রোমান্টিক_অত্যাচার-২ পর্ব-১৮

0
3302
রোমান্টিক_অত্যাচার-২
পর্ব-১৮
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi

-“আই জাস্ট কিল……
আশফি পুরো বাক্যটা শেষ করতে পারলোনা মাহির চোখের দিকে তাকিয়ে।মাহির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে ব্যাথা পেয়ে।সেটা দেখে আশফি থেমে গেল।মাহির চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর মাহির গাল থেকে হাত সরিয়ে নিল।মাহির দিকে এক নজর না তাকিয়ে আশফি ড্রেসআপ পরে ড্রয়িংরুমে চলে এল।আর মাহি আশফির এমন বিহেভে এতোটা ভয় পেলো আর অবাক হলো যে ওর সামনে যদি কেউ হঠাৎ করে মার্ডার ও হতো তাহলেও হয়তো এতো পরিমাণ ভয় পেতোনা বা অবাক হতোনা।আশফি ওভাবে মাহিকে ধাক্কা দেওয়াতে মাথার পেছনে সব থেকে বেশি জোড়ে আঘাত পেয়েছে।মাথার পেছনে হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখলো।মাহি একদম পাথরের মূর্তির মত দাড়িয়ে রইলো মাথা নিচু করে। আর চোখ থেকে শত পরিমাণ পানি পড়তে থাকলো ফ্লোরে।আশফি ওর সাথে কেন এমন করলো?কি করেছে ও যার জন্য আশফি ওর সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করলো?এসব চিন্তাভাবনাই ঘুরছে ওর মাথায়।নিজের সাথে মাহি কথা বলতে থাকলো,
-“এমন বিহেভ আশফি আমার সাথে লাস্ট করেছে আমাদের বিয়ের প্রথমদিকে। আর আজ করলো।কিন্তু আজকে আমার কি অপরাধ ছিল,কি ভুল করেছি আমি?আমি জানতে চাই।
মাহি দৌড়ে ড্রয়িংরুমে চলে গেল।সেখানে গিয়ে দেখতে পেল আশফি সোফায় বসে টিভি দেখছে।যেটা ছিল অবিশ্বাস্য।কারণ আশফি এমন সময় কখনোই টিভি দেখেনা।মাহির কাছে সবকিছু অস্পষ্ট লাগছে।এমন কিছু ও করেছে যার জন্য আশফি এতো পরিমাণ রেগে আছে। মাহি ওর প্রশ্নগুলো করার জন্য যখন আশফির কাছে গেল ঠিক সেই মুহূর্তে টিভিতে নিউজ চ্যানেলে এমন কিছু নিউজ দেখালো যা দেখে মাহির মাথা ঘুরে যাওয়ার মত অবস্থা।মাহি দেখতে পাচ্ছে হুয়াং চ্যাং এর সাথে ওর বেশকিছু ছবি যেখানে হুয়াং ওর সাথে কিছুটা ক্লোজ হয়ে বসে আছে।আর মাহি হুয়াং চ্যাং এর কোম্পানির সাথে একটা ডিল কমপ্লিট করেছে যেখানে মাহি নিজে ঐ ডিলের পেপাড়ে সাইন করছে।আর সব শেষে দেখতে পেল গতকাল রাত থেকে হুয়াং নিখোঁজ।
এগুলো দেখে মাহি পুরো হতভম্ব হয়ে সোফার উপর বসে পড়লো।গতকাল ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মাহি মনে করার চেষ্টা করলো।কিছুটা মনে পড়লেও পুরো ঘটনাটা মাহি মনে করতে পারলোনা।ওর শুধু এটুকুই মনে আছে কাল বিকালে হুয়াং এর সাথে তার পার্টিতে গিয়েছিল তারপর ডিনার শেষে একটা মেয়ে তাকে ড্রিংকস খেতে দিয়েছিল যেটা খাওয়ার পর থেকে মাহির মাথা ঝিম ধরে গেছিল।এরপর ওর সাথে কি হয়েছে ও আর কিছুই মনে নেই। নিউজ দেখার পর আশফি ওর দিকে একবারও না তাকিয়ে উঠে বেডরুমে চলে গেল।
-“এর জন্যই আশফি আমার উপর এতোটা রেগে আছে?
হঠাৎ একটা সার্ভেন্ট আসলো চান্দুকে কোলে করে।
-“ম্যাম!বাবুসোনা তো ঘুম থেকে উঠে গেছে। খুব কান্না করছে।আসলে কাল বিকালের পর থেকে আপনার থেকে ও খাবার পাইনি।রাতে স্যার বহু কষ্টে ওকে পাওডার মিল্ক বানিয়ে খাইয়েছে একটু।এখন ওর আপনার থেকে খাবার প্রয়োজন।না হলে ও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
মাহি সার্ভেন্টের কথা শুনে এতোটা চমকে গেলো যে মনে হল আকাশ থেকে পড়লো ও।
-“কি বলছো তুমি?কাল রাতে ও পাওডার মিল্ক খেয়েছে?কেনো আমি কোথায় ছিলাম তখন?
