রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব-১১+১২

0
1024

#রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায়
লেখনীতে: সালসাবিল সারা
পর্ব-১১
___________________
–“না…হ।আপুকে রেখে বাড়ি ফিরলে বাবা খুব রাগ করবে।ভাইয়ার সাথে আছে আপু,থাকুক কিছু সময়।আপু খুশি হবে।”
ইতস্তত তাহুরার গলার স্বর।উমাইরের সহিত দৃষ্টি মিললে বামে ফিরে।লোকটার দৃষ্টি ক্ষিপ্ত।তাহুরার উত্তর তার পছন্দ হয়নি বুঝেছে।চায়ের ওয়ানটাইম কাপে চুমুক দেয় মেয়েটা।বুকটা তার দুরুদুরু।
সহসা সে শুনতে পায় উমাইরের তীক্ষ্ণ কণ্ঠ,
–“আমি ভুলে গিয়েছিলাম,তুমি আবার মানব দরদী।”
কেমন ঠাট্টা এই কথায়।উমাইর ইয়ার্কি করলো মাত্র!তাহুরা কেনো মানব দরদী হবে?সে কেবল বোনের কষ্ট দেখতে পারবে না।বাবা বোনকে বকে অস্থির করবে যদি তাহুরা একা বাড়ি ফিরে।এছাড়া বোন মন খারাপ করবে ভালোবাসার মানুষের সহিত সময় কাটাতে চেয়েও বিঘ্ন ঘটলে।

তাহুরা সোজা হয়ে বসে। বাঁকা দৃষ্টিতে উমাইরকে অবলোকন করে।উমাইর সিটে হেলান দেওয়া।পরিপাটি চুলগুলো আজ কিছুটা হেলে আছে।

তাহুরা অন্তরে সাহস সঞ্চয় করে বলে উঠে,
–“মানব দরদীর জন্যে না।আসলে বাবা আমাদের দুবোনকে নিয়ে খুব সিরিয়াস থাকে সদা।আপু…”
–“চা শেষে ইজি হয়ে বসে থাকো।পা গুটিয়ে বসতে মন চাইলে তাও করো।আমি বাহিরে আছি।”
মাঝপথে তাহুরাকে থামিয়ে গমগমে বাক্য বিনিময় করে বেরিয়ে যায় উমাইর।বদ্ধ গাড়িতে প্রেয়সীর সহিত বসে থাকাটা হঠাৎ তার বোধগম্য হয়নি।মনে অজানা আবদার হাজির হচ্ছিলো।মেয়েটা কি বললো তাও শুনেনি উমাইর।মনটা তার ভেবে যাচ্ছিলো তার পাশে অবস্থানরত রূপসীর নরম সত্তাকে একটাবার স্পর্শ করতে।

নিষিদ্ধ আবদার,নিষিদ্ধ ইচ্ছে।দমে যায় সুঠামদেহী উমাইর।গলে যায় ধৈর্যশীল পুরুষটা।মেয়েটা তাকে আকর্ষিত করে সর্বদা।মস্তিষ্কের ভাবনা উমাইর অন্যদিকে নেয়।গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ফোন দেয় ভাইকে।

তাহুরা বিস্ফোরিত নজরে চেয়ে।কি হলো?লোকটাকে খারাপ কিছু বলেছি কি সে?আচমকা এমন ব্যবহারের হদিস খুঁজে পায়নি তাহুরা।যদিও উমাইরের সহিত একাকী বসে গাড়িতে সময় পার করাটা তার কাছে অস্বস্থির কারণ।বারংবার তাহুরার মনে হচ্ছিলো উমাইর,সে এক প্রেমিক যুগল কেবল গাড়িতে তাদের মধুর সময় পার করছে।
তবে বাম হাত ঢুকিয়ে দেয় উমাইর।হুড়মুড় করে বেরিয়ে পড়ে।এইদিকে অবশ্য তাহুরাও স্বস্তি পায়।পরক্ষণে নিজের ভাবনায় তওবা করে মেয়েটা।ভীত মনে বুকের উপর হাত রাখে,
–“মনের অযথা ভাবনা একপাশে রাখ, গাঁধী।উমাইর স্যার জানলে এক ধাক্কায় গাড়ি থেকে বের করবে তোকে!”

হাতের খালি ওয়ান টাইম কাপ কই রাখবে তাহুরা?গাড়িতে রাখলে নিশ্চিত উমাইর তাকে বকবে।বাহিরে ডাস্টবিনে কোথাও ফেলতে হবে।সে কি গাড়ি থেকে বের হবে?নাকি উমাইরকে ডাকবে?উমাইর ড্রাইভিংয়ের পাশের দরজায়।কাঁচ বেশ খানিক নামানো।তাহুরা গলার আওয়াজ উচুঁ করার চেষ্টায় বলে,
–“এইযে শুনুন?”
উমাইর শরীর বাঁকিয়ে পেছন ফিরে।তাহুরার চিন্তিত মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করে তার নিকট যায়।অনেকখানি ঝুঁকে জানালার ধারে,
–“বলো।”
–“কাপটা কই ফেলবো?”
হাতের কাপ দেখিয়ে প্রশ্ন করে মেয়েটা।

–“খেয়ে ফেলো।”
হেসে উঠে উমাইর। সংশয়ে তাহুরা।লোকটার হাসির হুংকার শোনা দায়।অথচ এখন এই হাসিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তাহুরার অন্তর পিঞ্জিরা।লোকটা তাকে ঠাট্টার পাত্রী বানাচ্ছে আর বোকা মেয়েটা সেই মানবের হাসিতে কুপোকাত হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।

–“কাপ কিভাবে খাবো?”
নাক কুঁচকে প্রশ্ন করে তাহুরা।
–“মুখে দিয়ে চাবাও।”
আবারও হাসে উমাইর।তাহুরা ভ্রু সমান্তরাল করে তাকালে উমাইর তার হাত থেকে কাপ নেয়,
–“একদম নাক কুঁচকাবে না। ভেঙে দিবো।”
ঠাণ্ডা গলার স্বর উমাইরের।অথচ ধমক এটা।উমাইর সম্মুখে গেলে তাহুরা নিজ নাকে হাত দেয়,
–“কেনো যে উনি এমন ধমক দেয়!”
দূর হতে তাহুরা দেখে,উমাইর ডাস্টবিন খুঁজে বেড়াচ্ছে।শেষে পার্কিংয়ের পিলারের দিকে একটা ছোট ডাস্টবিনে কাপখানা ফেলে।

মিনিট বিশেক পর চলে আসে জুবায়ের,
সুনেরা।নিবরাস,আফিয়াকে ফোন করলে ওরাও দ্রুত ফিরে গাড়ির নিকট।তাহুরা গাড়ি হতে বেরুতে নিলে জুবায়ের থামায় তাকে,
–“বসো বসো।বেরুতে হবে না।”
–“আপনি বসুন এইখানে ভাইয়া।”
তাহুরা ভাব বিনিময় করে।
–“ইয়ে মানে,তোমার আপুর সাথে বসি আজ!”
সুনেরা পেছন হতে খাঁমচে ধরে জুবায়েরের শার্ট।কি নির্লজ্জ লোক!ছোটবোনের সামনে কোনো সম্মান রাখতে দিচ্ছে না।

–“আরে বস,তাহু।রেস্টুরেন্ট কাছেই।”
নিবরাস বলে উঠে।

উমাইর কেবল ঘটনা উপলব্ধি করছে।মুখ খুললো না। নাটক কোথায় গিয়ে থামে সেটা দেখার অপেক্ষায় সে।
অবশেষে আফিয়া,সুনেরা মাঝে বসলে জুবায়ের এবং নিবরাস তাদের দুদিকে বসে সহজে। গাড়ি ছুটে চলে তার গন্তব্যে।

তাড়াহুড়োতে খাওয়া শেষ করে সবাই।মুন্সী মিয়া বারংবার ফোন করছে।ক্ষেপে যায় উমাইর।এক পর্যায়ে রেস্টুরেন্ট হতে বেরুনো অবস্থায় উমাইর সুনেরাকে বলে,
–“ভাবী,আপনার বাবা কি ভাবছে আমি আর ভাই আপনাদের দুই বোনকে কিডন্যাপ করছি?”

