#রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায়
লেখনীতে: সালসাবিল সারা
পর্ব -২৬
_______________
–“আপু,আমি বাসায় যাবো।এইখানে থাকবো না।”
তাহুরা অস্থির।তার আঁখি ভিজে একাকার। নাকটা রক্তিম।সেথায় চেপে ধরে ওড়নার কিনারা।মনের মাঝ উত্তাল।উমাইর তার সহিত কথা বলে না বহুদিন।আবার তাকায়ও না।সেদিন ছাদে বলা কথাগুলোর ভিত্তি কিভাবে মিলাবে তাহুরা?লোকটা কি ভাবে নিজেকে?মেয়েটা কত শত মেসেজ দিলো উমাইকে।উত্তর নেই। ফোন দিয়েছিলো একই বাসায় থেকে,তাও উমাইর নিরুত্তর।
ক’দিনে কেবল,তিন খানা কথা বলেছে উমাইর তার সাথে,যেটাকে ধমক বলে।এক,তাহুরা ছাদে মাথায় কাপড় না দিয়ে যাওয়ায়;দুই,নিবরাসের সাথে বিকালের দিকে বাগানে হাঁটায়;তিন,একটু আগে মেঘলার সহিত তাহুরা রেস্টুরেন্টে যেতে রাজি হয়েছিলো তাই।
তাহুরার কি দোষ?মেঘলা বলেছে তৈরি হতে জাফরানের মায়ের বাড়ির সকলে গেট টুগেদার করছে।সেই ক্ষেত্রে দাওয়াত দেয়।তাহুরা ঘোর আপত্তি জানালে মেঘলা মন খারাপ করে।অতঃপর তাহুরা না চাওয়া সত্ত্বে তৈরি হতে প্রস্তুত।
এরমাঝে আগমন ঘটেছিলো উমাইরের।ঘটনা শুনে তার মস্তিষ্কের হেরফের হয়।তুনাজের পরিবারের দাওয়াতে তার হবু বউ যাবে? তাও উমাইর ছাড়া?মুহূর্তে মায়ের সম্মুখে সে তাহুরাকে ধমকে বলেছিলো,
–“পা ভেঙে বসিয়ে রাখবো,মাথামোটা।আমি যাচ্ছি না,তুমিও যাবে না।মা তোমার আদর একদিকে,আর ঐ জায়গায় আমি এই মেয়েকে যেতে দিতে পারছি না।বুঝবে তুমি।”
ব্যস আর কথা নেই।তাহুরা বাসায় একা তাই সুনেরাও গেলো না।আফিয়া এবং তার পরিবার আজ সকালে বায়ু পরিবর্তনের জন্যে ঢাকায় গেলো।অতঃপর পুরো বাসা একেবারে নীরব।
তাহুরার কথায় সুনেরা হাসে।বোনকে আগলে নেয়,
–“পাগলী।একা কিভাবে থাকবি ঐ বাড়িতে? মা আসুক,আমি কথা বলবো।দুই বোন একসাথে থাকবো।”
তাহুরা ফের নাক মুছে ওড়নার কিনারায়।মাথা দোলায়,
–“তোমার দেবর জলদস্যু।কিভাবে চিৎকার করে।একা বকলে সহ্য করা যায়।কিন্তু,আন্টির সামনে চিৎকার দিলো কেনো?”
চোখে হাত ডলে মেয়ে।
সুনেরা বোনের চিবুকে হাত রাখে,
–“ভাইয়া রেগেছে,বুঝিস তো।”
–“না,বুঝি না আপু।তোমার দেবর শুধু মাথামোটা বলে আমাকে।উনাকে বুঝা আমার সম্ভব না।উনি আসলেই জলদস্যু।”
তাহুরা হিচকি তুলে।
সুনেরা উত্তর দেওয়ার পূর্বে পেছন হতে ভাসে পরিচিত ভারী সুর,
–“ভাবী,চা হবে?অ্যান্ড,ভাইয়া বললো আপনাকে কল রিসিভ করতে।”
তড়িৎ গতিতে দুই বোন পিছে ফিরে।তাহুরার নজরে উমাইরের অবয়ব ঝাপসা। অশ্রুতে যে মাতোয়ারা আঁখি।উমাইর এক ঝলক দৃষ্টি মেলে তাহুরার অবয়বে।নিচ অধর মেয়েটা দাঁত দিয়ে কাটছে।উফ,কি আকর্ষণীয়!