-“ম্যাম কাল রাতে তো আপনি…..
সার্ভেন্ট কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো।তখন মাহি বলল,
-“কাল রাতে আমি কি?চুপ করে গেলে কেনো?
বলো?
-“কাল রাতে আপনি পুরো ড্রাংক অবস্থায় ছিলেন।
-“ড্রাংক অবস্থায় ছিলাম?আচ্ছা কাল আমি কখন বাসায় ফিরেছি, কি অবস্থায় ফিরেছি তুমি তো সবকিছু জানো।তোমার স্যার কখন ফিরেছে কাল?কাল রাতের ঘটনাগুলো আমাকে একটু বলো তো।
তারপর সার্ভেন্টটি মাহিকে কাল রাতে ঘটে যাওয়া সবকিছু বলল।মাহি শুনে কি করবে কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছেনা।শুধু একনাগাড়ে কান্না করে চলেছে।
-“এখন বুঝতে পারছি আশফি কেনো এতোটা রেগে গেছে।আমি ওকে কতোটা কষ্ট দিয়েছি।যে কখনোই আমার কষ্ট সহ্য করতে পারেনা সে আজ আমাকে নিজে আঘাত করেছে।কোনো বাইরের পুরুষ আমার হাতটা সামান্য ধরলে যে পরিমাণ রেগে যায় সেখানে কাল রাতে আমাকে অন্য এক পুরুষের সাথে একই বিছানায়….ছিঃ।আমার তো এখন মরে যেতে ইচ্ছা করছে।মরলেও হয়তো আমার শান্তি হবেনা।
-“ম্যাম বাবুসোনাকে এখন একটু তাড়াতাড়ি খাইয়ে দিন।কাল থেকে খুদাতে খুব কষ্ট পাচ্ছে।
মাহি জলদি সার্ভেন্টটার থেকে চান্দুকে নিয়ে ফিডিং করালো।এরপর অনেকক্ষণ চান্দুকে নিজের কাছে রাখলো ওকে আদর করলো।
-“মামনি, আমি তোকে কাল খুব কষ্ট দিয়েছি। তুই আমাকে মাফ করে দে সোনা।আমি আর কোনোদিনও এমন ভুল করবোনা।এতো বড় পাপ করেছি আমি জানিনা স্বয়ং আল্লাহ্ আমাকে ক্ষমা করবে কিনা।তোর বাবাকে ও আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।ওর সামনে দাড়াতেই আমার বিবেকে বাঁধছে।কোনোদিন আমি ওকে এমন একটা ব্যাপারে কষ্ট দিব তা আমি জীবনেও ভাবিনি।ওর সাথে আমার কথা বলতে হবে।ওর থেকে যেভাবেই হোক আমার ক্ষমা চাইতে হবে।ওর রাগ ভাঙ্গাতে হবে।
মাহি চান্দুকে সার্ভেন্টের কাছে দিয়ে আশফির কাছে গেল।বেডরুমে ঢুকে দেখতে পেল আশফি বেলকনিতে দাড়িয়ে কিছু একটা করছে।ওর কাছে গিয়ে মাহি দেখলো গানটাতে গুলি লোড করছে।সেটা দেখে মাহির প্রাণটা উড়ে যাওয়ার মত অবস্থা।মাহি দৌড়ে গিয়ে ওর হাত থেকে গানটা নিয়ে নিল।
-“আশফি তুমি এটা নিয়ে কি করতে চাচ্ছ?