হাসে সুনেরা। উমাইরের রগচটা সভাব সম্পর্ককে অবগত সে। খেয়ালী জবাব দেয়,
–“বাবা একটু বেশি চিন্তা করে আমাদের নিয়ে।বিশেষ করে তাহুরার জন্যে।”
–“কিন্তু অহেতুক চিন্তা করার দরকার কি?আমরা উনাকে বলেছি বাড়ি দিয়ে আসবো আপনাদের।”
উমাইরের কণ্ঠে রাগ।মুন্সীর কর্মকাণ্ড তার মেজাজ বিগড়েছে।এতবার ফোন দেওয়ার কারণে অস্থির তাহুরা খেতে অব্দি পারেনি।বাবার ভয়ে তার আঁখি ছিল ভিজে।কিন্তু,মেয়েটা হাসিখুশি ছিলো রেস্টুরেন্টে আসার পর।প্রিয়তমার সুখের মুখ বিষাদে ঢেকে যাওয়ায় প্রেমিক পুরুষ ক্রোধে উন্মত্ত।মূলত এই কারণে উমাইর খুঁতখুঁত করছে।

–“ভাইয়া আপনি রাগ করবেন না।বাবা এমনই।”
সুনেরার বাক্যে উমাইর নিঃশব্দে অনিচ্ছাকৃত অধর প্রসারিত করে।তবে,তাহুরা বুঝে এমন হাসিটা উমাইরের মন থেকে আসেনি বরং রাগ লুকানোর হাসি।যাওয়ার বেলায় সুনেরার নির্দেশে তাহুরা পেছনে বসে বোনের সাথে।জুবায়ের ভোঁতা মুখে সম্মুখে বসে ভাইয়ের সহিত।

দূর হতে তারা দেখে মুন্সী মিয়া গেইটে দাঁড়িয়ে।পাঞ্জাবি,লুঙ্গি পরিহিত।গাড়ি থামলে তার দুই মেয়ে নামে।জুবায়ের সম্মান জানাতে বেরোয়। উমাইরকে ইশারা করলেও সে বের হলো না। ঠাঁই বসে স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে।মুন্সী মিয়া জুবায়েরের সাথে কুশল বিনিময় শেষে উমাইর নিকট আসে,
–“একটু চা খেয়ে যান,উমাইর?”
–“নাহ আঙ্কেল।দেরী হচ্ছে।”
মুন্সীর কথার ঠেস যেনো তাকে ফিরিয়ে দিলো উমাইর।
মুন্সী বুঝেনি উমাইরের তেজ।সে সহসা ফের বলে,
–“আমি বলেছিলাম মেয়েদের আগে ফিরতে।দেরী হয়েছে আসলেই।”
–“কোথাও গেলে সময় মেপে তো ফিরে আসা যায় না,আঙ্কেল!”
উমাইর তাচ্ছিল্যের স্বরে জবাব দেয়।

মুন্সী কিছুটা আভাস পাচ্ছে উমাইরের কথার ছল।ছেলেটা কি রেগেছে তার বারবার ফোন করায়?
মুন্সী কিছু বলতে নিলে তাহুরা উপস্থিত হয় সেথায়।বাবার পাঞ্জাবির হাতা ধরে বলে উঠে,
–“জুবায়ের ভাইয়া বললো,উনার কাজ আছে সকালে।অন্যদিন আসবেন।”
বাবাকে কোনোভাবে থামায় তাহুরা।দুইজন নাহয় কথা কাটাকাটিতে রাত পার করবে।

উমাইর ঠাণ্ডা গলায় সালাম দিয়ে প্রস্থান ঘটায় গাড়ির।যাওয়ার পূর্বে অবশ্য তার শীতল দৃষ্টিতে ছুঁয়ে দেয় তাহুরার সত্তা।মেয়েটা বাবার জন্যে চিন্তিত ছিলো,ভীত ছিলো।কি ভেবেছে সে?উমাইর তার বাবাকে কটু কথা শুনাবে?পাগল নাকি উমাইর?ভবিষ্যতের জন্যে হলেও উমাইর মুন্সীর সাথে কখনো দুর্ব্যবহার করবে না।কারণ তার পুতুলটা তো মুন্সীর মেয়ে।তবে এটা বুঝতে বেগ পাচ্ছে না সে,মুন্সীর ছোট মেয়েটাকে বিয়ে করতে তার একটু কাহিনী করতে হবে। নাক উঁচু মুন্সী ছোট মেয়ের বেলায় বড্ড নাজুক।

–“তোমার নাক উঁচু শ্বশুরটা কেমন ঘাড়ত্যাড়া ধরনের।”
উমাইরের সহজ ভাষা।
–“মেয়েদের নিয়ে চিন্তায় থাকে বেশি।আমি ভেবেছিলাম সুনেরার সাথে বিয়েতে বেশ ঝামেলা করবেন।কিন্তু,সহজে সব হলো।তাহুরার বিয়ে নিয়ে চিন্তা নেই।মেয়েটার নিজস্ব পছন্দ থাকবে,এমন মেয়ে সে নয়।মুন্সী আঙ্কেল যার সাথে বিয়ে ঠিক করে মেয়ের…”
ভাইকে অর্ধেক কথা বলতে দিলো না উমাইর।মাঝে ফোড়ন কাটে,
–“ব্যতিক্রম হবে দেখবে সব।তাহুরার বিয়েতে ঝামেলা হবে অনেক।আর মেয়েটাও কান্না করবে বেশ।জামাই,বাবা দুজনের প্যারা ভোগ করবে সে।তবে,শেষে সুখী হবে।”

–“তুই কিভাবে শিউর?”
জুবায়েরের প্রশ্নে উমাইর কাঁধ হেলিয়ে ভাব নেয়।অর্থাৎ, সে জানেনা।
মন তার উত্তাল।অধর বাঁকা হয়ে কিঞ্চিৎ প্রসারিত।ক্ষিপ্ত হাসিতে তার মনে ভাবনারা গান করে।তার অন্তরের গভীরের কথাগুলো চিৎকার করে যেনো,
–“তাহুরার ব্যাপারে শিউর আমি সবকিছুতে।বিয়ের প্রস্তাব আমি দিবো,আমার সাথেই ঝামেলা হবে।আর সেই ঝামেলায় মেয়েটাকে জয় করবো আমি।ততদিনে নিশ্চয় তাহুরা আমার প্রতি দেওয়ানা হবে।ওকে আমি বাধ্য করবো আমার প্রতি ভাবতে,আমাকে ভালোবাসতে।উমাইরের একমাত্র প্রাণ তাহুরা।কেউ সেই পাখির দিকে তাকানো নিষেধ,এই পাখিকে কেবল উমাইর দেখবে,ধরবে,ভালোবাসায় মুড়িয়ে নিবে।”
——————
বাসায় এসে ফ্রেশ হয় তাহুরা।মনে হচ্ছে বোঝা হালকা হলো মেয়েটার। উমাইরকে মনে পড়ছে খুব।রেস্টুরেন্টে বাবা ফোন দেওয়ার পর হতে লোকটা কেমন নিভে যায়।বাবাও অতিরিক্ত করেছে।কখনো জুবায়েরকে ফোন দেয় তো কখনো উমাইরকে। নিজের কাপড়,জুতো বের করে মাকে দেখায়।মা পছন্দ করে ঢের।পরক্ষণে মনে আসে উমাইর তাকে ছবি পাঠাতে বলেছে কি কি কিনেছে সেসবের।