–“দিচ্ছি ভাইয়া।”
সুনেরা দ্রুত উঠে।
তাকে লক্ষ্য করে তাহুরা উঠতে নিলে উমাইর গম্ভীরতার সহিত আওড়ায়,
–“চুপচাপ বসো।”
তাহুরার নড়চড় নেই আর।মনের বিষাক্ত পীড়া হানা দেয় ফের।লোকটার সহিত কথা বলার বহু চেষ্টা করেছে সে।পাত্তা দেয়নি উমাইর।এখন আবার বসতে বলছে।তাহুরা কোলের উপর কুশন নেয়।খানিকটা হলেও আতঙ্ক ভর করে শরীরে।রোমাঞ্চকর আতঙ্ক।
ডাইনিংয়ে রাখা চায়ের ফ্লাস্ক হতে চা এবং হালকা নাস্তা লিভিং রুমে নিয়ে এসে,সেথায় টি-টেবিলের উপর রাখে সুনেরা।তাহুরার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
–“ফোন আমার রুমে।আমি কথা বলে আসি তোর ভাইয়ার সাথে।”
তাহুরা নরম ভঙ্গিতে মাথা নাড়ায়।
সুনেরা একেবারে অদৃশ্য হলে উমাইর ধীরে সম্মুখে অগ্রসর হয়।বসে ঠিক তাহুরার পাশে।আর যাওয়ার জায়গা নেই।সোফার হাতল দানবের মতো অবস্থানরত।
তাহুরা নড়তে নিলে উমাইর চেঁচায়,
–“সুন্দরভাবে বসো।চায়ের কাপ দাও আমাকে।”
তাহুরা চুপচাপ আদেশ পালন করে।চায়ের কাপ দেওয়ার সময় উমাইর ইচ্ছাকৃত মেয়েটার হাতের স্পর্শ অনুভব করে।অমায়িক,অমায়িক এই অনুভূতি।
সোফায় হেলান দেয় উমাইর।অধরে চায়ের কাপ ছুঁয়ে মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করে।এখন তাহুরার মাথা হতে আঁচল উন্মুক্ত।বোনের সাথে বসে তার নামে বদনামি করছিলো,তাই হয়তো মাথার কাপড়ের হুঁশ নেই।অবশ্য এহেন দোষ উমাইর মাফ করবে।যেহুতু এখন কোনো পর পুরুষ নেই।
–“তো,আমি জলদস্যু?আমার মতো হ্যান্ডসাম জলদস্যু তোমাকে জ্বালাতন করে,এটা তোমার সৌভাগ্য।”
উমাইর ভেতরে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেও তার উপরিভাগে গম্ভীর ভাব সুস্পষ্ট।
তাহুরা নজর তুলে।লোকটা তার পানে চেয়েই কাপে চুমুক দিচ্ছে।নজর তার অচেনা।আবার চেনা। উমাইরের আঁখির ভাষা অন্যরকম।সেই নজরে নজর ঠেকালে তাহুরার উদরে অনুভূতির হামলা উঠে।
–“স…সরি।”
তাহুরা ছোট্ট সুরে আওড়ায়।
–“জলদস্যু আসলে কি করে?জানো?”
উমাইর ফের প্রশ্ন করে।ততক্ষণে তাহুরা ওড়নার কিনারায় পুনরায় নাক মুছে।উমাইর মুচকি হাসে।এখনকার হাসি প্রকাশিত।মেয়েটাকে এমনি মাথামোটা ডাকে সে?
অন্যদিকে তাহুরার শব্দ ফুরিয়েছে। উমাইরের হাসি সর্বকালে খুন হওয়ার লাহান।দেখলে তাহুরার অন্তর পুড়ে।লোকটা কি বুঝে?বুঝে না।আর না কখনো বুঝবে।
–“ভুলে গিয়েছি।”
তাহুরার জবাব।আসলেই তাহুরা ভুলেছে জলদস্যু কি করে।তার চক্ষুতে কেবল ভাসমান উমাইরের হাসি।লোকটা হাসলে সুন্দর ভাঁজ পড়ে গালের দুই ধারে।চোখগুলো ছোট হয়ে আসে।তাহুরার বড্ড ইচ্ছে হয় চাপ দাড়িতে মাখানো গালখানায় দুই হাত রেখে আহ্লাদ করতে।
উমাইর ভাবুক তাহুরার মাথার পিছে আঙুল দ্বারা টোকা দেয়,
–“আঙ্কেল,আন্টি না আসা অব্দি বাসায় ফিরছো না।”
–“আপু বলেছে,আন্টি এলে কথা বলবে।আপু যাবে আমার সাথে।”
উমাইর চায়ের কাপ টেবিলে রাখে।হালকা ঝুঁকে জবাব দেয়,
–“আমার ভাই থেকে তোমার বোনকে আলাদা করতে চাচ্ছো? বউ ছাড়া থাকতে কতো কষ্ট,জানো তুমি?”
গাল জ্বলে উঠে সরল মেয়েটার।রক্তিম আঁখি উঁচিয়ে পলক ঝাপটায় পাশে বসা মানবের পানে।
উমাইর তার আঙ্গুল ঠেকায় তাহুরার চিবুকে,
–“জানো না। কারণ তুমি মাথামোটা।”
–“আমি জানি।”
মিনমিনিয়ে জবাব দেয় তাহুরা।অতঃপর আবারও বলে,
–“আমি মাথামোটা না।”
উমাইর আবারও হাসে।মিষ্টি হাসি।তাহুরার কানের পাশে ঝুলন্ত চুল কানে গুঁজে আওড়ায়,
–“তুমি জানো?কি জানো?আমারও কষ্ট হয়, বুঝো তুমি?”
শ্বাস ভারী হয় তাহুরার।উমাইর তাকেই বুঝাচ্ছে বেকাদায়!নিঃশ্বাস কি আজ বন্ধ হবে?তাহুরা প্রশ্ন করতে উদ্যত।কিন্তু উমাইর বাঁধা দেয়।টেবিল থেকে চিকেন চপের অর্ধেকাংশ তাহুরার দুই অধরের ভাঁজে প্রবেশ করায়,
–“স্টপ টকিং।নাহলে,ভুল হয়ে যাবে আমার।”
বাকি অংশ নিজ মুখে পুরে উমাইর। অবিশ্বাস্য রকমের হাঁপিয়ে ছেলেটা। সশব্দে শ্বাস ছাড়ছে।কথা বলার মাঝে খুব ঘনিষ্ট রকমের ভাবনা তার মস্তিষ্কে ভাসে।যেই ভাবনায় তাহুরা উমাইরের খুব নিকটে খুব, বিনা বস্ত্রে।
উমাইর উঠে দাঁড়ায়।খেয়ালগুলো আসার কোনো সময় জ্ঞান নেই।মেয়েটা পাশে না থাকলেও সর্বক্ষণ ভালোবাসতে প্রস্তুত থাকে তার কল্পনাগুলো।
বাম পকেটে হাত রাখে উমাইর,
–“আমরা বেরুবো।ভাবীর কাছে যাও।মাথায় যেনো হিজাব দেখি।”
উমাইর ফিরতে নিলে আবারও থামে।বোকাটা একা। বড় ঘরে একা একা হাঁটাচলা করলে মূর্ছা যাবে নিশ্চিত।ঘরে মানুষ খুব কম।
–“এই..যে,একটু আমার সাথে যাবেন?আপুর কাছে দিয়ে আসুন?”