আশফি মাহির দিকে চোখগুলো বড় বড় করে রাগী চোখে তাকালো।মাহির কিছুটা কাছে গিয়ে দাড়ালো আশফি।মাহির দিকে তাকিয়ে মাহির হাত থেকে এমনভাবে গানটা কেড়ে নিল যে মনে হলো আশফির কোনো জিনিস ধরার মত অধিকারই মাহির নেই।গানটা নিয়ে আশফি বেলকোনি থেকে চলে এলো।মাহি পিছু থেকে ওকে ডাক দিল তখন।
-“আশফি?আমার সাথে প্লিজ কথা বলো।
আশফি গিয়ে বিছানার একপাশে বসলো পিসিটা হাতে করে।আর পাশে গানটা রেখে দিল।মাহি গিয়ে আশফির পায়ের কাছে বসে পড়লো।তারপর আশফির কোলের উপর মাথা রাখলো।মাথা রেখে কান্না করে দিল।হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।কাঁদতে কাঁদতে আশফিকে বলল,
-“আশফি প্লিজ আমার সাথে কথা বলো। আমাকে পারলে আরো বেশি করে আঘাত করো।কিন্তু এভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখোনা,আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিওনা।আমি থাকতে পারবোনা এভাবে।মরে যেতে ইচ্ছা করছে আমার।আমি ভাবিনি এভাবে তোমাকে আমি কষ্ট দিব।বিশ্বাস করো আমি জানতাম না ও আমাকে মিথ্যা বলেছে।
আশফি মাহির একটা কথার ও উত্তর দিলনা। গানটা হাতে করে মাহির কাছ থেকে উঠে চলে আসছিল। মাহি উঠে দৌড়ে গিয়ে আশফিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
-“আশফি প্লিজ আমার সাথে এমন করোনা। আমাকে মাফ করে দাও।তুমি তো জানো আমি জেনে বুঝে কখোনই এমন ভুল করবোনা। আমি জানি তোমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।তোমার যত রাগ আছে সব আমার উপর ঝেড়ে ফেলো। আমাকে আরো আঘাত করো আমাকে অনেক মাড়ো।তবু আমার সাথে কথা বলো।এবার আশফি সামনে ঘুরে মাহিকে টেনে কাছে নিয়ে ওর ঘাড় চেপে ধরে ওর কপালে গানটা ঠেঁকিয়ে ধরলো।মাহি খুব চমকে গেল আর প্রচন্ড ভয় পেল।ও শুধু আশফির দিকে তাকিয়ে থাকলো কোনো কথা বলতে পারলোনা।আশফি বলল,
-“আমি যদি সত্যি পারতাম তাহলে এতক্ষণে তোমার শরীরটা আগে গুলি করে ঝাঝরা করে ফেলতাম।সেটাও করতে পারছিনা আবার নিজেকেও শেষ করতে পারছিনা।শুধু তখন থেকে চেষ্টায় করে যাচ্ছি।গানটা কাল রাতে ফাঁকা করে ফেলেছি।আবার লোড করেছি নিজেকে শেষ করবো বলে।
-“তোমার যদি আমাকে এতো ঘৃণা হয় তাহলে আমাকে শেষ করে দাও।কিন্তু নিজের কোনো ক্ষতি করবেনা তুমি।তোমার মেয়ের কসম করে বলছি।
আশফি মাহির কপাল থেকে গানটা সরিয়ে নিয়ে রুমের বাইরে চলে যাচ্ছিল।মাহি দৌড়ে গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিল।মাহির এখন ভীষণ ভয় করছে যদি আশফি নিজের কোনো ক্ষতি করে বসে?দরজা বন্ধ করা দেখে আশফি বলল,
-“আমাকে যেতে দাও।না হলে সত্যি কোনো অঘটন ঘটে যাবে।
-“ঘটে যাক।আমার সাথে সেটা ঘটুক।তোমাকে আমি একা ছাড়বোনা।তোমার কোনো ক্ষতি আমি হতে দিবনা।
-“হাহ্….আমার জীবনের সব থেকে বড় ক্ষতি তো কাল রাতেই হয়ে গেছে।
-“কি বলছো তুমি এগুলো?কি ক্ষতি হয়েছে তোমার?ও তো আমার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।হ্যা হয়তো চেষ্টা করেছিল কিন্তু সেটা তো আমার মাতাল অবস্থায়।আমি সুস্থ থাকলে এমন কিছু হতোনা আশফি।বুঝতে চেষ্টা করো আমি তখন আমার নিয়ন্ত্রনে ছিলাম না।আমি যদি জানতাম কাল ও আমাকে মিথ্যা বলেছে তাহলে আমি কি ওর সাথে যেতাম?ও ওর স্বার্থ হাসিলের জন্য এমন একটা কাজ করেছে।তুমি আমাকে ভুল বুঝছো আশফি।আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে ওর সাথে পার্টিতে যাইনি।আমি বুঝতে পারেনি যে…..
-“এই?তুমি কি বুঝতে পারোনি?হ্যা?কোনটা বুঝতে পারোনি?স্বামীকে রেখে, স্বামীর পারমিশন না নিয়ে, তাকে না জানিয়ে একটা অপরিচিত লোকের সাথে একটা অচেনা জায়গায় চলে যেতে হয়না সেটা বুঝতে পারোনি?
