রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১৭
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“ঠিক কখন ফিরবেন জানতে পারি?
-“সত্যি কথা বলবো?
-“মিথ্যা শুনতে চাচ্ছিনা নিশ্চই?
-“ওকে তাহলে সত্যিটাই বলি।আজকে ফিরতে পারব কিনা সঠিক বলতে পারছিনা।আর যদি পারি ও তাহলে অনেক রাত হবে।
গার্ডেন সিটিতে যাওয়ার জন্য আশফি রেডি হচ্ছে আর মাহির সাথে কথা বলছে।
-“ভালোই তো।এভাবেই সময়গুলো চলুক।কাজের ব্যস্ততায় বউ মেয়েকে ফেলে রেখে শুরু হল আপনার বিজনেস।
-“মাহি?ডিয়ার এরকম বাচ্চা মানুষের মত করো না।তুমি তো জানো আর বুঝো ও। আমি তো আর তোমার থেকে কিছু লুকচ্ছিনা বা তোমাকে মিথ্যা বলে বাইরে সময় কাটাচ্ছিনা।আর প্রতিদিন ই তো বাড়ির বাইরে থাকিনা আমি।আমার কি খুব ভালো লাগে তোমাদের ছেড়ে বাড়ির বাইরে থাকতে?আচ্ছা একটা কথা তোমাকে দিয়ে যাচ্ছি।কাজ শেষ করতে যত সময়ই লাগুক আজকে রাতেই বাসায় ফিরব।প্লিজ আর মনটা খারাপ করে থেকোনা।আমি তো আর তোমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে চলে যাচ্ছিনা।
-“যতসব ফালতু কথা তোমাকেই বলতেই হবে? আচ্ছা সাবধানে যেও।আর বেশি রাত হলে বাসায় ফেরার জন্য তাড়াহুড়ো করতে হবেনা।
-“সিওর?
-“হুম।
-“এরকম মুখ গোমড়া করে বললে কিভাবে মানব?
-“হি হি হি……হেসে বললাম।এখন মানা যাবে?
-“হা হা হা। আমি নিজেও তোমাদের ছাড়া একটা রাত ও বাড়ির বাইরে থাকতে পারবোনা।তাড়াতাড়ি চলে আসবো, ওকে?
যাওয়ার সময় আশফি মাহি আর চান্দুকে আদর করে তারপর বাসা থেকে বের হল সকাল ৯ টার সময়।তারপর বিকাল ৫ টার সময় বাসায় একজন ভদ্র লোক আসলো। আশফির সাথে দেখা করতে চাইছে কিন্তু আশফি বাসায় নেই বলে মাহির সাথে দেখা করার জন্য সার্ভেন্টদের বলল।এদিকে সারাটা বিকাল আশফির ফোন সুইচড অফ পাচ্ছে মাহি।তাই মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে। এমনিতে বাইরে থাকলে ঘন্টায় মিনিমাম তিন বার ফোন করা হয়ে যায়।আর এখন আশফি যাওয়ার পর লাস্ট কথা হয়েছে দুপুর দুটোই।বসে বসে মাহি আশফির ফোনে সমানে কল করেই যাচ্ছে। তারপর সার্ভেন্ট এসে মাহিকে বলল তার সাথে একজন লোক দেখা করতে এসেছে। মাহি কিছুটা অবাক হল।কারণ এ পর্যন্ত যারা এসেছে সবাই আশফির সাথে দেখা করতে এসেছে।মাহির এখানে কোনো বন্ধু বান্ধব ও তৈরি হয়নি।এসব ভাবার মাঝেই সার্ভেন্ট মাহিকে আবার ডাকল,
-“ম্যাম!উনি ড্রয়িংরুমে বসে আছেন।স্যার বাসায় না থাকায় আপনার সাথে কথা বলতে চাইছেন।
-“ওকে।তুমি যাও আমি আসছি।আমি উঠে ড্রয়িংরুমে গেলাম।একজন জাপানিজ লোক এসেছে আমার সাথে দেখা করতে। কিন্তু আমি তো একে চিনিনা।আমাকে দেখে বসা থেকে উঠে দাড়াল তারপর মুখে একটা হাসি টেনে গুড আফটারনুন জানালো। আমিও তাকে উত্তরে গুড আফটারনুন জানালাম।
-“মিসেস আশফি চৌধুরী! আমি হুয়াং চ্যাং। ইন্ড্রাস্ট্রি অব লোটাস এর ওউনার।
-“ও আচ্ছা।চিনতে পেরেছি। আপনি নিশ্চই আশফির সাথে দেখা করতে এসেছেন?কিন্তু ও তো বাসায় নেই।
-“হুম জানি।
-“জানেন?তাহলে……..
-“আসলে আমি সন্ধ্যার সময় আমার বাসায় একটা পার্টির এ্যারেঞ্জমেন্ট করেছি।তো সেখানে আপনাকে আর মি.আশফি চৌধুরী কে চিফ গেস্ট হিসেবে রেখেছিলাম।
অলমোস্ট ইনভাইটেশন কার্ড ও পাঠিয়েছিলাম।
-“হ্যা কার্ডটা পেয়েছি। কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে ও তো অফিসের কাজের জন্য বাইরের শহরে গেছে।
আজকে ফিরতে পারবে কিনা বলতে পারছিনা।
-“আপনি তো আছেন।
-“হ্যা আমি আছি।কিন্তু ওকে ছাড়া আমার তো একার পক্ষে পার্টিতে এ্যাটেন্ড করা পসিবল না।
-“এরকম ভাবে বলবেন না প্লিজ।আপনাদের জন্য পার্টিতে সবাই ওয়েট করছে। কারণ আপনারা ওখানে চিফ গেস্ট হিসেবে আসবেন সেটা সবাই জানে।মি.আশফি না থাকলেও আপনি থাকলেই চলবে।এতে আমার সম্মানটা রক্ষা হবে ওখানে।
-“সেটা তো বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তো বললাম ও ছাড়া আমি যেতে পারবোনা।প্লিজ কষ্ট পাবেন না।
-“মিসেস আশফি আপনি যদি এই প্রবলেমের জন্য পার্টিতে এ্যাটেন্ড করতে না চান তাহলে এই প্রবলেমটার সলিউশন আমার কাছে আছে।
-“সলিউশন?কি সলিউশন?
-“মি.আশফির সাথে আমার কথা হয়েছে। উনি নিজেই আমাকে বলেছে যে আপনি গিয়ে পার্টি এ্যাটেন্ড করবেন।কিন্তু আপনার আসতে লেট হচ্ছে বলে আমি নিজেই আপনাকে নিতে চলে এসেছি।
-“কি বলছেন আপনি? আপনাকে ও জানিয়েছে আমি যাব অথচ আমাকে জানাইনি?
-“সেটা তো বলতে পারবোনা উনি আপনাকে কেন জানাইনি।
-“আপনার সাথে ওর কখন কথা হয়েছে?
-“দুপুরে।২:১০ মিনিটে।
-“আমার সাথে ওর কথা হয়েছে ঠিক দুপুর ২ টায়। তারপর বিকাল ৪:৩০ টা থেকে এক নাগাড়ে ফোন করছি কিন্তু ওর ফোন সুইচড অফ বলছে।
-“হয়তো আমার সাথে কথা বলার পরই ওনার ফোন অফ হয়ে গেছে বা জরুরি কোনো কাজে আছে বলে ফোন অফ করে রেখেছে।আর তাই হয়তো আপনাকে জানাতে পারেনি।
-“কিন্তু আমি……..
-“মিসেস আশফি?প্লিজ আমাকে এভাবে সবার সামনে ছোট করবেন না। আমি ওয়ান উইক ধরে অনেক এক্সাইটেড হয়ে আছি আপনারা আমার পার্টিতে এ্যাটেন্ড করবেন বলে।
-“আমার ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করুন।ওর সাথে এই বিষয়ে আমার কোনো কথা হয়নি।তাহলে আমি কিভাবে আপনার সাথে যেতে পারি?
-“পার্টিতে আপনি এবং মি.আশফি দুজনেই আমার চিফ গেস্ট।তাই দুজনের একজন আমার পার্টিতে এটেন্ড করলেই হবে। সেখানে আপনারা কেউই ওখানে না আসলে সকলের সামনে আমাকে কতটা ছোট হতে হবে আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন? প্লিজ আমার অনুরোধ টুকু রাখুন।হাতজোড় আপনার কাছে।
-“আরে কি করছেন আপনি?আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি বসুন আমি রেডি হয়ে আসছি। লোকটার সাথে কথা বলে আমি ভেতরে চলে এলাম। আশফিটা যে কি?এমন একটা বিষয় আমাকে জানালোনা।কি একটা অপ্রস্তুতকর অবস্থার ভেতরে পড়েছি।
মাহি আবার ফোনটা হাতে নিয়ে আশফিকে বেশ কয়েকবার কল করলো। এবার কল ঢুকেছে ফোনে কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছেনা।তাই মাহি রাগ করে ফোনটা বিছানার উপর চেলে রাখল।তারপর ও রেডি হয়ে সাথে দুজন গার্ড নিয়ে হুয়াং চ্যাং এর সাথে তার পার্টিতে চলে গেল।আর চান্দুকে একজন সার্ভেন্টের দায়িত্বে রেখে গেল।এদিকে আশফির ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়াতে তার সেক্রেটারি ফোনটা চার্জে বসিয়ে রেখেছে বলে আশফি মাহির কলগুলো দেখলোনা।মাহির পার্টিতে যেতে যেতে সন্ধ্যা লেগে গেল।পার্টিতে পৌঁছানোর পর হুয়াং সবার সাথে মাহির পরিচয় করিয়ে দিল। পার্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাহি বেরোতেও পারছেনা। কারণ সবাই মাহিকে ঘিরে রেখেছে মাহির সাথে সবাই কথা বলছে।খুব ব্যস্ত রেখেছে মাহিকে।মাহির গার্ড দুটোকেও কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।মাহি ডিনার সেড়ে সেই কখন থেকে বসে আছে গার্ডগুলোর কোনো পাত্তাই নেই।কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে মাহির সাথে গল্প করতে বসে গেল। গল্পের মাঝে মাহিকে একটা ড্রিংকস নিতে অনুরোধ করলো মেয়েটি।মাহির অবশ্য তখন ড্রিংকস করার মত কোনো মন মানসিকতাই ছিলনা। আবার ড্রিংকস টা না নিলেও মেয়েটিকে ছোট করা হয়ে যাবে যার জন্য বাধ্য হয়ে ড্রিংকস করলো মাহি।মাত্র পাঁচ মিনিটের মাঝেই মাহি ওর প্রতি ওর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। আর সেই সুযোগটি হুয়াং চ্যাং গ্রহণ করে।ডিলের পেপাড়ে মাহিকে দিয়ে সাইন করিয়ে নেই।পেপাড়টা ছিল আশফির কোম্পানির প্রডাক্টস তৈরির জন্য ম্যাটেরিয়ালগুলো ওর কোম্পানি থেকে সাপ্লাই হবে।হুয়াং চ্যাং জানে কোম্পানির ৫৫% শেয়ার মাহির নামে আছে আর ৪৫% শেয়ার আশফির নামে।সে হিসেবে মাহির সাইন ই যথেষ্ট ডিলটার জন্য।এই ডিলটার মাধ্যমে হুয়াং এর কোম্পানি লস থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।হুয়াং এর কোম্পানিটা এত বেশি লসে রান করছিল যে সে এমন একটা কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।
এরপর হুয়াং মাহির সাথে কিছুটা ক্লোজ হয়ে কয়েকটা ফটো তুলল।
যেগুলো কাল সকালের মধ্যেই মিডিয়াতে টেলিকাস্ট হবে যে ওর কোম্পানির সাথে আশফিদের কোম্পানির এই ডিলটা কমপ্লিট হয়েছে।এর মধ্যেই হুয়াং মাহির গার্ডগুলোকে ও সেন্সলেস করে ফেলেছে ড্রিংকস এ অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে।রাত প্রায় ১১ টা বাজতে চলেছে।পার্টিটা যখন একদম শেষ হল তখন হুয়াং মাহিকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বের হল।মাহি তখন প্রায় সেন্সলেসের মতই।সেন্স থেকেও না থাকার মতই কাজ করছে ওর। এদিকে আশফি অনেক দ্রুত ওখানকার কাজ শেষ করেছে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে বলে।ওখানের ফ্যাক্টরি থেকে বের হওয়ার পর সেক্রেটারির থেকে যখন ফোনটা নিল তখন মাহির কল গুলো দেখে আশফি কল ব্যাক করলো প্লেনে ওঠার আগে।মাহিকে ফোনে পেলনা আশফি।ও ভাবছে মাহি হয়তো রাগ করে ওর ফোন রিসিভ করছেনা।
আশফি আর কোনো কল করলোনা। কারণ ও একদম বাসায় ফিরেই মাহিকে সারপ্রাইজ দিবে।প্লেনে উঠে গেল আশফি।প্লেনে করে আসার জন্য সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিটের মত লাগবে ওখান থেকে আসতে।আর হুয়াং এর বাসা থেকে গাড়ি করে আসতে মিনিমাম এক ঘন্টা সময় লাগবে মাহির বাসায় ফিরতে।তার মধ্যে ২০ মিনিটের রাস্তা ওরা চলেই এসেছে।হুয়াং আশফির বাসার সামনে যখন পৌঁছাল তখন তার ঠিক কিছুটা দূরে আশফির গাড়ি ছিল।সেই গাড়িটি অবশ্য হুয়াং খেয়াল করেনি। তাই মাহিকে গাড়ি থেকে নামানোর সময় মাহিকে দাড়ানো অবস্থা থেকে কোলে তুলে নিল। মাহি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না।তাই হুয়াং কোলে তুলে নিয়েছে। বাসার সামনে অন্য একটা গাড়ি দেখে আশফি কিছুটা চমকে গেল।ওখানেই আশফি গাড়ি থামাতে বলল ড্রাইভারকে।তখন রাত ১২:০৫ বাজে। এত রাতে বাসার সামনে অন্য গাড়ি দেখে আশফির ভেতরে আতংক কাজ করছিল।আশফি গাড়ির ভেতর বসেই দেখতে পেল হুয়াং চ্যাং মাহিকে কোলে তুলে বাসার ভেতর ঢুকছে। এমন দৃশ্য দেখে রাগে আশফির চোখ দুটো কোটর থেকে বের হয়ে আসতে চাইছিল।ড্রাইভার আশফিকে বলল,
-“স্যার গাড়ি কি বাসার ভেতরে নিব?
আশফি কথার কোনো উত্তর দিল না। ড্রাইভার আশফিকে ডাক দিল।
-“স্যার?গাড়ি কি……..
-“একদম চুপ ব্লাডি বা**। কোনো কথা বলবেনা। এখানেই দাড়িয়ে থাকো।
আশফি হাতে থাকা ফোনটা অন করলো। বাসার ভেতরে সি সি ক্যামেরার সাথে আশফির ফোন কানেক্ট করা। তাই বাসার ভেতরে কি হচ্ছে ও সবটাই দেখতে পাবে। হুয়াং মাহিকে কোলে করে আশফির বেডরুমে ঢুকে গেল।
-“মিসেস আশফি আপনার বেডরুম পর্যন্ত চলে এসেছি যে।এবার কোল থেকে নামুন।
মাহি তখন পুরোটাই নেশার ঘোরে।হুয়াং মাহিকে বিছানায় শুইয়ে দিচ্ছিল।তখন একটা সার্ভেন্ট চান্দুকে কোলে করে বেডরুমে চলে আসলো।চান্দুর তখন খিদে পেয়েছে খুব আর সার্ভেন্ট ও চমকে গেছে মাহিকে হুয়াং এর সাথে এই অবস্থাতে দেখে। সার্ভেন্টকে দেখে হুয়াং তাকে ধমক দিয়ে রুম থেকে চলে যেতে বলল।সার্ভেন্টটা কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।তারপর হুয়াং মাহিকে বেডে শুইয়ে দিল। হঠাৎ মাহি হুয়াং এর কলার টেনে ধরলো চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই।হুয়াং এর কলার চেপে বলল,
-“এভাবে আমাকে ফেলে কোথায় চলে যাচ্ছো?
-“বাহ্।মিসেস আশফি আমাকে কাছে টেনে নিতে চাইছে নাকি?
হয়তো মি. আশফিকে ভাবছে আমাকে।
-“এই।একদম আমার কাছ থেকে সরবেনা।এখানে,
আমার কাছে থাকো।
-“কাছে তো থাকতেই পারি ম্যাম।মি.আশফির বেডে তার অনুপস্থিতিতে তারই বউ এর সাথে একটা রাত… ব্যাপারটা ভালোই হয়।
হুয়াং চ্যাং জানতো আজকে আশফি শহরের বাইরে যাবে।আশফি যাওয়ার পর দুপুর তিনটার সময় আশফিকে ফোন করে সে।কিন্তু ফোনটা সুইচড অফ পায় তখন।আর সেই সুযোগে সে মাহিকে মিথ্যা বলে তার পার্টিতে নিয়ে যায়।গাড়িতে বসে আশফি সবকিছু দেখছে আর রাগে ওর সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। পায়ের রক্ত যেন মাথায় উঠে আসার মত অবস্থা হয়েছে ওর। যখন দেখলো হুয়াং ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল এমনকি লাইটা ও অফ করে দিল সেই মুহূর্তে আশফি আর এক সেকেন্ডও গাড়িতে বসে থাকতে পারেনি।ছুটে গেল বাসার ভেতর।ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখতে পেল চান্দু একটা সার্ভেন্টের কোলে আছে।আর খুদাতে খুব কান্না করছে।এই দৃশ্য দেখার পর আশফি যেন একটা হিংস্র দানবের মত হয়ে গেল।সেখানে আর এক মুহূর্ত দাড়ালনা।সোজা উপরে চলে গেল।
সার্ভেন্টগুলো আশফিকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে আর ওর চোখ মুখ দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ওরা বুঝতে পেরেছে যে আশফি সব দেখতে পেয়েছে। দরজার সামনে গিয়ে দাড়াল আশফি।অসম্ভব রাগে ওর যা অবস্থা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে ওর শরীরে সত্যি কোনো দানব ভর করেছে।গায়ের সব শক্তি দিয়ে এমন ভাবে দরজাটাকে লাথি মাড়লো যে দরজাটা পুরোপুরি না ভাঙ্গলেও দরজার লক ভেঙ্গে গেছে।দরজা ঠেলে ঢুকতেই ও দেখতে পেল হুয়াং মাহির শরীরের উপর ঝুকে আছে। আর মাহিও হুয়াংকে জড়িয়ে ধরে আছে।তখন হুয়াং এর গায়ে কোনো পোশাক নেই।হুয়াং আশফিকে দেখে কিছু বলতে যাবে বা কিছু করতে যাবে তার আগেই আশফি বলল,
-“চুপ।নো সাউন্ড।
কথাটি বলেই আশফি হুয়াং কে টেনে ধরে এনে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।পাক্কা ২ ঘন্টা পর আশফি বাসায় ফিরল। কোনো সার্ভেন্ট আশফির সাথে কথা বলার কোনো সাহস পেলনা।আশফি সোজা রুমে ঢুকে গেল। রুমে ঢুকে দেখতে পেল চান্দু তখনো কান্না করছে।আর মাহি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। চান্দুকে কোলে তুলে একটা সার্ভেন্টকে ডাক দিল।
তারপর বলল,
-“পাওডার মিল্কটা বানিয়ে দাও।আমি ওকে খাইয়ে দিব।
-“কিন্তু স্যার বাবুর জন্য তো ওটা স্বাস্থ্যসম্মত হবেনা। আর তাছাড়া ও তো এটা খেতেও পারবেনা। ম্যামের বুকের…………..
আশফি রাগী চোখে সার্ভেন্টের দিকে তাকাল। ভয়ে সার্ভেন্টটা আর কোনো কথা বললোনা। তারপর আশফি বলল,
-“এখন থেকে ওকে এগুলো খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।যাও আর দেরী না করে ওর জন্য দুধটা বানিয়ে নিয়ে এসো।
-“ওকে স্যার।
সার্ভেন্ট দুধ বানিয়ে ফিডাড়ে ভরে আশফির কাছে দিল।প্রথমদিকে চান্দু সেটা খেতে না চাইলেও আশফি অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর কিছুটা খাওয়াতে পারলো।তার কিছুক্ষণের ভেতরেই আশফি ওর মেয়েকে কোলে করে ঘুরে বেড়িয়ে আদর করে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিল।আর আশফি যে পোশাকে ছিল সেই পোশাকেই মাহির মুখের সামনে গিয়ে বসে রইল।ওর মুখের দিকে চেয়ে নিজে নিজে বলতে থাকলো,
-“ও জানেনা ও আমার কোথায় হাত দিয়েছে। আমার কলিজাটা ছিড়ে নিয়েছে ও।ছিঃ আমি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছিনা। মনে পড়ে যাচ্ছে ঐ দৃশ্যগুলো।তুমি আমার বুকের ভেতরটা ভেঙ্গেচুরে দিয়েছো।মনে হচ্ছে হাজারটা তীড় বসিয়ে দিয়েছো পুরোটা বুক জুড়ে।
মাহির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথাগুলো বলছিল আশফি।আবারও আশফি মাহির মুখের দিকে তাকাল।
-“এই বিছানাতে তোমার শরীরের উপর অন্য একজন পুরুষ ছিল।তোমার শরীর স্পর্শ করেছে সে। তোমার খুব কাছে যেতে চেয়েছিল সে।তুমি তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে।আমার জায়গায় অন্য একজন পুরুষকে জড়িয়ে ধরেছিলে তুমি? মাহিইইইই?
চিৎকার করে মাহিকে ডেকে ওকে ঘুমন্ত অবস্থাতেই উঠিয়ে বসালো আশফি। তখন ও মাহি নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ঢুলে পড়লো আশফির বুকের উপর। আশফির ডাক হয়তো কিছুটা কানে গেছে মাহির। তাই ওর বুকে মাথা রেখে মাহি ঘুমন্ত কন্ঠে উত্তর নিল আর কথা বলল,
-“হুম?এই পাঁজি এভাবে ধমকাচ্ছ কেনো আমাকে? আমি কিন্তু কেঁদে দিব।
মাহি আশফির বুকের উপর ঝুকে পড়লেও আশফি মাহিকে জড়িয়ে ধরলোনা। মাহির কোনো কথার উত্তর ও দিল না।আশফির চোখ ফেটে যেন আগুন বের হচ্ছে আর সেই আগুন নিভানোর জন্য সেই সাথে অনর্গল অশ্রু ও ঝরছে।কিন্তু সেই অশ্রু হয়তো ব্যর্থ হচ্ছে আশফির চোখের আগুনকে নিভাতে। মাহি ঘুম মাখা কন্ঠে কথা বলছে,
-“এই আমার না খুব আদর নিতে ইচ্ছা করছে তোমার থেকে। আমাকে একটু আদর দাও না।
-“ওর এই কথা শোনার সাথে সাথে আমার ইচ্ছা করছিল ওকে সহ নিজের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিই।সহ্য হচ্ছিলনা ওর স্পর্শ।ধাক্কা দিয়ে ওকে ফেলে দিলাম বিছানার উপর। অনেকটা ব্যাথা পেয়ে কুকড়ে উঠেছে ও। আমি ওর কাছ থেকে উঠে যাব তখন ও আমার হাত টেনে ধরে আমাকে ওর কাছে টেনে নিল।ব্যাথা পেয়ে প্রায় কান্না করে দিয়েছে ও।
হালকাভাবে চোখদুটো খুলে কান্না জড়ানো কন্ঠে আমাকে বলল,
-“তুমি আমাকে এভাবে ব্যাথা দিতে পারলে? আমি কতোটা ব্যাথা পেয়েছি। তুমি তো আমাকে কখনো মাড়োনা।কেনো আমাকে এভাবে মাড়লে?
এইভাবে ওর কান্না করে দেওয়া দেখে আমি যেন কোনো কথা বলতে পারছিলামনা।কোনোদিনও আমার থেকে কোনো আঘাত পাইনি ও।আজ প্রথম ওকে এভাবে আঘাত করলাম।
-“কথা বলছোনা কেনো? আদর করতে বলেছি বলে এভাবে আমাকে মাড়লে? ঠিক আছে তাহলে আমি তোমার থেকে জোড় করেই আদর নিব।দেখবে তুমি?
-“মাহি আমার কলার চেপে ধরে ওর একদম কাছে টেনে নিল।তারপর আমার এক গালে হাত রেখে অন্য পাশের গালে চুমু খেল। আমার ঠোঁটে চুমু দেওয়ার সময় আমি ওর থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে চলে এলাম।ও আর উঠে আসতে পারলোনা।হয়তো সেই এ্যানার্জিটুকু ওর শরীরে নেই।ওর কাছ থেকে এভাবে উঠে আসাতে ও রেগে গিয়ে অনেক বকাবকি করতে থাকলো আমাকে। তারপর কখন যেন নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছে।গা থেকে স্যুটটা খুলে ফেললাম। বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।আমার সবকিছু কেমন যেন উল্টা পাল্টা লাগছে।না চাইতেই চোখের সামনে তখনকার দৃশ্যগুলো ভেসে উঠছে।
কোনোভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিনা। মাহির সামনেও আমার থাকতে ইচ্ছা করছেনা। একবার মনে হচ্ছে নিজের মাথায় নিজেই শুট করি। আবার মনে হচ্ছে ওকে ঘুমের ভেতরেই শুট করে দিই।ও আমার চোখের সামনে থাকলেই আরো বেশি খারাপ লাগছে। ওর কাছে গেলেই বারবার মনে হচ্ছে এখনো ওর শরীরে ঐ জানুয়ারের বা** ছোঁয়া লেগে আছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা।আমি কোনোদিন ও সহ্য করতে পারিনি ওকে আমি ছাড়া বাইরের কোনো পুরুষ মানুষ টাচ্ করলে।সেখানে আজকে ওর শরীরের উপর………
আশফি পুরো কথাটাও বলতে পারলোনা।
-“কখন যেন নিজের অজান্তেই মাহির কাছে গিয়ে বসে পড়েছি।
আশফি সারারাত এভাবেই মাহির কাছে বসে ছিল। মাহির ঘুম ভাঙ্গলো।চোখ মেলে তাকাতেই দেখল আশফি ওর পাশে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে হাঁটুর উপর ভর করে বসে আছে।
আশফি খেয়াল করেনি মাহি জেগে গেছে। মাহি ওকে এভাবে বসে থাকা দেখে কথা বলে উঠল,
-“আশফি?তুমি কখন এসেছো?
-“ওর কথা শুনে আমি মাথা উঁচু করে ওর দিকে তাকালাম।
-“আশফির চোখদুটো রক্তের মত লাল হয়ে আছে। আর ওর চোখ মুখের অবস্থা যেন কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।চোখে মুখে অসম্ভব রাগ দেখতে পাচ্ছি মনে হচ্ছে।
-“আমি ওর পাশ থেকে উঠে চলে এলাম।
-“এই তুমি কখন এসেছ? আর এসে আমাকে ডাকোনি কেন? উফফ।
মাহি উঠে দাড়াতে গিয়ে মাথায় যন্ত্রণা অনুভব করলো।মাথাটা ধরে উঠে দাড়ালো তারপর আশফির কাছে গেল।
-“এতো মাথা যন্ত্রণা কেনো করছে?এই আশফি এভাবে চুপ করে আছো কেনো বলো তো?আর তোমার এ অবস্থা কেনো?মনে হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এসেছো। অদ্ভুত!কোনো কথা বলছেনা।স্টিল হয়ে দাড়িয়ে আছে।এই তুমি আমার কাছে এসো তো। আসার পর বোধ হয় আমার ঘুম থেকে ওঠার অপেক্ষায় বসে ছিলে?শার্টটা ও খুলোনি এর জন্য।আমি খুলে দিচ্ছি তুমি যাও গোসল করে এসো। কিরকম যে দেখা যাচ্ছে তোমাকে!
মাহি আশফির কাছে গিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে গেল।মাহি টাচ্ করার আগেই আশফি পিছু সরে গেল।মাহি বলল,
-“এটা কি হল?এভাবে দূরে সরে গেলে কেনো? তুমি রাগ করেছো আমার উপর তাইনা?আমি এভাবে কুম্ভকর্ণের মত ঘুমিয়েছি বলে?আচ্ছা সরি।এবারের মত মাফ করে দাও।এদিকে এসো আমি তোমার শার্টটা খুলে দিচ্ছি।তারপর অনেকগুলো পাপ্পি দিব।
মাহি আবারও আশফির কাছে গেল শার্টটা খোলার জন্য।আশফি তখন মাহিকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিল।তারপর মাহির সামনেই আশফি শার্টের বোতামগুলোর স্থানে ধরে টেনে ছিড়ে ফেলল শার্টটা। ছিড়ে ফেলা শার্টটা আশফি ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। মাহি অবাক হয়ে এগুলো দেখলো। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলোনা।প্রায় ঘন্টাখানিক পর আশফি বাথরুম থেকে গোসল করে বের হলো।তখনও আশফির ফর্সা মুখটা রাগে লাল হয়ে আছে।আর অনেকক্ষণ পানিতে ভেজার কারণে চোখদুটো অসম্ভব পরিমাণ লাল হয়ে আছে।এমন ব্যবহারের কারণ জানতে চাওয়ার জন্য মাহি আশফির পথ আটকে ওর সামনে দাড়ালো ।
-“আশফি আমার দিকে তাকাও।কি হয়েছে তোমার? কেনো এমন করছো?
মাহির কথার উত্তর না দিয়ে আশফি চলে যাচ্ছিল। মাহি এবার রেগে গিয়ে আশফির হাত টেনে ধরলো।
-“কি সমস্যা তোমার? এভাবে এভোয়েড করছো কেনো আমাকে?আর কথা বলছোনা কেনো?
মাহি এভাবে চিৎকার করে কথা বলা দেখে আশফির গরম মাথা যেন আরো বেশি গরম হয়ে গেল। ও নিজের হাত ছাড়িয়ে মাহিকে ধাক্কা দিয়ে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে ধরলো।মাহির মাথায় আর পিঠে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে চোখ থেকে আপনা আপনি পানি বের হয়ে এলো। আশফি প্রচন্ড জোড়ে ওর গাল চিপে ধরলো।তারপর বলল,
চলবে……..(গল্পে আপনাদের আশানুরূপ লাইক পেলেও তেমন কোনো মন্তব্য পাইনা।গঠনমূলক কিছু মন্তব্য করে আপনারা আমাদের উৎসাহ দিতে পারেন বা গল্প সম্পর্কে আপনাদের অনুভুতি প্রকাশ করতে পারেন।এতে আমাদের ও ভালো লাগে।তাই শুধু লাইক না করে গঠনমূলক কিছু মন্তব্য ও করবেন আশা করছি।)
পর্ব-১৭
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“ঠিক কখন ফিরবেন জানতে পারি?
-“সত্যি কথা বলবো?
-“মিথ্যা শুনতে চাচ্ছিনা নিশ্চই?
-“ওকে তাহলে সত্যিটাই বলি।আজকে ফিরতে পারব কিনা সঠিক বলতে পারছিনা।আর যদি পারি ও তাহলে অনেক রাত হবে।
গার্ডেন সিটিতে যাওয়ার জন্য আশফি রেডি হচ্ছে আর মাহির সাথে কথা বলছে।
-“ভালোই তো।এভাবেই সময়গুলো চলুক।কাজের ব্যস্ততায় বউ মেয়েকে ফেলে রেখে শুরু হল আপনার বিজনেস।
-“মাহি?ডিয়ার এরকম বাচ্চা মানুষের মত করো না।তুমি তো জানো আর বুঝো ও। আমি তো আর তোমার থেকে কিছু লুকচ্ছিনা বা তোমাকে মিথ্যা বলে বাইরে সময় কাটাচ্ছিনা।আর প্রতিদিন ই তো বাড়ির বাইরে থাকিনা আমি।আমার কি খুব ভালো লাগে তোমাদের ছেড়ে বাড়ির বাইরে থাকতে?আচ্ছা একটা কথা তোমাকে দিয়ে যাচ্ছি।কাজ শেষ করতে যত সময়ই লাগুক আজকে রাতেই বাসায় ফিরব।প্লিজ আর মনটা খারাপ করে থেকোনা।আমি তো আর তোমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে চলে যাচ্ছিনা।
-“যতসব ফালতু কথা তোমাকেই বলতেই হবে? আচ্ছা সাবধানে যেও।আর বেশি রাত হলে বাসায় ফেরার জন্য তাড়াহুড়ো করতে হবেনা।
-“সিওর?
-“হুম।
-“এরকম মুখ গোমড়া করে বললে কিভাবে মানব?
-“হি হি হি……হেসে বললাম।এখন মানা যাবে?
-“হা হা হা। আমি নিজেও তোমাদের ছাড়া একটা রাত ও বাড়ির বাইরে থাকতে পারবোনা।তাড়াতাড়ি চলে আসবো, ওকে?
যাওয়ার সময় আশফি মাহি আর চান্দুকে আদর করে তারপর বাসা থেকে বের হল সকাল ৯ টার সময়।তারপর বিকাল ৫ টার সময় বাসায় একজন ভদ্র লোক আসলো। আশফির সাথে দেখা করতে চাইছে কিন্তু আশফি বাসায় নেই বলে মাহির সাথে দেখা করার জন্য সার্ভেন্টদের বলল।এদিকে সারাটা বিকাল আশফির ফোন সুইচড অফ পাচ্ছে মাহি।তাই মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে। এমনিতে বাইরে থাকলে ঘন্টায় মিনিমাম তিন বার ফোন করা হয়ে যায়।আর এখন আশফি যাওয়ার পর লাস্ট কথা হয়েছে দুপুর দুটোই।বসে বসে মাহি আশফির ফোনে সমানে কল করেই যাচ্ছে। তারপর সার্ভেন্ট এসে মাহিকে বলল তার সাথে একজন লোক দেখা করতে এসেছে। মাহি কিছুটা অবাক হল।কারণ এ পর্যন্ত যারা এসেছে সবাই আশফির সাথে দেখা করতে এসেছে।মাহির এখানে কোনো বন্ধু বান্ধব ও তৈরি হয়নি।এসব ভাবার মাঝেই সার্ভেন্ট মাহিকে আবার ডাকল,
-“ম্যাম!উনি ড্রয়িংরুমে বসে আছেন।স্যার বাসায় না থাকায় আপনার সাথে কথা বলতে চাইছেন।
-“ওকে।তুমি যাও আমি আসছি।আমি উঠে ড্রয়িংরুমে গেলাম।একজন জাপানিজ লোক এসেছে আমার সাথে দেখা করতে। কিন্তু আমি তো একে চিনিনা।আমাকে দেখে বসা থেকে উঠে দাড়াল তারপর মুখে একটা হাসি টেনে গুড আফটারনুন জানালো। আমিও তাকে উত্তরে গুড আফটারনুন জানালাম।
-“মিসেস আশফি চৌধুরী! আমি হুয়াং চ্যাং। ইন্ড্রাস্ট্রি অব লোটাস এর ওউনার।
-“ও আচ্ছা।চিনতে পেরেছি। আপনি নিশ্চই আশফির সাথে দেখা করতে এসেছেন?কিন্তু ও তো বাসায় নেই।
-“হুম জানি।
-“জানেন?তাহলে……..
-“আসলে আমি সন্ধ্যার সময় আমার বাসায় একটা পার্টির এ্যারেঞ্জমেন্ট করেছি।তো সেখানে আপনাকে আর মি.আশফি চৌধুরী কে চিফ গেস্ট হিসেবে রেখেছিলাম।
অলমোস্ট ইনভাইটেশন কার্ড ও পাঠিয়েছিলাম।
-“হ্যা কার্ডটা পেয়েছি। কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে ও তো অফিসের কাজের জন্য বাইরের শহরে গেছে।
আজকে ফিরতে পারবে কিনা বলতে পারছিনা।
-“আপনি তো আছেন।
-“হ্যা আমি আছি।কিন্তু ওকে ছাড়া আমার তো একার পক্ষে পার্টিতে এ্যাটেন্ড করা পসিবল না।
-“এরকম ভাবে বলবেন না প্লিজ।আপনাদের জন্য পার্টিতে সবাই ওয়েট করছে। কারণ আপনারা ওখানে চিফ গেস্ট হিসেবে আসবেন সেটা সবাই জানে।মি.আশফি না থাকলেও আপনি থাকলেই চলবে।এতে আমার সম্মানটা রক্ষা হবে ওখানে।
-“সেটা তো বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তো বললাম ও ছাড়া আমি যেতে পারবোনা।প্লিজ কষ্ট পাবেন না।
-“মিসেস আশফি আপনি যদি এই প্রবলেমের জন্য পার্টিতে এ্যাটেন্ড করতে না চান তাহলে এই প্রবলেমটার সলিউশন আমার কাছে আছে।
-“সলিউশন?কি সলিউশন?
-“মি.আশফির সাথে আমার কথা হয়েছে। উনি নিজেই আমাকে বলেছে যে আপনি গিয়ে পার্টি এ্যাটেন্ড করবেন।কিন্তু আপনার আসতে লেট হচ্ছে বলে আমি নিজেই আপনাকে নিতে চলে এসেছি।
-“কি বলছেন আপনি? আপনাকে ও জানিয়েছে আমি যাব অথচ আমাকে জানাইনি?
-“সেটা তো বলতে পারবোনা উনি আপনাকে কেন জানাইনি।
-“আপনার সাথে ওর কখন কথা হয়েছে?
-“দুপুরে।২:১০ মিনিটে।
-“আমার সাথে ওর কথা হয়েছে ঠিক দুপুর ২ টায়। তারপর বিকাল ৪:৩০ টা থেকে এক নাগাড়ে ফোন করছি কিন্তু ওর ফোন সুইচড অফ বলছে।
-“হয়তো আমার সাথে কথা বলার পরই ওনার ফোন অফ হয়ে গেছে বা জরুরি কোনো কাজে আছে বলে ফোন অফ করে রেখেছে।আর তাই হয়তো আপনাকে জানাতে পারেনি।
-“কিন্তু আমি……..
-“মিসেস আশফি?প্লিজ আমাকে এভাবে সবার সামনে ছোট করবেন না। আমি ওয়ান উইক ধরে অনেক এক্সাইটেড হয়ে আছি আপনারা আমার পার্টিতে এ্যাটেন্ড করবেন বলে।
-“আমার ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করুন।ওর সাথে এই বিষয়ে আমার কোনো কথা হয়নি।তাহলে আমি কিভাবে আপনার সাথে যেতে পারি?
-“পার্টিতে আপনি এবং মি.আশফি দুজনেই আমার চিফ গেস্ট।তাই দুজনের একজন আমার পার্টিতে এটেন্ড করলেই হবে। সেখানে আপনারা কেউই ওখানে না আসলে সকলের সামনে আমাকে কতটা ছোট হতে হবে আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন? প্লিজ আমার অনুরোধ টুকু রাখুন।হাতজোড় আপনার কাছে।
-“আরে কি করছেন আপনি?আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি বসুন আমি রেডি হয়ে আসছি। লোকটার সাথে কথা বলে আমি ভেতরে চলে এলাম। আশফিটা যে কি?এমন একটা বিষয় আমাকে জানালোনা।কি একটা অপ্রস্তুতকর অবস্থার ভেতরে পড়েছি।
মাহি আবার ফোনটা হাতে নিয়ে আশফিকে বেশ কয়েকবার কল করলো। এবার কল ঢুকেছে ফোনে কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছেনা।তাই মাহি রাগ করে ফোনটা বিছানার উপর চেলে রাখল।তারপর ও রেডি হয়ে সাথে দুজন গার্ড নিয়ে হুয়াং চ্যাং এর সাথে তার পার্টিতে চলে গেল।আর চান্দুকে একজন সার্ভেন্টের দায়িত্বে রেখে গেল।এদিকে আশফির ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়াতে তার সেক্রেটারি ফোনটা চার্জে বসিয়ে রেখেছে বলে আশফি মাহির কলগুলো দেখলোনা।মাহির পার্টিতে যেতে যেতে সন্ধ্যা লেগে গেল।পার্টিতে পৌঁছানোর পর হুয়াং সবার সাথে মাহির পরিচয় করিয়ে দিল। পার্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাহি বেরোতেও পারছেনা। কারণ সবাই মাহিকে ঘিরে রেখেছে মাহির সাথে সবাই কথা বলছে।খুব ব্যস্ত রেখেছে মাহিকে।মাহির গার্ড দুটোকেও কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।মাহি ডিনার সেড়ে সেই কখন থেকে বসে আছে গার্ডগুলোর কোনো পাত্তাই নেই।কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে মাহির সাথে গল্প করতে বসে গেল। গল্পের মাঝে মাহিকে একটা ড্রিংকস নিতে অনুরোধ করলো মেয়েটি।মাহির অবশ্য তখন ড্রিংকস করার মত কোনো মন মানসিকতাই ছিলনা। আবার ড্রিংকস টা না নিলেও মেয়েটিকে ছোট করা হয়ে যাবে যার জন্য বাধ্য হয়ে ড্রিংকস করলো মাহি।মাত্র পাঁচ মিনিটের মাঝেই মাহি ওর প্রতি ওর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। আর সেই সুযোগটি হুয়াং চ্যাং গ্রহণ করে।ডিলের পেপাড়ে মাহিকে দিয়ে সাইন করিয়ে নেই।পেপাড়টা ছিল আশফির কোম্পানির প্রডাক্টস তৈরির জন্য ম্যাটেরিয়ালগুলো ওর কোম্পানি থেকে সাপ্লাই হবে।হুয়াং চ্যাং জানে কোম্পানির ৫৫% শেয়ার মাহির নামে আছে আর ৪৫% শেয়ার আশফির নামে।সে হিসেবে মাহির সাইন ই যথেষ্ট ডিলটার জন্য।এই ডিলটার মাধ্যমে হুয়াং এর কোম্পানি লস থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।হুয়াং এর কোম্পানিটা এত বেশি লসে রান করছিল যে সে এমন একটা কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।
এরপর হুয়াং মাহির সাথে কিছুটা ক্লোজ হয়ে কয়েকটা ফটো তুলল।
যেগুলো কাল সকালের মধ্যেই মিডিয়াতে টেলিকাস্ট হবে যে ওর কোম্পানির সাথে আশফিদের কোম্পানির এই ডিলটা কমপ্লিট হয়েছে।এর মধ্যেই হুয়াং মাহির গার্ডগুলোকে ও সেন্সলেস করে ফেলেছে ড্রিংকস এ অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে।রাত প্রায় ১১ টা বাজতে চলেছে।পার্টিটা যখন একদম শেষ হল তখন হুয়াং মাহিকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বের হল।মাহি তখন প্রায় সেন্সলেসের মতই।সেন্স থেকেও না থাকার মতই কাজ করছে ওর। এদিকে আশফি অনেক দ্রুত ওখানকার কাজ শেষ করেছে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে বলে।ওখানের ফ্যাক্টরি থেকে বের হওয়ার পর সেক্রেটারির থেকে যখন ফোনটা নিল তখন মাহির কল গুলো দেখে আশফি কল ব্যাক করলো প্লেনে ওঠার আগে।মাহিকে ফোনে পেলনা আশফি।ও ভাবছে মাহি হয়তো রাগ করে ওর ফোন রিসিভ করছেনা।
আশফি আর কোনো কল করলোনা। কারণ ও একদম বাসায় ফিরেই মাহিকে সারপ্রাইজ দিবে।প্লেনে উঠে গেল আশফি।প্লেনে করে আসার জন্য সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিটের মত লাগবে ওখান থেকে আসতে।আর হুয়াং এর বাসা থেকে গাড়ি করে আসতে মিনিমাম এক ঘন্টা সময় লাগবে মাহির বাসায় ফিরতে।তার মধ্যে ২০ মিনিটের রাস্তা ওরা চলেই এসেছে।হুয়াং আশফির বাসার সামনে যখন পৌঁছাল তখন তার ঠিক কিছুটা দূরে আশফির গাড়ি ছিল।সেই গাড়িটি অবশ্য হুয়াং খেয়াল করেনি। তাই মাহিকে গাড়ি থেকে নামানোর সময় মাহিকে দাড়ানো অবস্থা থেকে কোলে তুলে নিল। মাহি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না।তাই হুয়াং কোলে তুলে নিয়েছে। বাসার সামনে অন্য একটা গাড়ি দেখে আশফি কিছুটা চমকে গেল।ওখানেই আশফি গাড়ি থামাতে বলল ড্রাইভারকে।তখন রাত ১২:০৫ বাজে। এত রাতে বাসার সামনে অন্য গাড়ি দেখে আশফির ভেতরে আতংক কাজ করছিল।আশফি গাড়ির ভেতর বসেই দেখতে পেল হুয়াং চ্যাং মাহিকে কোলে তুলে বাসার ভেতর ঢুকছে। এমন দৃশ্য দেখে রাগে আশফির চোখ দুটো কোটর থেকে বের হয়ে আসতে চাইছিল।ড্রাইভার আশফিকে বলল,
-“স্যার গাড়ি কি বাসার ভেতরে নিব?
আশফি কথার কোনো উত্তর দিল না। ড্রাইভার আশফিকে ডাক দিল।
-“স্যার?গাড়ি কি……..
-“একদম চুপ ব্লাডি বা**। কোনো কথা বলবেনা। এখানেই দাড়িয়ে থাকো।
আশফি হাতে থাকা ফোনটা অন করলো। বাসার ভেতরে সি সি ক্যামেরার সাথে আশফির ফোন কানেক্ট করা। তাই বাসার ভেতরে কি হচ্ছে ও সবটাই দেখতে পাবে। হুয়াং মাহিকে কোলে করে আশফির বেডরুমে ঢুকে গেল।
-“মিসেস আশফি আপনার বেডরুম পর্যন্ত চলে এসেছি যে।এবার কোল থেকে নামুন।
মাহি তখন পুরোটাই নেশার ঘোরে।হুয়াং মাহিকে বিছানায় শুইয়ে দিচ্ছিল।তখন একটা সার্ভেন্ট চান্দুকে কোলে করে বেডরুমে চলে আসলো।চান্দুর তখন খিদে পেয়েছে খুব আর সার্ভেন্ট ও চমকে গেছে মাহিকে হুয়াং এর সাথে এই অবস্থাতে দেখে। সার্ভেন্টকে দেখে হুয়াং তাকে ধমক দিয়ে রুম থেকে চলে যেতে বলল।সার্ভেন্টটা কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।তারপর হুয়াং মাহিকে বেডে শুইয়ে দিল। হঠাৎ মাহি হুয়াং এর কলার টেনে ধরলো চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই।হুয়াং এর কলার চেপে বলল,
-“এভাবে আমাকে ফেলে কোথায় চলে যাচ্ছো?
-“বাহ্।মিসেস আশফি আমাকে কাছে টেনে নিতে চাইছে নাকি?
হয়তো মি. আশফিকে ভাবছে আমাকে।
-“এই।একদম আমার কাছ থেকে সরবেনা।এখানে,
আমার কাছে থাকো।
-“কাছে তো থাকতেই পারি ম্যাম।মি.আশফির বেডে তার অনুপস্থিতিতে তারই বউ এর সাথে একটা রাত… ব্যাপারটা ভালোই হয়।
হুয়াং চ্যাং জানতো আজকে আশফি শহরের বাইরে যাবে।আশফি যাওয়ার পর দুপুর তিনটার সময় আশফিকে ফোন করে সে।কিন্তু ফোনটা সুইচড অফ পায় তখন।আর সেই সুযোগে সে মাহিকে মিথ্যা বলে তার পার্টিতে নিয়ে যায়।গাড়িতে বসে আশফি সবকিছু দেখছে আর রাগে ওর সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। পায়ের রক্ত যেন মাথায় উঠে আসার মত অবস্থা হয়েছে ওর। যখন দেখলো হুয়াং ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল এমনকি লাইটা ও অফ করে দিল সেই মুহূর্তে আশফি আর এক সেকেন্ডও গাড়িতে বসে থাকতে পারেনি।ছুটে গেল বাসার ভেতর।ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখতে পেল চান্দু একটা সার্ভেন্টের কোলে আছে।আর খুদাতে খুব কান্না করছে।এই দৃশ্য দেখার পর আশফি যেন একটা হিংস্র দানবের মত হয়ে গেল।সেখানে আর এক মুহূর্ত দাড়ালনা।সোজা উপরে চলে গেল।
সার্ভেন্টগুলো আশফিকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে আর ওর চোখ মুখ দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ওরা বুঝতে পেরেছে যে আশফি সব দেখতে পেয়েছে। দরজার সামনে গিয়ে দাড়াল আশফি।অসম্ভব রাগে ওর যা অবস্থা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে ওর শরীরে সত্যি কোনো দানব ভর করেছে।গায়ের সব শক্তি দিয়ে এমন ভাবে দরজাটাকে লাথি মাড়লো যে দরজাটা পুরোপুরি না ভাঙ্গলেও দরজার লক ভেঙ্গে গেছে।দরজা ঠেলে ঢুকতেই ও দেখতে পেল হুয়াং মাহির শরীরের উপর ঝুকে আছে। আর মাহিও হুয়াংকে জড়িয়ে ধরে আছে।তখন হুয়াং এর গায়ে কোনো পোশাক নেই।হুয়াং আশফিকে দেখে কিছু বলতে যাবে বা কিছু করতে যাবে তার আগেই আশফি বলল,
-“চুপ।নো সাউন্ড।
কথাটি বলেই আশফি হুয়াং কে টেনে ধরে এনে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।পাক্কা ২ ঘন্টা পর আশফি বাসায় ফিরল। কোনো সার্ভেন্ট আশফির সাথে কথা বলার কোনো সাহস পেলনা।আশফি সোজা রুমে ঢুকে গেল। রুমে ঢুকে দেখতে পেল চান্দু তখনো কান্না করছে।আর মাহি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। চান্দুকে কোলে তুলে একটা সার্ভেন্টকে ডাক দিল।
তারপর বলল,
-“পাওডার মিল্কটা বানিয়ে দাও।আমি ওকে খাইয়ে দিব।
-“কিন্তু স্যার বাবুর জন্য তো ওটা স্বাস্থ্যসম্মত হবেনা। আর তাছাড়া ও তো এটা খেতেও পারবেনা। ম্যামের বুকের…………..
আশফি রাগী চোখে সার্ভেন্টের দিকে তাকাল। ভয়ে সার্ভেন্টটা আর কোনো কথা বললোনা। তারপর আশফি বলল,
-“এখন থেকে ওকে এগুলো খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।যাও আর দেরী না করে ওর জন্য দুধটা বানিয়ে নিয়ে এসো।
-“ওকে স্যার।
সার্ভেন্ট দুধ বানিয়ে ফিডাড়ে ভরে আশফির কাছে দিল।প্রথমদিকে চান্দু সেটা খেতে না চাইলেও আশফি অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর কিছুটা খাওয়াতে পারলো।তার কিছুক্ষণের ভেতরেই আশফি ওর মেয়েকে কোলে করে ঘুরে বেড়িয়ে আদর করে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিল।আর আশফি যে পোশাকে ছিল সেই পোশাকেই মাহির মুখের সামনে গিয়ে বসে রইল।ওর মুখের দিকে চেয়ে নিজে নিজে বলতে থাকলো,
-“ও জানেনা ও আমার কোথায় হাত দিয়েছে। আমার কলিজাটা ছিড়ে নিয়েছে ও।ছিঃ আমি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছিনা। মনে পড়ে যাচ্ছে ঐ দৃশ্যগুলো।তুমি আমার বুকের ভেতরটা ভেঙ্গেচুরে দিয়েছো।মনে হচ্ছে হাজারটা তীড় বসিয়ে দিয়েছো পুরোটা বুক জুড়ে।
মাহির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথাগুলো বলছিল আশফি।আবারও আশফি মাহির মুখের দিকে তাকাল।
-“এই বিছানাতে তোমার শরীরের উপর অন্য একজন পুরুষ ছিল।তোমার শরীর স্পর্শ করেছে সে। তোমার খুব কাছে যেতে চেয়েছিল সে।তুমি তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে।আমার জায়গায় অন্য একজন পুরুষকে জড়িয়ে ধরেছিলে তুমি? মাহিইইইই?
চিৎকার করে মাহিকে ডেকে ওকে ঘুমন্ত অবস্থাতেই উঠিয়ে বসালো আশফি। তখন ও মাহি নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ঢুলে পড়লো আশফির বুকের উপর। আশফির ডাক হয়তো কিছুটা কানে গেছে মাহির। তাই ওর বুকে মাথা রেখে মাহি ঘুমন্ত কন্ঠে উত্তর নিল আর কথা বলল,
-“হুম?এই পাঁজি এভাবে ধমকাচ্ছ কেনো আমাকে? আমি কিন্তু কেঁদে দিব।
মাহি আশফির বুকের উপর ঝুকে পড়লেও আশফি মাহিকে জড়িয়ে ধরলোনা। মাহির কোনো কথার উত্তর ও দিল না।আশফির চোখ ফেটে যেন আগুন বের হচ্ছে আর সেই আগুন নিভানোর জন্য সেই সাথে অনর্গল অশ্রু ও ঝরছে।কিন্তু সেই অশ্রু হয়তো ব্যর্থ হচ্ছে আশফির চোখের আগুনকে নিভাতে। মাহি ঘুম মাখা কন্ঠে কথা বলছে,
-“এই আমার না খুব আদর নিতে ইচ্ছা করছে তোমার থেকে। আমাকে একটু আদর দাও না।
-“ওর এই কথা শোনার সাথে সাথে আমার ইচ্ছা করছিল ওকে সহ নিজের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিই।সহ্য হচ্ছিলনা ওর স্পর্শ।ধাক্কা দিয়ে ওকে ফেলে দিলাম বিছানার উপর। অনেকটা ব্যাথা পেয়ে কুকড়ে উঠেছে ও। আমি ওর কাছ থেকে উঠে যাব তখন ও আমার হাত টেনে ধরে আমাকে ওর কাছে টেনে নিল।ব্যাথা পেয়ে প্রায় কান্না করে দিয়েছে ও।
হালকাভাবে চোখদুটো খুলে কান্না জড়ানো কন্ঠে আমাকে বলল,
-“তুমি আমাকে এভাবে ব্যাথা দিতে পারলে? আমি কতোটা ব্যাথা পেয়েছি। তুমি তো আমাকে কখনো মাড়োনা।কেনো আমাকে এভাবে মাড়লে?
এইভাবে ওর কান্না করে দেওয়া দেখে আমি যেন কোনো কথা বলতে পারছিলামনা।কোনোদিনও আমার থেকে কোনো আঘাত পাইনি ও।আজ প্রথম ওকে এভাবে আঘাত করলাম।
-“কথা বলছোনা কেনো? আদর করতে বলেছি বলে এভাবে আমাকে মাড়লে? ঠিক আছে তাহলে আমি তোমার থেকে জোড় করেই আদর নিব।দেখবে তুমি?
-“মাহি আমার কলার চেপে ধরে ওর একদম কাছে টেনে নিল।তারপর আমার এক গালে হাত রেখে অন্য পাশের গালে চুমু খেল। আমার ঠোঁটে চুমু দেওয়ার সময় আমি ওর থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে চলে এলাম।ও আর উঠে আসতে পারলোনা।হয়তো সেই এ্যানার্জিটুকু ওর শরীরে নেই।ওর কাছ থেকে এভাবে উঠে আসাতে ও রেগে গিয়ে অনেক বকাবকি করতে থাকলো আমাকে। তারপর কখন যেন নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছে।গা থেকে স্যুটটা খুলে ফেললাম। বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।আমার সবকিছু কেমন যেন উল্টা পাল্টা লাগছে।না চাইতেই চোখের সামনে তখনকার দৃশ্যগুলো ভেসে উঠছে।
কোনোভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিনা। মাহির সামনেও আমার থাকতে ইচ্ছা করছেনা। একবার মনে হচ্ছে নিজের মাথায় নিজেই শুট করি। আবার মনে হচ্ছে ওকে ঘুমের ভেতরেই শুট করে দিই।ও আমার চোখের সামনে থাকলেই আরো বেশি খারাপ লাগছে। ওর কাছে গেলেই বারবার মনে হচ্ছে এখনো ওর শরীরে ঐ জানুয়ারের বা** ছোঁয়া লেগে আছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা।আমি কোনোদিন ও সহ্য করতে পারিনি ওকে আমি ছাড়া বাইরের কোনো পুরুষ মানুষ টাচ্ করলে।সেখানে আজকে ওর শরীরের উপর………
আশফি পুরো কথাটাও বলতে পারলোনা।
-“কখন যেন নিজের অজান্তেই মাহির কাছে গিয়ে বসে পড়েছি।
আশফি সারারাত এভাবেই মাহির কাছে বসে ছিল। মাহির ঘুম ভাঙ্গলো।চোখ মেলে তাকাতেই দেখল আশফি ওর পাশে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে হাঁটুর উপর ভর করে বসে আছে।
আশফি খেয়াল করেনি মাহি জেগে গেছে। মাহি ওকে এভাবে বসে থাকা দেখে কথা বলে উঠল,
-“আশফি?তুমি কখন এসেছো?
-“ওর কথা শুনে আমি মাথা উঁচু করে ওর দিকে তাকালাম।
-“আশফির চোখদুটো রক্তের মত লাল হয়ে আছে। আর ওর চোখ মুখের অবস্থা যেন কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।চোখে মুখে অসম্ভব রাগ দেখতে পাচ্ছি মনে হচ্ছে।
-“আমি ওর পাশ থেকে উঠে চলে এলাম।
-“এই তুমি কখন এসেছ? আর এসে আমাকে ডাকোনি কেন? উফফ।
মাহি উঠে দাড়াতে গিয়ে মাথায় যন্ত্রণা অনুভব করলো।মাথাটা ধরে উঠে দাড়ালো তারপর আশফির কাছে গেল।
-“এতো মাথা যন্ত্রণা কেনো করছে?এই আশফি এভাবে চুপ করে আছো কেনো বলো তো?আর তোমার এ অবস্থা কেনো?মনে হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এসেছো। অদ্ভুত!কোনো কথা বলছেনা।স্টিল হয়ে দাড়িয়ে আছে।এই তুমি আমার কাছে এসো তো। আসার পর বোধ হয় আমার ঘুম থেকে ওঠার অপেক্ষায় বসে ছিলে?শার্টটা ও খুলোনি এর জন্য।আমি খুলে দিচ্ছি তুমি যাও গোসল করে এসো। কিরকম যে দেখা যাচ্ছে তোমাকে!
মাহি আশফির কাছে গিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে গেল।মাহি টাচ্ করার আগেই আশফি পিছু সরে গেল।মাহি বলল,
-“এটা কি হল?এভাবে দূরে সরে গেলে কেনো? তুমি রাগ করেছো আমার উপর তাইনা?আমি এভাবে কুম্ভকর্ণের মত ঘুমিয়েছি বলে?আচ্ছা সরি।এবারের মত মাফ করে দাও।এদিকে এসো আমি তোমার শার্টটা খুলে দিচ্ছি।তারপর অনেকগুলো পাপ্পি দিব।
মাহি আবারও আশফির কাছে গেল শার্টটা খোলার জন্য।আশফি তখন মাহিকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিল।তারপর মাহির সামনেই আশফি শার্টের বোতামগুলোর স্থানে ধরে টেনে ছিড়ে ফেলল শার্টটা। ছিড়ে ফেলা শার্টটা আশফি ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। মাহি অবাক হয়ে এগুলো দেখলো। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলোনা।প্রায় ঘন্টাখানিক পর আশফি বাথরুম থেকে গোসল করে বের হলো।তখনও আশফির ফর্সা মুখটা রাগে লাল হয়ে আছে।আর অনেকক্ষণ পানিতে ভেজার কারণে চোখদুটো অসম্ভব পরিমাণ লাল হয়ে আছে।এমন ব্যবহারের কারণ জানতে চাওয়ার জন্য মাহি আশফির পথ আটকে ওর সামনে দাড়ালো ।
-“আশফি আমার দিকে তাকাও।কি হয়েছে তোমার? কেনো এমন করছো?
মাহির কথার উত্তর না দিয়ে আশফি চলে যাচ্ছিল। মাহি এবার রেগে গিয়ে আশফির হাত টেনে ধরলো।
-“কি সমস্যা তোমার? এভাবে এভোয়েড করছো কেনো আমাকে?আর কথা বলছোনা কেনো?
মাহি এভাবে চিৎকার করে কথা বলা দেখে আশফির গরম মাথা যেন আরো বেশি গরম হয়ে গেল। ও নিজের হাত ছাড়িয়ে মাহিকে ধাক্কা দিয়ে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে ধরলো।মাহির মাথায় আর পিঠে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে চোখ থেকে আপনা আপনি পানি বের হয়ে এলো। আশফি প্রচন্ড জোড়ে ওর গাল চিপে ধরলো।তারপর বলল,
চলবে……..(গল্পে আপনাদের আশানুরূপ লাইক পেলেও তেমন কোনো মন্তব্য পাইনা।গঠনমূলক কিছু মন্তব্য করে আপনারা আমাদের উৎসাহ দিতে পারেন বা গল্প সম্পর্কে আপনাদের অনুভুতি প্রকাশ করতে পারেন।এতে আমাদের ও ভালো লাগে।তাই শুধু লাইক না করে গঠনমূলক কিছু মন্তব্য ও করবেন আশা করছি।)