উমাইর তাহুরার বাহু টেনে তুলে।আদুরে ভঙ্গিতে গালের একপাশ স্পর্শ করে।মেয়েটা না বললেও দিয়ে আসতো।পরক্ষণে কঠোরতা অবলম্বন করে উমাইর।নরম হলে ভুল হবে আজ।বিরাট ভুল।
তাহুরার তুলতুলে হাতের ভাঁজে নিজ হাত গলিয়ে শুধায়,
–“হাত ছুটাতে চাইলে,একা রেখে চলে যাবো।”
উমাইরের হাতের তালু খসখসে।কিন্তু,আরামদায়ক।তাহুরার অস্থিরতায় পা চলতে নারাজ।তাও মেয়েটা নিজেকে শক্ত করার চেষ্টায়।যাক,লোকটা অবশেষে কথা বলছে।মাঝে মাঝে কেনো এমন করে উমাইর সত্যি বুঝে না।পাগল মনে হয় তাকে তাহুরার।সুদর্শন কঠোর পাগল। যার পাগলামিতে তাহুরা বিভোর হয়ে উঠে,অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যায়।
সরল মেয়েটা বুঝেও না,তার আদুরে অনুভূতির চেয়ে ভয়ংকর অনুভূতিদের দমিয়ে পাশাপাশি হাঁটছে এখন উমাইর।
———————
আকাশী রঙের থ্রিপিসে আবৃত তাহুরা।হালকা সেজেছে।গাঢ় নীল রঙের হিজাবে মেয়েটার রূপ পরিপূর্ণ। সুনেরা শাড়ি পড়েছে কালো।দুইবোন নিচে নামলে,ঘরের প্রধান দরজায় উমাইরকে দেখতে পায় তারা।
সুঠামদেহী উমাইর কনুই পর্যন্ত হাতা বটে রাখলো।পড়নে গাঢ় নীল চেক শার্ট।চুলগুলো একটু ছোট লাগছে।এই অল্প সময়ে লোকটার চুলের কাট পরিবর্তিত!
উমাইর তাহুরাকে খানিক পর্যবেক্ষণ করে সুনেরার পানে ফিরে,
–“ভাইয়া এসেছে?”
–“বললো,আমাকে রেস্টুরেন্টে নামিয়ে তোমাদের যেতে।”
–“ওকে।”
সুনেরা জবাব দেয়।
উমাইর বেরুলো।গন্তব্য গ্যারেজ।
তাহুরা বিচলিত হয় খানিকটা।তারা আলাদা জায়গায় যাচ্ছে? কোথায় যাবে সে পাষাণ লোকটার সাথে?তাহুরা বোনের হাত ধরে,
–“আপু,আমরা আলাদা যাবো?”
–“হ্যাঁ।তোর ভাইয়ার বিজনেসের সকলে মিলে পার্টি দিচ্ছে তাদের ওয়াইফ সহ।তুই বাসায় একা দেখে উমাইর তোকে নিয়ে বেরুচ্ছে।সম্ভবত ওর ফ্রেন্ডের বাসায় যাবি।”
সুনেরা জবাব দেয়।
–“আমি কিভাবে?আমি কাউকে চিনি না আপু।”
তাহুরা ঘাবড়িয়ে।
–“আমি চিনি।তোমার চেনা লাগবে না।তুমি আপাতত আমাকে চিনলে হবে।”
তাহুরার উদ্দেশ্যে বলে উমাইর।পরক্ষণে সুনেরাকে জানায়,
–“ভাবী,ওয়ালেট নিয়ে আসছি আমি।গাড়িতে বসুন।”
সুনেরা বোনকে শান্ত হতে নির্দেশনা দিয়ে নানান কিছু বুঝিয়ে বলছে।দুইবোন বসলো গাড়ির ব্যাক সিটে।
উমাইর আসে,দ্রুত গাড়ি চালু করে। সুনেরাকে নামিয়ে ফের ছুটে উমাইরের গাড়ি।রেস্টুরেন্টের আড়াল হলে উমাইর গাড়ি থামায়।মোলায়েম স্বরে বলে,
–“সামনে আসো।”
চিন্তিত তাহুরা ধীরে আওড়ায়,
–“জ্বী?”
–“সামনে আসো রে বাবা।”
উমাইর বলে।
তাহুরা পেছন হতে সম্মুখে আসে। সে সিটে বসলে উমাইর তার পূর্বে সিটবেল্ট ঠিক করে তাহুরার।গতিবেগ স্বাভাবিক রেখে সামনে এগোয় গাড়ি।তাহুরার কোলে সফেদ হাত দৃশ্যমান।উমাইর বিনা দ্বিধায় সেই হাতের ভাঁজে নিজ হাতের অবস্থান জারি করে।কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠে তাহুরার সত্তা।সেই হাত ঠেকায় উমাইর তার উরুতে।ফের মেয়েটার হাতের পাতার উপর চেপে রাখে নিজ বিশাল হাতের পাতা।তাহুরা অস্ফুট শব্দ করে।কিছু বলতে চেয়েও গলার স্বর হাওয়ায় তালমাতাল।
উমাইর অধর বাঁকা করে,মোলায়েম সুরে বলে,
–“স্বাভাবিক ভাবে নাও সব।ধীরে ধীরে অভ্যস্থ হবে। উমাইরকে সহ্য করার শক্তি অবজার্ভ করো। পরে আমি কোনো বাহানা শুনবো না।”
তাহুরা বুঝলো আবার বুঝলো না।লোকটার কথা গোলক ধাঁধা।সুন্দর করে বুঝিয়ে বললে কি সমস্যা হয়?
