হিয়া: এইতো ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে চলে এসেছে।
ভাবি: এখানে বসিয়ে দাও। (কাব্য আমাকে ড্রয়িংরুমে সোফায় এনে বসিয়ে দিলো)
অয়ন: ভাবি তুমি এতোদিন হসপিটালে ছিলে বাসাটা কেমন যেন ফাঁকাফাঁকা লাগছিল।
ভাবি: হ্যাঁ এখন ওর সামনে বেশি বকবক করোনা ও কিন্তু এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।
আমি: ভাবি আমি ঠিক আছি সুস্থ হয়ে গেছি তোমরা এতো চিন্তা করোনা।
কাব্য: হ্যাঁ তুমি এতোটাই সুস্থ হয়ে গেছ যে এখন তুমি দৌড়াতে পারবে। (কাব্য’র কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম, সত্যিই তো আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হইনি)

হিয়ার কাধে মাথা রেখে বসে আছি আর সবাই গল্প করছে। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।
কাব্য: ফারাবী এসেছে মনে হয় আমি দেখছি। (কাব্য দরজা খুলে দিতেই মামি এসে তাড়াহুড়ো করে ভিতরে ঢুকলেন)
মামি: তমা।
আমি: মামি তুমি এখা…
মামি: এতো অবাক হচ্ছিস কেন আমি তোকে দেখতে এসেছি।
আমি: বাহ্ এক সপ্তাহের উপর হসপিটালে থেকে আসলাম তখন দেখতে যাওনি আর আজ বাসায় আসা মাত্রই দেখতে চলে আসলে।
ভাবি: মামি আপনি বসে কথা বলুন না। (মামি এসে আমার পাশে বসলেন)
মামি: আসলে আমি জানতাম না তুই এতোটা অসুস্থ সেদিন তিশা বলছিল তুই অসুস্থ আমি এতোটা কানে নেইনি কিন্তু আজ তিশা ওর মায়ের সাথে কথা বলছিল তোর বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে এই ব্যাপারে, তাই তো ছুটে আসলাম তোকে দেখতে। (ব্যাপার কি মামি হঠাৎ এতো ভালো হয়ে গেলো, কোনো না কোনো কাহিনী তো নিশ্চয় আছে। আচ্ছা এসবের পিছনে মামির হাত নেইতো)
মামি: কিরে কথা বলছিস না যে?
কাব্য: মামি এই বিষয়ে তিলোকে কিছু না বলাই ভালো।
মামি: ঠিক আছে বাবা।
কাব্য: আপনি রেস্ট নিন আমি তিলোকে নিয়ে রুমে যাচ্ছি। (কাব্য আবার আমাকে কোলে তুলে নিলো, সবাই স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে কিন্তু মামি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কাব্য’র বুকের শার্ট খামছে ধরে মাথাটা ওর বুকের মধ্যে এলিয়ে দিলাম। কাব্য সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠতে উঠতে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকালো)
আমি: এভাবে ভ্রু কুচকাচ্ছ কেন?
কাব্য: তুমি হাসছ কেন?
আমি: বউকে কোলে করে নিয়ে চলাফেরা করতে হয় তোমার কি কষ্ট এইটা ভেবেই হাসছি।
কাব্য: ওহ তাই তো আমার তো খুব কষ্ট হয় এখনো হচ্ছে, আমার তো এখন তোমাকে ঠাস করে ফেলে দেওয়া উচিত।
আমি: এই না না। (ভয়ে দুহাত দিয়ে কাব্য’র গলা জরিয়ে ধরলাম)