-“আমি তোমাকে বহুবার কল করেছি কিন্তু তুমি ফোনটা রিসিভ করোনি।আর ও আমাকে বলেছিল যে তুমি আমাকে যেতে বলেছো ওর সাথে। সেটা তুমি ওকে ফোনে জানিয়েছো ২:১০ এ।আর আমার সাথে তোমার কথা হয়েছিল ঠিক দুটোর সময়।তারপর থেকে তোমার ফোন সুইচড অফ।আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিলাম ওর কথাগুলো।
-“কেমন বিশ্বাস তোমার?যে যাকে তুমি কোনোদিন চেনোনা,যাকে কোনোদিন দেখোনি তার সাথে কোনোদিন কথা বলোনি আর তার বলা কয়েকটা কথা তুমি এতো ইজিলি বিশ্বাস করে নিলে?কেমন সেন্স তোমার?পার্টিতে যাওয়ার পর ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দিলে।একবারো তোমার মনে পড়লোনা যে বাড়িতে তুমি চান্দুকে একা রেখে গেছো। ও কতটুকু সময় না খেয়ে থাকতে পারবে সেটা তোমার খেয়ালে আসলোনা।তুমি কিনা একজন সার্ভেন্টের উপর দায়িত্ব দিয়ে গেছো ওর।
-“আশফি আমি ওখানে যাওয়ার পর থেকে সবাই আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল যে আমি সুযোগ পাইনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসার।তারপর যখন ওদের থেকে ফ্রি হতে পেরেছি তখন গার্ডগুলোকে খুঁজে পাইনি।
-“শাট আপ ব্লাডি ফুল।তোমার যদি সত্যি দায়িত্ব জ্ঞান থাকতো তুমি শত ভীড়ের মাঝেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারতে।এসব অযৌক্তিক কথা আমাকে বলতে আসবেনা। আর কি বললে,তুমি আমাকে বহুবার ফোন করেছো তা আমি রিসিভ করতে পারিনি। আমি যখন রিসিভ করতে পারিনি তখন তোমার উচিত ছিল আমার সেক্রেটারির কাছে ফোন করা বা মেসেজ করা।সেক্রেটারি ফোন রিসিভ না করলে আমি যে ওখানকার অফিসে গিয়েছিলাম সেখানকার অফিসিয়াল নাম্বারে ফোন করা।এটলিস্ট আমাকে মেসেজ করে রাখতে পারতে।পরে দেখলেও আমি সেই মোতাবেক কোনো স্টেপ নিতে পারতাম। তার কোনোকিছুই তুমি করোনি।তুমি কি টিনেজার?তোমার কি বোধবুদ্ধি হয়নি? তুমি কি একদমই অবুঝ?তুমি তোমার বোধবুদ্ধির যে পরিচয় দিয়েছো তা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য?তোমার থেকে সেগুলো আশা করার মত?কি বলবে তুমি আমাকে?কি বোঝাবে তুমি আমাকে? তুমি যা করেছো আর যা দেখিয়েছো আমাকে তা যদি আমার জায়গায় তুমি দেখতে, বুঝতে পারতে আমার ভেতরটা তুমি কিভাবে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছো।মামনি মারা যাওয়ার পর এটাই আমার ৪র্থ তম আঘাত।মামনি,বাবা-মা মারা যাওয়াতে যতটা আঘাত পেয়েছি এটা তার থেকে কোনো অংশে কম নয়।
আশফির চোখে পানি চলে এসেছে।তবে সেটাকে চোখ বেয়ে গড়াতে দেইনি।আশফি মাহিকে বিছানার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখালো। তারপর বলল,
-“এই বিছানায় ঠিক এই জায়গাটাতে তুমি শুয়ে ছিলে আর তোমার শরীরে উপর ঐ জানুয়ারের বা** তোমার শরীরকে……
-“আশফি থামো,আমি শুনতে পারছিনা। আমার শরীর শিউড়ে উঠছে।
মাহি কান চেপে ধরে বলল কথাগুলো।
-“আমার কেমন লাগছে তাহলে?আমি কিভাবে সহ্য করবো মাহি?
আশফি এবার মাহির সামনে দাড়িয়ে ওর মিকে চেয়ে কথাগুলো বলতে শুরু করলো।
-“ও যদি জোড় করে ঢুকে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করতে চাইতো তাহলে আমি আমার মনকে বুঝ দিতে পারতাম।কিন্তু ও তো সুযোগ বুঝে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে।সেই সুযোগ করে দিয়েছো তুমি তোমার কিছু ভুল পদক্ষেপের মাধ্যমে।যা তোমার থেকে আনএক্সেপটেবল ছিল।
মাহি কিছু বলার মত ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা।কি বলে বোঝাবে মাহি আশফিকে?বোঝানোর মত কোনো উপায় বা ফাঁক ও রাখেনি।
-“এতোটা কেয়ারলেস,এতোটা ইররেসপন্সেবল,
এতোটা সিলিনেস এর পরিচয় দিয়েছি আমি যা আমার থেকে সত্যিই আশা করার মত নয়।
কিন্তু ঐ মুহূর্তে সত্যি আমার মাথায় এতোসব আইডিয়া কাজ করেনি।অনেক বড় ভুল করেছি আমি।আমাকে তার শাস্তি দাও,আশফি।কিন্তু আমাকে তোমার দূরে সরিয়ে দিওনা।আমি মরে যাবো।
আশফি কোনো কথা বলছেনা।মাহির চোখের দিকেও তাকাচ্ছেনা।আশফি মেনে নিতে পারছেনা মাহি এমন একটা ভুল কিভাবে করতে পারলো।এতোগুলো বছরে কাল মাহি সব থেকে বেশি আঘাত করেছে আশফিকে।যা একজন স্বামীর কাছে তা খুব যন্ত্রণাদায়ক।এমন ভুলের জন্য আশফি মাহিকে কি শাস্তি দিবে তা ও জানেনা।তবে মাহির ভুলের বিনিময়ে আশফি অনেক বেশি শাস্তি পাচ্ছে অন্তরে।আশফি বরাবর ই মাহিকে নিয়ে সব থেকে বেশি possessive. মাহির হাজার হাজার ভুলত্রুটি আশফি ক্ষমা করে দিতে পারলেও কিন্তু গতকাল রাতে করা মাহির ভুল তা ও কখনো ক্ষমা করতে পারবে কিনা সেটা ও জানেনা। কারণ ভাগ্যবশত আশফি ওখানে না পৌঁছালে মাহির সত্যি অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতো।আর আশফি শুধু এটাই ভাবছে।আরো সব থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছে কাল সারাটা রাত চান্দু খুদাতে কষ্টা পাওয়া দৃশ্য দেখে।ওর জীবনে এই দুইজন ব্যক্তিই আছে যাদের জন্য ও নিজের কলিজাটাও ছিড়ে দিতে পারবে।ও ভুলতে পারছেনা কাল রাতের ঐসব দৃশ্যগুলো।আজ আশফি অফিসে গেছে ঠিকই।কিন্তু অফিসের কোনো কাজই সে করতে পারেনি।সারারাত জেগে থাকা আর কাল রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্ট্রেস এসব মিলিয়ে আশফির শরীর একটু দুর্বল হয়ে পড়েছে।চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে আশফি চোখ দুটো বন্ধ করে আছে।ঘুমেও চোখ দুটো আবৃত হয়ে গেছে।সেক্রেটারি রুমে ঢুকে আশফিকে এমন অবস্থায় দেখে কিছু না বলেই চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেল।কিছুসময় বাদে একটা ফোন এসে আশফির ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিল। জেগে উঠে আশফি আজকে বহু কষ্টে অফিসিয়াল শেষ করে বাসায় ফিরে এল।আর মাহি এদিকে সারাদিন আশফির কথা চিন্তা করে দিন পার করে দিল।ড্রয়িংরুমে বসেছিল মাহি সন্ধ্যার সময়।তখন আশফি বাসায় ঢুকলো।মাহি উঠে দৌড়ে আশফির সামনে গেল।কিন্তু আশফি মাহিকে এড়িয়ে বেডরুমে চলে গেল।
-“আজকে ওর চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে কাল সারাটা রাত আর আজ সারাটাদিন ওর শরীর আর মনের উপর দিয়ে কি গেছে।কিন্তু ও আমাকে যতই এড়িয়ে চলুক আমি ওকে কখনোই একা থাকতে দিবনা।আমি বেডরুমে গেলাম ওর শরীর মুছে দেওয়ার জন্য।কিন্তু ও তো আমাকে যেভাবে এড়িয়ে চলছে তাতে আমি ওর ধারের কাছেই ঘেষতে পারছিনা। ড্রেস চেঞ্জ করে বাথরুমে চলে গেল শাওয়ার নিবে বলে।আধা ঘন্টার মত হয়ে গেছে বাথরুম থেকে বেরোনোর খবর নেই।এতো সময় লাগেনা ওর গোসল করতে।হয়তো আমার সামনে থাকতে ইচ্ছা করছেনা বলেই এভাবে আমাকে এভোয়েড করছে।আলমারী থেকে ওর টি শার্ট আর ট্রাওজারটা বের করে রাখলাম।ও বাথরুম থেকে বেরিয়ে বিছানার উপর থেকে ওগুলো নিয়ে পড়ে নিল।তারপর ওর পিসি আর মোবাইল ফোনটা নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো। আমি ওর পিছু পিছু গেলাম কিন্তু আমি রুমে ঢোকার আগেই ও দরজা বন্ধ করে দিল।আমি বহুবার দরজা নক করলাম।
