#রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায়
লেখনীতে: সালসাবিল সারা
অন্তিম পর্ব
(কপি করবেন না।গল্পের সব পর্বের লিংক পোস্ট করার পর শেয়ার করবেন,এর আগে না)।
_________________
–“আর যদি এই মিনিমিন কান্নার শব্দ শুনি,রাস্তায় নামিয়ে দিবো।কান্না থামাও,মাথামোটা।”
দমে যায় তাহুরা।পাশে অবস্থানরত তার প্রাণপ্রিয় অর্ধাঙ্গ।কিছুসময় পূর্বে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান ফের সম্পন্ন হয় দুই পরিবার বর্গের সম্মুখে।বিদায় বেলায় সেই যে তাহুরা সুর তুলে কান্নার রোলে মত্ত হলো,যা এখনো বহমান।উমাইর তার নিকট শক্ত ভঙ্গিতে বসে।কোমর আকড়ে।মা বাবাকে ছেড়ে আসার কষ্টটা জেঁকে ধরেছে তার মনের আঙ্গিনায়।পূর্বের মতো দুইদিন শশুর বাড়ি থেকে আবার বাবার বাড়ি ফিরতে পারবে না মেয়েটা,ইচ্ছা করলেই মায়ের কোলে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার বায়না করতে পারবে না,খাওয়ার সময় বাবার আদুরে ডাকটা রোজকার মতো শোনা হবে না। স্মৃতির বাজারে হাজারো স্মৃতি ভিড় করছে।
আঁখি আপনাআপনি ভিজে আসছে তার।আর লোকটা তাকে হুমকি দিচ্ছে!পরিবার ছেড়ে অন্য পরিবারে যাওয়ার কষ্টটা ছেলেরা আদৌ কখনো বুঝবে?
তাহুরা আঁখিতে টিস্যু চাপে।চেষ্টা করে কিছুটা দূরত্বে বসার। সে কাঁদবে মন ভরে,বাবা মাকে ছেড়ে আসা কি খুব সহজ?লোকটার যদি সমস্যা হয়,তাহলে কিঞ্চিৎ দূরত্বে বসা সই।
তাহুরা খানিক নড়লে উমাইর হাতের বাঁধন দৃঢ় করে,
–“চালাকি আমার সাথে?”
–“আমাকে কাঁদতে দিন একটু।মা বাবার জন্যে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।”
নিজেকে শান্ত করে জবাব দেয় তাহুরা।
উমাইরের মায়া হয়।রাস্তা ভরে সোডিয়াম আলোর প্রকোপে তার বউয়ের জ্বলজ্বল আঁখিতে খুন হয় তার হৃদয়।সম্মুখে বসা ড্রাইভারকে তোয়াক্কা না করে বক্ষ পিঞ্জরে আবদ্ধ করে বউকে।মাথার উপরিভাগে ছুঁয়ে দেয় অধর,
–“কষ্ট পেতে হবে না,জান।তোমার যখন ইচ্ছে মা বাবাকে গিয়ে দেখতে পারবে।আমাকে বললে নিয়ে যাবো।”
–“আপনি ভালো অনেক,এইযে।”
নাক টানে তাহুরা।এর মাঝে উমাইরের অবাধ্য স্পর্শ অনুভব করে মেয়েটা।চিনচিন করে স্পর্শকাতর স্থানে। উমাইরের বুকে আলতো হাত দেয় তাহুরা।মলিন সুরে আওড়ায়,
–“ব্যথা পাই।”
–“আরাম দিবো বউ। ধৈর্য্য ধরো।”
ঠোঁট চেপে হাসে উমাইর।তাহুরা লক্ষ্য করে সব।লোকটা তাকেই যেনো দোষী বানিয়েছে।মলিন হাসে সে নিজেও।অতঃপর বাবা মায়ের স্মৃতিচারণে সে ফের মগ্ন হয়।তবে,কান্নার পরিমাণ কমায়, উমাইর তাকে এখনো নানান দিক শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে।
বিয়ে বাড়ি মানে আলোয় নিমজ্জিত ভবন,গাছ,ফটক। তাহুরা কেঁদে হয়রান।মাথা ব্যথায় মগ্ন।উমাইর তাকে ধরে নামায়।মেঘলা সহ সকলে উপস্থিত।আফিয়া এবং সুনেরা এসে তাকে আগলে নেয়।সুনেরা বোনের লেপ্টে যাওয়া কাজল ঠিক করে শুধায়,
–“এমন কেঁদেছিস কেনো?আমি আছি তো এইখানে তাহু।”
–“মায়ের কথা মনে আসছে আপু।”
আবারো মন খারাপে যোগ দেয় তাহুরার কোমল হৃদয়।
–“ভাবী,আপনার বোনকে বুঝিয়েছি অনেক,তবে সে শান্ত হওয়ার মেয়ে না।ভাবছি,আগামী দুই বছর আপনাদের বাসায় যেতে দিবো না ওকে।”