–“আমি ঠিক বুঝলাম না।”
উমাইর সামান্য বামে ফিরে।মনের রাণী লজ্জায় আড়ষ্ট।ভ্রু উঁচিয়ে উত্তরের আশায়।উমাইর তার আঙ্গুলের ভাঁজে নরম স্পর্শ করে।তাহুরা খুব কষ্টে পলক ঝাপটায়।পরপর শুনে উমাইরের কথা,
–“মুদ্দা বক্তব্য হলো,আমি ছাড়া অন্যকেউ তোমাকে স্পর্শ করা নিষিদ্ধ।তুমি বোকা মেয়েটা কেবল আমাতেই সীমাবদ্ধ।”
গলা শুকিয়ে পানির তৃষ্ণায় কাতর হয় তাহুরা।উমাইর তাকে পছন্দ করে বলে জানাচ্ছে!তাহুরার অন্তরে ময়ূরের দল পেখম মেলে।লজ্জিত অবস্থায় তার গলার সুর কাঁপছে।কিছু বলতে চাইলে সুর বেরোতে চায়।উমাইর সাবধান করে।হাতের তালুতে বল প্রয়োগে জানান দেয়,
–“ডোন্ট মেক এনি সাউন্ড, তাহু।”
তারপর আর কথা বেরুলো না তাহুরার।পৌঁছালো তারা উমাইরের বন্ধুর বাসায়।এক তলা বাড়ি,বেশ মার্জিত।বিশাল বাংলো।রনি আগ বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো তাদের অপেক্ষায়।দেখে কেমন খুশিতে মশগুল।
উমাইর হাত মেলায়,জড়িয়ে ধরে রনিকে।রনি স্বাগতম জানায় তাহুরাকে।
তাহুরা উমাইর হতে কিছুটা দূরে।লোকটার পায়ের কদমের সাথে মিলে না তার কদম।তাহুরার গতিবেগ লক্ষ্য করে উমাইর থামে।
সে কাছাকাছি এলে তাহুরাকে উমাইর বলে উঠে,
–“আমার হাত ধরো।”
তাহুরা ঘাড় উচুঁ করে লম্বা লোকটাকে দেখে।উমাইর দৃষ্টি ভঙ্গি কঠোর করলে তাহুরা তার বটে রাখা শার্টের হাতার নিচের অংশে হাত রাখে।লোকটার হাত বিশাল!
ভেতরে সবাই তাদের অপেক্ষায়।রনির বউয়ের সাথে পরিচয় করায় রনি তাহুরা, উমাইরকে।রনি উমাইরকে বলে,
–“তাহুরা আপু থাকুক তোর ভাবীর সাথে।তুই আয় লিভিংরুমে।”
–“দাঁড়া।”
উমাইর রনিকে থামায়।
তাহুরার পানে গেলে রনির বউ তাদের একা কথা বলতে সুযোগ দেয়,
–“কথা বলুন।আমি এইদিকে আছি।”
পুষ্প সরলে উমাইর আদুরে ভাষায় তাহুরাকে সহজ হওয়ার আহ্বান জানায়,
–“আমি আছি।যদি খারাপ লাগে বা কমফোর্ট ফিল না হয়,বলবে আমাকে।আমরা বাসায় ফিরবো।ওকে?”
–“জ্বী।”
তাহুরা মাথা নাড়ায়।
উমাইর আলতো হাতে হিজাবের উপরিভাগে স্পর্শ করে হাঁটে।
পুষ্প বেরোয়,যেনো অপেক্ষায় ছিলো উমাইরের যাওয়ার।সে তাহুরাকে ভেতরের দিকে নিয়ে যাওয়া অবস্থায় বলে,
–“উমাইর ভাইয়ার তারিফ করে রনি।তোমার কথাও বলেছিলো।তুমি সত্যি মিষ্টি মেয়ে।”
তাহুরা হাসে।কেনো কি কারণে রনি তার কথা বললো মুখ ফুটে জিজ্ঞাসা করেনি সে।পুষ্প মেয়েটা আন্তরিক।দেখে মনে হচ্ছে অন্তঃসত্ত্বা।হাঁটাচলা বড্ড সাবধানে করছে।কথার ছলে পুষ্প এইবার মুখ খুলে,
–“আমার প্রেগন্যান্সির পর রনির পাগলামো আরো বাড়ছে।এখন দুই মাস আমার কিন্তু এমন যত্ন করে যেনো এখনই আমার ডেলিভারি হবে।”
–“অভিনন্দন,ভাবী।”
তাহুরা ধরনা সঠিক হওয়ায় বেশ খুশি।
–“জানো,উমাইর ভাইয়াকে তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে সবচেয়ে বিরাট ধৈর্য্যশীলের পদবীতে ভূষিত করেছে।”
পুষ্পের কথায় তাহুরাকে কৌতূহল দেখলো।সে জিজ্ঞাসা করে,
–“কেনো ভাবী?”
পুষ্প শব্দ করে হাসে।তাহুরার গালে হাত রাখে,
–“বলা যাবে না আপু।বললে রনি আমাকে পানিশ করবে।”
দুই বন্ধু কথা বললেও দৃষ্টি তাদের প্রিয়তমাদের পানে স্থগিত।
তাহুরার বিনা দ্বিধায় হাসিখুশি মুখের দরুণ উমাইরের অন্তর বরফ শীতল।তাহুরা হাত নেড়ে কিসব বলছে।মেয়েটার গলার স্বর চিকন।তাই শোনা দায়।
তার চাহনীর মাঝে রনি প্রশ্ন করে,
–“বিয়ে কবে করছিস?অনেক বছর আছে নাকি?”
–“সামনে করবো।”
উমাইর তাহুরার পানে চেয়ে এখনো।অথচ মেয়েটা একবারও তাকালো না।
–“তুই বললি দেরী আছে।”
রনির কথায় এইবার উমাইর ফিরে।বাম পাশে অধর বাকাঁয়,
–“বলেছিলাম কিন্তু পারবো না।অপেক্ষা আর সম্ভব না। ওর প্রতি মানুষের নজর বেশি।”
–“ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিস।সে জানে?”