-“আশফি?দরজাটা বন্ধ করলে কেনো?প্লিজ দরজাটা খুলো।তুমি আমাকে ছাড়া রাতে ঘুমাতে পারবেনা আমি সেটা জানি।তোমার মেয়েও তোমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারবেনা। তুমি ঘুম পাড়িয়ে না দেওয়া পর্যন্ত ও কিন্তু ঘুমাবেনা।
আশফি একটা কথাও বলল না।ও এতোটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে যে শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণের ভেতরেই ও ঘুমে তলিয়ে গেল।আর মাহি রুমের সামনে বসেই কাঁদতে শুরু করলো।
-“এতোটা খারাপ পরিস্থিতি আমার জীবনে কখনো আসবে তা আমি ভাবতে পারিনি।
আমার জীবনের এমন সর্বনাশ যে করেছে তাকে আমি রক্ষা পেতে দেবোনা।ওর জন্য আমার আশফি আমার থেকে এতো দূরে সরে যাচ্ছে,ওকে তো ছেড়ে দেওয়ার কোনো মানেই আসেনা।
মাহি চোখ মুখ থেকে পানি মুছে সোজা ওদের বেডরুমে চলে গেল। ড্রয়ার থেকে আশফির গান টা বের করলো। আজকে যেনো মাহির রাগটা আশফির মতই দেখাচ্ছে।গান টা হাতে নিয়ে গাড়িতে উঠে মাহি বেরিয়ে গেল।কিন্তু সেটা জোরপূর্বক। সিকিউরিটি ওকে যেতে দিতে চাইছিলনা।ওরা দেখতে পেয়েছে মাহি অস্বাভাবিক অবস্থায় বের হচ্ছে।এদিকে সার্ভেন্ট গুলো ও মাহিকে এভাবে বেরিয়ে যাওয়া দেখে আশফিকে ডাকতে শুরু করলো।ওদের ডাক আশফির কান পর্যন্ত না পৌছালেও সিকিউরিটির ফোন পেয়ে ওদের কাছ থেকে সবকিছু শুনে আশফি বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলো।যেমন অবস্থাতে ছিল ঠিক তেমন অবস্থাতেই আশফি গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে গেল।মাহি যে গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল তার থেকে দ্বিগুণ গতিতে আশফি গাড়ি চালিয়ে একটা ফাঁকা ব্রিজের উপর থেকে মাহিকে আটকালো।আশফি গাড়ি থেকে নেমে মাহির গাড়ির কাছো গিয়ে গাড়ির দরজা খুলল।
-“গাড়ি থেকে নামো।মাহি আমি খুব আস্তে করে বলছি গাড়ি থেকে নামো।
মাহি আশফির কথা শুনছিলনা।আশফি মাহিকে জোড় করে গাড়ি থেকে নামিয়ে ওকে টেনে ধরে কিছুদূর গেলো।সমুদ্রের সামনে গিয়ে একটা Boat ভাড়া করে মাহিকে সেখানে উঠিয়ে সমুদ্রের মাঝে গেল।এগুলো দেখে মাহি খুব অবাক হচ্ছিল।কিন্তু কিছু বলছিলনা।এবার আশফি কথা বলল,
-“ঠিক এখানে দাড়িয়ে ঐ কুকুরের বুকে আমার গানের ছয়টা গুলি গেঁথে দিয়েছি।তারপর সমুদ্রর মাঝে ওকে ফেলে দিয়েছি।ইচ্ছা ছিল কুকুরকে দিয়ে ওর বডিটা খাওয়াবো।কিন্তু সেটা করতে গেলে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যেতে হতো।আর এখন তুমি এটা(গান) নিয়ে যেভাবে ওর বাড়িতে ছুটে যাচ্ছিলে তাতে খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে পুলিশের হেফাজতে যেতে হতো কিংবা আমাকে যেতে হতো।সেটা চাইছিলে তুমি?
মাহি শুধু আশফির বলা কথাগুলো শুনছে আর চোখদুটোতে পানি ছলছল করছে ওর।কাল রাতে ও কতোটা ক্ষিপ্ত হয়ে গেছিল যে এক মুহূর্ত সময় ও দেরী করেনি হুয়াংকে মাড়তে।ওর রাগ সম্পর্কে মাহি জানে।হয়তো রাগের বশে ঐ মুহূর্তে মাহিকে ও আশফি কিছু করে ফেলতে পারতো। কিন্তু আশফির রাগের বশে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেও মাহির কোনো ক্ষতি ও কোনোদিন করতে পারবেনা।সেটা মাহি ও খুব ভালো করে জানে আর আশফি ও।
বেশ কিছু সময় ওরা কেউ কোনো কথা বলল না।আশফি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকলো আর মাহি আশফির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।সমুদ্রের মাঝে যে পরিমাণ বাতাস তাতে দুজনের শরীরে শীতে কাঁপুনি ধরার মত অবস্থা।মাহি হঠাৎ করে আশফিকে জড়িয়ে ধরলো।আর বলল,
-“আমার খুব শীত করছে।আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো না।
-“ওর গরম নিঃশ্বাস আমার গলায় লাগছে।ওর ছোঁয়া আমার শরীরে শীতের তীব্র অনুভুতির থেকেও বেশি তীব্র অনুভূতি জাগাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু পারছিনা। স্পর্শ করতে পারছিনা ওকে আমি।
আশফি মাহিকে একটুও জড়িয়ে ধরলোনা। সামনে দূর সমুদ্রের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলো।সমুদ্র সৈকতের নিকটবর্তী শহরটা ও আর দেখা যাচ্ছেনা এখন।মাঝে মাঝে কিছু জাহাজ আর বোটের লাইটের আলো এসে পড়ছে সমুদ্রের মাঝে।অনেক দূরে চলে এসেছে ওরা।মাহি এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ আশফিকে জড়িয়ে ধরে থাকলো।হঠাৎ করেই আশফি মাহিকে ছাড়িয়ে দিল।তারপর ওবে বলতে শুরু করলো,
-“শরীরের কোনো জায়গা পুড়ে গেলে সেখানে একটা ক্ষত সৃষ্টি হয়ে যায়।খুব ব্যাথা অনুভব হয়।সেই জায়গাটাতে আজীবন একটা পোড়া দাগ থেকে যায়।কিন্তু সেখানে ব্যাথা থাকেনা। তখন সেই পুড়ে যাওয়ার স্মৃতিটা ভুলে যাওয়া যায়।ব্যাথার কথা ভুলে যাওয়া যায়।আমার অন্তরে কাল রাত থেকে আগুন লেগে গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেছিল।
অনেক চেষ্টা করে সেই আগুন থামিয়েছি।কিন্তু সেখানে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে গেছে।ব্যাথা অনুভব করছি এখনো।জানিনা কবে এই ব্যাথা কমবে। যেদিন এই ব্যাথা কমবে সেদিন ই পুড়ে যাওয়ার কথা ভুলতে পারবো।
-“জানি তোমার অন্তর পুড়ে যাওয়া ব্যাথার ভাগ আমি নিতে পারবোনা।কিন্তু তুমি চেষ্টা করলে এই পুড়ে যাওয়া অন্তরটাকে আবার ভালো করতে পারো।পারো আমাকে ক্ষমা করে দিতে।
-“চেষ্টা করেও যে কিছু হচ্ছেনা।মনে পড়ে যাচ্ছে তোমার মুখটা দেখে, বেডরুমের ঐ বিছানাটা দেখে।মাহি আমাকে প্লিজ নিজের মাঝে কিছুদিন থাকতে দাও।বারবার এভাবে সিনক্রিয়েট করে আমার ভেতরটাকে আর অশান্ত করে দিওনা।তুমি শত সহানুভূতি, শত আবেগ, শত ভালোবাসা দেখালেও আমার মনকে স্থির করতে পারবেনা।কারণ আমি নিজে যদি কোনোকিছু ভুলতে না পারি।
এগুলো শুনে মাহি আর একটা কথাও বলল না। মাহি জানে আশফির হৃদয়টা এমনই।একবার সেখানে ওর নিজের মানুষের থেকে বড় কোনো আঘাত পেলে তা থেকে ও নিজেকে খুব সহজে বের করতে পারেনা।ভুলতে পারেনা সেই আঘাত।কিছু কিছু মানুষকে বিধাতা এভাবেই সৃষ্টি করেছে হয়তো।মাহির মনে পড়ছে বিয়ের আগের কথা।আশফি তখন কতোটা রাগী আর জেদী থাকলে মাহিকে বদনাম করে ওর সাথে বিয়েতে রাজী করাতে পারে।যেদিন মাহি আসিফের সাথে প্ল্যান করে আশফির থেকে দূরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেদিন রাতে দেখেছিল আশফির ভয়ানক রাগ।কি অবস্থা করেছিল মাহির সেদিন রাতে।সেই আশফির ধৈর্যক্ষমতা তখন খুব কম ছিল।মাহির ভালোবাসা অর্জন করার পর সেই ক্ষমতা বহুগুণ বেড়েছে।কিন্তু সেই আশফির তখন যা রাগ, জেদ আর অভিমান ছিল এখনো তা ওর মাঝে আছে ঠিক আগের মতই।একটুও পরিবর্তন হয়নি সেগুলো।সমুদ্র থেকে মাহিকে নিয়ে আশফি বাসায় ফিরল।কিন্তু মাহির বেডরুমে গেলনা।মাহি এখন ভাবছে,
-“আমার এখন কি করা উচিত? কি করলে আমি ওর সবকিছু ঠিক করতে পারবো?
এগুলো ভেবেই মাহি সারাটা রাত কাটিয়ে দিল।একটুও ঘুমালোনা।তারপরের দিন থেকে ওদের মাঝে দূরত্বের পরিমাণটা যেন বেড়েই চলছিল।শত চেষ্টা করেও মাহি আশফির কাছে যেতে পারছিলনা।সেদিনের পর থেকে আশফি আর আগের আশফি নেই।চেহারায় বিষণ্নতার ভাব সবসময় থাকেই।অফিস থেকে বাসায় ফিরে চান্দুর সাথে সময় কাটিয়ে অফিসের কাজ সেড়ে অন্য রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।ঘুমিয়ে পড়ে বললে ভুল হবে।ঘুমানোর চেষ্টা করে।কোনো কোনো দিন ব্যার্থ হয় আবার কোনোদিন জয়ী হয় সেই চেষ্টায়।মাহির অবস্থাও ঠিক একইরকম।আজ ৮ টা দিন আশফি মাহির মুখের দিকেও তাকাইনা।
এগুলো মাহি সহ্য করতে পারছিলনা।তাই ও ভাবল এখন আগের থেকেও আরো বেশি জোড় জুলুম শুরু করবে আশফির উপর।হোক সেটা লিমিট ক্রস। একদিন রাতের ঘটনা।তখন রাত প্রায় ১২:৩০ টা বাজে।মাহি চান্দুর পাশে একটা সার্ভেন্টকে থাকতে বলে চলে গেল আশফির বেডরুমে।
-“ওর রুমে ঢুকে দেখলাম ও কপালের উপর হাত রেখে চোখটা বন্ধ করে শুয়ে আছে।রুমের লাইটাও অফ করেনি।আমি রুমের লাইটটা অফ করে দিলাম আর জানালা খুলে দিলাম। সেদিন রাতে চাঁদের আলোর তেজটা একটু বেশি ছিল।স্পষ্ট ওর মুখটা দেখা যাচ্ছিল।কিন্তু ও চুপচাপ শুয়ে রয়েছে।চোখটাও খুলছেনা।এমন বিভোরে ঘুমাচ্ছে ও?আমি আর কিছু না ভেবে সোজা ওর বুকের উপর গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
আশফি ঘুমের মধ্যে কিছুটা চমকে উঠলো।বুকের উপর ওর স্পর্শ পেতেই আশফির ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।জেগে উঠে আশফি মাহিকে বলল,
-“মাহি?আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।উঠো।
-“না।তুমি তো কতোই আমাকে বুকের মধ্যে নিয়ে জড়িযে ধরে ঘুমিয়েছো। আজও ঘুমাবে।
-“আজ আমার এভাবে ঘুম আসবেনা।
-“তাহলে ঘুমাতে হবেনা।
-“বাচ্চাদের মত কি শুরু করেছো? উঠো আমি ঘুমাবো।
-“স্বামীর আদর সোহাগ পাওয়ার জন্য যদি আমার ব্যবহার তোমার কাছে বাচ্চাদের মত মনে হয় তাহলেও আমার কিছু যায় আসেনা।
-“মাহি?কাল সকালে আমার অফিস আছে।আমাকে ঘুমাতে হবে।আমার সত্যি খুব ঘুম পাচ্ছে।
-“এভাবে রেগে বললে তো আমি শুনবোই না। আর তোমার খুব ঘুম পাচ্ছে?ওয়েট তোমার ঘুম কাটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
কথাগুলো শেষ করেই মাহি ঝাপিয়ে পড়লো আশফির উপরে।পাগলের মত আশফির মুখে চুমু খেতে শুরু করলো।আশফির ঠোঁটজোড়াতে ও জোড় করে চুমু খেতে শুরু করলো মাহি।এদিকে আশফি ঠোঁটে যে ব্যাথা পাচ্ছে মাহি তা বুঝতে পারছে তবু ছাড়াছাড়ির কোনো খবর নেই। এক পর্যায় মাহি পুরো পাগলের মতই শুরু করলো আশফির সাথে।আশফি যতবারই মাহিকে হাত দিয়ে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে মাহি ঠিক ততবারই আশফির হাত চেপে ধরছে।কিন্তু এমন অবস্থাতে সেখানে যদি কোনো ছেলের ইচ্ছা না থাকে তাহলে একটা মেয়ে হাজার চেষ্টা করলেও তার থেকে কোনো এডভান্টেজ নিতে পারেনা।আশফির ভেতর কোনো প্রকার কোনো ফিলিং কাজ করছিলনা তাই ও বারবার মাহিকে দূরে সরানোর চেষ্টা করছিল।কিন্তু মাহিকে ও থামাতে পারছিল না।মাহির এসব কাজে আশফির আরো রাগ হচ্ছিল।তারপর এক সময় আশফি মাহির সাথে যা করলো তা মাহি কখনো ভাবতেও পারেনি।

চলবে…..

(যারা শুধু মাহির সাপোর্ট নিচ্ছিলে তারা একবার আশফির দিকটাও ভেবে দেখো। শুধু বেচারা আশফিকে দোষারোপ করোনা।বেচারা এমনিতেই অনেক অশান্তিতে আছে তার উপর তোমরা শুধু ওকে দোষারোপ করলে ও বেচারা যাবে কোথায়???)
19th part
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2077303029192378&id=1678619322394086

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে