রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১১
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
মাহিঃ ওর বাহিরটা যতোটাই কঠোর হোক তার থেকেও হাজার গুণ বেশি কোমল ওর ভেতোরটা। আজকের কাজটার জন্য হয়তো এর থেকেও বেশি পরিমাণ শাস্তি প্রযোয্য ছিলো আমার জন্য।কিন্তু তা তো পেলামই না তার বিপরীতে অজস্র অজস্র প্রেম সোহাগ পেলাম।প্রতিদিন ওর আদর সোহাগের প্রতি আমার ঝোকটা যেনো বেড়েই চলেছে।মনে হয় সবকিছু যেনো প্রথম দিনের মত নতুন করেই পাচ্ছি ওর থেকে। ওর ছোঁয়াতে আমার শরীরের কম্পন যেনো সেই প্রথম দিনের মত করেই বেড়ে উঠে। এইতো এই ভর সন্ধ্যাবেলাতেও ওকে জাপটে ধরে ওর বুকে মাথা পেতে ওর মুখের দিকে চেয়ে শুয়ে আছি।ওকে সর্বক্ষণ দেখতে থাকলেও আমার নয়নদুটো যেনো তুষ্ট হতে চাইনা। এতো নিঁখুত করে মায়া লাগিয়ে কি করে সৃষ্টি করেছে বিধাতা? এই মায়া টা যেনো আরো বেশি জেগে উঠে ও যখন চোখদুটো বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে থাকে। বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, জানালা খোলা,সাদা মসৃণ কাপড়ের পর্দাটা উড়তেই আছে।বিদ্যুতের আলোটা ওর মুখের মাঝে এসে পড়ছে।লাইটা অফ রেখেছি।বাইরের ঝুম বৃষ্টির আওয়াজটা স্পষ্টভাবে কানে না আসলেও বৃষ্টি ঝরার গতি দেখে বুঝতে পারছি পুরো সন্ধ্যাটা এখন লাগামহীন বর্ষণমুখর।যা এক অনন্যময় রোমাঞ্চকর মুহূর্ত সৃষ্টি করছে।বিয়ের পর আজই এই প্রথম মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা পেলাম আমি আমার সোহাগরাজের সাথে। কিন্তু এমন সময়ই পেলাম যখন বিদ্যুতগতিতে শরীরের শিহরণ প্রসারিত হচ্ছে কিন্তু নিজেকে ওর কাছে সঁপে দিতে পারছিনা।এ যে খুবই সহ্যাতীত এক জালা।ওর মুখে বিদ্যুতের দ্যুতি যতবারই এসে পড়ছে ততবারই ওকে দেখতে আলোকরাজের মত মনে হচ্ছে।অন্ধকার রাজ্যের মাঝে সোহাগরাজের মুখে পড়া বিদ্যুতের দ্যুতি তাকে কতোটা আকর্ষিত করছে আমাকে তা কি সে জানে?ওর সোহাগ পাওয়ার মাতাল উন্মাদনা জেগেছে আমার মাঝে।
আশফিঃএই যে মহারানী? সেই তখন আমার মুখের উপর পড়ে আমাকে কি দেখা হচ্ছে? হুম?
-“কি করে বুঝলে?তুমি তো চোখ বন্ধ করে আছো।
-“তুমি আমার কতোটা কাছে আছো দেখেছো? কতোটুকু দুরত্ব আছে তোমার আর আমার মুখের মাঝে?তুমি আমার দিকে একনজরে তাকিয়ে আছো তা তো আমার মুখের উপর ঝু্কে থাকা দেখেই বুঝতে পারছি।
-“তাহলে কথা না বলে চোখ বন্ধ করে ছিলে কেনো?
-“কিছু পাওয়ার আশায় ছিলাম।যেভাবে তাকিয়ে দেখছিলে তাতে তো মনে হচ্ছে……..!!
-“কি মনে হচ্ছে?
-“মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে দিবে।
-“ও আচ্ছা।তো তুমি সেই অপেক্ষাতে ছিলে?
-“হুম।নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছিলাম।ভেবেছিলাম এই বুঝি বর্ষণের ন্যায় আমার বুকে চুমুর বর্ষণ বয়ে যাবে।কিন্তু সেই অপক্ষার অবসান তো আর ঘটালেনা।তাই চোখ খুলতে বাধ্য হলাম।
-“কিন্তু তারপর তো সেই থেমেই যেতে হবে। আমি যে মনে মনে কাতর হয়ে পড়ছিলাম তোমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। খুব কষ্ট হয় জানো যখন মনে সোহাগ পাওয়ার কাতরতা জাগে কিন্তু সেই সোহাগ পাওয়ার কাতরতা মেটাতে পারিনা।
-“দুজনের পরিপূর্ণ মিলনই যে সোহাগ তা তোমাকে কে বলেছে।সোহাগ কি তা কিভাবে কিভাবে উপভোগ করা যায় তা তুমি আজও বুঝতে পারলেনা? যখন তোমার ইচ্ছা হলো আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ার তখন ঝাপিযে পড়তে।নিজেকে থামিয়ে সেই কাতরতা মাটি চাপা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো যে প্রাকৃতিক তৃষ্ণা।সেই তৃষ্ণা কতক্ষণ না মিটিয়ে থাকতে পারবে বলো?তাই যখন যেমন ইচ্ছা হবে ঠিক তখনই সেই ইচ্ছাটাকে পূরণ করে নিবে।
-“তাতে যদি তৃষ্ণা আরো বেশি বেড়ে যায়?
-“তাহলে আমার কাছে থাকা বন্ধ করে দাও।
-“রাগ করছো কেনো? আমি তো আমার মনের চাহিদা ব্যক্ত করলাম।
-“যে চাহিদা ব্যক্ত করে তা পূরণ করতে পারবেনা সেই চাহিদা ব্যক্ত করার কোনো দরকার আমি দেখিনা।
-“আচ্ছা আমি বুঝেছি।
-“কি বুঝেছো?আমি যা বোঝাই তুমি তার মাঝ থেকে হাজারটা এক্সকিউজ বের করো এটাই আমার ভালো লাগেনা।
-“আচ্ছা আর করবোনা। সরি।আমি তো বুঝতে পেরেছি তুমি আমাকে যা বোছাতে চেয়েছো।
-“কি বোঝাতে চেয়েছি বলো তো?
-“যখন যা মন চাইবে তখন তাই করবো। না মানে সেটা শুধু তোমার বিষয়ে।
-“হুম।তো শুরু করো। এখন যা মন চাইছিলো।
-“ইশ এভাবে বলে কয়ে এসব জিনিস করা যায়?তুমি যখন চোখ বন্ধ করে ছিলে তখন তো তুমি আর জানতেনা যে আমার মন কি চাইছিলো তখন না হয় করতে পারতাম। এখন তো কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।
-“কে বলেছিলো আমি জানতাম না?আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম তোমার মন এখন আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য ডাকছে আর আমি সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য সেই তখন থেকে প্রস্তুত হয়ে আছি। আর এখন তুমি এসে উল্টা পাল্টা এক্সকিউজ দেখালে আমি সেটা মেনে নিবো?
-“না প্লিজ।আমার ভীষণ লজ্জা লাগবে।
-“আমি বুঝিনা।থেকে থেকে তোমার এই লজ্জাটা আসে কোন দেশ থেকে?
কিছু সময় আমার প্যান্ট খোলার জন্য ও রেডি থাকো আবার কিছু সময় বাসর ঘরের নতুন বৌ এর মত ভাব করো।এগুলোর মানেটা কি হ্যা?
-“আমি জানিনা তো। যখন আমার যেমন লাগে তখন আমি তেমনই তো বলবো।
-“তার মানে এখন তোমার লজ্জা করছে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তে, তাইতো?
-“ওর বুকের উপর থেকে মাথা তুলে উঠে বসলাম।
আর শুধু মাথা ঝাকিয়ে ওর প্রশ্নের উত্তর দিলাম।
-“হুমম।আমাকে তো এটা ভুললে চলবেনা,লজ্জাই নারীর ভূষণ।সেটা যখন তখন আসতে পারে তাদের মাঝে।আর সেই লজ্জার বাঁধ ভেঙ্গে দেওয়ার গুরু দায়িত্বটাও আমাদেরই নিতে হয়।
আমি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ওকে কোলে তুলে জানালার কাছে এসে দাড়ালাম।তারপর আস্তে করে ওকে নামিয়ে জানালার একদম সামনে দাড় করালাম।বৃষ্টির ঝাপটা এসে ওর মুখটা ভিজিয়ে দিচ্ছে।
-“বৃষ্টির ঝাপটা যে আমার মুখের এসে লাগছে।
-“লাগুক।এটুকুতে কিছু হবেনা।সেটা মুছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।তখন রুমে এসে তোমাকে যখন দেখলাম বৃষ্টির ঝাপটা তোমার মুখে এসে তোমার মুখ আর মুখের উপর পড়ে থাকা চুল গুলোকে ভিজিয়ে দিয়েছে তখন তোমাকে দেখতে সেই বর্ষণমুখর প্রকৃতির মত সতেজ আর উজ্জল লাগছিলো।দেখোনা, বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর সবুজ প্রকৃতিকে কেমন প্রাণবন্ত আর সতেজ লাগে।পুরো প্রকৃতিটাকে ধুয়ে দিয়ে যায়। ঠিক তেমন দেখাচ্ছিলো তখন তোমাকে।
-“তাহলে পুরা নিজেকে বৃষ্টিতে ভিজালে আরো সতেজ আরো উজ্জল লাগবে আমাকে?
-“হুম।কিন্তু তাই বলে এখন বৃষ্টিতে ভিজার আবদার করোনা।সেটা কিন্তু আমি একদম মানবোনা।
-“আমি জানতাম তুমি এটাই বলবে।এতোটা নিষ্ঠুর হইয়োনা প্লিজ।কতদিন বৃষ্টিতে ভিজিনা বলো।কবে ভিজেছি সেটাও মনে নেই। চলোনা এখন একটু ভিজি। কিচ্ছু হবেনা।সত্যি বলছি।
-“তুমি জানো বৃষ্টির পানি এখন কতো ঠান্ডা।আজকে সারাদিন স্নো পড়েছে।এই সময়ের বৃষ্টিটা একদম ভালো নয়।অসুখের কারণ হতে পারে।
কথাগুলো শুনে মুখটা ফুলিয়ে পুরা টমেটো করে রাখলো।রাগ করে চলেই যাচ্ছিলো পেছোন থেকে ওর কোমড়টা জড়িয়ে ধরে ওকে আমার বুকের সাথে লাগিয়ে ধরলাম।তারপর বললাম,
-“তুমি বৃষ্টিতে ভিজতে পারছোনা বলে এভাবে আমার উপর রাগ করে চলে যাচ্ছিলে?আমি যদি আমার ভালোবাসার বৃষ্টিতে তোমাকে ভিজিয়ে দিই, তাহলে তুমি ভিজবেনা?
-“বুঝতে পারছিলামনা ওর কথার উত্তরটা কিভাবে দিবো।এতো আমার কাছে স্বর্গীয় সুখের থেকে কম কিছু নয়।সেখানে এই প্রাকৃতিক বর্ষণ ও হার মানবে।
-“কি হলো,উত্তরটা দিলেনা?তার মানে তুমি চাওনা।ঠিক আছে।
-“না না।আমি কি একবার ও বলেছি?আমি চাইনা?
-“হ্যা ও তো বলোনি।
-“তুমি কি বুঝোনা, এসব বিষয়ে মেয়েরা সরাসরি কখনো সম্মতি দিতে পারেনা।
-“জানি তো।কিন্তু তাও শুনতে ইচ্ছা হচ্ছিলো।
কথা চলছিলো তার মাঝখানে হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। আজকে যেনো বৃষ্টি থামতেই চাইছেনা।বৃষ্টির মাঝে ও যেনো এক উন্মাদনা কাজ করছে। বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজে মাহি চমকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মুখ গুজে রইলো।আমি ওর মুখটা তুলে ধরলাম।আবার ও সেই জানারার সামনে গিয়ে দুজনে দাড়ালাম।ও আমার দিকে উল্টোপাশ করে ঘুরে আমার বুকের সাথে মিশে দাড়িয়ে আছে।আমি ওর কোমড় জড়িয়ে পেটের উপর হাত রেখে দাড়িয়ে আছি।বৃষ্টির ঝাপটা এসে দুজনের মুখই ভিজিয়ে দিচ্ছে।মাহি চোখদুটো বন্ধ করে আছে।আমি আগে থেকেই জামা ছাড়া ছিলাম।গা পুরা খালি। ওর গায়ে থাকা পাতলা কোটিটা খুলে ফেললাম।নিচে স্লিভলেস একটা টপস পড়া ছিলো।পিঠটা অনেকটাই ফাঁকা দেখা যাচ্ছে।আমি পিঠের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে কাঁধের একপাশে রেখে ঘাড়ে চুমু দিতে শুরু করলাম।তাতে ও অনেকটা শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরলো।ওর পেটের উপর আমার হাত দুটো ছিলো।আমার হাতের উপর হাত হাত রেখে ছিলো।তারপর ওর পিঠে সামান্য নিচে চুমু দিচ্ছিলাম।চুমুর দেওয়ার পরিমাণ আস্তে আস্তে বেড়েই চলছিলো। আর তার সাথে আমার অস্থিরতাও বাড়ছিলো।আমার চুমুতে হালকা ভিজে যাচ্ছিলো ওর পিঠ আর ঘাড়।ওকে ঘুড়িয়ে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট বসিয়ে চুমু দিতে শুরু করলাম।সাথে মাহিও আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঠোঁটে চুমু দিচ্ছিলো।ওর চোখ দুটো বন্ধ ছিলো।যতবারই ওর কাছে এসেছি বা ও নিজেও আমার কাছে এসেছে, ভালোবাসা বিনিময়ের সময় ততবারই ওর চোখ দুটো বন্ধ থাকে। আজ ও তাই।ঠোঁট ছেড়ে যখন ওর গলাতে নামবো তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। মাহি তো আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আরো অনেক কিছু চাইছে আমার থেকে।এর মাঝে বিরতি ঘটাতে আমার খুব খারাপ লাগছে।কিন্তু ফোনটা বেজেই চলেছে। ফোনের রিংটা মাহির কানে পৌঁছেছে কিনা জানিনা তবে আমাকে ছাড়ার কোনো নাম গন্ধই নেই। ফোনটা রিসিভ করতে পারলাম না।আচমকাই মাহি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। আমার কাছে এসে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমার শরীরের উপর উঠে শুয়ে পড়লো।মাথাটা উচুঁ করে রেখেছিলো।কেমন যেনো এক অদ্ভুদ মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার চোখের দিকে।আমি ওর চুলের ফাঁক দিয়ে ঘাড়ে হাত দিলাম।ওর মুখটা আমার মুখের কাছে এগিয়ে নিতেই ও আমার ঠোঁটে চুমু দেওয়া শুরু করলো।তারপর গালটাও ভিজিয়ে দিলো। কানে চুমু দিয়ে আমার গলার কাছে নেমে এলো। মাতালের মত চুমু দিয়ে যাচ্ছে গলাতে।আমি ওর পিঠ চেপে ধরে আছি। আবার ও ফোনের রিংটা বেজে উঠলো।এবার মনে হচ্ছে ফোনটা রিসিভ করা প্রয়োজন।দরকারি ফোন বলেই মনে হচ্ছে।না হলে কেউ এতোবার ফোন করে। কিন্তু মাহির তো এদিকে কোনো হুশ নেই।চুমু দিতে দিতে আমার গলা,বুক সব ভিজিয়ে দিচ্ছে।কিভাবে ওকে থামতে বলবো বুঝতে পারছিনা।
চলবে।