উমাইরের দৃষ্টি সোজা তাহুরার অবয়বে।মেয়েটার মুখে মুহূর্তেই আঁধার নামে।মলিন নজরে উমাইরকে অবলোকন করে। সাদার সংমিশ্রণে খয়েরী শেরওয়ানিতে আবৃত তার মানব।সুদর্শন লোকটা এমন বিষাক্ত কথা কেনো বললো সবার সহিত?তাহুরা কিছু বলতে চাইলেও পারলো না,তার শক্তির অভাবে।গায়ের লেহেঙ্গা বেশ ভারী।
–“থাক বাবা,ওকে আর জ্বালাতন করো না।কিছু নিয়ম কানুন আছে।সেগুলো পালন করে ছোট বৌমাকে নিয়ে যাও রুমে।”
মেঘলা জবাব দেয়।
–“হ্যাঁ উমাইর,আমার একমাত্র শালীকে আর বকবি না।”
জুবায়ের বলে উঠে।
উমাইর হাসে। ঘাড়ে হাত ঘষে ভাইয়ের নিকট কিঞ্চিৎ ঝুঁকে শুধায়,
–“ভাইয়া,তোমার শালীকে না বকলে তোমার ভাই কষ্ট পায়।তবে,আমি ছাড়া অন্য কেউ আমার বউকে বকার দুঃসাহস আমি করতে দিবো না।”
–“সেরা সেরা,উমাইর ভাই।তোমার পথ অনুসরণ করে আমিও এখন মহান প্রেমিক।”
নিবরাস বলে উঠে সজোরে।তার উচ্চ সরে কথায় রমণীদের পা থমকায়।পেছন ফিরে হাসে তারা।
তবে, তাহুরার দৃষ্টি তার প্রাণ ভোমরাতে।লোকটা তার পানে স্নেহের,চাহিদার নজরে চেয়ে।সেই নজর পড়ে তাহুরার ভেতরকার সত্তা আলোড়ন করে।উমাইর তার তীক্ষ্ণ আকাঙ্খার দৃষ্টির দিক পরিবর্তন না করলে,তাহুরা নিজে দৃষ্টি নামায়।মেঘলার আদেশে পা ফেলে আফিয়া এবং সুনেরা সমেত।
ছোট ছেলের বিয়ে উপলক্ষে ঘর বড্ড রাজকীয় সাজে সজ্জিত।উমাইর এবং তাহুরা নিচ তলায় সকলের সহিত পালন করে কিছু নিয়ম কানুন।হাসি ঠাট্টায় আলোড়িত পরিবেশ দেখে মেঘলার চোখে খুশির জল ভাসে।হাস্যোজ্বল পরিবার সকল সুখের ঠিকানা। সময় আসে সকলে তাদের কক্ষে ফেরার। নিবরাস,আফিয়া উমাইরের কক্ষের সম্মুখে গিয়ে ভিড় করেনি বরংচ উমাইর,তাহুরা কক্ষে ফেরার পূর্বে তাদের জব্দ করে ভাইবোন দুইজন।সঙ্গে যোগ করে জাফরানকে।
–“ভাইয়া আমাদের টাকাটা দাও! রুলস বলে কিছু আছে।”
নিবরাস হাত পাতে।তার দেখাদেখি আফিয়া একই কান্ড করে।উমাইর তাহুরার কাঁধ জড়িয়ে।জাফরান নিবরাস এবং আফিয়ার মতো একই ভঙ্গিমায় দাঁড়ায়।তাহুরা অবাক হয়ে হাসে।কি লজ্জা!তার সেই লজ্জায় ঘি ঢাললো উমাইর।বামে ঝুঁকে তাহুরার কানে বলে উঠে,
–“ওরা যে কারণে টাকা খুঁজছে,সেই কারণ তো অনেক আগেই আমি ঘটিয়ে ফেললাম।তাই না জান?”
তাহুরা ঠোঁটে আঙুল চাপে।লোকটা এমন কথা বললো কানে কানে, তা যদি সম্মুখের মানুষেরা জানতো!তাহুরা উমাইরের কানে ফিসফিসিয়ে কথা বলা অসম্ভব।লোকটা তার তুলনায় লম্বায় বেশ।বিস্ফোরিত নজর খানা লুকানোর চেষ্টায় তাহুরা।
ঘরের বড়রা আশেপাশে।তারা ইতোমধ্যে নানান কথা বলছে।তাহুরার লাজ বাড়ে।উমাইর লক্ষ্য করে সবটা।বউকে লাজ হতে বাঁচাতে দ্রুত পকেট হতে মানিব্যাগ বের করে। নায্য টাকা দিয়ে ঝামেলা চুকায়।সেই টাকার ভাগদার জাফরানও হয়।
–“তাহু আয়,তোকে রুমে দিয়ে আসি।”
সুনেরা বলে উঠে।উমাইর ভাইয়ের পানে তাকায়।ইশারায় কিছু বুঝায় সে।তার বউকে সেই রুমে নিতে যথেষ্ট।মেয়েটার যত্ন করতে সদা প্রস্তুত উমাইর। এতো দৌড়-ঝাঁপ,বহু কাজে সুনেরা ব্যাপক ভূমিকা পালন করলে, এতে মেয়েটা হাঁপিয়ে বেশ।সেসব ভালো অবলোকন করে মেঘলা।
দেখা গেলো জুবায়ের কিছু বলার আগে মেঘলা নির্দেশনা দেয়,
–“উমাইর নিয়ে যাক তাহুরাকে।অনেক রাত হয়েছে।পরপর অনুষ্ঠানে সবাই ক্লান্ত।বড় বউমা তুমি বিশ্রাম করতে যাও।শরীর তোমার ভালো না।”
–“আচ্ছা মা।তাহু তোর কোনো অসুবিধে হলে আমাকে জানাইস।”
সুনেরা বোনকে জানায়।
–“ঠিক আছে আপু।”
জবাব দেয় তাহুরা।