–“নাহ।হুট করে জানিয়ে দ্রুত বাসায় তুলবো।”
উমাইর জবাব দেয়।
–“তোকে ধৈর্য্যশীলের পদবী দিয়ে আমরা ভুল করিনি।কিভাবে পেরেছিস তুই এতটা বছর অপেক্ষা করতে?”
রনির প্রশ্নে উমাইর সোজা হয়। কাঁধের শার্ট ঠিক করার ভঙ্গিতে জবাব দেয়,
–“আই লাভ হার। ও আমার প্রতি সহজ হতে,আমাকে ভালোবাসতে সময়ের দরকার ছিলো।তাই দিলাম।ওর জন্যে সব জায়েজ।”
–“কাছাকাছি থাকিস এখন তোরা,ভুল হয়ে যেতে কতক্ষণ?সাবধানে থাকিস।”
রনি এক চোখ টিপে।ঠাট্টার সুর স্পষ্ট।
–“উমাইর বড্ড কঠিন।”
বন্ধুকে শান্তনার সুরে জানায় উমাইর।কিন্তু,ভেতরকার খবর কেবল তার জানা।ভুল!তাদের সম্পর্কে ভুল জিনিসটার সাথেই লড়াই করছে উমাইর।শতবার দমিয়েছে সে নিজেকে।মনের ভাবনায় শরীর ঘেমে আসে তার।শুধু সম্পর্কের নামটা বদলাক।তাহুরার প্রতি জমানো সকল স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে সে।
মিনমিনিয়ে উমাইর বলে,
–“সম্পর্কের নামের পরিবর্তনের সাথে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবে।আমার সরল প্রেয়সী তার না করা অপরাধের সাজা পাবে।কঠোর আদুরে সাজা।”
চলবে ……….
#রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায়
লেখনীতে: সালসাবিল সারা
পর্ব- ২৭
_________________
–“তাহুরা,উনি তোমার আত্মীয় হয়।তোমার তো জানার কথা,উনার সাথে কলেজের ম্যাডামের সাথে কিছু চলছে কিনা?”
বিষাক্ত প্রশ্ন। এমন প্রশ্ন তাহুরার অন্তরে জ্বালা সৃষ্টি করে। ডিপার্টমেন্টের নতুন কিছু মেয়ের সহিত আলাপ হয়।সেই মেয়েগুলো যখন থেকে জেনেছে উমাইর তার আত্মীয়,এরপর হতে মাথা খাচ্ছে তারা।তাহুরা করুণ দৃষ্টিতে চৈতালির পানে চায়।মূলত এই মেয়েটা হাটে হাঁড়ি ভাঙে।তাহুরা কিভাবে বলবে,উমাইর কারো সাথে এনগেজড কিনা! উমাইরের তাকে বলা গোপন কথাগুলোতে জানে তাহুরা,উমাইর তাহুরাকে নিয়ে ভাবে।উমাইর কেবল তাহুরাকে যত্ন,ধমকাতে ব্যস্ত থাকে এবং তাহুরা সেগুলো সহ্য করতে।ডানে বায়ে মাথা দোলায় তাহুরা,
–“আমি জানিনা।”
–“যদি না থাকে,আমার চান্স করে দিও প্লিজ।আমি খুব সুন্দরী তাই না?”
নতুন মেয়ে লিপা বলে উঠে।
চৈতালি হাতে তালি বাজায়।হেসে বলে,
–“তাহুরা আর চান্স করে দিবে?উমাইর স্যারের সামনে সকলের অবস্থা টাইট হয়।”
–“তাও, স্যার দেখতে মারাত্মক।আমি আজ দেখে আজই ফিদা হলাম।”
লিপা পুনরায় জানালে তাহুরার মধ্যকার কষ্ট হানা দেয় প্রখর।আঁখি জোড়া যেনো এখনি ফেটে পড়বে কান্নার রোলে।প্রিয় মানুষের ব্যাপারে, তাকে দখলের ব্যাপারে কথা শুনলে কি ভালো লাগে?না লাগে না।তাহুরা কেনো প্রতিবাদ করতে জানে না?
পরক্ষণে নতুন অন্য মেয়েটা শুধায়,
–“উম,আমার মনে হচ্ছে সামনের লম্বা ম্যাডাম উমাইর স্যারের জন্যে বেস্ট।দেখো,ওরা দুজনই হাসছে।”
তাহুরার তনু কম্পিত।আঁখিতে জমানো জলগুলো টুপ টুপ গালে প্রবাহমান।মেঘলা আবহাওয়ায় পরিবেশ শীতল হলেও তাহুরার অন্তরে উষ্ণতা।প্রিয় মানুষটাকে অন্যের সাথে দেখলে বুকে জ্বলে,দম বন্ধকর অনুভূতি হয়।নরম সত্তার তাহুরার সহ্য করার শক্তি ক্ষীণ।জেনে শুনে কেনো এমন মরীচিকার দিকে হাত বাড়িয়েছিলো তাহুরা? একটাবার কি ভাবেনি, গুণবান সুদর্শন যুবকের জন্যে তেমনই একজন নারী দরকার।সে হিসেবে তাহুরা কেবল এক ছোট্ট পিপীলিকা।
তাহুরার মতো সরল মেয়েদের সমস্যা একটাই,অন্যের কথায় বেশি চিন্তিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
দ্রুত টিস্যুর সহিত গাল মুছে।প্রস্থান করে সেই জায়গা।দেখার ইচ্ছে নেই কিছু।ক্লাসে যাওয়া অবস্থায় তার মুখশ্রীর পরিবর্তন হয়।শুকনো মুখ ফুলে উঠে।ক্লাসে পৌঁছে মাথা বেঞ্চে এলিয়ে দেয়।চৈতালি আসলে প্রশ্ন করবে হাজারটা।তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় সে।ব্যাগ উঠিয়ে ক্লাস প্রস্থান করে।আর ক্লাস করবে না।বাড়ি ফিরবে। উমাইরদের বাসায়ও যাবে না।বাসায় গিয়ে বোনকে ফোন করবে। উমাইর নামটা মনে আসতেই দুচোখে জল জমে।জীবনের বহু বসন্তের পর যে লোককে মনে ধরেছে সেই লোক কেবল তার জন্যে মরুর বুকে বৃষ্টির মতো।
তারপরও না হওয়া প্রেমিকার মনে হরতাল হয়।খুব করে মনে করার চেষ্টায় উমাইরের মুখশ্রী।কিন্তু,ব্যতিক্রম ঘটনা হয়।বারংবার ভেসে আসছে ইমনের অবয়ব।প্রতিচ্ছবি উমাইরের কিন্তু ছবি ইমনের।এমনটা হওয়াতে তাহুরা আরো ভেঙে পড়ে।ইতিমধ্যে টেনশনের মাত্রা অতিরিক্ত হওয়ায় উল্টাপাল্টা ভাবতে শুরু করে তাহুরা।
রিক্সায় উঠলে কান্নায় ভেঙে পড়ে।বিড়বিড় করে আল্লাহ্ এর দরবারে আর্জি জানায়,
–“আল্লাহ্,আপনি তো জানেন আমি উমাইর স্যারকে কতো ভালোবাসি।আমার মনে কেবল তার প্রতিচ্ছবি ভাসুক,বাকি সব দূর করুন।মানুষটাকে আমার করে দিন আল্লাহ্।”
সরল মেয়েটা নিজেকে শান্তনা দিয়েও শান্তিতে নেই।আজ হুট করে কি হলো?অতি চিন্তায় উমাইর এর অবয়বে ইমনের প্রতিচ্ছবি কেনো ভাসছে?কিছুতেই হানা দিচ্ছে না প্রেমিক পুরুষের ছবি।মেয়েটা অল্পতে বেশি কষ্ট পায় বলে সৃষ্টিকর্তা কি তাকে আরো পীড়া দিচ্ছে?তাহুরার মস্তিষ্ক অচল।বাড়িয়ে সম্মুখে রিকশা থেমেছে অথচ তার হুঁশ নেই।রিক্সাওয়ালা এইবার কিঞ্চিৎ জোর গলায় শুধায়,
–“আপা,আপনার বাড়ির সামনে আইছেন।নামেন।”
তাহুরার শরীর দুলে।ভেজা দৃষ্টিতে রিক্সাওয়ালা মামাকে দেখে।পরক্ষণে ভাড়া মিটিয়ে নামে। দাঁড়ায় দরজার সম্মুখে।
ব্যাগ হাতড়ে চাবি বের করে। তালা খুলে ঢুকলে বুঝতে পারে উঠোন জুড়ে পাতার ছড়াছড়ি।ঝাড়ু না দেওয়ার ফলাফল।গলা তুলে পাশে দৃষ্টি ফেলে।পুকুর পাড়েও পাতার সমাহার।মা,বাবা,বোন সবার সহিত স্মৃতি নেড়ে উঠলে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে মলিন মেয়েটা।বাবার কথা,মায়ের কথা বড্ড মনে আসছে।
বাসায় আসছে না কেনো ওরা?আরো চারদিন বাকি আছে তাদের ফেরার।দিনের বেলা হওয়ার সুবাদে তাহুরার ভীতি এখন কম।এছাড়া মনের পীড়ার সাথে জগতের ভীতির তুলনা নেই।মনের পীড়ার নিকট সকল পীড়া তুচ্ছ।
তাহুরা ঘরের ফটকের তালা খুলে।সম্মুখের রুমে লাইট জ্বলছে।মা জ্বালিয়ে গিয়েছিল। আঁধার ঘর থাকা ভালো নয় বলে।তাহুরা ঘরের সকল জানালা খুলে। এপ্রোন সরায় শরীর হতে।বেসিনে মুখ ধোয়।পড়নে কাপড় পরিবর্তন করে ঘরে পড়ার সেই সুতির কামিজ নির্বাচন করে।একে একে ঝাড়ু দিতে থাকে রুম।ঘড়ির দিকে নজর বুলায়।ছুটি হওয়ার সময় বাকি এখনো।সময় গড়ালে বোনকে ফোন দিবে।
ঘরের প্রত্যেকটা রুম ঝাড়ু দেয় সে নানান কল্পনার মাঝে। সকল কক্ষের লাইট জ্বলছে। তখন আবেগে এইখানে এলে,এখন ভীতি বাড়ছে।ছমছম করছে শরীর।
এরমাঝে মেঘে গর্জন হলে তাহুরা প্রথমে বোনকে ফোন দেয়, জানায় সে এই বাড়িতে।সুনেরা বোনকে চিল্লায় বেশ।আসছে বলেও সম্বোধন করে।
হঠাৎ ঘরে অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ হলে মোবাইল রেখে দৌড়ে বাহিরে আসে তাহুরা।ফোলা আঁখিতে ব্যথা,সাথে ভয়।অন্য সকল চিন্তায় ভয় ভিড় করলে ঝাড়ু হাতে নেয়।দ্রুত উঠোন ঝাড়ু দিতে উদ্যত হয় সে।মনের বিরুদ্ধে একা সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন পস্তাচ্ছে মেয়েটা।
কিন্তু,এটাই সত্যি তাহুরার সাথে উমাইরকে কেউ মেনে নিবে না।ফের মনের মেঘের বৃষ্টি হয়।
টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটা ধরণীতে হামলা দিচ্ছে।তাহুরা পণ করে বোন আসা না অব্দি ভেতরে ঢুকবে না। মেয়েটা একা বাসায় থাকেনি ইহকালে।আজ সব সিদ্ধান্তে ধিক্কার জানাচ্ছে সে নিজেকে।
তাহুরার সাইলেন্ট মুডে থাকা মোবাইলে উমাইরের ফোনের ঝড়।মেজাজ তার সপ্তম গগণে।সকালে বলেছিলো মেয়েটাকে তার সাথে ফিরতে বাসায়। কোথায় হাওয়া হলো।সমস্যা হয়েছে কোনো?উমাইর দ্রুত ফোন করে সুনেরাকে।মেয়েটা বাসায় চলেও যেতে পারে।
–“ভাবী,তাহুরা বাসায়?”
উমাইরের চিন্তিত সুর।
–“ভাইয়া ও আমাদের বাড়িতে।কি হয়েছে জানিনা।কেনো হঠাৎ সেখানে গেলো?একা বাসায় কখনো থাকেনি।আমি মাত্র বেরুচ্ছি সেখানে যেতে।”
সুনেরার স্বর ভেঙে আসছে।
–“আমি যাচ্ছি ভাবী।আপনি বাসায় থাকুন।”
মতামত জানিয়ে ফোন কাটে উমাইর।
তাহুরার সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারলো না।আজ মেয়েটার সকল সাহস উদঘাটন করবে উমাইর।ক্রোধে উন্মত্ত হয় সে।শার্টের হাতা কুনুই অব্দি উঠায়।দ্রুত গতিতে বৃষ্টির মাঝে গাড়ি চালাচ্ছে।চারিদিকে বর্ষণের দরুণ আবছা পরিবেশ। অতি জলদি পৌঁছায় সে তাহুরাদের বাড়ির নিকট।
গাড়ি থামতে দেখে বৃষ্টির মধ্যে এগিয়ে আসে তাহুরা।বুঝলো বোন এসেছে।টুপটাপ বর্ষণে শরীর ভিজছে।
তৎক্ষণাৎ গাড়ি চিনলে চেহারায় মলিনতা ফুটে উঠে তাহুরার।
———
শব্দ করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে উমাইর।গাড়ি উঠোনে রাখেনি আজ। গেইটের বাহিরে রেখে আধ খোলা দরজা ঠেলে ভেতরে আসে।তাকে অবলোকন করে তাহুরা এক’দু পা পেছাতে থাকে।অস্ফুট শব্দে তাহুরা জিজ্ঞাসা করলো,
–“আপনি কেনো এসেছেন!”
–“কথা কানে যায়নি সকালে?একা একা বীর মহিলা সাজায় কারণ!”
গেইট লক করে উমাইর।বর্ষণের মাত্রা বাড়তে আরম্ভ হয় মিনিট একের মাঝে।
ভিজে যাচ্ছে দুই সত্তা।একজনের মনে শঙ্কা তো, অন্যজনের মনে দুশ্চিন্তা।
–“আপনি….আপনি চলে যান।”
তাহুরার কণ্ঠ কম্পিত।মুখশ্রী লালচে। ভেজা মুখে আরো আবেদনময়ী করে তুললো মেয়েটাকে।উমাইর হাত মুঠ করে।নিজ পানি মিশ্রিত চুল পিছনে ঠেলে,
–“একা একা থাকার কারণ?কেউ আসবে?বিশেষ কেউ?”
ক্রুড় হাসি উমাইরের অধরে। দুজনের অবয়ব ছোট উঠোনের মাঝে বৃষ্টির চাদরে আবৃত। উমাইরের কথা শুনে ভেতরটায় অস্থির অনুভব করে তাহুরা।ভাঙা সুরে আওড়ায়,
–“আপু আসবে।আপনি চলে যান।”
উমাইর নিজেকে সামলাতে পারে না।প্রখর রাগে তাহুরার আদ্র বাহু টেনে নিজ বক্ষদেশে ফেলে তাকে।তাহুরার কপাল শক্তপোক্ত উমাইরের বুকে জোরালো আঘাত পায়।সে শব্দ করে হালকা,
–“আহ্।”
–“শাট আপ! এতো তেজ দেখাচ্ছো কাকে তুমি?”
উমাইর তাহুরার গাল চেপে ধরে।
–“আপনার বাসায় যাবো না আমি।”
তাহুরা জানায়।হাত ছুটায় সে উমারের।কেনো যাবে সে?প্রেমিক পুরুষের মন পাবে না যেখানে,সেখানে গিয়ে লাভ কি?মাথামোটা তাহুরা উমাইরের সকল কথা ভুললো যেনো।
–“আমাদের বাসায় যাবে।চলো।”
উমাইর আবারও তার বাহু টেনে ধরলে,তাহুরা অস্ফুট কন্ঠে জানায়,
–“ধরবেন না আমাকে।”
এতটুকুই যথেষ্ট ছিলো উমাইরের ক্রোধের মাত্রা বাড়াতে।সাত পাঁচ না ভেবে তাহুরাকে ঘরের বারান্দায় ধাক্কা দিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরে উমাইর।বাঁ হাতে কোমর জড়িয়ে ডান হাতে কান টেনে ধরে তাহুরার।ততক্ষণে মেয়ের চক্ষু ভাসমান। নাক টকটকে লাল।ভেজা অবয়বের সুগন্ধে মাতোয়ারা উমাইর। বিপরীতে তাহুরা এই লোককে হারিয়ে ফেলবে বলে মরা কান্না জুড়িয়েছে।
–“তোমাকে ছোঁয়ার অনুমতি আমি নিবো না।তোমাকে আমি শুধু টাচ না,কি করি দেখো।তোমাকে ছুঁতে নিষেধ করার তুমি কে?”
মাতোয়ারা হওয়ার ভঙ্গিমায় কণ্ঠ জড়িয়ে আসে উমাইরের। সম্মুখে অবস্থানরত স্নিগ্ধ মেয়েটার বক্ষ দেশ হতে ওড়না সরলে উমাইরের দৃষ্টি থমকে যায়।ভেজা সুতির কাপড়ে মেয়েলি বক্ষ ভাঁজ স্পষ্ট দৃশ্যমান।উমাইর সূক্ষ্ম ঢেঁকুর গিলে।দৃষ্টি সরায়।তাহুরা দু হাত তুলে উমাইরের বুকে রাখে,
–“আপনি… ছুঁবেন না…।”
আরো ঘনিষ্ঠ হয় উমাইর।কথা থামে তাহুরার।তার ভেজা চুলের পানি ঘাড়ে বহমান তো আবার কিছু চুল কপালে ঝুলন্ত থাকায় সেথা হতে পানি তাহুরার গলায় পড়ছে।
–“বাঘের কাছে এসে,তাকে বলছো খেও না?”
পরপর উমাইর তার অধর ছোঁয়ায় তাহুরার গালে।পা বেঁকে আসে তাহুরার।কিন্তু নড়লো না সে।কারণ উমাইর তাকে শক্তভাবে আকড়ে ধরে আছে।
–“উমাইর… স্যার!”
তাহুরা আর্তনাদ করে খানিকটা।
তাহুরার চুলের গোছা নিজ মুঠোয় নেয় উমাইর।সেথায় জোরালো চাপ দেয়,
–“কল মি উমাইর। অনলি উমাইর।”
তাহুরা বড় দৃষ্টিতে নজর মেলালে উমাইর অধর গোলাকার করে চুমুর ভঙ্গিমা করে।তাহুরা আরো নুইয়ে পড়ে। ঘাড় ব্যথা হয়।তাও আজ মেয়েটা সাহস করে কিছু কথা আওড়ায়,
–“আপনার সাথে আমার যায় না, স্যার।আপনার যোগ্যতা আমাদের ম্যামদের সাথে।আজ যখন এক ম্যাডামের সাথে হাসছিলেন,তখন সবাই আপনার তারিফ করছিলো,স্যার।”
দমবন্ধ অনুভূতি।তাহুরা কথাগুলো কেবল উমাইরের ভেতরকার খবর জানতে বলে।বাহিরে তীব্র ঝড়েও উমাইরের শক্তভাব কমলো না বরংচ উষ্ণতায় উমাইরের শরীর ঝাঁকি দেয়।মেয়েটা উলটপালট কথা ভাবে কিভাবে?
–“ব্যস,কথা বলা শেষ?তুমি মাথামোটা সারাজীবন মাথামোটা থাকবে।আমার সাথে কে যায়,কে যায় না,আমাকে কার সাথে মানাবে সেটা আমি জানি।তোমার এতো চিন্তা কিসের।”
উমাইর এখনো চুল ছাড়েনি।তাহুরার ঘাড় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। লোকটা লম্বা হওয়ায় চোখে চোখ রাখাটাও দায়।তাহুরা উমাইরের বুকে ঠেলে।কিন্তু লাভ হয়নি এক দণ্ড।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
তাহুরা পলক ঝাপটিয়ে বাহিরে তাকায়।অনুভব করে উমাইর তার চুলের গোছা ছাড়ছে।মেয়েটা হাঁফ ছাড়ে অনেকটা।উমাইর আজ মাতালের মতো ব্যবহার করছে।তাহুরা বামে মুখ ফিরিয়ে বলে,
–“স্যার…সবাই হাস…”
উমাইর এইবার অদ্ভুত কান্ড করে।তাহুরার কোমর চেপে তাকে নিজ বুকের সহিত আলগিয়ে তুলে।ব্যালেন্স রাখতে তাহুরা আতংকে তার পা জোড়া পেঁচিয়ে ধরে উমারের কোমরে।দুজনের দেহ মিশে একাকার। মেয়েলী নরম বক্ষদেশের ছোঁয়া উমাইরের শক্ত বুকে লেপ্টে। খেয় হারাচ্ছে উমাইর।পরপর তার বিদ্ধস্তরুপী ভ্রু কুঁচকে লজ্জা নিবারণ করার চেষ্টায় থাকা প্রেয়সীর গলায় ঠোঁট ছুঁয়ে বিড়বিড় করে উমাইর,
–“আমার সাথে যাকে মানাবে তার কাছেই আছি।কল মি উমাইর,জান।”
উমাইরের ঘাড়ে রাখা তাহুরার হাত শীতল হয়ে আসে। জ্ঞান হারায় সরল মেয়েটা।
উমাইর জিহ্বা দ্বারা তাহুরার গলার স্বাদ নেয়।অমৃত মেয়েটা।তাহুরার জ্ঞান হারানোর ব্যাপারটাতে হাসে উমাইর। অথচ,এতক্ষণ যাবত কি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছে সে!
উমাইর ঠিকভাবে কোলে নেয় তাহুরাকে।গাড়িতে তুলে।বৃষ্টির কারণে আশেপাশে উঁকি দেওয়ার মানুষ নেই।ফ্রন্ট সিটে ঠিকভাবে বসিয়ে উমাইর ঘরের ভেতরে আসে।লাইট,দরজা সব ঠিক করে পুনরায় গাড়িতে বসে সে।ভেতর হতে তাহুরার কক্ষে খাটের উপর পাওয়া তাওয়াল, এপ্রোন,ব্যাগ এবং মোবাইল নিয়ে ফিরে সঙ্গে।আলতো করে তাওয়াল দ্বারা মেয়েটাকে জড়িয়ে নেয়।তাহুরার মাথা ঠেকায় সে নিজ উরুতে।
উবু হয়ে তাহুরার কপালে অধর স্পর্শ করে,
–“জান ডাক শুনে কেউ অজ্ঞান হয়,
মাথামোটা?”
পরপর উমাইরের অধর প্রসারিত হয়।গাড়ি সম্মুখে চলছে।বাহিরে তীব্র বর্ষণ, কোলের উপর আদুরে প্রিয় মানুষ। উমাইরের সত্তায় ভালোবাসার আগুন জ্বলে।তাহুরার ভেজা চুলে আঙুল বুলায়,
–“উমাইর কিন্তু খুব নির্লজ্জ তোমার বেলায়।তোমায় সহ্য করতে হবে সব।অজ্ঞান হওয়ার সময়টুকু পাবে না তখন,জান।”
চলবে…….