#রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায়
লেখনীতে: সালসাবিল সারা
পর্ব- ১৩
_________________
–“চিঠি উমাইর ভাইয়া না তুমি ছিঁড়েছো,তাই না?”
রুদ্ধ কণ্ঠস্বর আফিয়ার।তাহুরা ভীত,চমকিত।কক্ষে ফিরে এলে আফিয়া নানান প্রশ্ন করে উমাইর সম্পর্কে।যখন জানে সে,উমাইর বকেনি তাহুরাকে।উল্টো চিঠি ছিঁড়েছে তার;তখন ক্রোধে মত্ত হয় আফিয়া।চেপে ধরে তাহুরার বাহু।
তার ঝলসানো আঁখিতে সরল তাহুরাকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে।জাফরান উঠে আসে বিছানা হতে।তাদের অবস্থা না বুঝে সে তাহুরার নিকট আসে।তার হাত টানে,
–“বাহিরে যায় আপু।চলো!”
তাহুরা স্থির।কান্না পাচ্ছে তার।বাহুতে পীড়া। আফিয়ার নখ দেবে যাচ্ছে সেথায়।তাহুরা নড়ে উঠে।ভেজা কণ্ঠে বলে,
–“আমি কেনো ছিঁড়বো আপু?আমি কিছু করিনি।”
–“এই,একদম নাটক করবা না। বড়বোন বড় ভাইকে হাত করেছে।ফকির কতোগুলো।এখন…”
বক্তব্য থামে আফিয়ার।দুয়ারে দাঁড়িয়ে মেঘলা বেগম।হুংকার ছাড়ে,
–“আফিয়া?নিজেদের বাড়ির সম্মানটা বজায় রাখো।”
দ্রুত হেঁটে এসে আফিয়ার খপ্পর হতে উদ্ধার করে তাহুরাকে।নিজ বুকে জড়িয়ে নেয়।
তাহুরা নিজ জগতে নেই।অন্য জগতে সে।আফিয়ার মন এমন নিচু!কই,তাকে দেখে তার মন মানসিকতা এমন,বুঝা দায়।তার বোন এই বাড়ির ছেলেকে হাত করেছে?তাদের বাড়ির ছেলে তার বোনের জন্যে কি মাতোয়ারা হয়নি?হয়েছে,বেশ হয়েছে।হয়েছে বলে তাদের বিয়ে ঠিক।আফিয়ার ভাবনা বিষাক্ত কেবল।তার বোন নিতান্ত ভালো একজন মেয়ে।মেঘলার বুকে লেপ্টে ছলছল নয়নে তাহুরা নিজ ভাবনায় মশগুল।
–“বড় মা,তুমি জানো না এই মেয়ে কি করেছে!উমাইর ভাইয়াকে আমি চিঠি দিয়েছিলাম আর মেয়েটা চিঠি ছিঁড়ে নাম দিচ্ছে উমাইর ভাইয়ার।”
গলার স্বর উচুঁ আফিয়ার।
হাত দেখিয়ে থামায় মেঘলা বেগম আফিয়াকে,
–“তুমি ভালো জানো,চিঠি কে ছিঁড়েছে।ভাগ্যিস উমাইর ঘরে নেই।বেরিয়েছে।যদি এমন তামাশা দেখতো,তাহলে কি হতো তুমি সেই বিষয়ে অবগত।তোমার রুমে যাও।”
–“সামান্য একটা মেয়ের কাছে এতো বছরের সম্পর্কের আমার, দাম নেই কোনো।তাই না?”
আফিয়ার নয়নে ক্রোধের অশ্রু।
–“ব্যাপারটা অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করো না আফি।তুমি রুমে যাও।ভুলে যেও না,সেদিনের বিচারকার্যে বলা হয়েছিল উমাইরের ব্যাপারে তুমি কোনোদিন কিছুতে কথা বলবে না।মর্যাদা রাখো পরিবারের।মেহমানদের সাথে ফের এমন ব্যবহার করলে তোমার বাবা মাকে বলতে আমি বাধ্য হবো আজকের ব্যাপারটা।”
মেঘলার কথা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা লাগে আফিয়ার।সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাহুরার পানে চেয়ে দৌড়ে পালায় নিজ কক্ষে।
মেঘলা বুক হতে তাহুরাকে উঠায়।মাথায় হাত রাখে,
–“আফিয়া মেয়েটা ভালো।কেবল উমাইরের সাথে একটু ঝামেলা হওয়ায় মেয়েটা বিগড়েছে।কিছু মনে করো না ওর কথায়। উমাইর বা বাসায় কাউকে কিছু বলো না ঘটনাটা।ঝামেলা বাড়বে নাহয়।”
তাহুরা মাথা নাড়ে।অর্থাৎ সে বলবে না।এমনিও মেয়েটা জঘন্য ঘটনার কথা এড়িয়ে যেতো। উমাইরকে তো কস্মিককালে বলতো না।লোকটাকে তার ব্যাপক মনে ধরলেও,লোকটার প্রতি তার ভীতি কাজ করে।
–“আন্টি ভাইয়ারা কি এসেছে?আমি বাসায় যাবো।”
তাহুরার মলিন কন্ঠ।তার মলিন মুখখানা কেমন হাহাকার সৃষ্টি করে মেঘলার অন্তরে।ফের হাসিমুখ ফেরানোর জন্যে মেঘলা তাদের নিকটে দাঁড়িয়ে থাকা জাফরানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“দেখলে জাফরান তোমার তাহুরা আপু নাকি না খেয়ে চলে যাবে।তুমি তাকে যেতে দিবে?”
জফরান আবারও ঝাপটে ধরে তাহুরাকে।ফোকলা দাঁত বের করে হাসে,
–“নাহ নাহ দিবো না।”
তাহুরা হাসে কিঞ্চিৎ।মন খারাপ এখনো বিদ্যমান।তাও ছোট মানুষটার জন্যে মন খারাপ করে থাকে কি করে?তাহুরা হাঁটু গেড়ে বসে।জাফরানের চুলে হাত বুলায়,
–“যেতে হবে ছোট ভাইয়া।”
জাফরান তার ছোট হাত দ্বারা আগলে নেয় তাহুরাকে।স্মিত হেসে বলে উঠে,
–“পরে যাবা।”
তাহুরা জাফরানের পিঠে হাত রাখে।মেঘলা আদুরে নজরে পর্যবেক্ষণ করে তাদের।তার ভাইয়ের ছেলেটা একটু বদমেজাজি।সহজে কারো সাথে বনে না তার।অথচ সে তাহুরার জন্যে কেমন ছন্নছাড়া।মেয়েটা এমন আদুরে,কেউ তার মায়ায় না পড়ে থাকতে পারবে কি!
দুজনে বিছানায় বসে।তাহুরার উরুতে শুয়ে মোবাইল উঁচিয়ে মুহূর্তে মগ্ন হয় জাফরান। তাহুরাও সেদিকে মন দিতে ব্যস্ত।মেঘলা বুঝে তাহুরার মন অশান্ত এখন।তাই সেও তাদের নিকট যায়।ইনিয়ে বিনিয়ে তাহুরাকে সহজ করতে মুখ খুলে,
–“উমাইর ফিরলে এরপর তোমাদের যেতে দিবো।”
আফিয়ার ব্যাপারে ভাবুক তাহুরা মেঘলার কথা ভালোভাবে বুঝেনি।সে প্রশ্ন করে,
–“জ্বী আন্টি?”
–“বলছি উমাইর এলে এরপর যাবে তোমরা।উমাইর বললো জলদি ফিরবে সে।”
মেঘলা জবাব দেয়।
–“নাহ আন্টি।ভাইয়ারা এলে চলে যাবো।আসলে দেরী হচ্ছে।”
–“ওরা ফিরবে দ্রুত।ভাত না খেয়ে যেতে দিবো ভেবেছো কিভাবে?আর মা তুমি আফিয়ার ব্যাপারে কিছু মনে করো না।”
–“করবো না আন্টি।কিন্তু উনার কথাগুলো আমার একটুও ভালো লাগেনি।জুবায়ের ভাইয়া আমার আপুকে পছন্দ করেছে প্রথমে।এরপরই ওদের সম্পর্ক হয়।শেষে আফিয়া আপু কি যেনো বলতে চেয়েছো আমার…”
তাহুরার কণ্ঠ ভেঙে আসছে। অশ্রুরা কেমন মিছিল করছে।
আফিয়া উমাইর এবং তাহুরার বিষয় উল্লেখ করতে চেয়েছে জানে মেঘলা।তাই যথা সময়ে থামিয়েছিলো মেয়েটাকে।উমাইর সব ভেবে রেখেছে।তাছাড়া,উমাইর যদি আফিয়ার কান্ড সম্পর্কে জানে ছেড়ে কথা বলবে না ছেলেটা আফিয়াকে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঘলা বলে,
–“ওর কথা ভেবো না আর।সুনেরা মা এবং তোমার পরিবার কেমন আমি বেশ জানি।চিন্তা করো না।ছেলেমানুষী করছে কেবল আফিয়া।”
–“বুঝেছি আন্টি।”
জোর পূর্বক হেসে বললো তাহুরা।মেঘলা মেয়েটার মন অন্যদিকে ধাবিত করতে উমাইর সম্পর্কে আলোচনা শুরু করে। তাহুরাও অন্তর নরম করে শুনতে থাকে সেই আলোচনা।
————-
উমাইর ফিরে আসে রাত দশটার দিকে।তখন সকলে খেতে বসেছে।তাহুরার হুঁশ অতীত নিয়ে মগ্ন খাওয়ার সময়ও।আফিয়ার করা অপমান ভুলতে পারছে না সে।তাহুরা নিশ্চিত তার বাহুতে দাগ হয়েছে আফিয়ার নখের খোঁচার।আফিয়া খেতে না আসায় মেয়েটা আরো চিন্তিত।সে সত্যিকারে রাগ করেছে তাহুরার সহিত।বিনা কারণে তার সাথে রাগ করলে সেটা সহ্য হয় না তাহুরার।ভাত নাড়াচাড়া করছে দেখে মেঘলা তার কাঁধ স্পর্শ করে বলেই ফেলে,
–“তাহুরা মা,আন্টির খাবার মজা হয়নি?”
আঁতকে উঠে তাহুরা।মাথা তুলে আন্টির দিকে দেখতে চাইলে উমাইরকে দেখতে পায় সে।লোকটা কোট কাঁধে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে।দুহাত বুকে গুঁজে।দৃষ্টি সরায় সে মুহূর্তে।ম্লান হেসে বলে,
–“অনেক মজা হয়েছে।”
–“খাচ্ছো না কেনো তবে?আমি খাইয়ে দিবো?’
–“নাহ আন্টি।ঠিক আছি।”
নিজ জবাব শেষে মাথা নুইয়ে তাহুরা খাবারে মন দেয়।উমাইরের তির্যক দৃষ্টি দূর হতেও অনুভব করছে মেয়েটা।
মুন্সীর বারংবার ফোন কলে তাহুরা দিশেহারা।রাত এগারোটায় ঘড়ির কাঁটা।ইমন একা বড় ছেলে। মেয়েদের নিয়ে সে ফিরবে বলে মনে শান্তি নেই মুন্সীর।ইমনকে আবারও ফোন করেছে মুন্সী।সকলে বের হবে সেই মুহূর্তে ফোন ধরে সে,
–“আঙ্কেল,আমি সাবধানে নিয়ে আসবো তাহুরাকে।ওর সাথে আমার নিজের ভাই বোন আছে। অতিরিক্ত চিন্তা করলে কিভাবে হয়?”
ইমন শঙ্কিত।মুন্সীর প্রতি আলাদা এক ভয় আছে ইমনের ছোটকাল হতে।
–“ইমন,আমি আর ভাই যাচ্ছি তোমাদের সাথে। বাইক নিয়ে বের হবো।আঙ্কেলকে বলো তোমাদের গাড়ির পিছে আমরা থাকবো।টেনশন করতে মানা করো উনাকে।”
উমাইরের গম্ভীর সুর।সে এসেছে পর্যন্ত তাহুরার মলিন মুখশ্রী অবলোকন করে মেজাজ খোয়াচ্ছে বারংবার। তার উপর মুন্সী এমন ফোন করায় মেয়েটা আরো কুঁকড়ে যাচ্ছে।
–“আঙ্কেল,উমাইর ভাইয়া আর দুলাভাই আসছে বাইকে।আমাদের পিছু।এখন শান্তি লাগছে?”
ইমনের প্রশ্নে বিপরীতে কি বললো শোনেনি কেউ।কিন্তু,তার ভাবভঙ্গি দেখে বুঝলো মুন্সী এখন শান্তিতে আছে।
বিদায় বেলা শেষে সকলে উঠে গাড়িতে।উমাইর এবং জুবায়ের মোটর বাইকে।ঘাড় বাঁকিয়ে পেছন ফিরে তাহুরা।সেকেন্ডের মাঝে উমাইরের মোটর বাইক শব্দ করে সম্মুখে এসে যায়।
বুক দুরুদুরু তাহুরার।বেশ দ্রুত চালাচ্ছে উমাইর।আবার কিছু পথ অতিক্রম করলে গাড়ির স্পিড কমিয়ে দেয়।তাদের তালে চলে।
আজকের সকল কর্মকাণ্ডে রীতিমত মাথা ধরেছে তাহুরার। গাড়ির কাঁচে হেলান দিয়ে সে ভেবে যাচ্ছে সব মুহূর্ত।অথচ আঁখিতে উমাইরের বাইকের অবয়ব। আঁকাবাঁকা ভঙ্গিতে চলছে মোটর বাইক তবে সাবধানের সহিত।উমাইর নিশ্চয় বেশ দক্ষ।
বাড়ির গেইটে সুনেরা একা।বাবাকে না দেখে তাহুরা দ্রুত গাড়ি থেকে নামে।ইমন বিদায় জানিয়ে চলে যায়।জুবায়ের নামলে উমাইর মোটর বাইক সাইডে রাখে।
শুনতে পায় তাহুরার চাপা আর্তনাদ,
–“বাবা কোথায়?”
–“বাসায়।আমাকে গেটে দাঁড়াতে বললো তোর জন্যে।বাবার হয়তো প্রেসার বেড়েছে।”
তাহুরা বাবার চিন্তায় মুষড়ে যায়।তারপরও পেছন ফেরে বলে,
–“আমি আসছি।বাসায় আসবেন আপনারা প্লিজ।”
তাড়াহুড়োয় ফিরতে নিলে গেইটে ওড়না আটকে যায় তার।উমাইর চেঁচিয়ে উঠলো সাথে সাথে,
–“তুমি তাড়াহুড়োয় গেলে আঙ্কেল ঠিক হয়ে যাবে?”
–“ভাইয়া ঠিক বলেছে।আস্তে যা তাহু।”
বোনের কথা শুনে ভেতরে ঢুকে তাহুরা।উমাইরের ধমকে এখনো তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে আতঙ্কে।উমাইর এমন বকছে কেনো?
সেদিন বাবাকে মাঝ রাত অব্দি পাহারা দিয়ে কক্ষে ফিরে তাহুরা। পড়নে তার ফতোয়া এবং ঢোলা প্যান্ট,গলায় ওড়না জড়ানো। বিছানায় এক পা তুলে বসে সে। অপর পা ঝুলিয়ে বালিশের নিচ হতে মোবাইল বের করে।
উমাইরের মেসেজ বেশ কয়েকটা।একটা প্রশ্ন দুবার করে করা। যেনো উত্তর চাইই চাই উমাইরের।তাহুরা মেসেজের উত্তর লিখতে গেলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।উমাইর ফোন দিচ্ছে তাকে।
হাত পা কাঁপছে তার।আফিয়ার ব্যাপারে অনেকবার প্রশ্ন করেছে উমাইর। ফোনে সরাসরি কিভাবে কথা বলবে?উমাইর তার মিথ্যে সহজে ধরবে।তাই ফোন কেটে উত্তরে লিখে,
–“আপু ঘুমাচ্ছে।”
–“অন্যরুমে যাও।”
উমাইর লিখে।
–“সবাই ঘুমিয়ে।এখন যাওয়া সম্ভব না।এইখানে বলুন।”
তাহুরার বুক ঢিপঢিপ করছে।
মিনিট এক পর মেসেজ আসে উমাইরের পক্ষ হতে,
–“আজ আমি যাওয়ার পর কি হয়েছিল?আফিয়া বকেছে?”
–“সব ঠিক আছে।আপনি চিন্তা করবেন না।আমি একটু ঘুমায়।খুব মাথা ব্যথা।আল্লাহ্ হাফেজ।”
তাহুরা মোবাইল রাখে। মিথ্যে বলতে নারাজ সে।এইদিকে সত্যটা বলা যাবে না।শুয়েও শান্তি মিলছে না তার।
উমাইর নিশ্চয় মেসেজে বকা দিচ্ছে এতক্ষণে।তাকে বকুনি দিক,তাও শান্তি।অন্তত আফিয়ার সহিত কোনো ঝামেলা তো হবে না। শত চিন্তায় বোনকে জড়িয়ে ধরে তাহুরা।মাথা ব্যথায় আঁখি খিঁচে বন্ধ করে।
……………..
আজসহ একদিন উমাইর মেসেজ দেয়নি।অথচ লোকটা প্রায় অনলাইনে থাকে।দুবার নিজ থেকে মেসেজ দিয়েছে তাহুরা।তাও উত্তর দেয়নি উমাইর।
বসার ঘরের সোফায় বসে ভাবুক হয় তাহুরা।সেদিনের জবাবে লোকটা নিশ্চয় ক্ষেপেছে।এখনো উমাইরকে অনলাইনে দেখাচ্ছে একটিভ।তাহুরা কোনো ভনিতা ছাড়া লিখে,
–“আজ মার্কেটে আসছেন?”
হঠাৎ করে সকালে ফোন করে মেঘলা।বিয়ের কেনাকাটার জন্যে আজকের দিনটা নির্ধারণ করে।তাদের পরিবার হতে উমাইর ব্যতীত সকলে এবং জাফরানের বাবা-মা আসবে।তবে,তাহুরার পরিবার হতে কেবল শিউলি,তাহুরা এবং সুনেরা যাবে।তাহুরা কামিজের সাথে হিজাব বেঁধেছে আজ, বোনের দেখাদেখি।
উমাইর মেসেজ সিন করে আবারও।কিন্তু,জবাব দিচ্ছে না।
তাহুরার ভেতরে শঙ্কা।লোকটা কি তার সহিত আর কথা বলবে না?সিএনজি এলে মা,বোনের সাথে বেরিয়ে যায় তাহুরা।তবে, মনে মনে দোয়া করে আজ যেনো লোকটা আসে মার্কেটে।
শহরের বিখ্যাত মার্কেটে তারা।বেশ এক্সপেনসিভ।মার্কেটের নিচে বোনের শ্বশুরবাড়ির অপেক্ষাকৃত লোকদের দেখতে পায় তাহুরা।কেবল তার মেসেজের উত্তর না দেওয়া লোকটা,তার ভাই, তার চাচা ও নিবরাস অনুপস্থিত।
আফিয়ার সাথে দৃষ্টি মিললে তাহুরা হাসতে চায়।কিন্তু,আফিয়া দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরায়।সকলের সাথে তারা ভেতরে যায়।পরিচিত দোকান মেঘলার।দেখতে পেয়ে সখ্যতা করে মেঘলা সহ সকলকে।
বেশ ডিজাইনিং লেহেঙ্গা পছন্দ করে মেঘলা তার ছেলের বউয়ের জন্যে।জুবায়ের বারংবার বলেছে তার বউয়ের জন্যে কলিজা রঙের লেহেঙ্গা পছন্দ করতে।ছেলেটা কাজের চাপে আসতে পারেনি আজ।
হাসিমুখে সব পছন্দ করা কাপড় সুনেরার গায়ে জড়িয়ে দেখছে,মনকে শান্তি দিচ্ছে মেঘলা।পরপর মোবাইল বেজে উঠে।তার আদরের ছোট ছেলে ফোন দিয়েছে।
সুনেরাকে আরো কয়েকটা লেহেঙ্গা দেখতে বলে ফোন ধরে একটু চেপে যায় সে,
–“বাবা,আসবে?কই তুমি?”
–“বোকাটা এসেছে?”
উমাইর প্রশ্ন করে।
–“বাবা!ওর নাম তাহুরা।এসেছে সে।ওর জন্যে কি রঙের জামা কিনবো বলো?”
–“আসছি আমি।ওকে কিডজোনে বসিয়ে আসো জাফরানের সাথে।”
উমাইর মায়ের কথায় জবাব দেয়।
–“মেয়েটাকে সব রঙে মানায়।জলপাই রঙের শাড়ি হলে বেটার।”
সঙ্গে সঙ্গে ফোন কাটে উমাইর।
মেঘলা হাসে।পেছন ফিরে তাহুরাকে অবলোকন করে। প্রেয়সী মেয়েটাতে তার ছেলে একেবারে বুদ হয়েছে।জাফরানকে কি সুন্দর সামলিয়ে রেখেছে মেয়েটা।অথচ অন্যবার জাফরান মার্কেটে এলে কি কান্নাটাই না করে!
মেঘলা সকলকে মানিয়ে তাহুরা এবং জাফরানকে কিডজোনে নিয়ে যায়।সুনেরা বা শিউলি আপত্তি জানায়নি।এইভাবে তাদের মেয়ের কোল ছাড়া ছেলেটা বসছে না।নিশ্চয় তাহুরার পায়ে ব্যথা হচ্ছে।মুখ বুঁজে ব্যাথা সহ্যের চেয়ে কিডজোনে জাফরান খেললে এবং তাহুরা বসে থাকলেই ভালো।নিঃসন্দেহে এই মার্কেট বেশ নিরাপদ।
সুরক্ষিত জায়গায় বসিয়েছে মেঘলা তাহুরাকে।
তার সম্মুখে জাফরান বাউন্ডারির অপর পাশে খেলনার ঘোড়ায় বসে।খিলখিলিয়ে হাসছে।মেঘলা কিছু খাবারের বন্দোবস্ত করতে গেলে মেসেজ আসে ফোনে।তার ছেলে পার্কিংয়ে।
তাহুরাও স্বস্থির শ্বাস ফেলে।বিয়ের বাজারে তার বসে কাপড় দেখা ছাড়া কাজ ছিল না।এখন জাফরানসহ বাকি বাচ্চার খেলা দেখা যাক।
—————–
উমাইর কিডজোনের সম্মুখে এলে মাকে দেখে।নিজের গম্ভীরতা বজায় রাখে উমাইর।মেঘলা তাহুরার আড়ালে দাঁড়িয়েছে।মাকে উমাইর প্রশ্ন করে,
–“কেনাকাটা শেষ?”
–“দেরী হবে।লাঞ্চ করেছো?”
মায়ের প্রশ্নে উমাইর মাথা নাড়ে,
–“এখন খাবো।”
–“আচ্ছা এইখানের ক্যাফে থেকে কিছু খেয়ে নিও তুমি। তাহুদের জন্যও নিও।ভেতরে আছে তাহুরা।বকবে না ওকে কিছু নিয়ে।”
মেঘলা বলে।
–“দেখা যাক।থ্যাংকস মা।”
উমাইর গটগট পায়ে এগিয়ে যায় সম্মুখে।
হাঁটতে হাঁটতে শার্টের হাতা কুনই পর্যন্ত উঠায় উমাইর। কিডজোনের ভেতরে অবস্থিত ক্যাফে থেকে কিছু নাস্তার আইটেম নিয়ে সামনে অগ্রসর হয় সে।তাহুরার পেছন দিক দৃশ্যমান।পেছন হতেই উমাইর থমথমে কণ্ঠে বলে উঠে,
–“মার্কেটে এসছি।আমাকে কি করবে এখন?”
বিস্ফোরিত হয় তাহুরার নজর।পেছনে বাঁক ফেরার পূর্বে উমাইর তার পাশে চেয়ার টেনে বসে।চেয়ারে হেলান দেয়।তার বিশালাকৃতির দেহে নিমিষে চোখ বুলিয়ে ফেলে তাহুরা।অন্তরে স্রোতের আগমন।রিরি করে উঠে সারা সত্তা। দৃষ্টি ঝুঁকে যায় মুহূর্তে।ধীর শব্দে জবাব দেয়,
–“কিছু না।”
–“তাহলে জিজ্ঞেস করেছো কেনো?”
উমাইর প্রশ্ন করে।মেয়েটাকে দ্বিধায় ফেলতে তার সুখ অনুভব হয়।দূর হতে হাত নাড়িয়ে জাফরানকে ইশারা করে উমাইর। বিনিময়ে জাফরান হাত নাড়িয়ে নিজের খেলায় মত্ত হয়।
–“এমনি।আপনি মেসেজ দিবেন বলে আর মেসেজ দেননি।”
তাহুরার নজর মেঝেতে। উমাইরের চকচকে কালো রঙের সুয়ের উপর।
–“আমার কথার জবাব উল্টাভাবে দিলে আমি একদম বেঁকে যায়।
বার্গারে কামড় দেয় উমাইর। অপর বার্গার তাহুরার দিকে এগিয়ে দেয়,
–“খাও।জাফরান এলে ওর জন্যে আলাদা নিবো।”
তাহুরা হাত টেনে নেয়। খেতে না চেয়েও কামড় বসায়।চিজ এবং সসে বার্গার মাখামাখি।তাহুরা খাওয়া অবস্থায় বলে,
–“আমি কি করলাম?”
মাথা উঠায় মেয়েটা।উমাইরের দৃষ্টি তাহুরা অধরে আটকে।সস্ লেগেছে কিছুটা। হিজাবেও পড়েছে।ভ্রু কুঁচকে যায় উমাইরের।একটা নির্দিষ্ট সময় পর এই দৃশ্যটা যদি তার বাসায়,তার রুমে একান্ত তার সম্মুখে হতো তাহলে তাহুরার এমন অগোছালো সবকিছুর দখল উমাইরের নিকট থাকতো।
মনের নিষিদ্ধ ইচ্ছাটাকে দমিয়ে নিলো উমাইর।টিস্যু এগিয়ে দেয়,
–“কিছু না করেও সবটা এলোমেলো করো তুমি,
মাথামোটা।”
–“জ্বী?”
তাহুরা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে।
–“জ্বী না বলে লিপ্স মুছো।মানুষকে দেখাও তোমার অগোছালো রূপ?”
উমাইর ফের কামড় দেয় বার্গারে।
তাহুরা টিস্যু নেয়।দ্রুত ঠোঁটে চাপে,
–“বাহিরে আমি বার্গার খুব কম খাই।আপনার ভয়ে কিছু বলিনি।”
–“কিছু না বলে আমার মনকে অনেক কিছু ভাবনার সুযোগ করে দিয়েছো।”
কথাটা বলে উমাইর বার্গার রাখে।কপালে আঙ্গুল চাপে।
তাহুরা অবাক হয়।সে কি করলো?উমাইর কি বলতে চায়?
চারিদিকে নজর বুলায় তাহুরা।মানুষের সংখ্যা একদম কম।যারা আছে উনারা নিজের কাজে ব্যস্ত।তাহুরা একটু থামে।মলিন সুরে বলে,
–“কি হয়েছে?আমি কি করেছি?”
ঝলমলে সোনালী আলোতে উমাইরের অবয়ব মনোরম।
উমাইর কিছু বলছে না।এখনো সেভাবে বসে।যেনো ভেতরকার কিছু ভাবনা নিজ মনে আড়াল করছে সে।
তাহুরা চেয়ার সমেত একটু এগিয়ে যায়। উমাইরের গায়ে প্লেট দ্বারা ধাক্কা দেয়,
–“এই-যে আপনার কি মাথা ব্যথা করছে?একটা পেইনকিলার খাবেন?”
উমাইর ফট করে দৃষ্টি মেলে।তাহুরার মুখোমুখি হয়।নিজ চুল ঠেলে পিছনে।তাহুরার ললাটে আঙ্গুল স্পর্শ করে।ধীর তবে মোলায়েম সুরে বলে,
–“যেখানে ব্যথা হচ্ছে,সেই ব্যথার ঔষধ নেই।এই ব্যথা নাশের জন্যে যেটা দরকার সেটা এখনো আমি পায়নি।পেলে ব্যথার “ব” আমার জীবনে আসতে দিবো না।বুঝেছো মাথামোটা?”
চলবে…..
কপি করা নিষেধ।
#রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায়
লেখনীতে: সালসাবিল সারা-
পর্ব-১৪
_________________
–“এখন বলো,সেদিন আফিয়া কি বলেছিলো তোমাকে।একদম নাটক করবে না।সরাসরি জবাব দাও।”
উমাইরের কণ্ঠে বুঝা যায় সে আফিয়ার ঘটনা সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত।তাহুরা মাথা নিচু করে বসে।জবাব দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।জবাব দিলে হাজারো সমস্যা দেখা দিবে।এরমাঝে এক,উমাইর নিশ্চয় মেহমানকে অপমান করার দরুণ বকবে আফিয়াকে।দুই,মেঘলা নিশ্চয় তাহুরাকে ভুল বুঝবে।মনে করবে তাহুরা ভালো মেয়ে না,বড়দের কথার মান রাখে না।
অস্থিরতায় ঘেমে যায় মেয়েটা।কি করবে সে?উমাইর নিঃসন্দেহে নাছোড়বান্দা। এক প্রশ্নে এখনো আড়ষ্ট।
তাহুরার বেজবান ভঙ্গি লক্ষ্য করে উমাইর।মেয়েটা আজও জবাব দিবে না! কাঁচের টেবিলে দুই আঙ্গুলের টোকা দিয়ে শব্দ করে উমাইর,
–“ভাষা খুঁজে পাচ্ছো না?বাংলা ভাষায় বলো।আমি বুঝবো।”
উমাইরের কণ্ঠে গা ছাড়া ভাব।
তাহুরা দৃষ্টি উপরে তুলে।উমাইর তার পানে চেয়ে।গম্ভীর,গভীর নজর।সমান্তরাল ভ্রু।মাদকতায় মত্ত চাহনি।তাহুরার উদরে চাপ অনুভব করে।সরাসরি এমন দৃষ্টি মিললে নিজের আঁখিদ্বয় কেমন মিলিয়ে যাচ্ছে তাহুরার।পলক ঝাপটায় তাহুরা। হাতে হাত ঘষে।একটু ভেবে জবাবে বলে,
–“কি বলবো?আপনি বেশি ভাবছেন।”
ফের আরচোখে তাকায়।
উমাইর থুতনিতে হাত ঘষে হাঁটুতে হাত রাখে।গমগমে কণ্ঠে বলে,
–“ওকে ফাইন।বিশ্বাস করলাম।এই বিষয়ে পরে কিছু শুনলে তুমি সাফার করবে।”
ব্যস, হাওয়া বেরিয়ে যায় তাহুরার।লোকটা সরাসরি হুমকি দিলো তাকে। পরে জানলে জানুক।জানলেও অন্য থেকে জানবে।অন্তত তাকে মিথ্যে বলতে হবে না।মাথা দুলিয়ে তাহুরা বলে উঠে,
–“ঠিক আছে।”
–“ঠিক তুমি থাকবে নাকি জানিনা,যখন সত্যিটা আমার কানে আসবে।”
আবারো হুমকি!উমাইর তাকে এমন হুমকির সাগরে ভাসাচ্ছে কেনো?
তাহুরা কিছু বলতে চায়।তবে পারেনি।ইতোপূর্বে নিবরাসের কণ্ঠ ভেসে আসে। কিডজোনের মাঝপথে সে দাঁড়িয়ে।ভেতরে আসতে আসতে পুনরায় হাত নাড়ায়,
–“আমি চলে আসলাম।”
টেবিলের অপর প্রান্তে চেয়ার পেতে বসে।
–“কই ছিলে?”
উমাইর প্রশ্ন করে।
–“কাজে ছিলাম।”
অদ্ভুত হাসি নিবরাসের।
তাহুরার নজর বিস্ফোরিত।যা দেখার নয় সেটা দেখেছে মেয়েটা।নিবরাসের গালের কিনারায় লিপস্টিকের আবরণ।মেয়েলী লিপস্টিকের রং তাহুরা কিভাবে না চিনে থাকবে?উমাইর দেখেছে কি? হায় লজ্জা!তাহুরা হুট করে দাঁড়ায়,
–“আমি জাফরানকে ডেকে আনি। ওর খাওয়া দরকার এখন।”
তাহুরা থামে না।উমাইর তাকে কিছু বলবে সেই সময়টুকু দেয়নি।
উমাইর নিজেও উঠে। কিডজোনের খেলাঘরগুলোতে ভেতরে অনেক মানুষ।মূলত বাচ্চাদের সঙ্গী সকলে।
নিবরাস অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে।এরা সবাই পালাচ্ছে কেনো?
–“আমি আসলাম আর তোমরা যাচ্ছো কেনো?কি সমস্যা?”
–“সমস্যা তোমার।গাল মুছো।স্টুপিড তুমি?আজ সবার এটা মুছো, ঐটা মুছো বলতে বলতে দিন যাচ্ছে আমার।”
বিরক্ত উমাইর।
নিবরাস কিয়ৎপল ভাবে।গাল মুছবে মানে!কিছু দৃশ্য মস্তিষ্কে হানা দেয়।লজ্জা না পেলেও ভাইয়ের সামনে দ্বিধায় ভুগে নিবরাস। বোকা হেসে গালে হাত রাখে,
–“ভুলে…”
–“মেয়েটা যদি ভালো পরিবারের এবং লয়াল হয়,তবে টাইম পাস না করে আগলে রেখো।”
উমাইর নিজ নির্দেশনা শুনিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হয়।
নিবরাস এইবার লজ্জা পায়।বড় ভাই ব্যাপারটা জেনেছে।কি ভাবছে তাকে নিয়ে উমাইর?মাথা চুলকে চোখে আঙুল ডলে নিবরাস।আগলে রাখবে মানে?সেই মেয়েটাই যে নিবরাসের সারাজীবন। ছেলেটা ফুড কাউন্টারে যায়।নিজের জন্যে ঠাণ্ডা জুস অর্ডার করে।
——————–
ভেতরে গিয়ে দেখে,তাহুরাকে জাফরান জোর করছে ভিডিও গেইমের দিকটায় নিয়ে যেতে।অথচ,তাহুরা আসার পূর্বে জাফরান একা একা আয়েশ করে ঘোড়ায় খেলছিলো।বাচ্চারা তাদের বায়না পূরণের মানুষ দেখলে যেনো আরো আহ্লাদী হয়।তাহুরা জাফরানকে বুঝাতে বেগ পাচ্ছে।কিভাবে যাবে সেখানে?আপাতত সেথায় বিরাট ভিড়।জাফরান তাহুরার হিজাব অব্দি টানাটানি করছে।বিপাকে পড়ে মেয়েটা।জাফরান হঠাৎ এমন বিগড়ে যাচ্ছে কেনো?কিছু চুল হিজাবের আড়ালে বেরিয়েছে তার।
উমাইরের মেজাজ চটে।এইখানে নানান বয়সের লোক উপস্থিত।একটা বাচ্চা বায়না করলে সেদিকে সবার আকর্ষণ থাকে।কিছু লোক জাফরান এবং তাহুরার দৃশ্যে মজেছে।হাঁটু গেড়ে বসে থাকা তাহুরা নিজেকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।উমাইর দ্রুত পা চালায়।কথা না বাড়িয়ে জাফরানের পেট চেপে তাকে তুলে নেয়,
–“সবসময় তাহুরার সাথে এমন লেগে থাকো কেনো?পঁচা ছেলে।”
জাফরানের চঞ্চলতা কমে উমাইরকে দেখে।সে তাকে পছন্দ করলেও ব্যাপক ভয় পায়।তাও ধীর সুরে বলে,
–“জাফরান খেলবে।”
–“ঐখানে ভিড় দেখছো না?তাহুরাকে টানাটানি একদম করবে না কখনো।”
জাফরান উমাইরের গলা জড়িয়ে তার বাক্য শুনছে।
–“বাচ্চাটা খেলতে চাইছে।”
তাহুরা হিজাব ঠিক করা অবস্থায় জবাব দেয়।
–“চলো এইখান থেকে।খেলতে চাইলে কি খেলা ফরজ?তুমি দাঁড়িয়ে কেনো?আসো।”
তাহুরাকে আদেশ দিয়ে তাকে আগে হাঁটার ব্যবস্থা করে উমাইর।
জাফরান ভীত গলায় উমাইরকে বলে,
–“আপুর কাছে যায়?”
–“নাহ।যাওয়া যাবে না।”
শক্ত উত্তর উমাইরের।
চারিদিকে নজর বুলিয়ে হাত মুঠ করে উমাইর।মনে মনে আওড়ায়,
–“সবখানে কাবিল হতে চলে আসে।তাকে এতো মানুষ দেখছিল সেই হুঁশ,আল্লাহ্ দেয়নি মহারাণীকে।মাথামোটা একটা।”
বাক্যগুলো উমাইরের বলা সবচেয়ে নির্মম সত্য।মেয়েটাকে এমন চোখে লাগে,একটু হলেও দেখতে মন চায়।মেজাজ উমাইরের ভীষণ চটে।তার শ্বাস প্রশ্বাস দৃঢ় হয়।
বেরিয়ে এলে তাহুরা উমাইরকে বলে,
–“জাফরানের জন্যে কিছু কিনে দিন।আমি খাইয়ে দিই?”
–“নিবরাস, স্ন্যাক্স টাইপ কিছু কিনে থার্ড ফ্লোরে আসো।আমি থাকবো সেখানে।”
পরপর উমাইর তাহুরার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আওড়ায়,
–“মামী খাইয়ে দিবে জাফরানকে।তুমি সোজা হাঁটতে থাকো।”
তাহুরা প্রতুত্তরে কি বলবে ভেবে পায়নি।তার পূর্বে উমাইর গটগট ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছে।পেছন ফিরে আবার তাহুরাকেও অবলোকন করে।পায়ের গতি ধীর করে উমাইর।তাহুরা তার সন্নিকটে এলে দুজনে একসাথে এগোয়।
দোকানে বেশ ভালো কেনাকাটা হচ্ছে।মামীর কাছে জাফরানকে দিয়ে উমাইর বেরিয়ে যায়। নিবরাস আসবে যেকোনো সময়।
তাহুরা এলে তার ছেলের পছন্দমত রঙের তিনটা শাড়ি তাহুরার গায়ে মেলে ধরে মেঘলা।তিনটা থেকে যেকোনো একটা শাড়ি মেয়েটার জন্যে কিনবে।
তাহুরা বেশ অবাক হয়।মলিন হেসে বলে,
–“আন্টি,আমি কেনো?আপুর জন্যে দেখুন।”
–“তোমার আপুর কেনাকাটা প্রায় শেষ।এটা তোমার জন্যে।ধরো আন্টির পক্ষ থেকে গিফট।”
মেঘলার প্রশান্তির বাক্য।
–“নাহ আপা।তাহুরার জন্যে পরে কিনবো আমরা।”
শিউলি কথাখানা বললে মেঘলা বিরোধী দেখায়,
–“একদম না আপা।শাড়িটা আমি মেয়েটাকে গিফট করবো খুশিমনে।এটা নিতেই হবে।নাহলে আমি কষ্ট পাবো।”
অবশেষে জোরাজুরিতে রাজি হয় শিউলি।তাহুরার গায়ে মেলে থাকা জলপাই রঙের সাথে সোনালী রঙের মিশ্রণ।কেমন মনোরম লাগছে তাহুরাকে।শাড়িটা তার তনুটে ফুটেছে বেশ।
দোকানের বড় মিরোরে মেঘলার পাশাপাশি তাহুরা দাঁড়িয়ে।মিরোরে নিজেকে দেখা অবস্থায় আঁখিতে দৃশ্যমান হয় উমাইরের অবয়ব।তাহুরা স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ করে উমাইর জাফরানের দিকে যেতে চেয়েও তাহুরাকে দেখে স্তব্ধ হয়।নড়চড় করেনি।লম্বা মানবটার এমন অচেনা দৃষ্টিতে কুপোকাত তাহুরা।পা বেঁকে আসছে তার।লোকটা এইভাবে চেয়ে কেনো?অনুভূতিরা ডানা মেলে আকাশে উড়ে তাহুরার।নিজেকে হালকা অনুভব হয়।শূন্যে ভাসছে সে?
–“দোস্ত, তোকে সেই লাগছে।নিয়ে নে শাড়িটা।”
নিবরাসের কণ্ঠে তাহুরা দৃষ্টি ঘুরায়।মেঘলা হেসে “মা শাহ্ আল্লাহ্ ” বলে।
পরক্ষণে উমাইরের গম্ভীর স্বর ভেসে আসে,
–“মা,আমি বেরুচ্ছি।”
ছেলের বাক্যে উত্তর খুঁজে পায় মেঘলা।হাসির মাত্রা দ্বিগুণ করে শুধায়,
–“ফি আমানিল্লাহ্,আব্বা।”
তাহুরার নজর আয়নায় উঠে ফের।যাওয়ার পূর্বে উমাইরের তির্যক ভঙ্গিতে তাকানোটা উপভোগ করে মেয়েটা।অন্তর পিঞ্জিরায় প্রশান্তির নাচগান চলছে। উমাইরের সেই তির্যক দৃষ্টিতে ভস্ম হয় তাহুরার সত্তা।মেয়েটা বুঝে যায়,উমাইর তার জীবনের খুব কাছের একজনে পরিণত হয়েছে।লোকটার মতো স্থান তার হৃদয়ে কেউ জায়গা দখল করেনি ইহকালে।মন পিঞ্জিরার এহেন একান্ত দমবন্ধ পিরিতের অনুভূতি কেবল তাহুরার এই-যের জন্যে।
———————
বিয়ের বাকি বারোদিন।জয় চায়,পরিবারের বড় ছেলের বিয়েতে সকল অনুষ্ঠান থাকুক।এনগেজমেন্টের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আচমকা। দুই পরিবার বাইরে বৈঠক বসে।মুন্সী অনেক অনুরোধ করে অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিতে তাকে সুযোগ দেওয়ার।তবে,মানেনি জয়,জুবায়ের এবং উমাইর। এও বলা হয়,অনুষ্ঠান হবে উমাইরদের বাড়িতে।ছোট পরিসরে,পারিবারিকভাবে। মূলত বাড়ির বড় বউকে পূর্ব হতে সকলের নিকট পরিচয় করানোটা মূল উদ্দেশ্য।মুন্সী হার মানে সকলের চাপে।তার মন অস্থিতিশীল।মুন্সী চেয়েছিল অনুষ্ঠানের ভার নিজে বহন করতে।যেহুতু জুবায়েরদের বাড়িতে হচ্ছে অনুষ্ঠান তাই মুন্সী ব্যাপারটা হজম করে।
কাল শুক্রবার অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করা হয়।কেবল দুই পরিবারের লোকজন।উমাইরদের উঠানে নয় বরং ছাদে কিছু ডেকরেশনের কাজ হবে।যেহুতু,ঘরোয়া প্রোগ্রাম হলেও এনগেজমেন্ট হবে ভাইয়ের।উমাইর নিজে ব্যাপারটা সামলে নেয়।ভাইয়ের অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের লোকদের সহিত যোগাযোগ করে।সাধারণের মাঝে ছাদকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার আহ্বান জানায়।
বাড়িতে মুটামুটি উৎসবমুখর পরিবেশ।উমাইর কলেজের কাজে ব্যস্ত ছিলো বেশ কিছুদিন।বৃহস্পতিবার আজ,তাই ক্লাসের চাপ কম।দুপুরের দিকে সে ঘরে ফিরে।কলেজে থাকাকালীন ডেকরেশনের জন্যে কন্টাক্ট শেষ করে সে।মামী,খালা উপস্থিত বাসায়।সবার সাথে দরকারি কুশল বিনিময় শেষে রান্নাঘরের বাহিরে দাঁড়ায় উমাইর।একগ্লাস ঠাণ্ডা শরবত দরকার তার।
তাকে অবলোকন করে আজিম।প্রবীণ লোক ভদ্রতার সহিত বলে,
–“কিছু লাগবে সাহেব?”
–“চাচা,মাকে বলবেন ঠাণ্ডা লেবুর শরবত দিতে।এখনই।আমি বসলাম ডাইনিংয়ে।”
জবাব দেয় উমাইর।
প্রবীণ মাথা নাড়ে,
–“বলছি।”
ডাইনিংয়ে চেয়ার টেনে বসে উমাইর।মেঘলা শরবত নিয়ে হাজির।ছেলের জন্যে আগে থেকে বানিয়ে রাখে।নিজেও বসে ছেলের পাশে।উমাইর গ্লাসে চুমুক দেয়।মেঘলা নিজের ভাব প্রকাশ করে,
–“জুবায়ের বললো, সুনেরা রেগে আছে।বিয়ের আগে শ্বশুরবাড়ি আসবে,মেয়েটার কাছে তা ভালো লাগছে না।”
–“কিছুদিন পর এই বাড়িতে সারাজীবনের জন্য আসবে ভাবী।আগে আসলে সমস্যা কি?ভাবী আর উনার বাবা এক নৌকার মাঝি।শুধু ঐ ছোটটা একটু মাথামোটা।”
অধর বাঁকা করে উমাইর।
–“আব্বা!কেনো মেয়েটাকে এমন বলো তুমি?জানো জাফরানের মামাতো ভাইয়ের জন্যে তোমার মামী চাচ্ছে তাহুরাকে।ছেলেটা ছবি দেখেছে তাহুরার। কাল আসলে সরাসরি দেখবে বললো।আমি বলেছি,মেয়েটা এখনো ছোট।আর…”
–“আমি পছন্দ করি…তাহুরা আমার,মামীকে বলোনি? মেয়েটাকে আমার প্রতি ভাবাতে কি এফোর্ট দিয়েছি সেটা আমি জানি।তাহুরাকে দেখার সাহস যেনো না করে কেউ।”
উমাইর ক্রোধে মাতোয়ারা।মায়ের দেওয়া সংবাদ তার পছন্দ হয়নি।শরবতটুকু শেষ করে এক চুমুকে।ছেলের রেগে যাওয়া দেখে খেয় হারায় মেঘলা।মুখে আঁধার জমে তার,
–“তোমার মামীকে এগুলো এখন বলা যাবে না।বললে ঢোল পেটাবে সবার কাছে।তাহুরাকে নিয়েও ঠাট্টা করবে।এমতাবস্থায় তাহুরার উপর প্রভাব পড়বে।আগে তোমার ভাইয়ার বিয়েটা হউক।মেয়েটাও ছোট।মুন্সী কেমন লোক তুমি এতদিনে বুঝোনি?উল্টাপাল্টা কিছু উনার কানে গেলে তাহুরাকে ঘরবন্ধী করতে ভাববেন না একদণ্ড।ফুটফুটে মেয়েটার জীবন বিষিয়ে যাবে আব্বা!”
মায়ের প্রত্যেকটা অক্ষর মনোযোগ দিয়ে শুনে উমাইর।বাক্যগুলো নিতান্ত সঠিক।এলোমেলো পদক্ষেপ নিলে সবকিছু বিন্যস্ত হারাবে। সহস্র কথা মেনে নিলেও তাহুরাকে অন্যকেউ দেখবে,হজম হচ্ছে না উমাইরের।সে শক্ত মুখে মাকে জবাব দেয়,
–“মামীর ভাইয়ের ছেলের সাথে ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা আছে,মা।আমার বোকার দিকে অন্য নজরে কেউ দেখবে,আমি সহ্য করবো না।”
–“এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার।দেখলে কি বিয়ে হয়?মাথা ঠাণ্ডা করো।”
–” মাথা কালকে তোমার বড় ছেলের শালীকে দেখলে ঠাণ্ডা হবে।এর আগে না।তাহুরাকে আমি রক্ষা করবো।হোক সেটা অন্য কারো দৃষ্টি বা জীবন থেকে।”
উমাইরের কণ্ঠে তেজ।পারছে না সে আজ,তাহুরাকে ঘরে তুলতে।মেয়েটা ছোট মেয়ে কেনো হলো?সমাজে বা এতো নিয়ম কেনো?
ফিরতে গিয়েও অটুট থেকে সে পুনরায় মাকে বললো,
–“প্রেমে পড়েছিলাম আমি,দেখে রেখেছি আমি, এতো বছর পর একটা সম্পর্কের টান সৃষ্টি করলাম আমি।আর সেই আমার থেকে আমার পাখিকে আরেকজন নেওয়ার চিন্তাটা আমার কাছে বিষাক্ত।আমি উমাইর,বিষাক্ত হলে সেই বিষে নীল হবে তাহুরা আর আমার মধ্যে আসা লোকজন।আমি কাউকে ছাড়ার পাত্র না।”
উমাইর থামেনি এক সেকেন্ড।উল্টো ফিরে হাঁটে।মাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলো,উমাইরের কলেজ-ভার্সিটি লেভেলে মাইরপিট,ঝামেলা করার ঘটনাগুলো।
মেঘলার প্রেসার বাড়ে যেমন। কাল সব ঠিক হওয়ার দোয়া করে মনে মনে।
.
উমাইর মোবাইল হাতে ব্যলকনিতে বসে।রাত বারোটা প্রায়।ফুলের টবগুলোর উপর টিমটিম করছে সাদা,গোলাপী রঙের লাইট।নতুন লাগিয়েছে উমাইর।তাহুরার দেওয়া গোলাপ গাছের ফুটন্ত গোলাপে নজর তার।পরক্ষণে নজর সরিয়ে মোবাইলে দৃষ্টি রাখে।তাহুরার কন্ট্যাক্টে ঢুকে।তিনদিন মেয়েটার খবর নেওয়া হয়নি উমাইরের।নেয়নি বলতে টুকটাক কথা হয়েছে এমন।কলেজের কাজের পর বন্ধুদের সাথে দেখা,এরপর বাসায় ফিরে খাওয়ার পর বিছানায় শুলে ক্লান্তিতে চোখ বুঁজে যায় তার।তাও ফাঁক দিয়ে একটু করে খবর নেয় মেয়েটার।
আজ দুপুরে ফিরলেও,মায়ের কথাগুলো শোনার পর লাঞ্চ শেষে বন্ধুদের সহিত বেরিয়ে যায় পতেঙ্গা।সেথায় আড্ডার সমাপ্তিতে ফিরে মিনিট বিশ আগে।
তাহুরাকে অনলাইন দেখাচ্ছে।পাঁচ মিনিট পূর্বেও মেয়েটা তাকে মেসেজ পাঠায়,
–“আপনি কোথায়?খেয়েছেন রাতে?”
উমাইর বুঝে,সহস্র পুরুষের ভেতর তাহুরার জীবনে উমাইর তার সুপুরুষ।তাহুরা উমাইরে মত্ত সেটা উমাইর অনেক আগে জেনেছে।তাদের কথার শুরুটা ভয় পেয়ে হোক, শেষটা হবে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ।কেবল উমাইর নামক লোকটার সাথে তাহুরা যোগাযোগ করে।
উমাইর প্রথমে টাইপ করে কিছুক্ষণ। পরে সেটা মুছে ফেলে।মেয়েটার কণ্ঠ শোনা দরকার তার।ফোন দেয় সে।রিং বাজছে।রিসিভ হচ্ছে না।ফোন কাটে অপর পাশ হতে।মেসেজ পাঠায় তাহুরা,
–“আপু,ভাইয়ার সাথে কথা বলছে।”
উমাইর জবাব দেয়নি।মেয়েটা নিজে আজ ফোন করবে উমাইরকে।বাধ্য করবে উমাইর।
ফের মেসেজ দেয় তাহুরা,
–“এই-যে আপনি আছেন?ঘুমিয়ে?”
মেসেজ দেখেও চুপ থাকলো উমাইর।
মিনিট তিনেক পার হয়।ইনকামিং কল আসে “স্টুপিড রূপসী” নাম্বার হতে।অধর প্রসারিত হয় উমাইরের।রুমে ফিরে উবুত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ফোন রিসিভ করলে তাহুরা সালাম দিয়ে কথা শুরু করে,
–“আসসালামুয়ালাইকুম,ঘুমিয়ে আপনি?”
মনে মনে সালাম নিলেও মুখে কর্কশ শব্দ শোনায় সে তাহুরাকে,
–“কেনো?না ঘুমালে তুমি ঘুম পাড়িয়ে দিবে?”
তাহুরার সত্তা কাঁপে।অধর চাপে দাঁত দ্বারা।লোকটা আবারও বেসামাল কথা বলছে!
–“আপনি কি ব্যস্ত?”
তাহুরা অকপটে বলে,কথা ঘুরাতে।
–“আমি কি বিবাহিত?”
উমাইর হুট করে এমন কথা বলবে বিশ্বাস করলো না তাহুরা।তার কানে ভনভন সুর।সে অভাবনীয় ভঙ্গিতে বলে উঠে,
–“জ্বী?”
–“কি জ্বী?আজ কিভাবে ফোন দিয়েছো?”
প্রসঙ্গ পাল্টায় উমাইর।মানবের মুখে রাজকীয় শয়তানি হাসি।
–“আপু জেগে আছে।তাই আমি অন্যরুমে এসেছি।একা একা আসাটা একটু ভয় ভয় করে।”
তাহুরা জবাব দেয়।
–“তুমিও যাও আপুর কাছে।আমাকে ফোন দিয়েছো কেনো?”
–“সরি।রাখছি তবে।”
মন খারাপ করে জবাব দেয় তাহুরা।সে তো এই লোকের অপেক্ষায় থাকে রোজ।উমাইর তাকে বাধ্য করেছে তার ব্যাপারে চিন্তা করার,যত্ন করার।লোকটার একদিন খবর না পেলে তাহুরা ব্যাপক অস্থির হয়।রাতে ঘুম আসে না।মুহূর্তে মেয়েটার আঁখিতে জল জমে।নাকে সর্দি এলে নাক টানে।
–“ফোন দিয়েছো তোমার ইচ্ছায়, কাটবো আমার ইচ্ছায়।”
উমাইর জবাব দেয়।
–“জ্বী।”
তাহুরা নাক মুছে জবাব দেয়।
–“কান্নার কি হলো?”
উত্তর আসেনি তাহুরার পক্ষ হতে।মেয়েটা মোবাইল রেখে বোনকে দেখতে গেলে হাত লেগে ভিডিও কলের অপশন চালু হয়।
বিপ করতে থাকায় উমাইর ফোন কান হতে সরায়।হঠাৎ ভিডিও কল দেখে অবাক হলেও কল রিসিভ করে।সিলিং দেখা যাচ্ছে।উমাইর উঠে বসে।তার উদাম কাঁধ,বুকের উপরিভাগ দৃশ্যমান।ভ্রু জোড়া কুঁচকে।আচমকা হলো কি?তাহুরা কোনো সমস্যায় পড়েছে?
সে কিছু বলার পূর্বে তাহুরা ফোন তুললেও উমাইর স্পষ্ট দেখতে পায় সুতির ফতোয়ায় আবৃত তাহুরাকে।মেয়েটা এখনো অন্যদিক চেয়ে।যেনো খুব সাবধানে কিছু চেক করে ফের এই কামরায় এসেছে।তাহুরা ফোন কানে ধরবে,এমন সময় উমাইর কথা বলে,
–“এনি প্রবলেম?”
স্পিকারে কথা শুনতে পেয়ে লাফিয়ে উঠে তাহুরা।বুকের সাথে মোবাইল চেপে ধরে।ঘটনা কি সেও বুঝলো না।পরক্ষণে সাবধানে মোবাইল মুখের সামনে ধরলে,তাহুরার মুখ হতে বুক পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়।
অপর দিকে উমাইরকে দেখে পা হতে জমিন সরে তাহুরার। উমাইরের উদোম শরীর দেখা কি খুব দরকার ছিল তার?হাত হতে মোবাইল পড়তে নিয়েও সামলে নেয়।
অপরন্ত উমাইর ওড়না বিহীন তাহুরার রূপে দিগ্বিদিক শূন্য।সুতির ফতোয়ার উপরের বোতাম খোলা।নিজের হুঁশ বুদ্ধি লোপ পাওয়ার পূর্বে ফোন কাটে উমাইর।
রীতিমত এসির উপস্থিতিও তার শরীরকে ঘর্মাক্ত করে।খোলা চুল,কিঞ্চিৎ লাল নাক,সাদাসিদে ফতোয়ায় আবৃত তাহুরা মাতোয়ারা করে উমাইরকে। বদ্ধ অনুভব হয় বুকের ভেতরটা।দুই আঙ্গুলের সাহায্যে চক্ষুদ্বয় আড়াল করে সে।মেয়েটাকে একান্ত নিজের করে নেওয়ার ভাবনাটা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে আসক্তির ন্যায়।
মোবাইলের নোটিফিকেশন অনবরত আসতে থাকে।বিছানা হাতড়ে মোবাইল নেয় উমাইর।মেয়েটা একে একে মেসেজ দিচ্ছে,
–“আমি জানিনা কিভাবে কি হলো।আমি খুব সরি।আমি এমন মেয়ে না।”
–“সত্যি আমি ভিডিও কল দিইনি আপনাকে।”
–“আমার কোনো খারাপ ইচ্ছে নেই।স্যার আমি সত্যি দুঃখিত অনেক।”
–“আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না প্লিজ।আমার সহ্য হবে না।”
উমাইর হেসে উঠে।সে জানে ভুলে চাপ পড়ে ভিডিও কল চালু হয়েছে।ভুলটা উমাইরের পছন্দ হলো বেশ।তার প্রেয়সীকে যে নতুন রূপে দেখেছে।উমাইর ফোন দেয় তাহুরাকে।দুই রিং বাজলে ফোন ধরে তাহুরা।মুখ চেপে কান্না আড়াল করলেও উমাইর জানে তাহুরা কাঁদছে।
ভরাট গলায় উমাইর বলে উঠে,
–“বাসায় তোমার ভাইয়ারা আসলেও নিজেকে গুছিয়ে ওদের সামনে যাবা।ড্রেসের দিকে,ঘোমটার দিকে নজর দিবে।আর কি যেনো লিখেছো!স্যার কে?”
হেঁচকি উঠে তাহুরার।কথা বলার শক্তি নেই। তাও মুখ খুলে,
–“যাই।আমি এখন ঘুমিয়ে যাবো তাই..আমি সত্যি জানতাম না ভিডিও কল…আমি এমন মেয়ে না….”
–“জানি তো।কি হলো? কাঁদছো কেনো?”
উমাইর গলার আওয়াজ নরম করে।তার বোকা পরীকে শান্তনা দেওয়া মূল কাজ।
–“আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন?”
নাক টেনে প্রশ্ন করে তাহুরা।
–“ভুল বুঝিনি এতক্ষণ।কিন্তু এখন বুঝবো।কলেজের বাহিরে আমি তোমার স্যার?”
উমাইর বিছানায় শোয়।গায়ে পাতলা কম্বল টানে।অধরে লেপ্টে প্রাণনাশক হাসি।
তাহুরা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
–“নাহ।”
–“আমি তোমার কি?
মাথার নিচে এক হাত রাখে উমাইর।উত্তরটা তার প্রাণপ্রিয়।
–“এই-যে।”
–“কলেজের বাহিরে আর যদি স্যার ডাকো,তাহলে তোমাকে ভুল বুঝবো আমি।”
–“আর ডাকবো না।”
পরপর তাহুরা আবারও উমাইরকে বলে,
–“আপনি সত্যি আমাকে ভুল বুঝছেন না তো?”
তাহুরা অনেকটা শান্ত হয়।উমাইর তার অশ্রুকে কাবু করতে জানে ভালো।
–“ভুল না বুঝাতে চাইলে একটা কাজ করতে হবে তোমার।”
–“কি?”
তাহুরা ভাবনায় মশগুল।
উমাইর তার মনের ভাবনার প্রকাশ ঘটায়।সরাসরি মেয়েটার মুখ হতে প্রিয় ডাকটা শোনার বন্দোবস্ত করে।পুরুষালি ভারী,মাতোয়ারা কণ্ঠে উমাইর জবাব দেয়,
–“কালকে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে,
এই-যে দিয়ে আমাকে পাঁচটা প্রশ্ন করবে তুমি।”
চলবে………
কপি করা নিষেধ।