যে যার কামরার পানে ছুটে।উমাইর ধীর হাঁটে তাহুরার সাথে।ভারী লেহেঙ্গায় হাঁটতে হিমশিম তাহুরা।সেই অনুযায়ী সকলে নিজ কক্ষে বন্ধী। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে বেগ পায় তাহুরা, পরুন্ত উমাইরকে আগলে ধরে দুই তলায় পৌঁছে।কক্ষের দ্বার খুললে উমাইর,আঁখি জোড়া আলোয় রাঙা হয় তাহুরার।পুরো কক্ষে সুন্দর কৃত্রিম লাইটিং আবার বিছানায় কিছু ফুল।
আপনাআপনি তার মুখে ফুটে উঠে,
–“অনেক সুন্দর।”
–“তোমার চেয়ে কম।”
নেশাক্ত কণ্ঠ ভেসে আসে পেছন হতে।অতঃপর অনুভব করে নিজ উদরে উমাইরের হাতের বাঁধন।
তার মাথা ঠেকে উমাইরের বুকে।পাশ ফিরে মাথা উচুঁ করে,
–“আপনি বেশি সুন্দর।”
উমাইর হাসে।দৃষ্টিতে তৃপ্তি দুইজনার।মেয়েটার খয়েরী রাঙা অধরে হালকা চুমু দেয় উমাইর,
–“ফ্রেশ হয়ে আসো।”
তাহুরা সময় নিয়ে তার সাধারণ মেকাপ এবং ভারী পোশাক ছেড়ে সুতির কামিজে আবৃত হয়।বিশাল এক বোঝা যেনো তার শরীর হতে নামে।ঘন,বেশি ওজনের চুড়ির জন্যে হাতের উপর কেমন লাল হয়ে আছে।উমাইর বাথরুমে ঢুকলে নিজ হাতে সেই চিহ্ন খেয়াল করে সে।মলম লাগানো দরকার।সাধারণত আলমারির নিচ ড্রয়ারে সেটা থাকে।কিন্তু,আজ নেই।হয়তো উমাইর অন্য কোথাও রেখেছে।
বাথরুমের সম্মুখে দাঁড়িয়ে উমাইরকে মৃদু সুরে ডাকে তাহুরা,
–“শুনুন,এই যে?”
–“হ্যাঁ জান,বলো।”
উমাইর ভেতর হতে জবাব দেয়।
–“মলমের বাক্সটা খুঁজে পাচ্ছি না।”
–“বেড সাইডের ড্রয়ারে আছে।পেইন করছে কোথাও?ঠিক আছো?”
উমাইরের চিন্তিত সুর।পরপর উমাইর দরজা খুলে বাথরুমের।ভেজা উদোম শরীরে অর্ধেক বেরিয়ে আসে।
তাহুরা চমকে উঠে।লোকটাকে উদোম শরীরে বহুবার দেখলেও এই লাজ যেনো কমবার নয়।
–“ঠিক আছি।আসলে চুড়ির জন্যে হাতে একটু…”
–“দেখি।”
উমাইর নিজে হাত টেনে নেয় তাহুরার।হালকা লাল ভাব,সাথে ফুলেছে কিছুটা।সেথায় হাত বুলিয়ে উমাইর ফের বলে,
–“ড্রয়ারে আছে মলম।বের করো।আমি আসলে দিয়ে দিবো।”
–“আচ্ছা।”
তাহুরা মুচকি হাসে।
বাম দিকের ড্রয়ার খুলে ফার্স্ট এইড বক্স নেয় সে। বাম দিকের ড্রয়ারটা সে কয়েকবার ব্যবহার করেছে,কিন্তু ডান দিকের ড্রয়ার খোলেনি কখনো।ফার্স্ট এইড বক্স কোলে রেখেই সে অন্য ড্রয়ার খোলে।বেশ বড় করে খুললে তাহুরার নজর চমকে উঠে।
হাতড়ে বের করে বেশ কিছু জিনিস। যার মধ্যে তাহুরার ভাঙা মোবাইল,চুড়ি,যা উমাইর সুনেরাদের এনগেজমেন্টের দিন নিয়েছিল তার থেকে।সাথে আছে গোলাপের শুকনো, বেরঙিং পাপড়ির সমাহার।এইসব জিনিস দেখে রীতিমত অবাক তাহুরা।উমাইর তার জিনিসগুলো সামলিয়েছে!কই তখন তো তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিলো না।তাহলে?
–“মলম কই?দেখি বিছানায় বসো।”
উমাইর মাথা মুছে তাওয়াল দ্বারা।তাহুরা উমাইরের দিক তার সকল অনুভূতি তুলে ধরে।বড্ড চঞ্চল হয় সে প্রেমিক পুরুষের সম্মুখে।হাতের জিনিসগুলো দেখিয়ে সে প্রশ্ন করে,
–“এগুলো কেনো রেখেছেন?”
উমাইর তাকায়।হাসে বেশ।মেয়েটাকে যখন কাছে পাচ্ছিলো না তখন সেসব জিনিস দেখে নিজের মনকে শান্ত করতো।আর এখন সেই জিনিসের মালিক তার বউ,তার সারাজীবন।
উমাইর আসে।জিনিসগুলো নিয়ে ড্রয়ারে রাখে।মলম তুলে নেয় ফার্স্ট এইড বক্স থেকে।বাহু ধরে দাঁড় করায় তাহুরাকে।ফের বিছানায় বসায়।হাঁটু গেড়ে নিজে বসে বউয়ের সামনে।মলম লাগিয়ে জবাব দেয়,
–“ইচ্ছা হয়েছে তাই রেখেছি।”
–“আপনি আমাকে তখন খুব বকতেন।তাহলে এইসব কেনো রাখতেন?”
ভ্রু কুঁচকে জবাব দেয় তাহুরা।
–“বকতাম তাই রাগ করতে?”
মলম লাগানো শেষ করে উমাইর।দৃষ্টি মিলে দুজনের। উমাইরের দৃষ্টিতে আসক্তি।তাহুরার দৃষ্টিতে প্রশ্ন।সে ঝটপট মাথা নেড়ে বলে উঠে,
–“আমি রাগতে পারি না আপনার সাথে।তখনো পারতাম না।তবে, কাঁদতাম।”
উমাইরের হাসি গভীর হয়।সে তাহুরাকে কাঁদানোর জন্যে সদা প্রস্তুত।তাই সত্যিটা বলেনি।উল্টো বলেছে,
–“তুমি খুব বিরক্ত করতে তখন আমাকে।এইসব জিনিস কিভাবে যে আসলো এইখানে।ওহহ,মনে এসেছে।কিন্তু,ফেলতে ভুলেছি।এখন বউ হয়েছে তাই আর ফেললাম না।নাহলে কতো আগে ফেলে…”
উমাইর কথা শেষ করতে পারেনি।ইতোপূর্বে তার বউয়ের চোখ রাঙা অশ্রুতে।নাকের অগ্রভাগ রক্তিম।অসহায় দৃষ্টিতে কিভাবে চেয়ে আছে!বউয়ের এহেন দৃষ্টি যদি অন্য কারো কারণে হতো উমাইর অত্র ব্যক্তির অবস্থা বেহাল করতো নিশ্চিত।কিন্তু,নিজে সেই কারণে থাকায়,তার রাগ হয়নি।বরং নেশাক্ত হয় বেশ।উমাইর বউয়ের সৌন্দর্য চেয়ে রয়।
ভাঙ্গা সুর ভেসে আসে তাহুরা হতে,
–“আমি..বিরক্ত করতাম?ক..খন করেছি?এইযে বলুন?”
উমাইরের হাসি জোরালো হয়।শব্দ হয় তার হাসিতে।তাহুরার দুই পাশে হাত রেখে বলয় সৃষ্টি করে। ধীরে সে আবৃত করে তাহুরাকে।নরম ভঙ্গিমায় বলে,
–“মাথামোটা,তোমাকে কাঁদাতে এতো ভালো লাগে আমার।”
তাহুরা হাতের তালুতে আঁখি মুছে।আবারও ঝাপসা হচ্ছে চোখ।উমাইর কেনো তাকে এমন জ্বালাতন করে!
সে বিছানায় পা গুটিয়ে বসে।পিছায় খানিকটা,
–“আপনি আমাকে এমন করেন কেনো?আমার কষ্ট হয় না?আমি…আমি কি সত্যি আপনাকে বিরক্ত করি?”
তাহুরার গালে সমান্তরালে বয়ে যায় অশ্রুর স্রোত।
উমাইর বিছানায় উঠে।তার হাসিমুখের ঠিকানা নেই।সরল মেয়েটা তার সব।তাহুরার কোমরে হাত ঠেকিয়ে নিজের সন্নিকটে আনে তাকে।ওড়না সরায় তার সত্তা থেকে,
–“তুমি আমার ক্রাইবেবি।”
উমাইর অধর প্রসারিত করে।তাহুরা সরতে চায়।উমাইরের উন্মুক্ত বুকে হাত ঠেকায়।তাকে সরতে বাঁধা দেয় উমাইর,
–“একটু সরে দেখো,আমি আজ আর বাসায় আসবো না।”
ব্যস,তাহুরার আত্মা শুকিয়ে।সে নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় উমাইরের অবয়বে লেপ্টে।ধিম সুরে আওড়ায়,
–“সরবো না।”
উমাইর জড়িয়ে ধরে তার প্রিয়তমাকে।হাত পৌঁছে বস্ত্রের আড়ালে।সেথায় মাতাল স্পর্শে তাহুরার মত্ত হয়।মিলে যায় দুইজনার অধর।তাহুরার নখ দাবে উমাইরের উদোম পিঠে।তাহুরার মৃদু স্বরে উমাইর আরো বেপরোয়া হয়।মিশে যায় তার প্রাণপ্রিয় বউয়ের দেহাংশে।মাথা রাখে বক্ষ দেশের মাঝারে।আবদ্ধ করে তার বাহুজোড়ায়।মোলায়েম কণ্ঠে বলে,
–“আমার জীবনের একমাত্র সুখ,শান্তি,আরাম,
ভালোবাসা জাস্ট ইউ জান।তুমি আমার সকল শান্তির ঠিকানা,আমার ভালোবাসা,আমার বউ।”
তাহুরা উমাইরের চুলের গভীরতায় আঙুল বুলায়।পীড়ায়,ভালোবাসায়,আসক্তিতে,অনুভূতিতে পিষ্ঠ মেয়েটা।উমাইর যে তার জীবনের সকল পূর্ণতা।সরল মেয়েটার ভালোবাসা।ফিঁচেল সুরে সেও বলে উঠে,
–“আপনি..আমার চিরসুখ কেবল আপনি,এইযে। ভালোবাসি।”
.
তাহুরা ব্যস্ত।তার আদরের বোনের মেয়ের জন্মদিন।রান্নার দায়িত্ব পুরোটা তার উপর নেয় তাহুরা।যদিও গতকাল হতে সে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।সাথে সাহায্য করছে মেঘলা এবং সুনেরা। অবশ্য তারা মানা করেছিলো তাকে এমন বড় দায়িত্ব না নিতে।কিন্তু,
মেয়েটা মানছে না।দুই পরিবার,জাফরানের বাসার সবাই আসবে।সেই অনুযায়ী সকলকে নিজ হাতের রান্না খাওয়াতে চায় সে।বাড়ির জন্যেও কেবল সে রান্না করে প্রথম হতে।উমাইর তার হাতের খাবার বেশ পছন্দ করে।
তবে,পূর্বের মতো সে এখন একা নেই।তার অভ্যন্তরে এখন উমাইরের অংশ।মাস পাঁচেক হলো দুই সপ্তাহ পূর্বে।মেয়েটা এখন পরিপূর্ণ।স্বাস্থ্যের দিক হতে নজর ফেরা দায়।উমাইর তীব্র কড়া অবরোধে রাখে মেয়েটাকে।সে তার যত্নের বেলায় নাজুক।অথচ বাড়ির কিংবা উমাইরের যত্নের বেলায় তাহুরা একশোতে একশো।
হাতের কাজের জোর কমছে তার।সকাল হতে একই ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে।উমাইর বলেছিলো দুপুরে ফিরবে।সেই অনুযায়ী কাজ শেষে কক্ষে পালানোর চিন্তা তার।কিন্তু,কাজ যেনো ফুরানোর নাম নেই আজ। উমাইরের চিন্তায় আরো বেশি ঘাবড়ে যাচ্ছে সে।মেঘলা এসে তাকে বলে,
–“তাহু,তুমি বসো কিছুক্ষণ।তোমার মা,বাবা পৌঁছাবে দেরীতে।মুন্সী ভাইয়ের দোকানে কাজের চাপ।উমাইর এসে দেখলে বকবে তোমাকে।”
–“মা,আপনি চিন্তা করবেন না।আমি ঠিক আছি।জুন কোথায়?ওকে বলুন ওর জন্যে মিল্কশেক রেডি করেছি।”
তাহুরা আঁচলে ঘাম মুছে।
মেঘলা চেয়ে রয় তার আদরের ছোট বউয়ের পানে।মেয়েটা এহেন আদুরে।তাহুরা প্রেগন্যান্ট,খবরটা যেদিন জেনেছে সবাই;তার ছেলেকে সাবালক হওয়ার পর প্রথম কান্না করতে দেখেছে মেঘলা দূর থেকে।অথচ মেঘলা ব্যতীত কেউ দেখেনি তা।তার শান্ত,গম্ভীর ছেলেটা এই মেয়ের বেলায় কেবল নিভে যায়।জগতের সম্মুখে কেউ কি বলবে তার ছোট ছেলেটা এমন ফুটফুটে একটা মেয়ের প্রতি দেওয়ানা!প্রতিনিয়ত চিন্তায় থাকে মেয়েটাকে নিয়ে সে।
–“জুন এতো কাজের মধ্যে তোকে মিল্কশেক বানাতে বলেছে? ওকে এখনো বকে এসেছি আমি।মেয়েটা একটা কথাও শুনে না।আদর পেয়ে বাঁদর হয়েছে।”
সুনেরা বলে উঠে।
–“থাক না আপু,ছোট মানুষ।তুমি ওকে দিয়ে আসো প্লিজ।সে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজছিলো।”
তাহুরা মুচকি হাসে। শাড়ির আঁচলে গলায় জমে থাকা ঘামের বিন্দুকণা মুছে।
–“দে।তুই জলদি শেষ কর রান্না।কিভাবে ঘামছিস।”
–“শেষ তো আপু।”
অধর প্রসারিত হয় তাহুরার।ঝটপট গরুর মাংসের তরকারি রান্না খতম করে।ঘরের হেল্পিং হ্যান্ড বড় পাতিল চুলা থেকে নামায়।
মেঘলা কাজ একটু এগিয়ে দিচ্ছে।পোলাওয়ের জন্যে সব কিছু ঠিক করে দেয়।তাহুরা তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিলে আচানক তেল ছিটকে উঠে।ফলস্বরূপ তাহুরার গলার কিনারায় কিছুটা তেল ছিটকে পড়ে।মুহূর্তে সে মৃদু চিৎকার করে,
–“মা গো!”
মেঘলা দ্রুত তাহুরাকে চেয়ার টেনে বসায়।গলার কিনারায় বরফ চেপে ধরে।মোলায়েম কণ্ঠে শুধায়,
–“কষ্ট হচ্ছে ছোট বউমা?”
–“জ্বলছে।ঠিক হয়ে যাবে,মা।আমি পোলাওটা দেখি।”
তাহুরা উঠতে চায়।কিন্তু কোমরের পীড়া।সকাল হতে টানা দাঁড়িয়ে থাকায় শরীর খারাপ করছে ঢের।তবে,থেমে থাকলে চলবে না।
–“তুমি এখনি রুমে যাও,তাহুরা।একটু শুয়ে থাকো মা।উমাইর ভীষণ রাগ করবে।”
মেঘলা বলে উঠে।
–“মা,আপনার ছেলে আমার সাথে সারাক্ষণই রাগ করে।”
হাসে মেয়েটা।অথচ তার চোখে পানি।মেঘলা নরম হয়।বাকিটা সময় কড়া নজরদারিতে রাখে তাকে।
রান্না সম্পূর্ণ শেষ হতে দুপুর একটার কাছাকাছি হয়।আর সহ্য হচ্ছে না তাহুরার।পা জোড়া পীড়ায় ক্লান্ত।শুতে হবে তাকে।সবকিছু ঠিক করে ফের নিজ কামরার উদ্দেশ্যে হাঁটে সে।মাঝপথে আসে জুন।সে তার চাচীর হাত ধরে এগিয়ে যায়,
–“মিল্কশেক অনেক ইয়াম্মি ছিলো,চাচী।”
–“তাই?জুনের মজা লেগেছে?”
তাহুরা আহ্লাদ করে।
–“অনেক।”
জুন বেশ খুশি।
তারা দোতলায় পৌঁছায় সময় নিয়ে।কক্ষের কাছাকাছি আসলে তাহুরা মাথার ঘোমটা ফেলে।মাত্রই তো রুমে ঢুকবে।কেউ আর দেখার নেই।কিন্তু হলো না।রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করার পূর্বে উমাইর তাদের নাগালে আসে।তাদের হাঁটার গতির চেয়ে উমাইরের গতি বড্ড দ্রুত।
–“তোমরা কোথা থেকে এসেছো?তাহুরা,তুমি এমন ঘামলে কেনো?আমার রুমে কি এসি নেই?বাসায় এসি নেই?বাতাস নেই?”
রান্নার পর তাহুরার ক্লান্ত অবয়ব স্পষ্ট।ঘামের তাড়নায় তার ঘাড়ের চুল ঘাড়ে লেপ্টে,যা খোঁপার আড়ালে বেরিয়েছে।
তাহুরা নড়ে উঠে।গলার উপরের তেলের ছিটার কথা মনে আসে।বেশ ভয় পায় তাহুরা।উমাইর তাকে কি করবে তা কেবল উমাইর এবং আল্লাহ্ জানেন।
–“চাচী,রান্না করছিলো।আমি চাচীকে রুমে আনতে হেল্প করলাম চাচ্চু।আমরা আর কোথাও যাইনি প্রমিজ।”
জুন বলে দ্রুত।
–“এতো মানুষের জন্যে রান্না করতে গিয়েছিলে?ঘরের মানুষের জন্যে করো সমস্যা নেই।অল্প রান্না।তাই বলে এতো মানুষের জন্যে?”
উমাইর গম্ভীর ভঙ্গিমায় প্রশ্ন করে।
তাহুরা জুনের হাত চেপে।জুন তাহুরাকে জড়িয়ে ধরে।ছোট চাচাকে তার বড্ড ভয় হয় মাঝে মাঝে।
–“আমি ঠিক আছি।”
তাহুরা হাসার চেষ্টা করে।
উমাইরের কুঁচকানো ভ্রু সমান্তরাল হয়নি।বরং সে হাতের ব্যাগ রাখে শব্দ করে।জুন নিঃশব্দে বেরিয়ে যায় কক্ষ হতে।তাহুরা দরজা বন্ধ করতে গেলে,উমাইর নিজে এগিয়ে যায়।
–“শাওয়ার নিবেন?কাপড় দিবো?”
তাহুরা নিজ হতে প্রশ্ন করে।
উমাইর তার পানে দ্রুত ফিরে।চেহারায় রাগী ভাব স্পষ্ট।
তাহুরার মুখশ্রীতে অসহায়ত্ব।পরোয়া করেনি উমাইর।
গলার স্বর নামিয়ে চিৎকার করে,
–“চিল্লাই না দেখে কি মাথায় উঠে বসবে?বারবার বলেছে ডাক্তার বেশিক্ষণ এক নাগাড়ে দাঁড়িয়ে না থাকতে।পেট ব্যথা বাড়লে কে কষ্ট পায়?কে কান্না করে?বাড়ির রান্নার জন্যে অল্প হাঁটাহাঁটি করো ফাইন।তাই বলে আজ এতো মানুষের খাবার কে করতে বলেছে?মা বলেছে?নিশ্চয় বলেনি।ভাবী বলেছে?নিশ্চয় বলেনি!তাহলে?”
তাহুরা নড়ে উঠে।দুকদম পেঁছায়।বেড়ে উঠে উদরে হাত রাখে।বিছানায় বসে ধীরে।গাল জুড়ে অশ্রুর হানা। হিঁচকি উঠেছে তার রীতিমত।প্রেগন্যান্সির পর হতে উমাইর তাকে এমন তীব্র বকেনি।বলতে গেলে অনেক মাস পরেই এহেন বকার শিকার সে। উমাইরের বকুনি,সাথে গলার কিনারায় যন্ত্রণা,শরীরে পীড়া সব মিলিয়ে নাজুক মেয়েটা।কিসের দুঃখ পালন করবে আগে এটা নিয়েই ভাবনা। ভেবেছিলো উমাইর আসার পূর্বে বিশ্রাম নিয়ে সেরে যাবে।কিন্তু,এইভাবে ধরা পড়বে ভাবেনি।
–“তোমাকে কাঁদতে বললো কে?এই তুমি কাদঁছো কেনো?”
উমাইর আবারও চিল্লিয়ে উঠে।
–“সরি।আমি সরি বলছি।”
তাহুরা কেঁদে জবাব দেয়।
–“সরি বললে ব্যথা কমবে?এখন কোমরে হাত কেনো?আর পা দেখি?এই পা দেখাও।”
উমাইর নিচু হয়ে বসে।নিজেই শাড়ি তুলে তাহুরার।দুই পা ফুলেছে।ফের কড়া কিছু বলবে, এর পূর্বে তার নজর আটকে যায় তাহুরার গলায়। তাজা ফোসকা।শাড়ির আঁচল সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে সে।মেয়েটার বুকে তার দেওয়া ভালোবাসার চিহ্ন সদা থাকে।তবে সেই সাথে এই তাজা ফোসকা বেমানান।তেল পড়েছে বুঝায় যাচ্ছে।
–“আরো কষ্ট পাও?আর কিছু বাকি আছে?হ্যাঁ?তুমি কেনো কথা শুনো না?আমার বাচ্চা কষ্ট পাচ্ছে না তুমি কাদঁছো তাই?এই মাথামোটা?”
গলার জোর বাড়ে উমাইরের।
তাহুরা শব্দ করে কান্না করে।সেই শব্দে উমাইরের অন্তর পুড়ে।মনটা কেমন যেনো হুড়মুড় করে তার।তাহুরা এতসব সহ্য করেও তার কথা ভাবছে।মেয়েটাকে বকে এখন নিজে অশান্তিতে ভুগছে।উমাইর তাহুরার মাথা তুলে।মৃদু সুরে জিজ্ঞাসা করে,
–“জ্বলে অনেক?”
তাহুরা মাথা নাড়ে।অর্থাৎ না। মিথ্যে না বললে ফের তাকে বকবে উমাইর।
উমাইর হাসার চেষ্টা করে।জড়িয়ে ধরে তাকে।মেয়েটার বাড়ন্ত পেট তার বুকে স্পর্শ করছে।মৃদু চুমুর বর্ষণ হয় তাহুরার গলার উপরিভাগে। গালে নাক ঘষে উমাইর,
–“আসো গোসল করবে।এরপর খেয়ে ঘুমোবে।”
–“আপনি কিছু খেয়ে আসুন।আমি করছি।”
তাহুরা বুকে আঁচল টানে।
–“মেজাজ আমার প্রচন্ড খারাপ।বাড়তি কথা বলবে না।”
তাহুরা নিজ পেটে হাত রাখে আবারও।উমাইর তাকে দাঁড়াতে সাহায্য করে।অতঃপর দুজনে একসঙ্গে গোসল সাড়ে।উমাইর তাকে শাড়ি পড়তে সহায়তা করে।
ততক্ষণে বাড়িতে মেহমানদের সমাগম।তাহুরা নিচে নামতে চাইলে,উমাইর পুনরায় তাকে ধমক দেয়। যার কারণে তার নিচে নামা হয়নি।মেহমানরা সকলে উপরে এসে তাহুরার সাথে দেখা করে।মেঘলা তাকে খাইয়ে দেয় রুমে।মা পাশে বসে নানান আলাপ করছে।জাফরানও জুনের সাথে এই রুমে।তারা চেঁচামেচি করে গেইম খেলছে।ছোট্ট জাফরান এখন অনেকটা বড় ছেলে।
দুপুরের খাবার শেষে উমাইর আসে।তাকে দেখে তাহুরার মা কক্ষ হতে বেরোয়।
–“জাফরান,জুন লাঞ্চ করতে যাও।”
–“মা খাইয়ে দিবে, চাচ্চু।”
জুন বলে উঠে।
–“জুন,জাফরান আসো খেতে।”
সুনেরা ডাকে তাদের।
–“মা এইখানে খাই?প্লিজ?”
জুন জিদ করে।
–“চাচীর খারাপ লাগছে,দেখছো না?সবসময় জিদ?”
সুনেরা হাত ধরে জুনের।টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
তাহুরা অনুরোধ করে লাভ হয়নি। সুনেরা শুনেনি।জাফরান তাদের পিছু চলে।
উমাইর দরজা লক করে,
–“টায়ার্ড আমি, ঘুমাতে দাও জান বুকে।”
তাহুরা দুহাত মেলে উমাইরকে ডাকে,
–“আসুন।”
উমাইরের অধর প্রসারিত।দ্রুত পৌঁছে প্রেয়সীর বক্ষে।
বিকালে সকলে মিলে কেক কাটে।তখনই নামতে দেয় উমাইর।খুব তাড়াহুড়োয় সকল কার্যক্রম শেষ করে।
———-
মাস এক পরের ঘটনা, সুনেরা,জুবায়ের,জুন,জাফরানের পরিবার, মেঘলা-জয়,দিলরুবা,আলম সকলে ঘুরতে যাবে রাতে কক্সবাজার।সেই সুবাদে সকলে প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত।মেঘলা যেতে চায়নি।তবে,তাহুরা নিজ কারণে কারো সুখের বাঁধা হতে নারাজ।সে জোর করে মেঘলাকে যেতে বলে।এছাড়া তাদের অনেকদিনের পরিকল্পনা আজকের ভ্রমণ।আগামীকাল শুক্রবার থাকায় উমাইরের কলেজ ছুটি।সেই অনুযায়ী সকলে এমন পরিকল্পনা করে।
তাহুরাকে তার মা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু, উমাইর সাফ মানা করে দেয়। এছাড়া উমাইর একা ভেবে তাহুরা এভাবেও যেতো না।পুরো ঘরে উমাইর তাহুরা কেবল।
সকলে যখন উপস্থিত ছিলো তখন তাহুরা ফুরফুরে মেজাজে সব চেয়ে দেখেছে।অথচ সবার প্রস্থানের পর তার মনটা আনচান করছে।তার মন খারাপ লক্ষ্য করে উমাইর জিজ্ঞাসা করে,
–“খারাপ লাগে জান?”
–“সবাই ঘুরতে যেতে পারে। নিবরাস,স্বাগতা ওরাও বাহিরের দেশে ঘুরছে।আফিয়া আপুও অন্য জেলায় বিয়ে করে সারাক্ষণ এখানে সেখানে যায়।প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর আমি কোথাও যেতে পারিনি।আমি বাহিরে যাবো।ঘুরবো।”
তাহুরার সর্দি আসে।
–“বাবু আসুক,একসাথে যাবো।”
উমাইর অধর স্পর্শ করে তাহুরার কপালে।
–“নাহ নাহ নাহ আজকে যাবো।আমি কোথাও যাবো প্লিজ,এই যে।”
তাহুরা জিদ করে।
–“আহ্,শান্ত হয়ে বসো,মাথামোটা।কই যাবা?”
–“যেকোনো জায়গায়।কিন্তু আজকে বাসায় থাকবো না।”
তাহুরা নাক ঘষে উমাইরের বুকে।
–“হোটেলে চলবে?”
–“হ্যাঁ।অনেক শুকরিয়া জামাই।”
তাহুরা খুশি হয়। উমাইরের গালে চুমু দেয় দ্রুত।মুহূর্তে তার মুখশ্রী খুশিতে জ্বলজ্বল করে।
–“রেডি হও।”
উমাইর আঙ্গুলের সহিত তার চুল ঠিক করে।
বাহিরে বৃষ্টির হাতছানি।পরিবেশ সতেজ।তাহুরা মায়াভরা দৃষ্টিতে সকল কিছু অবলোকন করে।উমাইর শান্ত ভঙ্গিমায় গাড়ি চালাচ্ছে।মাঝে মাঝে প্রেয়সীর বাড়ন্ত পেটে হাত রেখে আদর করে তো,তাহুরার কাঁধ জড়িয়ে রাখে।
তারা দ্রুত পৌঁছে পেনিনসুলা হোটেলে।উমাইর অনলাইনে প্রিমিয়াম রুম বুকিং করে।
গাড়ি থামিয়ে নিজে প্রথমে নামে, পরে তাহুরাকে ধরে নামায়।মেয়েটার স্বাস্থ্য পূর্ব হতে বেশ ভারী। আস্ত আদরের ফোয়ারা। উমাইর কলেজ হতে আসলে এক মুহূর্তের জন্যে বউকে চোখের আড়াল করে না।মেয়েটা সরল,খুব সহজে সমস্যায় পড়ে যায়।
রুমখানা তাহুরার পছন্দ হয়েছে।উমাইর সোফায় বসে বউকে দেখে।তার এই হাসির জন্যে উমাইর সব করতে প্রস্তুত।সোনালী আলোয় মেয়েটাকে তার মৃত্যুপুরী মনে হচ্ছে।সৌন্দর্যের সকল বৈশিষ্ট্য যেনো তার মাঝে সীমাবদ্ধ। বেগুনী রঙের শাড়ির সাথে সাদা রঙের হিজাব পড়েছিলো।হুট করে সে হিজাব খুলে বদ্ধ চুল বাঁধন মুক্ত করে।গায়ে টুকটাক সোনার অলংকার।হাতের ইশারায় সবকিছু ধরে দেখছে।হঠাৎই উমাইরের পানে দৃষ্টি পড়লে ঘাবড়ে যায় সে।উমাইরের দৃষ্টি নেশাক্ত।
তাহুরার লাজ বাড়ে। পেটে হাত রেখে বলে,
–“বাবা আমাদের দেখছে।”
–“আর বাবা এখন মাকে আদর করবে।”
উমাইর উঠে।দ্রুত হেঁটে তাহুরাকে আঁকড়ে নেয়।অধরে অধর মিশে।হাতের স্পর্শে কাতর তার প্রেয়সী।অধর জোড়া মুক্ত হলে,কপালে কপাল ঠেকায় দুজন।উমাইর তার কোমর জড়িয়ে।হাঁটু গেড়ে বসে।বউয়ের বাড়ন্ত অংশে চুমু দেয়।অপেক্ষা এখন সুদিনের।
–“আপনাকে আমি খুব বিরক্ত করছি তাই না?”
তাহুরা মলিন সুরে বলে।
–“নাহ।এখন তুমি যেটা বলো সব আমার বেবি বলায় তোমাকে।”
উমাইর উঠে দাঁড়ায়।প্রিয়তমাকে আগলে নেয়।
–“আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের অধ্যায়,এইযে।”
উমাইর হাসে।অধর স্পর্শ করে মেয়েটার কপালে।তার সরল প্রেয়সী।তার আদর।মেয়েটাকে ছাড়া উমাইর অচল।দম বন্ধ অনুভূতি সেইসব ভাবনা।সে ভাবে না কোনোদিন।উমাইর কেবল তার সুখের সাথে সুখী।তাহুরা মেয়েটা তার সুখ।তার জীবনের পূর্ণতা।
উমাইর তাহুরার গাল চেপে ধরে।আলতো কামড় দেয় নাকে,
–“জানো মাথামোটা,আমার মন পিঞ্জিরায় যেদিন আটক করেছিলাম সেদিন মনে মনে ঠিক করেছি তুমি মেয়েটা শুধুই আমার,এই উমাইরের।”
তাহুরার অধর প্রসারিত।তার হাত উমাইরের পিঠে।এহেন সুখের সময়েও তার আঁখি ভিজে।মেয়েটা যে উমাইরের ছিঁচকাদুনে। কান্নাকে সে সামলাতে আজ অব্দি পারলো না।উমাইর অট্টহাসিতে মত্ত।সে তাহুরার কপালে টোকা দিয়ে শুধায়,
–“উমাইর কেবল তোমাতেই আসক্ত,জান।এই মন পিঞ্জিরায় কেবল তোমার আধিপত্য ছিঁচকাদুনে।আমার প্রাণ তুমি,আমার লাইফ।”
তাহুরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়।তবে,তার ধ্যান ভাঙে উমাইরের ভালোবাসাময় স্পর্শে। লোকটাতে সে মত্ত,দূর্বল।তাহুরার মনের পিঞ্জরায় যে এই লোকটা ভীষণভাবে আটকে।তাহুরার এই যে,তার প্রাণ ভোমরা।বাকি কিছু উমাইর তাকে ভাবনার সময় দেয়নি।কেবল উমাইরের বলা একটা কথা শুনতে পায় সে,
–“প্রথম যেদিন দেখেছি,সেদিনের মতো অন্তর জ্বালা অনুভূতি হয় তোমাকে দেখলেই,জান।”
সমাপ্ত