তাহুরা আলগোছে ছবি তুলে সকল কিছুর।লোকটাকে পাঠায়।শেষ বার্তায় লিখে,
–“রাগ করবেন না কিছু নিয়ে। বাবার পক্ষ হতে দুঃখিত আমি।”

মিনিট দশেক পর উমাইর মেসেজ সিন করে।জবাব দেয়নি।উৎসুক তাহুরা মোবাইল হাতে বসে।এই বুঝি মেসেজ দিলো রাগী লোকটা। আট মিনিট,পনেরো পার হয় দেয়নি মেসেজ উমাইর।অন্তরে কেমন চাপ অনুভব করে তাহুরা।ফের ভাবে,উমাইর সদা মেসেজ দেয় না।বেশিরভাগ সময় মেসেজ দেখে রাখে।তার একদিন পর উত্তর পাঠায়।সে তো আর তাহুরার মতো বাড়িতে বসে নেই।নানান কাজে ব্যস্ত।স্যার বলে কথা।

মন খারাপকে দূরে ঠেলে তাহুরা কাপড় জোড়ায় হাত বুলায়।এরমাঝে ফোন বেজে উঠে। গ্রুপকল।বহুদিন পর এই বাহিনী ফোন দিলো।সকলে বেড়াচ্ছে প্রচুর।
–“হ্যালো?কি অবস্থা তোদের? বেড়াচ্ছিস খবর নিচ্ছিস না।”
হেসে বলে তাহুরা।তার হাসিতে তাল দেয় স্বাগতা,
–“কি নিবো খবর।আমার জীবনের সেরা সময় পার করছি।পাবলিকে ভর্তির প্যারা নাই,এক্সামের প্যারা নাই।সোজা আমাদের কলেজে অনার্সের জন্যে এপ্লাই করবো।”
সায় দেয় চৈতালি,
–“একদম।আমরা তিনজন একসাথে অনার্সে ভর্তি হবো আমাদের কলেজে।”
–“ইন শাহ্ আল্লাহ্।”
তাহুরা জবাব দেয়।

–“তা,ঘণ্টা এক আগে কল দিলাম ধরিসনি।কই ছিলি তাহুরা?”
চৈতালির প্রশ্নে তাহুরা বলে,
–“মার্কেটে ছিলাম। পরে আপুর শ্বশুরবাড়ির লোকদের সাথে বের হয়েছি।”

–“উমাইর স্যার ছিলো না?”
চঞ্চল প্রশ্ন চৈতালির।
–“থাকবে না কেনো বল?উনার ভাইয়ের সাথে বিয়ে হচ্ছে সুনেরা আপুর।গর্দভ।”
স্বাগতা বলে উঠে।
–“হুম,স্যার ছিলো।”
–“কি কি?এখনো স্যার?ভাইয়া এনা ডাকবি।তোর বেয়াই উনি এখন, তালতো ভাই।”
হেসে উঠে বাকি দুইজন।

তাহুরা লাজে মুড়ে।লোকটাকে ভাই বলা যাবে না।”এই যে” বলে ডাকে।এইসব শেয়ার করা যাবে না।একদম না।

তাহুরার জবাবের পূর্বে স্বাগতা ফের বলে,
–“স্যার কথা বলে তোর সাথে?”
কথা বলে মানে?এমন সব যত্ন,বকাবকি,ধমক দেয় তাহুরা এহেন ব্যাপারে মুখ খুলবে না কস্মিনকালে।এছাড়া লোকটার ব্যবহারে মনে অন্য অনুভূতির হানা দিচ্ছে তাহুরার।ভাবতেই পেটে মোচড় দেয়।নিজেকে সামলে উত্তর দেয়,
–“উনার কথা বাদ দে।আমি পরে কথা বলছি।খারাপ লাগছে।”
ফোন কাটে সে।বাকিরাও মত দেয় পরে কথা বলবে।
মোবাইল খানা আবারও চেক করে।উমাইর উত্তর দেয়নি এখনো।

এরমাঝে শিউলি গ্লাস ভর্তি দুধ এনে দেয় মেয়েকে।হুশিয়ারি বার্তা ছাড়ে,
–“পুরোটা শেষ করবি।নাইলে হাড্ডি ভাঙবো তোর।”

তাহুরা ভীত মুখে হাসে।অপ্রিয় খাবারটা তার এখন এক নিঃশ্বাসে খেতে হবে।

অগোছালো কাপড়গুলো বিছানায় বসে গুছিয়ে নেয় সে।মেসেজ বার্তা আসে তখন। হাতের কাপড় ছেড়ে দ্রুত মোবাইল দেখে।উমাইর মেসেজ দিয়েছে।তার দেওয়া কাপড়,জুতোর ছবিতে কিছু না বলে উত্তর দেয় তার বাবার পক্ষ হতে দেওয়া দুঃখ প্রকাশের মেসেজের জবাব,
–“সরি বলার দরকার নেই।আঙ্কেল তোমাদের বাবা,উনার চিন্তাও বেশি।ঘুমিয়ে যাও।”

তাহুরা চটপটে।তার আঙ্গুলগুলো নৃত্য পরিবেশন করে মোবাইলের স্ক্রিনে,
–“আপনি সত্যি রাগ করেননি তো?”

উমাইর অপর পক্ষে ঘাড়ে হাত বুলায়।মেয়েটা যেঁচে নিজের জন্যে ফাঁদ বানালো।বেশ ঝাঁঝালো মেসেজ পাঠায় সে,
–“করেছি রাগ।কি করবে?রাগ ভাঙ্গাও আমার।”
–“কিভাবে ভাঙাবো?আপনি তো সামনে নেই।”
–“সামনে থাকলে কি করতে?বড্ড পাকা হচ্ছো?কথা কম।ঘুমাও।”
উমাইর বার্তা দেয়।

–“সামনে থাকলে আবার সরি বলতাম।”
তাহুরা ফের মেসেজ পাঠায়।
–“উহু।এইসব সরি টরি কাজে দিবে না সামনে থেকে।তখন আমার রাগ ভাঙাতে হলে নিজে অজ্ঞান হয়ে যাবে।”
–“কেনো?”
–“কারণ তুমি মাথামোটা,স্টুপিড।”
কেমন আঁখি ভরে আসে তাহুরার।লোকটা অপমান করেছে তাকে?তবে তার অপমান হোক আর যায় হোক, উমাইরের মেসেজ পেলে,সে তাহুরার সহিত কথা বললে যেনো শান্তি অনুভব করে তাহুরা।দিনটা তার ভালো যায়।অন্তরে অনুভূতিটা নেচে গেয়ে বেড়ায়।

সেইসব কথা পাশে ঠেলে তাহুরা রিপ্লাই করে,
–“আপনি ঘুমাবেন না?”

–“নাহ। ফুটবল খেলতে যাবো এখন।”
তাহুরাকে এমন মেসেজ পাঠিয়ে হেসে উঠে উমাইর।মেয়েটাকে জ্বালাতন করা তার প্রিয় কাজ।নিশ্চয় মেয়েটা এখন দ্বিধায় ভুগবে।নখ কামড়াবে!
–“আমি যাচ্ছি।খোদা হাফেজ।”
তাহুরার শেষ মেসেজ অবলোকন করে উমাইর শুয়ে পড়ে বিছানায়।

তার পাঠানো কাপড় জোড়ার ছবিতে নজর বুলায়।সবকটা জামা বেশ সুন্দর।একেকটা পড়লে নিশ্চয় তাহুরাকে বড্ড মনোরম লাগবে।প্রেয়সীর পানে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকবে সে।অথচ মেয়েটা টের পাবে না।
তাহুরার একখানা ছবি বের করে উমাইর।আঙ্গুল বুলিয়ে অধর স্পর্শ করে সেথায়।তাহুরা যখন বারংবার রাগ করেছে নাকি জিজ্ঞাসা করে উমাইরের বেশ আরাম অনুভব হয় অন্তরে।খুব বলতে ইচ্ছা করে,
–“আমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে তোমার সেই অধরকে বলো আমার গালে এসে হামলা করতে।”

উমাইর উঠে বসে।চুলের দুধারে হাত ঘষে,
–“আমার রাগ ভাঙাতে ভাঙাতে তোমার অর্ধেক সময় যাবে তাহু।অনিচ্ছাকৃত হলেও আমি রাগ দেখাবো তোমায়।কেবল তোমার অস্থিরতায় ঘেরা ছোঁয়া পেতে।”

পরক্ষণে মুন্সীর কথা মাথায় আসে উমাইরের।মুন্সী ঝামেলা করলে তার মেয়ে শেষ।উঠিয়ে বিয়ে করবে উমাইর।তার জীবনের অনেক সাধনার মেয়েটা। কতো বছর ধরে দেখে রেখেছে।তাহুরাকে বিয়ে করতে সব সীমা লঙ্ঘন করবে উমাইর।মুন্সী ঝামেলা করুক না করুক উমাইরের কিছু যায় আসে না।সে তাহুরাকে সারাজীবনের জন্যে আটকে নিবে বাহুডোরে এটাই জানে কেবল।

উমাইরকে স্যার হিসেবে ভদ্র ভাবলে ভুল করবে সকলে।ভার্সিটি লেভেলে বিগড়ে থাকা মেধাবী ছেলেদের অন্যতম ছিলো উমাইর।বাড়িতেও সকলের জানা উমাইরের,ক্রোধ,রাগ,জিদ সম্পর্কে।জয়ের ধারণা তার ছোট ছেলে তার বাবা অর্থাৎ উমাইরের দাদার মতো হয়েছে রগচটা।

উমাইর ঘাড় কাত করে ডানে বামে। চাপা ভঙ্গিতে অধর প্রসারিত করে।ফিচেল কণ্ঠ তার,
–“যায় কিছু হোক,দুনিয়া ধ্বংস হোক,আমার পাখিকে আমার মন পিঞ্জিরায় বন্ধী করবো কেবল আমি।বন্ধী হতে বাধ্য তুমি তাহুরা।”
পরপর সে ভারী,গম্ভীর,থমথমে সুরে আওড়ায়,
–“আমার জীবনে স্বাগতম তোমাকে,স্টুপিড রূপসী।এইবার কেবল হালালভাবে স্বাগতম জানানোর অপেক্ষায় রইলাম।আপাতত আমার রাগ অনুভব করো, পরে নাহয় রাগের সাথে আমার আদর-ভালোবাসা-স্পর্শ সবটা উপভোগ করবে!বিশ্বাস করো,তোমাকে ব্যাকুল করবো আমার প্রতিটা ছোঁয়ায়।বিনিময়ে তুমি লজ্জায় সেই আমার বুকে এসেই লুকাবে।”

চলবে…….

#রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায়
লেখনীতে: সালসাবিল সারা
পর্ব-১২
________________.
–“তাহু,প্লিজ উঠে পড়। সন্ধ্যা হতে চললো।কবে রেডি হবি,কবে যাবি ঐ বাসায়?”
ঘুমন্ত তাহুরা বেখবর।তার বোনের ডাক তার কর্ণগুহরে প্রবেশ করলো নাকি আয়ত্বে এলো না সুনেরার।সে বিছানায় শায়িত তাহুরাকে ধাক্কা দেয় আলতো হাতে,
–“এই মেয়ে!”
তাহুরা এইবার ধড়ফড়িয়ে উঠে।ঝাপসা চোখে বোনকে দেখে।সুনেরা রেগে আবার চিন্তিত।এক হাতে ডান চোখ কঁচলে তাহুরা বোনের কাঁধে মাথা রাখে। সুনেরা আলতো করে বোনকে জড়িয়ে নেয়,
–“ইমন আসলে কিন্তু একদম অপেক্ষা করবে না।অলরেডি দুইবার ফোন দিয়েছে।”

–“যেতে ইচ্ছে করছে না।”
তাহুরা কষ্টে মুখ খুলে।মেয়েটার মন অশান্ত।উমাইর দুদিন যাবত তার সাথে যোগাযোগ করেনি।তাহুরা কতো মেসেজ দিয়েছে তাও উত্তর দেয়নি লোকটা।অথচ কিছুক্ষণের জন্যে হলেও উমাইরকে অনলাইনে দেখেছে তাহুরা।

–“জলদি উঠে তৈরি হো।”
সুনেরা ধমক দিলে তাহুরা দ্রুত ছুটে।ইতোমধ্যে মেয়েটার আঁখিতে জল ছেপে।একে উমাইরের কারণে অন্তরে ঝড় তার,দ্বিতীয়ত আপু আচমকা ধমক দিলে মেয়েটা ভেঙে যায় যেনো।বালতির পানি দ্বারা অনবরত মুখ ধুতে থাকে সে।চোখে জ্বালা করছে মেয়েটার।
বারংবার মনে একটাই প্রশ্ন ভাসছে,উমাইর কেনো তার সাথে যোগাযোগ করছে না?

কান্নার কারণে হেঁচকি উঠে তাহুরার।তাও মুখে পানি দিতে থাকে।উমাইরের প্রতিচ্ছবি তার আঁখি জুড়ে ভাসমান।
কেনো এমন অবহেলা করছে উমাইর তাকে,জানেনা সে।অবহেলার সন্ধান কি কেবল তাহুরা অহেতুক ভাবছে?একমাত্র উমাইরের সাথে প্রায়শ কথা হতো তার।সর্বোচ্চ একদিন উমাইর তার সাথে গ্যাপ রেখে মেসেজ দিয়েছে।তবে,দুদিন হওয়াতে মেয়েটা কেমন মুচড়ে গেলো।বুকে তীব্র জ্বালাতন।বারংবার ভেসে উঠছে উমাইরের মুখশ্রী।সত্যি বলতে,তাহুরা ইদানিং উমাইরের সাথে স্যার হিসেবে নয় বরং মনের অন্য পিছুটানের কারণে যোগাযোগ করে।উমাইরের আদেশ,উপদেশ,যত্ন,ধমকের সহিত শাসানো বাধ্য করেছে সৃষ্টি করতে উমাইরের জন্যে তাহুরার অন্তরে অন্যরকম প্রশান্তির টান। যার কারণে ভোর অব্দি তাহুরা অপেক্ষা করে উমাইরের পক্ষ থেকে একটা মেসেজের।

সুনেরা আবার ধমক দিলে তাহুরা দ্রুত বেরোয় ওয়াশরুম হতে।তাওয়াল দ্বারা মুখ চেপে ধরে।সুনেরা তাহুরার যাবতীয় সবকিছু বিছানায় সাজিয়ে রাখলো।অবশেষে বোন লক্ষ্য করে তাহুরার মলিন চেহারা, ফুলো মুখ,
–” চোখ,নাক ফোলা কমবে এখন?কেনো কেঁদেছিস?”
–“আর কাঁদবো না।”
তাহুরার চাপা সুর।

সুনেরা হাসে।বোনকে কাপড় দিয়ে পড়ার ইশারা করে।তাহুরা ধীরে সুস্থে কাপড় জড়ায় তনুতে।নতুন কাপড়।কারুকার্য বেশ মার্জিত।
জামাখানা তাহুরার শরীরে জ্বলজ্বল করছে।সুনেরা বোনকে উপর নিচ অবলোকন করে।সে ভাবে,বোনের আর কোনো সাজসজ্জার দরকার আছে কি?ফুলো আখিদ্বয়,রক্তিম নাক,ফুলো ঠোঁট মেয়েটার চেহারাকে প্রসাধনীবিহীন মনোরম লাগছে ঢের।তারপরও বোনকে ড্রেসিং টেবিলের সম্মুখে বসিয়ে সাজিয়ে দেয় একেবারে সাদাসিধে।ওড়না বুকে সেট করতে নিলে তাহুরা মুখ খুলে,
–“মাথায় ঘোমটা দিবো।”
–“আচ্ছা।”
সুনেরা জবাব দেয়।

তাহুরার ঘন কেশ যুগল আঁচড়িয়ে পিঠে বিলিয়ে দেয় সুনেরা।মাথায় ঘোমটা টানে বেগুনি দোপাট্টার।তাহুরার মুখে আঁধার।হাসি নেই।সুনেরা অনেক কথা বললেও কিচ্ছুটি বলেনি মেয়েটা।ইমন এলে বেরিয়ে যায় ঘর হতে।মোবাইল নেয়নি।চুপটি করে বসে গাড়িতে।

শায়ন,আয়মা হেসে কুশল বিনিময় করলে মিথ্যে হাসে তাহুরা।পরিশেষে সুনেরা ইমনকে বলে,
–“তাহুরাকে দেখে রেখো ভাইয়া।”
–“চিন্তা করিস না।তোর ঐ চাচাতো ভাইবোন যাবে না?”
ইমন প্রশ্ন করে।
–“নাহ যাবে না।আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে তারা গুহায় ঢুকেছে।”
ক্ষিপ্ত হয়ে বলে সুনেরা।

হালকা আলাপ শেষে বিদায় জানায় তাহুরাদের।শিউলিও দুয়ারে দাঁড়িয়ে মেয়েকে নানান নির্দেশনা দিয়েছিলো।
———–
গাড়িতে থাকা অবস্থায় শায়ন এবং আয়মার সহিত কথা বলার দরুণ তাহুরার মন কিছুটা হালকা হয়।হাসি লেপ্টে থাকতে আরম্ভ করে ধীরে ধীরে।জানালার বাহিরে নজর দেয় তাহুরা।গাড়ি সম্ভ্রান্ত এলাকায় প্রবেশ করে।অনেকটা ইমনদের বাড়ির এলাকার মতো।চারিদিকে রঙিন আলোর ছড়াছড়ি।উচুঁ উচুঁ বিল্ডিং।কিছু বড় গেইট লক্ষণীয়।সেই গেইটের আড়ালে অবস্থিত এক তোলা,দোতলা একা বাড়ি। এমনই বিশাল ফটকের সম্মুখে গাড়ি থামিয়ে হর্ন দেয় ইমন।দারোয়ান ছোট দরজা হতে বেরিয়ে আসে।ইমনের পরিচয় নেয়।ভেতর হতে ফোন আসে দারোয়ানের নিকট।পরমাত্মিয় জেনে সম্মানের সহিত প্রধান ফটক খুলে দারোয়ান।

গাড়ি ভেতরে অগ্রসর হচ্ছে,তাহুরা নজর ঘুরিয়ে চারিদিক দেখছে।নিঃসন্দেহে তাদের তুলনায় উমাইরদের বাড়ি,বাড়ির পরিবেশ হাজার গুণে উত্তম।সোনালী আলোতে মুখর আশেপাশে।তাহুরা নজর ঝুঁকায়।তার দেখতে ইচ্ছে নেই কিছুর।উমাইরের কথা মনে আসছে কেবল।লোকটা কি বাড়িতে আছে?

ঘরের প্রথম দরজার পানে এগোলে তাহুরা জাফরানকে দেখতে পায়।তার পিছে পনেরো ষোলো বয়সী মেয়ে একজন।হয়তো দেখভাল করে জাফরানের।জাফরান দৌড়ে তাহুরার নিকট আসে।দু হাত উঁচু করে,
–“তাহু আপু।কোলে নাও।”

তাহুরা হাসে।কোলে উঠিয়ে নেয় জাফরানকে।একটু হাঁপিয়ে যায় তাহুরা।ভেতরে গেলে চাকচিক্যে নজর জোড়া বিস্ফোরিত হয় মেয়েটার। প্রচন্ড বিলাসিতায় ঘেরা ঘরের আনাচে কানাচে।মেঘলা এগিয়ে আসে প্রথমে।বাকিদের সাথে এইভাবে কথা বললেও বুকে জড়িয়ে নেয় তাহুরাকে।জাফরান তখনো তাহুরাকে আঁকড়ে রেখেছে।

–“অবশেষে এলে কেমন!আন্টি সেই কবে থেকে অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্যে। জাফরান নামো বাবা আপুর কোল হতে।”
মেঘলা ভাব বিনিময় করে।
তাহুরা ছোট গলায় সালাম দেয়।স্মিত হেসে বলে,
–“সমস্যা নেই আন্টি।”
এর মাঝে জাফরানের মা এসে জোর পূর্বক জাফরানকে ছুটিয়ে নেয়। এতে জাফরান গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদে।জাফরানের মা তাকে বকতে বকতে ভেতরে নিয়ে যায়।

–“আজ মুখটা এমন মলিন লাগছে কেনো?অসুস্থ তুমি?”
চিবুকে আঙ্গুল ঠেকিয়ে প্রশ্ন করে মেঘলা।

তাহুরার অধর প্রসারিত হয়,হেসে উঠে তার আঁখিজোড়া,
–“ঠিক আছি আমি।আপনি ভালো আছেন আন্টি?”
–“একদম ফার্স্ট ক্লাস আছি আমি।বসো মা।”
উপদেশ শুনে তাহুরা মাথা নাড়ে।সোফায় বসে।বিশাল তাদের বসার ঘর।সোফা সেটের সংখ্যা অনেক। ঝাড়বাতির শুভ্র আলোতে বসার ঘর ব্যাপক রমরমা।
সেখানে উপস্থিত হয় একে একে জুবায়ের,দিলরুবা,
আলেয়া।উমাইরের বাপ,চাচা অফিস সামলাতে মগ্ন।নিবরাস ঢাকায়,বন্ধুদের সাথে ঘুরছে।উমাইর অনুপস্থিত।তাহুরা হাসিমুখে সবার সহিত কথা বললেও দৃষ্টি তার অস্থির।কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে খুঁজে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।

অপেক্ষার অবসান ঘটে তাহুরার।বসার ঘরে সেই লম্বা আকৃতির মানবের আগমন।তাহুরা দুর্ঘটনাবসত একবার দেখলো কেবল উমাইরকে।হঠাৎই উষ্ণতা অনুভব করে সে শরীরে।ঘেমে যায় হুট করে। অথচ সেন্ট্রাল এসির কারণে কক্ষ হিম।চক্ষুদ্বয় জ্বলে উঠে তাহুরার।জলে পরিপূর্ণ। ছাই রংয়ের শার্টে আবৃত লোকটা।চুলগুলো সর্বকালের মতো আঁচড়ানো পরিপাটি।গালের দাড়ি আবার ঘন হয়েছে। খরশান চোয়াল বা দাড়ির আবরণে লেপ্টানো চোয়াল,দুই রকমে বেশ দুর্দান্ত লাগে উমাইরকে।

বাকি সবার সাথে উমাইর কথা বলছে টুকটাক।তার স্বর তাহুরার কানে যেনো হুংকার ছড়াচ্ছে।

মাথা উঠিয়ে লোকটাকে দেখার লোভ গ্রাস করছে তাহুরার সত্তাকে।তাও মেয়েটা মাথা উঠিয়ে দেখলো না। পাছে যদি উমাইর কটু কথা শোনায়!

উমাইরের দৃষ্টি নিষ্পলক।তার পাখির দিকে স্থগিত উমাইরের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।মেয়েটা কেঁদেছে নিশ্চয়!মেয়েটার আঁখি বড্ড চেনা উমাইরের।এই ফোলা নজর,রক্তিম নাক দেখায় জন্যে উমাইর দুদিন কথা বলেনি মেয়েটার সাথে।উমাইর ঠিক জানে,তার বোকা পাখি অস্থির হয়ে কেঁদেকুটে দিন পার করবে।ঠিকই হলো তা।মেয়েটা যে তাকে নিয়ে এখন স্যারের চেয়েও বেশি কিছু ভাবে উমাইর বুঝে।সোফায় হেলান দিয়ে বসে উমাইর।তার অপর পক্ষে বসে থাকা লাজুক,অভিমানী,সরল কন্যার প্রতি করুণা হচ্ছে।মনে উত্তোলন হচ্ছে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে বুক পিঞ্জিরায় আটকে রাখার বিরল চিন্তা।মনটা উমাইরের বড্ড বেহায়া।
……….
তাহুরার পানে উমাইরের এমন গভীর দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি আফিয়ার।মেয়েটা অতো বোকা না।যেখানে উমাইর মেয়েদের পানে সাধারণ নজরে তাকাতে দেখেনি,সেখানে তাহুরাকে এক প্রকার নিজ দৃষ্টিতে আবদ্ধ করেছে উমাইর।এর মানে উমাইর তাহুরাতে মত্ত!
আফিয়া রুঢ় হাসে।ক্ষিপ্ত হয় মনে মনে,
–“আহ,শেষ পর্যন্ত এমন সরল পটল সুন্দরীকে দেখছে উমাইর? ভালোই তো।সমস্যা নেই পটল সুন্দরী।আজ উমাইরের থেকে বকা খেয়ে দূর দূর পালাবে তুমি।আমার উমাইর কেবল আমার!”
যে মেয়ের পানে তার কোনো ক্ষোভ ছিল না,আচমকা আফিয়ার মনে ক্ষোভের চেয়েও জমে বেশি ক্রোধ।তাহুরাকে ভস্ম করছে সে তার কটু দৃষ্টির মাধ্যমে।

–“জাফরান, কেঁদো না।আমার কাছে আসো।”
তাহুরা সন্তর্পনে হাসে।জাফরানকে তার মা কোলে নিয়ে নিচে নামলে,সে মায়ের কোল হতে নেমে দৌড়ে বসার ঘরে আসে।ততক্ষণে সকলে ডাইনিংয়ের দিকে যাচ্ছে।জাফরানকে আসতে দেখে থামে তাহুরা।সে এখনো বসার ঘরে।তার পিছে উমাইর।বাকিরা থামলে মেঘলা বলে,
–“তোমরা আসো।তাহুরা উমাইরের সাথে আসবে।জাফরানকে সামলিয়ে নিক তাহুরা।”
মেঘলা উমাইরকে ইশারা করে।উমাইর আসার পর থেকে তাহুরার একেবারে চুপচাপ হওয়াতে মেঘলা বুঝে মেয়েটা তার ছেলের কারণে নেতিয়ে আছে।মা কেবল ছেলেকে সুযোগ করে দেয় তার প্রেয়সীকে শান্ত করতে।
জাফরানের মাথায় হাত বুলিয়ে যায় মেঘলা।মনে মনে ভাবে,
–“ছেলেটাকে বারবার বারণ করা সত্বেও মেয়েটাকে কেমন কাঁদিয়ে নেয়।কি মজা পায় সরল মেয়েটাকে এমন হেনস্তা করে খোদা জানে।এইদিকে আবার আমার ছেলে এই মেয়ে বলতেই অজ্ঞান।”
মেঘলা হাসে উমাইরের কথা ভেবে।তার ছেলেটা উপদেশ দিয়েছে তার মনের রাণীকে সদা দেখে রাখতে!

জাফরান কেঁদে অস্থির।তাহুরা হাঁটু গেড়ে বসে জাফরানকে জড়িয়ে ধরে।জাফরান তার ছোট হাত রাখে তাহুরার পিঠে,
–“মাম্মা পঁচা।আমাকে কোলে নিবা?”
–“কাঁদে না জাফরান।আপু তোমাকে অবশ্যই কোলে নিবো।”
তাহুরা হাসে।উমাইর চেয়ে রয় দৃশ্য।মেয়েটা তাকে ব্যাকুল করছে প্রতিক্ষণে।আদুরে মেয়েটা জাফরানের চোখের পানি মুছে দিচ্ছে সযত্নে।

জাফরানকে কোলে নিতে গেলে উমাইর কোমর বাঁকিয়ে হাত ধরে জাফরানের,
–“আবার শুরু?তোমাকে না মানা করেছিলাম জাফরান?”
উমাইর আলাদা করে জাফরান আর তাহুরাকে।
তাহুরা বোকা বনে।কি বলছে এই লোক?তাহুরা উমাইরের পানে তাকায় না।অন্যদিকে চেয়ে বলে,
–“জাফরানকে দিন আমার কাছে।”

উমাইর তাহুরার কান্ড পর্যবেক্ষণ করে তাহুরার মাথার ঘোমটা টেনে ধরে,
–“তাকাও।”
তাহুরা না তাকালে উমাইর তাহুরার বাহুতে হালকা স্পর্শ করে তার পানে ফিরায়,
–“আমার দিকে তাকাও।”
শীতল,কঠোর কণ্ঠ।তাহুরা ভেবেছে উমাইর তাকে দেখতে চায় না।তাই ফিরছিল না লোকটার অবয়বে।উমাইর ততক্ষণে জাফরানকে নিজ কোলে তুলে নেয়।

তাহুরা ভীতু চোখে উমাইরকে দেখলে ভ্রু কুঁচকায় উমাইর,
–“অনেক শান্তি লাগছে তোমার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে।”
তাহুরা কুঁকড়ে যায়।
–“তোমার এই কান্নারত রূপ উপভোগ করার জন্যে দুদিন যোগাযোগ করিনি। আমি জানতাম তুমি কাঁদবে। তা,কান্না করলে কেনো?”

জাফরান অসহায়।সে কিছু না বুঝলেও উমাইরের ভয়ে চুপটি করে বসে আছে কোলে।উল্টাপাল্টা করলে উমাইর নিশ্চিত বকবে তাকে!

–“আপনি ইচ্ছে করে…”
তাহুরাকে কথা শেষ করতে দেয়নি উমাইর।তাহুরার নাক টানে,
–“নাস্তা করবে চলো।আর কেঁদো না।”
শেষ বাক্যে উমাইর কেমন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।অথচ এই হাসিতে উন্মাদ হয় তাহুরা।ভেতরকার মনে তার ঢাকঢোল বাজে।ইচ্ছাকৃত তাহুরার কান্নারত রূপ দেখতেই উমাইর এমন অভিনয় করেছে!

তাহুরা আলগোছে উমাইরকে বলে,
–“আপনি আমার সাথে সত্যি রেগে নেই?”
–“আমি রাগলে আমার রাগ ভাঙানো তোমার জন্যে অনেক ভারী হবে,বোকা মেয়ে।আমার রাগ সহ্য হবে তোমার?”
তীক্ষ্ণ বাজের মতো কণ্ঠ।উমাইর জাফরানকে নামিয়ে দেয়।তার হাত ধরে হাঁটে।তাজ্জব তাহুরা তাদের পিছু।
————
উমাইর বন্ধুর রিসিপশনে যাবে।নিচে প্রেয়সীকে ঠিক স্থানে বসিয়ে নিজ রুমে ফিরে সে।তাহুরা উমাইরের মায়ের ঘরে।জাফরানের সাথে বসে।শায়ন,আয়মা,ইমন আবার জুবায়েরের সাথে হাঁটতে বেরিয়েছে।তাদের এগ্রো ফার্ম দেখার ছলে।বাড়ি থেকে বেরিয়ে মিনিট পাঁচেক এর পথ।অত্র এরিয়ায় উমাইরদের সহ বেশ প্রভাবশালীদের ফার্মের অবস্থান।মূলত আলাদা ব্যবসায়িক কাজের জন্যে এই স্থানে ফার্মটি করা।
তাহুরাকে বেশ জোর করা হলো।সে যেতে না চেয়েও রাজি হচ্ছিলো ভাব।তবে ততক্ষণে উমাইরের কঠোর দৃষ্টির সম্মুখীন হয়।লোকটা তাকে যেতে নিষেধ করছে নির্দ্বিধায় বুঝেছে তাহুরা।একপর্যায়ে মেঘলা নিজে বলে উঠে,
–“তাহুরা থাকুক এইখানে।মেয়েটার সাথে কথা আছে আমার।বাসায় থাকুক।”

স্বস্তি পায় তাহুরা।তাকে যেতে হয়নি।মেঘলা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তাহুরাকে। মেয়েটা তার ভীষণ প্রিয়।উমাইর কেনো মেয়েটাকে এমন জ্বালাতন করে?যখন এই বাসায় এসেছিল তখন তাহুরা কেমন অমাবশ্যার চাঁদের মতো বেরঙ ছিলো।আর এখন?পূর্ণিমার চাঁদের লাহান ঝলমলে মেয়েটা।উমাইর নিশ্চয় সব ঠিক করেছে তাদের মধ্যকারে।তাহুরা জাফরানকে কোলে বসিয়ে মেঘলার মোবাইলে কার্টুন দেখছে,এটা সেটা বুঝাচ্ছে।মেঘলা রুমের কুশন বদলিয়ে তাহুরার সম্মুখে বসে ফের।তাহুরার উরুতে হাত দিয়ে বলে,
–“উমাইর বকে অনেক?”

তাহুরা অকপটে তাকায়।ম্লান হাসে,
–“নাহ আন্টি।”
সত্যি চাপা দিল মেয়েটা।উমাইর বকলেও সমস্যা নেই তাহুরার।তার বকুনি আজকাল সয়ে গেলো তার।কিন্তু,লোকটা খুবই নিষ্ঠুর। তাহুরার কান্নামুখ দেখার জন্যে কতো আয়োজন করেছে!বড্ড পাষাণ উমাইর।

–“আজ থেকে যেও,তাহুরা।”
মেঘলা কেমন অনুরোধ করে।
তাহুরা দুদিকে মাথা নাড়ে।হেসে শুধায়,
–“আপু এই বাড়িতে চলে এলে তখন থাকবো অবশ্যই।”
–“আজ থাকা যাবে না?”
–“বাবা খুব সেনসিটিভ আন্টি।খুব রাগ করবে।”
জাফরানকে সামলিয়ে বলে তাহুরা।এইভাবে তার পা অবশ হয়ে আসছে।জাফরান বেশ সময় ধরে একনাগাড়ে বসে।
–“আচ্ছা,মা।অপেক্ষায় থাকবো তুমি এসে এই বাড়িতে থাকার।”
মেঘলা উত্তর দেয়।
তাহুরা সৌজন্যমূলক হাসে কেবল,
–“আচ্ছা আন্টি।”

এর মাঝে কক্ষে উপস্থিত হয় আফিয়া।মেঘলাকে বলে,
–“মা তোমাকে ডাকছে,বড়মা।মেহমানদের খাবারের তালিকা দিতে বললো।”
সুযোগ বুঝে কোপ মারে আফিয়া।

মেঘলা তাহুরার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,
–“বসো তবে।আমি আসছি একটু পর।”
–“জ্বী আন্টি।”
তাহুরার জবাব পেয়ে মেঘলা উঠে পড়ে। কামরা হতে বেরোয়।

আফিয়া বিছানায় বসে।ধীরে নিজের পকেট হতে চিরকুট বের করে।জাফরানকে তাহুরার কোল হতে সরিয়ে বিছানায় মোবাইল দেখতে বলে আফিয়া।মোবাইলে মগ্ন জাফরানের কোনো হেলদুল হলো না।
আফিয়া তার হাতের চিরকুট তাহুরার হাতে গুঁজে দেয়।তাহুরা প্রশ্নবোধক চেহারায় প্রশ্ন করে,
–“এটা কি আপু?”

মুহূর্তে মুখশ্রী পাল্টায় আফিয়া। ছলে বলে কয়,
–“এটা উমাইর ভাইয়াকে দিয়ে এসো প্লিজ।ভাইয়া আমার সাথে রাগ করেছে একটা কারণে।এইখানে আমার সরি লিখা আছে।একটু দিয়ে আসবে ভাইয়াকে?”

সাত পাঁচ বুঝলো না তাহুরা।সে কেনো দিবে?পরিবারে আর কেউ নেই?তাহুরা ইতস্তত ভঙ্গিতে ফের শুধায়,
–“আপু,আমি কিভাবে যায়!ব্যাপারটা ভালো দেখাবে না।আপনি বরং বাড়ির কাউকে দিয়ে..”

–“তুমি বুঝছো না,তাহুরা।খুব জরুরী।উমাইর ভাইয়ার আমার সাথে কথা বলাটা খুব জরুরী বুঝলে।বাসায় অন্য কেউ দিলে ভাইয়া খুব বকাঝকা করবে।”
–“আমাকেও যদি ব…”
বলতে চেয়েও বললো না তাহুরা।আফিয়া যদি আবার কথা টানে! উমাইরকে নিয়ে তাহুরা বাজে কথা বলেছে,যদি এমন রটায়?বোনের বিয়েতে সমস্যা হবে তাহলে।বিরাট সমস্যা।
এইভাবে মেয়েটা বেশ সরল,সামান্য ভাবনায় মেয়েটার আকাশ কুসুম কল্পনায় লিপ্ত।

মিনিট এক ভাবে তাহুরা।কোনো কথা বলবে না সে,কেবল হাত টেনে চিরকুট দিবে উমাইরকে।রাজি হয় তাহুরা।জবাব দেয়,
–“দিন আপু। জাফরানের পাশে থাকুন আপনি।”
–“আছি আছি।যাও তুমি প্লিজ। এইযে বড়মার রুমের ডান দিকে দুই দরজা পরে উমাইর ভাইয়ার রুম।”
আফিয়ার ছলে হেরে যায় তাহুরা।সে বেরুলে বিছানায় শুয়ে পড়ে আফিয়া। অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে,
–“যখন উমাইর জানবে এই চিরকুট আমি দিয়েছি।খুব বকা শুনবে তুমি বোকা তাহুরা!বকা শুনো তুমি,আমার শান্তি লাগবে।আহ।”

তাহুরা ভীত ভঙ্গিতে কালো রঙের কারুকাজ খচিত দরজার সম্মুখে আসে।আফিয়ার ভাষ্যমতে এটা হবে উমাইরের কক্ষ।দরজায় দুই টোকা দিলে ভেতর হতে পুরুষালি ভারী স্বরের প্রশ্ন আসে,
–“কে?”

–“আম…আমি তাহুরা।”

সময় নিলো দশ সেকেন্ড।ফট করে দরজা খুলে। উমাইরের অবয়ব দৃশ্যমান।ফরমাল ড্রেসাপ তার।দাড়ির কাট পরিবর্তিত।বেশ মানিয়েছে।উমাইর জিজ্ঞাসা করে,
–“ভেতরে আসো।আম্মু কই?”
–“নাহ আসবো না।আন্টি নিচে।”
তাহুরা কথাখানা বলতে বলতে উমাইর কক্ষের ভেতর যায়।আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে স্প্রে করে গায়ে,
–“শুনছি না।”

–“এই যে!শুনুন না।”
–“কিছু বলছো?”
উমাইর নিজ কার্য সম্পাদন করা অবস্থায় প্রশ্ন করে।

তাহুরা বুঝলো উমাইর তার কথা শুনবে না যতক্ষণ না সে ভেতরে আসে।তাহুরা ভেতরে যায়। উমাইরের পাশাপাশি দাঁড়ায়। হঠাৎ আয়নায় নজর গেলে অবাক বনে তাহুরা।উমাইর তার পানেই চেয়ে আয়নার অভ্যন্তরে।তাহুরাকে তার পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় অবলোকন করে অন্তর কাঁপে তাহুরার।বেসামাল হচ্ছে মেয়েটা।

নিজেকে ধাতস্থ করে বহুকষ্টে।মিনমিনিয়ে আওড়ায়,
–” চিরকুট, আফিয়া আপু দিয়েছে।”
–“ছিঁড়ে ফেলো।”
তাহুরাকে নির্দেশনা দিয়ে উমাইর নিজের গাঢ় সবুজ রঙের কোট গায়ে চড়ায়।

বেক্কল বনে তাহুরা।ভ্রু কুঁচকে বলে,
–“কেনো?”
–“তুমি এনেছো তাই।”
–“আফিয়া আপু বললো দিতে।”
–“সে ছাদ থেকে লাফ দিতে বললে কি লাফ দিবে তুমি?”
হেসে উঠে উমাইর।তার সরল পরী আবারও দ্বিধায় পড়েছে।মেয়েটা চিরকুট দেখছে। দৃষ্টি জোড়া নিচু।মেয়েটা কেমন নাজুক।

উমাইর দ্রুত তার সামনে আসে।চিরকুট নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। তাজ্জব তাহুরা উপরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।উমাইর ভাবলেশহীন। তাহুরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
–“কি করলেন?আফিয়া আপু কষ্ট পাবে।”
–“পাক। এমন মেয়ে কষ্ট পাওয়া ভালো।”
উমাইর ঠাঁই দাঁড়িয়ে।নড়চড় নেই।

তাহুরার নজর ভিজে আসে।আফিয়া নিশ্চয় রাগ করবে তাহুরার উপর,
–“আমি কি জবাব দিবো আফিয়া আপুকে?ভুল বুঝবেন উনি আমাকে।”
–“খবরদার কান্না করবে না।”
উমাইর হুমকি দেয় তাহুরাকে।মেয়েটা পেরেশানি ভঙ্গিতে চলে যেতে নিলে পেছন হতে তাহুরার ঘোমটা টেনে ধরে উমাইর,
–“আজ থেকে মেসেজ দিবো।মোবাইল হাতে হাতে রাখবে।”
–“আপনি আবারও গায়েব হয়ে যাবেন?দুইদিন পরপর?”
সম্মুখে ফিরে তাহুরা।
–“গায়েব না হওয়ার জন্যে রোজ উত্তর দিবে মেসেজের।আর আমি ছাড়া অন্য কারো কথায় কান্না করবে না।তোমার ফোলা মুখটা আমি দেখবো।বুঝলে?”

তাহুরা উপরনিচ মাথা নাড়ায়।লোকটা ইঙ্গিত দিচ্ছে তাকে ফের কাঁদানোর।তাহুরা জেনেও সায় দিচ্ছে।উমাইর তাকে কাঁদাক তাও কথা বলুক তাহুরার সাথে।
–“জ্বী।”
পরপর সে আবারও বলে,
–“আফিয়া আপু যদি কষ্ট পায়?আপনি চিরকুট ছিঁড়লেন হঠাৎ!”

উমাইর তাহুরার আদুরে ভঙ্গিতে কথা বলার ধরন দেখে।বুক উথাল পাতাল।একা কক্ষে দুজন,ভাবনা মাথায় এলে ভেতরটা নড়ে উঠে তার।সামনের এই মেয়ের সম্মুখে এলে দুনিয়াটা এলোমেলো হয় উমাইরের। হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে যায়।শক্ত উমাইর দমায় নিজেকে।হালকা ঝুঁকে তাহুরার গাল চেপে ধরে,
–“আফিয়া কষ্ট পাক,কাঁদুক,অজ্ঞান হোক,এর জন্যে তোমার চোখ থেকে যেনো পানি না পড়ে।”

তাহুরা তার স্পর্শে ব্যাকুল হয়।দু’কদম পেছনে যায়।দ্রুত গতিতে কক্ষ হতে বেরুতে নিলে উমাইর গলার আওয়াজ উচুঁ করে বলে,
–“এই ছিঁচকাদুনে,তোমাকে কেবল আমি কাঁদাবো।তোমার রক্তিম কান্নামুখ কেবল আমার জন্যে।অন্যের কথায় তুমি কাঁদলে,তাকে আমি ছেড়ে কথা বলবো না কখনো।”

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে