#রোদহীন বিকালে তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৯
২৩.
সবাই ভী’ষ’ন ব্য’স্ত রিসিপশনের কাজে।আনিশাকে সাজাচ্ছে পার্লারের মেয়েরা।আনিশা পু’তু’ল হয়ে বসে আছে।কালকে রাতের পর থেকে ম’ন ভালো নেই তার।নিজের স্বামীর চো’খে অ’ন্যকারো জন্য ভালোবাসা কোনো মেয়েই স*য্য করতে পারে না।আনিশাও পারছে না।
সাজানো শেষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ছাদে।আলভি সেখানে দাঁড়িয়ে তার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলো।আনিশার চোখ আ’টকে যায় তার প্রিয় মানুষটার দিকে।
আলভিও তাকায় আনিশার দিকে।আনিশা লা*ল রঙের লেহেঙ্গা পরা।আলভিও ওর সাথে মেচিং করে শেরওয়ানি পরা লা*ল রঙের।একবার তাকিয়ে চো’খ ফিরিয়ে নেয়।আহা আর ফারিহা আনিশাকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
ফারিহার আলভির উপর চো’খ আটকে আছে।সে তাকাতে চাইছে না কিন্তু বে’হা’য়া ম’ন তো মানতে চায় না।আলভিও ফারিহার দিকে তাকায়।
ফারিহাও নীল রঙের লেহেঙ্গা পড়া।রোদও একই রঙের পাঞ্জাবি পড়া।রোদ হুট করে ফারিহার সামনে আসে।ফারিহার সামনে এসে ওকে বলে,,,,
“তোমাকে কিন্তু সেই লাগছে একেবারে হুরপরি”
ফারিহা রেগে রোদের দিকে তাকিয়ে দাঁ’তেদাঁ’ত চে’পে বলে,,,,”আপনি না আমার স্যার হন।নিজের স্টুডেন্টকে এসে বলছেন তাকে হুরপরি লাগছে লজ্জা করে না”
রোদ দাঁ’ত কেলিয়ে বলে,,,,”মোটেও ল’জ্জা করে না আর আমি ওই ভার্সিটির টিচার হয়েছি শুধু মাত্র আমার কাঁ’চামরিচ মানে তোমার জন্য”
ফারিহা অ’স’ভ্য বলে ইয়ামিনের কাছে চলে গেলো।এতোসময় আলভি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো।রা*গে ওর গা জ্ব*লে যাচ্ছে।আলভি ভেবে পাচ্ছে না রোদ কেনো ফারিহার আশেপাশে থাকে সবসময়।আলভি গিয়ে আনিশার পাশে বসে।আনিশা এতো সময় ওদেরই দেখছিলো।বুকে বড্ড জ্বা*লা করছে আনিশার।ভালেবাসার মানুষটা যদি অন্য কাউকে ভালোবাসে ক*ষ্ট তো হবেই।
ফারিহারও ক*ষ্ট হচ্ছে আলভি আর আনিশাকে এক সাথে দেখে।রোদ একটা বিষয় এই কয়েক দিন খেয়াল করেছে।ফারিহা আলভির দিকে তাকিয়ে থাকে আর আলভিও।ওর ম’নে স’ন্দে’হের সৃষ্টি হয়েছে।আলভি বলেছিলো ও যাকে ভালোবাসে সে আনিশা নয় ওদের বিয়েটাও স্বাভাবিক ভাবে হয়নি।তাহলে ফারিহাই কি আলভির ভালোবাসার মানুষ।
আবার রোদ আনিশার চোখেও অফুরন্ত ভালোবাসা দেখেছে আলভির জন্য।কিছুই মা*থায় ঢুকছে না।কল আসার শব্দে রোদের ঘো’র কাটে।ও কল রিসিভ করে কথা বলতে থাকে।
ভালোভাবেই আনিশা আলভির রিসিপশনটা শে’ষ হলো।সবাই চলে গিয়েছে। ফারিহা আর ইয়ামিনও চলে গিয়েছ।আনিশা প্রচন্ড ক্লান্ত। আজকে সারাদিনই প্রচুর ধ’ক’ল গিয়েছে তার উপর।তারপর আবার আলভির ফ্রেন্ডরা মিলে বাসর সাজিয়েছে।এখন আবার ভারি লেহেঙ্গা পরে বউ সেজে বসে আছে।আলভি রুমে আসলো।আলভিকে দেখে আনিশার স্বাভাবিক লাগছে না।এলোমেলো পায়ে আনিশার কাছে এসে বসে।
আনিশা ভয়ে বিছানার চাদর খা’মচে ধরে।আলভি আনিশার ঘোমটা তুলে গালে হাত দিয়ে বলে,,,”তোমাকে খুব ভালোবাসি ফারুপাখি আজকে আমি তোমাকে নিজের করে নেবো”
আনিশা আ’ট’কে ওঠে।ও এখনো প্রস্তুত না এইসবের জন্য।তার উপর আলভি ওকে নেশার ঘো’রে ফারিহা ভাবছে।না হলে এই কথা কখনো বলতো না।ও আলভিকে বলে,,,
“আলভি আমি ফারিহা নই আনিশা।”
আলভি হেসে বলে,,,”আমি জানি তুমি আমার ফারু”
আলভি জো*ড় করে আনিশাকে কিস করতে থাকে থাকে।আনিশা ছাড়ানোর চে*ষ্টা করে।আজকে যদি তাদের ভেতরে কিছু হয় তাহলে কালকে আলভি তাকে খারাপ ভাববে।কিস করার মাঝেই আলভি আনিশার উপর ঢলে’ পরলো।আনিশা বুঝলো আলভি ঘুমিয়ে পরেছে।ও আলভিকে ঠিক করে শুইয়ে দিলো।তারপর নিজে চে’ঞ্জ করে শুয়ে পরলো আলভির পাশে।
আজকের মতো বেঁচে গেলো।কিন্তু আলভি ড্রিংক করেছে কেনো আনিশা বুঝলো না।আনিশা আলভির দিকে তাকিয়ে রইলে একদৃষ্টিতে।আজকে প্রথম তাকে আলভি স্প’র্শ করলো তাও তাকে ফারিহা ভেবে কি ভা*গ্য তার।আলভিকে দেখতে দেখতে আনিশা ঘুমিয়ে পরলো।
২৪.
ফারিহা বাড়ি এসেই কেঁদেছে প্রচুর।ও সবার সামনে নিজেকে যতটা শ’ক্ত দেখায়।কিন্তু ও তো একটা মানুষ নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যকারো সাথে দেখা আর স’ম্ভ’ব হচ্ছে না তাই ফারিহা নিজ মনে বিরাট একটা সিদ্ধান্ত নিলো।কালকে ও এমন কিছু একটা করবে যা কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারবে না।ও জানে কালকে আনিশা আর আলভি ভার্সিটি আসবে।
তখনই ও কাজটা করবে।আর আনিশা বেচারিও আর কতোদিন এমন ক*ষ্ট পাবে।ফারিহা আনিশাকে শ’ক্ত হতে বললেও আনিশা পারে না।কিন্তু ফারিহা চে’ষ্টা করবে আনিশাকে আত্ননির্ভরশীল করতে।ফারিহা ভাবলো।তার এই কাজটার জন্য যদি তিনটা জীবন ভালোভাবে ভালো থাকতে পারে তার আনি আর আলভিও ভালো থাকতে পারে তাহলে সে করতে প্রস্তুত সব কিছু।
২৫.
সকালে ঘুম ভাঙতেই আলভি দেখলো সে আনিশাকে আ’ষ্টেপৃ’ষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।আলভি অবাক হয়ে গেলো।কালকে নিশান তিশামের সাথে বসে আলভি জুস খেয়েছিলো।জুস খাওয়ার পর ওর কিছু ম’নে নেই ও মা*থা চেপে ধরে উঠে বসে।আলভির নড়াচড়া করাতে আনিশার ঘুম ভে’ঙে যায়।আনিশাও উঠে বসে।আলভি বলে,,,,
“আমি কি কালকে রাতে তোমার সাথে খারাপ কিছু করেছিলাম সত্যি বলো”
আনিশা বলে,,,,”না না আপনি কি করবেন শুধু আমাকে জড়ি…….”
আনিশা চুপ হয়ে গেলো।আলভি বলল,,,,”শুধু কি বলো প্লিজ বলো আমি কি তোমার সাথে কিছুই করিনি”
আনিশা বলল,,,”সত্যিই বলছি আপনি শুধু আ..মা.কে জ…ড়ি.য়ে ধ..রে..ছিলেন”
কথাটি বলে আনিশা দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢু’কে পরলো।কথাটা বলতে ওর অনেক ল*জ্জা লাগছিলো।কিসের কথাটা চে’পে গেলো।ও আলভিকে কোনো বা’জে পরিস্থিতিতে ফেলতে চায় না।ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো ও।দেখলো সবাই মিলে খেতে বসেছে।আলভি আনিশাকে দেখে বলল,,,
“তাড়াতাড়ি খেয়ে রেডি হও ভার্সিটি যেতে হবে”
আনিশাও তাড়াতাড়ি খেয়ে উপরে চলে গেলো।ভার্সিটি যাওয়ার কথা শুনে মিসেস নাফিয়া বলল,,,,”আজকে ভার্সিটি না গেলে হয় না”
আলভি টেবিল ছেড়ে উঠতে উঠতে বলে,,,,”না হয় না!”
আনিশাকে আলভি ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দেয়।আজকে ওরা একটু আগেই এসেছে।আনিশা আলভিকে বাই বলে চলে যায়।আনিশাও ফারিহার কাছে গিয়ে গল্প করতে থাকে।
২৬.
“কি বলছো আনিশা বিয়ে হয়েছে আজ একমাস হলো আর তুমি আমাকে এখন বলছো!তোমাকে কি আমি এমনি এমনি রেখেছি হ্যা ড্যা’ম ইট”
অন্ধকার একটা রুমে দাঁড়িয়ে একটা লোক কথা বলছিলো।লোকটা আনিশার বিয়ের কথা শুনে রে*গে ফোনটা দেওয়ালে ছুঁ’ড়ে মা’রে।পাশে থাকা টি টেবিলেও লা’থি মেরে ফেলে দেয়।লোকটা রা*গে ফো’স’ফো’স করছে।তার চোখে আ’গু’ন জ্ব*ল*ছে নিজের ভালোবাসাকে হা’রা’নোর আ*গু*ন।সে খুব তাড়াতাড়িই ফিরবে। খুব তাড়াতাড়ি!
“আমার ভালোবাসাকে আমার থেকে কে*ড়ে নেওয়ার ফল সবাই ভুগবে।আমি আসছি আমার জানপাখি।খুব তাড়াতাড়ি।তোমার ওই পালিত মা বাবাকেও তো শা*স্তি দিতে হবে।”
লোকটা বসে মদ গিলতে লাগলো।চোখ জো*ড়া অ’স’ম্ভব লাল হয়ে আছে।যে কেউ দেখলেই বলবে সে এক অ’ন্ধপ্রমিক।হ্যা সে আসলেই আনিশার প্রেমে অ*ন্ধ।আজ দুইটা বছর ধরে সে আনিশাকে ভালোবাসে আর হুট করে কেউ এসে তাকে বিয়ে করে নিলেই হবে নাকি।আনিশা যে শুধু তার!
২৭.
আনিশা ফারিহা ছুটির সময় ক্যাম্পাসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।ফারিহা হুট করে কাউকে ফোন করে ডাকলো।আনিশা ইয়ামিন তাকিয়ে তাকিয়ে ফারিহার কাজ দেখছে।ওদের মা*থায় কিছুই ঢুকছে না।কিছুক্ষণের মাঝেই রোদ তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।ফারিহা হুট করে চি’ল্লি’য়ে বলল,,,,
“মিস্টার রোদ আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন”
ওখানে উপস্থিত থাকা সবাই হা করে ফারিহার দিকে তাকিয়ে আছে।আলভিও মাত্র এসেছে আনিশাকে নিতে।
ফারিহার কথা শুনে ঘোরে চলে যায়। ইয়ামিন আর আনিশাও এক প্রকার ঘোরে আছে। ফারিহা এমন কাজ করবে ওরা ক’ল্পনাতেও ভাবেনি।রোদ গো’লগো’ল চো’খ করে ফারিহার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ কিছু বলছে না দেখে ফারিহা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,
“এই যে আপনি কি বিয়ে করবেন আমায়!”
চলবে,,,,,,?