কাব্য আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে জানালা গুলো খুলে দিলো। কতোদিন পর নিজের রুমে আসতে পেরেছি।
আমি: কতোদিন পর বাসায় আসছি তাই না?
কাব্য: হ্যাঁ আমার লক্ষী আমার ঘরে ফিরে এসেছে।
আমি: লক্ষী কে?
কাব্য: আমার বউ।
আমি: তোমার বউ কে?
কাব্য: আমার তিলো পাগলী।
আমি: তোমার তিলো পাগলী কে?
কাব্য: তু… (কথা আটকে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো কাব্য। কতোদিন পর ওর মুখে এই পাগল করা হাসিটা দেখলাম)
কাব্য: তিলো সব ভুলে যাও আমরা আবার নতুন করে সব সাজাবো কেমন?
আমি: হু।
কাব্য: পেটের ব্যথা কমেছে? (কি বলি এখন ওকে, পেটের ব্যথাটা যে এখনো কমেনি। কাব্য’কে বললে তো ও টেনশন করবে)
কাব্য: আর বলতে হবে না আমি উত্তর পেয়ে গেছি। (কাব্য আমার পেটের শাড়ি সরাতে সরাতে বললো)
আমি: আরে ডাক্তারবাবু কি করছ?
কাব্য: ডাক্তারবাবু তার বউয়ের চিকিৎসা করছে। (কাব্য আমার পেটে আলতো করে একটা চুমু খেলো)
কাব্য: চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে। (কাব্য’র দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আজ কতোদিন পর কাব্য এমনভাবে স্বাভাবিক হয়ে কথা বলছে, হাসছে)
কাব্য: তখন ভয় পেয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরেছিলে কেন, ভেবেছিলে সত্যি আমি তোমাকে ফেলে দিবো?
আমি: আস…
কাব্য: তোমার ডাক্তারবাবু তোমাকে কখনো কষ্ট দিবে না যদি কখনো পাও বুঝে নিও নিজের অজান্তে দিয়ে ফেলেছি। (আমার নাকের সাথে ওর নাক ঘসছে। দ্যাত নিজের প্রতি এখন রাগ হচ্ছে, আগে কেন ভয় পেতে গেলাম)
কাব্য: নিজের উপর রাগ করোনা বুঝেছ।
আমি: নিজের উপর রাগ করোনা বুঝেছ। আমি যে নিজের উপর রাগ করেছি তুমি বুঝলে কিভাবে?
কাব্য: আমাকে ভেঙাচ্ছ কেন আমি বুঝতে পেরেছি তাই বললাম। আসলে তুমি যখন নিজেই নিজের প্রতি রেগে যাও তখন তোমার নাকটা লাল হয়ে যায় আর আমার তখন… (কাব্য আমার ঠোঁটের কাছে ওর ঠোঁট দুটু এনে আমার চোখের দিকে তাকালো)
আমি: আর তোমার তখন কি?
কাব্য: তোমার লাল হয়ে যাওয়া নাকটায় কামড় বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে (কাব্য আমার নাকে আলতো করে একটা কামড় দিলো)
আমি: ফাজিল কোথাকার অসুস্থ বউয়ের সাথে রোমান্স হচ্ছে।
কাব্য: অসুস্থ বউয়ের সাথে রোমান্স করা যাবে না এইটা কোন বইয়ে লিখা আছে হু?
আমি: কোনো বইয়ে লিখা নেই তবে আমার আইনে আছে।
কাব্য: যে আইন আমার থেকে আমার তিলো পাগলীকে আলাদা করে নিবে সে আইন আমি মানি না বুঝেছ?
আমি: হ্যাঁ বুঝেছি কিন্তু কি করছ এসব?
কাব্য: যা করছি তাতো দেখতেই পারছ। (কাব্য আমার পেট থেকে চুমু দিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠছে। গলায় চুমু দিয়ে একটা হাত আমার গালে রাখলো তারপর আমার ঠোঁটের উপর ওর ঠোঁট রাখলো। একটা হাত দিয়ে কাব্য’র ঘাড়ের কাছের চুলগুলো মুষ্টি করে ধরলাম সাথে সাথে দরজায় টোকা পড়লো, ওর চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে ওকে সরাতে চাইলাম। কাব্য আমার ঠোঁট দুটু ওর ঠোঁটের মধ্যে রেখেই আমার চোখের দিকে তাকালো। রাগে কাব্য’র চোখ দুটু লাল হয়ে আছে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু কাব্য তো আমাকে ছাড়ছেই না, ওদিকে কে যেন দরজায় টোকা দিয়েই যাচ্ছে)
কাব্য: নাও ছেড়ে দিলাম আর হাসি চেপে রাখতে হবে না মন খুলে হাসো। (হাসি আটকানোর জন্য একটা হাত দিয়ে মুখ ঢাকলাম, কাব্য দেখে আরো রেগে গেলো)
কাব্য: যে এসেছে তাকে তো এখন আমি…
আমি: আরে ডাক্তারবাবু… (কাব্য রাগ নিয়ে দরজা খুললেও হিয়াকে দেখে ওর সব রাগ ফুস)
হিয়া: কখন থেকে ডাকছি এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে (কাব্য কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তাই মাথা চুলকাচ্ছে)
হিয়া: নাও ভাবিকে খাবার খাইয়ে দিয়ে ওষুধ দাও।
কাব্য: ঠিক আছে রেখে যা। (হিয়া খাবার রেখে আমার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো। হিয়া চোখ টিপ দিলো কেন)
কাব্য: কি ভাবছ?
আমি: হিয়া চোখ টিপ দিলো কেন?
কাব্য: জানিন… (কাব্য অর্ধেক বলে আটকে গেছে, আমার পেটের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর এমন চাওয়া দেখে পেটের দিকে তাকালাম, ইহহ পেটে তো শাড়ি নেই তারমানে…)
কাব্য: আমার দিকে রাগি চোখে তাকাচ্ছ কেন আমি কিছু জানিনা।
আমি: নিজে সরিয়ে এখন জানেনা, ইসসস হিয়া বুঝে পেলেছে তুমি আমাকে…
কাব্য: আদর করছিলাম তাই তো, হিয়া বুঝলে কি হয়েছে আমি আমার বউকেই তো আদর করছিলাম।
আমি: হিয়া তো বোন তাই না?
কাব্য: আমার বোন হলেও তোমার তো ননদ সমস্যা নেই।
আমি: না হিয়া আমারো বোন।
কাব্য: আচ্ছা বাবা হিয়া তোমারই বোন এখন খেয়ে নাও।
আমি: হু।

ছোট বাচ্চাদের মানুষ যেভাবে যত্ন করে কাব্য সেভাবে আমার যত্ন করছে। নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিয়েছে, ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে আ…
কাব্য: কি হলো মিটিমিটি হাসছ যে?
আমি: ভাবছি হাজবেন্ড ডক্টর হলে ভালোই হয় অসুস্থ হলে বেশি বেশি সেবা পাওয়া যায়।
কাব্য: আর ওইটা বলো হাজবেন্ড রোমান্টিক হলেও ভালো হয় অসুস্থ হলেও আদর পাওয়া যায়।
আমি: দ্যাত তুমি না। (হঠাৎ কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো। ফোন নিয়ে কাব্য জানালার কাছে চলে গেলো)

কাব্য: আরে লোক দুটু তো আর আকাশে উড়ে উড়ে ছাদে আসেনি এসেছে তো নিচ থেকেই তাহলে সিসি ক্যামেরায় দেখা যাবে না কেন? (ওপাশ থেকে কে কি বলছে শুনতে পাচ্ছি না তবে এইটা বুঝতে পারছি কাব্য লোক দুটুকে খুঁজছে)
কাব্য: বাইরের ক্যামেরা নাহয় নষ্ট করে দিয়েছিল কিন্তু হসপিটালে তো অনেক ক্যামেরা কোনো ক্যামেরায় কি ধরা পড়েনি? (কাব্য যে খুঁজছে ওদের ওই মেয়েটা আবার হিয়ার কোনো ক্ষতি করবে নাতো। আমি কি কাব্য’কে নিষেধ করবো)
কাব্য: দ্যাত ফোন রাখ তিলো সুস্থ হলেই আমি কক্সবাজার আসছি। (কাব্য ফোন কেটে দিয়ে আমার পাশে এসে বসলো)
কাব্য: তিলো এখন ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।
আমি: ওকে।

কাব্য লোক দুইটাকে পাগলের মতো খুঁজছে বুঝতে পারছি কিন্তু ওই মেয়েটা যদি হিয়ার ক্ষতি করে তাই ভয় হচ্ছে। কাব্য’কে নিষেধ করলেও শুনবে না কারণ কাব্য আমাকে ভালোবাসে, যারা আমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে কাব্য তাদের ছেড়ে দিবে না। কাব্য আমাকে এতোটাই ভালোবাসে যে এতো অসুস্থ ছিলাম আমি ওর একটু একটু ভালোবাসা সেবা দিয়ে আমাকে সুস্থ করে তুলেছে। একটা ছোট বাচ্চাকে যেভাবে যত্ন করা হয় কাব্য আমাকে সেভাবে যত্ন করছে। কতোটা ভালোবাসলে মানুষ এতো ধৈর্য নিয়ে দিনের পর দিন এভাবে যত্ন করে যেতে পারে কাব্য আমার জীবনে না আসলে বুঝতামই না।

মাঝরাতে হঠাৎ পেটের ব্যথায় ঘুম ভেঙে গেলো, কাব্য’কে ডাকার জন্য হাত বাড়ালাম কিন্তু কাব্য তো আমার পাশে নেই। তাকিয়ে দেখি কাব্য কি যেন লিখছে, আশ্চর্য এতো রাতে আর ডিম লাইটের আলোতে কাব্য কি লিখছে? আচ্ছা ডায়েরি নয় তো? কাব্য হঠাৎ ডায়েরিটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে পা বাড়ালো। কাব্য কোথায় যাবে আমি দেখতে পারবো না কারণ ওর পিছু পিছু যাওয়া সম্ভব না পেটে ব্যথা করছে। যেভাবেই হউক কাব্য’কে আটকাতে হবে যেন কাব্য ভুলে ডায়েরিটা এই রুমেই রেখে দেয়।
আমি: ডাক্তারবাবু… (আমার ডাক শুনে কাব্য থেমে গেলো, ডায়েরিটা টেবিলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি আমার কাছে আসলো)
কাব্য: কি হয়েছে তিলো কষ্ট হচ্ছে তোমার।
আমি: হুম পেটে ব্যথা করছে আর এই রুমে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
কাব্য: এই রুমে…
আমি: আমাকে বারান্দায় নিয়ে চলো প্লিজ।
কাব্য: এতো রাতে।
আমি: হু।
কাব্য: ঠিক আছে।

কাব্য আমাকে কোলে করে এনে বারান্দায় রাখা কাউছ’টায় শুয়ে দিলো।
আমি: তুমি কোথায় যাচ্ছ।
কাব্য: আসছি একটু।
আমি: কোথাও যাবে না আমার ভয় করে এখানে বস। (কাব্য চুপচাপ এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো, কাব্য’র বুকে মাথা রেখে ওকে জরিয়ে ধরলাম। সকালে ওর আগে আমাকে ঘুম থেকে উঠতে হবে যেন ডায়েরিটা পেয়ে যাই। রাতে কাব্য’র এখান থেকে যাওয়ার সুযোগ নেই ডায়েরি লুকাবে কিভাবে)
কাব্য: ঘুমিয়ে পড়ো তিলো পাগলী।
কাব্য এক হাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে আরেক হাত দিয়ে আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। কাব্য’কে জরিয়ে ধরে চুপচাপ শুয়ে রইলাম, সকালে শুরু হবে আব্বু আম্মুকে খুঁজে বের করার জন্য আমার প্রথম কাজ।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে